দেখি নাই ফিরে - (Part-52)

দেবাশীষদা ওই ভদ্রমহিলাকে দেখলে কখনো মনে হয় উনি ওই এলাকায় বসবাস করেন।
বসবাস কি বলছো টিনা। কাল রাতে বাড়ি ফিরে অদিতির সামনে আমার কয়েকজন পরিচিত, তথাকথিত মাস্তানকে ফোন করেছিলাম। তারা আমার হাতে পায়ে ধরে দামিনীমাসির সঙ্গে পরিচয় করার জন্য। অদিতিকে জিজ্ঞাসা করো আমি ভয়েজ অনকরে ওকে শুনিয়েছি। জানিস অনি তোর জন্য এটাও আমাদের বড়ো প্রাপ্তি।
কেনো।
নাহলে একটা ভুলকে চিরদিন সত্য বলে মেনেনিতাম।
এরকম কতো ভুলকে আমরা সত্য বলে মানছি প্রত্যেকদিন প্রতিটি মুহূর্ত তার খবর রাখিস।
তোকে অনেকদিন পর পেয়েছি। তোর পাশে থেকে এই বোধ গুলো তৈরি করার চেষ্টা করবো।
খুব শক্ত। পারবি ?
পারতেই হবে।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম দামিনী মাসি আমার মাথায় শিয়রে বসে আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছে। কবিতা পায়ের কাছে স্থানুর মতো বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তোকে ডাকে নি।
না।
স্ট্রেঞ্জ।
তারপর সমস্ত ঘটনা একটুও এডিট না করে ওদের বললাম।
টিনা রুমাল দিয়ে চোখ মুছলো। মিলির চোখ দুটো কেমন ভারি ভারি। অদিতি চোখ থেকে স্নানগ্লাসটা খুলে ব্যাগে রাখলো।
সবাই নিস্তব্ধ। ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেখলাম। দেবাশীষের চোখে পলক পরছেনা। স্থির চোখদুটো রাস্তার ওপর স্থির হয়ে আছে।
দেবা।
বল।
সামনে ব্রিজটা পেরিয়ে ডানদিকে একটা ধাবা পরবে। গাড়িটা ধাবায় ঢোকাস। খিদে লেগেছে।
আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ধাবায় চলে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলাম। আমায় দেখেই ধাবার ম্যানেজার চিনতে পারলো। নিজের সিট থেকে নেমে এসে বললো।
স্যার ওপরের কেবিনে চলুন। নিচেরটায় লোক আছে।
দেবা আমার দিকে একবার তাকালো। ওর চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমরা সবাই ওপরের কেবিনে এলাম। ম্যানেজার আমাদের সঙ্গে এলেন।
কালকে নিরঞ্জনদা বলে গেছিলেন আপনি আজ আসবেন।
ওরা কাল কখন এসেছিলেন।
পাঁচটা নাগাদ।
কেনো!
গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো। তারপর একটা গাড়িতে করে এখানে আসেন। শেষে আমার গাড়ি করে পাঠালাম।
আমাদের একটু খাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
কেবিনে ঢুকলাম। দেবাশীষ চারিদিক দেখছে।
কিরে কি খাবি।
তুমি বলে দাও। অদিতি বললো।
আমি আলুপরটা চিকেন ফ্রাই মটরপণির আর মিক্সড তড়কা বললাম।
ম্যানেজার চলে গেলো।
জানিস অনি অনেকদিন আগে আমি অদিতি দীঘায় এসেছিলাম। তখন এই ধাবাটা পাইনিতো।
পেয়েছিস ঢুকিসনি। তোরা থার্মলপাওয়ারের গেটের সামনে যে ধাবাটা আছে সেখানে ঢুকেছিলি।
ঠিক ধরেছিস।
এইরকম একটা জায়গায় তাজবেঙ্গলের ডেকরেসন ভাবাই যায়না।
তোর ভালো লাগছে।
ভালো লাগছে মানে। এই টুরটা অনেকদিন মনে রাখবো।
কি টিনা ম্যাডাম মুখটা শুকনো শুকনো। এখনো শকটা কাটলোনা।
টিনা মুখ নীচু করে আছে।
জীবনটা ধরতে শেখো। দেখবে কোনো দুঃখই দুঃখ নয়।
চেষ্টাতো করি। তোমার মতো পারিনা।
আমি একদিনে পারিনি। তোমার মতো একদিন আমিও কাঁদতাম এখন কাঁদিনা।
কি মিলি ম্যাডাম দুঃখ দুঃখ করে থাকলে চলবে।
তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছি। বোঝার চেষ্টা করছি।
নাও বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসো।
মাঝে মাঝে একটা ব্যাপার মনে ভীষণ স্ট্রাইক করে। তুমি বাইরে থেকে যতটা আধুনিক তার থেকেও অনেক বেশি আধুনিক তোমার ভেতরটা।
ঠিক বলেছো মিলি প্রথম দিন অনিকে নিয়ে আমরা যখন তাজবেঙ্গলে ঢুকেছিলাম। সেদিন ফিরে ওর সম্বন্ধে আমরা কি আলোচনা করেছিলাম তোমার মনে আছে।
হ্যাঁ।
আজকের অনির সঙ্গে সেদিনকার অনির কিছু মিল পাচ্ছ।
একবারে না।
এই দুমাসে ওর পরিবর্তন হয়নি। ওর এই পরিবর্তনটা ভেতর ভেতর ছিলো। ও প্রকাশ করেনি। সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা করেছে।
আমার দিকে তাকিয়ে। শেষ কথাটা তোর ধারকরা। বাজারে চালু করে দিয়েছি। পাবলিক খাচ্ছেও ভালো।
তোমার কিরকম ঘ্যামাটা বেরেছে সেটা বলো। অদিতি বললো।
আমি হো হো করে হেসেফেললাম।

হাসিসনা। জিজ্ঞাসা কর নির্মাল্যকে। নির্মাল্যকে পাশে বসিয়ে অনেক ক্লায়েন্টকে তোর কথা দিয়ে পটিয়েছি। শুধু আমি নয় মিলি অদিতি টিনা কেউ বাদ নেই।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললাম।
খাবার এলো। দেবাশীষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, গন্ধে বুঝিয়েদিচ্ছে খাবারটা দারুণ।
আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম। ভাই তোমার ম্যানেজার সাহেবকে একটু ডেকে দেবে।
পাঠাচ্ছি স্যার।
ছেলেটি বেরিয়ে গেলো।
সবাই খাওয়া শুরু করলাম।
আচ্ছা অনি এখানে আসার পর থেকেই দেখছি সবাই তোকে স্যার স্যার করছে ব্যাপারটা কি বলতো।
আমায় না।
তাহলে।
নিরঞ্জনদার জন্য।
সেটা কে।
এই জেলার সভাধিপতি। বলতে পারিস মুখ্যমন্ত্রী।
দাঁড়া দাঁড়া বিষম লেগে যাবে।
টিনা হাসছে।
তুমি জিজ্ঞাসা করতে গেলে কেনো।
আচ্ছা টিনা তোমার ইনটারেস্ট নেই।
আছে। জিজ্ঞাসা করিনি। যদি ঝোলা থেকে সাপ ব্যাঙ বেরিয়ে পরে। সামলাতে পারবোনা।
সত্যি সত্যি হাসতে গিয়ে নির্মাল্য বিষম খেলো।
আমি উঠে গিয়ে ওর মাথা চাপড়াই পিঠ ডলে দিই। ওরা হাসছে।
ওরে নির্মাল্য তুই কি ভাগ্যবান তোকে অনিদা পিঠ ডলে দিলো। মিলি বললো।
নির্মাল্য হাসতে হাসতে বললো। তুই বিষম খা দেখবি অনিদা ডলে দেবে।
আবার হাসি।
নিরঞ্জনদা কে বলনা। কি করে পটালি।
বিশ্বাস কর আমি পটাই নি। নিরঞ্জনদা বড়মার ভাই।
যাঃ। খালি ঢপ।

অনিদা গুল মারছে দেবাশীষদা।
দেখছিস সবাই কি বলছে।
তাহলে সত্যি ঘটনা বলতে হয়।
আবার গল্প! মিলি বললো।
তাহলে থাক।
আচ্ছা বলো বলো। মিলি তুই মাঝখান দিয়ে টুকবিনা।
ম্যানেজার ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন।
দাদা আমার একটা উপকার করতে হবে।
বলুন স্যার।
আমরা যা খাচ্ছি। সেই মতো পাঁচটা প্লেট রেডি করে দিতে হবে পার্সেল হবে। খালি আলু পরটা একটু বেশি করে দিয়ে দেবেন। আর এক ক্রেট কোলড্রিংকস। মিশিয়ে দেবেন। সব দুলিটারের বোতল।
ঠিক আছে স্যার। আর।
বিলটা করে আনুন।
তুই দিবি না আমি দেবো। দেবাশীষ চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই জিজ্ঞাসাকর চাইলেও দিতে পারবিনা।
স্যার আপনাদের কারুর কাছ থেকেই বিল নিতে পারবোনা। নিরঞ্জনদার হুকুম।
দেবাশীষ আলুর পরটা মুখে ঢুকিয়ে হাঁকরে আছে।
আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করছি।
না স্যার আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
ভদ্রলোকের সে কি কাকুতি মিনতি। বাধ্য হয়ে বললাম ঠিক আছে আপনি যান। আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করবোনা। ভদ্রলোক আমার মুখ থেকে এই কথাটা আদায়করে বললেন।
সব প্যাকিং করে রাখছি। আপনি নিচে গেলে গাড়িতে তুলে দেবো।
আচ্ছা।
স্যার চা না কফি।
দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে।
কফি।
কফি পাঠিয়ে দিন।
আচ্ছা স্যার।
ভদ্রলোক বেরিয়ে যেতেই অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো, সব ফোঁকটসে।
থাম তুই, শুনতে পাবে। মিলি বললো।
অনিদা সত্যি গুরু তুমি। দেবাশীষ তাজবেঙ্গলে প্রতিদিন লাঞ্চকরতে ঢোকে একদিনও ফোঁকটে খেতে পায়না। আর তুমি....।
দাঁড়াও এবার নিরঞ্জনদার কেশটা শুনতেই হবে। বল বল দেরি করিসনা, খাওয়া শেষ হয়ে এলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
ওঃ স্যাট। দেবাশীষ বলে উঠলো।
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বার করলাম।



দেখলাম মিত্রা। দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে বললাম, মিত্রার ফোন।
দে দে আমাকে দে।
আমি ভয়েজ অন করে দেবাশীষের হাতে দিলাম।
কিরে ধাবায় বসে মুরগীর ঠ্যাং চিবোচ্ছিস।
বেশ করছি। তোর কি।
দাঁড়া আয় দেখাচ্ছি মজা।
বলতো আমি কে।
দেবা ছাগল।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম।
তুই এখনো আমাকে এই ভাবে বলবি।
আমার জন্য নিয়ে আসবি।
তোর জন্য পার্সেল হচ্ছে।
এইতো ভালো ছেলের মতো কথা। বুবুন কইরে।
আমার অপরজিটে বসে ঠ্যাংঙে কামর দিয়েছে।
মিত্রা মুখ দিয়ে জিভে জল পড়ার আওয়াজ করলো।
কি হলোরে।
জিভ দিয়ে জল পরে গেলো।
লোভ দিসনা। পেট খারাপ করবে।
কোল ড্রিংকস নিয়ে আসবি।
আসবো।
বুবুনকে দে।
তোর কথা শুনতে পাচ্ছে।
বল।
কখন আসবি।
আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে।
কাউকে পাঠাবো।
রবীনকে একবার পাঠা।
কেনো।
এতোক্ষণ দেবা গাড়ি চালালো এবার পালা করে নির্মাল্য অদিতি মিলি টিনা চালাবে। কিন্তু ওইটুকু রাস্তার জন্য রবীন।
ঠিক আছে পাঠাচ্ছি।
তোরা যখন আসবি তখন আমরা হাটে থাকবো।
সব কাজ ঠিক ঠাক মিটলো।
হ্যাঁ। তোর জিলিপি আমি খেয়ে নিয়েছি।
বেশ করেছিস।
রাগ করলি।
একটুও না।
বিকেলে তোকে হাট থেকে কিনে খাওয়াবো।
আচ্ছা।
তাড়াতাড়ি আয়না।
যাচ্ছি।
আচ্ছা।
আমি ফোন বন্ধ করে পকেটে রাখলাম।
অনি ওর প্রবলেমগুলো এখনো সারেনি!
সবাই দেবাশীষের দিকে তাকালো। বুঝলাম দেবাশীষ ওদের কিছু বলেনি। ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, উত্তরের অপেক্ষায়। কি বলবো এদের সামনে। মিথ্যে বললেও আজ নয় কাল ওরা জানতে পারবে।
না। সারতে সময় লাগবে।
ডাক্তারদাদা।
ওখানেই আছে।
তোর বাড়িতে!
হ্যাঁ।
সত্যি ট্রিপটা দারুণ হবে।
কিগো দেবাদা মিত্রাদির কি হয়েছে। টিনা বললো।
গলা শুনে কিছু বুঝলেনা।
না।
পরে বলবো।
দেবা এমন করে বললো। সবাই চুপ করে গেলো।
আমি নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছি।
নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শেষ কর।
হাসলাম। এখনো দু’আড়াইঘন্টা যেতে হবে।
ঠিক আছে তুই বল।
মলের কেশটা যেদিন ঘটালাম।
হ্যাঁ। ওটাতো কাগজে সিরিয়াল করলি। দারুন লিখেছিস।
এরপর কত জল যে গঙ্গা দিয়ে সমুদ্রে চলেগেলো তার ইয়ত্তানেই। এখনো তার রেশ কাটেনি লড়ে চলেছি।
দামিনী মাসি তার জন্য।
এইতো তার মাথা কাজ করতে শুরু করেদিয়েছে।
তোর পাশে আছিনা।
হাসলাম।
সেদিন সকাল থেকে যা যা ঘটেছিল সব বললাম। আমার কথা শুনে ওদের চোখ চড়কগাছ।
কি বলছিস তুই।
হ্যাঁ। ঠিক বলছি।
কোথাকার জল কোথায় এসে গড়িয়েছে। তুই চম্পকটাকে দূর কর।
ঠিক সময়ে করবো। তোদের নিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় পাবো। বসে আলোচনা করবো। আশা রাখি তোরা আমাকে হেল্প করবি।
করবো মানে! তোর বিশ্বাস নেই।
তোরা প্রত্যেকে প্রফেসনাল। আমি জীবিকাকে আগে প্রধান্য দিই।
গুলি মার। যা কামিয়েছি। এখন কিছু না করলেও সারাজীবন নুনভাত জুটবে।
এটা তোর ইমোশনের কথা।
সময় আসুক প্রমাণ করে দেবো।
টিনা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিলি ন্যাপকিনে হাতটা মুছে নির্মাল্যকে বললো তুই এদিকে আয় আমি এতক্ষণ শুনলাম এবার অনিদার সঙ্গে একটু ঝগড়া করি।
দেবা হাতাহাতি হলে বাঁচাস।
ওরা হো হো করে হেসে ফেললো।
এবার আমার পাশে এসে বসতে পারো মিলি।
তুমিতো প্রথমেই পেরেক ঠুকে দিলে।
তুই অনির সঙ্গে পারবি কেনো ঠোকা ঠুকি করছিস।
দাঁড়াও ওখানে গিয়ে আগে দল ভাড়ি করি, তারপর।
আবার হাসি।

কফি এলো। খেয়দেয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম। নিচে আসতেই ম্যানেজার ভদ্রলোক সব গাড়ির পেছনে উঠিয়ে দিলেন।
নষ্ট হয়ে যাবেনাতো ?
স্যার আমি এমন ভাবে প্যাক করে দিয়েছি রাত দশটা পর্যন্ত গরম থাকবে।
আমি ম্যানেজার ভদ্রলোকের সঙ্গে হাত মেলালাম। রবিবার ফিরছি।
আচ্ছা স্যার। আমাকে যদি একটু আগে ফোন করে দেন।
আপনার কোনো কার্ড।
উনি ছুটে গিয়ে কার্ড নিয়ে এলেন। আমরাও সবাই ওনাকে কার্ড দিলাম।
স্যার আপনাদের কাছ থেকে কোনোদিন পয়সা নেওয়া যাবেনা।
কেনো!।
আমার দোকানটা ওনার কোম্পানী সাজিয়ে দিয়েছে। দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি দেবাশীষের দিকে তাকালাম।
দেবাশীষ হাসছে। তোর কাছ থেকে শিখছি।
ম্যানেজার ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললো।
আপনার এই স্পটে যদি আরো বিজ্ঞাপন করা যায় আপনার আপত্তি আছে।
একেবারে না স্যার।

সব কটা কার্ড ভালো করে দেখুন।
আমার দেখা হয়েগেছে স্যার।
আসার দিন জমিয়ে গল্প হবে।
আচ্ছা স্যার।
নির্মাল্য এইবার ড্রাইভিং সিটে বসলো। আমি বললাম এবার আমি সামনের সিটে বসি, দেবা তুই পেছনে বোস।
কেনো।
এইবার তোদের পথ দেখাতে দেখাতে নিয়ে যেতে হবে।
দারুণ হবে। তুমি পেছনে এসো। অদিতি বললো।
দেবা পেছনে এসে অদিতির পাশে বসলো। গাড়ি চলছে। টুক টাক কথা চলছে। কলেজ লাইফের কিছু কথা। ওরা গান করলো। আমি শুনলাম।
অনি।
কি।
তোর কলেজে লাস্ট ফেস্টের কথা মনে আছে।
আছে।
অনেকদিন তোদের ডুয়েটে শ্রুতি নাটক শুনিনি।
মনে করাসনা, বিপদ আছে।
সত্যিতো দেবাদা একেবারে মনে ছিলোনা। টিনা বললো।
মিলি তুমি ওদের ডুয়েট কোনোদিন দেখেছো।
না।
ওরা দু’জনে কতো প্রাইজ নিয়ে এসেছে কলেজের জন্য জানো।
কলেজ লেভেল কমপিটিসনে।
ইয়েস।
আমরা ওদের ডুয়েটে শ্রুতিনাটক শুনতে যেতাম। কলেজ থেকে আমাদের ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও অন্য ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা যেতে। আমরা হাততালি দেওয়া শুরু করলেই হল ফেটে পরতে হাততালিতে। সেই সব দিন আর ফিরে আসবেনা।
আসবেরে দেবাশীষ। আসবে। চেষ্টা করলে অতোটা হয়তো আসবেনা। তবে কিছুটা অবশ্যই আসবে।
এবার শোনাতে হবে। টিনা বললো।
সময়ের দরকার বুঝলে টিনা। আর মুড। এটা না থাকলে চেষ্টা করলেও হবেনা।
ওসব জানিনা শোনাতে হবে।
দেখি। নির্মাল্য সামনের যে মোড়টা আসছে ওখান থেকে বাঁদিকে ঘুরবি।
আচ্ছা।
গাড়ি চলছে। আমরা চুপচাপ।
এই মোরটা অনিদা ?
হ্যাঁ।
দেবা।
বল।
এই বাঁদিকে যে নার্সিংহোমটা দেখছিস....।
হ্যাঁ।
ওটা কালকে ট্রান্সফার করলাম।
আরি বাবা এতো বিশাল ক্যামপাসরে।
হ্যাঁ। সব মিত্রার পয়সা।
বলিসকি।
ঈশ্বর ওকে সব দিক থেকে মেরেছে। খালি কিছু পয়সা ছিলো বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেলো।
সত্যি, যা বলেছিস।
ওরা জানলা দিয়ে সবাই মুখ বার করে দেখলো।
নির্মাল্য।
দাদা।
এখানের রাস্তাটা ভালোনয় একটু আস্তে চালাস।
আচ্ছা।
আর একটা কথা বলি মোন দিয়ে শোন।
বলো।
এখানে মানুষকে ধাক্কাদিলে তোর ফাইন হবে না। কিন্তু ছাগল বা মুরগিকে মারলে তোর জেল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ছাড়তো তোর গুল।
এক বর্ণও মিথ্যে কথা বলছিনা। যেতে যেতে দেখবি। ছাগল গুলো রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। হর্ণ মারলে সরে না। তোকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হ্যাট হ্যাট করলে তারপর সরবে। সাবধান।
টিনা আমাকে ঠেলা মারলো। দাঁড়াও মিত্রাদিকে গিয়ে বলবো।
মিত্রাদি ফেঁসেছিলো, তাই নির্মাল্যকে সাবধান করলাম।

অনি।
বল।
যেতে যেতে তোর সেই পীরসাহেবের থান শ্মশানটা দেখা যাবে।
দেখা যাবে।
রাতে যাওয়া যাবে।
তুই গেলে আমার নিয়ে যেতে আপত্তি নেই।
না তোমাকে যেতে হবেনা। অদিতি বললো।
দেখ তোর বউ তোকে আগলাতে শুরু করে দিয়েছে।
অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলেদিচ্ছি।
টিনা কিছু বলবে।
না অনিদা ওর জিনিষ আমি বলতে গিয়ে খারাপ হবো কেনো।
দাঁড়া মুখপুরি তোর হচ্ছে।
দেখলে অনিদা তুমি বেমক্কা আমাকে গালাগাল খাওয়ালে।
মিলি চুপচাপ কেনো বলোতে।
মাপছে। মাপা শেষ হলে ডায়লগ ঝারবে।
আবার আমাকে চাটতে শুরু করলি। বেশতো অদিতি চলছিলো।
নির্মাল্য হর্ণ মার।
সামনে একটা ছাগলের বাচ্চা দাঁড়িয়ে সত্যি সত্যি সে সরলোনা। নির্মাল্য গাড়ি থামাতে বাধ্য হলো। আমি নেমে গিয়ে তাকে কোলে তুললাম। চেঁ চেঁ করছে। অদিতির কাছে নিয়ে এসে বললাম একবার হাত দাও দেখতে পাবে। অদিতি হাত দিতেই বাচ্চাটা ছটফট করে উঠলো।
দাঁড়াও দাঁড়াও টিনা মোবাইলটা বার করে একটা ছবি নিলো।
কিরে শেষপর্যন্ত ছাগলের সঙ্গে অনিদা। মিলি বললো।
আমি হাসছি।
গাড়ি চলতে শুরু করলো।
মিলি।
উঁ।
কালকে ফ্রন্ট পেজে যদি আমার এই ছবিটা ছাপা হয় আর.......।
সরি সরি আর বলবোনা।
কেনো তুই খাপ খুলতে গেলি। অদিতি বললো।
দূরছাই অতো কি মনে থাকে।
আবার হাসির রোল।
আমরা চকে এসে দাঁড়ালাম।
গাড়িটা নির্মাল্যকে সাইড করতে বললাম।
কিরে চা খাবি।
এই তোর পরিদার দোকান।
হ্যাঁ। আমাদের বসন্ত কেবিন।
চারিদিক নিস্তব্ধ। ঝিঁঝিঁ পোকার মৃদু ডাক। পাখির কুহুতান। দুপুর বেলা লোকজন বিশেষ একটা থাকেনা। দু’একজন দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য। আমাকে নামতে দেখে রবিন পরিদার দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। ওরা সবাই গাড়ি থেকে নামলো। দেবাশীষ চারিদিক দেখে বললো।
অদিতি কি নির্জন বলোতো। তুমি কোনো আওয়াজ পাচ্ছ।
সত্যি ফ্রেস এয়ার। পলিউসন ফ্রি।
কি বাবা রবিন। পরিদা আছে।
তোমার জন্য বাড়ি থেকে এসেছে। তুমি আসবে শুনেছে।
তাই নাকি।
আমি সবাইকে নিয়ে পরিদার দোকানে ঢুকলাম।
কিরে তুই একা।
হ্যাঁ। চিকনাদা ছেড়ে দিয়ে পালালো। ওখানে অনেক কাজ।
পরিদা।
আয় বাবা আয়। তোর জন্য দুপুরে ঘুমোলামনা।
ছেলে কোথায়।
সেইতো ছিল। বললোগিয়ে তুই আসবি চলে এলাম।
বুঝলে পরিদা অনাদিরা যেমন আমার এখানকার বন্ধু। এরা আমার সব কলেজের বন্ধু।
আমি একে একে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। ওরা পরিদাকে হাঁ করে দেখছে। পরিদার সাজ পোষাক দেখে ওরা সক্ড। একটা আট হাতি ধুতি সেন্ডো গেঞ্জি কাঁধে গামছা। গোবেচারা গোবেচারা চেহারা। সেই বাচ্চা মেয়েটাকে দেখলাম। পরিদা ডেকে উঠলো ও বোকনা।
টিনা আমার দিকে তাকাচ্ছে। মিলি মুখে রুমাল চাপা দিয়েছে। অদিতি অবাক। আমি ইশারায় বললাম এর ইতিহাস পরে বলবো।
টিনা চোখ দিয়ে বোঝাতে চাইলো আবার গল্প।
আমি মুখ টিপে হাসছি।
পরিদা কিছু খাওয়াও।
কি খাবি বল।
কি আছে।
রসোগোল্লা আর ছানার জিলিপি।
দাও।
পরিদা দিলো। সেই বাচ্চা মেয়াটা প্লেটে করে এগিয়ে দিলো।
মিলি দেখ কি মিষ্টি মেয়েটা।
মিলি মেয়েটাকে ডাকলো। এই শোনো।
মেয়েটা কিছুতেই আসবেনা।
যা না যা। দিদিমনি ডাকতিছন।
মিলি আমার দিকে তাকালো।
স্টক করো পরে উত্তরদেবো।
মেয়েটি কাছে এলো। মিলি ওকে একটা মিষ্টি নিতে বললো।
না নিবনি। দাদু বোকবন।
মিলি আমার দিকে তাকায়। আমি উত্তরদিলাম।
তোমার নাম।
আমায় সকলে কচি বলে ডাকে। দাদু খালি বোকনা কয়।
মিলির চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে। টিনা আমাকে টপকে মেয়েটির পাশে গিয়ে উবু হয়ে বসলো। দুজনে লেগে পরেছে বাচ্চাটার পেছনে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দেখছি।
বুঝলি অনি। সকালে মাসির মিষ্টি খেলাম। আর এই ছানার জিলিপি খেলেম। আকাশ পাতাল তফাৎ।
কোনটা বেটার।

জৌলুসের দিক থেকে মাসির মিষ্টি সেরা। কিন্তু টেস্টে পরিদা।
পরিদার নিজের হাতে তৈরি।
সত্যি।
হ্যাঁ। বাড়ির গরুর দুধ থেকে ছানা তৈরি করে করা। তুই চাইলে আর পাবিনা শেষ।
না বাবু আজ গরুটা দুধ কম দিছে, তাই বনাইতে পারিনিগো।
দেবা আমার দিকে তাকালো।
বস আমরা লাকি চ্যাপ।
আরো বাকি আছে। এরি মধ্যে কমেন্ট পাশ করিসনা।
পরিদা চা দিলো। চায়ে চুমুক দিয়ে টিনা আমার দিকে তাকালো। দেবাশীষ হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো এক্সিলেন্ট। সবেতেই একটা গ্রাম গ্রাম গন্ধ।
ফোনটা বেজে উঠলো।
দেখো মিত্রাদি।
ফোনটা পকেট থেকে বারকরলাম। সত্যি তাই।
বল।
পরিদার দোকান থেকে রসোগোল্লা নিয়ে আসবি।
সব শেষ।
কি হাগুড়ে তোরা।
আমি না, দেবাশীষ আর নির্মাল্য।
তুই খালি আমাকে পেটুক বলিস। অভিমানের সুর।
এবার থেকে বলবোনা।
মনে থাকে যেনো।
তোর কথা সবাই শুনছে।
শুনুক। আমি এখন হাটে ঢুকছি।
কারা কারা আছে।
সবাই। বিজয়ের ট্রলি নিয়ে এসেছি।
একটু অপেক্ষা কর পৌঁছে যাবো।
তাড়াতাড়ি আয়না।
আরি বাবা এসেগেছিতো।
আয়।
দেবাশীষ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
তুই কি করে ট্যাকেল করছিস বলতো।
করতে হচ্ছে কি করবো বল।
হ্যাটস অফ তোকে। তোর ধৈর্যকে।
টিনা মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
জানিস দেবা যতো জারি জুরি আমার কাছে। আমাকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে চায়না। ইন-সিকিওর ফিল করে।
ওর কথাবার্তায় বুঝতে পারছি।
খুব সেন্টিমেন্টাল। বুঝে শুনে কথা বলতে হয়। এমনি খুব নর্ম্যাল তুই বুঝতে পারবিনা। হঠাৎ হঠাৎ কেমন যেন হয়ে যায়।
সাইকিয়াটিক কোনো ব্যাপার।
না। পুরোটাই নার্ভাস সিসটেম। ডাক্তারদাদার কথায়। আমি ওকে তোলা কাপর হিসাবে ব্যবহার করি।
স্ট্রেঞ্জ।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
চল এবার ওঠা যাক।
চল।
নির্মাল্য।
দাদা।
এটুকু রাস্তা রবিন চালাক।
ঠিক আছে।
তুই রাস্তাটা একবার দেখেনে।
নির্মাল্য ঘার দোলালো।
ফেরার পথে চালাতে হবে। আমার পাশে বোস।
চলো।
আমরা সবাই উঠে বসলাম। পরিদার পয়সা মেটালো টিনা। আমি হাস্তে হাস্তে বললাম, ব্যাগ ভর্তি পয়সা থাকলেও খরচ করার জায়গা নেই, এটা মনে রাখবে।
টিনা হাসছে।
রবিনকে বললাম ক্যালভার্টের সামনে গিয়ে একটু দাঁড় করাস।
আচ্ছা দাদা।
ওরা রাস্তা দেখতে দেখতে আসছে। মাঠে এখন ধান কাটা চলছে। কোনো কোনো খেতে সোনালি ধান এখনো মাথা উঁচু করে রয়েছে। টিনা মিলি অদিতির হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে চলেছি। রবিন গাড়ি চালাতে চালাতে হাসছে। আমরা এসে সেই ক্যালভার্টের সামনে দাঁড়ালাম। সবাই নামলো। বিকেলের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে। মিষ্টি সূর্যের আলোর ওম নিতে নিতে দেবাশীষ চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। যতদূর চোখ যায়।
হাউ বিউটিফুল। মিলি বলে উঠলো।
অনি আমি ভীষণ একসাইটেড হয়ে পরছি। তুই মনে কিছু করিসনা।
তোদের নিয়ে আসা আমার সার্থক।

আমার এই ছোট্ট কথায় ওরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। একে একে ওদের পীরবাবার থান, শ্মশান, বুড়োশিবের মন্দির, আমার স্কুল, সব দেখালাম। দূর থেকে যতটুকু দেখা যায়। ছেঁড়া ছেঁড়া গল্পগুলো বললাম।
জানো অনিদা তোমার এই গ্রামটা দেখে অপুর কথা মনে পরে যাচ্ছে।
দারুন কথা বললেতো টিনা। দেবা বললো।
সেই যতোদূর চোখ যায় চোখ ভরে খালি দেখো। অজানাকে জানা অচেনাকে চেনা। ক্লাস টেনে অচেনার আনন্দ পিসটার কথা মনে পরে যাচ্ছে। তাই না।
হ্যাঁগো দেবাদা। এতো সবুজ আগে কখনো দেখিনি।
চল। আজ সব দেখে ফেললে চারদিন বোর লাগবে।
মিলি চুপচাপ। দু’চোখ ভরে গিলছে। মুখে কোনো শব্দ নেই।
আমরা সবাই আবার গাড়িতে বসলাম। মিনিট কুড়ির মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম। গাড়ি বাসুর দোকানের সামনে আসতেই গ্রামের বাচ্চাগুলো হৈ হৈ করে ঘিড়ে ধরলো। ওরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। চিকনা বাসুর দোকানের বারান্দায় বসেছিলো গাড়িটা থামতেই পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো। চিকনার পেছন পেছন বাসুও ওর দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। আমি গাড়ি থেকে নামতেই চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার মুখে গায়ে হাত বোলাচ্ছে।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি।
তোর কিছু হয়নি। ওর চোখ মুখের চেহারা বদলে যাচ্ছে।
আবার এই সময়, তোকে কতবার বুঝিয়েছি। বাসু খেঁকিয়ে উঠলো।
শুয়োরের বাচ্চাটাকে যদি হাতের কাছে পেতাম মুরগী কাটার মতো কেটে ফেলতাম।
ওঃ তোকে বলেছিনা।
থাম তুই। আমার গুরুর গায়ে হাত পরলে এসপার ওসপার হয়ে যাবে তুই অনাদি আমাকে আটকাতে পারবিনা।
দেবাশীষরা থতমতো খেয়ে গেছে। ওরা সব ভাসা ভাসা জানে। অনাদি ছুটে এলো।
আবার পাগলামো শুরু করেছে চিকনা। সরি আপনারা কিছু মনে করবেন না।
আমি চিকনাকে জড়িয়ে ধরলাম। বাচ্চাদের মতো ভেউ ভেউ করে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠলো। দেবাশীষ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পাংশু হয়ে গেছে মুখটা।
এইতো আমি, তুই কাঁদছিস কেনো, আমি ঠিক আছি, দেখ। গলাটা ধরে এলো।
কাঁদতে কাঁদতে বললো, শালা কুত্তার বাচ্চাটাকে আমাকে একবার দেখিয়ে দে।
ঠিক আছে তুই শান্ত হ। এইতো আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দেখ আমার কিছু হয়নি। আমি ওর মাথায় পিঠে হাত বোলালাম কিছুক্ষণ। চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
দূর থেক দেখলাম মিত্রা ছুটে আসছে। কাছে এসেই বললো চিকনা এবার আমি একটু ধরি। চিকনা চোখ মুছতে মুছতে ফিক করে হেসেফেললো। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। চিকনা আমাকে ছাড়লো।
তুই ঠিক আছিস।
কেনো বেঠিক থাকবো।
বাবাঃ যা গেলো।
অনাদি চিকনাকে বাসুর দোকানে ধরে নিয়ে গিয়ে বসালো। একবারে এখান থেকে কোথাও যাবিনা।
মিত্রাকে দেখে ওরা আশ্বস্ত হলো। টিনা মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিলি মিত্রার গালে গাল ঘোসে দিলো। দেখলাম নীপা ছুটতে ছুটতে আসছে। অনিদা তুমি ঠিক আছোতো। নীচু হয়ে পায়ে হাতদিলো।
আমি হাসছি।
দেবাশীষ বুঝতে পেরেছে কিছু একটা বড়ো ঘটনা ওখানে ঘটেছে।
হঠাৎ মিত্রার গলা পেলাম। ওকে বলিসনিতো। ভালো করেছিস। তোদের সব কটাকে বাঁশঝাড়ে লাইন করে বসিয়ে দিতো।
আমি ওদের দিতে তাকালাম। টিনা ফিক করে হেসে ফেললো। তুমি থামো, অনিদা.....।
তুই জানিসনা ও কিরকম। তুই কষ্টপাবি ও ......।
মিলি মিত্রার মুখটা চেপে ধরলো।
আয় আমার সঙ্গে আয়। দেবা চল হাতমুখটা একটু ধুয়ে নে। নির্মাল্য আয়।
ওরা মিত্রার পেছন পেছেন চলেগেলো।
আমি দেখলাম মিত্রা গট গট করে ওদের নিয়ে হাটের ভিড়ে মিসে গেলো।
অনাদি আমার পেশ দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে। আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে হেসেফেললাম
কি দেখছিস।
তোর খোমাখানা।
কেনো।
কতোটা পরিবর্তন হলো।
হাসছি। জিনিসগুলো বার করে বাসুর দোকানে রাখ।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা। সব নিজের ঘারে নিয়ে মুখটার অবস্থা কি করেছিস দেখতে পাচ্ছিস।
আমি মাথা নীচু করলাম।
ইসলামভাই কোথায় ?
উঁ হুঁ ইসলামভাই নয়, মুন্না ভাই।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
বাসু দাঁড়িয় দাঁড়িয়ে হাসছে।
হাসছিস কেনো।
তোকে দেখে। চল।
এই ভড়া হাটে তোর দোকানে ভিড় করা যাবেনা।
বক্তব্য ঝাড়িসনা।
গাড়ির চারপাশে তখনো বাচ্চাদের ভিড় থিক থিক করছে। রবিন গাড়ির কাঁচ তুলে দিলো। আমি অনাদির সঙ্গে বাসুর দোকানে এলাম।
বড়মা এসেছে।
পুরো ব্যাটেলিয়ান।
ওরা কোথায়।
যে যার ইচ্ছে মতো হাটে ঘুরছে। স্যারও এসেছেন।
তাই নাকি!
হ্যাঁ। দাদা নিয়ে এলেন।
ঘরে কে আছে।
সুরমাসি। কাকীমা।
চিকনা গেলো কোথায় ?
আছে এদিকে কোথাও।

আমরা ঢুকতেই বাসু ওর কাজের ছেলেটাকে বললো দরজাটা হাফ ভেজিয়ে দে। সকাল থেকে অনেক বিক্রী করেছিস।
ছেলেটি হাসতে হাসতে উঠে গেলো। আমি টুলে বসলাম।
এরা মনে হয় তোর বাড়িতে গেলো।
হবে হয়তো। ম্যাডামকে এখন সবাই চিনে গেছে অসুবিধে নেই। চা খাবি।
খাওয়া। অনাদি গেলো কোথায় ?
তুই ব্যস্ত হচ্ছিস কেনো।
বাসু ওর ছেলেটিকে বললো যা একটু চা বলে আয়।
এদিকের খবর বল।
এদিকের খবর আর কি আছে, সব তোর খবর।
হাসলাম।
হাসিসনা। তোকে মাঝে মাঝে মনে হয় মেরে পাট করে দিই।
দে।
সে আর পারছি কোথায়।
বাইরে চোখ পরলো দেখলাম বড়মা ছোটমা ইসলামভাই ঢুকছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাসু আমার আগেই বাইরে বেরিয়ে গেলো। ওরা ঘরে ঢুকলো। আমি এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখের কোলে জল টল টল করছে। আমার মুখে হাত বোলাচ্ছে। আমি জড়িয়ে ধরলাম।
কি হয়েছে, বলবেতো।
বড়মা কোনো কথা বলতে পারছেনা। যন্ত্রণায় মুখটা পাংশু।
ছোটমার দিকে তাকালাম। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইসলামভাই-এর চোখও ছলছলে।
বাসু চেয়ার এগিয়ে দিলো।
বড়মা আমার বুকে মুখ লুকিয়েছে। আমি বড়মার মুখটা তুলে বললাম, আমার কিছু হয়নি।
তোর মুখটা দেখেছিস। গলাটা ধরে এলো।
ঠিক আছে বোসো।
হৈ হৈ করে দেবারা এসে বাসুর দোকানে ঢুকলো। ঘর ভরে গেলো। পেছন পেছন চিকনা। হাতে পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ।
ওমা বড়মা তুমি এখানে। টিনা চোখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
ঝপা ঝপ সবাই বড়মার পায়ে লুটিয়ে পরলো।
কিগো চোখ ছল ছল কেনো! অনিদার কিছু হয়নি। চোখ মোছো। টিনা বড়মার কাপরের খোঁট দিয়ে চোখ মোছালো।
ইসলামভাইকে ওরা দেখেনি। একটু ইতস্ততঃ করছিলো।
মিত্রা পরিচয় করিয়ে দিলো। দেবা জড়িয়ে ধরলো ইসলামভাইকে।
জানো দাদা তোমার কতো গল্প শুনেছি ওর মুখে। আমার বন্ধুটা ভীষণ স্বার্থপর। একটু একটু করে ছারে। কিছুতেই পুরোটা দেবেনা।
তবু তোমাদের কিছু দেয়, আমাকে কিছুই দেয়না।
আমি মাথা নীচু করে হাসছি।
কিরে মাসিকে ফোন করেছিস। মিত্রা বললো।
সময় পেলাম কোথায়।
আমি জানিয়ে দিয়েছি। ইসলামভাই বললো।
অনিদা তোমার সঙ্গে ঝগড়া করবো। অদিতি বললো।
কেনো।
নীপা এই সব জানলো কি করে।
নীপা ঘরের এককোনে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে।
ওকে জিজ্ঞাসা করো। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks