দেখি নাই ফিরে - (Part-85)

আমাকে কথা বলার কোনো সুযোগই দিলো না। লাইনটা কেটে গেলো।
মুখটা কঠিন হয়ে গেলো। এই ভাবে আমাকে এখনো পর্যন্ত কেউ কোনোদিন বলে নি। ভাবলাম একবার রিং ব্যাক করি। নিজেকে নিজে সামলালাম না ঠিক হবে না। কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। এই সময় মোটেই মাথা গরম করা চলবে না। সব পন্ড হয়ে যাবে। শ্রেফ অভিনয় করে যেতে হবে। কিন্তু সুযোগ হাতছাড়া করলে চলবে না। পাখি একবার হাত থেকে উড়েগেলে বিপদ হতে পারে। আমাকে এখন অনেক অঙ্ক কষে চলতে হবে। ফিরে দাঁড়ালাম। হাসি হাসি মুখ করে বললাম, তোরা একটু দাঁড়া আমি আসছি।
তুই কোথায় যাচ্ছিস। মিত্রা কাছে এগিয়ে এলো। সরাসড়ি আমার চোখে চোখ রেখেছে।
একটু আসছি।
কে ফোন করেছিলো ?
ওর চোখে গভীর জিজ্ঞাসা।
চিনবি না, বাইরের লোক।
তাহলে তুই ওইদিকে যাচ্ছিস।
পাঁচ মিনিট, এখুনি চলে আসবো।
আমাকে বলবি না।
বলার হলে বলেদিতাম।
আমি দাঁড়ালাম না। মনে হয় অভিনয়টা ঠিক হলো না। ধরা পরে গেলাম। কারুর প্রতি দুর্বলতা জন্মালে সব কিছু গোপন করা যায় না।
সোজা চলে এলাম রতনের কাছে। আস্তে করে ইশারায় ওকে কাছে ডেকে নিলাম।
কি হয়েছে অনিদা! কোনো গড়বড় ?
না। সেরকম কিছু না।
তাহলে! তোমাকে কেমন ফিউজ দেখাচ্ছে।
তুই এই নম্বরে একটা ফোন করতো।
কি হয়েছে আগে বলো।
এই নম্বর থেকে এখুনি একটা ফোন এলো।
কি বলেছে বলো।
কি বলতে পারে, বুঝতে পারছিস না।
শুয়োরের বাচ্চা। দাও নম্বরটা দাও।
আমি মোবাইল দেখে ওকে নম্বরটা বললাম।
গলা নামিয়ে বললাম, চেঁচা মিচি করিস না। বাড়ি ভর্তি লোক।
ও নম্বরটা ডায়াল করতেই ওর মোবাইলে একটা নাম ভেসে এলো।
এতো বসিরের এসটিডি বুথের নম্বর। কাশীপুরে থাকে।
জিজ্ঞাসা কর পাঁচ মিনিটের মধ্যে কারা এই নম্বর থেকে ফোন করেছে। সাউন্ড অন কর।
কেরে বসির।
হ্যাঁ গুরু।
তোর ওখানে কে এসেছে।
কেউ না।
খানকি, সত্যি কথা বল।
খুব চেঁচা মিচি হচ্ছে গুরু, কিছু শুনতে পাচ্ছি না।
চল ওইখানে যাই।
দুজনে বাগানের শেষপ্রান্তে চলে এলাম। দেখলাম আবিদ নেপলা পেছন পেছন এসে হাজির।
কি হয়েছে রতনদা। আবিদ বললো।
মনে মনে বললাম, এরা গন্ধও পায়।
দাঁড়া একটু।
বল বসির কে এসেছিলো তোর এসটিডি বুথে।
কেউ না।
এখুনি কে এসে ফোন করেছিলো তোর এসটিডি বুথ থেকে।
দু’জন এসেছিলো। চলে গেলো।
তুই চিনিস।
না।
সত্যি কথা বল।
তুমি বিশ্বাস করো।
তুই আমাকে দে রতনদা। তোর দ্বারা হবেনা।

আবিদ ফোনটা কেরে নিলো রতনের হাত থেকে। প্রথমেই মা মাসি উদ্ধার করে দিলো। এবার বল বসির। আমি আবিদ।
তুই বিশ্বাস কর আবিদ। আমি চিনি না।
ঝাঁপ বন্ধ করে এখুনি তুই ওদের পাত্তা লাগা, আমি যাচ্ছি।
ওরা পাশের একটা রেস্ট হাউসে আছে। কাশীপুর গানসেল ফ্যাক্টারির সামনে।
নজর রাখ। কজন এসেছিলো।
দুজন। গুরু সেরকম কিছু। মাল পত্র সব বার করবো ?
ওরা যখন ফোন করে, কিছু শুনিস নি।
বললোতো কাল কাকে ওরাবে।
কোন নম্বরে ফোন করেছিলো ?
দাঁড়া দেখে বলছি।
বসির নম্বরটা বললো।
আমার মোবাইলেরই নম্বরটা বললো।
ওরে খানকির ছেলে। তুই এখুনি মালপত্র বার কর। আমি যাচ্ছি। পাখী যেনো উড়ে না যায়। তাহলে তোকে হাপিশ করেদেবো।
আমি কি করলাম।
গান্ডু কি করলি। যা বলছি কর।
এখুনি ঝাঁপ বন্ধ করছি।
পেছন ঘুরে দেখলাম চিকনা পাশে দাঁড়িয়ে। ওর চোখে মুখের চেহারা বদলেগেছে।
আবিদ ওগুলোকে যে কোনো প্রকারে গ্যারেজ কর। মনে হচ্ছে এখনো কিছু বাকি আছে। কথা শুনে মনে হলো ইউপির লোক। মন বলছে রাজনাথের চেলুয়া, ইউপি থেকে এসেছে।
সেরকম বুঝলে উড়িয়ে দেবো।
ঘাউড়ামি করবি না।
আবিদ মাথা নীচু করলো।
ওমপ্রকাশ কোথায় ?
ও বাড়িতে আছে।
আর কে আছে।
আরো লোক আছে, তোমাকে ভাবতে হবে না।
ওমপ্রকাশকে আগে ওখানে পাঠিয়ে দে। তোর যেতে যেতে ওম পৌঁছে যাবে। ওই বাড়ি থেকে স্পটটা কাছে। অনিমেষদাকে এখন কিছু জানানো যাবে না।
তুমি পাগল হয়েছো।
ইসলামভাই কোথায় ?
ওখানে আছে।
রতন বাইরেটা ভালো করে দেখে নে একবার। নেপলা ভেতরে থাকুক।
বাইরে সব লোক আছে, তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। তাছাড়া থানা থেকেও লোক এসেছে।
আচ্ছা।
যা বেড়িয়ে যা, আমাকে একটা ফোন করবি।
আচ্ছা।
আমি যাবো আবিদদা। চিকনা বললো।
না ভাই এইকাজ তোমার নয়। দাদাকে দেখছো না। কতো কুল।
আবিদ বেরিয়ে গেলো।

নেপলা বাবা একটা ঠান্ডা আনতো।
নেপলা দৌড় লাগালো। ওখানে গিয়ে কিছু বলিসনা যেনো।
তুমি পাগল হয়েছো অনিদা।
চিকনা একটা সিগারেট দে।
সাগির অবতার কোথায় ?
দাদার কাছে। ব্যাটারা পুরো চেঞ্জ।
হাসলাম।
ঠিক হয়ে যাবে দেখিস রতন। একটা ধাক্কা ওদের দরকার ছিলো।
নেপলা একটা ঠান্ডার বোতল নিয়ে এলো। আলগোছে কিছুটা ঢক ঢক করে খেলাম। তারপর রতনের হাতে দিলাম। ওরা তিনজন ভাগাভাগি করে খেলো।
তোমাকে কি বললো ? রতন বললো।
কয়েকটা খারাপ কথা বললো।
ঠিক আছে তুমি যাও। দাদা নাহলে সন্দেহ করবে। চোখ তো নয় চারদিকে বনবন করে ঘুরছে।
হেসে ফেললাম।
পায়ে পায়ে আবার ওদের কাছে চলে এলাম। তাল কেটেছে বুঝতে পারছি, তবু হাসি মস্করা চালিয়ে গেলাম।
মিত্রা একদৃষ্টে আমাকে দেখে যাচ্ছে।
দেখলাম গেট দিয়ে নিরঞ্জনদা অনুপদা রূপায়ণদা ঢুকলো।
আমি এগিয়ে গেলাম। মিত্রা আমার পেছন পেছন। কাছে গিয়ে সবাইকে প্রণাম করলাম।
বাবাঃ অনিবাবুকে আজ চেনাই যাচ্ছেনা তাই না অনুপ। রূপায়ণদা বললেন।
বিয়ে বলে কথা।
যাঃ বিয়েতো হয়ে গেছে। নিরঞ্জনদা বললো।
আমি হাসছি।
কি ম্যাডাম এখন নো টেনসন, ডু ফুর্তি।
মিত্রা হাসলো।
আমি ওদের সঙ্গে করে নিয়ে এসে অনিমেষদাদের কাছে এলাম। তারপ ঘুরে ঘুরে যারা যারা খাচ্ছেন তাদের কাছে গেলাম। কুশল বিনিময় করলাম। ওরা সবাই পাশে আছে। নীপা সুরোকে দেখলাম রিমঝিমদের সঙ্গে বেশ জমিয়ে গল্প করছে। আমায় দেখে হাত নাড়লো। আমিও হাত নাড়লাম। আমি একটু এগিয়ে গেছি। পেছনে মিত্রা চিকনা কথা বলছে। বুঝলাম মিত্রা চিকনাকে চেপে ধরেছে। চিকনা হাসছে। মিত্রার সঙ্গে ফাজলামো করছে।
ডঃ রায় চলেগেলেন রিমঝিমরাও চলে গেলো। আস্তে আস্তে মিত্রার ক্লাবের বন্ধুরাও চলে গেলো। যাওয়ার সময় হেসে বললো আপনার সঙ্গে ঠিক ভাবে কথা বলা হলো না। তবে আপনার বন্ধুরা ভীষণ লাইভ।
হাসলাম।
একদিন ক্লাবে আসুন না।
মিত্রা মুখ বেঁকিয়ে বললো। ক্লাবে! হয়েছে তাহলে।
একজন বললো, কি আপনি যাবেন না।
আমিতো কোনোদিন যাই নি আপনাদের ক্লাবে। মিত্রা নিয়ে গেলেই যাবো।
যাসনি মানে। তাহলে আমাদের ক্লাবের এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজার তোর কে হয় ?
ঠিক আছে ঠিক আছে, আগামী সপ্তাহে অনিন্দিতার বার্থডে তুই ওনাকে নিয়ে আয়।
গেলেই নিয়ে যাবো।
আমি হাসলাম। সময় পেলে যাবো।
গেট পর্যন্ত আমি মিত্রা এগিয়ে দিলাম।
ওরা চলে গেলো।
একে একে নিমন্ত্রিত যারা ছিলো সবাই কম বেশি চলে গেলো। এখনো কিছু আছে। তারা অফিসের লোকজন। দাদা যে এতো জনকে বলবে আশা করিনি। কাকা কাকীমা সুরো মাসি খেয়ে নিয়েছে। ওরা এই রান্না খাবে না, তার জন্য সুরো মাসি আলাদা রান্না করছে, ওরা তাই খেয়েছে। ওরা ডাক্তারদাদার বাড়িতে শুতে গেলো। নীপা সব দেখিয়ে দিয়ে এলো। আমি রান্নার জায়গায় গেলাম। ইসলামভাই-এগিয়ে এলো।
দারুন সার্ভিস দিলে।



জীবনে প্রথম, বিশ্বাস কর। ভয় করছিলো।
কেনো।
এতো যে সে লোকের বিয়ে নয়। অনির বিয়ে বলে কথা। গেস্ট কারা দেখতে হবেতো।
এইতো আবার শুরু করলে।
কিরে মামনি আমি ভুল কথা বলেছি।
একেবারে না। আমরা সব চুনোপুঁটি। ও বাবু বলে কথা।
ইসি হাসছে।
ইসলামভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মাথায় রাখিস কথাটা।
তুই একটুতেই কেমন আজ রাগ করছিস। এরকমতো ছিলি না। তোর কিছু হয়েছে ?
ওর চোখের দিকে তাকালাম। মিত্রা এখন অনেক বেশি পরিণত। হয়তো ছিলো। আমাকে এতদিন বুঝে নিলো। এবার খোলোস থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে বার করছে।
দেখো ইসলামভাই আমার দিকে কেমনভাবে তাকিয়ে আছে, যেনো আজ প্রথম দেখছে।
ঠিকিতো। তোকে তো আজ ও প্রথমই দেখছে। ইসলামভাই হাসছে।
আমি হাসলাম।
পকেটে মোবাইলাটা ভাইব্রেট করছে। রিং অফ করে ভাইব্রেসন মুডে দিয়ে রেখেছি। বুঝছি কেউ ফোন করছে। বার করতে পারছি না। মিত্রা ধরে ফেলবে। এদিক ওদিক তাকালাম রতন ধারে কাছে নেই।
তোমার মামনিকে একটা ঠ্যাং এনে দাও বসে বসে চিবোক।
তুই কোথায় যাবি ?
বাবু বলে কথা, লোকজনদের দেখা শোনা করতে হবে না। ঠিক মতো খাচ্ছে কিনা।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো। আমাকে জড়িয়ে ধরে গাল ফুলিয়ে বললো, কি রাগ তোর।
দেখলে ইসলামভাই কোথায় রাগকরলাম বলোতো।
ইসলামভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
সাগির দুটো প্লেটে করে মুরগীর ঠ্যাং এনে দিলো। সবাই একটা একটা করে তুলে নিলো। আমিও একটা তুলে নিয়ে হাঁটা দিলাম। ওরা সবাই ওখানে দাঁড়িয়ে রইলো। মিত্রা একবার আমাকে খালি আড়চোখে দেখলো। সোজা গেটের বাইরে চলে এলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখছে কিনা। আমি মিত্রার চোখের আড়ালে চলে এসেছি। ঠ্যাং খাওয়া মাথায়। ফোনটা পকেট থেকে বার করে দেখলাম আবিদের ফোন। রিং ব্যাক করলাম।
আবিদ ধরলো।
বল।
আমি আসার আগেই ওম গ্যারেজ করে দিয়েছে।
কজন ছিলো ?
চারজন ছিলো।
বসির কোথায় ?
আমার পাশে।
ও আমাকে চেনে ?
না। তোমার নাম শুনেছে। ও তোমার নম্বর জানলে ওখানেই পুঁতে দিতো।
এখন কোথায় ?
বসিরের ডেরায়।
ওখানে রাখিস না। তুলে এনে তোদের ডেরায় ঢুকিয়ে দে।
ঠিক আছে।
কি বুঝলি কথা বলে।
নিপাট ছেলে পুলে বলে মনে হচ্ছে। সঙ্গে কোনো মালপত্র নেই।
তাহলে!
এদের মধ্যে একজন বলছে রাজনাথের ভাইপো।
আমার নম্বর পেলো কি করে ?
প্রবীরদা এসেছিলো বিকেলে। ওরা তাই বলছে।
প্রবীরদা!
হ্যাঁ।
শোন তুই এখুনি চলে আয় ওদের রেখে। তুই এলে খেতে বসবো। চারদিকটা বেঁধে আসিস।
আচ্ছা।
ভেতরে চলে এলাম। দেখলাম মিত্রা গেটের মুখে একলা। আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো।

প্লিজ বুবুন তুই বল কি হয়েছে। ফোনটা আসার পর থেকে দেখছি তুই তোর মধ্যে নেই। আজ এই আনন্দের দিনে কেনো তুই ঝামেলা করছিস। আমার একটুও ভালো লাগছে না।
তোরকি আমাকে দেখে তাই মনে হচ্ছে।
তাহলে তুই আমাকে লুকোচ্ছিস কেনো। চিকনা সব শুনেছে। ওকে জিজ্ঞাসা করলেই পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কি সব বিচ্চু তৈরি করেছিস সকলকে। আমি ইসলামভাইকে গিয়ে এখুনি বলবো।
কি হবে। একটা কেওশ হবে, তুই সেটা চাস।
তাহলে বলছিস না কেনো।
সারারাত পরে আছে। আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি।
কোনো খারপ খবর।
ভালো খবর থাকলে আমাকে উতলা দেখায়। একমাত্র তুই ধরতে পেরেছিস। আর কেউ ধরতে পারে নি।
কনিষ্ক কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।
ও বহুত শেয়ানা ছেলে।
শেয়ানা মানে। আমি এতদিন তোর পাশে শুয়ে যা বুঝতে পারিনা ও বুঝে যায়।
মিত্রার গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম।
এই যে স্যার আমরা এসে গেছি।
পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম মুখার্জীদা তার গ্যাং। অর্ক অরিত্ররা ছুটে এলো। আবার হৈ হৈ শুরু হয়ে গেলো। সবাই আজ সাধারণ পোষাকে। কিন্তু দেখে বোঝা যাচ্ছে কোমরে সাঁটানো আছে সবকটার দলে প্রায় পনেরো জন। আমাদের হৈ হৈ শুনে বিধানদা অনিমেষদা অনুপদা রূপায়ণদা বাইরে বেরিয়ে এলেন। সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় হলো।
ওরা চারটে বড়ো বড়ো ফুলের বুকে নিয়ে এসেছে। আর একটা ব্যাগ। সবাই এখন বাগানে। আমি আলাপ করিয়ে দিলাম মিত্রার সঙ্গে। ওরা ফুলের বুকে গুলো মিত্রার হাতে দিলো। ব্যাগটা আমার হাতে দিলো।
এটা কি মুখার্জীবাবু।
আপনার এনজিওর জন্য আগাম ডোনেসন। আমার ছেলেপুলেদের আপনার এনজিওর ব্যাপারে সব বলেছি, ওরা বলেছে, অনিবাবু ভালো কাজ করছেন আমাদের যদি সাহায্য লাগে আমরা সাহায্য করবো। পারলে সপ্তাহে একদিন ফ্রি সার্ভিস দেবো।
ও অনুপ মুখার্জীর কথা শুনলি। ডোনেসন চলে এলো। তোর বাড়ি এখনো ঠিক হলো না। অনিমেষদা বললেন।
হয়েগেছে। ঝামেলাটা শেষ হলেই অনিকে নিয়ে যাবো। দামিনীমাসিকে দেখিয়েছি। ওনার পছন্দ।
তাহলে আমার দেখার কি আছে। কাজতো ওরা করবে। আমি খালি জোগাড় যন্ত্র করে দেবো।
সে বললে হয় বাবা খালি গা বাঁচিয়ে চললে চলবে।
একচোট হাঁসা হাঁসি হলো।
সন্দীপ এলো ওর বউকে নিয়ে, সেতো মিত্রার সামনে কিছুতেই দাঁড়িয়ে কথা বলবে না। মিত্রা আমার স্ত্রী নয় ওর মালকিন। শেষমেষ দাদা এসে রফা করলো। বেশ হাসা হাসি হলো। ওরা সবাই বেশ হৈ হৈ করে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া দাওয়া করলেন। তারপর একে একে সবাই বিদায় নিলেন। আমি মিত্রা মাজে মাজে গেট পর্যন্ত যাই আর এগিয়ে দিই।
এখন লনটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা। চারিদিকে আলোর রোশনাই। বসার ঘরে এলাম। সবাই গা এলিয়ে দিয়েছে। বৌদি অনিমেষদা পাশাপাশি বসে গল্প করছে। আর একদিকে বিধানদা অনুপদা রূপায়ণদা নিরঞ্জনদা।
এইযে ড্যাবা ডেবী, বাইরের দিকে কোথায় যাওয়া হয়েছিলো। অনিমেষদা বললেন।
আমি হাসলাম।
অনিমেষদা হাসছে।
ফটোটা দেখেছিস।
দারুণ গিফ্ট। আমার জীবনের সেরা।
আমি গিয়ে অনিমেষদা বৌদির মাঝখানে বসলাম।

দেখলে দেখলে ছেলের কান্ড। উনি আর কোথাও জায়গা পেলেন না। বৌদি বলে উঠলো।
তোমরাতো কিছু খাও নি। খিদে পায় নি।
বুঝেছি তোর খিদে লেগেছে। ও ছোটো দেখ তোর পোলা কি বলে। বৌদি চেঁচিয়ে উঠলো।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
ছোটমা রান্নাঘর থেকে একবার মুখ বার করলো।
দেখ বেচারার মুখটা খিদেয় একেবারে আমসি হয়েগেছে।
অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
ব্যাগটা নিয়ে গেছিলে সেদিন।
ঠিক মনে করিয়েছিস। তুই কতো দিয়েছিলি।
জানি নাতো। মিত্রাকে বলেছিলাম, তোমাকে ব্যাগটা দিতে।
গুনিস নি।
না।
অনেক বেশি ছিলো।
ফেরত দাও।
দিয়েগেছি, তোকে মিত্রা বলে নি ?
মিত্রা আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
কিরে তুই বলিস নি তো।
তুই সব বলিস।
দেখলে দেখলে বৌদি।
বেশ করেছে, তোর বেশি আছে একটু যাওয়া ভালো।
না গো কাজের জন্য সুজিতদা ওটা দিয়েছে।
মিত্রা হাসছে।
আমি ওকে বলেছিলাম, অনিমেষদারটা দিয়ে বাকিটা তুই রেখে দিস।
দেখলাম অনুপদার ফোনটা বেজে উঠলো অনুপদা উঠে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো। তারপর বিধানদাকে বাইরে ডেকে নিলো। মুখটা গম্ভীর।
ছোটমা একটা প্লেটে করে মিষ্টি নিয়ে এসে আমার মুখে একটা দিলো একটা মিত্রার মুখে দিলো।
এখন মিষ্টি খাওয়াচ্ছিস খেতে দিবিনা ? বৌদি বললো।
তুমি একটা খাও।
বৌদি হাঁ করলো। ছোটমা মুখে দিয়ে দিলো।
দাদা আপনি একটা তুলে নিন।
নাগো অনেক মিষ্টি খেয়ে ফেলেছি, আর না।
ছোটমা নিরঞ্জনদাকে দিলো, রূপায়নদাকে দিলো।
ছোটমা অনিমেষদার দিকে তাকালো।
দাদা, বিধানদা অনুপ গেলো কোথায়।
বাইরে।
ছোটমা বাইরে গেলো। ঘরে ঢুকে বললো, দাদা আপনাকে বিধানদা একবার ডাকছেন।
অনিমেষদা উঠে চলে গেলো।
মিত্রা ঝুপ করে বৌদির পাশে এসে বসলো।
বৌদি হাসছে। তুই এতোক্ষণ সুযোগ খুঁজছিলি না।
মিত্রা মাথা দোলালো।
হ্যাঁরে মিত্রা কনিষ্কদের দেখতে পাচ্ছি না।
তোর ঘরে জোড় আড্ডা চলছে। সুরো দু’বার এসে বলে গেছে, কনিষ্কদা অনিদার গল্প বলছে, শুনবে যদি চলে এসো।
কনিষ্কটা কি পাগল বলোতো। আমি বললাম।
কনিষ্ক পাগল না তুই পাগল। ওদের পাগল বানালো কে ?
বাবাঃ তুমি যে ছক্কা হাঁকিয়ে দিলে।
হাঁকাবো না।
বিধানদা অনিমেষদা অনুপদা ভাবলেশহীন মুখে ঘরে ঢুকলেন।

ওরা অপরজিট সোফায় বসলেন।
তিনজনেই নীচু স্বরে কথা বলছেন। আমাকে আড়চোখে দেখছেন। আমি বৌদির সঙ্গে গল্প করছি।
ডাক্তারদাদা ঘরে ঢুকলেন, চেঁচিয়ে বললেন কি অনিমেষবাবু খাওয়া দাওয়া হবে না। রাততো বেশ হয়ছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। দাঁড়াও দেখে আসি বাইরে না ভেতরে কোথায় ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আজ ভেতরে খাবো না। সকলে মিলে একসঙ্গে বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাবো।
বড়মার ঘরে একবার উঁকি মারলাম। দেখলাম বেশ জমিয়ে গল্প হচ্ছে। আমাকে দেখে বড়মা বললো, আয় ভেতরে আয়।
না। ডাক্তারদাদার খিদে লেগেছে।
মরন সন্ধ্যে থেকে এটা নয় সেটা খালি খেয়ে যাচ্ছে, কোন পেটে খিদে লাগে শুনি।
কথা বলতে বলতে বড়মা খাট থেকে নেমে এলো। কাছে এসে বললো।
কোথায় সামন্ত।
ডাক্তারদাদা সামনেই ছিলো।
আমি এখানে।
তোমার নাকি খিদে লেগেছে।
সবাই হেসে ফেললো।
তুমি কোন পেটে খাবে বলোতো। সন্ধ্যে থেকে তো মুখ থেমে নেই।
ওগুলোতো টুক টাক এবার পেট ভর্তি করে খেতে হবে।
বিধানদা অনিমেষদা হাসছেন বড়মা ডাক্তারদাদার কথায়।
ও ছোটো, এখানে ব্যবস্থা করবি, না বাইরে খাবি।
আজ ঘরে খাবো না। বাইরে খাবো। ডাক্তারদাদা বললো।
দেখো কান্ড, বুড়ো হয়েছো এখনো সখ যায় নি।
ইসলামভাই গেটের মুখে এসে দাঁড়ালো।
কিরে তোর সব ব্যবস্থা হয়েছে।
আমিতো সেই জন্য এলাম এখানে না বাগানে।
বাগানে ব্যবস্থা কর।
বড়মার ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে এসেছে। দামিনী মাসিকে আজ ভীষণ ভালো লাগছে। দেখে কেউ বলবে না দামিনী মাসি ওই পাড়ার লোক। আমি কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম, খুশিতো।
মাসি পরিতৃপ্ত চোখে আমার গালে হাত বুলিয়ে দিলো।
আমি ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম বারান্দার এক কোনে, রতন আবিদ নেপলা দাঁড়িয়ে। ইসারায় বললাম এখন কোনো কথা বলিস না।
নেপলাকে বললাম যাতো আমার ঘর থেকে সবাইকে ডেকে আন।
একে একে সব বাগানে আসছে। তিনটে টেবিল পাতা হয়েছে। যার যেরকম প্রয়োজন দাঁড়িয়েও খেতে পারে আবার বসেও খেতে পারে। সার্ভিসের ছেলে গুলো আমাকে দেখে হাসলো।
অনিদা এতদিন আপনার নাম শুনেছি, দেখি নি। আজ দেখলাম।
আমি হাসলাম।
সুরো ছুটতে ছুটতে এলো।
অনিদা অনিদা আজ আমি তোমার পাশে বসবো।
কোনো বসা বসির সিন নেই, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাড় চিবোবি।
ওরা সবাই টেবিলের কাছে এসে পরেছে, হাসছে।
বুফে।
হ্যাঁ।
কি মজা নিজে নিজে নিয়ে খেতে হবে।
পারলে নিবি নাহলে ওরা দিয়ে দেবে।
ওর দিকে একবার ভালো করে তাকালাম। একটু আগে খোঁপা বাধাঁ ছিলো এখন খোঁপা খুলে এলো চুল। ওকে বললাম।
এই নিয়ে ফোর্থ টাইম ড্রেস চেঞ্জ হলো।

একরাতে চারবার ড্রেস চেঞ্জ!
হ্যাঁ। একটা বড়মা, একটা ছোটমা একটা ইসলামভাই একটা মাসি। তুমিতো কিছু দিলে না।
ওরা হাসছে। হাসির চোটে ইসির শরীর কাঁপছে।
আমি দিলামনা মানে!
মিত্রাকে দেখিয়ে বললাম।
এরকম একটা জলজ্যান্ত বৌদি দিলাম তোকে। তুই বললি সেদিন অনিদার বিয়েতে সাজবো। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে করলাম, আর তুই বলছিস কিছু দিই না। নেমকহারাম, মনে রাখিস নোট পাবি না।
চাই না। বৌদি দিয়ে দিয়েছে।
তারমানে।
তুমি তখন নিচে ছিলে, আলমাড়ি থেকে বার করে তোমার সব খাতা দিয়ে দিয়েছে।
অনিমেষদা বিধানদা পর্যন্ত সুরোর কথায় হাসছে।
তোকে ওইই জব্দ করতে পারবে। অনিমেষদা বললো।
ইসি এগিয়ে এসে বললো, তোর ওপর ওর কি জোর।
ওকে যখন প্রথম দেখি তখন ওর আট বছর বয়স, এখন ও লেডি, আমার সব অলিগলি ওর বিচরণ করা হয়েগেছে।
সুরো চলেগেলো ইসলামভাই-এর ওখানে হল্লা শুরু করে দিলো। নীপাও ওর পেছনে। বড়মা ছোটমা বৌদি জ্যেঠিমনি কথা বলছে।
পিকু কোথায় ইসি।
বড়মার খাটে ঘুম দিচ্ছে।
খুব পরিশ্রম হয়েগেছে বাচারার আজ।
পরিশ্রম মানে। সুরো চারটে চেঞ্জ করেছে ও সাতটা।
হাসলাম।
খাবার এলো। ছেলগুলো সব ঝপাঝপ দিচ্ছে। খাওয়া শুরু হয়েছে। হাসি মস্করা চলছেই। কনিষ্ক বটা নীরুর পেছনে কনটিনিউ লেগে রয়েছে। শ্রীপর্ণা হেসেই চলেছে। ওদিকে সঞ্জু চিকনার ডুয়েট চলছে। আমরা সবাই গোল করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছি। অনিমেষদা খেতে খেতে বললো।
অনি তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
আমি জানি তুই কোনো ভনিতা পছন্দ করিসনা। কাজের ব্যাপারে তুই ভীষণ রাফ এবং টাফ।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো। চোখে জিজ্ঞাসা সবাই আমাকে দেখছে।
অনিমেষদার কথা বলার ভঙ্গিতে দাদা কিছু আঁচ করতে পারলো।
কেনো অনিমেষ ও কি আবার কোনো গন্ডগোল পাকিয়েছে।
না সেরকম কিছু নয়। আবার বলতে পারেন পাকিয়েছে।
কিরে অনি ঠিক বলছি।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকালেন।
আমি কি করে বলবো। তুমি বললে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করবে। এখনোতো করলে না। আগে তোমার প্রশ্নটা কি বলো তারপর উত্তর দেবো।
আমি কি বলতে চাই তুই বুঝতে পেরেছিস। আমি বড়দি, ছোট, দাদা, মল্লিক, তোর বৌদি আমরা যারা আছি তাদের সবার হয়ে তোকে রিকোয়েস্ট করছি ওদের ছেড়ে দে। একটা ভুল করে ফেলেছে। এবারটার মতো মাফ করে দে। ওরা আর এ ভুল করবে না। আমি বিধানবাবু যা বলার বলে দিয়েছি।
কি হয়েছে দাদা! ইসলামভাই বললো।
দেখলাম সবাই গুটি গুটি পায়ে আমাদের চারপাশে এসে ভিড় করেছে। তা বলে খাওয়া বন্ধ নেই খাওয়া চলছে।
তুমি কিছু জানো না। অনিমেষদা বললো।
না দাদা।
তাহলে তোমার থেকেও অনির ক্ষমতা বেশি।
অস্বীকার করিনা। ও এখন মাঝে মাঝে আমাকেই ধমকায়।

রতনের দিকে তাকিয়ে।
কিরে রতন কি হয়েছে।
কিছু না।
তাহলে দাদা কি বলছে।
বুঝতে পারছি না।
ইসলামভাই হেসে ফেললো।
দাদা এরা এখন আমার হাতের বাইরে।
দেখছো তাহলে ইসলাম তোমার লোকজন তোমাকে কিছু বলেনা।
কিরে অনি তুই কিছু বলছিস না চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিস। দাদা ধমক লাগালো।
যা বাবা, আমি কি করে বলবো। অনিমেষদা খোলসা করে বলুক আগে ব্যাপারটা কি। তারপরেতো আমি বলবো।
জানেন দাদা আমরা প্রসাশন চালাই, আমরা যে কাজটা করতে ঘন্টা পাঁচেক সময় নেবো ও সেটা একঘন্টাতে করে দেয়। বুঝুন ওর নেটওয়ার্ক।
আমাদের টুকরো টুকরো কথা চলছে সবাই খেয়ে যাচ্ছে আর শুনে যাচ্ছে। মিত্রা আমাকে প্রবল ভাবে মেপে চলেছে। আমি ইচ্ছে করে বললাম, দাদা তুমি একটা অন্যায় করেছো।
আমি আবার কি অন্যায় করলাম।
বড়মা দাদার দিকে তাকালো।
তুমি সবাইকে নেমন্তন্ন করলে প্রবীরদাকে নেমন্তন্ন করলে না।
অনিমেষদার দিকে তাকালাম। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে। শেয়ানে শেয়ানে কোলা কুলি চলছে বিধানদা রূপায়ণদা অনুপদা নিরঞ্জনাদার চোখ স্থির।
করিনি মানে! তুই অনিমেষকে জিজ্ঞাসা কর আমি নিজে গিয়ে বলে এসেছি সকলকে।
অনিমেষদা ফিক করে হেসে ফেললো।
টোপ দিচ্ছিস, মাছ খায় কিনা। তোর বুদ্ধির কাছে মাঝে মাঝে আমিও হার মেনে যাই।
কনিষ্ক স্থির চোখে আমাকে দেখছে। নীরু বটারও চোখ স্থির। ওরা আমার এরকম পারফর্মেন্স প্রথম দেখছে।
কি হলো তুমি হাসলে কেনো। নিজেরা চলে এলে প্রবীরদাকে আনতে পারলে না।
বৌদি একবার আমার দিকে তাকায় একবার অনিমেষদার দিকে তাকায়।
লজ্জায় আসে নি। একটা দুম করে অন্যায় করে ফেললো।
আমি হাসলাম।
যখন সবই জানিস তখন ছেড়েদে।
মহা মুস্কিল তখন থেকে খালি ছেড়েদে ছেড়েদে করছো। ধরলেতো ছাড়বো। আমি হাসতে হাসতে বললাম।
দেখছো ইসলাম তোমার ওই পাঁচটা সাগরেদকে দেখো কিরকম চুপ চাপ খেয়ে যাচ্ছে। যেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না।
অনিমেষদা রতনদের দিকে তাকিয়ে বললো। ওরা নির্বিকার।
সত্যি দাদা বিশ্বাস করুণ। ইসলামভাই বললো।
আমি জানি তুমি কিছু জানো না।
সাতটার সময় অনির মোবাইলে একটা ফোন এসেছিলো। মিত্রা বলে উঠলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। সবাই মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
বলতো মা তুই বল। ওকে জব্দ করতে তুই আর সুরো পারবি। তোদের দুজনের প্রতি ওর দুর্বলতা আছে। আর সবার প্রতি ও কর্তব্য পালন করে। তা বলে এই নয় তাদের কিছু হলে ও নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমোবে। অনিমেষদা বললেন।
আমরা তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম।
তখন কটা হবে ?
সাতটা।
তারপর ?
ও বললো একটু দাঁড়া আমি আসছি। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। ও কিছু বললো না। মুখটা কেমন ফ্যাকাশে লাগছিলো।
অনুপ তুমি এগুলো মাথায় রাখো। কালকে আলোচনা করবো মিটিং-এ। অনিমেষদা বললেন।
আবার মিত্রার দিকে তাকিয়ে, তারপর বল মা।
ও ওখান থেকে চলে আসে। আমি চিকনাকে বলি দেখতো তোর গুরুর কি হয়েছে। চিকনা সব শুনেছে। ও তারপর সব সময় বুবুনের পেছন পেছন ছিলো। চিকনাও তারপর আমাকে বলেছে ও কিছু জানেনা।

কি বুঝছো অমিতাভদা সব কটা মাস্টার ডগ। মাস্টার ছাড়া কারুর কাছে মাথা নোয়াবে না।
অনিমেষদা চিকনার দিকে তাকাল।
বাবা চিকনা এবার বলেফেলোতো ম্যাডামের পরের কথাগুলো।
অনিমেষদা এমনভাবে বললো সবাই হাসছে। চিকনা হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকালো।
ও তোমাকে কোনোদিন বলতে বলবেনা। কিন্তু আমি তোমাকে বলছি তুমি বলো। অনি কিছু বলবে না।
আমি কিছু জানিনা। আমি শুনেছি। রতনদা সব জানে।
কি ইসলাম কিছু বুঝতে পারছো।
ইসলামদা হাসছে।
দেখোনা কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে অনিমেষদা বললো।
আচ্ছা মা তুই অনিকে কখন আবার স্বাভাবিক দেখলি।
সাড়ে আটটা পৌনে নটা থেকে।
তারমানে দেড়ঘন্টা। দেড়ঘন্টায় ও কাজ শেষ করে দিলো। আমি পুলিশ কমিশনারকে ফোন করলেও দেড়ঘন্টায় কাজ শেষ করতে পারতো না। কাল সকাল পর্যন্ত লাগিয়ে দিতো।
তুমিতো লেবু নিগড়তে নিগড়তে তেঁতো করে ফেললে। বৌদি অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে বললো।
সুতপা লেবু আমার হাতে এখনো এসে পৌঁছয়নি নিগড়োবো কি করে। আমি বিধানবাবু এখনো অন্ধকারে। একটু আগে অনুপের ফোনে প্রবীর ফোন করে বললো, অনি চারটে ছেলেকে কিডন্যাপ করেছে। এখুনি যেনো ছেড়ে দেয়।
আমি দপ করে জ্বলে উঠলাম।
প্রবীরদাকে বলেদিও ওর দম যদি থাকে অনিকে ফোন করতে। ব্যাপারটা যখন অনি ভার্সেস প্রবীরদা তখন আমরা দু’জনে বুঝে নেবো। তোমরা এর মধ্যে মাথা গলাবে না।
সবাই আমার গলার স্বরে চমকে উঠলো। যারা আমাকে এর আগে দেখেনি তারাও আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। সবাই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। কেউ বুঝতে পারি নি আমি হাসতে হাসতে এইভাবে আচরণ করতে পারি।
আমি জানতাম তুই এই কথা বলবি। তাইতো আমি ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলাম। তোর বৌদি মাঝখানে টুকে দিলো।
প্রবীরদা জানলো কি করে অনি তুলেছে। তারমানে চারজন ছাড়াও আরো কয়েকজন আছে। তাদেরকে আমার সামনে হাজির করতে বলো।
সেইজন্য আমি একমুখে ঝাল খাচ্ছিনা দু’মুখে ঝাল খাওয়ার চেষ্টা করছি। অনিমেষদা খুব শান্ত ধীরস্থির ভাবে বললো।
বিধানদার দিকে তাকিয়ে।
কি বিধানবাবু শেকড়টা কতদূর গেছে এবার বুঝতে পারছেন। আমার যতো জ্বালা।
প্রবীরদার এতো ক্ষমতা থার্ড পার্টি দিয়ে আমাকে হুমকি দেয় আমাকে কাল উড়িয়ে দেবে। আমি বিয়ে করে মজমা নিচ্ছি। এতো বড়ো স্পর্ধা। উনিকি রাজ্য কমিটির নেতা বলে সাপের পাঁচপা দেখেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ওকে আমি বাটি হাতে কলকাতার রাস্তায় বসিয়ে দেবো। যাতে ওর ভিক্ষেও না জোটে তার ব্যবস্থা করবো।
বিধানদা প্লেট হাতে এগিয়ে এলো।
মিত্রা থালাটা টেবিলে রেখে আমার হাত চেপে ধরেছে। কনিষ্করা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। অনি কার সঙ্গে এইভাবে গলা উঁচু করে কথা বলছে। যার একটা ফোনে এখুনি এই বাড়িতে পুলিসের হেডকোয়ার্টারের টপ টপ লোক চলে আসতে পারে। যে বৌদি একটু আগেও আমার সঙ্গে হাসাহাসি করছিলো। সেই বৌদি পর্যন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে। বুঝতে পারছে কিছু একটা জট পেকেছে। জ্যেঠিমনির মুখটা কেমন শুকনো শুকনো। ইসির চোখে কে যেনো হাজার পাওয়ারের বাল্ব জেলে দিয়েছে। বরুণদা কেমন থতমতো খেয়ে গেছে। বড়মা ছোটমা মল্লিকদা ডাক্তারদাদা স্বাভাবিক। ইসলামভাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। ওরা আমার এই অবস্থা আগে দেখেছে। যারা দেখে নি এই অনিকে তাদের কাছে অজানা অনির চেহারা বেরিয়ে পরেছে।
তুই রাগ করিসনা। আজ আনন্দের দিন। আমি অনিমেষকে বারণ করেছিলাম। আজ অনিকে কিছু বলোনা কালকে পার্টি অফিসে ডেকে আলোচনা করবো। বিধানদা বললেন।
ওরা সব ইউপি থেকে এসেছে। তার মধ্যে একটা রাজনাথের ভাইপো আছে। প্রবীরদা বিকেলে ওদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছে। আমার ফোন নম্বর ওদের দিয়েছে। এতো বড়ো অর্ডার সিটি ওনাকে কে দিয়েছে।
অনিমেষদা স্থির চোকে আমার দিকে তাকিয়ে। রূপায়ণদা অনুপদা নিরঞ্জনদা থ হয়ে গেছে। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks