দেখি নাই ফিরে - (Part-37)

প্রথম যেদিন ম্যাডামকে নারসিংহোমে দেখেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম ম্যাডাম তোর প্রতি ভীষণ দুর্বল, আমি বাসু কতদিন আলোচনা করেছি, বলতে পারিস ভগবানের কাছে প্রার্থনাও করেছিলাম, তোর সঙ্গে ম্যাডামের মিল করিয়ে দিক, ভগবান সেই কথা শুনেছে।
আমি চুপ করে রইলাম।
ম্যাডামের শরীর খারাপের দিন আরো বেশি করে বুঝলাম, তোকে বার বার খুঁজছে, ছোটোমা বসে আছে, তবু তোকে চাই। আমি বাসু আলোচনা করতে করতে সেদিন ফিরেছিলাম। বাসু লতাকে বলেছে, আমি কাঞ্চনকে বলেছি। ওরাও চেয়েছিলো, আজ শোনার পর ওদের কি আনন্দ তুই না দেখলে বিশ্বাস করবি না।
তোরা একবার আমার কথাটা ভাব।
ভাবি, তোর কতো দায়িত্ব, তার ওপর আর একটা দায়িত্ব বারলো।
আমি চুপ করে রইলাম।
তোর মুন্নাভাই খুব ডেঞ্জার লোকরে।
কেনো।
পকেটে দুলাখ টাকা নিয়ে ঘুরছে।
কি করে বুঝলি।
বাসুর দোকানে জামাকাপড় কিনলো, তারপর বাসুকে বান্ডিলটা দিয়ে বললো, তোমার যা হয়েছে, এখান থেকে হি,এব করে বার করে নাও। বাসুর হাত কাঁপা দেখিস নি। অতোটাকা বাসু কোনোদিন দেখেছে, তাও আবার সব হাজার টাকার নোট। লোকটা কি করে।
তিনটে জাহাজ আছে, মিডিলইস্ট থেকে তেল নিয়ে আসে।
আরি ব্যাস। তোর সঙ্গে কি করে আলাপ।
কাজের মাধ্যমেই। ওকে দিয়ে এখানে কিছু ইনভেস্টমেন্ট করাবো।
কি করবি।
দেখি, নিরঞ্জনদার সঙ্গে আলোচনা করি।
যাক মনে হচ্ছে আমরা এবার আলোর পথ দেখবো। কি আছে বলতো আমাদের, বর্ষা হলেই বন্যা ধান নষ্ট। সেই হাহাকার।
দেখি কি করা যায়।
শিড়িতে হুরুম দুরুম আওয়াজ হচ্ছে, বুঝলাম সব দঙ্গল আসছে। বলতে বলতে মিত্রা এসে ঘরে ঢুকলো।
বুঝলি বুবুন তিনটে টেস্ট করলাম, সুপার্ব, আরো তিনটে বাকি আছে, হলেই বসে যাবো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
ওর পাশ দিয়ে বড়মা ছোটোমা ঢুকলো, পেছন পেছন ইসলামভাই নিরঞ্জনদা। অনাদি বাসু উঠো দাঁড়ালো।
বাঃ তোর ঘরটা বেশ ভালো। ছিম ছাম।
মিত্রা নিরঞ্জনদার কাছে এগিয়ে গেলো। এই হাতটা দেখেছো।
হ্যাঁ দেখছি তো।
এই হাতটার জন্য, বুবুন স্বীকার করবে, জিজ্ঞাসা করো।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
সত্যি মিত্রা ও তোর শত্রু না।
মিত্রা গম্ভীর হয়ে গেলো।
নাগো ও না থাকলে হয়তো ভেসে যেতাম এতোদিনে।
মুখটা নীচু করে ফেললো। সবাই কেমন যেনো থমকে গেলো। নিস্তব্ধ।

আমি উঠে গেলাম, বড়মা ছোটোমা খাটে বসেছে, আমি মিত্রাকে নিয়ে বড়মার পাশে বসালাম, আমার দিকে তাকালো, চোখটা ছল ছল করছে। অনাদি বাসুকে ইশারা করলাম, ওরা বেরিয়ে গেলো।
তুই আমাকে নিয়ে ওবাড়িতে কি কেরিকেচার করছিলি।
ও আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো। বিশ্বাস কর কিছু না।
তাহলে আমি লুকিয়ে গিয়ে যে দেখে এলাম। সেটা ভুল। অদিতিকে এরা চিনলো কি করে।
দেখছো ছোটোমা দেখছো, তোমরা শুনতে চাইলে তাই বলেছি।
এই বার তোরটা বলি এদের সামনে।
প্লীজ প্লীজ ও রকম করিস না। ওটাতো শুধু তোর আর আমার।
ঠিক আছে আমি ছোটোমাকে ফুস মন্ত্রণা দেবো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
নিরঞ্জনদা ইসলামভাই সব লক্ষ করছিলো বুঝতে পারছিলাম।
তুই বোস, সব শুনেযা কিছু বলার থাকে বলবি।
মিত্রা ওইটা বার কর। বড়মা বললেন।
ওই যা ভুলে গেছি, দাঁড়াও।
তরাক করে উঠে আলমাড়ির মাথা থেকে চাবিটা নিয়ে আলমাড়িটা খুলে ফেললো, ইসলামভাই দেখছে, একবার আমার দিকে তাকালো। একটা ফাইল বার করে বড়মার হাতে দিলো। আলমাড়িটা বন্ধ করে, আবার নিজের জায়গায় এসে বসলো।
এটা তোর মল্লিকদা আর দাদা তোকে দিয়েছে। আজকের দিনটা উপলক্ষ করে। বড়মা আমার হাতে ফাইলটা দিলেন।
আমি ফাইলটা খুললাম, ১৯৬৯ সালের দুটো কাগজ। লালা হয়ে গেছে। আমি খুললাম, দাদার জীবনের প্রথম লেখা এই কাগজে, মল্লিকদারটাও তাই। হেসে ফেললাম।
হাসছিস কেনো। বড়মা বললেন।
এর অর্থ কি বুঝতে পারছো।
কেমন করে বুঝবো। ওটা তোদের ব্যাপার।
জানো বড়মা এতদিন এইদুটোর জেরক্স কপি আমার কাছে ছিলো, আজ অরিজিন্যাল পেলাম। এর সঙ্গে মিত্রাকে।
ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ময়ে। আমি আস্তে আস্তে কাগজগুলো ভাঁজ করে ফাইলের মধ্যে ঢোকালাম, ফিতেটা গিঁট দিয়ে। মিত্রাকে বললাম রাখ। পরে তোর কাছ থেকে চেয়ে নেবো, আমার জীবনের অমূল্য সম্পদের মধ্যে এটা একটা মনে রাখিস।
ও হাতে করে ফাইলটা নিয়ে পাশে রাখলো।
যে জন্য তোমাদের ডেকেছি। নিরঞ্জনদা আমি আর এখন কিছু তোমার কাছে গোপন করছিনা, এই ব্যাপার গুলোর ডিসিসন তুমি দেবে, এরা সবাই শ্রোতা, প্রয়োজনে বিরোধিতা করবে।
বাবা তুই যে গুরু দায়িত্ব দিলি।
এককথায় তাই বলতে পারো। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ও বাড়িতে গিয়ে একটু চায়ের কথা বলে আয় না।
আমি একা যাবো।
কেনো ভয় করবে।
হেসে ফললো।
ওইখানে কি করে থাকলি।
তুই ছিলিতো।
ঠিক আছে তোকে ইসলামভাই ওই বাড়ির দালান পযর্ন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে আসবে। হবে।
হ্যাঁ।
ইসলামভাই উঠে দাঁড়ালো।
ওরা দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
তুমি তখন কিছু মনে করো নি তো।
নারে। দিদি আমাকে সব বলেছে।
সমস্যাটা এখনো রয়েছে, তার ওপর সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানো, আমাকে কেউ কিছু বললে, ও একবারে সহ্য করতে পারছে না, উল্টে রি-এ্যাকসন আমার ওপর।
ইসলামভাই ঘরে ঢুকলো।
কি হলো।
ওকে নিয়ে চলা খুব টাফরে অনি।
হ্যাঁ। কি করবো বলো চলতে হবে। আমার সঙ্গে বড়মা ছোটোমা আছে।
আমার থেকেও ওর সবচেয়ে বেশি আব্দার ছোটোর কাছে। বড়মা বললো।



সেই দিনকার পর থেকে ও কেমন যে ছেলেমানুষ হয়ে গেছে। সেই দিনটা তুই যদি দেখতিস মুন্না, ভয় পেয়ে যেতিস, অনির ধৈর্য় দেখেছিলাম সেদিন। ছোটোমা বললো।
আমি মাতা নীচু করে আছি।
ওকে ডাক্তার দেখাচ্ছিস।
তোর দাদার বন্ধু সামন্ত ডাক্তার আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে। বড়মা বললো।
বাবা ও তো এশিয়ার নামকরা ফিগার। নিরঞ্জনদা বললো।
ওইতো দেখছে, অনির এখানে নিয়ে আসতে বললো, ওর খালি এখন চেঞ্জের দরকার। মনটা একেবারে বিষিয়ে গেছেরে।
ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রা ফোন করেছে। বুবুন টেস্ট করলাম, দারুন।
আমাদের চায়ের কথা বলেছিস।
এই যা ভুলে গেছি, দাঁড়া সুরমাসিকে বলছি।
ফোনটা কেটে দিলো। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে।
মিত্রা, তরকারি টেস্ট করলো তাই জানালো।
সবাই হাসলো।
কি বলছিলি তুই মুন্না।
বলছি সেই দিনগুলো তুই দেখিস নি, ওর ওপর কি ভীষণ মেন্টাল টর্চার করেছে ওরা, মিঃ ব্যানার্জী, মল আরো অনেকে অনি কিছুটা জানে। সম্পত্তি বুঝলি। ওরা মেয়েটাকে মেরেই ফেলতো হয়তো। যদি অনি না এসে পরতো।
কি বলছো ইসলামভাই।
সত্যি বলছি নিরঞ্জনদা, আজ ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়, আমা যাই কলকাতায়। ওর অনেক সম্পত্তি ওরা বেনামে ভোগ করছে। ওর বাবা খুব ভালো লোক ছিলেন, মাটা ভালো নয়।
থাক ও সব কথা। যা বলছিলাম শোনো।
হ্যাঁ বল।

আমার কতকগুলো স্বপ্ন আছে। আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। এই মুহূর্তে তোমাদের তিনটে বিষয়ে বলছি। এক আমাদের এই তল্লাটে কোনো রাইস মিল নেই, আমি চিকনাকে দিয়ে একটা ছোটো খাটো মিনিরাইস মিল চালু করেছি, কিছুদিন হলো, এটাকে বর করবো। এতে আমি মিত্রা চিকনা আর নীপাকে রেখেছি। দুই বাজারে একটা জায়গা দেখেছি, ইসলামভাই দেখে এসেছে। ওর পছন্দ। আমি একটা কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক তৈরি করতে চাই। এতে থাকবে তুমি মিত্রা ছোটোমা বড়োমা দাদা মল্লিকদা ইসলামভাই। তিন তুমি আমাকে এইখানে বাস রাস্তার ধারে ৩০০ একর জমি জোগাড় করে দেবে, পয়সা যা লাগবে দেওয়া যাবে। সেখানে একটা কৃষিখামার তৈরি করবো সেখানেও তোমরা সাতজনে থাকবে। বলো এবারে তোমাদের বক্তব্য।
তুই থাকবি না কেনো। বড়মা বললো।
বেশ কথা বললে, আমি খাতা কলমে নেই কিন্তু আমি তো থাকছিই।
তোর কথা বুঝি না।
নিরঞ্জনদা হাসলো। ইসলামভাই হাসছে।
তুই অনেক বড় খেলা খলতে চাইছিস। ইসলামভাই বললো।
নিরঞ্জনদা ইসলামভাই-এর কথায় শায় দিলো।
মিত্রা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকেই বড়মাকে জড়িয়ে ধরলো। আজকের রাতের মেনুগুলো দুর্দান্ত বুঝলে, আমি কিন্তু তোমার পাশে এখন থেকে বলে রেখছি।
বড়মা ওর দিকে তাকালো, হেসে ফেললো। অনি কোথায় যাবে।
ও ছোটোমার পাশে।
ঠিক আছে তুই বোশ এখন।
নীপা চা নিয়ে এসেছে।
মিত্রা ওর কাছে গিয়ে বললো তুই ঢেলে দে আমি দিয়ে দিচ্ছি। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মাছের বড়া তোর ভাগের একটা আসার সময় খেয়ে নিয়েছি।
আমি হাসলাম, মাছের বড়া দিয়ে চাটা বেশ ভালো জমলো। মিত্রা বললো, বুবুন তোরা কথা বলনা আমি ওই বাড়িতে যাই।
আমি ওর দিকে তাকালাম, যা বেশি খাস না শরীর খারাপ করবে।
কই খেলাম বলতো, বিকেল থেকে কিছু খাই নি।
ঠিক আছে খা সহ্য করতে পারলে ভালো।
ও নীপা বেরিয়ে গেলো।
নিরঞ্জনদা চায়ে চুমুক দিলো।
টাকা পাবি কোথায়।
ভূতে জোগাবে।
নিরঞ্জনদা হাসলো।
ওই তোর এক কথা। বড়মা বললো।
টাকা না থাকলে কি আমি এগুলো চিন্তা করি।
বেশ তুই থাকবি না কেনো।
আমি দাদাকে কলকাতায় রাখতে চাই না। দাদা মাসে সাতদিন কলকাতায় থাকবে, আর বাকিকটা দিন এখানে থাকবে। তুমি আর কিছু বলবে। দাদাকে সরাতে পারলে তোমরাও চলে আসবে।
কেনো সরাতে চাইছিস।
দাদা মানসিক ভাবে ক্লান্ত, মুখে কিছু বলে না।
বড়মা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
বলতে পারো কাজের ফাঁকে এটা রেস্টের জায়গা।
৩০০ একর জায়গায় কি করবি।
বলতে পারো একটা আধুনিক গ্রাম বানাবো, সেখানে গোয়াল ঘর থাকবে পোলট্রি থাকবে আধুনিক রেস্তোরাঁও থাকবে। আমার ৩০০ একর জায়গার মধ্যে ১০০ একর জল থাকবে।
আমি বুঝতে পারছি তুই কি করতে চাইছিস। কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কের কনসেপ্টটা।
এখানকার সুদখোর গুলোর পেটে লাথি মারবো বলতে পারো।
নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো।
গ্রামের রাজনীতি তো বুঝিস।
পাবলিক পাশে থাকলে কে আসবে বলোতো।
সেটা ঠিক।
তোর ব্যাঙ্কে কে এ্যাকাউন্ট খুলবে এই গ্রামের লোক, এরা দিন আনে দিন খায়।
আমি প্রথমে লোন দেবো, যাদের লোন দেবো তারাই এ্যাকাউন্ট খুলবে। দেখো মান্থলি ফাইভ পার্সেন্ট সুদের থেকে তো কম পাবে। তাছাড়া প্রথম প্রথম ছোটো ছোটো লোন দাও একহাজার থেকে পাঁজহাজার পযর্ন্ত তারপর রিকভার হলে বড়ো লোন। তোমাদের সরকার কৃষি লোন কতো দেয়। তার হেপা কতো বলোতো। যে ছেলেগুলো এই গ্রামে পরে পরে নষ্ট হচ্ছে তাদের কাজে লাগাতে পারবো তো।
তুই অনেক বড়ো স্কিম করেছিস।
তা বলতে পারো। আমি ইমপ্লিমেন্ট করবো, তোমরা সামলাবে।
আমি পার্টি ছেড়ে কি করে সময় দেবো বলতো।
তুমি চাওনা এখান থেকে তোমার সিট বারুক।
তা চাই।
তাহলে তোমায় কাজ করতে হবে। এটা একটা হাতিয়ার হিসাবে ধরো না। একনো তিনবছর বাকি আছে। আমি তোমায় বলছি, দাঁড় করিয়ে দেবো। তুমি অন্যান্য জায়গায় ব্রাঞ্চ ওপেন করো তারপ একটা সমবায় আন্দোলন করো, কেউ দাঁত ফোটাতে পারবে না। আমি তারপর একদিন কাগজে গল্পটা লিখে দেবো। দেখবে সেন্ট্রাল থেকে তুমি অনেক সাহায্য পাবে।
নিরঞ্জনদা হাসছে। তোর মাথায় আর কি কি আছে বলোতো।
সাতদিন পরে বোলবো। কলকাতায় যাই পর্শুদিন। ওখানে আমার ছেলেপুলেগুলোর সঙ্গে একটু কথা বলি তারপর বলবো।
আমি কবে যাবো। ইসলামভাই বললো।
তোমাকে যেদিন যেতে বলবো সেদিন যাবে।

ওরে আমার কিছু কাজকর্ম আছে।
মাথাতো অনেক খাটিয়েছো, এখান থেকে অপারেট করতে পারছো না।
করছি তো।
আরো কয়েকদিন করো। আমি গিয়ে একটু হাওয়া বুঝি।
তোর মিঃ মুখার্জী সুবিধার লোক নয়।
দেখো ইসলামভাই আমি বেড়ালকে রান্নাঘর দেখাই আবার রান্নাখাবারে বিষ মিশিয়ে রাখতে পারি বেড়াল জানতেও পারবে না।
অনি। ছোটোমা বললো।
আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলাম, ভাবছো অনি কি বস্তু। আমি ধর্মনীতি রাজনীতি দুটোই করি। গীতা পরো সব বুঝতে পারবে।
বড়মা আমার পিঠে হাত বোলাচ্ছে।
জানিষ আমি ভাবছি ঘন্টা কানেক আগের অনি আর এই এখনকার অনির মধ্যে কত পার্থক্য।
ঠিক বলেছো নিরঞ্জনদা, তুমি ঘন্টা খানেক আগে ভেতরের অনি দেখেছো, এখন তুমি বাইরের অনিকে দেখছো। আমি ভাতর আর বাইর দুটো সত্বাকে কখনই এক হতে দিই না। বলতে পারো এ শিক্ষাটা দাদার কাছ থেকে পাওয়া।
তুই তো কালকে আমার যাওয়া বন্ধ করে দিলি। ভেবেছিলাম কালকে সকালে পালাবো। এখন দেখছি পালানো যাবে না।
ঝেঁটা মারি তোর মুখে লজ্জা করে না তোর, কয়েকঘন্টাক জন্য তোকে কে আসতে বলেছে।
সবাই হেসে ফেললো।
তুমি বুঝছো না দিদি।
ঢং রাখ, ছেলেটা কথা বলছে তার উত্তর দে।
আমি কি উত্তর দেবো। ও সব প্ল্যান প্রোগ্রাম করে রেখেছে, আমি না বললেও ও করবে হ্যাঁ বললেও করবে। ওর এ্যাডামেন্টটা লক্ষ করেছো।
আমি মুখ নীচু করে আছি। ইসলামভাই মুচকি মুচকি হাসছে।
তোর কাছে রেডি ক্যাশ আছে। নিরঞ্জনদা বললো।
কতো।
লাখ দশেক টাকা।
এখুনি হবে না, কালকের দিনটা সময় দাও পর্শুদিন অফিস থেকে নিয়ে চলে আসবো।
একটা কথা বলবো অনি। ইসলামভাই বললো।
বলো।
টাকাটা যদি আমি দিয়ে দিই।
তুমি কি এতো টাকা ক্যারি করছো নাকি।
জানিনা তবে মনে হয় রতন এর বেশিই আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ওকে তো বলি নি কোথায় যাবো। খালি বললো ফোন করে দেবে পৌঁছে দেবো। তা এখানে এসে যা দেখছি রতনের সাধ্য নেই পৌঁছায়, আর এখানে খরচ করার জায়গাই বা কোথায়, জিলিপি খেতে গেলাম পয়সা লাগলো না।
তোমার পরিচয় ওরা জানে নি তো।
না এখনো গোপন আছে, তবে জানিনা জেনে ফলবে হয়তো।

নীপা।
না। যদি মিত্রা বলে না থাকে।
ওটা মিত্রা করবে না। এসব দিকে ওর মাথাটা একটু বেশি কাজ করে, আরে বাবা ব্লাডটা আছে তো। তাহলে ওই সময় ও তিনশো ষাটডিগ্রী ঘুরে যেতো না। ওর জেদ প্রচন্ড বোঝো না। এমনি ঠিক আছে, খেপে গেলে ডেঞ্জার, নীপা দেখেছে সেই বারে।
ও তোর জিনিষ তুই বুঝবি।
সে তো বলবেই কাজ গুছিয়ে নিয়েছো না প্ল্যান করে।
ছোটোমা আমার কানটা ধরে নেড়ে দিলো।
আঃ লাগবেরে ছোটো।
দেখলি মুন্না, নিজে ধরলে কিছু না আমি ধরলে লাগবে।
নিরঞ্জনদা ইসলামভাই হাসছে।
চল খাওয়া দাওয়া করি কাল সকালে দেখা যাবে, বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা পরছে।
কি হলো বলবি তো। বড়মা বললো।
অনি যা বললো তাই হবে।
তোর দাদাকে ফোন করে জানা।
আরে বাবা জানাবো খোন। এখনো অনেক সময় আছে, নিরঞ্জনদা ঘড়ির দিকে তাকালো, বাবাঃ সাড়ে দশটা বাজে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ওরা সবাই উঠলো। একসঙ্গে এ বাড়িতে এলাম।
বারান্দায় অনাদিরা সবাই বসে আছে, আমাদের দেখে ওরা উঠে দাঁড়ালো, নিরঞ্জনদা বললো অনাদি।
হ্যাঁ দাদা।
ঠিক আছে থাক খেতে বসে বলবো।
ভেতরে এলাম, অনাদি আমার পাশে, মুখটা শুকনো করে বললো, কিরে কিছু গরবর।
আমি ইশারায় বললাম না।
অনাদি হাসলো। যেনো ধরে প্রাণ এলো।
মিত্রার গলা শুনতে পাচ্ছি, ফুল ফ্লেজে ব্যাট করছে, বড়মাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো, দারুন মজা হচ্ছে যানো।
তাই।
হ্যাঁ গো ভজু গান গাইছে। বলে কিনা বুবুন টিন নিয়ে তবলা বাজাতো ও গান করতো।
বড়মা তাকালো মিত্রার দিকে এই ঠান্ডাতেও ওর কাপালে হাল্কা ঘামের ছোঁয়া।
অনেক দৌড়ো দৌড়ি করেছিস এবার একটু থাম।
আমি তো থেমেই আছি।
খাবি তো।
হ্যাঁ।
জায়গা কর। সুরমাসি হলো গো।
হ্যাঁ দিদি হয়ে গেছে।
কাঞ্চন লতা ভজু একসঙ্গে বসে ছিলো। ভজু উঠে এলো। বড়মা তোমার হাঁটু মালিশ করা হলো না।
শোয়ার সময় একটু করে দিস।
ঠিক আছে। বসে বসে গা ব্যাথা হয়ে গেলো।
বড়মা ভজুর কথায় হাসছে।
দেখলাম ছোটোমা কোমরে কাপর জড়ালো, বুঝলাম এবার রান্না ঘরে ঢুকবে। দালানে টানা আসন পাতা হচ্ছে। মিত্রা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমার হাতটা ধরলো। আমি ওর দিকে তাকালাম, চোখে খুশির ছোঁয়া ক্লান্তি সারা মুখ জুড়ে।
কি।
আমি যাবো।
রান্নাঘরে।
হ্যাঁ।
পারবি।
পারবো।
যা।
কোমরে কাপরটা গুঁজে নিলো। ছুটে চলে গেলো। ছোটোমা ওকে দেখে বললো, আমি বেরে দিই তুই আর নীপা দিয়ে আয়।
মিত্রা খুব খুশি।
রাতে কলা পাতা আর থালা নয়।
আমি সুরমাসিকে বললাম কাকার খাওয়া হয়ে গেছে।
হ্যাঁ খাইয়ে শুইয়ে দিয়েছি।

বেশ করেছো।
আমি একবারে ধারে আমার পাশে বড়মা তারপাশে মিত্রা তার পাশে ছোটোমা তারপাশে নিরঞ্জনদা তারপাশে ইসলামভাই তারপাশে নীপা এরপর সবাই লাইন দিয়ে বসেছে, অনাদিরা আমাদের ঠিক অপজিটে বসেছে। কাঞ্চন লতা দেখলাম বোসলো না। কাকীমা, ছোটোমা নীপা মিত্রাকে ঠেলে রান্নাঘর থেকে বের করে দিয়েছে। ওরা এসে বসলো।
তুই এখানে কেনো।
কেনো তুইতো বড়মা ছোটোমার মাঝখানে বসছিস।
না। তুই আমি বড়মা ছোটোমার মাঝখানে বসবো।
বুঝেছি, মাথায় রাখবি আমার পাতে হাত দিতে পারবি না।
এই শুরু করলি দুজনে।
ইসলামভাই নিরঞ্জনদা মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি বসে পরলাম, বড়মা আমার আসনে গেলো।
খাওয়া শুরু করলাম।
নিরঞ্জনদা বললো মিত্রা তুই তো সব টেস্ট করেছিস।
মিত্রা মাথা দোলালো।
কোনটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে।
এখন বলবো না।
কেনো রে।
বুবুন নেবে না, ওর পাতেরটা খেতে হবে না।
নিরঞ্জনদা বিষম খেলো। বড়মা হাসছে। ছোটোমা মুখে হাত চাপা দিয়েছে। আমি গম্ভীর। নীচু হয়ে খেয়ে যাচ্ছি।
কটা মাছের ডিমের বড়া খেয়েছিস।
বেশিনা পাঁচটা।
সকাল থেকে পটি করেছিস।
না।
এখানে কিন্তু এ্যাটাচ বাথরুম নেই।
জানি তোকে বক বক করতে হবে না। মাঠেতো যেতে হবে না। আবার ঝক ঝকে লাইট আছে।
অনি। ছোটোমা ডাকলো।
আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম।
তুই ওর পেছনে লাগছিস কেনো।
জানো ছোটোমা বড়মা এখন শুনতে পাবে না, যেই মিত্রা বলবে অমনি বড়মা শুনতে পেয়ে যাবে।
বড়মা চাপা হাসি হাসতে হাসতে বললো তুই থাম বাপু।
লতা আমার পাশে একটা বাটি রেখে গেলো। বুঝলাম চিংড়ি মাছের টক।
তোর এই বাটিটা এখানে রাখ।
এটা কি।
তোর স্পেশাল।
তোকে দেবে না।
তোর মতো মেখে দেবে না।
সুরমাসি মুখে কাপর চাপা দিয়ে হাসছে।

নিরঞ্জনদা ইসলামভাই মুখ তুলছে না। মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে, অনাদিরাও হাসছে।
অনাদি। নিরঞ্জনদা ডাকলো।
হ্যাঁ দাদা।
বাজারের জায়গাটা কার রে।
অনাদি বললো।
বাজারের প্রসিডেন্ট কে।
বাসু।
কোনজন।
অনাদি দেখালো, বাসু মুখ তুললো।
বাসু।
বলুন।
কাল ওকে একবার সকালে ডেকে আনিস তো। কথা বলবো।
ঠিক আছে।
তোরা ওর সঙ্গে কথা বলেছিস তো।
হ্যাঁ।
কি বুঝলি।
দিয়ে দেবে।
মিত্রা আমাকে খোঁচা মারলো। ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো কি।
আমি মাথা নীচু করলাম, এবার বড়মার দিকে ঢলে পরলো বড়মাকে জিজ্ঞাসা করলো, বড়মা ওকে কি বললো, ও আবার খেতে শুরু করে দিলো।
আমি নিরঞ্জনদাকে বললাম, সঞ্জু মেশিনের কোটেসন নিয়ে এসেছিলো।
কে সঞ্জু।
সঞ্জু মুখ তুলেছে, খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
ও। তোমারও কি ওখানে দোকান আছে নাকি।
হ্যাঁ। ও সক্রেটারি। অনাদি বললো।
ওরে বাবা, অনি এতো দেখছি পঞ্চায়েত প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি সব তোর বাড়িতে হাজির তোর আর চিন্তা কিসের।
তোমারটা বললে না।
আমিতো ফাউ। তাই না মিত্রা।
মিত্রা বললো, এই দেখো এটা টেস্ট ফুল একটু খাও। আমার বাটি থেকে তুলে নিয়ে নিরঞ্জনদার পাতে দিলো, এখনো এঁঠো করি নি।
এটা সকালে খেয়ে এলাম রে। পান্তার সঙ্গে দারুন লাগে।
কাল সকালে খাবো কাকীমা বলেছে।
আমার বাড়িতে চল তোকে খাওয়াবো।
কবে নিয়ে যাবে।
তুই বল কবে যাবি।
বড়মাকে বলো।
ভাবছি, তোর বড়মা আমাকে হুকুম করে নিয়ে এলো, আমি এবার তোর বড়মাকে হুকুম করে নিয়ে যাবো।
এখনি করো না।
এখন না পরে কয়েকটা কাজ আছে সেরে নিই।
বুবুন যাবে না।
কেনো রে।
ও বড় খ্যাচ খ্যাচ করে, আমি বড়মা ছোটোমা।
নিরঞ্জনদা হাসছে।
কিরে তুই নিলি না।
না। তুই খা।
বললাম বলে রাগ করলি।
না।
তাহলে আমিও খাবো না।
রেখেছিস কোথায় সবইতো খেয়ে নিয়েছিস।

ওই তো রয়েছে।
ওটুকু তুই খা। কাল নিজে মেখে পান্তা দিয়ে সাঁটাবো।
দেখছো বড়মা কিরকম করে।
ঠিক আছে দে।
আমি একটু খেলাম। বড়মার পাত থেকে কি কি সাঁটালি। একেবারে ঠেসে নিয়ে বসেছিস।
তুইতো ছোটোমার পাত থেকে একটা মাছ নিলি।
তোর থেকে কম।
বলেছে। মুখ ভ্যাংচালো।
আঙুল চাটলি না।
আচ্ছা অনি তোরও ........
হাসলাম।
খাওয়া শেষ হোক চাটবো।
এখনো শেষ হয় নি।
বড়মার পাতে চিংড়ি মাছটা আছে, বড়মা দিক ওটা সেঁটে নিয়ে চাটবো।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, ইচ্ছে করে বললো অনি নে।
না ওকে না আমাকে, কখন থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে আছি।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাঁসছি।
নিরঞ্জনদা বললো তোর অনারে জব্বর খাওয়া হলো বুঝলি মিত্রা।
কালকের মেনুটা আরো স্ট্রং।
কোনোরে।
মুন্নাভাই স্পনসর করছে।
তাই নাকি।
ও বাড়িতে রান্না হবে।
এ বাড়িতে নয় কেনো।
ঠাকুর আছে।
ও।
উঠি এবার।
তোমার পেছন পেছন আমিও যাচ্ছি।
মিত্রা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
কে হলো।
দেখো না বুবুনটা চিংড়িমাছটা খেয়ে নিচ্ছে, হাফ দে।
নিরঞ্জনদা হাসছে। ইসলামভাই হাসছে।
ছোটোমার পাতে একটা আছে। আমি বললাম।
তুই ওখান থেকে হাফ দে আমাকে আমি এখান থেকে হাফ দিচ্ছি তোকে।
তাই করলাম। বড়মা ছোটমা হাসছে।

অনাদিরা সবাই চলে গেলো, সঞ্জুর দুটো ছেলে রয়েছে, আমি বললাম সব লাইট জেলে আর লাভ নেই যে কটা প্রয়োজন জেলে রাখ। আমি আমার ঘরে চলে এলাম। নতুন পাজামা পাঞ্জাবী ছেড়ে আমার চিরাচরিত পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম, একটা সিগারেট ধরালাম, জানলাটার ধারে এসে বসলাম, লাইটটা ইচ্ছে করে নেভালাম না। ভাবছিলাম আজ বিকেলের ঘটনা, কেমন যেনো সব ওলট পালট হয়ে গেলো, প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু ইচ্ছে থাকে, সেই ইচ্ছে গুলো পুরন করার জন্যই আমাদের ভাবনা চিন্তার পরিকাঠামোর রদ বদল ঘটে নিরন্তর। আমি আমার চিন্তায় মগ্ন, বড়মা বড়মার চিন্তায়, ছোটোমা ছোটোমার চিন্তায় আর মিত্রা আছে মিত্রাকে নিয়ে, ও যানে ওর অনি আছে। সবচেয়ে বেশি বিপদজনক এই নির্ভরশীলতা, তাও আবার অন্ধের মতো, তারমানে আমার ভালো খারাপ সব তোমার। মাঝে মাঝে মিত্রার ওপর রাগ হয়, অভিমান হয়, আবার দুঃখও হয়, সত্যিতো ওরই বা কি করার আছে, এই রকম একটা পজিশনে ও যে পরতে পারে এটা ও কোনোদিন ভাবে নি। কলেজ লাইফে ওকে যতটুকু দেখেছি, তাতে এটুকু বুঝতাম, মিত্রা পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে কিন্তু ওর মধ্যে কোনো দম্ভ কোনোদিন দেখতে পাই নি। তবে চলনে বলনে একটা বনেদিয়ানার ছাপ ওর মধ্যে সব সময় ছিল।
কিরে একা একা কি করছিস।
ছোটোমা।
পোষাক বদলানো হয়েগেছে, আমার কাছে এগিয়ে এলো, আমি সোজা হয়ে বসলাম।
ওরা শুয়ে পরেছে।
না বিছানা হচ্ছে।
মিত্রা গেলো কোথায়।
বাবা এরি মধ্যে চোখের আড়াল করতে চাইছিস না যে।
না সেরকম কিছু না। ওষুধ গুলো খেয়েছে।
হ্যাঁ।
তুমি এই সময়।
কেনো আসতে নেই বুঝি।
এসো, বোসো।
আমি খাটটা দেখালাম।
না বাবা যাই অনেক কাজ, ভজু দিদির হাঁটু মালিশ করছে, কইরে আয় আর লুকিয়ে থাকতে হবে না।
মিত্রা ঘরে এলো। তোকে কিরকম সাসপেনসের মধ্যে রাখলাম বল।
মিত্রার পোষাক এখনো চেঞ্জ হয় নি।
সব কিছু করে এসেছিস তো, এখানে কিন্তু কিছু পাবি না। সেই আগেরবারের মতো অবস্থা হবে।
হ্যাঁ রে বাবা হ্যাঁ, ছোটোমাকে জিজ্ঞাসা কর।
আমার জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই, অসুবিধে হলে ও বাড়িতে গিয়ে বড়মার কাছে শুয়ে পর।
উরি বাবারে কি হয়েছিস রে অনি তুই।
কেনো।
আজকের দিনে ও বড়মার কাছে শোবে।
এটাতো আমার ঘর না এটাচ বাথরুম আছে সামলে দেবো।
এটা কার ঘর।
হেসেফেললাম। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks