দেখি নাই ফিরে - (Part-34)

আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম, বাসুকে বললাম, অনাদি কোথায়।
নিরঞ্জনদা কোথায় পাঠালো।
ও। চিকনা।
ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। বললাম ওখানটা গোছা গিয়ে।
ভাল করেছিস।
গাড়ি রাখবি কোথায়।
ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
চল এবার বেরোবো।
নিরঞ্জনদার কাছে গিয়ে বললাম, কিগো রেডি।
অনি আমার একটা উপকার করবি।
বলো।
দিদিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তুই নিয়ে যা। এই দিকে যখন এসেছি, কয়েকটা কাজ সেরে যাই।
আমার কোনো আপত্তি নেই। গালাগাল কে খাবে তুমি না আমি।
কিছুক্ষণের জন্য তুই খা, তারপর আমি গিয়ে খাবো।
নিরঞ্জনদাকে ঘিরে থাকা সকলে মুচকি হাসছে, আমিও হাসলাম।
বড়মাকে গিয়ে সব ব্যাপারটা বললাম।
ডাক ওকে।
উঃ তুমি ......
ঠিক আছে চল।
আমরা সবাই গাড়িতে উঠলাম। নিরঞ্জনদা কাছে এলো।
তুই কখন যাবি।
চারটের মধ্যে।
খেয়ে নেবো না তোর জন্য বসে থাকবো।
একবারে আমার জন্য বসে থাকবে না।
মনে থাকে যেনো।
আচ্ছা।
আমরা বেরিয়ে এলাম। যেভাবে কলকাতা থেকে এসেছিলাম, সেই ভাবে। খালি আমার পাশে এসে মিত্রা বসলো।
আমি বড়মাকে রিলে করতে করতে চলেছি, ইসলামভাই চারদিক গোগ্রাসে গিলতে গিলতে চলেছে। যতদূর চোখ যায় খালি সোনালীধানে মাঠ ভরে গেছে, ধানকাটার মরসুম এসে পরলো বলে। বড়মা জানলা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে না আমি একে একে সব বলতে বলতে যাচ্ছি। রবিনকে বললাম ওই বিলের মাঝা মাঝি যে ক্যালভার্টটা আছে ওখানে একটু গাড়িটা থামাবি। আমাদের গাড়ির সামনে কেউ নেই, পেছনে আনাদি আর বাসুর বাইক আসছে। রবিন গাড়ি থামালো। আমি নেমে দাঁড়ালাম, পেছন পেছন সবাই নামলো, বড়মাকে দরজা খুলে নামালাম, ছোটোমাও নামলো।
এবার চারিদিক ঘুরে একবার দেখো। বড়মার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। সত্যি অনি প্রকৃতি যেনো নিজে হাতে সব সাজিয়ে দিয়েছে, ওই যে দূরে একটা টালির বাড়ি দেখতে পাচ্ছ।
হ্যাঁ।
ওটা আমার স্কুল। তার আগে একটা ঝাঁকরা অশ্বত্থ গাছ দেখতে পাচ্ছ।
হ্যাঁ।
ওটা পীরবাবার থান।
বড়মা আমাকে জরিয়ে ধরলেন, ছোটমা একটা হাত ধরেছেন।
আমাকে আজ ওখানে নিয়ে যাবি।
যাবে।
যাবো। এখন গিয়ে আবার অতটা যেতে পারবে।
পারবো।
অনি তুই না করিস না আজই যাবো, জুম্মাবার। ইসলামভাই বললো।
এবার এদিকে তাকাও।
বড়মারা সবাই পেছন ফিরে তাকালো, ওই যে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা একটু উঁচু জায়গা দেখছো।
হ্যাঁ।
ওটা শ্মসান।
ওটাতো একটা বোন দেখতে পাচ্ছি।
ওই হলো আর কি।
বড়মা, অনির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। আমরা দিনের বেলা একলা যেতে ভয় পাই ও রাতের অন্ধকারে যায়। অনাদি বললো।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গালে হাত বোলাচ্ছেন।
হ্যাঁরে তোর কোনো ভয় লাগে না। ছোটমা বললেন।
না। বরং তুমি যদি আমার সঙ্গে যাও তুমিও ওর প্রেমে পরে যাবে।
যাবো তোর সঙ্গে।
নিয়ে যাবো।
মিত্রা আমাকে একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছে কোনো কথা মুখে নেই।
চলো এবার যাওয়া যাক।
চল।
একটা কথা বলি।
বল।
তোমরা যদি বাজার দিয়ে ঘুরে যাও তাহলে ৪৫ মিনিট বেশি লাগবে, আর এখান থেকে একটু গিয়ে যদি ভেতর দিয়ে হেঁটে যাই তাহলে ১০ মিনিট লাগবে।
যেটা কম সময় লাগবে সেটাতেই চল।
একটা ছোটো নদী পেরোতে হবে, এই সময় হাঁটু জল থাকে।
আমাদের ছোটোনদী চলে আঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
ছাগল। এটা পৌষ।
কারুর পৌষমাস কারুর সব্বনাশ।
কার।
তোর। আবার কার।
বড়মা বললো, মিত্রা থাম।
সব সময় তুমি আমাকে থামতে বলো, ওকে বলতে পারো না, কবিতাটা কি আমি লিখেছি।
আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে।
ইসলামভাই হা হা হা করে হেসে উঠলো, ওর হাসির শব্দে চারিদিক অনুরননের সৃষ্টি হলো।
সবাই গাড়িতে উঠে বসলো, ঠিক আছে রবিন চল ওই বাঁকের মুখে নামিয়ে দিস। তারপর তোরা গাড়ি রেখে আসিস।
আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম। সবাই নামলাম। অনাদি, বাসুকে বললাম, জিনিষপত্রগুলো ঠিকঠাক নিয়ে আসিসি।
রবিন গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। এবার আমরা ছজন। বড়মা খুব আস্তে আস্তে হাঁটছে, মাটির রাস্তা তাও আবার এবরো খেবরো চলতে অসুবিধে হচ্ছে, আমি বড়মাকে ধরে আছি।
তুই ছার আমি একলা যেতে পারবো।
না তোমার অভ্যাস নেই হোঁচোট খেয়ে পরে যেতে পারো।
ইসলামভাই বললো, জানিষ অনি তোর গ্রামটা দেখে, আমার গ্রামের কথা মনে পরে যাচ্ছে। ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, না রে মন।
হ্যাঁরে মুন্না। মনে হচ্ছে ফিরে যাই আমাদের পাবনার সেই নতুনহাট গ্রামে।
আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম, চোখদুটো ঝাপসা।
মিত্রা কাপর তুলে হাঁটছে।

https://goo.gl/sJ23MZ


তুই ওই ভাবে হাঁটছিস কেনো।
একবার শিক্ষা হয়েছে, আবার।
কি। ছোটোমা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো।
ওই চোর কাঁটা।
সবাই ওর দিকে তাকালো, বড়মা হেসে বললো ও মিত্রা একটু নামা।
তুমি থামোতো, কেউ দেখবে না।
আরে মুন্না আছে।
থাকুক মুন্নাভাই।
সবাই হাসছে।
আমরা বাঁশবাগানের ভেতরে এসে পরলাম। থমথমে পরিবেশ। হাওয়ায় বাঁশের গায়ে ঘষা লেগে কেঁচর কেঁচর আওয়াজ হচ্ছে। আমি বললাম এখানে একটু দাঁড়াও, কান খাঁড়া করে রাখো শুনতে পাবে কত রকমের আওয়াজ। ওরা দাঁড়ালো, তুই এখানে রাতের অন্ধকারে একা একা ঘুরিস।
হ্যাঁ।
তোর ভয় করে না।
ভয় করলেই ভয়, না করলে নয়।
তোদের এখানে বাঘ ভাল্লুক নেই।
না, শেয়াল আছে।
কোথায়।
আশেপাশে কোথাও আছে, ভাগ্য ভালো থাকলে দেখতেও পারো।
তুই থাম বাপু চল তাড়াতাড়ি।
আমরা গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে নদীর ধারে এসে পরলাম। জল কমে যেতে নদীর খাঁড়িটা অনেকটা নীচু হয়ে গেছে। ঢালটা একটু বেশি।
জানো বড়মা ভরা বর্ষায় তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো, সেখানে দুমানুষ জল থাকে।
কি বলিস রে।
সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। বাঁধ ছাপিয়ে জল গ্রামে ঢুকে পরে, যে রাস্তা দিয়ে তুমি এতোক্ষণ গাড়ি চেপে এলে, ওই রাস্তার ওপর এক মানুষ জল।
আমরা সেই সময় কতো মাছ ধরি তেলের জন্য খাওয়া হয় না।
তার মানে।
এতো মাছ হয়ে যায়, মাছ ভাজার তেল থাকে না।
এসো আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে নামো।
আমি বড়মাকে ধরলাম, ইসলামভাই ছোটমাকে ধরেছে, ভজু মিত্রাকে ধরতে গেলো।
তুই থাম ও যেমন এই পথ দিয়ে নিয়ে এসেছে, ও ধরে নামাবে।
আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, মোটা মাথা।
দেখছো বড়মা, সত্যি তুমি ওদের গ্রামে এসেছো বলে ও যা বলবে তাতেই তুমি সায় দিচ্ছ।
তুই ভজুর হাতটা ধরে নাম না।
ভজু নিজেকেই সামলাতে পারছে না আবার আমাকে সামলাবে। ভজুর কীর্তিটা দেখ একবার।
পেছন ফিরে দেখলাম ভজু বসে বসে নামছে।
কিরে।
না অনিদা হরকে যাবো। বলতে বলতেই ভজু হরকালো। দুম ফটাস।
দেখলে।
আমরা নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসছি।
তোমরা দাঁড়াও ওটাকে নামিয়ে নিয়ে আসি।
আমি আবার ওপরে গেলাম, জুতো খোল।
কেনো।
তোর এই হিল তলা জুতো হরকাবে। দেখছিস কতো নুরি পরে আছে।
এতো হাঁড়ি ভাঙা।
হ্যাঁ তোকে বলেছে।
বল এরও একটা গল্প আছে।
আছেতো।
আমি ওর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে আনলাম।
বাবাঃ কি ঢালু দেখেছো বড়মা, ওপরটা আর দেখা যাচ্ছে না।
বর্ষাকালে এর যা স্রোত দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়।
এই টুকু পার হতে হবে। তার জন্য তুই যা গল্প ফাঁদলি ওখানে।
ঠিক আছে, তুই আগে চলে যা। আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
বড়মা মুচকি মুচকি হাসছে। যা।
মিত্রা দাঁড়িয়ে রইলো।
কিরে যা।
তুই চল।
দাঁড়া আমি আগে নেমে দেখে আসি, কতটা জল।
তার মানে।
পথটা ঠিক করে আসি, একটু এদিক ওদিক হলে একেবারে কাতলা মাছ ধরবি।
তুই জেনেও আমাকে আগে পাঠাচ্ছিলি।
আমি। দেখলে বড়মা, ঝপ পাল্টি।
ইসলামভাই হাসছে। ভজু বললো আমি পরে গেলে স্নান করে নেবো।
আমি এগিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে দেখে নিলাম, আমার হাঁটু জলই আছে। প্রথমে আমি বড়মাকে পার করে ওপারে রেখে এলাম, বড়মা আমাকে শক্ত করে ধরেছিল, এমন আবস্থা আমিই নিজেই নরতে চড়তে পারছিলাম না।
ভজুকে বললাম আমি যেমন ভাবে পার হলাম সেই ভাবে পার হয়ে ওপারে চলে যা।
ভজু মহা উতসাহে নাচতে নাচতে গেলো, সত্যি সত্যি কাদায় হরকে জলে আছাড় খেলো। জামা পেন্ট সব ভিজে একসা। আমি তাড়াতাড়ি করে গিয়ে ভজুকে তুলে ওপারে রেখে আসলাম।
ইসলামভাইকে বললাম যাও।
তুই চল।
আমি ইসলামভাইকে ধরে ওপারে নিয়ে গেলাম, অসুবিধে হলো না, ইসলামভাই বললো খুব কাদা রে।
আমি বললাম কাদা না, এই যে গাছের পাতা পরেছে, পচে গেছে। সেই জন্য এত হরকা।
এবার ছোটোমার পালা, ছোটোমা আমার হাত ধরে জলে নেমেই আবার উঠে গেলো।
কি হলো।
দাঁড়া কাপরটা একটু তুলে নিই।
বড়মা হাসছে, আমিই সবচেয়ে ভালো এসেছি।
ছোটোমা তুমি বরং দাঁড়াও আমি আগে পার হয়ে যাই।
কেনো।
যদি শেয়াল আসে।
ঠিক বলেছিস, এতোক্ষণ মনে ছিলো না।
মুন্নাভাই-এর উচিত ছিলো সবার শেষ যাওয়া।
চল দুজনে যাই।
চলো।
আমি যেখানে যেখানে পা ফলবো সেখানে সেখানে পা ফলবি, না হলে ভজুর দশা হবে।
তুইতো আগেই ভয় পাইয়ে দিচ্ছিস।

বেরো তোকে যেতে হবে না।
ওরকম করছিস কেনো।
ওপারে বসে বড়মা ইসলামভাই ভজু হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।
আমি দুজনকে নিয়ে জলে নামলাম, দুজনে আমার দুহাতে। আমি আস্তে আস্তে এগোচ্ছি ওরাও এগোচ্ছে।
আমি জানি অনিদা এই কীর্তি করবে, যখনই গারিটা হুশ করে বেরিয়ে গেলো তখনি বুঝেছি, অনাদিদা চেঁচিয়ে বললো বলে, ওগো তোমরা আছাড় খাবে, খুব হরকা এই জায়গাটা, নীপা ধুপ ধাপ করে নদীর ভেতরে নেমে আসছে।
এই গেলো গেলো গেলো।
কি হলো রে।
কাপরটা কোমর থেকে খুলেগেলো।
আমি ছোটোমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে মিত্রা আমার হাত ছেড়ে কাপর ঠিক করতে গেলো, পা হরকালো, আমি কোনো প্রকারে ধরে ফেললাম।
শয়তান, আর জায়গা পেলিনা নিয়ে আসার।
আমি হাঁসছি।
গাঢ়ল, হাঁসছিস আবার। এখুনি আছাড় খাচ্ছিলাম।
বড়মা হেসে খুন। ও ছোটো তুই চলে আয়, ওরা থাকুক।
ছোটোমা কোনো কথা বলছে না, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ওটা কি পোকা রে।
মাছ খেকো মাকড়সা।
উরি বাবারে। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো।
ওরে মিত্রা অনিকে ছার আমি আছাড় খাবো।
খাবো, পোকাটা কই।
তোকে দেখতে হবে না। কাপর গোঁজা হলো।
হলো কই তুমি কি পোকার কথা বললে।
আর তোকে গুঁজতে হবে না
নীপা জলে নেমে এসেছে। মিত্রা একটা হাতে আমাকে ধরেছে, আর একটা হাতে নীপাকে ধরেছে।
ওর বুদ্ধি শুনতে গেছো কেনো।
আমি শুনেছি, বড়মা বড়মা এই পাশ দিয়ে গেলে দশ মিনিট লাগবে। মিত্রা ভেংচি কাটলো।
আমি হাঁসবো না কাঁদবো। কোনো প্রকারে জল থেকে ওদের টেনে তুললাম।
উঠেই মিত্রার প্রথম ডায়লগ, বড়মা দারুন এক্সপিরিয়েন্স তুমি না থাকলে এই ভাবে যে বৈতরনী পার হওয়া যায়, জানাই যেতো না।
সেকিরে, এই তো তুই অনির সাপ সাপান্তর করছিলি।
তাই নাকি, কই নাতো। অনি তো ভালো ছেলে। আমার গালে দুবার খামচি মারলো। সোনামনা সোনামনা।
ছোটোমা হাসছে, বড়মা হাসছে।
পায়ে পায়ে সকলে চলে এলাম, সুরমাসি কাকীমা বাঁশবাগানে দাঁড়িয়েছিলো, আমাদের দেখে এগিয়ে এলেন, সবার চোখেই একই বিষ্ময়, ইসলামভাই, ভজু। ভজু তবু চলেবেল, কিন্তু ইসলামভাই।
বড়মাকে সবাই প্রণাম করলো, থাক থাক ভাই তোমাদের বাড়িতে আসা হলো, এই মর্কটটার জন্য। বড়মা আমার দিকে দেখছেন।
অনি আমি কিন্তু ফার্স্ট ফিতে কাটবো।
কিসের।
ওই যে দেখতে পাচ্ছিস।
মিত্রা বাথরুমের দিকে আঙুল তুলে দেখালো।
ওটাকি তোর ফিতে কাটার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
তুমি জানলে কি করে, অনাদিদা বলেছে, ওরা এসে আগে ব্যবহার করবে তারপর তোরা। নীপা বললো।
মিত্রা আমার দিকে চোখ মারলো, দেখছিস এখানে তোর পপুলারিটির থেকে আমার পপুলারিটি একটু হলেও বেশি। তোর পালের হাওয়া এবার আমি কেরে নেবো।
আবার শুরু করলি। বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।
বাড়ির ভেতর এলাম। বড়মা সব অবাক হয়ে দেখছে, ছোটোমাও তাই, ইসলামভাই-এর চোখের পাতা পরছে না।
তোমরা এবাড়িতে বসো আমরা ওই বাড়িতে যাই, নীপা ওরা ব্যাগ গুলো নিয়ে এসেছে।
হ্যাঁ, কখন, বাইরের বারান্দায় রেখেছি কোনটা কোন বাড়িতে যাবে বলো, পৌঁছে দিচ্ছি।
আমি ইসলামভাইকে বললাম চলো আমার সুইট হোমে। নীপার দিকে তাকালাম।
বুঝেছি, চা তো, যাও পৌঁছে যাবে। চায়ের সঙ্গে আর কিছু।
হাসলাম।
আমি ইসলামভাই চলে এলাম। ইসলামভাই-এর মাথা ঠেকে যাচ্ছে। সবসময় ঘার কাত করে রয়েছে।
জানিস অনি তোর এই মাটির বাড়ি আর খড়ের চাল দেখে আমাদের গ্রামের বাড়ির কথা মনে পরে যাচ্ছে।
তোমাদের গ্রামের বাড়িও কি এই রকম।
না। তোদের মতো এতো নীচু নয়, মাটির দেওয়াল, তবে আমাদের খোলার চাল, আমাদের ধানের ব্যবসা ছিলো, থাক এখন, পরে তোকে সব বলবো, ইসলামভাই একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিলো।
এখন এই পোষাকটা আমায় খুলে ফলতে হবে।
হাসলাম, কেনো।
উঃ সবাই যে ভাবে আমাকে দেখছে, আমি যেন যাত্রা দলের সং।
এরা এই পোষাকে এখানে আগে কাউকে দেখে নিতো, তাই।
সিঁড়িদিয়ে ওপরে উঠে এলাম।
তোর বাড়িটা কিন্তু বেশ দারুন। এইটা তোর ঘর।
হ্যাঁ। নিচে আরো দুটো ঘর আছে। আমি ব্যবহার করি না। থাকি কোথায়।
তুই কি একেবারেই আসিস না।
না।
কেনো, সে অনেক কথা, তবে অভিমান একটা বর কারন, এই অভিমানটা বড়মা অমিতাভদা ভেঙে দিয়েছে।
বড়দি তোর জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে আছে।
অনেকটা অংশ নয়, পুরোটা, জ্ঞান হওয়া অবস্থায় জীবনে প্রথম মা বলে ডেকেছি। এরপর ছোটোমা, তারপর মিত্রা।
আমি।
তুমি এবার জুড়ে বসবে।
এতদিন।
তোমাকে আমার কাজের মানুষ বলে মনে করতাম, তোমার সঙ্গে আমার একটা ভালো সম্পর্ক আছে এই কিন্তু এখন সেটা দেখছি বন্ধনের পযর্য় পৌঁছেযাচ্ছে।
ইসলামভাই আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
কি দেখছো।
তোকে। তোর সত্যি কথা বলার হিম্মত দেখে।
নীপা ব্যাগ নিয়ে ঢুকলো।
তুমি আমায় পরিচয় করিয়ে দিলে না।
সত্যি তো। ভুল হয়ে গেছে, আমার ফ্রেন্ড ফিলোজফার গাইড, আমার দাদা মুন্নাভাই। খালি এটুকু জানো। এর বেশি কিছু নয়। আমরা একসময় একসঙ্গে কাটিয়েছি, আমার জীবনের উত্তরনের একটা অংশ জুড়ে আছে মুন্নাভাই।
নীপা প্রণাম করতে গেলো, ইসলামভাই ওর হাতটা চেপে ধরলো। না আমি বিধর্মী।
তুমি একথা বলছো কেনো দাদা। অনিদা কোনো দিন এসব মানে না। অনিদার কাছে পৃথিবীর সবাই মানুষ, তার কোনো জাত নেই ধর্ম নেই।
ইসলামভাই নীপার মুখটা পদ্মফুলের মতো তুলে ধরেছে, ওর ওই রকম বড় বড় থাবার মতো হাতে নীপার মুখ অত্যন্ত ছোটো লাগছে। নীপা যেনো ইসলামভাই-এর কাছে লিলিপুটের দেশে গ্যালিভার।
তুমি অনিদার কথা বিশ্বাস করো।
হ্যাঁ।

যাও আমি তোমার প্রণাম নিলাম। ইসলামভাই নীপার কপালে চুমুখেলো।
ব্যাগগুলো দেখিয়ে বললো, কোনটা তোমার।
যাও আমি ঠিক করে নিচ্ছি।
তুমি বলো না, আমি গুছিয়ে দিই যাই আলনায়।
থাক পরে গোছাবে।
ঠিক আছে আমি চা নিয়ে আসি।
এসো।
মেয়টা খুব মিষ্টিরে, ভীষণ ইনোসেন্ট, কে রে।
সুরমাসির মেয়ে, ওর অবস্থাও খানিকটা আমার মতো।
জানিস অনি ভালো খারাপটা তৈরি হয় আমাদের মতো ঘরের থেকে, বিচারও হয় আমাদের মতো ঘরে, ওপরে যা নিচে যা, সেখানে ভালো মন্দের বিচার করতে পারবি না, সেখানে সব ভালো, নয় সব মন্দ।
ইসলামভাই নিজের ট্রাভেলার ব্যাগটা খুলে একটা শেরওয়ানী বার করলো। এখানে তো লুঙ্গি এলাও না, তাই না।
তুমি পরতে পারো।
আমার জন্য নিয়ম ভাঙবি কেনো।
হাসলাম।
আমি বাইরে যাই তুমি চেঞ্জ করে নাও।
ঠিক আছে।
আমি বাইরের বারান্দায় এলাম।
দেখলাম তিনজনে খামারে দাঁড়িয়ে এই বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে, পাশে মনাকাকা, কাকীমা। আমায় বারান্দায় দেখতে পেয়ে মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো আয় নিচে আয়।
আমি হাত নেড়ে ওপরে ডাকলাম।
বড়মা দেখলাম গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে।
ইসলামভাই ভেতর থেকে বললো, অনি আমি রেডি।
আমি ভেতরে গিয়ে মুখ বারিয়ে বললাম, বড়মা ছোটোমা আসছে।
নিচে নেমে এলাম।
পায়ে পায়ে এগিয়ে এলাম। তুই তো খুব ধনী লোক।
আমি বড়মার চোখে চোখ রাখলাম, অর্থের ভেতরে অর্থের খোঁজ করার সন্ধানে।
তাকিয়ে লাভ নেই, যা বলছি ঠিক বলছি।
এবার বল, বড়মাকে কে মালকিন। মিত্রা বললো।
আমি মাথা নীচু করলাম।
বড়মা চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছে, বলতে গেলে জরিপ করে নিচ্ছে।
আমি বড়মাকে ধরে ধরে ওপরে তুললাম। পেছনে সবাই। আমার ঘরটা দেখে বললো।
তোর ঘরটা বেশ। এই জানলাটার সামনে বুঝি তুই বসে থাকিস।
মিত্রা বুঝি তোমাকে ডিটেলসে বলেছে।
তোর থেকে গল্পটা ও ভালো বলে। তুই জল মেশাস, ও জল মেশায় না।
তুমি যে কখন কার বোঝা মুস্কিল।
বল বল, কি রকম দিলাম।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, তুমি খাটে বোসো। ইসলামভাই সোফাটায় বসেছে, আমি সোফায় গিয়ে বসলাম, বড়মা ছোটোমা মিত্রা খাটে, মিত্রা ঠেং ছড়িয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পরলো।
কিরে শুয়ে পরলি কেনো।
কতটা হাঁটালো বলোতো।
কই এইতো এই টুকু।
তোমার কাছে এই টুকু আমার কাছে অনেক।
নীপা চা নিয়ে ঢুকলো, মিটসেফের ওপর ট্রেটা রেখে সকলকে দিলো, মিত্রা তড়াক করে উঠে বসলো।
নীপা পাঁপর ভাজা গুলো নিয়ে আয় তো।
কেনো। তোমার জন্য আছে দিচ্ছি।
ওকে দিস না, সকাল থেকে কিছু খায় নি, শরীর খারাপ, খালিপেটে পাঁপর খেলে গ্যাস হবে।
মিত্রা এমন ভাবে কথা বললো, বড়মা হেসে ফললো, ছোটোমা ওর দিকে তাকিয়ে বললো, তোর কি হয়েছে বলতো।
মিত্রা পাঁপড় খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
চা খাব না বুঝলি নীপা, তাহলে ভাত খেতে পারবো না।
নীপা বড়মার দিকে তাকালো।
তুই ছাড়তো ওর কথা, ওখানে রাখ ঠিক খেয়ে নেবে।
নীপা অনাদিরা গেলো কোথায়।
বললো বাজারে যাচ্ছে এখুনি এসে পরবে, ওরা তো সেই কাল রাত থেকে যা বেরিয়েছিল, কি অবস্থা এখানে। তারপর তুমি ফোন করলে একটু থামলো। খুব খারাপ লাগছে শেলিটার জন্য। নীপা মাথা নীচু করলো, গলাটা ভারি হয়ে এলো।
মন খারাপ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
না গো বড়মা, ওকে তো আর দেখতে পাবো না, পরশুদিন রিয়েরশালে ওর সঙ্গে বসে কত কথা হলো। বললো দেবাদার চাকরি হয়ে গেলেই এখান থেকে চলে যাবে। অনিদা কি বলেছিলো অনাদিদার মারফত, দেবাদা রাজি হয় নি।

সবাই আমার দিকে তাকালো। এ যেন নতুন সূত্র খুঁজে পেলো সবাই। আমি নির্বাক।
যাও তুমি এখন। বড়মাদের স্নানের ব্যবস্থা করো। তারপর আমি মুন্নাভাই যাবো।
ঠিক আছে।
নীপা ধীর পায়ে চলে গেলো।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, ইসলামভাই চায়ে চুমুক দিলো।
তাকাচ্ছ কেনো। কোনো গন্ধ খুঁজে পাচ্ছ।
তুই সব সত্যি কথা বলিস নি।
সব সত্যি কথা বলা যায়।
কেনো।
বললে তুমি সহ্য করতে পারবে।
আর বাকি কি রেখেছিস।
শুনতে চাও।
অবশ্যই।
দিবাকর শেলি ছাড়াও আরো তিন চারজন মেয়ের সঙ্গে লট ঘট করেছে, এমন কি নীপাকে পযর্ন্ত গায়ে হাত দিয়েছে, যেহেতু মনকাকা মাস্টার, নীপা তার শালির মেয়ে, অনাদি আমার বন্ধু, তাই কিছু হয় নি। তাছাড়া দিবা শেলির সঙ্গে রেগুলার শারীরিক ভাবে মেশামিশি করতো, সেই দৃশ্য মোবাইলে তুলে রেখেছে, তাকে প্রভোক করতো রেগুলার, শারীরিক ভাবে মেশার জন্য, এখানে জায়গার অভাব নেই, দিবাকর সামন্ত ডাক্তারের কাছে বার বার গেছে, বাচ্চাটা নষ্ট করার জন্য, শেলি রাজি হয় নি, তাহলে আত্মহত্যা না খুন, এবার তোমরা বলো।
বড়মার গালে কে যেন সপাটে একটা থাপ্পর মারলো। বড়মা ছোটোমার চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
তুমি প্রমাণ চাও আমি দিয়ে দেবো। আমার মোবাইলে রাখা আছে।
বড়মা মাথা নীচু করলো। এবার বলো অনি মিথ্যে কোথায়। এই ঘটনা শোনার পর অনাদির হাত দিয়ে বলে পাঠিয়েছিলাম, দিবাকরকে বল আমি ওই জেলার ওকে ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্স বানিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু সর্ত একটা শেলিকে আগে বিয়ে করতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে, যেদিন ও বিয়ে করবে আমি সেদিন ওকে এ্যাপয়মেন্ট লেটার দেবো, পারলে এ্যাডভান্স টাকা দেবো। ও মানে নি, সুনীত ওকে চিফ রিপোর্টার বানাবার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো, ও ওই স্বপ্নে মসগুল ছিলো, এমনকি ওরা একটা কাগজ বার করার চেষ্টা এখনো করে যাচ্ছিল, আমার অফিসের মেন ইনফর্মার ছিল অতীশবাবু, আর এখানকার সমস্ত নিউজ সরবরাহ করতো দিবাকর। আরো অনেক আছে আমার বলতে ভালো লাগছে না।
আমি মুখে দুহাত চাপা দিয়ে বসলাম। ইসলামভাই আমার পিঠে হাত রাখলো। বড়মা খাট থেকে উঠে এসে আমার পায়ের কাছে বসে আমাকে বললো, অনি মুখ তোল। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে, কিন্তু পারছি না, বুকের ভেতরটা কেমন করছে। আমি মুখ তুললাম না। ছোটোমা এলো, অনি মুখ তোল বাবা, ওরকম করে না, তুই এরকম করলে আমরা দুর্বল হয়ে পরবো। আমি মুখ থেকে হাত সরিয়ে বড়মার গলা জড়িয়ে ধরলাম। মুখটা বড়মার কাঁধে চেপে ধরে বললাম,

যানো বড়মা আমি বলতে চাই, শোনার লোকের বড় অভাব। কে বুঝবে আমার কথা, দিবাকরের সঙ্গে এক সঙ্গে পরেছি, খেলা করেছি, ওকে শাস্তি দিতে আমারও খারাপ লাগছে, কিন্তু আমি অপারগ, আমার একটা ছোট্ট ভুলে একটা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান চলে যেতে পারে, আমি তা করতে দিতে পারি না।
তুই শান্ত হ। আমি বলছি, তুই ভুল করিস নি।
তোমাদের বলিনি, বলো তুমি এই কথা তোমাদের বলা যায়। তোমরা আমার মা। নিজের মাকে তো কোনোদিন মা বলে ডাকতে পারি নি।
ঠিক আছে, ঠিক আছে।
আমি মুখ তুললাম, সোজা হয়ে বসলাম। মিত্রা খাটের ওপর বসে মাথা নীচু করে বসে আছে। বড়মা আমার পাশে সোপায় উঠে বসলো ইসলামভাই বড়মাকে জায়গা করে দিলো, বড়মা আমার বুকটায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমার সব কাজের সাক্ষী হিসাবে আমি অন্ততঃ একজনকে রেখে যাচ্ছি, দেখছি সেও সব বোঝে না। মাঝে মাঝে ইসলামভাই-এর কাছে ছুটে যাই, ইসলামভাইকে দোষ দিই না, সে সব জানে না। তাকে বলিও নি। তারও তো নিজের সাম্রাজ্য আছে।
আমি কথা দিচ্ছি অনি আমি তোকে এবার থেকে সাহায্য করবো। ইসলামভাই এবার থেকে নিজেকে বদলে ফেলবে, তুই আমাকে মাস দুয়েক সময় দে।
মুন্না সত্যি দেখ না, একরতি ছেলেটা এই সব বাঘ ভাল্লুকের সাথে কত লড়বে বলতো। ছোটোমা বললো।
আমি কথা দিচ্ছি মন আমি আজ থেকে অনির পাশে আছি, আমি অনিকে একটা দিক সাপোর্ট দিতাম। এবার থেকে আমি ওর অনেক খোঁজ খবর রাখবো। দুনিয়াটা যে ঠিক নয়। ওইটুকু মেয়েটার কম সর্বনাশ ওরা করেছে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো। আমি জেনে শুনে চুপ করে থেকেছি। কিছু করতে পারি নি, যখন জানলাম ও অনির খুব কাছের লোক, তখন সব শেষ।
কিগো চলো, আমি সব রেডি করে এসেছি। বড়মা তুমি এরকম ভাবে বসে আছো কেনো, অনিদার শরীর খারাপ লাগছে। নীপা ঘরের চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে। দাঁড়াও অনাদিদাকে ডাকি।
উঃ এই মেয়েটাকে নিয়ে তো পারাযাবে না। দাঁড়া না মা।
যাও তোমরা স্নান করে নাও। আবার বিকেল বেলা যাবে বললে।
বড়মা আমাকে বুকে টেনে নিলো, বড়মার ওপর রাগ করিস কেনো, বড়মা না জেনে তোকে জিজ্ঞাসা করে ফেলেছিলো।
ঠিক আছে তাড়াতাড়ি করো। মুন্নাভাই তুমি পুকুরে না বাথরুমে।
আমি পুকুরে।
তাহলে চলে যাও স্নান সেরে ফেলো।
আমি তুই এক সঙ্গে যাবো।
ঠিক আছে। নীপা অনাদিদের একটু ডেকে দাও তো। মুন্নাভাই-এর থাকার জায়গা কোথায় করেছো।
ও বাড়িতে।
ভজু।
সব ও বাড়িতে। এবাড়িতে খালি তুমি।
আচ্ছা।
তাহলে মুন্নাভাই-এর কাপর-জামার জায়গাটা নিয়ে গিয়ে গুছিয়ে দাও।
ঠিক আছে।
ওরা সবাই চলে গেলো।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকালো।
ইসলামভাই একটা কথা বলবো।
বল।
ভীষণ সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।
তুই তো খাস না।
খাই না এখন খেতে ইচ্ছে করছে।

ইসলামভাই ব্যাগ থেকে একটা ৫৫৫ কার্টুন বার করে হাতে দিয়ে বললো, একটা প্যাকেট তোর কাছে রাখ আর একটা প্যাকেট আমায় দে। এই ফাঁকে মেশিনটা আলমাড়িতে ঢুকিয়ে রাখ।
ইসলামভাই কোমর থেকে মেশিনটা বার করলো। আমি আলমাড়িতে ঢুকিয়ে রাখলাম, আর এই প্যাকেটটা নে, দানা আছে। আমি আলমাড়িতে ঢুকিয়ে রেখে চাবি দিলাম।
অনাদিরা এলো, ওরা মুন্নাভাইকে দেখেছে আলাপ হয় নি। যা ঝামেলা গেলো, আমি বললাম কিরে খাওয়া দাওয়া করেছিস।
হ্যাঁ। কালকে থেকে যা গেলো। একবারে সব সেরে এলাম, বলে এসেছি এখন তোর বাড়িতেই গ্যারেজ, যদি প্রয়োজন হয় ডেকে নিতে।
চিকনাবাবু খবর কি।
তুমি গুরু যা দিয়েছো একবারে পেট পযর্ন্ত। তারপরেই জিভ বারকরলো।
ও মুন্নাভাই-এর সঙ্গে তোদের পরিচয় হয় নি।
করালি কোথায়।
আমি ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ওরা সবাই মুন্নাভাই-এর সঙ্গে হাত মেলালো।
একখান সিগারেট দে। চিকনা বললো।
আমি প্যাকেটটা এগিয়ে দিলাম।
গুরু বিদেশী ব্রান্ড, চিকনা নিজে একটা নিলো, ওদের সবাইকে একটা দিলো, আর একটা নিয়ে কানে গুঁজলো।
ওটা আবার কি।
একখান আমার, একখান সঞ্জুর জন্য, তখন আবার পাবো কিনা, তাই।
সত্যি তো সঞ্জু কই রে।
এসে পরবে। কালকে সারারাত দেবার বাড়িতে পাহারা দিয়েছে, দলবল নিয়ে।
কেনো।
যদি ফিরে আসে।
হাসলাম।
হাসিসনা, কাল যা টেনসন গেলো না, অপনেন্ট পুরো ঢুকে পরেছিলো, মালপত্রের টান পরে গেলো শেষ পযর্ন্ত, অমল বিট্রে করলো, কি যে অবস্থা, কি ভাবে সামাল দিয়েছি আমি জানি আর জানে পাঁচু পচা, একলা লড়ে গেছে। ও তোকে একটা কথা বলবো, তোকে তো ফাঁকা পাওয়া যায় না।
বল।
মুন্নাভাই-এর সামনে বলছি মুন্নাভাই কিছু মনে করবে নাতো।
বলনা কিছু মনে করবে না।
পাঁচু পচা আর হাঁড়ি পাড়ার হিরন এদিকটা দেখে, আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ওদের কাছেই থাকে।
তোদের অস্ত্রশস্ত্র, মানে।
পার্টি করতে গেলে লাগে।
ইসলামভাই মুচকি মুচকি হাসছে।
ওরা মাঝে মাঝে খর বোঝাই করে হলদিয়া হয়ে বাবুঘাট যায়। ওখান থেকে জোগাড় করে আনে।
এটাতো আগে বলিস নি।
এটা তোকে বলা যায়।
তারপর কি হয়েছে বল।
বাবুঘাটে আবিদ বলে একটা ছেলে আছে। ওই এসব সাপ্লাই করে ওদের, এবার টাকা নিয়ে আর মাল দিচ্ছে না। খালি ঘোরাচ্ছে, মাস দেড়েক হয়ে গেলো। পাঁচু খবর নিয়েছে ও নাকি ইসলামভাই-এর লোক। তোর ইসলামভাইকে একটু বলনা।
এতো খুব কঠিন কাজ।
আমি ইসলামভাই-এর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। ইসলামভাই না পারছে হাঁসতে না পারছে কিছু বলতে, খুব গম্ভীর হয়ে রয়েছে, কিন্তু চোখে হাসির ছটা।
দেখ আমি এই ব্যাপারে ইসলামভাই-এর সাথে কোনো কথা বলতে পারবো না, আমি ইসলামভাই-এর কাছে নিউজ সংগ্রহের জন্য যাই। ও কি ভাববে বলতো।
তাও ঠিক। তুই একটা অবলিগেশনের মধ্যে পরে যাবি।

ঠিক আছে থাক আমরা একটু ঘোরা ঘুরি করি, টাকাটা মনে হয় গিও।
তোরা কি আনতে দিয়েছিলি।
ওয়ান সার্টার চারটে।
ব্যাশ।
এই এখানে অনেক, জানতে পারলে কেউ ধারে কাছে ঘেঁসবে না।
বাবাঃ তোদের তো এবার ভয় করে চলতে হবে।
অনাদি এবারে তোকে চাটতে শুরু করবে অনি। চিকনা বললো।
চাটুক, ওকে বলবো নাতো কাকে বলবো।
ছেড়েদে। বাসু বললো।
ট্রলি ঠিক করে রেখেছিস।
কেনো দেখিস নি।
আমি তো খিড়কি দিয়ে ঢুকে ওপরে চলে এলাম।
দুটে রাখা রয়েছে, বড়মা খামার থেকে ট্রলিতে উঠবে আর খামারে এসে নামবে। একটুও পায়ে হাঁটতে হবে না।
ইসলামভাই হেসে ফললো।
নীপা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকলো।
কি হলো তোমরা এখনো বসে আছো উঠবে না। অনাদিদা খাবে তো।
না, খেয়ে এসেছি।
বড়মার কাছে গিয়ে রিপোট করবে। খেয়ে এসেছো। আমি কিছু জানি না।
বাবা। তুই এ্যাসিসটেন্ট আছিস কি করতে। চিকনা বললো।
শোনো অনিদা তোমার ধানের ব্যবসা চিকনাদা লাটে তুলে দেবে।
কেনো।
সব ধান ইঁদুরে খেয়ে যাচ্ছে।
হিসাব তোর কাছে, টাকা তোর কাছে, আমি খালি জোগাড় করছি, অনিকে তুই হিসাব দিবি।
দেবো একখানা।
টাকা তুইও পাবি। তোকে এ্যাকাউন্টেট রেখেছি।
আমি পারবো না যাও, আজই অনিদাকে হিসাব দিয়ে রিজাইন দিয়ে দেবো।
পালাবি কোথায়।
বুঝলে মুন্নাভই এরা ভাই-বোন, এদের কাছে নীপাকে রেখে আমার কোনো টেনসন নেই। নাহলে যা সব শেয়াল কুকুর আছে এই গ্রামে।
তোর প্ল্যান গুলো দারুন।
আচ্ছা আচ্ছা পরে গল্প হবে, মুন্নাদা ওঠো এখন অনেক বেলা হলো।
নীপা ইসলামভাই-এর হাত ধরে শোফা থেকে টেনে তুললো।
আমরা স্নান করতে গেলাম।
ইসলামভাই পুকুরের জল তোলপাড় করে স্নান করলো, প্রায় আধঘন্টা ধরে, মাঝে মিত্রা ছোটোমা, বড়মা এসে একবার তাড়া লাগিয়ে গেছে। ইসলামভাই জল থেকে উঠে বললো, জানিস অনি প্রায় দশবছর পর পুকুরে স্নান করলাম, লাস্ট একবার বনগাঁ গেছিলাম সেখানে স্নান করেছিলাম, আমাদের গ্রামে পুকুর ছিলো না, তবে একটা বড় দীঘি ছিলো, ভাগ করছিলো ঘাট, সেখানে স্নান করতাম, দীঘির এপার ওপার করা খুব মুস্কিল ছিলো, এককথায় বলতে পারিস ওটা আমাদের গ্রামের রিজার্ভার, মাছও ছিল, খাওয়া দাওয়া স্নান সব ওই জলে। জানিনা এখনও আছে কিনা দীঘিটা।

ইসলামভাই-এর চোখদুটো ভারি হয়ে আসছে, আজকে নিজের গ্রামের কথাটা খুব মনে পরছেরে, মন-এরও হয়তো মনে পরছে, ও খুব চাপা প্রকাশ করে না। হাসিখুশি মেয়েটা কেমন যেন বোবা হয়েগেছে।
আমরা সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম, আমি আমার একপাশে বড়মা একপাশে মিত্রা তারপাশে নীপা, বড়মার পাশে ছোটোমা, আর একদিকে ইসলামভাই, ভজু, অনাদি, বাসু, চিকনা।
কাকীমা সুরমাসি সবাইকে পরিবেশন করছে।
সবাইকে গরম ভাত দিচ্ছে আমাকেও দিলো সুরমাসি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো, কিরে তোর পান্তা।
তুমি জানোনা মিত্রাদি, মাকে ফোন করে আগে থেকে বলে দিয়েছে মেনুটা। নীপা বললো।
ওকি খাবে রে।
দেখোনা কি খায়।
সুরমাসি কাঁচা সরষের তেল দিয়ে গেলো, তার সঙ্গে পেঁয়াজ কুচি, লঙ্কা।
কিরে তুই সরষের তেল দিয়ে ভাত খাবি নাকি।
তোর কি, তুই খা না। তোর ইচ্ছে হলে তুইও খা।
না না তুই খা। আমাদের মেনুটা তোর থেকে স্মার্ট।
আমি তো গাঁইয়া।
তাহলে কি সাঁইয়া।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, মুচকি হাসছে।
সুরমাসি ওদের জন্য ডাল তরকারি ভাজা সব একে একে দিয়ে গেলো।
কিরে তুই এগুলো খাবি না।
না।
একবারে আমার পাতের দিকে তাকাবিনা, জিভ দিয়ে জলও বারকরবি না।
ঠিক আছে।
আমি গরমভাতে সরষের তেল মেখে পেঁয়াজ কুচি মাখলাম। সুরমাসি আমার জন্য ঘুনো চিংড়ি করা করে ভেজে পেঁয়াজ দিয়ে মেখে নিয়ে এসেছে। ওঃ দারুন গন্ধ বেরোচ্ছে। ঘ্রানেন অর্ধভোজনায়।
আমি খাওয়া শুরু করলাম, মিত্রা টেরিয়ে টেরিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে, মাঝে মাঝে নাক টানছে।
আমি খেয়ে চলেছি।
মিত্রা আর থাকতে পারলো না, তুই কিরকম মেখেছিস দেখি। বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাচ্ছিস।
আমার পাতে খাবলা মারলো। বড়মা ছোটোমা নীপা দেখছে, ও আমার পাত থেকে ভাত মুখে তুলে একটু ঘুনো চিংড়ির চার্ট মুখে তুলে বললো, বড়মা তুমি একবার খেয়ে দেখো, শয়তান নিজের চার্টের খাওয়াটা অর্ডার করে, আমাদের মাছ ভাত খাওয়াচ্ছে। আমার কোমরে চিমটি দিলো, আমি উঃ করে উঠলাম, সবাই হো হো করে হেসে ফললো।
আমি না পারছি হাসতে না পারছি কিছু করতে, বড়মা আমার পিঠে হাত বোলাচ্ছে।
তোকে আর খেতে হবে না, তুই আমার থালাটা নে আমি তোর থালাটা নিচ্ছি।
বড়মা হাসতে হাসতে বললো, ও মিত্রা করছিস কি।
তুমি একবার খেয়ে দেখো, তখন থেকে আমি নাক টানছি এতো সুন্দর ঝাঁঝালো গন্ধ আসছে কোথা থেকে, কতবার আমার ভত শুঁকলাম, শয়তান পাশে বসে গপ গপ করে খাচ্ছে, লজ্জাও করে না।
মিত্রা আমার পাত থেকে একগ্রাস তুলে বড়মার মুখে ঢুকিয়ে দিলো, ছোটোমাকেও দিলো, এবার বলো আমি মিথ্যে বলেছি।
না তুই মিথ্যে বলবি কেনো।
অনাদিরা, ইসলামভাই হাসতে হাসতে পাতে গড়িয়ে পরছে।
সুরমাসি বললো, ঠিক আছে মিত্রা আমি তোমায় দিচ্ছি।
না তুমি ওকে আবার নতুন করে দাও আমি ওর মাখা ভতটা তুলে নিচ্ছি। এই চিংড়িমাছও ওকে আলাদা করে মেখে দাও।
মিত্রা নিজের থালাটা আমার দিকে দিয়ে আমারটা টেনে নিলো।
আমি মিত্রার পাতের মাখা ভাত খেতে আরম্ভ করলাম, সুরমাসিকে বললাম, আর লাগবে না, কাল আবার খাবো।
সুরমাসি আমার কথাটা যেনো ভুলে যেও না।
না না ভুলবো না।
মিত্রা তুই একলা খাবি। ছোটোমা বললেন।
তুমি নেবে।
ভাতটা সরষের তেল দিয়ে দারুন মেখেছেরে অনি।
এবার বলো।
মিত্রা উঠে গিয়ে ছোটমার পাতে কিছুটা দিলো, বড়মা তাকিয়ে আছে, মিত্রা বড়মার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো, খালি মিত্রার দোষ দেখো না, তোমার ছেলেটার দোষ দেখো নাতো। দাঁড়াও দিচ্ছি।

মিত্রা বড়মার পাতে কিছুটা দিলো।
ইসলামভাই ওই দিক থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, ম্যাডাম সবাই যখন পেলো, আমি ফাঁকে পরি কেনো, একটু টেস্ট করি।
ওমা বড়মা দেখেছো, বেড়ালের গলায় ঘন্টা খালি আমি একা বেঁধেছি।
আমার দিকে ঘুরে বললো, এই আবার মাখ। খরিদ্দার অনেক।
তুই মাখ আমি পারবো না।
পারবিনা মানে, এতোক্ষণ বসে বসে গিললি, আমরা খেয়েছি।
তাহলে কি করলি এতোক্ষণ, গন্ধ শুঁকলি।
মিত্রাদি আমি।
ওমা দেখ।
দিদিমনি। ভজু চেঁচিয়ে উঠলো।
দেখ দেখ আমি হাগুরে নই, সবাই।
সুরমাসি আবার গরমভাত সরষের তেল পেঁয়াজ কুচি দিয়ে গেলো, বাধ্য হয়ে আমি ভাত মাখলাম, সবাই খেলো।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এই খাওয়াটা কোথা থেকে শিখলি।
আমাদের এখান থেকে একটু দূরে হাঁড়িপারা, ওদের আনাজ কেনার পয়সা থাকে না, মাঠে কাজ করলে চাল তেল নুন কয়েকটা আলু সিধা হিসাবে পায়, ওদের এই ভাবে খেতে দেখেছিলাম, এখানে হয়তো আরো কয়েক বাড়িতে এই ধরনের খাওয়ার চল রয়েছে, আমি কলকাতায় একদিন এক্সপেরিমেন্ট করলাম, দেখলাম চলেবেল, শুরু করলাম, ভজু কয়েকদিন ভাগ মেরেছিলো।
তুই আর কি কি খাস একটা লিস্টি দিস তো। মিত্রা বললো।
প্রথমে রাখ ইঁদুর পোরা।
ওয়াক।
কি হলো রে।
দেখছো বড়মা।
তুই ওকে জিজ্ঞাসা করলি কেনো।
তাই বলে। শয়তান।
দিলো আমাবার আমার কোমরে চিমটি।
আচ্ছা চল তোকে দেখাচ্ছি, খেলে বলবি অনি আর একবার খাওয়াবি।
আমি কিন্তু উঠে চলে যাবো।
পেটতো ঠেসে নিয়েছিস, উঠে গেলে খুব একটা খতি হবে না, কাল থেকে যা শুরু করেছিস।
উঃ নীপারে কালকে অনি যা চিকেন বাটার ফ্রাই করেছিলো না। আবার জিভে টক করে আওয়াজ। বড়মা হেসে ছোটমার ঘারে পরে গেলো।
আমার জন্য আনতে পারলে না একটা।
আনব কিরে যা কিপ্টা সবার ভাগে একটা করে গোনা গুন্তি, ওর হেল্পার কে ভজুরাম, সেও তেমনি, বাবু যদি বলে ছটা নিয়ে আসবি ও চারটে নিয়ে আসে।
বড়মা দেখছো দিদিমনি কিরকম মিথ্যে কথা বলছে। ভজু ওদিক থেকে চেঁচিয়ে বললো।
সবাই হেসে খিল খিল, অনাদিরা খাওয়া থামিয়ে দিয়ে খালি হাসছে। ইসলামভাই ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, মনু আর খাওয়া যাবে না ছোটোম্যাডাম হাসিয়েই পেট ভরিয়ে দিয়েছে।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, সত্যি করে বলতো মিত্রা কালকে তুই কটা খেয়েছিস।
বেশি না চারটে পুরো তোমার পাত থেকে হাফ। তাও তুমি দেখো আমার ভাগের একটা অনির ভাগের দুটো আর ছোটোমার ভাগের একটা।
আর রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনি যে ভাজতে ভাজতে তোকে একটা দিলো, তারপরে আমিও একটা দিলাম।
ও তো কালকে একটা গোটা মুরগি খেয়েছে। রাতে যদি ওর পেটে মুরগির ডাক শুনতে, সারারাত ঘুমোতেই পারলাম না। আমি বললাম।
মিত্রা আমার পিঠে গুম করে এক ঘুসি দিলো।
বড়মার সাপোর্ট পেয়ে বড়বড় কথা। মুরগি ডাকা।
বড়মার দিকে তাকিয়ে, তুমি কিছু বলতে পারো না।
সবাই হাসছে, কাকা বাইরের বারান্দা থেকে এসে বললো, বাবা এতো দেখছি ভোজসভা বসেছে।
বড়মা হাসতে হাসতে বললো বসুন না আপনি আপনার ভাইপোর তরজা গান শুনতে পাবেন।
ও মহা ফোক্কর। তোমরা জানো না, আমি হারে হারে চিনি। কত মার খেয়েছে এর জন্য।
কোথায় কোথায় মারতে বলোতো। মিত্রা বললো।
সে কি আর মনে আছে।
তবে একবার ওকে খুব মেরেছিলাম, মনটাও খুব খারাপ হয়ে গেছিলো, দুদিন ওর সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলতে পারি নি। ওই যে সামনের পুকুরটা দেখছো, ওটার একবার জলটা একটু খারাপ হলো, আমরা গ্রামের লোকেরা মেশিন বসিয়ে জল ছেঁচতে শুরু করলাম, মাছও ছিলো পুকুরে সিঙ্গি, লেটা, কই, মাগুর, পাঁকের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে সব মাছ ধরছে, তখন ও কিসে পরে ক্লাস নাইনে। ও নেমে পরেছে ওই পাঁকের মধ্যে মাছও ধরছে, তারপর একটা মাছ ধরে বলে উঠলো দেখ আমি একটা কত বড় মাছ ধরেছি, ভাবলাম হয়তো কুচে মাছটাছ হবে, দেখি পাঁক থেকে একটা গোখরা সাপ টেনে বার করলো, মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে, সবাই চেঁচিয়ে উঠলো, কামরে দিলে কি সব্বনাশ বলোতো, আমার তো আত্মারাম খাঁচা, কামরে দিয়েছে হয়তো এই মনে ভাবলাম, ওর মরা বাপ-মা আমার গলা টিপে ধরলো বলে, সবাই ছুটে গিয়ে ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে সাপটাকে মারলে, আমি রাগে দিকবিদিক জ্ঞনশূন্য হয়ে একটা বেরাকলমি গাছ ভেঙে সপাং সপাং করে দিলাম। উনা, ছিল ভানু ছিল ওরা এসে সব ধরে ফেললো, কতো বলবো মা ওর গুনের কথা, এই তল্লাটে একটা নারকেল গাছে ডাব হওয়ার যো নেই গাছে উঠে ওখানেই বসে ডাব খেয়ে গাছের ডালের ফাঁকে রেখে চলে আসবে, তোমরাই বলোতো মা, যদি একবার পা হড়কে ওখান থেকে পরে, রক্ষা পাবে। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks