দেখি নাই ফিরে - (Part-50)

না, তা হয় নাকি। তোমরা আমার গেস্ট।
তুমি এরিয়ে যাচ্ছ।
তুমি আগে বলো তারপর চা খাবো।
ছগনলালকে গেটের মুখে এসে দাঁড়াতে দেখলাম।
কি ছগনলাল।
ছোটোবাবু নিয়ে আসবো।
তোমার হয়ে গেছে।
হ্যাঁ। কয়েকটা করেছি।
তুমি একা করছো না আর কেউ তোমার সঙ্গে আছে ?
আমার দেশোয়ালী ভাইরা আছে।
কজন ?
দুজন।
ঠিক আছে তুমি নিয়ে এসো।
ছগনলাল চলে গেলো।
কিগো অনিদা।
একটা জিনিষ খাওয়াচ্ছি তোমাদের। খেয়ে বলতে হবে কি খেলে।
ঠিক আছে। সব হবে আগে তুমি কি হয়েছে বলো।
এতো মহা মুস্কিল।
তুমি বাড়িতে একা রয়েছো। কেউ নেই। মিলি বললো।
আরে বাবা আমিকি একা থাকতে পারিনা।
দেবাশীষ নির্মাল্য এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ও যখন বলতে চায়না তখন ওকে বিরক্ত করছো কেনো। ওতো আমাদের নিজের বলে মনে করে না।
এইতো সেন্টুতে ঘা দিচ্ছিস।
আমার কথা বলার ঢঙে সবাই হো হো করে হেসে ফললো।
আমি বললে তোরা সহ্য করতে পারবিনা।
ঠিক সহ্য করতে পারবো। বলো। টিনা বললো।
তোর গলার স্বর তখন টিনার কাছে অপরিচিত লেগেছে। খালি তোর নামটা ওর মোবাইলে সেভ করা ছিলো বলে ও বুঝতে পেরেছে।
ছগনলাল একটা কাঁসার থালায় লেট্টি নিয়ে এলো। সঙ্গে চাটনি পেঁয়াজ লঙ্কা। দারুন গন্ধ বেরোচ্ছে।
ছগনলাল।
ছোটবাবু।
লাগলে আর পাওয়া যাবে।
লাগলে বলবেন আমি নিয়ে আসবো।
একটু চা খাওয়াবে।
করছি ছোটবাবু।
ছগনলাল বেরিয়ে গেলো।
নে দেবা একটা খেয়ে দেখ। দারুন জিনিষ।
সবাই একটা করে তুলে নিলো।
দাঁতে কামরেই অদিতি বললো। দারুন জিনিষ অনিদা। নাম কি গো।
এগুলোকে লেট্টি বলে পুরো ছাতু দিয়ে তৈরি। বিহারের লোকরা খুব ভালো বানায়।
সত্যি দারুন টেস্ট।
একটু তেঁতুলের চাটনি মুখে দাও আরো ভালো লাগবে।
যাই করো তোমাকে ছারছিনা বলতে হবে। মিলি খতে খেতে বললো।
আমি খেতে খেতে কালকে থেকে যা যা হয়েছে ওদের সব বললাম। বড়মারা এখন কোথায় আছে কেনো গেছে সব বললাম। খালি মিত্রার পোর্সানটা এডিট করে বললাম।
আমার কথা শেষ হতে দেবাশীষ উঠে দাঁড়ালো। ওর হাত পা কাঁপছে।
তুই শুয়োরের বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিলি।
বোস। সব সময় রাগ করলে হয়।
মিলি টিনা অদিতির চোখ কপালে উঠে গেছে।

ডকুমেন্টস গুলো দেখবি।
দেখা।
আমি ল্যাপটপ খুলে ওদের দেখালাম। ওরা হুমড়ি খেয়ে পরলো ল্যাপটপের ওপর।
আমি আলমাড়ি খুলে ডাক্তারের সব দেখালাম।
টিনা আমার হাতটা চেপে ধরে বললো। তুমি এখনো কি করে ঠিক আছো অনিদা।
কি করবো বলো টিনা।
মাতা নীচু করে ফেললাম। কথাগুলে মনে পরলেই গলাটা ধরে আসছে। চোখদুটো জ্বালা জ্বালা করছে।
একা একা এখানে বসে সব হজম করছি। কাকে বলবো আমার কথা। দামিনী মাসি ইসলামভাই না থাকলে কি যে হতো কিছু বলতে পারিনা।
তোর দামিনী মাসি কখন আসবে।
আসবে বলেছে। কখন আসবে বলতে পারছানি।
অদিতি দেখা করে যাবে। ভদ্রমহিলাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।
তোমরা দুজন কেনো। আমরাই বা বাদ যাবো কেনো। টিনা বললো।
দাঁড়া মাসি চলে আসবে।
তুই যা বললি, সত্যি অনি আমি হলে হার্টফেল করে যেতাম। তবে তুই গান্ডুটাকে আরো কেলাতে পারতিস।
আমার মারাতে ওর লাগবেনা। রতন আবিদ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যা দিয়েছে তাতেই যথেষ্ট।
এর পর কি হবে।
জানিনা। দামিনী মাসির হাতে। আমাকে আজ থেকে এসব চিন্তা বন্ধ করতে বলেছে।
অনিদা আমার খুব ভয় করছে। টিনার গলাটা ধরে এলো।
না টিনা ভয় করলেই ভয়। তোমার মিত্রাদির কথাটা একবার চিন্তা করো।
সত্যি কি ব্যাডলাক মেয়েটার। কলেজ লাইফে ওকে কত প্রানোচ্ছল দেখেছি। তোদের দুজনকে কি ভালোলাগতো।
এখন দেখলে অবাক হয়ে যাবি। তোর সামনে হাসিখুশির অভিনয় করবে। রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে সারারাত কাঁদে। অনি তুই না থকেলে আমি স্যুসাইড করতাম।
কি বলছিস তুই।
আমি একটা কথাও মিথ্যে বলছিনা দেবা। তোরা আমার কাছের লোক। তোদের কাছে আমি বার বার সাহায্যের জন্য ছুটে গেছি। সেই সময় মনটা ভীষণ খারাপ লাগলো। বুকের মধ্যে কে যেন পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলো। ভাবলাম তোকে ফোন করি।
করতে পারতিস।
তুই যদি ব্যস্ত থাকিস।
গান্ডু।
টিনা ফিক করে হেসে ফেললো।
হেসোনা টিনা মাঝে মাঝে অনির কথা শুনলে পায়ের থেক মাথার চুল পর্যন্ত খাঁড়া হয়ে যায়। মিত্রাকি তোর একার বন্ধু আমার বন্ধু ছিলোনা।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
তোমাদের আরো অনেক কথা বলিনি। আগের কেশটা সম্বন্ধে বললে তোমরা সত্যি সত্যি হার্টফেল করবে।
তার মানে।
মালিক হওয়ার পর থেকে ও শান্তিতে নেই। একটার পর একটা ঝামেলা চলছে। মলের কেশটা তো এই কয়েকদিন আগের ঘটনা।
গত সপ্তাহের। আমি বললাম।
মিলি অদিতি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
সত্যি অনিদা তুমি কি পাথর। অদিতি বললো।
পাথর না হলে সহ্য করবো কি করে।
সেটাও তো খয়ে যায়।
হয়তো যাচ্ছে। তোমরা দেখতে পাচ্ছ না।
ছোটোবাবু মাজি আয়া।
আমি তড়াক করে বিছানা থেকে উঠে গেলাম। বারান্দায় দাঁড়ালাম। দেখলাম দামিনীমাসি আর কবিতা গাড়ি থেকে নামলো। দুটো গাড়ি নিয়ে দামিনী মাসি এসেছে। আমি ছুটে নীচে নেমে গেলাম।
দামিনী মাসি আমাকে দেখে বললো। কিরে মন ভালো হয়েছে।
মাথা নীচু করে রইলাম।
কারা এসেছে।
দামিনী মাসিকে বললাম।
চল চল তোর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করি।
আমি দামিনী মাসিকে নিয়ে ওপরে উঠে এলাম। ঘরে ঢুকেই দামিনী মাসির গলাটা জড়িয়ে ধরে বললাম, দেবা এখুনি তোদের যার গল্প করছিলাম, আমার মা বলতে পারিস মাসি বলতে পারিস যেটা খুশি।
কবিতা আমাদের দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে।
ওরা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দামিনী মাসির দিকে তাকিয়ে রইলো।
দামিনী মাসি সকালের সাজেই সেজে এসেছে। কাপরটা খালি বদলে ফেলেছে। এখনও একটা তাঁতের শাড়ি পরেছে। সেই আটপৌড়ে ঢঙে। দামিনী মাসিকে কেউ এখন দেখলে বলতে পারবেনা দামিনী মাসি ওই এলাকায় দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর কাটিয়েছে।
দামিনী মাসি মিটি মিটি হাসছে। অনি ওরা আমাকে ঠিক বুঝতে পারছেনা।
আমি মাসির গালে গাল ঘোসলাম।



টিনা স্থানুর মতো উঠে এসে দামিনী মাসির পায়ে হাত দিয়ে ঠক করে একটা প্রণাম করলো। ওর দেখা দেখি সবাই একে একে এসে দামিনী মাসিকে প্রণাম করলো। দামিনী মাসি কোনো বাধা দিলোনা। ওদের প্রণাম শেষ হতেই কবিতা দেবাদের সকলকে প্রণাম করতে শুরু করলো। অদিতি কবিতার হাত ধরে বললো না।
কেনো গো আমি নষ্ট মেয়ে বলে।
দামিনী মাসির চোখের চেহারা বদলে গেলো। কবিতার দিকে তাকাতেই কবিতা মুখ নীচু করলো।
কতদিন শেখাবো।
ভুল হয়ে গেছে মাসি।
আর জীবনে যেনো না হয়।
হবেনা মাসি।
আমি বুঝলাম পরিবেশটা একটু ভারি হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম। একটা জিনিষ খাবে মাসি।
কিরে।
টিনা থালাতে আছে।
আছে।
অদিতি ছুটে গিয়ে নিয়ে এলো।
মাসিকে বললাম হাঁ করো।
কি বলনা।
আগে হাঁ করো।
মাসি হাঁ করলো আমি মাসির মুখে একটা ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম কামড়াও। মাসি কামড়দিলো। বাকিটা আমি নিয়ে খেলাম।
বলোতো কি ?
লেট্টি।
হ্যাঁ।
কে বানালোরে।
ছগনলাল।
অনেকদিন পর খেলাম।
টিনা একটা নিয়ে এসে কবিতার হাতে দিয়েছে।
ছোটবাবু।

পেছন ফিরে তাকালাম। ছগনলাল আর একটা কাঁসার থালায় আরো কয়েকটা লেট্টি নিয়ে এসেছে। মাসিকে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। আবার হৈ হৈ করে খাওয়া শুরু হয়ে গেলো। খাওয়ার সাথে সাথে আমি সকলের সঙ্গে মাসির পরিচয় করিয়ে দিলাম।
ওরে বাবা এরাতো সব বড় বড় লোকরে। আমিতো এদের কাছে চুনোপুঁটি।
অনিদাতো আমাদের থেকেও বড়োলোক। টিনা অভিযোগের সুরে বললো।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
ওকে কিছু বলো।
দেখেছিস অনি।
আমি হাসছি।
কবিতা যানা মা ছগনলালকে একটু চায়ের কথা বল।
কবিতা নাচতে নাচতে চলে গেলো।
এই মেয়েটা কবিতা! দেবাশীষ বললো।
তুই এতোক্ষণ যার গল্প শোনাচ্ছিলি!
হ্যাঁ।
মাসি মাসি মুচকি মুচকি হাসছে।
ওরে ও আমাদের প্রণাম করল কিরে ওকে বরং আমরা সকলে প্রণাম করবো।
কেনো। মাসি বললো।
জানোনা মাসি ওর কথা শুনতে শুনতে আমাদের কান গরম হয়ে গেছিল। ওর এতো তেজ। দেখে বোঝাই যায়না।
আমরা পরিবেশের দাসত্ব করি দেবাশীষ।
দেবাশীষ মাসির মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
কি বললে মাসি আর একবার বলো।
মাসি হাসতে হাসতে আবার বললো।
দারুন কথা বললে। আমরা সব বেচুবাবু বুঝলে মাসি। সারাদিন খালি হিসেব করি। তোমার কাছে গিয়ে কয়েকদিন ক্লাস করতে হবে। কিছু ভালো ভালো কথা শেখা যাবে।
কিরে অনি তোর বন্ধুরা কি বলে।
আমি হাসছি।
আস্তে আস্তে আড্ডাটা বেশ জমে উঠলো। চা এলো। হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো সব হলো। দেবাশীষ কবিতার পেছনে খানিকটা লাগলো। কবিতা হাসছে।
জানো মাসি অনি বলছিলো ও কবিতার বিয়ে দিয়েছে। বিয়ে কারা দেয় ?
নারে দেবাশীষ ও শুধু কবিতার বিয়ে দেয়নি। কন্যাদানও করেছিলো। সাক্ষী আমি।
বলো কি।
হ্যাঁ।
সত্যি ওর মানুষ জন্মটা সার্থক।
সে বলতে পারবোনা। তবে ওকে প্রথম দিন দেখে আমারও খুব ভালো লেগেছিলো। ওর চোখ দুটো ভীষণ লোভনীয়। কাঁচা বয়স হলে ওকে ছাড়তামনা।
বারে তুমি সব নিলে আমরা কি করবো। টিনা বললো।
ওরে দুষ্টু মেয়ে। তোর পেটে পেটে এতো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
তোরা এক কাজ করনা।
বলো।
অনিরতো মন মেজাজটা ভালো নয়। ওখানে আর একটা পরে আছে। তারও মনের অবস্থা আমি জানি। তোরা কয়েকদিন অনির সঙ্গে ওর দেশের বাড়িতে ঘুরে আয়না। ওরও মনটা ভালো লাগবে। যেটা ওখানে পরে পরে গুমড়োচ্ছে ওর মনটা একটু হাল্কা হবে।
খারাপ বলোনি। কিরে নির্মাল্য তোর অফিসের হাওলা কি।
আমার কোনো অসুবিধে নেই। প্রোগ্রাম হলে এক পায়ে খাঁড়া।
টিনা।
অনিদার দেশের বাড়ি! গল্প শুনেছি। ইনভাইট করুক আগে।
আমি হাসলাম।
ঠিক বলেছে টিনা। দেবাশীষ আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
মাসি বললে যাবোনা অনিদা নিজে মুখে একবার অন্ততঃ বলুক। মিলি বললো।
কতোবার খেঁচাবার পর পেট থেকে কথা বেরোলো বলোতো। অদিতি বললো।
তোরা অনির ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর। দেবাশীষ বললো।
সব সময় এ্যাডভান্টেজ অনিদা তা হবেনা। টিনা বললো।
আমি হাসছি। দামিনী মাসি হাসছে।
আচ্ছা অনির হয়ে আমিতো তোদের নেমন্তন্ন করছি।
ঠিক আছে যাওয়া হবে।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো। কাল কখন যাবি।
তোরা বল।
দশটার আগে হবেনা। একবার অফিসে ঢুঁ মারতে হবে সকলকে।
এই যা ভুলে গেছি। কবিতা মিষ্টির বাক্স গাড়িতে আছেনা ? মাসি বললো।
হ্যাঁ।
তুইও একটা গাঢ়ল। মনেকরাবি তো। যা ছুটে নিয়ে আয়।
কবিতা ছুটে চলে গেলো।
তাহলে কখন যাবি বল।
টিনা বললো।
কিরে অনি বল।
তোরা কাজ সেরে চলে আয়না। এগারোটা নাগাদ বেরোবো।
পাক্কা। তুই কোথায় থাকবি।
আমি এইখানেই থাকবো।
কিরে ওখানে বড় গাড়ি যাবেতো।

কি নিয়ে যাবি।
স্কোরপিও। নির্মাল্যেরটা।
কে ড্রইভ করবে।
ড্রাইভারের অভাব তুই ছাড়া সকলে ড্রাইভ করতে পারে।
বাইরুটে চালাতে হবে।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
কবিতা মিষ্টি নিয়ে এলো। হৈ হৈ করে সকলে মিষ্টি খেলাম। দেবাশীষ বলে বসলো মাসি মিষ্টিটা কোথাকার।
কেনোরে।
সাউথে এরকম মিষ্টি পাওয়া যায়না।
নকুর সন্দেশ। দেড়শো বছরের দোকান। চারপুরুষ ধরে ব্যাবসা চালাচ্ছে।
নির্মাল্য নোট করে রাখ নামটা একদিন পেট ভরে খালি মিষ্টি খাবো।
মাসি হাসছে।
তুমি হাসছো কেনো।
তোর কথা শুনে।
অনি এবার উঠি। কাল ঠিক সাড়েদশটার মধ্যে চলে আসবো।
কবে ফিরবে জিজ্ঞাসা করেছো। অদিতি বললো।
এটা ঠিক বলেছো। কবেরে।
রবিবার ফেরার কথা।
সোমবার অফিসে জয়েন করতে পারবোতো।
রবিবার বিকেলের দিকে করতে পারিস।
দেখলে দেখলে অদিতি কিরকম ছুঁয়ে দিলো। তোকে এমন দেবোনা। দেবাশীষ ঘুসি তুললো।
ওরা চলে গেলো। আমি ওদের নীচ পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। নীচে নামার সময় টিনা আমার হাতটা একবার ছুঁলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। টিনার চোখ অনেক কথা বলতে চায়। চোখের ইশারায় বললাম রাতে ফোন কোরো।
আমি ওপরে এলাম।
কিরে মন ঠিক হলো।
ঠিক হতে সময় লাগবে মাসি। ওদের সামনে তোমার সঙ্গে কথা বলাই হলোনা।
মাসি হাসছে।
জানো মাসি এই পাঁচজন আমার কাগজটাকে বাঁচিয়ে দিলো।
কি করে।
এ্যাড জোগাড় করে দিয়ে।
টিনা মেয়েটাকে তোকে খুব ভালবাসে।
কি করে বুঝলে।
ওর চোখমুখ বলছে।
আমি জানতাম না। মালিক হওয়ার পর দেবার কাচে যেদিন প্রথম যাই, সেদিন জানতে পারলাম।
তারমানে।
কলেজ লাইফে মিত্রা ছাড়া আমি কোনো মেয়ের সঙ্গে সেইভাবে মিশতাম না। অদিতি মিলি টিনা এরা আমার জুনিয়ার। একমাত্র দেবাশীষ আমার সঙ্গে পড়তো। অদিতি আমাকে চিঠি দিয়েছিলো। ওকে একদিন বোঝালাম। তারপর দেবাশীষের পাল্লায় পোরলো, বিয়ে হলো।
টিনা।
টিনার ভালোবাসাটা অন্তরমুখী আমি কোনোদিন বুঝিনি।
ভারি অদ্ভূত।
হ্যাঁ। টিনা মুখে শিকারও করেছে। দেখেছো কবিতা কেমন আমার কথা গিলছে।
তোমাকে আমিও ভালোবেসেছিলাম।
সেই জন্য থাপ্পর খেয়েছিলি।
আমি এখন বড় হয়েগেছি মাসির সামনে আর বলবেনা।
আমি কবিতার কানটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। কবিতা উঃ করে উঠলো।
এদেরও অনেক কষ্ট বুঝলে মাসি। যখনই যে আমাকে একা পায় তখন মনের কথা খুলে বলে।
সত্যি।
হ্যাঁগো তোমায় একদিন বোলবো। আমার অনেক জ্বালা বুঝলে।
দেখছি তাই।
মাসি ওদিককার খবর বলো।
কবিতা নিচেগিয়ে অনির খাবার রেডি কর ওকে খাইয়ে যাবো।
গ্যাস ঠিক মতো জ্বালাতে পারবিতো।
পারবো।
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
আমাকে ওই লোকটাকে দেখা।
যে সিডিটা পাঠালে ওটা দেখবে।
না। নিজের ছেলের বউ-এর ওই অবস্থা দেখতে পারবোনা।
আমি স্টিল ছবিগুলো আলমাড়ী থেকে বার করলাম। মাসির হাতে খামটা দিলাম।
তুই ওদের এইসব বলেছিস নাকি।
না। খালি ডাক্তারের ব্যাপারটা বলেছি।
ডাক্তারের ব্যাপার ওরা জানে।
আগের থেকেই কিছু কিছু জানে। ডাক্তারের ভাগ্না সুনিত, ওইতো বাজারে চাউর কোরলো। আমাদের অফিসের কয়েকজন গাঢ়ল আছে। কাকে কি বলবো বলোতো।
মেয়েটার কথা ভাবলে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
তুমি বিশ্বাস করো মাসি, খালি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আমি এই কাজ করছি।
পাগল। আমাকে তুই কি বলবি আমি সব জানি।

মাসি ছবিগুলো ভালো করে দেখলো। চোখ মুখের চেহারা কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে।
কিগো তুমি ভদ্রলোককে চেনো মনে হচ্ছে।
হ্যাঁ। মাসির গলার স্বর বদলে গেলো।
কোথায় দেখলে।
তোকে জানতে হবেনা।
আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে।
পারবিনা।
তুমি চাইলে পারবোনা। ইসলামভাই-এর সঙ্গে কথা বোলেছো।
তোর কথা ঠিক।
কি ঠিক।
ও কাজ শুরু করে দিয়েছে।
মাসির দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
তুমি বললেনা চিনলে কি করে।
পরে বোলবো।
কাজ শেষ হবার পর।
মাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠিক আছে তোমাকে বিরক্ত করবোনা।
এবার খেতে চল। তোকে খাইয়ে আমি বাড়ি যাবো।
চলো।
আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে মাসির সঙ্গে নিচে চলে এলাম। কবিতা টিভি চালিয়ে দেখছে।
কিরে খাবার সব গরম করেছিস।
হ্যাঁ।
নিয়ে আয়।
কবিতা একসঙ্গে তিনজনের জন্য।
জানি। নাহলে তুমি যে খাবেনা মাসি আগে বলেছে।
কি এনেছো। মাসির দিকে তকিয়ে বললাম।
দেখনা কি এনেছি।
ডাক্তার ঠিক আছে।
তোকে বলেছিনা তুই তোর কাজ কর। তোকে এইসব ব্যাপার নিয়ে আজ থেকে ভাবতে হবেনা।
আমি না ভাবলে তুমি ভাববে। এইতো।
হ্যাঁ।
তোর পথের কাঁটা গুলোকে সব সরিয়ে দেবো।
আমি এইভাবে চাইনা।
তুই যেইভাবে চাইবি সেইভাবে হবে।
তাহলে ঠিক আছে।
মাসি তড়কা তন্দুরি রুটি আর চিকেন নিয়ে এসেছে।
তিনটে প্লেটে কবিতা নিয়ে এলো।
খাওয়া শুরু করলাম। আমি মাঝখানে কবিতা মাসি আমার দু’পাশে।
তোরা কবে ফিরছিস।
রবিবার।
কখন আসবি।
বিকেলের দিকে।
মিত্রার শরীর একন কেমন।
খুব একটা ভালো নয়। ডাক্তারদাদা তোমায় সকালে কিছু বলেনি।
একটু একটু বলেছে।
এখন কনটিনুয়াস ট্রিটমেন্টে থাকতে হবে। মনের ওপর কোনো স্ট্রেস দেওয়া চলবেনা।
কি ভাবছিস।
ওর জীবনে একটাই পথের কাঁটা আছে।
কোনটা।
টোডি।
তোকে বলেছিনা ওটাকে নিয়ে ভাববি না।
আমি কি ভাবছি। তুমি জিজ্ঞাসা করলে বললাম।
মেয়েটাক খুব দেখতে ইচ্ছে করে।
দেখাবো। একটু সময় দাও।
ভজু দিদিমনি বলতে পাগল।
হ্যাঁ। আমি না থাকলে ভজুর সঙ্গে খুনসুটি করে। অনেকটা বাচ্চা মেয়ের মতো হয়ে গেছে। জেদ বেরে গেছে।
হবে। কম ঝক্কি যায়নি শরীরের ওপর দিয়ে।
সাগির অবতারের খবর কি।
তোমায় মাসি বলেছেনা ওইসব নিয়ে ভাববে না। কবিতা ধমকে উঠলো।
তুই ধমকাচ্ছিস কেনো।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
তোমায় একটা কথা বলবো মাসি।
বল।
রাগ করবেনা।
না।
আমি ওখানে একটা একটা এনজিও ফর্ম করবো। ওই পাড়ার মেয়েদের নিয়ে। ওরাতো জীবনে কিছু পায়নি। অন্ততঃ পক্ষে ছেলেমেয়েগুলো হাতের কাজ শিখে কিছু করে কম্মে খেতে পারবে।
কারা থাকবে।
তুমি ইসলামভাই অদিতি টিনা মিলি মিত্রা। বেশির ভাগ মেয়েরা থাকবে।
পারবি।
আমার মনের ইচ্ছা। ইসলামভাইকে একটা আওয়াজ দিয়েছিলাম।
কি বলেছে।
হেসেছে। বলেছে তুই ভীষণ ঝানু।
আমিও তাই বলছি।
কেনো।
আমাদের ভালো করতে চাইছিস।
অন্যায় করছি।
না। সমাজ সেটা মেনে নেবেনা।

আমি কিন্তু কখনো কারুর স্বাধীনতায় হাত দেবোনা। আমি তিনটে বিষয় নিয়ে কাজ করবো।
বল।
শিক্ষা স্বাস্থ্য পুনর্বাসন।
সেটা কি রকম।
যারা নেক্সট জেনারেসনে প্রফেসনে আসতে চাইবেনা তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করবো। তোমার সময়কার কজন তোমার মতো হতে পেরেছে। তাদের জন্য কিছু করবো।
এতে ব্যবসার খতি হবেনা।
না।
তোমাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার জন্য ফ্রি ক্লিনিক তৈরি করবো।
কারা যাবে। তারা গিয়ে আবার এই রকম ডাক্তার হবেনাতো।
সামন্ত ডাক্তারকে বলবো ভেবেছি। তুমিতো ডাক্তারদাদাকে দেখেছো।
লোকটা ভালো।
মিত্রার নার্সিংহোমের দায়িত্ব ডাক্তারদাদার হাতে দেবো ভাবছি। মিত্রা আর বড়মাকে দিয়ে বলাবো।
খুব ভালো হবে।
একটা স্কুল তৈরি করবো ওখানে।
টাকা পাবি কোথায়।
ভূতে দেবে।
আবার ফাজলামো করে।
দেবারা জোগাড় করতে পারবে।
ওখানে যে বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করছিস।
তোমাদের এখানে যারা আর কাজ করতে পারবেনা তাদের ওখানে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগাবো।
ইসলামের কি করবি।
ইসলামভাই থাকবে তবে বলেছি রতনকে আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দিতে। ইসলামভাই অনেকের টার্গেট হয়ে গেছে।
হ্যাঁ। ঠিক খবর পেয়েছিস।
আমার ওই জায়গাটা এমন তুমি ঢুকতে পারবে কিন্তু কাজ করে বেরোতে পারবেনা।
আমাকে একবার নিয়ে যাবি।
কালকে চলো।
এদিকের কাজ করবে কে।
ঠিক আছে। আমি পনেরোদিন পর আবার যাবো তখন চলো।
যাবো। কেউ যদি কিছু মনে করে।
আমারতো পরিবার নেই কে কি মনে করবে।
তোর বন্ধুরা।
তুমি দেখলে বলতে পারবে তারা কেমন।
ঠিক আছে।
এই রবিবারের পরের রবিবার এই বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে আছে।
তোর বিয়ে উপলক্ষে।
তুমি যা বলবে। তবে অনিমেষদা নেমন্তন্ন খাবে বলেছে।
বাবা এর মধ্যে আমি নেই।
ওই বিষয়টা আমার ওপর ছেড়ে দাও।
আমাকে বললি কেনো তাহলে।
বাড়ি-ঘর গুলো রং করবো এই চার পাঁচদিন খালি ফেলে রাখবো কেনো। তোমারতো অনেক পরিচিত লোক আছে তাদেরদিয়ে কাজটা শুরু করে দাও।
মাসি আমার বড়কে বলবো।
ওকি এই কাজ করে।
তাহলে কি করে। তুমি জানোনা।
তোর বিয়ের সময় ওতো লেদে কাজ করতো।
সে সব গেছে। এখন কিসব কন্টাকটরি করে।
ও মাসি কতা বলছোনা কেনো।
ও পারবেরে কবিতা।
তুমি বললে পারবে।
কালকে একবার ডাকিস।
আচ্ছা।
অনেক রাত হলো এবার ওঠো। তোমাদের এতটা যেতে হবে।
শোন দুটো ছেলে আজ থাকবে। কালকে থেকে কাজ শুরু হলে আর চিন্তা নেই।
ওদের শোবার ব্যবস্থা করতে হবেতো।
তুই দেখেছিস ওরা সকালে ছিলো।
এমা ওরা কি খাবে।
ওদের খাবার গাড়িতে আছে তোকে চিন্তা করতে হেবনা।
ঠিক আছে।
আমি কাল তোর বেরোবার আগে আসবো।
আচ্ছা।

মাসি কবিতা চলে গেলো। একটা গাড়ি রেখে গেলো। দুটো ছেলে রয়েছে। তার মধ্যে একটাকে আমি চিনি। সকাল বেলা একবার রতন ওকে নেপলা বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলো। আমি ওদের বললাম ভেতরে শোবে চল।
না অনিদা আমরা গাড়িতেই থাকবো।
কেনো।
রতনদার হুকুম।
আমি কথা বারালাম না।
ছগনলালকে বললাম। তুমি শুয়ে পরো। নিচের সব তালা লাগিয়ে দাও।
আচ্ছা ছোটবাবু।
আমি ওপরে চলে এলাম। দরজা জানলা বন্ধ করে দিলাম। একটু একটু ঠান্ডা পরেছে। বাথরুমে গেলাম। মুখ হাত পায়ে ভালো করে জল দিয়ে এসে বিছানায় বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম।
মাসি মনে হয় আমাকে আর কিছুই বলবেনা। এবার থেকে যা কাজ করার ওরাই করবে। আমার সব সোর্স এরা। মাসি মনে হয় এই বিষয়ে আমার সব সোর্সকে অফ করে দেবে। আজকে মাসির সঙ্গে কথোপকথনে তাইই বুঝলাম। একটাই কথা তোকে ভাবতে হবেনা। তুই তোর কাজ কর।
না আর ভাবতে ভালো লাগছেনা। সকাল থেকে নানা ঝামেলা গেলো। কাগজপত্র গুলো ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে নিলাম। আলমাড়িতে তুলে রাখলাম। দাদারা কখন পৌঁছলো জানতে পারলামনা। ওরাও আমাকে কেউ ফোন করেনি। হয়তো বিরক্ত করতে চায়নি।
কালকের কাজটা ঠিক ঠাক ভাবে হয়ে গেলে বাঁচি। ওইদিকের বিষয় নিয়ে আবার চিন্তা করতে হবে। মিত্রা কি করছে ? ভাবতেই মনটা কেমন উসখুশ করে উঠলো। একবার ভাবলাম ফোন করি। তারপর ভাবলাম না থাক ও নিজে ফোন করবে বলেছে। ফোনটা কাছে টেনে নিলাম। দেখলাম মিস কল। অপারেট করতে দেখলাম টিনার নম্বর। তারমানে টিনা ফোন করেছিলো! কল রেজিস্টারে গিয়ে দেখলাম টিনা আধঘন্টা আগে ফোন করেছিলো। আমি তখন নীচে ছিলাম।
টিনাকে ডায়াল করলাম।
হ্যালো। টিনার গলা। একটু ভারি ভারি।
ঘুমিয়ে পরেছিলে নাকি।
নাগো অনিদা। ঘুম আসছেনা।
শরীর খারাপ।
না।
তাহলে।
জানিনা। তোমার বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর থেকে কেমন যেন লাগছে। বার বার তোমার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
আমার জন্য ভেবোনা। আমি ঠিক আছি।
একটু আগে মিলির সঙ্গে কথা হচ্ছিল।
কি বলছে মিলি।
ওরও আমার মতো দশা।
তোমরা আমাকে নিয়ে এতো ভেবোনা।
ভাবতে চাইনা। তিনমাস আগে কি তোমাকে নিয়ে ভাবতাম।
তাহলে।
কি করে বোঝাবো তোমাকে। কই তিন মাস আগে এমন ভাবে মনে আসতোনা। এখন আসে।
তোমরা আমাকে ভীষণ ভালোবাসো তাই।
টিনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস পরলো। আমি শুনতে পেলাম।
মিত্রাদি ফোন করেছিলো।
না।
তুমি করোনি।
না।
কেনো।
সবাইকে জানিয়ে লাভ।
সত্যি তুমি না।
হ্যাঁগো টিনা নিজের টেনসন নিজের কাছে রাখা ভালো।
মাসি।
মাসি এই একটু আগে গেলো।
এতোরাতে।
হ্যাঁ। আমাকে খাইয়ে দিয়ে গেলো।

সত্যি তোমার মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছিলাম। আজ দেখলাম। স্বপ্নের দেখা আর বাস্তবের দেখার সঙ্গে আকাশ পাতাল তফাৎ।
তোমার সঙ্গে সবাই কি একমত।
ওরাতো বললো অনিদা আমাদের গুল মেরেছে।
হাসলাম।
জানো অনিদা ওনার একটা কথা আমার ভীষণ ভালো লাগলো। যদিও দেবাশীষ কথাটা ওনাকে রিপিট করতে বললো।
কোনটা বলোতো।
ওইযে, কবিতা যখন বললো, নষ্ট মেয়ে।
হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পরেছে।
তখন বুঝলাম ভদ্রমহিলার গভীরতা কতটা।
মাসি বিশেষ পড়াশুনো করেনি।
তাই।
হ্যাঁ। ষোলো বছর বয়সে পেটের জ্বালায় ওই পাড়ায় আসে। এখন মাসির বয়স সত্তরের কাছাকাছি।
দেখে বোঝা যায়না।
ছোটবেলা থেকে শরীরটার যত্ন নিতে শিখেছে যে। না হলে খরিদ্দার আসবেনা।
কি অদ্ভূত লাইফ।
তুমি শুনেছো। চোখে দেখোনি। না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেনা।
আমাকে একবার তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে।
তোমাদের নিয়ে একটা কাজ করার ইচ্ছে আছে। তখন নিয়ে যাবো।
আমি সব সময় রাজি।
দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। খুব সেন্সেটিভ জায়গা।
কথা দিচ্ছি পারবো।
তার আগে ওদের সম্বন্ধে একটু জানতে হবে।
কতটুকু জানতে পেরেছি বলো ওদের সম্বন্ধে। কাগজে কলমে পরে যা জেনেছি। তুমি ওখানে আঠারো মাস কাটিয়েছো। এখনো রেগুলার তোমার সঙ্গে ওদের যোগাযোগ।
বলতে পারো ওই পাড়াটা আমার ঘরবাড়ি। কত লাইফ আছে ওখানে না গেলে বুঝতে পারবেনা।
আচ্ছা অনিদা তোমার অস্বস্তি হয়না।
তুমি যখন নতুন কাজে জয়েন করেছিলে তোমার কোনো অস্বস্তি ছিলো ?
হ্যাঁ।
তারপর তুমি আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলে।
হ্যাঁ।
তুমি এখন তোমার অফিসের একটা অঙ্গ।
হ্যাঁ।
ধরেনাও ওরা যা করছে ওটাও ওদের একটা অফিস। আমি সেখানে গেছিলাম। প্রথমে ওই অফিসে ঢুকতে একটু অস্বস্তি হয়েছিলো। তারপর মানিয়ে নিলাম। আমি এখন ওই অফিসের একটা অঙ্গ।
দারুন বললেতো।
এটা ফ্যাক্ট। একে তুমি অমান্য করবে কি করে। তুমি যেমন জীবিকার জন্য কাজ করো, ওরাও তেমন জীবিকার জন্য দেহ বেচে। তুমি যেমন তোমার পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারো। ওরাও ওদের পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারে।
দারুন এক্সাইটিং।
সেক্সটাকে ওদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়।
তারমানে।
জানো টিনা আমি অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। বলতে পারো এটা আমার একেবারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
কি।
ওখানে যে মেয়েগুলো থাকে ওদের দেহটা সর্বধর্ম সমন্বয়ে তৈরি।
বুঝতে পারলাম না। আবার বলো।
ধরো তোমার কাছে যারা কাজের জন্য আসে তাদের তুমি কখনো জিজ্ঞাসা করো তারা কোন ধর্মের কোন জাতের।
একবারে না।
সেখানে তোমার উদ্দেশ্য থাকে সে তোমার ক্লায়েন্ট তাকে ঠিক ভাবে এনটারটেন করা।
একবারে ঠিক।
ওদের কাছেও যে পুরুষেরা আসে তাদের ওরা নাগর বলে।
কি বললে।
নাগর। আর যাদের বাঁধা ধরা পুরুষ থাকে তারা বাবু।
ভেরি ইনটারেস্টিং।
ওদের নাগরদের কোনো ধর্মনেই। নাগরকে সেটিসফায়েড করা ওদের উদ্দেশ্য। ওরা সেটিসফায়েড করে। তার বিনিময়ে পয়সা পায়।
হাউ স্ট্রেঞ্জ। আচ্ছা ওদের তৃপ্তি অতৃপ্তি বলে কিছু নেই।
তুমিতো আমাকে বলেছিলে টিনা অনিদা তোমাকে এই কাজটা পেতে গেলে এটা দিতে হবে। গিভ এন্ড টেক পলিসি। সেখানে তৃপ্তি অতৃপ্তি বলে কিছু আছে। ওটা ভেক ব্যাপার।
ঠিক।

জানো টিনা এমনও বহুদিন গেছে। নাগরের অত্যাচারের তাড়নায় মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পরেছে। মাসি আমাকে মাঝরাতে এসে ডেকে নিয়ে গেছে। সারারাত ধরে তার ক্ষতের সেবা শুশ্রুষা করেছি। কখনো মনের মধ্যে কোনো সেক্স জাগেনি।
কি বলছো তুমি।
এক বর্ণও তোমায় বানিয়ে বানিয়ে বলছিনা। বিশ্বাস করো।
টিনা চুপচাপ।
এই মেয়ে গুলো আমাকে ভাইফোঁটা দিতো। রাখি পরাতো।
সত্যি অনিদা তুমি অনেক ভাগ্যবান।
সেটা বলতে পারবোনা। তবে ওদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলাম।
সেই জন্য মাসি তোমায় এতো ভালোবাসে।
তারও অনেক কারণ আছে।
বলো।
না এখন থাক। বলতে গেলে ভোর হয়ে যাবে।
হোক না।
না।
বাবুদের ব্যাপারটা বলো।
বাবুদের বাঁধা মেয়েছেলে থাকে। তারা অন্য কোনো মেয়ের ঘরে যায়না। মেয়েটিকে তারা মাসোহারা পয়সা দেয়। মেয়েটিও বাবুর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় রেখে দেয়।
বাকি সময়।
অন্য নাগরকে সময় দিয়ে পয়সা ইনকাম করে। ওটা উপরি বলতে পারো।
কি বলছো তুমি।
ঠিক বলছি এবার ঘুমোও। কাল অনেকটা জার্নি করতে হবে।
তোমার সঙ্গে কথা বললে কতোকিছু জানা যায়। বিশ্বাস করো তোমার মতো করে এতোদিন এদের বিষয় নিয়ে ভাবিনি।
হ্যাঁ। খালি চোখে ওদের আমরা সেক্স ওয়ার্কার বলি, গণিকা বলি, বেশ্যা বলি। একটু ভেবে দেখো। যারা বিবাহিত জীবন যাপন করছে। সেই সব মেয়েরা কি সেক্স ওয়ার্কার নয়।
কি পাগলের মতো বলছো তুমি।
আমি তোমাকে ভাবতে বলেছি।
পাগলামো করোনা। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks