দেখি নাই ফিরে - (Part-51)

তোমায় একটা গল্প বলে শেষ করছি।
বলো।
আমাদের একজন মনিষী ছিলেন। নামটা তোমায় বলছিনা। নামটা তুমি খুঁজে বার করে আমায় বলবে। খালি একাট ক্লু দিলাম তোমায়।
বলো।
ব্রিটিশ আমলের ঘটনা।
সেতো একশো বছর আগের ঘটনা।
হাঁ। তিনি যখন আইএএস পরীক্ষায় পাশ করলেন তখন তার ইন্টারভিউ-এর ডাক এলো।
হুঁ।
তিনি ইন্টারভিউ দিতে গেলেন।
হুঁ।
ঘরে ঢুকে চেয়ার বসার আগেই সাহেব প্রথমেই তাকে বললেন ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট।
কি বললে।
ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট।
যাঃ।
আমি যা বলছি ঠিক বলছি। তা সেই মনিষী প্রথমে একটু ঘবড়ে গেলেন। তারপর ভাবলেন ইন্টারভিউ বোর্ড। সাহেব আমাকে এই ধরণের প্রশ্ন করতেই পারেন। রাগ করলে চলবেনা।
কি উত্তর দিলেন সেই মনিষী।
কি উত্তর দিতে পারেন বলে তোমার মনে হয়।
মাথায় আসছে না। আমি হলে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসতাম। আমার চাকরির দরকার নেই।
তুমি হেরেগেলে।
তা কেনো।
তিনি কি বলেছিলেন জানো।
বলো শুনি।
ইয়েস মাই ফাদার ইজ এ লিগাল কাসটোমার।
স্ট্রেঞ্জ। কি নাইস অ্যানসার।
হ্যাঁ। তারপর সেই সাহেব মনিষীকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। চাকরি তিনি পেয়েছিলেন। তবে করেন নি। সারাজীবন ধরে দেশোদ্ধার করেছিলেন।
কে বলোনা।
নাম বলবোনা। তোমায় সেকেন্ড ক্লুটা দিলাম।
বলো।
তাঁর মৃত্যুর দিন আমরা এখনো জানিনা।
উঃ তুমি ভীষণ সাসপেন্সে রাখো।
রাখি। কাল দেখা হচ্ছে।
ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো।
এবার নিশ্চই তোমার ঘুম আসবে।
আসবে।
ফোনটা কেটে দিলাম। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম। একটা বাজে। মিত্রা ফোন করবে বলেছে। এখনো করলোনা। ওখানে কি কোনো সমস্য হলো ?
বিছানা থেক উঠে এসে, টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতল থেকে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। বাথরুমে গেলাম। বিছানায় এসে চাদর মুড়ি দিয়ে বসলাম। একবার ভাবলাম ল্যাপটপটা খুলি। তারপর ভাবলাম না থাক। সন্দীপকে একবার ফোন করি। ব্যাটা সকাল থেকে একা লড়ছে। কি হাল একবার জিজ্ঞাসা করি।

ফোন করতেই ওপার থেকে ভেসে এলো।
গান্ডু কানা রাতে ফোন করার সময় হোলো।
তোর বউ তোকে বানান করে গালি দিতে বলেছে।
সন্দীপ হো হো করে হেসে উঠলো।
খবরকি বল।
জীবনে প্রথম একা হাতে কাগজ বারকরলাম।
সেটিসফায়েড।
অবশ্যই। প্রথম কনসিভ করলাম এবং ডেলিভারি করলাম। কি আনন্দ হচ্ছে জানিস না।
তোকে আলাদা করে বলতে হবেনা। তোর কথা শুনেই বুঝতে পারছি।
শোন আমার তিনটে নার্সিংহোম ক্লিয়ার হয়ে গেছে।
কি বুঝলি।
কম বেশি সবেতেই ঘোটালা আছে।
বাকি গুলো এখুনি করতে হবেনা। নিউজটা আগামী সপ্তাহে মারবো। ফিরে এলে ছেলেদুটোকে পাঠাস।
বাঁচালি।
কেনো।
আজকেই হিমশিম খাচ্ছিলাম। ওরা আসতে কাজ তুলতে পারলাম। কিছু হারামী এখনো আছে।
মার্ক করে রাখ।
সব কটাকে দুর কর। আমি আর কয়েকটাকে বেছে রেখেছি। ভালো কাজ করছে।
দু’একটা কচি রাখিস।
কেনো মালকিনকে নিয়ে সখ মিটছে না। আরো কচি লাগবে।
আরে কলির কেষ্ট বলে কথা।
হারামী।
হাসলাম।
দাঁড়া ম্যাডাম আসুক।
চাকরি চলে যাবে।
এখন আর যাবেনা।
হো হো হো।
লাস্ট আপডেট কি।
দাদারা একটা নাগাদ বেরিয়ে গেলো। আমি বাড়িতে একা। তারপর মাসি এলো সন্ধ্যার সময়। সাড়ে এগারোটা নাগাদ গেলো।
সত্যি তোর দামিনী মাসি একটা ক্যারেকটার।
বউকে গল্প করেছিস।
করিনি। বলেছি বাড়িতে গিয়ে বলবো।
কাগজ বেরিয়ে গেছে।
ক্যালকাটা এডিসন প্রিন্ট হচ্ছে।
দেখেছিস।
হ্যাঁ।
প্রেসরুমের কি অবস্থা।
অতীশবাবু ছাড়া দিব্যি চলছে।
সনাতনবাবু।
শালা সকালে এসে দেখি মিলিটারি মেজাজে চারিদিকে ঘুরছে।
বলেছিস।
দাদা ফোন করে বলেদিয়েছে।
এইবার ঝটপট তৈরি হয়ে যা।
হ্যাঁ। এই কয়দিনে অনেক অভিজ্ঞতা হবে।
দাঁড়া দাঁড়া একটা ফোন ঢুকছে। তোকে পরে ফোন করছি।
ঠিক আছে।
ফোনটা ধরার আগেই মিস কল হয়ে গেলো। দেখলাম মিত্রার নম্বর।
আমি ফোন করতে গেলাম। তারপর ভাবলাম না। ওর ফোনে যদি রিং বাজে সবাই জেনে ফেলবে। তার থেকে বরং মিত্রাই ফোন করুক।
বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর আবার রিং বেজে উঠলো।
কিরে কখন থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে রয়েছি।
বসে থাক। আমি এখন বাথরুমে।
তার মানে। রাত দেড়টা বাজে।
এইতো খেয়ে উঠলাম।
এতো রাতে।
আর বলিসনা। দাদারা রাত নটার সময় এলো।
রাত নটা!
তাহলে বলছি কি।
এত রাত কেনো।
রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো।
তারপর।
নিরঞ্জনদা ফোন করে আর একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে।
সেরেছে। বড়মা।
দেড়েমুসে গালাগাল নিরঞ্জনদাকে।
হো হো হো।
হাসিসনা। আমি ও বাড়িতে গিয়ে ফান করছি।
ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
বাধ্য হয়ে ল্যাপটপটা খুললাম। নেট চালালাম।
বেশ কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরলাম। নিজের মেল বক্স আবার চেক করলাম। না তনু কিছু লেখেনি। কোনো মেলও পাঠায়নি। ও অফলাইনে আছে। চ্যাটে গিয়ে ক্লিক করে দু’কথা লিখে দিলাম। অফলাইন ম্যাসেজ।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা।
বল।
আজ সারাদিনটা বেশ ভালো কাটলো বুঝলি। সব ভালো যার শেষ ভালো। মধুরেণ সমাপয়েত।
দাঁড়া দাঁড়া
দাঁড়াবো কেনো। সবে এসে একটু লাট খেলাম।
সবিতো বলে ফেললি। তারওপর বেশ কড়া কড়া বাংলা বলছিস।
ভাব এবং ভাষা দুটোই গল গল করে বেরোচ্ছে।
হুঁ।
তোর দিনটা একটু খারাপ কাটলো। তা যাক। ভালো কাজ করতে গেলে ওরকম একটু খারাপ যেতেই পারে।
বুঝতে পারলাম মিত্রা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করছে। ও আজ অনেক হাল্কা। ওর ঘাড় থেকে সব বোঝা নেমে গেছে। ও খুশিতে থাকুক। অনেক কষ্ট পেয়েছে।
কিরে চুপ করে রইলি কেনো। হুঁ হাঁ করছিসনা। আবার কি ফন্দি আঁটছিস।
কই ? তুই বলছিস আমি শুনছি।
হুঁ হাঁ করবিতো।
বল।
আজ থেকে যা বলবো সব শুনবি।
হাসলাম।
হাসছিস কেনো।
কি করবো।
মাথায় রাখবি আমি এই কাগজের মালকিন।
জানি ম্যাডাম।
হ্যাঁ। এবার থেকে মিত্রা মিত্রা করবিনা। ম্যাডাম বলবি।
ঠিক আছে ম্যাডাম।
এইতো ভালো ছেলের মতো কথা। মিত্রা চুমু খাওয়ার ঢঙে বললো।

জানিস বুবুন আজ এই বাড়িতে আমরা চারজন।
কেনো।
ও বাড়িতে জায়গা নেই।
সব ঘর বুক।
হ্যাঁ। তোর বাড়ির নিচের ঘরগুলো আজ পরিষ্কার করা হলো। একেবারে চক চকে। সঞ্জু লাইট লাগিয়ে দিলো। ইসলামভাই ভজু নিচের একটা ঘরে। চিকনা নিচের বারান্দায়। আমি নীপা তোর ঘরে।
তুই ফোন করছিস চিকনা আবার রেকর্ড করছে।
উঁ উঁ উঁ।
উঁ করছিস কেনো।
সব হাত করে নিয়েছি।
তারমানে!
ওপরে ওঠার সময়ে গম্ভীর হয়ে বলেছি। চিকনা আজ তোমার বসের সঙ্গে রাতে কথা হবে।
বলে কিনা ওপর তলায় একেবারে রিপোর্ট যাবেনা। গেলে মিথ্যে যাবে। এই কান মুলছি নাক মুলছি।
হো হো হো। নীপা।
নীপা এখন আমার নেওটা। যা বোলবো তাই শুনবে।
কেনো।
হুঁ হুঁ। আমি এখন অনি ব্যানার্জীর রোল প্লে করছি।
বাবাঃ।
তোকে না জানিয়ে আজ একটা অন্যায় কাজ করে ফেলেছি।
কি।
বল আগে রাগ করবিনা।
না শুনলে বলবো কি করে।
আজকে স্নানসেরে মায়ের সিঁদুর কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে পরেছি। ঠাকুর ঘরে পূজো দিয়েছি।
হঠাৎ।
বড়মার কথায় সিঁদুর পরা বন্ধ করেছিলাম। আজ বড়মা পরতে বললো।
কেনো।
বললো আপদটা গেছে। এবার তুই সিঁদুর পরতে পারিস।
বেশ ভালো।
তুই একটুও দুঃখ পেলি না।
একবারে না।
কাল দেবাদের নিয়ে কখন আসছিস।
তুই খবর পেলি কি করে।
আমারও সোর্স আছে।
ঘেঁচু আছে। ইসলামভাই দামিনী মাসিকে ফোন করেছিলো। জানতে পেরেছিস।
দামিনী মাসির সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম।
টোডির বিষয় নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলো।
হ্যাঁ।
কি বললি।
যা যা জানি তাই বললাম।
মাসি কি বললো।
তুই একবারে চিন্তা করবিনা।
তুই কি বললি।
সেই সময় মনটা খুব খারাপ লাগছিলো। তারপর আবার ঠিক করে ফেললাম। তুই আছিস তো। আমার কিছু হবেনা।
ডাক্তারদাদা।
দারুন মজা হয়েছে।
কি রকম।
ডাক্তারদাদা যে আসছে দাদা বলেনি। আমরা জানতাম তিনজন। তারপর ট্রলি আসতে দেখি চারজন। আমি প্রথম দেখি। আমি আর ইসলামভাই খামারে দাঁড়িয়েছিলাম। বড়মাকে দৌড়ে এসে বলি।
হো হো হো।
বড়মার সে কি লম্ফ ঝম্প।
কার ওপর।
দাদার ওপর।
কেনো।
আগে থেকে বলেনি বলে। বলে কিনা মরন বুড়ো বয়সে ঢং কতো দেখো।
ডাক্তারদাদা কি বললো।
এডিটর আমার বান্ধবীকে বিষয়টা তোমার আগে থেকে জানানো উচিত ছিলো।
আমরা ডাক্তারের কথায় হাসতে হাসতে মাটির সঙ্গে মিশে যাই আরকি।
আমাকে দেখে বলে মামনি তোমার শরীর কেমন আছে। দেখিতো মুখখানা। তারপর আমার থুতনিটা নেড়ে দিয়ে বললো। হ্যাঁ এখন অনেক সুস্থ। বুঝলি কালকে এখানে লাইন পরবে।
কেনো।
অনাদি বাসু চিকনা ওদের সবার বাবা মাকে ডাক্তারদাদাকে দেখাতে আসবে।
খেয়েছে।
ডাক্তারদাদা বলেছে আমি সব পেসেন্ট দেখবো তবে আমার মজুরি চাই।
ওরা জিজ্ঞাসা করেছিলো।
হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা মাছ খেজুর রস নানারকম শাক আরো কতো কি বললো এই গুলো খাওয়াতে হবে।
ওরা সব একপায়ে রাজি।
কি খেলি।
তুইতো বেশ লেট্টি খেলি, মুরগির ঠ্যাং চিবোলি। আমার কথা মনে পরে।



একদম নয়।
তা থাকবে কেনো। রাক্ষস।
তুই খাওয়ার সময় আমার কথা মনে করেছিস।
তোর কথা সব সময় হয়। আমি না বললেও হয় বললেও হয়।
ডাক্তারদাদা নিচে বসে খেলো।
হ্যাঁ। বলে কিনা অনেকদিন পর একটু আরাম করে খেলাম।
কেনো।
বলে কিনা কলা পাতায় খাওয়া ভুলেই গেছিলাম। অনিবাবুর জন্য সেটা হলো।
পান্তা।
কাল খাবে বলেছে। ডাক্তার ভীষণ পেটুক।
তোর মতো।
এক থাপ্পর। শয়তান, আমি পেটুক।
তাহলে কি। খালি খাই খাই।
ডাক্তারদাদা আজ চিংড়ি মাছের টকটা দুবার চেয়েছে। কাকা তোর গুণকীর্তন করলো।
সেই মাছ ধরা কেশ। নতুন দুটো সংযোজন করেছে।
কি বলতো।
বলবোনা তুই আয় তারপর বলবো।
এরা যাচ্ছে শোবে কোথায় বলতো।
ওদের শোবার ব্যবস্থা সব রেডি।
কোথায়রে।
কাল আবার ইসলামভাই ও বাড়িতে শিফ্ট আমরা সব এই বাড়িতে।
কাল কখন বেরোবি রেস্ট্রি অফিসে।
যেতে হবেনা।
কেনো।
নিরঞ্জনদার ফরমা দেখিসনিতো।
আবার হো হো করে হেসে ফেললাম।
ফোনে ফোনে সব বলে দিলো। এখানকার থানার পুলিশের গাড়ি করে রেস্ট্রি অফিস থেকে লোক আসবে। ব্যাঙ্কের লোকও ওই গাড়িতে আসবে। সব এই বাড়িতেই হবে।
জব্বর ব্যবস্থা। দেবারা যাবে বড়মারা জানে।
কেউ জানে না।
তাহলে।
আজ আমি সারাদিন ইসলামভাই-এর পেছন পেছন ঘুরেছি।
আবার হাসলাম।
ইসলামভাইকে সকাল বেলায় বলেছি আজ তোমায় ছাড়ছিনা।
ইসলামভাই কিছু বলেনি।
বলেছে। আমি বললাম এতদিন তোমাদের ব্যাপার ছিলো, আজ আমার ব্যাপার, আমায় সব শুনতে হবে।
শুনে কি বললো।
মুচকি মুচকি হাসলো। বাজার থেকে ফিরে এসে দেখি ইসলামভাই নেই।
তারপর।
ফোন করলাম। বললো মামনি তুই পেছন দিকের বাঁশ ঝাড়ে চলে আয় আমি অন্ধকারে বসে আছি।
আমি গেলাম। রতন প্রথমে খবর দিলো। মাসি তোর কাছে যাবে।
রতন আর কি বললো।
তুই জানিস না।
মাসি বলার পর থেকে খোঁজ খবর আর নিই নি। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছিলো।
দাদাও তাই বললো। তুই খুব কেঁদেছিস। সেই শুনে বড়মাও কেঁদে ফেললো। তারপর দামিনী মাসির এ্যাপিয়িয়ারেন্স। দাদাতো কোনোদিন দেখেনি। প্রথমে বুঝতে পারেনি। কথা বার্তায় আঁচ করেছে। তারপর তোর নাম ধরে ডেকে যখন কেঁদে ফেলেছে। তখন দাদা শিয়োর হয়েছে এইটা দামিনী মাসি।
তুই তো এখনো দেখিস নি।
দেখালি কোথায়।
এবার দেখবি।
জানিস বুবুন গতকাল দামিনী মাসির একটা রূপ দেখেছিলাম। আজ একটা রূপ দেখলাম।
দেখলি কই গলার আওয়াজ শুনলি।
ওই হলো। আজ দামিনী মাসি স্নেহময়ী মা।
হাঁ।
আমাকে কত বোঝালো জানিস।
আমি হাঁ হুঁ করলাম। তারপর ইসলামভাই-এর কাছ থেকে দামিনী মাসির গল্প শুনলাম।
কি বুঝলি।
আমাদেরি মতো সাধারণ মানুষ।
গুড। তোর এই ফিলিংসটা আমার ভীষণ ভালো লাগলো। মনের কোনে কোনো নোংরা চিন্তা ভাবনা রাখিস না।
তোর কাছ থেকে এটা শিখেছি। তুই কি সুন্দর অবলীলায় এদের সঙ্গে মিশে গেছিস।
বড়মা ছোটমা কিছু ভাবেনিতো।
একেবারে না। খাওয়ার সময় খালি তোর কথা আর দামিনী মাসির কথা। তাও দাদা কিছু বলেনি। সব ডাক্তারদাদা বলেছে। জানিস ডাক্তারদাদাকে যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
যাদের ভেতরে কিছু আছে তাদের তুই ওপর থেকে বিচার করতে পারবিনা।
আজ হাড়ে হাড়ে টেরপেলাম।
তোর বরের খবর কিছু বার করতে পারলি।
মেরে আধমরা করে দিয়েছে।
তোর খারাপ লাগছেনা।
যার বিবাহিত বউকে টাকার লোভে অন্যের বিছানায় তুলে দিয়ে ক্যামেরাতে ছবিতুলে রাখে, তার খারাপ লাগেনা বরং সে শান্তি পায়।

মিত্রা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। আমি শুনতে পেলাম। আমি চুপচাপ। মিত্রাও চুপচাপ। ও কোনো কথা বলছেনা।
কিরে।
দুর তোর সঙ্গে আর কথা বলতে ভালো লাগছেনা।
আবার কাঁদে।
কেনো তুই জিজ্ঞাসা করলি। সকাল থেকে কতো ভালো ছিলাম।
ঠিক আছে আমার অন্যায় হয়েছে। আর কখনো জিজ্ঞাসা করবোনা।
সিডি আর ছবি তোর কাছে।
হ্যাঁ।
সিডিটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করেদে। ছবিগুলো পুরিয়ে ফেল। ওগুলো দেখে তোর মন খারাপ হয়নি।
হয়েছে। মন খারাপের থেকে বেশি রাগ হয়েছিলো। তাই ভদ্রলোকের গায়ে হাত তুলেছিলাম।
ও কবে ভদ্রলোক ছিলো। এটা আমার জীবনের একটা ক্ষতো।
বুঝি। আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
কি করবি।
ও যাতে আত্মহত্যাকরে তার ব্যবস্থা করবো।
পারবি।
তোকে কথা দিলাম।
দাদা বলছিলো তনু তোকে মেল করে সব জানিয়েছে।
হ্যাঁ।
সেই তনু যে লন্ডনে আছে।
হ্যাঁ। ও এখন বিবিসিতে রয়েছে।
তোকে খুব ভালোবাসে না।
হাঁ।
আমাকে ছেড়ে যাসনা।
আবার পাগলামো করে।
বলনা।
কালকে যাবোনা।
আচ্ছা আচ্ছা আর বোলবোনা।
এবার ঘুমিয়ে পর।
আর একটু কথা বলি।
না। কাল সকালে অনেক কাজ আছে।
তোরতো কোনো কাজ নেই।
আছে।
কি কাজ আছে।
বাড়ি ঘরদোর রং করার ব্যবস্থা করেছি। বুঝিয়ে দিতে হবে।
কেনোরে।
বিয়ে করবো।
কাকে।
জানতে হবেনা।
আমি তাহলে কি করবো।
তুইও থাকবি।
আমি কোথায় থাকবো।
দুজনে দুপাশে শুবি।
পিট্টি বুঝেছিস। পেটের মধ্যে এমন গুঁতো মারবোনা।
তাহলে জিজ্ঞাসা করলি কেনো।
বেশ করেছি। বলেছিনা আমি মালকিন।
মালকিনের কাছে বিয়ের ব্যাপার বলা যায়। নেমন্তন্নের কার্ড দেওয়া যায়।
তুই কাল আয় তোর ফড়ফড়ানি বার করছি।
এবার ঘুমো।
ঘুম আসেনা যে।
চেষ্টা কর। ওষুধ খেয়েছিস।
এই যা ভুলে গেছি। সকালেও খাওয়া হয়নি।
কেমন মেয়ে তুই দেখ। তুই নিজে মরবি আমাকেও মারবি।
সরি সরি এখুনি খেয়ে নিচ্ছি।
যা শুয়ে পর আর বক বক করতে হবেনা।
তুই রাগ করছিস কেনো।
চুমা দেবো।
দিবি! দেনা।
রাখছি।
আর একটু।
একবারে না। আমার ঘুম পাচ্ছে।
আচ্ছা রাখ।
গুড নাইট।
শুভ রাত্রি।

সকাল বেলা চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম। দামিনী মাসি মাথার শিয়রে বসে আছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার পায়ের কাছে কবিতা। আমার গায়ে চাদর ঢাকা। কাল আমি চাদর গায়ে দিয়ে শুই নি, বেশ মনে আছে। আমি জিভ বার করে তড়িঘড়ি উঠে বসলাম।
ফিক করে হেসে বললাম, কখন এসেছো।
আধঘন্টা।
ডাকোনি কেনো।
কাল অতোরাত পর্যন্ত গল্প করেছিস।
মাথা নীচু করলাম। তুমি জানলে কি করে।
আমি জানবোনাতো কে জানবে।
আমি মাসির কাঁধে হেলান দিলাম।
সব কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে ঘুমোচ্ছিস।
কে আসবে।
কেউতো আসতে পারতো।
ছগনলাল ঢুকতে দিতোনা।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি বক বক করছিলি।
কবিতার দিকে তাকালাম। ফিক ফিক করে হাসছে।
তুই কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মিত্রার সঙ্গে ঝগড়া করিস।
ধ্যুস।
ধ্যুস কিরে। নিজের কানে শুনলাম।
তুমি শুনেছো, আমিতো শুনিনি।
কবিতার দিকে তাকিয়ে।
বসে আছিস কেনো যানা একটু চা কর।
আমি বিছানা থেক নেমে টেবিলের কাছে গেলাম। ব্রাসে মাজন লাগাতে লাগাতে মাসির দিকে তাকিয়ে বললাম। কটা বাজে বলোতো।
দশটা।
বলোকি এখুনি ওরা এসে পরবে।
টিনা ফোন করেছিলো।
তুমি কথা বলেছো।
বললাম। বাবু এখনো ঘুমোচ্ছে। শুনে টিনা বললো ঠেলে তুলে দাও।
হাসলাম। দাঁড়াও ঝট করে মুখটা ধুয়ে আসি।
বাথরুমে গিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে বেরোলাম।
স্নান করবিনা।
ওখানে গিয়ে করবো।
কেনো।
এখানে করলেও ওখানে গিয়ে করতে হবে।
কবিতা ঘরে ঢুকলো। ট্রেতে কচুরী মিষ্টি।
কিরে।
মাসিকে বলো। আমাকে বকবেনা।
তুই নিয়ে এলি মাসিকে বলবো কেনো।
মাসি নিয়ে এসেছে। আর একটা পেটি ভর্তি করে মিষ্টি নিয়ে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে যাবে।
কিগো মাসি।
আমারতো কিছু দিতে ইচ্ছে করে।
বুঝেছি।
তুই খাবিনা।
খাবো। কবিতা শুধু কি আমার জন্য।
না।
বাকি নিয়ে আয়।
তুমি খাও তারপর খাবো।
তা হবেনা।
যা কবিতা যা। গোঁয়াড় গোবিন্দকে নিয়ে পারবোনা। আমাদের আছে কিনা দেখে তবে উনি খাবেন।
কবিতা কোমর দুলিয়ে চলে গেলো।
মিত্রার সঙ্গে কথা হলো।
তুই কি করে জানলি।
তুমি যেমন ভাবে জানো, আমিও ঠিক তেমন ভাবে জানি।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।

তুমিতো দেখোনি। গলা শুনে কেমন মনে হচ্ছে।
আমার থেকে তুই ভালো জানবি।
তোমার চোখ আর আমার চোখের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
মাসি আমার দিকে তাকালো।
ভুল বললাম।
মাসি মাথা দোলাচ্ছে। মুখ তুললো।
দুচোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে।
রবিবার চলে আসবো। ভজুবাবু।
বললোতো ভালো আছি। ডাক্তার ওকে গিয়েই দেখেছে।
আমার সঙ্গে ভজুবাবুর কথা হয়নি।
হ্যাঁরে ভালো হবে।
ডাক্তার বলেছে সত্তরভাগ ভালো হবে। বাকিটা হবেনা।
যতটা হয় ততটা মঙ্গল।
আমরা চেষ্টা করতে পারি বুঝলে মাসি।
হ্যাঁ রে। তবু তোর কাছে এসে পরেছিলো বলে চিকিৎসাটা হচ্ছে।
এইভাবে বলছো কেনো।
মাসি আমার দিকে তাকলো। চোখের কোল দুটো চিক চিক করছে।
আবার মন খারাপ করে।
কালকে থেকে অনেক ভাবলাম তোদের দুটোকে নিয়ে।
ভেবে কি পেলে।
আর একটু আগে জানতে পারলে ভালো হতো।
সব কিছু কি আর মনের মতো হয় মাসি।
কবিতা ঘরে ঢুকলো।
প্লেট নামিয়ে রাখলো।
কিগো তুমি আবার কাঁদছো।
আমি কবিতার দিকে তাকালাম।
কাল সারারাত ঘুমোয়নি। খালি কেঁদেছে। সকালে দুজনে বাগবাজারের গঙ্গায় গিয়ে স্নান করে সোজা তোমার কাছে চলে এসেছি। আসার সময় শ্যামপুকুরের চিত্তরঞ্জন থেকে মাসি মিষ্টি কিনেছে।
মাসি মাথা নীচু করে বসে আছে। আমি উঠে গিয়ে মাসির মুখটা তুলে ধরলাম। চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। আমাকে জাপ্ট ধরে মাসি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কবিতা মাথা নীচু করে বসে আছে। ওরও চোখে জলে টল টল করছে। আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলামনা। মাসিকে এই ভাবে কাঁদতে কখনো দেখিনি। অনেকক্ষণ কারুর মুখে কোনো কথা নেই।
কবিতা আমার দিকে তাকালো। ইশারায় ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। কবিতা মাতা দোলাচ্ছে। বলবে না। তুমি জিজ্ঞাসা করো।
কিগো বলবেনা। মাসির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বোললাম।
তুই আমাকে ভুলে যাবিনা।
আমার দিকে তাকাও।
মাসি চোখ বন্ধ করে আছে।
চোখ খোলো।
মাসি আস্তে আস্তে চোখ খুললো। জলে ভরা চোখ দুটোয় মিনতি। করুণ আর্তি।
কেনো বললে ও কথা।
তুই এখন কতো বড়ো হয়ে গেছিস।
তাতে কি হয়েছে বলো।
তোর কতো প্রতিপত্তি।
মাকে কেউ ভুলতে পারে।
মাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
তুমি কাঁদলে আমার খারাপ লাগে।
আমি যে মা হতে পারিনি।
কে বলেছে বলো।
না অনি না অনি। তুই আমাকে দুর্বল করে দিসনা। তুই মায়াবী।
তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারবে।
মাসি মাথা দোলাচ্ছে।
কেঁদোনা। তোমরা এরকম করলে আমি কাজ করবো কি করে। তুমি চাওনা আমার পাশে থাকতে।
চাই।
তাহলে। এরকম দুর্বল হলে চলে। তোমার একনো কতো কাজ।
আর পারছিনা অনি। আমাকে একটা সুস্থ জীবন দে।
একটু অপেক্ষা করো। আমি সব ব্যবস্থা করেছি।
কেঁদোনা। দেখো তোমাকে দেখে ওই মেয়েটাও কাঁদছে।
মাসি আমাকে ছেড়ে কাপরের খোঁট দিয়ে চেখ মুছলো। নাও মিষ্টি খেয়ে জল খাও।
আমি মাসিকে নিজে হাতে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলাম। মাসির কান্না থামেনা। সবাই একসঙ্গে খেলাম অনেকক্ষণ পর মাসি একটু ঠান্ডা হলো।
কালকে মিত্রা তোমায় কি বললো।
আমি ওকে বোঝালাম বেচারা কাঁদছিলো। মেয়েদের মন তোকে কি করে বোঝাই।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম।
কিরে। কখন উঠলি।
সাড়ে পাঁচটা।
একবারে মিথ্যে কথা বলবিনা।
তুই কবে থেকে সত্যবাদি যুধিষ্ঠির হলি।
আমি খবর নিয়েছি। তুই ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিস।
বুঝেছি। নে কথা বল।
কেরে।
কথা বল।
বল মামনি।
ওমা তুমি ওখানে।
হ্যাঁ।
গঙ্গায় স্নান করেছো।
করেছি।
আমার মিষ্টি কিনেছো।
হ্যাঁ।
বুঝেছি তোর জন্য মাসি মিষ্টি কিনে এনেছে।
বেশ করেছি তুই কিছু করতে পারবি।
দাঁড়া একবার যাই।
মাসি হাসছে।

জানো মাসি কাজ শেষ। আমি আজ মুক্ত বিহঙ্গ।
ভালো ভাবে মিটিছে।
ফার্স্টক্লাস। নাও ভজুবাবু কথা বলবে।
মা।
বল।
পান্তা খেলাম।
ভালো করেছিস।
তুমি ভালো আছো।
হ্যাঁ। কবে আসবি।
অনিদা আসুক চলে যাবো।
আচ্ছা।
শোন পরে কথা বলবো। এখন জিল্পি এলো। খাওয়া হবে।
ইসলামভাই কোথায়।
ওখানে কাগজ পত্র বুঝছে।
ঠিক আছে।
মাসি জোড়হাত করে কপালে ঠেকালো।
ওটা আবার কি হলো।
ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলো।
না হবার কি আছে। আমি মন থেকে চেয়েছি।
রতন হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো।
কিরে কি হয়েছে!
তুমি এখানে। ফোন বন্ধ করে রেখেছো কেনো।
মাসি হাসছে।
সকাল থেকে তোমায় খুঁজতে খুঁজতে কুত্তা বনে গেছি।
কেনো বলবিতো।
রতন বারান্দায় চলে গেলো। চেঁচিয়ে কাকে বললো নিয়ে আয়।
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছি। ওদের চোকে কোনো বিকার দিখতে পেলাম না।
একটা ছেলে একটা ভিআইপি স্যুটকেস নিয়ে এলো।
এটা কিরে।
নিয়ে যাবে বসের হুকুম।
তারমানে। তোরা কি আমাকে মারার ধান্দা করেছিস।
আমরা থাকতে কেউ তোমার শরীরের একটা লোম ছুঁতে পারবেনা। সব শুনেছি। তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। বসকে নতুন জীবন দিচ্ছ। তার মানে আমাদেরও দিচ্ছ।
আমি মাসির দিকে তাকালাম।
মাসি মাথা নীচু করে হাসছে।
তোমার ওখানে যে কাজ করবো তার জন্য লাগবে মাসি এগুলো তোমার কাছে রাখো।
ইসলাম কাল আমায় বলেছে। তুই নিয়ে যা। তোর এখন অনেক কাজ।
কবিতা কচুরী আছে।
কয়েকটা আছে।
যা রতনের জন্য নিয়ে আয়।
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
রতন।
বলো।
শেষ খবর আমাকে দিলিনা।
তোমাকে মাসি কিছু বলেনি।
না।
তোমাকে ভাবতে হবেনা। তুমি চাইলেও জানতে পারবেনা। সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি।
সেটা জানতাম।
ব্যাশ তাহলে জানতে চাইছো কেনো। আমাদের কাজ আমাদের করতে দাও। তোমার কাজ তুমি করো।
তোদের নিয়ে আমারও চিন্তা হয়।
হোক। তবু জানতে চাইবেনা।
কিগো মাসি।
মাসির দিকে তাকালাম। মাসি মাথা নীচু করে আছে। আস্তে করে বললো। রতনতো তোর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
মাসি তোমার রংয়ের লোক রেডি করে দিয়েছি। নীচে সব চলে এসেছে। বুঝিয়ে দাও।
দাঁড়া অফিসে একটা ফোন করি টাকা আনাই।
এই লোকটা মহা ঝামেলা কারক লোক তো।
মাসি হাসছে।

তোরা কি ভেবেছিস বলতো।
বসকে গিয়ে বলবে। আমাদের কিছু বলবেনা।
আমার রংয়ের দরকার নেই।
তুমি বললে হবেনা ওখান থেকে হুকুম এলে বন্ধ হবে।
কবিতা চা আর রতনের জন্য কচুরী নিয়ে এলো। রতন কবিতার হাত থেকে প্লেটটা ছিনিয়ে নিয়ে দুবারে সব কচুরী খেয়ে ঢক ঢক করে একগ্লাস জল খেলো।
বুঝলে মাসি সকাল থেকে কুত্তার মতো ঘুরেছি। জোগাড় করার জন্য। কেউ দেয়না। তারপর পেলাম।
কে দিলো।
বেনিয়া বেটা।
বাইরে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম দেবারা চলে এসেছে। বারান্দায় গিয়ে উঁকি মারলাম। দেবা নিচ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো কিরে রেডি।
আমি ইশারায় ওপরে আস্তে বললাম।
কেরে ওরা এলো।
হ্যাঁ।
পেন্ট গেঞ্জিটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। টাওয়েলটা নিয়ে ভালোকরে গাহাত-পা মুছে ড্রেস করে বেড়িয়ে এলাম। দেখলাম ওরা জমপেশ করে গল্প করছে। প্রত্যেকেই আজ বেশ দারুণ দারুণ শালোয়াড় কামিজ পরেছে। সাজেনি কিন্তু সেজেছে। ভীষণ মার্জিত লাগছে ওদেরকে। কবিতা এক রাউন্ড চা এনে দিয়েছে।
কখন উঠলি।
দশটা।
তাও ঠেলা খেয়ে উঠেছে। টিনা বললো।
রতনের সঙ্গে পরিচয় হলো।
তোকে আর দয়া করে পরিচয় করাতে হবেনা।
হাসলাম।
বেরোবিতো।
হ্যাঁ। তোদের গাড়িতে জায়গা আছে।
কিসের জন্য বল।
দুটো জিনিষ উঠবে।
মিলি ফিক করে হাসলো।
হাসলে কেনো।
তোমার কথা শুনে।
দেখছো মাসি বিনয়ের অবতার। টিনা বললো।
কবিতা ওদের একটু মিষ্টি এনে দে।
বাক্স থেকে খুলে দেবো।
দে।
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
কিসের মিষ্টি মাসি।
মেয়ের জন্য পাঠাচ্ছে। আবদার করে সকালে ফোন করে বলেছে।
মাসি তোমার মেয়ের কাছে ওটা পৌঁছবেনা।
না বাবা সময় থাকলে তোদের জন্যও নিয়ে আসতাম।
কেনো নিয়ে আসোনি। এই প্রথমবার পরের বার হলে গন্ডগোল হয়ে যাবে।
আচ্ছা আর ভুল হবেনা।
নির্মাল্য ফিক ফিক করে হাসছে।
মাসি নির্মাল্যের দিকে তাকিয়ে বললো। তোদের মধ্যে ও খুব শান্ত।
টিনা চেঁচিয়ে উঠলো। মিচকে পোরা শয়তান তুমি জানোনা। অনিদা আছে বলে।
কেনো অনিকে ভয় পায়।
ভয় পায়না। অনিদা মাঝে মাঝে টুক টুক করে এমন দেয় ওর প্রেসটিজ......।
শুধু আমার না তোদের নেই। নির্মাল্য চেঁচিয়ে উঠলো।
মাসি হাসছে।
কবিতা মিষ্টি আনলো। নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ, রসোগোল্লা।
দেবা মুখে তুলেই বললো, ও মাসি তুমি এসব কোথা থেকে পাও বলোতো। টেস্টি আলাদা।
তোদের একদি পেট ভরে খাওয়াবো।
দাঁড়াও অনির ওখান থেকে ঘুরে আসি। তারপর তোমায় পাকরাও করবো।
অনিদা ওগুলো তুলে দিই।
রতন পেছনটা খোলা আছে। ঢুকিয়ে দাও। দেবাশীষ বললো।
আমি যাবো। নির্মাল্য বললো।
না দাদা তোমরা খাও আমি তুলে দিচ্ছি।
রতন বেরিয়ে গেলো।
কবিতা জলরে গ্লাস নিয়ে এলো।
খাওয়া পর্ব শেষ আমি মাসিকে প্রণাম করলাম। ওরাও সকলে আমার দেখা দেখি মাসিকে প্রণাম করলো। মাসির চোখ দুটো ছল ছলে হয়ে গেলো। বেরিয়ে এলাম। আসার সময় ছগনলালকে সব বলে এলাম।

দেবাশীষ আজ ড্রইভ করছে। সামনের সিটে নির্মাল্য। আমরা চারজন মাঝের সিটে। আমি একদিকের জানলার ধারে অদিতি আর একদিকের জানলার ধারে। মাঝে টিনা মিলি। টিনা আমার গা ঘেঁষে বসেছে। দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরিয়ে কোনা বাইপাসে উঠতে দেবাশীষ প্রথম কথা বললো।
অনি অনেকদিন পর লঙ ড্রইভে বেরিয়েছি।
কেনো।
সময় কোথায় বলতো। আমার সময় হলে অদিতির হয়না অদিতির হলে আমার হয়না।
আজকে হলো কি করে।
এটা একটা দামি কথা বলেছিস। কেনো জানিনা কালকে টিনার মুখ থেকে সব শোনার পর মনটা কেমন হয়ে গেলো। এসপার নয় ওসপার। চলো বেড়িয়ে পরি। বেরিয়ে পরলাম।
এই মেন্টালিটি রাখলে তুই কোনোদিন হারবিনা।
দারুন বললি কথাটা।
একটু ভেবে দেখে। তুই যখন কলেজে অদিতিকে প্রথম ভালোবাসতে চাইলি তখন তোর মধ্যে এই রোলটা প্লে করেছিলো।
একদম ঠিক।
আমি ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেবাশীষের চোখ লক্ষ্য করছি। ওর উত্তেজিত চোখ দুটো সামনের রাস্তার ওপর।
বিশ্বাস কর। তোর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সব কেমন যেন ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে।
কেনো।
তোকে বলতে দ্বিধা নেই। অদিতির সঙ্গে আমার একটা মেনটাল ব্লক তৈরি হয়ে গেছিলো। দূরত্বও বেড়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকদিন অদিতির সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলাম। তোর আর মিত্রার কথা ভাবলাম। পথ পেয়ে গেলাম। অদিতি তোর পাশে। জিজ্ঞাসা কর আমি একবর্নও মিথ্যে বলছিনা। আমি মিলির কাছে কনফেস করেছি। টিনার কাছে কনফেস করেছি। সত্যি কথা বলতে কি নির্মাল্য আমাদের থেকে তিন বছরের জুনিয়র। ওর কাছেও কনফেস করেছি।
এতে তুই উপকার পেয়েছিস।
অফকোর্স।
কেনো।
সেইটা সার্চ করে দেখিনি।
জানিস দেবা আমরা প্রত্যেকে আশ্রয় চাই। মা তার সন্তানের কাছে আশ্রয় চায়। একটা শিশু তার মার কোলে আশ্রয় চায়। প্রমিক প্রেমিকার কাছে আশ্রয় চায়। এরকম উদাহরণ দিতে গেলে তোকে অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি। তুই অদিতিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস। অদিতি তোকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। এটা সত্য। মিথ্যে নয়। কিন্তু ভালোবাসার পরিণতি কি ? শরীর না মন। এটা কখনো ভেবে দেখেছিস।
আদিতি জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো। কালো কাঁচে ঢাকা চশমায় ওর চোখ ভালো করে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে এটা ঠিক ও আমার এই কথায় দারুণ সক্ড। টিনা আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। মিলি আমার কথা শুনে হাঁ করে রয়েছে।
সত্যি বলছি অনি কখনো ভাবিনি।
ভেবে দেখিস উত্তর পাবি।
তুই বল।
না। এটা সম্পূর্ণ তোর ব্যক্তিগত। তুই যে উত্তরটা পাবি সেটা তোর ভালোবাসার জনের সঙ্গে শেয়ার করিস, দেখবি মিলে যাবে।
আমি অদিতিকে বলেছি অনি মিত্রার সম্পর্কটা দেখো কত জটিল। তবু অনি সব হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে। কেনো ? শুধু অর্থের জন্য। তাই যদি হয় মিত্রাকে বাঁচানোর জন্য ও আমাদের কাছে এ্যাডের জন্য ছুটে এসেছে কেনো। সেকেন্ডলি মিত্রার শরীর খারাপ। সেই দিন আমি বড় ধাক্কাটা পেলাম তোর কাছ থেকে। যে মিত্রাকে তুই এত ভালোবাসিস তার কাছ থেকে অতবড়ো আঘাত পেয়েও তুই বুক দিয়ে তাকে আগলে রেখেছিস। সেইদিন তোর বাড়ি থেকে ফিরে এসে আমি অদিতি সারারাত ঘুমোতে পারিনি। তোর কথা ভেবে।
কালকেরটা বলো। অদিতি বললো।
সত্যি দামিনী মাসি। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks