দেখি নাই ফিরে - (Part-42)

বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম মিত্রা ঘাটের ধারে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কাঁধে টাওয়েলটা। গাছের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে আছে। আমি পা টিপে টিপে ওর পেছনে এসে দাঁড়ালাম। ওর মতো মাথা তুলে তাকালাম। দেখলাম একটা টিয়াপাখি আর একটা টিয়াপাখির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে টানাটানি করছে। মাঝে মাঝে একটা ট্যাঁও ট্যাঁও করে উঠছে। মিত্রা একদৃষ্টে ওইদিকে তাকিয়ে আছে। আমিও ওর পেছনে। পাখিদুটো হঠাৎ উড়ে গেলো। মিত্রা আপন মনে বলে উঠলো। যাঃ। ঘুরতে গিয়ে আমার গায়ে আছাড় খেয়ে পরলো। আমাকে জাপ্টে ধরলো। ফিক করে হেসে বুকে মুখ রাখলো।
দিলি তো ছুঁয়ে।
কেনো।
আমি পটি করে এসেছি। চল স্নান করবি আমার সঙ্গে।
এখন।
হ্যাঁ।
চল কি মজা হবে।
ও ছুটে চলে গেলো। নীপাকে ডেকে জামাকাপর আনতে বললো। আমি ততক্ষণে জলে নেমে গেছি। নীপা জামাকাপর দিয়ে গেলো। বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো। যতো দুষ্টু বুদ্ধি, দাঁড়াও বড়মাকে ডাকছি। নীপা চলে গেলো। মিত্রা নেমে এলো।
কাপরটা কোমরে ভালো করে বেঁধেনে না হলে পায়ে জড়িয়ে যাবে।
তুই বেঁধে দিয়ে যা। আমি উঠে এসে ভালোকরে পেঁচিয়ে বেঁধে দিলাম।
দুজনে নেমে গেলাম জলে। সাঁতার কাটছি।
জানিস বুবুন এখানকার জলটা বেশ ভারি। আমাদের ক্লাবের সুইমিং পুলের জলটা হাল্কা।
ওটা পিউরিফায়েড ওয়াটার। এটা বাঁশবাগানের পাতা পরা জল।
অনেকদিন পর সাঁতার কাটছি। নীপাটা কিছুতেই জলে নামতে দেয় না।
তোকে ভয় পায়।
যাঃ। চল ওপারে যাই।
দম আছে।
তুই আছিস তো। এক্সপার্ট।
হাসলাম।
হাসিসনা।
ওপারে কিন্তু দাঁড়ানো যাবে না। প্রচুর পাঁক।
ঠিক আছে।
দুজনে ওপারে সাঁতরে চলে গেলাম। ফিরে তাকাতেই দেখি, ছোটমা বড়মা নীপা ইসলামভাই দাঁড়িয়ে আছে।
ওরে ফিরে আয় ঠান্ডা লাগবে।
মিত্রা বড়মার দিকে তাকিয়ে হাত নারলো।
কিরে ফিরে যেতে পারবি। না পিঠে উঠবি।
চল যতটা যাওয়া যায়। তারপর তোর পিঠে উঠে যাবো।
আমার সাঁতরাতে আরম্ভ করলাম। মাঝ পথে এসে সত্যি মিত্রা হাঁপিয়ে গেলো।
বুবুনরে এখানে কি গভীর টানতে পারছি না।
আমার গলাটা জড়িয়ে ধরে ভেসে থাক।
দুজনে পারে উঠলাম। বড়মা হাসছে।
তুই সাঁতার কাটতে জানিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।
বুবুন ছিলো তাই নামলাম। নীপাটা নামতে দেয় না।
ঠিক আছে কালকে তুই নামিস। আমি থাকবো।
আমি মিত্রার কোমরের দিকে তাকালাম। চকচক করছে কোমরাটা। আমি হাত দিতেই ও সরে দাঁড়ালো।
দাঁড়া দাঁড়া একটা জিনিস দেখাচ্ছি।
নীপা দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে ও বুঝতে পেরেছে।
তুমি নেবে না আমি নেবো।
মিত্রা বুঝতে পারেনি। ও চেঁচিয়ে উঠলো কি বলবিতো।
দেখনা।
নীপা মিত্রার কোমরে জড়ানো কাপরটা থেকে একটা চারাপোনা বার করলো।
মাছ। মিত্রার চোখ চকচক করে উঠলো।
তুই সাঁতার কাটলি আবার কোঁচরে করে মাছও ধরে আনলি।
এবার নীপা মিত্রা দুজনে লেগে পরলো। আমি স্নান সেরে উঠে এলাম। বড়মার দিকে তাকিয়ে ইশারাকরে বললাম। দুজনকে বলেছো ব্যাপারটা।
বড়মা ইশারায় জানালো হ্যাঁ।
ছোটমা মুচকি হাসছে।
হেসোনা হেসোনা, মেঘ গর্জন করে আবার বর্ষায়।
বুবুন এই দেখ।
মিত্রা মাছটা ধরে রয়েছে। মাছটা ওর হাতের মধ্যে ছটফট করছে।

ছেড়েদে।
উঁ। ভেজে খাবো।
ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

 

আজকে অনেকে এসেছে। বাঁশবাগানে জোর খাওয়া চলছে। চিকনারা অনেককে বসিয়ে দিয়েছে। আমি ওখানে একবার গেলাম। চিকনা এগিয়ে এলো।
গুরু সব ঠিক আছে।
এতো বিরাট আয়োজন।
মুন্নাভাই বলেছে টাকার জন্য কার্পণ্য করবে না। যা লাগবে নিয়ে এসো। সবাইকে পেট পুরে খাওয়াও।
মেনু কে ঠিক করেছে।
মুন্নাভাই দুটো আইটেম বলেছে। বাকি অনাদি বাসু। তোর জিলিপি আছে, ভাজা হচ্ছে। পইড়্যা ঘরের বুড়ো এসেছে।
যাই একবার দেখে আসি।
আমি রান্নাঘরে এলাম। এবাড়ির রান্নাঘরটা মনে হয় অনেক দিন পর ব্যাবহার হলো। বাসু অনাদি পইড়্যাঘরের বুড়োকে ইনস্ট্রাকসন দিচ্ছে সাইজ কত বড়ো হবে।
আমি যেতে হেসে ফেললো।
তোর এতোক্ষণে সময় হলো।
আমার জন্য কি কিছু আটকে আছে।
অনাদি হেসে ফেললো।
সিগারেট খাবি।
খিদে লেগেছে খেয়ে নিই।
একটা কাজ করবি অনাদি।
বল।
আমি পইড়্যা ঘরের বুড়োর কাছে গিয়ে বসলাম।
কাকা।
বল।
তোমার তাবার মতো সাইজের পাঁচটা জিলিপি ভাজতে পারবে।
তুই বললে ভেজে দেবো।
তুমি ভাজো।
অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাসু হাসছে।
বুঝেছি তুই কি করবি।
পাঁচটা কেনো গোটা দশেক ভেজে নিই।
আবার মাখতে হবে।
দূর ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
সঞ্জুকে দেখতে পাচ্ছিনা।
ও জেনারেটরটা একবার দেখতে গেছে।
এতো মেলা লোক দেখছি। পরিবেশন করবে কে। গামছাটা কোমরে বাঁধি।
তুই আর জালাস না বড়মা আস্ত রাখবে না।
হাসলাম।
মিত্রাকে একবার ডাক কি করে জিলিপি ভাজা হয় দেখে যাক।
না। এসে ঝামেলা করবে।
বুবুন তুই এখানে!
বাসু হাসছে। অনাদি মুখ ভ্যাটকালো। চিকনা মিত্রার পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
একটা দে।
অনাদি এই ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে। ওকে বল।
ও দেবে না। সকাল থেকে আমার ওপর গরম।
মিত্রার কথা বলার ঢঙে অনাদি হেসে ফললো।
কাকা দুটো দাওতো। দিই। নাহলে মাথার পোকা বার করে দেবে।
মিত্রা হাসছে।
হেবি মাঞ্জা লাগিয়েছিস।
ছোটমার কাপর। আমি ভাঙলাম।
জিলিপি কামরেই বললো। মাত্র দুটো।
বেশি খেলে খেতে পারবি না।
ঠিক আছে। হিসেব করে খেতে হবে।
বাসু হাসছে। অনাদি ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে হাসছে।
তাড়াতারি সার। বিকেলে নিরঞ্জনদা প্রোগ্রাম করেছে।
কোথায়রে।
চল দেখবি।
উনামাস্টার তোকে একবার ডাকছে। চিকনা এসে বললো।

অনাদি বললো কোথায়।
ও বাড়িতে। তিন মাস্টার বসেছে।
কে কে।
উনা পোকা মনা।
আরি ব্যাস। চল চল স্যারকে একবার পেন্নাম ঠুকে আসি।
বাসু অনাদি আমি মিত্রা চিকনা এ বাড়িতে এলাম। বারান্দায় সবাইকে সারি বদ্ধভাবে বসে থাকতে দেখলাম। বড়মা জমিয়ে গল্প করছে। আমায় দেখেই বললো আয়। তোর উনামাস্টারের সঙ্গে গল্প করছি। তোর গুণের কথা বলছে।
আমি মাথা নীচু করলাম। সবাইকে একধারসে পেন্নাম ঠুকতে আরম্ভ করলাম। আমার পেছনে লাইনদিয়ে ওরা সবাই।
উনামাস্টার পোকামাস্টার আমার মিত্রার মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালেন। মিত্রা এতদিন গল্প শুনেছে। দেখে নি। ও অবাক হয়ে দেখছিলো। তারপর উনামাস্টারের দিকে তাকিয়ে বললো। তুমি ওকে মারতে কেনো।
দালান শুদ্ধ সব লোক ওর কথা বলার ঢঙে হো হো করে হেসে ফেললো।
উনামাস্টার মিত্রাকে কাছে ডেকে নিয়ে ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বৃদ্ধের হাত থর থর করে কাঁপছে।
ওকে যদি না মারতাম মা তুমি পেতে কেমন করে। ও যে বয়ে যেতো।
মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
তোমায় কথা দিচ্ছি ওকে আর কোনদিন মারবো না।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
তুমি মারবে কি করে ও এখন বড় হয়ে গেছে।
ঠিক বলেছো। এবার আমার হয়ে তুমি ওকে মারবে।
দেখেছিস বুবুন স্যার অর্ডার দিয়েছে। মনে রাখিস।
বড়মা নিরঞ্জনদা ইসলামভাই ছোটমা সবাই হাসছে।
যাও বেলা হলো খেয়ে নাও।
তোমরা খাবে না।
আমরা এ বাড়িতে তোমরা ও বাড়িতে।
আমি স্যারের কাছ গেলাম। আস্তে করে বললাম আপনি খেয়ে নিন কিছু কথা আছে।
আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত আছি। এক ফাঁকে বলিস।
সবাই হৈ হৈ করে খেতে বসলাম। আজ মিত্রা আমার পাশে বড়মা আর এক পাশে তারপাশে ছোটমা। সবাই সারিবদ্ধভাবে বসেছি। কাঞ্চন লতা চিকনা পরিবেশন করছে ওরা আগে খেয়ে নিয়েছে। সঙ্গে নীপার তিন-চারজন বন্ধু আছে। বুঝলাম সবার আজ লক্ষ্য মিত্রা। সবাই টেরিয়ে টেরিয়ে মিত্রাকে দেখছে। ওকে আজ দেখতেও বেশ সুন্দর লাগছে।

প্রথমে ফ্রাইড রাইস পরলো তারপর মাছের চপ তারপর মাংস চলে এলো। এইবার মিত্রার খেলা শুরু হয়ে গেলো।
কিরে তুই কম কম নিচ্ছিস।
ওর দিকে তাকালাম। মুচকি হাসলাম।
বড়মা, কিছু ফন্দি এঁটেছে না।
তুইতো ছিলি ওর সঙ্গে সারাক্ষণ, তোকে কিছু বলে নি।
আমাকে বলে!
তাহলে।
আমিও কম কম নিই।
ঠকে যাবি। আমি বললাম।
ঠকলে ঠকবো। তুই কম খাবি আমিও কম খাবো।
রাতে পাবি না।
হুঁ চিকনাকে বলবো রেখে দিতে, বাকিটা রাতে খাবো।
রাতে অন্য মেনু।
ইসলামভাই হাসছে।
নারে। অনি মিথ্যে বলছে। তুই খা। বিরিয়ানিটা কেমন হয়েছে বল ?
দারুণ। অনি নেয়নি দেখেছো। খালি ছুঁয়েছে।
ও খানেওয়ালা লোক নয়। তুই খেতে পারিস। তোর জন্যই বানালাম।
শেষে দই মিষ্টি এলো। ওদের সবাইকে মিষ্টি দই দিলো। আমাকে চিকনা একটা টক দই-এর হাঁড়ি বসিয়ে দিয়ে গেলো।
তাই বলি তুই কম কম খাচ্ছিস কেনো। আমাকে পেট পুরে খাইয়ে দিয়ে তুই এখন দই-এর হাঁড়িতে চুমুক দিবি। তোকে খেতে দেবো না। ওটা রাতের জন্য থাকবে। সবাই খাবো।
ঠিক আছে চিকনা। দই খাবো না। জিলিপিটা নিয়ে আয়।
চিকনা জিলিপি নিয়ে এলো। কড়ার সাইজের এক একটা জিলিপি। বড়মা দেখে চোখ কপালে তুলেছে। নিরঞ্জনদা ইসলামভাই হাসছে।
ও বড়মা তুমি কিছু বলতে পারছো না সব একদিনে খাইয়ে দিলে হবে কি করে।
বড়মা হাসবে না কাঁদবে এমন ভাবে মুখ করে রয়েছে। নিরঞ্জনকে বল।
ও নিরঞ্জনদা তুমি কিছু বলতে পারছো না।
নিরঞ্জনদা পাতের দিকে মুখ করে ফিক ফিক করে হাসছে।
দশটা জিলিপি আছে। নিরঞ্জনদার একটা বড়মা ছোটমার একটা করে মুন্নাভাই ভজুর একটা করে। বাকি সব তোর।
বড়মা বললো আমি পুররো খেতে পারব না।
ছোটমা একি কথা বললো।

ছোটমা বড়মার ভাগ আমার। বল এবার দই না জিলিপি।
দুটোই খাবো। চেঁচিয়ে উঠলো। চিকনা জিলিপিগুল রেখেদাও রাতে খাবো। ছোটমার হাফ আমার বড়মার হাফ তোর।
রাখা যাবে না। একটু নেচে নে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
তুমি কিছু বলতে পারছো না। বড়মার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা আমার কান ধরে বললো তুই এতো বদমাশ কেনো। ওর পেছনে না লাগলে তোর ভাত হজম হয় না।
সবাই হাসছে।
মনে রাখিস তোলা রইলো। এর শোধ আমি নেবো।
সে তুই নিস আগে দই-এর হাঁড়িটা দে।
চুমুক দিয়ে খেতে হবে।
খাবো।
বাধ্য হয়ে চিকনাকে বললাম যা গ্লাস নিয়ে আয়। চিকনা দে ছুট। মিত্রা হাসছে, কিরকম দিলুম বল।
আমি একটু হেলে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম দেওয়াচ্ছি দাঁড়া।
বড়মা শুনতে পেয়েগেছে। মুচকি মুচকি হাসছে।
ছোটমা আমারা কান ধরে সোজা করলো।
বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো ও ছোট ছার আমি একবার ধরেছি।
চিকনা গ্লাস নিয়ে এলো। আমি ওকে বললাম। সবাইকে দে। বাকিটা মিত্রাকে দে ও খাবে।
ওমনি তোর রাগ হয়ে গেলো। যা খাবো না।
তোকে নিয়ে বড় বিপদ তুই খানা। যতটা পারবি খা তারপর আমি খাবো।
তুই খা তোরপর আমি খাবো।
পাবিনা।
দেখছো বড়মা কেমন করে।
ছোটমা হাসছে মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি দই-এর হাঁড়ি তুলে চুমুক দিলাম। মিত্রার দিকে তাকাচ্ছি। ও আমাকে একদৃষ্টে দেখছে। ওর তাকানোতে হাসি পেয়ে গেলো। আমি কোনপ্রকারে ঢোক গিলে হাঁড়ি নামিয়ে রেখে। হেসেফেললাম।
তুই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থেকে কি দেখছিলি।
তুই আর একবার খা।
না তুই খা।
আমি ওই ভাবে পারবো না।
ডাব খাস না।
ওতো স্ট্রদিয়ে খাই।
এখানে স্ট্র পাবি কোথায়।
দে চুমুক দিই।
মিত্রা হাঁড়ি মুখে তুললো। বেশি খেতে পারলো না। নামিয়ে রেখে বললো। মুখটা কেমন করলো। পেট আঁই ঢাই করছে। তুই খা।
জিলিপি।
রাতে খাবো।
মিষ্টি।
রাতে খাবো।
কিরে শরীর গন্ডগোল করছে নাকি।
না।
উঠে পর।
আমি ওকে ধরে তুললাম। ছোটমা বড়মার মুখ শুকিয়ে গেছে। বুঝেছে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমি ওকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে গেলাম। মুখ ধুইয়ে ওপরের খাটে শোয়ালাম।
নে পেটের কাপরটা ঢিলে করে দে।
ও কাপরটা ঢিলে করে দিলো।
ভেতরে কিছু পরা আছে।
ও ফিক করে হেসে মাথা দোলালো।
তোকে এখানে কে দেখবে রে। খোল।
মিত্রা খুলে দিলো। আমি আলনায় আমার পাঞ্জাবীর তলায় রাখলাম। টান টান হয়ে শো। সায়ার দড়িটা ঢিলে কর।
এবার বল বুকের ব্লাউজটা ঢিলে করতে।
এখুনি ওরা এসে হাজির হবে।
আমার কিছু হয় নি।
তখন মুখ ভেটকাচ্ছিলি কেনো।
বমি পাচ্ছিল।
লোভী।
তুই ওরকম বলিসনা।

তুই ওকে লোভী বলছিস কেনো।
ছোটমা ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে এলো। পেছন পেছন সবাই। ঘর ভরে গেলো। বড়মা গিয়ে মিত্রার মাথার শিয়রে বসলো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
কি হয়েছিলোরে হঠাৎ।
গা গোলাচ্ছিলো।
আমি ছোটমার দিকে তাকালাম।
কার্মোজাইম।
হ্যাঁ নিয়ে এসেছো।
নীপা ছুট লাগালো।
সকাল থেকে খালি খেয়ে যাচ্ছে।
তুই রাগ করছিস কেনো। না খেলে মানুষ বাঁচে।
বড়মা আর ঠিক থাকতে পারলো না। ফিক করে হেসে ফেললো।
নিরঞ্জনদা ইসলামভাই হাসছে।
রাতে খাওয়া বন্ধ।
ও বড়মা ওকে বলনা।
ঠিক আছে একটু শো। এখন বমিবাবটা কমেছে।
দইটা খেতে গেলি কেনো।
তুই খেলি কেনো।
আমার পেট আর তোর পেট।
কুত্তার পেটে ঘি সয়না বল।
এদিকে তো টনটনে জ্ঞান আছে।
সবাই আমাদের তরজা গানে হাসছে।
তুই চুপ কর। ছোটমা বললো।
আমি কাল সকালে কলকাতা যাব। এখানে ঠিক করে থাকবি। আমায় যদি কাজ ফেলে আসতে হয়। দেখবি মজা।
আর খাবই না।
সবাই মুখ টিপে হাসছে।
নিরঞ্জনদা বললো যাওয়ার ব্যাপারটা তাহলে কি করবি।
চলো যাবো। ও থাকবে। শরীর খারাপ। পরে পরে ঘুমবে।
মিত্রা তড়াক করে উঠে বসলো।
না না আমি ঠিক হেয় গেছি যেতে পারবো।
আমি ওর দিকে কট কট করে তাকালাম।
আমি তোর সঙ্গে যাবো না। বড়মার সঙ্গে যাবো।
বড়মা মুখ টিপে হাসছে।
নীপা ওষুধ নিয়ে এলো মিত্রা খেলো। আবার শুয়ে পরলো। ঘন্টা খানেক বাদে আমরা দুটো গাড়ি করে সবাই রওনা হলাম। আমাদের সঙ্গে এক্সট্র বলতে বাসু চিকনা অনাদি সঞ্জু গেলো। আমি এর মধ্যে সঞ্জুর ব্যাপারটা নিয়ে উনা মাস্টারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছি। উনি আমাকে না বলেন নি। বলেছেন তোর মাসীমার সঙ্গে কথা বলে তোকে জানাবো। কাকা বরং বলেছেন অনি যখন আছে তুমি নিশ্চিন্ত হতে পারো। ও বেগড়বাই করবে না। খবরটা চিকনার কান হয়ে সঞ্জুর কাছে পৌঁছে গেছে। অনাদি বাসু দুজনেই খুশি। জায়গাটা দেখলাম। সবাই খুশী জায়গাটা দেখে। আমি নিরঞ্জনদাকে বললাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করো। আমি দাদাকে বুধবার নিয়ে আসছি। এখানে তিনদিন রাখবো। তুমি কাল চলে যাও বুধবার একবারে রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে আসবে। ওখান থেকে বাড়ি।

মিত্রা আমার হাতটা ধরলো। আমার মুখের দিকে তাকালো। সূর্য সবে অস্ত যাচ্ছে। পশ্চিম আকাশের রং একবারে গাড় কমলা। তার ছোঁয়া মিত্রার মুখে।
কিরে মিষ্টি মুখ করাবি না। এতবড় একটা কাজ করবি।
আমি ওর দিকে তাকালাম। না পারছি হাসতে না পারছি কিছু বলতে।
বড়মা আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
তুই ওর কথায় হ্যাঁ বল না। আব্দার করে চাইছে।
এই ফাঁকা মাঠে আমি কি ভেজে খাওয়াবো।
হুর-রে বলে চিকনা গাড়ির দিকে ছুট মারলো। মিত্রা পেছন পেছন দৌড়চ্ছে।
নিরঞ্জনদা বড়মার দিকে তাকিয়ে বললো। পাগলিটা দৌড়লো কেনো।
ওই বা কি নিয়ে থাকে বল। একটু আনন্দ করতে চাইছে করুক।
নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো। তুমি ছোট এদের নিয়ে বেশ আছো।
মিত্রা ছুটতে ছুটতে এলো। সেই জিলিপি গুলো নিয়ে। আর রসগোল্লার হাঁড়ি।
আমি বললাম এগুলো বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিস।
সব হজম হয়ে গেছে বিশ্বাস কর। খিদে পেয়ে গেছে। আর বমি হবে না।
নীপা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। ওরকম করো কেনো অনিদা। মিত্রাদি আনন্দ করে বলছে।
উরি বাবা এতো সব দেখছি মিত্রার দলে।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো বউনি কর নাহলে আমরা পাবো না।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।

ফেরার পথে নিরঞ্জনদা আমাকে নিজের গাড়িতে তুলে নিলো। ওরা সবাই এক গাড়িতে। বুঝলাম নিরঞ্জনদা আমার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চায়। যতই হোক রাজনীতি করে। আলাদা ভাবে আমাকে বুঝে নিতে চায়। বড়মা একবার আপত্তি করেছিলো। তারপর মেনে নিলো।
গাড়ি চলছে। আমি চুপচাপ বসে আছি। বেশ কিছুক্ষণ পর নিরঞ্জনদা কথা বলা শুরু করলো।
অনি।
বলো।
আজকে তোর আর্টিকেলটা পরলাম। বেশ ভালো লিখেছিস।
আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম। শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি শুরু হলো। নিরঞ্জনদা আমার চোখ দেখে বুঝতে পারলো। এতোক্ষণ দেখা অনির সঙ্গে এই অনির অনেক পরিবর্তন।
ঝেড়ে কাশো। ভনিতা কোরো না।
আমি জানতাম। তুই এই কথাটা বলবি।
বলো কি বলতে চাও।
তোর আর্টিকেলটা নিয়ে ওখানে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে।
কোথায় ?
কলকাতায়।
তোমাদের পার্টিতে না আমার অফিসে।
দু’জায়গাতেই।
আমার অফিসে হলে আমার বুঝে নেবার ক্ষমতা আছে। তোমাদের পার্টিতে হলে। তার দায়িত্ব তোমাদের।
তোকে যদি হ্যারাস করে।
তাহলে বুঝবে তোমাদের অনেক মন্ত্রীর স্বরূপ আমি প্রকাশ করে দেবো। বলতে পারো নাঙ্গা করে দেবো। তাতে তোমাদের সরকারে অনেক সমস্য তৈরি হবে। সেটা চাও।
তুই কি বলতে চাস।
তোমরা কেউ ধোয়া তুলসীপাতা নও। এটা মানো।
মানি।
আমার কাছে মলের মতো তোমাদের অনেক মন্ত্রীর উইথ ডকুমেন্টস মেটেরিয়াল রেডি করে পরে আছে। যদি ছেপে দিই তোমাদের সরকারের ভিঁত আমি একাই কাঁপিয়ে দেবো।
এর একটা উল্টো রি-এ্যাকসন আছে।
ইসলামভাই-এর সম্বন্ধে তোমাকে নতুন করে বলতে হবে না।
তুই কি বলতে চাইছিস।
তোমার কথার পৃষ্ঠে কথা বলছি। তুমি বুঝে নাও। দীর্ঘদিন রাজনীতি করছো।
আমি জানি তোর শেকড়টা অনেক দূর পর্যন্ত।
জানলে আমাকে বাজাচ্ছ কেনো।
আমি জানতে চাইছি।

তুমি অনেক কিছু জানো। প্রকাশ করছো না। তোমার জানা উচিত তোমাদের হাইকমান্ডের সঙ্গে আমার খাতিরটা খুব একটা কম নয়। আমাকে তাদের প্রয়োজন আছে। মলকে নিয়ে তারা ভাবে না। কয়েকটা আমলার কথায় তারা উঠবে বসবে না।
অনি! তুই কি বলছিস ভেবে বলছিস।
তুমি যদি বড়মা অমিতাভদার ক্লোজ না হতে তোমার ভিঁতটাও নড়িয়ে দিতাম। তুমি অস্বীকার করতে পারবে।
নিরঞ্জনদা মাথা নীচু করলো।
আমি ঠিক তোকে গেজ করতে পারিনি।
এতদিন রাজনীতি করছো। তুমি কি ভাবলে আমি ছেলে খেলা করতে বসেছি।
না আমি ঠিক ততটা তোকে আন্ডার এস্টিমেট করিনি।
তোমাকে তোমার হাইকমান্ডের কে আমাকে মনিটরিং করতে বলেছে। নামটা বলো।
নিরঞ্জনদার গালে কেউ যেন একটা থাপ্পর মারলো। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
তুই বিশ্বাস কর কেউ বলে নি।
তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে কিছু পাইয়ে দিয়ে কাজ হাসিল করবে, তাহলে মনে রাখবে বড়মা অমিতাভদা আমাকে আটকে রাখতে পারবে না।
বৃথা তুই রাগ করছিস আমার ওপর।
আমি রাগিনি আমার প্রেডিকসন গুলো অব্যর্থ ভাবে মিলে যায়।
তুই বিশ্বাস কর আমাকে কেউ কিছু বলেনি।
তোমার এটা জানা উচিত ছিল ইসলামভাই-এর মতো লোক আমার একটা কথায় এখানে চলে এলো আমার সঙ্গে। তোমাদের পার্টির সঙ্গে ইসলামভাই-এর রিলেসনটা আমাকে তোমায় নতুন করে বলে দিতে হবে না।
না সেটা আমি জানি।
তুমি ইসলামভাই-এর নাম শুনেছো। আগে দেখো নি।
এটা সত্যি।
আজ তুমি জানলে ইসলামভাই ছোটমার ভাই।
হ্যাঁ।
আমি ইসলামভাই-এর সঙ্গে দশ বছর ঘুরছি আমি জানতে পারিনি।
এটা কাকাতালীয়।
ঠিক। যাক তুমি তোমার কথা বলো। ট্র্যাক থেকে বেরিয়ে যেওনা।
না তুই আমাকে বোঝার চেষ্টা কর।
তুমি সত্যি বলছো না মিথ্যে বলছো আমি এখুনি একটা ফোন করলেই ধরে ফেলবো। তুমি প্রমাণ চাও।
না আমি প্রমাণ চাইনা। আমি জানি তোর নিটওয়ার্ক স্ট্রং।
এবার ঝেড়ে কাশো। আমি কাল সকালে কলকাতা যাবো।
আমি তোর সঙ্গে যাবো।
যেতে পারো। কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে যাবো না আমি সোজা অফিসে যাবো।
নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে ফেললো। কাকুতি মিনতি করে উঠলো।
তুই আমার ছোটো ভাই-এর মতো। জানিষতো সব পার্টির ভেতরের ব্যাপার। আমাকে কিছু কিছু হুইপ মানতে হয়।
ওটা তোমার ব্যাপার।
তুই আমার এই রিকোয়েস্টটা রাখ। তাহলে আমার কিছুটা সম্মান বাঁচে।
বলো। শুনি।
কালকে একবার মহাকরণে যাবো। তুই আমার সঙ্গে যাবি।
কার কাছে যাবে।
মুখ্য সচিবের কাছে। চিফ মিনিস্টারের হুকুম।
ওটা তার হুকুম। উনি তোমাকে হুইপ করতে পারেন। আমাকে নয়।
আমি জানি।
ঠিক আছে। তুমি ঘরের লোক বলে তোমার সঙ্গে যাবো। কিন্তু নখরামি করলে তার উত্তর আমি কলম দিয়ে দেবো।
না না আমি তোকে কথা দিচ্ছি।
আমি কি পাবো।
তোকে তিনশো একর জায়গাটা ব্যবস্থা করেদেবো।
আর।
খালি তোকে লেখাটা স্টপ করতে হবে।
আমি যাবো না। তুমি ফোন করে বলে দাও। ওদের দম থাকলে কিছু করে দেখাক।
তুই এরকম করলে চলে কি করে।
লেখা তিনটে ইনস্টলমেন্ট আছে। আগামীকাল একটা বেরোবে পর্শুদিন একটা বেরোবে। বাকিটা বেরোবে না। এতে যদি রাজি হয় যাবো। নাহলে যাবো না।
ঠিক তিনটের বেশি তুই আর লিখবি না।
কথা দিচ্ছি।

এটা নিয়ে তুই আর বেশি জল ঘোলা করবি না।
আমার স্বার্থে আঘাত লাগলেই করবো, নচেত নয়।
ঠিক আছে। আমি কথা বলে নিচ্ছি।
বলো।
নিরঞ্জনদা ফোন করলো। অপর প্রান্ত বুঝলাম ফোনটা রিসিভ করেছে। কথা হচ্ছে। নিরঞ্জনদা আমার কথা ওনাকে বলছেন। মাজে মাজে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। নিরঞ্জনদা বুঝতে পারছেন আমি সব ব্যাপারটা বুঝতে পারচি। প্রথমে উনি কিছুতেই মানছেন না। নিরঞ্জনদাও অনেক ভাবে কথা বলে ওনাকে বোঝাতে চাইছেন। উনি কিছুতেই বুঝবেন না। শেষ পর্যন্ত নিরঞ্জনদা বললেন তাহলে আমার হাত থেকে গেমটা বেরিয়ে যাবে।
এই ইনস্টলমেন্ট শেষ হলে আরো বেরোবে। আপনি পারলে আটকান।
নিরঞ্জনদার পরবর্তী কথা শুনে মনেহলো ভদ্রলোক একটু ব্যাকফুটে চলে গেলেন।
আমি চুপচাপ বসে আছি। নিরঞ্জনদা কথা বলে চলেছেন। শেষে ঠিক আছে। ধন্যবাদ।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকালেন। মুখে তৃপ্তির হাঁসি।
তুই আমাকে বাঁচালি।
আমা বাঁচাবার কে।
তুই জানিসনা অনি। পার্টি করছি। লতায় পাতায় সকলের সঙ্গে ভাব রাখতে হয়।
এই ব্যাপারটা আমার নেই। আমি ব্যাবসা করতে বসেছি। নোট ফেলবো, ব্যবসা করবো। পারলে তোমাদের নিয়ে দু’চারটে লিখে টাকা ইনকাম করবো।
তুইযে বললি হাই কমান্ডের সঙ্গে বসবি।
প্রয়োজন পরলে বসবো। তুমি অতদূর এখনো পৌঁছতে পারোনি।
তুই এইভাবে বলিস না।
যা সত্যি তাই বললাম।
ঠিক কথা তবু আমার কিছু ক্ষমতা আছে।
ক্ষমতা থাকলে তোমাকে একটা সচিব বলবে তুমি শুনবে। কাল চলো ওর প্যান্ট আমি খুলবো।
তুই এরকম করিস না।
ছাড়োতো তুমি। বলোতো মালটা কে।
তুই এভাবে বলিসনা।
ওই যে বললাম তুমি নিরঞ্জনদা না হলে আরো রাফ ভাবে বলতাম।
আবাসন সচিব।
আবাসন সচিব! ওটার সঙ্গে তোমার কি সাঁট গাঁট।
কেনো তুই চিনিস নাকি।
তোমার সঙ্গে ওই দপ্তরের মন্ত্রীর কি রিলেসন সত্যি করে বলো।
কেনো।
ওর ওপর একটা লেখা লিখছি। যখন পঞ্চায়েত ছিলো তখন বহু বড় বড় কথা বলেছিলো। এখন সেখানেই প্রমোটিংয়ে সাহায্য করছে। শালা বহু কামিয়েছে।
নিরঞ্জনদা আমার হাত ধরে ফেললেন।
কি হলো আবার।
ওর জন্যই তোকে নিয়ে যাচ্ছি।
তুমি খেপেছো। শালা পার্টিটাকে শেষ করে দিচ্ছে।
আমি জানি কিন্তু ওর দোষ নয়। পার্টিকে মাসে মাসে আমাদের ডোনেসন দিতে হয়।
তাবলে সরকারী সম্পত্তি ঝেড়ে দেবে।
আরে ওর ওপর এখন প্রচুর প্রেসার।
থাকবেই দু’নম্বরী করবে মাল কামাবে আর প্রেসার ভোগ করবে না।
মুখ্য সচিব চিফ মিনিস্টার ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছে। তুইতো সব নম্বর উল্লেখ করে করে দিয়েছিস।
হ্যাঁ আমার কাছে সব ডকুমেন্টস আছে।
পেলি কোথায় ?

         
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks