দেখি নাই ফিরে - (Part-53)

বড়মার গালটা নেড়ে মিলি বললো। বড়মা তুমি বলো এটা ঠিক।
ছোটমা মুখে কাপর চাপা দিয়েছে।
কি বলবিতো।
ওই সব কথা।
ওতো মিত্রা গল্প করেছে সবার কাছে।
কিগো বড়মা! ছেলেকে বাঁচাতে.....।
মিত্রা এমন চোখ বড়ো বড়ো করে বললো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
মার ধরে ওকে। শয়তানি। আসা মাত্রই হাত করে নিয়েছে।
সবাই হাসছে। দূরে দাঁড়িয়ে দেবাশীষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে ব্যাপারটা।
চিকনা।
ম্যাডাম।
তুমি তোমার গুরুর জন্য খালি নিয়ে এসেছো।
নীপা পয়সা দেয়নি।
সবাই নীপার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ফেললো।
বাসুর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো। ছাগল।
তুই ছাগল বললি। কতোবার চাইলাম। বলেকিনা বাজে খরচ হবেনা।
চিকনাদা। নীপা ধমকে উঠলো।
দেখেছিস। তুই যেমন কিপ্টা। তোর ক্যাশিয়ারও কিপ্টা। হাত থেকে জল গলবেনা।
মিত্রাদি।
থাম তুই।
এই ঘরের কেউ আর গম্ভীর নেই।
আমি বাসুকে আস্তে করে বললাম দরজাটা বন্ধ করেদে। তোর খরিদ্দাররা শুনলে কি বলবে।
তোমায় ফিস ফিস করে কি বলছেগো বাসু। মিত্রা ধমকে উঠলো।
কিছুনা।
জানো বড়মা ওদের গাড়ি থেকে নামতে দেয়নি। সেই আমাদের কেশ।
মিত্রাদি চুপ চুপ। টিনা বললো।
তোর সব গুণের কথা বলবো এদের, তুই এতদিন ওদের বলেছিস।
তাই নাকি। মিলি কাছে এগিয়ে এলো। কাঁধ নাচিয়ে ভুরু কাঁপিয়ে বললো, কিগো অনিদা, বলেছিলাম না, দলটা আগে ভারি করি, সব উসুল করে নেবো।
আমার মুরগীর ঠ্যাং কোথায় বল। মিত্রা কোমরে কাপর জড়িয়ে তেরে এলো।
দেবা আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচা।
দেবা এলে দেবাকে উড়িয়ে দেবো ও ছাগলটা কি করবে।
মিত্রাদি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো।
চুপ কর। তুই এখন আমাদের দলে।
দেবা হাসতে হাসতে বললো। মিত্রা গাড়ির পেছনে আছে।
নিয়ে আয়।
চিকনা। যাতো একটু। আমি বললাম।
চিকনা বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর তিনজনে একসঙ্গে ঢুকলো দেখলাম পাঁচু পচা এসেছে।
ইসলামভাই নিজের জিনিস চিন্তে পেরেছে।
এটা আমার।
হ্যাঁ তোমার। তোমার সঙ্গে অনেক হিসেব আছে।
সে তুই করিস। তবে লাভ নেই। গেম তোর হাতের বাইরে।
ওঃ কি ভারিগো ইসলামভাই। চিকনা বললো।
আমি হাসছি।
ওদিকে মারা মারি লেগে গেছে। অনাদি ওই ভিড়ে হারিয়ে গেছে।
ও অনি আমাকে বাঁচা, এরা আমাকে শুদ্ধু খেয়ে ফেলবে।
কি এনেছিস। বড়মা বললো।
মিষ্টির পেটি আর আলু পরটা।
মিত্রা ছুটে এলো। হাঁ করো। হাঁ করো।
কি বলবিতো। বড়মা বললো।
উঃ হাঁ করোনা।
বড়মা হাঁ করলো। মিত্রা নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ বড়মার মুখে গুঁজে দিলো। তারপর ছোটমা তারপর ইসলামভাই শেষে নিজের মুখে কিছুটা ঢুকিয়ে বললো, কেমন বলো।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কোথা থেকে আনলি।
ও আনবে কিগো। সকালবেলা মাসিকে ফোন করেছিলাম। মাসি পাঠিয়েছে।
দামিনী সকালে এসেছিলো!
আমি মাথা দোলালাম।
ওকে দিলি না।
সকাল থেকে অনেক খেয়েছে। এবার আমরা খাবো।
দেখলাম কাকা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা ডাক্তারদাদা দাদা একসঙ্গে বাসুর দোকানে ঢুকলো।
আরি বাবা, ডাক্তার দেখো এখানে হাট বসে গেছে।
আমি উঠে গিয়ে সকলকে প্রণাম করলাম।
কিরে কাগজের খবর কি।
দেখছো, দেখছো, মরন। ছেলেটা এখনো বাড়ির চৌকাঠে পা দেয়নি ওর কাগজের খবর জানতে হবে। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
ইসলামভাই শেরওয়ানীর ওর্নাটা মুখে চাপা দিয়েছে।
তুমি কাগজ পরোনি।
পরেছি। বেশ করেছে সন্দীপ। কখন এলি।
এইতো আধঘন্টা।
ঘরে আর বসার জায়গা নেই। বাসু পাশের দোকান থেকে চেয়ার নিয়ে এলো। ওরা সবাই বসলো।
বুঝলে বড়ো, ডাক্তার হাট শুদ্ধু কিনে নিলে।
বেশ করেছে। খেতেপায়না ওখানে, কি করবে।
এটা ঠিক কথানয় বান্ধবী।
আমি হাসছি। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। গম্ভীর থাকার চেষ্টা করছে। মিত্রা মিষ্টি এনে সকলের হাতে দিলো।
এটা কিরে মামনি। ডাক্তারদাদা বললো।
খাওনা। মাসি পাঠিয়েছে।
ডাক্তারদাদা মুখে তুলেই বললো এ নিশ্চই উত্তর কোলকাতার। না হলে এরকম স্বাদ আসবেই না।
যত্তো সব। বড়মা বললো।
যাই বলো বান্ধবী কাঁচা সন্দেশটা নলেন গুড়ে বেশ ভালো পাক দিয়েছে।
খাওতো ডাক্তার, আর বক বক করোনা। কাল থেকে খালি খাই খাই।
তুমি খাওনি। আমি যা যা বলে কয়ে সুরকে দিয়ে রাঁধিয়েছি তুমিও খেয়েছো। তখনতো না বলোনি।
এইবার পেঁচে পরেছে। দাদা বললো।
শুঁরির স্বাক্ষী মাতাল। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
আমি আর থাকতে না পেরে হো হো করে হেসে ফেললাম।
আমার হাসির আওয়াজে মিত্রারা ফিরে তাকালো।
কি হলোরে।
তরজা গান শুনছি।
দেখো বান্ধবী, ওরাও খাচ্ছে। এরজন্যই বেঁচে থাকা। নার্ভগুলোকে খাবার দিতে হবেতো।
এই ডাক্তারী শুরু করলে।
মল্লিকদা ছোটমা মাথা নীচু করে মিটি মিটি হাসছে।
মামনি।
মিত্রা ফিরে তাকালো।
আর কিছু দিবিনা।
আলুপরটা মুরগীর ঠ্যাং, খাবে।
নিয়ে আয় নিয়ে আয়। বিকেলের টিফিটনটা সেরে নিই। ভালোই হবে।
দাদা।

হলে খারাপ হয়না।
সব এক গোয়ালের গরু।
কিগো এডিটর বান্ধবী শেষপর্যন্ত গরু বানিয়েদিলে।
কাকা এককোনে চুপচাপ বসে সব দেখছে। মিটি মিটি হাসছে। ওরা এরি মধ্যে সব জোগাড় করে নিয়েছে। প্লেটে প্লেটে সবাইকে দিলো। টিনা মিলি অদিতি এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। ওমা এরাও এসেছে দেখছি। ডাক্তারদাদা হাসতে হাসতে বললো। টিনারাও মিটি মিটি হাসছে। বড়মাকে এনে দিলো। বড়মা নিলো। ছোটমাও খাচ্ছে। ডাক্তার আবার বড়মার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
এডিটর।
বলো।
আমরা তাহলে সকলেই গরু।
এতো তুমি অনির মতো কথা বলছো।
কেনো।
ভীষণ চালাক। সুযোগের অপেক্ষা করে।
কিরে তুই খাবি। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি না বললাম।
বাঁচা গেলো। তোর ভাগেরটা আমি খাবো। সকলের মুখ চলছে।
তুইকি অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিয়ে এসেছিস।
ইসলামভাই বললো।
না।
সেদিনের থেকে প্রিপারেসনটা বেশ ভালো করেছে।
চিকনা আমার পাটালি।
ম্যাডাম খেয়ে নিয়েছে।
দেখলাম চিকনা একটা মুরগীর ঠ্যাং চিবোচ্ছে। বাসুও খাচ্ছে।
মিত্রা একটা প্লেটে করে হাফ আলুর পরটা আর তড়কা নিয়ে এলো।
একটু খা।
ভালো লাগছে না।
একটু।
ওর বলার ঢঙে হেসেফেললাম।
অনিবাবু আমার বউ আমাকে এরকম করে কোনোদিন সাধেনি। ডাক্তারদাদা খেতে খেতে খুব গম্ভীর ভাবে বললো।
আ মরন বিয়ে করলে কবে। যে বউ হবে।
ইস সব কেঁচিয়ে দিলোগো এডিটর।
যত্তোসব মস্করা।

আমি আর থাকতে পারলাম না হো হো করে হেসে ফেললাম। ইসলামভাইও হো হো করে হাসছে। ঘরটা গম গম করে উঠলো। দেবারা এবার ওপাশ থেকে সবাই এপাশে এসে আমাদের ঘিরে ধরলো। টিনা ইশারায় জিজ্ঞাসা করছে। কি হয়েছেগো অনিদা। আমি ইশারাতেই ওকে বললাম দাঁড়াও দেখতে পাবে।
আচ্ছা এডিটর বান্ধবী কি তোমায় এখনো ভালোবাসে।
তোমার জেনে দরকার। বড়মা খেঁক খেঁক করে উঠলো।
দাদা ফিক করে হেসে ফেললো। উত্তর পেলে।
আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।
কি অনিবাবু তুমি সভাধিপতির দিকে তাকাচ্ছ কেনো।
এমনি।
ওর সরকার যেমন ও ঠিক তেমনি তার সাগরেদ।
সরি সামন্তদা আর কোনোদিন হবেনা।
আরে রাখো তোমার হবেনা। মেরে পোস্টমর্টেম করে পুরিয়ে দিলে। আর হবেনা। এইযে অনিরা আনলো। তুমি খাওয়াতে পারতে না।
আপনিতো খেতে চাইলেন না।
কোথায়হে। বুড়ো হয়েছি দুদিন পরে মরে যাবো। তুমি কি নাখাইয়ে মারতে চাও।
মল্লিক এটা কি হচ্ছে।
আমাকে দলে ভেরাচ্ছ কেনো। তোমায় জিজ্ঞাসা করেছে তুমি উত্তরদাও।
হ্যাঁরে মামনি মিষ্টি আর নেই।
আছে। রসোগোল্লা। খাবে ?
নিয়ে আয় নিয়ে আয়, কেউ খাক আর না খাক, তুই আমি খাই।
কিছুক্ষণ আগে একপেট ভাত খেয়ে এলে। ভাত কি কম খেয়েছিলে। বড়মা আবার একিভাবে কথা বললো।
টিনারা আর থাকতে পারলোনা এবার হো হো করে হেসে ফেললো।
পাঁচু পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ নিয়ে এসে আমার হাতে দিলো।
এটা কিরে অনি।
পাটালি।
হাটে ঢুকেই মামনি খাওয়ালো। বেশ খেতে তোর থেকে একটু দে।
আ দেখ কিরকম আদেখলা পানা করে। বড়মা বললো।
অনি আমাকেও একটু দিস। দাদা বললো।
ও পাঁচু, হাটে যতো পাটালি আছে নিয়ে আয়তো বাবা। আজ রাতে পাটালি খাইয়ে রাখবো।
আমি বড়মাকে জাপ্টে ধরে বললাম তুমি এরকম করছো কেনো।
তুই জানিস না। আজ সকাল থেকে পেসেন্ট দেখছে আর বলছে এই শাকটা নিয়ে আয় ওই শাকটা নিয়ে আয়। ডাক্তার আর তোর দাদা দশরকম শাক ভাজা খেয়েছে।
জানো বান্ধবী কলকাতায় পয়সা দিলেও তুমি খুঁজে পাবেনা।
তা বলে এরকম হ্যাংলামো।
ইস ছি ছি ছি এডিটর বান্ধবী আর প্রেসটিজটা রাখবেনা।
সবাই হাসতে হাসতে এ ওর গায়ে ঢলে পরছে।

হ্যাঁগো বান্ধবী পাটালি আনতে বললে, অনির নাকি জিলিপি খুব ফেভারিট, কয়েকটা আনতে দাও না।
না। আর হবেনা।
নীপা মা।
নীপা হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো।
কি বলো।
এই পকেটে হাত ঢোকা।
কেনো বলোনা।
হাত ঢোকানা।
তুমি বলো।
হাটে ঢুকতেই যে ছেলেটা বসে আছে। ওর জিলিপি গুলো বেশ কড়া। তুই আমার অনি এডিটর আর তোর জন্য নিয়ে আয়। গোনাগুন্তি দুটো করে।
আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি। বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো।
ও এডিটর শুনলে কথা।
তুমি শোনো, আমি তিরিশ বছর ধরে শুনছি।
সবাই হাসছে।
টিনা এসে ডাক্তারের পায়ের কাছে বসলো।
তুই আবার এখানে কেনো।
দাঁড়াও তোমার আর বড়মার কথাগুলো মুখস্থ করি।
পারবিনা।
চেষ্টাতো করি।
পাঁচু জিলিপির ঠোঙানিয়ে ঢুকলো।
দে দে বাবা আগে অনিকে দিয়ে বউনি কর।
আমি একটা তুলে নিলাম। টিনা উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে ভাগ করে দিলো।
মিত্রার দিকে তাকালাম। ও এখনো একটা ঠ্যাং চিবোচ্ছে।
কিরে তোর এখনো শেষ হয়নি।
তুই তাকাচ্ছিস কেনো এদিকে।
জানো মিত্রাদি অনিদা ধাবায় পয়সা দেয়নি। মিলি বললো।
তারমানে! ফোঁকটে।
ইসলামভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
তুই একটু ধুলোদিস তোর কাছ থেকে শিখতে হবে।
আরে আমি না নিরঞ্জনদা.....।
সবাই নিরঞ্জনদার দিকে তাকালো।
বুঝলে এডিটর পার্টিটা এই করেই গেলো।
না এবার আমি উঠি। নিরঞ্জনদা বললো।
আরে ভায়া উঠে যাবে কোথায়। তিনকুড়ি নয় বয়স হয়ে গেলো।
নাও এবার উঠে পরো। অনেক বাজার করেছো। রান্না করতে হবে। পথও কম নয়।
বাসু বাবা একটু জল হবে। বড়ো নোংরা করে খাই। হাতটা একটু ধোবো।
অনাদি জলের মগটা এগিয়ে দিলো।
ডাক্তারদাদা বাইরে গিয়ে হাত ধুলো।
বড়মা আমার দিকে তাকালো। তুই চল।
যাচ্ছি তোমরা যাও।
কেনো একসঙ্গে চল।
তোমরা যাওনা। পরে যাচ্ছি। ইসলামভাই তুমি একটু থেকো।
আবার শলা পরামর্শ, দাঁড়া আমি দামিনীকে ফোন করছি। তুই যেমন বুনো ওল ও তেমনি বাঘা তেঁতুল।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ওরা এগিয়ে গেলো। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বাসু ঘরের লাইট জাললো। ধুপ দিলো।
চিকনা এবার একটু চা বল। ঘন্টা দুয়েক কোথা থেকে যে চলে গেলো।
ডাক্তারদাদা কাকা কাকীদের দেখেছে।
দেখেছে মানে অর্ধেক রোগ সেরে গেছে।
যাঃ।
হ্যাঁরে অনি বিশ্বাস কর। সুবলকাকার মুখ দেখে বললো, মাঠেঘাটে অনেক কাজ করেছেন। হাতটার এখানে বেদনা হয়।
কাকা হ্যাঁ বললো।
ঘরে গরু আছে।
গ্রামের ঘরে কারনা গরুথাকে বল। কাকা হ্যাঁ বললো।
দিনে একলিটার করে দুধ খাবেন। আর পাঁচ রকমের শাকের নাম বললো। বেশ ওষুধ দেওয়া হয়ে গেলো।
আমি বাসুর দিকে তাকিয়ে আছি।
আর একটা ওষুধ দিলো। এখানে পেলাম না আমাদের সুধীন ফার্মাসিস্টকে দিয়েছি, বলেছে এনে দেবে।
আমাকে একটা ফোন করতে পারতিস।
দুর তুই ছাড়তো।
সত্যি অনি দেখলে বোঝা যায়না। হরেকৃষ্ণদা ডাক্তারদাদার সঙ্গে দেখা হতে প্রণাম করলো। বললো সাত মাস পরে এ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছিলো। একহাজার টাকা ভিজিট। হাতটা শরু হয়ে গেছিলো। এখন ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের কানা সামন্ততো সাষ্টাঙ্গে প্রণাম সারলো। কাল যাবে বলেছে। অনাদি বললো।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম একটা সিগারেট খাওয়াবে।
চিকনা পকেট থেকে সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট বার করলো।
কিরে সেই প্যাকেটটা।
না। বস আর এক প্যাকেট দিয়েছে। বাইরের কেউ এলে সিগারেট। না হলে বিড়ি।
আমি হাসলাম।
সিগারেট ধরিয়ে ইসলামভাইকে বললাম এদিকের খবর।
সব ঠিক আছে কাজ সারতে সারতে একটা বাজলো। তারপর খেয়ে দেয়ে এখানে চলে এলাম।
আমি জায়গাটা এখনো দেখিনি।

তুই দেখিসনি!
বিশ্বাস করো।
দেখো কান্ড, যার জন্য এতোসব, সেইই এখনো দেখেনি। চল চল দেখবি চল।
দাঁড়াও সিগারেটটা খেয়ে নিই।
অনি।
আমি অনাদির দিকে তাকালাম।
একটু কাজ সেরে নিয়ে ডাইরেক্ট তোর বাড়ি চলে যাচ্ছি।
আচ্ছা আয়।
চিকনা চল।
চিকনা উঠে দাঁড়ালো। বাসুকে জিজ্ঞাসা করলাম তুই কখন যাবি।
তোর ওখানে নেমন্তন্ন, সপরিবারে।
সবার।
হ্যাঁ। সেই জন্য অনাদি দৌড়লো। না গেলে বৌ খেদাবেনা।
আমি হাসলাম।
আমি ইসলামভাই যাবো কি করে।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা। ইসলামভাই-এর বাহন আছে।
চিকনারটা ?
না ইসলামভাই কিনে নিয়েছে।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
কি করবো বল। তুই এখানে যেভাবে তাস সাজাচ্ছিস, ঘনো ঘনো এখানে আস্তে হবে। কাঁহাতক হাঁটি বল। নীপার নামে কিনেছি। আমি না থাকলে নীপা চালাবে।
নীপা চালাতে পারে।
একটু একটু শিখেছে।
সত্যি তুমি পারো।
তোর জন্য নাক যখন কেটেছি একটু ভালো করেই কাটি।
বাসু উঠিরে, এখানে আর আসবোনা। লতাকে নিয়ে চলে আয়।
যা যাচ্ছি।
আমি আর ইসলামভাই বেরিয়ে এলাম।
গাড়ি কোথায় রেখেছো।
সামনে সঞ্জুর দোকানে।
সত্যিতো সঞ্জুকে দেখতে পেলামনা।
দেখবি কি করে তোর ওখানে ব্যস্ত।
কি করছে।
এদের জন্য দুটো ঘর রেডি হলো। লাইট লাগাচ্ছে। সত্যি তোর বন্ধুগুলো দারুন।
তোমার জন্য একটা সুখবর আছে।
কিরে!
চলো বলছি। ব্যাঙ্কের টাকা তুমি দিলে।
হ্যাঁ।
এ্যাকাউন্ট হয়েছে।
হ্যাঁ। সাতজনের করিয়েছি। একটা করে সেভিংস। আর ডিডে যে নামটা তুই রেজিস্ট্রেসন করিয়েছিস সেই নামে একটা কারেন্ট এ্যাকাউন্ট।
কত টাকা জমা দিলে।
দাদা মল্লিকদা বড়দি দিদি চেক দিয়েছে দু’লাখ করে নিরঞ্জনদা মামনি আর আমার এ্যাকাউন্টে আমি ক্যাশ দিয়েছি। আর কো-অপারেটিভের এ্যাকাউন্টে তিরিশ জমা দিয়ে দিয়েছি।
সব শেষ করে দিয়েছো।
আজতো রতন আবার পাঠালো।
সেতো দেখলাম।
তোকে ভাবতে হবেনা।
পায়ে পায়ে দুজনে জমিটায় এসে দাঁড়ালাম। একেবারে বাজারের মুখে। বেশ ভালো স্পট। এখানটা একটু অন্ধকার অন্ধকার। বুঝতে পারছি এইবার বাজারটা এই পর্যন্ত এগিয়ে আসবে।
অনাদিকে বলেছি কাল থেকে কাজ শুরু করে দিতে।
অনেক টাকা লাগবে।
তুই এটা নিয়ে ভাবিসনা। আমার ওপর ছেড়ে দে।
তোমায় যে আরো বড়ো কাজ করতে হবে।
তুইতো এখনো বললিনা।
অনিমেষদার কাছে গেছিলাম।
শুনলাম।
তোমার সঙ্গে অনিমেষদা বসতে চেয়েছে।
সত্যি!
নিমেষের মধ্যে ইসলামভাই আমাকে কোলে তুলে নিলো।
আরে ছাড়ো ছাড়ো। করছো কি।
আমি শূন্যে উঠে গেলাম।
পরে যাবো।
ইসলামভাই কয়েকপাক ঘুরে আমাকে নিচে নামিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ইসলামভাই-এর বুকের মধ্যে পায়রার মতো হাঁপাচ্ছি।
বিশ্বাস কর অনি। ভদ্রলোকের সঙ্গে বসার জন্য কতো চেষ্টা করেছি। কেউ পাত্তাদেয়নি। তুই আমার সাধটা পূরণ করলি।
সাধ পূরণ নয় তোমাকে একটা দায়িত্ব দেবে।
বল তুই। যে করেই হোক আমি কাজটা করবো। আমাকে ওই ভদ্রলোকের মন জিততেই হবে।
এই ডিস্ট্রিক্টে মাস দুয়েকের মধ্যে পাঁচটা সিটে বাই-ইলেকসন। সিটগুলো বার করতে হবে। আমাকে আড়ালে ডেকে বলেছে। নিরঞ্জনদা জানে না।
সেটা শুনলাম নিরঞ্জনদার মুখে। তোর সঙ্গে আলাদা কথা বলেছে। নিরঞ্জনদা এখন তোকে ভীষণ ভয় পাচ্ছে।
কেনো।



তোর সঙ্গে অনিমেষদার রিলেসন দেখে।
ভয় পাওয়ার কি আছে।
ওতো অনেক গজব করে রেখেছে।
সেটা অনিমেষদা জানে। নিজেকে শোধরাবে নাহলে মরবে।
বড়দি বলেছে এরপর আর অনিকে তোর জন্য বলতে পারবোনা। নিরঞ্জনদা স্বীকার করে নিয়েছে।
এ যাত্রায় নিরঞ্জনদা বেঁচে যাবে।
এটাই যথেষ্ট। কজন করে।
ডাক্তার ব্যানার্জী এখন কেমন আছে।
ইসলামভাই আমার চোখে চোখ রাখলো। কেউ যেনো ইসলামভাই-এর গালে কোষে একটা থাপ্পর মারলো।
ফিক করে হেসে ফললো। গিভ এন্ড টেক পলিসি।
না।
তুই আমার পেট থেকে কথা বার করতে পারবিনা।
তাহলে আমার সোর্স কাজে লাগাতে হবে।
লাগাতে পারিস। কাজ হবেনা।
ওকে আমার দরকার।
যখনি বলবি তোর কাছে হাজির করেদেবো।
টোডি ?
মামনিকে প্রমিস করেছি ও আর থাকবে না। বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে কাজ হয়ে যাবে।
ভুল করলে।
কেনো।
ওকে দিয়ে অনেক কাজ করানো বাকি আছে।
আর দরকার নেই। এখন যে কাজে হাত দিয়েছিস মন দিয়ে কর।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম।
তুমি সব জানো।
দামিনী কাল ফোনে সব বলেছে।
কাল সারারাত মাসি ঘুমোয়নি কেনো ?
মামনির সঙ্গে কথা বলেছে।
কখন!
তোর সঙ্গে কথা বলার পর।
মিত্রার শরীরের ব্যাপারটা মাসি জানে।
জানতোনা। আমি বলেছি। দামিনী খালি কাঁদছে। আমি ফিরে যাই।
ছোটমার ব্যাপার।
বলেছি।
কি বললো।
তুই খুব ভাগ্যবান। আমার কপালে ঘর সংসার কিছুই জুটলনা, তোর তবু কিছুটা হলো।
মাসিকে এখানে নিয়ে আসা যাবে।
আর একটু সময়নে।
মাসি কষ্ট পাচ্ছিলো।
জানি। তবু তুই নিজেকে অনেক ভেঙ্গেছিস। আমি সব বুঝি।
তাই তোমার সঙ্গে কথা বলছি।
ইসলামভাই চুপ করে রইলো।
দাঁড়াও অনিমেষদাকে একটা ফোন করি।
এখন!
হ্যাঁ।
পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে ডায়াল করলাম।
হ্যালো।
দাদা আমি অনি।
ভালো করেছিস ফোন করে। তোর নম্বরটা আমার কাছে নেই। এখুনি সুরোকে ফোন করে তোর নম্বর চাইলাম।
কেনো দাদা।
তুই আমাকে বাঁচতে দিবিনা।
আবার কি অন্যায় করলাম।
ডাক্তারটাকে গুম করে রেখেছিস কেনো।
আমি করলাম কোথায় ?
ওই হলো। তুইতো আমার থেকে ক্ষমতাবান।
অন্যায় হয়েছে।
ওই ভদ্রমহিলার সঙ্গেও একটু বসবো।
কেনো।
সে তোকে জানতে হবেনা। তুই ডাক্তারকে ছেড়েদে। আমাকে আমার সংসারটা চালাতে হবেতো।
যদি গন্ডগোল করে।
আমার দায়িত্ব। তুই ওর নামে যা খুশি লেখ। তাতে যদি ওর ক্ষতি হয় হোক আমি বলতে যাবোনা। আমারতো এই মুহূর্তে বলার কিছু নেই।
ঠিক আছে। ছেড়ে দিয়ে খবর দেবো।
তাই দিস।
আর একটা কথা আছে।
বল।

হাতের সামনে ডাইরীটা আছে।
কেনোরে।
আগামী রবিবারের পরের রবিবার সাতটার পর থেকে আমার বাড়িতে সময় দিতে হবে।
কেনো।
নেমন্তন্ন।
কিসের।
সুরঞ্জনা সেদিন জমপেশ করে সাজবে বললো।
হো হো হো করে অনিমেষদা হেসে ফেললো।
তাহলে তুই বিয়ে করেছিস বল।
করিনি করবো। আমি সোমবার বিকেলে যাবো।
আমি থাকতে পারবোনা।
বৌদি আর সুরো থাকলেই হবে।
তুই তোর বৌদিকে ফোন করে বলেদে।
আচ্ছা।
আমার কাজ কতদূর এগোলো।
জায়গা গুলোর নাম একটু বলো।
দাদা পর পর নামগুলো বলে গেলো। নিরঞ্জনকে বলার দরকার নেই।
আচ্ছা।
শোন তোর সঙ্গে পরে কথা বলবো। হাতের কাজগুলো একটু সারি।
আচ্ছা।
রেকর্ডিংটা সেভ করলাম।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলামভাই হাসতে হাসতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তুই কি সুন্দর না বলেও আমার কথাটা প্রেজেন্ট করলি।
এবার কি করবে।
দামিনীকে একটা ফোন কর।
আমি করবোনা তুমি কর।
কেনো!
আমার বলাটা ঠিক হবে। মাসি অন্য কিছু মনে করতে পারে।
কিচ্ছু মনে করবেনা।
তুমি ফোন করোনা তারপর আমি কথা বলেনেবো।
ইসলামভাই ফোন করলো।
অনি কেমন আছেরে।
ভালো, এখনো বাড়ি ঢোকেনি। আমরা দু’জন সেই জায়গাটায় বসে আছি।
সকাল থেকে ছেলাটা স্নান-খাওয়া কিছু করেনি।
বাড়িতে গিয়ে করবে।
দে ওকে।
তোমার কথা শুনতে পাচ্ছে।
কিরে।
বলো।
ফোন করলিনা।
সবার ঝামেলা সামলাতেই সময় কেটে গেলো।
ইসলাম বলছিলো।
মাসি।
কি হয়েছেরে। তোর গলাটা কেমন কেমন শোনাচ্ছে।
কিছু হয়নি। তোমাকে একটা কথা বলবো।
ওখানে কিছু হয়েছে।
না।
তাহলে!
অনিমেষদাকে ফোন করেছিলাম একটু আগে।
ডাক্তারকে ছেড়ে দিতে বলছে।
তুমি জানলে কি করে।
সে তোকে জানতে হবেনা। ওরা দায়িত্ব নেবে।
অনিমেষদা নিজে দায়িত্ব নেবে বলেছে।
ইসলামকে দে। আমার কথা শোনা বন্ধ কর।
আমি ইসলামভাই-এর হাতে মোবাইলটা দিলাম।

ইসলামভাই আমার পাশ থেকে উঠে দূরে চলে গেলো। অনেকক্ষণ দামিনীমাসির সঙ্গে কথা হলো। তারপর ধীরলয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে এগিয়ে এলো। খালি কানে টুকরো টুকরো কথা ভেসে এলো। তোমাকে ও মাসি বলে ডাকে। তুমি কষ্ট পেলে ও কষ্ট পাবে। তুমি চাও ও কষ্ট পাক। তাহলে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ইসলামভাই কেছে এগিয়ে এলো।
ধর কাঁদছে কিছুতেই বুঝবেনা।
কি হলো মাসি, কাঁদছো কেনো।
কই কাঁদছি ইসলাম মিছে কথা বলছে।
তোকে সব সময় কাছে কাছে থাকতে হবে। তোর কোথাও যাওয়া চলবেনা। ইসলামভই বললো।
ঠিক আছে আমি কাল চলে যাবো।
না। তোকে আসতে হবেনা।
তুমি এরকম করলে চলে কি করে বলো।
মন মানে না।
তুমিইতো সকালবেলা আমাকে এতো বোঝালে।
তোকে বুঝিয়েছি নিজের মনকে বোঝাতে পারছিনা।
তোমরা সবাই যদি এরকম অবুঝপনা করো সামলাবো কি করে।
আর করবোনা।
তোমার মিষ্টি এখানে সকলে খেয়েছে। সবাই খুব আনন্দ করেছে।
আমি সব শুনেছি।
ইসলামভাই শুনিয়েছে।
হ্যাঁ।
ডাক্তারের ভাষণ কেমন লাগলো।
বড্ড অমায়িক।
তোমার মিষ্টি মুখে দিয়েই বলেছে উত্তর কলকাতার।
উনিতো অনেকদিন উত্তর কলকাতায় চেম্বার করেছেন।
তুমি আমার থেকে বেশি জানবে। আমি মিত্রার শরীর খারাপ হতে জানলাম। তারপর জানলাম দাদার বুজুম ফ্রেন্ড।
তুই রোববার কখন আসবি।
খেয়ে দেয়ে বেরোবো। বিকেল বিকেল পৌঁছে যাবো।
আচ্ছা। এখন ঘরে যা।
তুমি কিন্তু কাঁদবেনা।
আচ্ছা।
রাখছি।
আচ্ছা।
কি করি বলোতো ইসলামভাই।
কি করবি তোর কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাওয়া হবেনা। মাত্র দুদিন এখানে ছিলিনা। বড়দির মুখ ভার দিদির মুখ ভার। তুই ওদিকে ওইসব করছিস। শুনে চিকনারা এই কলকাতায় চলে যায়। সব সামলাতে সামলাতে আমি হিমসিম খেয়ে গেছি। বাধ্য হয়ে আমাকে সব শোনাতে হয়েছে। তাওতো গতকাল আমি মামনি পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছি।
বাইক কবে কিনলে।
তুই যে দিন গেলি সেদিন।
তুমি গেছিলে।
না। সঞ্জুকে টাকা দিয়েছিলাম। ও অনাদি গিয়ে কিনে এনেছে।
চলো অনেক রাত হলো, ওখানে আবার হুলুস্থূলুস কান্ড বেঁধে যাবে।
চল।
আমরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম। সঞ্জুর দোকানটা হাফ বন্ধ দেখলাম। এখন মরা হাট। হাতে গোনা কয়েকজন লোক এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দূরে দেখলাম বাসুর দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলামভাই বাইকে স্টার্ট দিলো।
আমি পেছনে বসলাম।
কিগো রাতে চালাতে পারবেতো ?
ঠিক করে বোস কথা বলিসনা।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
ইসলামভাই বেশ জোরেই চালিয়ে নিয়ে এলো। উঁচু নীচু রাস্তার জন্য যেটুকু নাচা নাচি করেছি। খামারে এসে দাঁড়াতেই দেখলাম আলো ঝলমলে পরিবেশ। চারিদিকে লাইটে লাইট। বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ইসলামভাই বাইকটাকে স্ট্যান্ড করলো। ভজু এগিয়ে এলো। জরিয়ে ধরলো। কেমন আছো অনিদা।
তুই কেমন আছিস।
ভালো। তোমাকে নাকি মেরেছে।
কে বললো তোকে।
মা বোকলো।
সেই জন্য আমি মাকে বকে দিয়েছি।
দেখলাম নীপা বারান্দায় ছিলো, ছুটে ভেতরে চলে গেলো। কাকারা বাইরের বারান্দায় টিভির নিউজ দেখছে। সবার পোষাক বদল হয়ে গেছে।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম। মাসি কখন ফোন করবে।
আজ হবেনা কাল হবে।
কেনো।
কলকাতার বাইরে রেখেছে।
খেয়েছে।
মাসি জানলো কি করে বলোতো।
ওই পাড়ার পার্টির দাদারা এসেছিলো। গন্ধে গন্ধে কিছু পেয়েছে হয়তো। এই ক্ষেত্রে যা হয় আরকি। দামিনীকে চাপ দিয়েছে। শেষে ও বলে দিয়েছে। অনি না বললে ছাড়বোনা। এবার বাবুরা ঠুসে গেছে। সব জায়গায়তো টাকা ছড়িয়ে রেখেছে।
ফিরে যাই সোমবার থেকে সিরায়াল মারবো। কোন বাপ ওকে বাঁচায় আমি দেখবো।
এই তোর মাথা বিগড়ে গেলো।
কথাটা একটু জোড়ে বলা হয়েগেছিলো। দেখলাম দাদা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এদিকে তাকালো। মল্লিকদা দাদার দেখা দেখি উঠে দাঁড়িয়েছে। এদিকে তাকিয়ে আছে। আমি চুপ করে গেলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।
কি ভাবছিস।
না। তুমি ভেতরে যাও। আমি একটু টয়লেট করে আসছি। সিগারেটের প্যাকটটা দাও।
ইসলামভাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে। আমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। পকেট থেকে প্যাকেটটা বার করে আমার হাতে দিলো।
আমি আলো থেকে অন্ধকারেরে দিকে এগোলাম। সোজা চলে এলাম তেঁতুল তলায়।
চারিদিক শুনশান। আকাশে আলোর লেশমাত্র নেই। আজ মনে হয় চাঁদ উঠবে সেই মাঝ রাতে। আকাশ ভরা তারার মেলা। কেউ যেন আকাশের গায়ে টুনিবাল্ব জালিয়ে দিয়েছে। আমি রাসমঞ্চের গাঁ ঘেষে বসলাম। পকেট থেকে ফোনটা বার করে সনাতন বাবুকে ধরলাম।
ছোটবাবু।
আপনি এখন কোথায় ?

অফিসে।
মিত্রার ঘরের চাবিটা কোথায়।
আমার কাছে।
সন্দীপকে চাবিটা দিন। আমাকে একবার মিস কল করতে বলুন।
ছোটবাবু আবার কোনো গন্ডগোল......।
না। যা বলছি করুন।
ঠিক আছে।
পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলাম। একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। মনে মনে বললাম শালা শুয়েরের বাচ্চা। তুমি অনেক বড় খেলোয়াড়। নিজেকে বড্ড শেয়ানা মনে করো।
ফোনটা বেজেই থেমে গেলো।
পকেট থেকে বার করে দেখলাম সন্দীপ। রিংব্যাক করলাম।
কিরে আবার কি হলো।
কিছু হয়নি। কাগজের খবর কি।
ফার্স্টক্লাস। দারুণ স্মুথ এগোচ্ছে।
তুই এখন কোথায়।
দাদার ঘরের সামনে।
আশেপাশে কেউ আছে।
না।
চাবি পেয়েছিস।
হ্যাঁ।
মিত্রার ঘরের দরজাটা খোল ভেতরে গিয়ে ইন্টার লক করে দে।
কেনোরে!
তোকে হুকুম করছি তামিল কর। কোনো প্রশ্ন করবিনা।
বাবা এতো কড়া কড়া কথা বলছিস কেনো। যাচ্ছি।
ফ্লোরে সন্দীপের বুটের আওয়াজ পেলাম। এই সময় নিউজরুম ছাড়া সারা অফিস শুনশান। বুঝতে পারছি সন্দীপ কানে মোবাইলটা ধরে রেখে, মিত্রার ঘরের লক খুললো। ভাতরে গিয়ে ইন্টার লক করলো।
অনি।
বল।
ম্যাডামের ঘরের ভেতর।
আমার কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিস।
পাচ্ছি।
তোকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। তুই আমি ছাড়া কেউ জানতে পারবেনা। এমনকি তোর বউ পর্যন্ত নয় মাথায় রাখিস। যদি আমি বুঝতে পেরেছি তুই আমি ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানতে পেরেছে তাহলে তোর বউ বিধবা হবে।
ইস তুই এইভাবে বলছিস।
যা বলবো তার গুরুত্ব কতটা তাহলে বুঝতে পেরেছিস।
পেরেছি পেরেছি। তুই বল।
মিত্রার চেয়ারের দিকে মুখ কর।
করেছি।
এবার ডানদিকে তিনটে আলমাড়ি দেখতে পাচ্ছিস।
পাচ্ছি।
প্রথম আলমাড়িটা খুলবি। ওটায় কোনো চাবিনেই। সব সময় খোলা থেকে। কিছু অবাঞ্ছিত কাগজপত্র ওই আলমাড়িতে ভরা আছে। একটা চেয়ার নিয়ে আলমাড়ির সামনে যা।
দাঁড়া।
বুঝতে পারছি সন্দীপ একটা চেয়ার টানতে টানতে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে।
এসেছি।
আলমাড়ির পাল্লা খোল।
খুলেছি। তুই যা বললি একেবারে কারেক্ট।
হুঁ।
চেয়ারের ওপর ওঠ।
দাঁড়া জুতোটা খুলি। উঠেছি।
এবার চারতলাটা তোর হাতের কাছে চলে এসেছে।
হ্যাঁ। কি নোংরারে কাল হরিদার ছেলেটাকে দিয়ে পরিষ্কার করাবো।
শুয়োর তোকে বলেছি পরিষ্কার করাতে।
আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। বল কি করবো।
একেবারে পেছন দিকে হাত দে।
জামায় নোংরা লেগে যাবে।
আচ্ছা গান্ডুতো।
খিস্তি দিসনা চেয়ার থেকে পরে যাবো। হ্যাঁ হাত ঢুকিয়েছি।
একটা প্লাসটিকের ফাইলে হাতে ঠেকেছে।
হ্যাঁ।
ওটা টেনে বারকর, সাবধানে, কোনো কিছু যেনো পরে না যায়।

আচ্ছা।
বার করেছিস।
দাঁড়া কাগজগুলো সরাই। ধলোয় চোখ মুখ ভরে গেলো।
রাত্রে বাড়িতে ফিরে বউকে বলিস ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে।
আচ্ছা। তোর মটকাটা আজ গরম কেনো।
যা বলছি তাড়াতাড়ি কর।
বার করেছি।
চেয়ার থেকে নেমে মিত্রার টেবিলের টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালা।
দাঁড়া নামি আগে। আলমাড়ির পাল্লা বন্ধ করবো।
না।
তুই যখন এই ঘরে ঢুকলি কেউ দেখিছিলো।
না।
গুড।
তোর কাছ থেকে এইটুকু শিখেছি। গোপন কাজ গোপনে করতে হয়।
কথাটা মাথায় রাখবি।
প্রমিস কোনোদিন ভুল হবেনা।
লাইট জাললি।
জাললাম।
ফাইলটা খুলে দেখ দশটা খাম আছে।
গুনিনি।
গুনতে হবেনা। দেখ রাজনাথ বাবুর নামে একটা খাম রয়েছে।
পেছন দিকের ঝোপটায় সর সর করে একটা আওয়াজ হলো। চমকে পেছনে তাকালাম। জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম কে ওখানে। কথা বলছোনা কেনো। সামনে এগিয়ে গেলাম। কাউকে দেখতে পেলাম না।
অনি অনি।
দাঁড়া পরে বলছি।
কি হয়েছে বলবিতো।
কিছু হয়নি।
কে ওখানে।
কোনো সাড়া শব্দ নেই। আমি তুলসীমঞ্চের গা থেকে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় চলে এলাম।
কি হয়েছেরে।
একটা স্বর স্বর আওয়াজ পেলাম সাপ-টাপ হবে হয়তো। পেয়েছিস খামটা।
পেয়েছি।
খোল খামটা।
আঠা দিয়ে আটকানো আছে। ছিঁড়বো।
হ্যাঁ।
উরি শালা এতো এ্যাটম বোম। তুই পেলি কোথা থেকে।
তোকে জানতে হবেনা।
ছবিগুলো ঠিক আছে।
একেবারে ঝকঝকে।
খামটা টেবিলে রেখে ফাইলটা ওপরে তুলে দিয়ে আয়। যেমন ভাবে ছিলো ঠিক তেমন ভাবে। পারলে নোংরা কাগজগুলো একটু ঠেলেদিস।
আচ্ছা।
বুঝতে পারছি সন্দীপ আমার কথা মতো কাজ করলো।
এবার বল।
রাত্রিবেলা এটা নিজের হাতে জেরক্স করবি। উইথ ছবি। ঠিক ঠিক ভাবে। কেউ যেনো দেখতে না পায়।
আচ্ছা।
অফিসের একটা বড়খাম নিয়ে আর্টিকেলটা ভরবি, ওপরে নাম এ্যাড্রেস লিখবি রাজনাথবাবুর। সেন্ডারে আমার নাম এবং ফোন নম্বর।
মোবাইল।
হ্যাঁ। কাল অফিসে আসার পথে জিপিও থেকে রেজিস্টার্ড পোস্টে ওঠা পাঠাবি। এ্যাকনলেজটা ফিরে এলে গুছিয়ে রাখবি।
এইকাজ।
গান্ডু। কি বলতে ভুলে গেলাম বলতো তোকে।
বলতে পারবোনা।
তাহলে এইকাজ বলে খেঁচালি কেনো।
বল কি ভুলেগেলি।
খামের ওপর কনফিডেনসিয়াল লিখতে ভুলবিনা।
ঠিক।
খামটা গুছিয়ে রাখবি। কেউ যেনো জানতে না পারে। আর মিত্রার ঘরের চাবি সনাতনবাবুকে দেওয়ার দরকার নেই তোর কাছে রাখবি। আমি গেলে আমার হাতে দিবি।
যদি কিছু বলে।
আমাকে ফোন করতে বলবি।
মালটা ছাপবিনা।
এখন না।
দুর শালা হাতে গরম জিনিষ এইভাবে ছেড়েদিবি।
যা বলছি করবি। আর একটা কাজ করতে হবে।
বল।
মিঃ ব্যানার্জীর ছবি তোর কাছে আছে।
আছে।
রবিবার ফ্রন্টপেজে একেবারে বাঁদিকের ওপরের কলমে। ছবি দিয়ে লিখবি ওনার সঙ্গে আমাদের কাগজের এখন কোনো সম্পর্ক নেই কেনো নেই তা আমরা মঙ্গলবারের কাগজে ধারাবাহিক লেখায় জানাবো। আট দশ লাইনের ভেতর একটা গল্প লিখবি।
ঠিক আছে।
আর একটা কাজ করতে পারবি।
বল চেষ্টা করবো।
একটা আনকড়া ফ্রিলেন্সার জোগাড় করতে পারবি। ওই ছেলেদুটোর মতো ইনটেলেক্ট হওয়া চাই।
পারবোনা। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks