দেখি নাই ফিরে - (Part-49)

আমি দামিনী মাসির কাঁধে মুখ রেখে চোখ বন্ধ করলাম।
তোর দামিনী মাসি এখনো মরেনি। মাসি মায়ের সমান। আমার কাছে জীবনের আঠারোমাস কাটিয়েছিস। বল আমাকে সব কথা।
আমি দামিনী মাসির কাঁধ থেকে মুখ তুলছিনা। বুঝতে পারছি চোখ দিয়ে ঝড় ঝড় করে জল গড়িয়ে পরছে।
রতন।
দামিনী মাসির গলার শব্দে সারাটা বাড়ি কেঁপে উঠলো। ওপর থেকে রতন যাই বলে ছুটে চলে এলো।
ওপরের ঘরটা খালি কর। আমি অনির সঙ্গে একা কথা বোলবো। ডাক্তারকে আমার গাড়িতে তোল। কবিতা।
হ্যাঁ মাসি।
যাঁরা এসেছেন দাদাদের সঙ্গে হাতে হাতে কাজ করে চা জলের ব্যবস্থা কর। আবিদ।
ওপরে আছে। রতন বললো।
কাউকে দিয়ে মিষ্টি আনা। আজকের শুভ দিনে সবাইকে মিষ্টি মুখ করা।
আচ্ছা মাসি।
আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন। চল আমার সঙ্গে তোর ঘরে।
মাসির সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে ওঠার সময় সবার দিকে তাকালাম। ওরা কেমন যেনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। দাদার চোখ দুটো ছল ছল করছে। সামন্ত ডাক্তার চোখ থেকে চশমা খুলে আঙুল দিয়ে মুছলেন। ওপর তলার সিঁড়ির মুখে আসতেই দেখলাম রতন আবিদ ডাক্তারকে কুত্তার মতো কলার ধরে টানতে টানতে নিচে নামাচ্ছে। আমরা ওপরে গেলাম।
তোর ঘরটা খুব সুন্দর। ভজু কোথায় শোয়রে।
আমি আঙুল তুলে জায়গাটা দেখালাম। আমি না থাকলে আমার ঘরে। গলাটা ধরে এলো।
ঠিক জায়গায় শোয়।
এখন শীত পরেছে বলে বড়মা ওকে নিচের ঘরে থাকতে বলেছে।
ও।
আমি দামিনী মাসিকে নিয়ে খাটে বসলাম।
তোর ফোনটা থেকে একবার ইসলামকে ফোন কর।
ভয়েজ অন করে দিই।
দে।
আমি ডায়াল করলাম। রিং বাজতেই ইসলামভাই কথা বলে উঠলো।
হ্যাঁ বল অনি। ইসলামভাই-এর গলাটা ধরা ধরা মনে হলো।
আমি দামিনী।
বলো মাসি।
তুই সব জানিস।
জানি। এখনকার ঘটনা সব শুনলাম। এখুনি যেতে ইচ্ছে করছে। খালি অনির কথামতো এখানে পরে রয়েছি।
ও যা বলছে শুনে যা।
শুনছিতো।
হ্যাঁ শুনবি। আর আজ থেকে তোকে অনির বিষয়ে মাথা ঘামাতে হবেনা। আমি দায়িত্ব নিলাম। ও আমার ছেলে এটা মনে রাখিস। আমার ছেলের খতি করে কেউ আমার হাত থেকে রেহাই পাবেনা।
আমার জন্য কিছুটা রেখো।
ভেবে দেখবো। এখন রাখছি।
অনি কোথায়।
আমার সামনে বসে আছে।
একটু কথা বলবো।
এখন না। আমি ওর ঘরে বসে আছি। কথা বলছি। ওখানে যারা আছেন তাদের বলে দিবি কোনো চিন্তা করতে হবে না। দামিনী মরে যায়নি।
তোমার কথা সবাই শুনছে।
ঠিক আছে। এখন রাখ। আধঘন্টা বাদে অনির ফোনে ফোন করবি।
আচ্ছা।
কবিতা মিষ্টি জলের গ্লাস নিয়ে ঢুকলো।
সবাইকে দিয়েছিস।
হ্যাঁ।
দিয়ে কাজ সেরেছিস না খাইয়েছিস।
সবাই খেয়েছে। তুমি গিয়ে দেখো।
নিচে যা।
কবিতা ট্রেটা রেখে চলে গেলো।
নে মিষ্টি মুখে দিয়ে সব বল।
তুমি খাও।
খাচ্ছি।
আমি একটা মিষ্টি মুখে দিলাম। জল খেলাম। একে একে দামিনী মাসিকে সব খুলে বললাম। দামিনী মাসির চোখ মুখের চেহারা বদলে গেলো।
কাগজ গুলো তোর কাছে সব আছে।
আছে।
মিত্রার ছবিগুলো।
আমার কাছে। ভিডিও ওর বাড়িতে আছে।
স্বীকার করেছে।
হ্যাঁ।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা। ওটা উদ্ধারের দায়িত্ব আমার। তুই এখন কি করতে চাস।
কালকে ওখানে ওই ব্যাপার গুলো রেস্ট্রি আছে। দাদারা যাবে। আমাকে লেখাগুলো লিখে ফলতে হবে।
এখন ছাপিসনা।
আমি দামিনী মাসির দিকে তাকালাম।
আরো গল্প আছে মনে হচ্ছে। আমাকে একটু খোঁজ খবর নিতে দে।
তুমি বলো।
তুই দাদাদের সঙ্গে চলে যা।
সবাই চলে গেলে কাগজ চলবেনা। বুঝতে পারছোনা।
ঠিক আছে আমি দাদার সঙ্গে কথা বলবো।
বলো।
মন খারাপ করিসনা। কি করবি। মেয়াটার ভাগ্য আমি তুই লিখি নি। ওর ভাগ্যে যেটুকু ছিলো সে টুকু ঘটেছে। আর ঘটবেনা।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়ালাম।
ও আদৌ সিডিটা বাজারে ছেড়েছে কিনা কি করে জানবো।
সব জেনে নেবো।
কবিতা চা নিয়ে এলো।
খাটের ওপর রাখলো।
কবিতা দাদাদের একটু ডাক।
কবিতা নিচে চলে গেলো।



একটু পরে দাদা মল্লিকদা নিরঞ্জনদা সামন্ত ডাক্তার এলেন।
দাদা ঘরে ঢোকা মাত্র দামিনী মাসি দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। সামন্ত ডাক্তারকে প্রণাম করলো। নিরঞ্জনদা মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করলো।
আপনারা আমার থেকে অনেক ছোটো তাই প্রণাম করলাম না।
ঠিক আছে ঠিক আছে।
ডাক্তার বাবু আপনি আমাকে চিন্তে পারবেন না।
আপনার গল্প নিচে শুনলাম। আমিতো অবাক হয়ে যাচ্ছি।
আপনি আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলছেন।
কে ? ভজুর কথা বলছেন। বড়ো ভলোছেলে।
হ্যাঁ। তাছাড়াও আমি বহুবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছি।
আমি দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। এ দামিনী মাসি আমার পরিচিত নয়। একেবারে অপরিচিত।
অনি তুই বাইরে যা।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। সন্দীপ দাঁড়িয়েছিলো।
হিমাংশু কোথায়।
ম্যাডামকে এগিয়ে দিতে গেছেন।
সিগারেট আছে।
আছে।
একটা দিবি।
দেবো। চল ওই দিকটায় যাই।
বউকে ফোন করেছিলি।
করেছিলাম।
সব কথা বলার দরকার নেই।
কিছু কিছু বলেছি তাতেই রেগে টং। পারলে এখুনি এসে গলা টিপে দেয়।
ছেলে দুটোকে কোথায় পাঠিয়েছিস।
তোর কথা মতো কাজে পাঠিয়ে দিয়েছি।
অফিস সামলাচ্ছে কারা।
লোক আছে তোকে চিন্তা করতে হবে না।
সিগারেট ধরালাম।
ওই ঘর থেকে হাসাহাসির শব্দ শুনলাম।
বুঝলাম দামিনী মাসি বেশ জমিয়ে নিয়েছে। কবিতা সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওই ঘরে চলে গেলো। আবার কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এলো। রতন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তারকে কোন গাড়িতে রেখেছে বুঝতে পারলাম না। সব গাড়িরি কাঁচ তোলা। রতন কাকে যেনো ফোন করছে।
তুই কয়েকদিন কাগজটা টেনে দিতে পারবি।
তুই নিশ্চিন্তে থাক। এখন কাগজের যা পরিস্থিতি যাকে যা বলবো তাই করবে।
কেনো।
তোর সঙ্গে আমার রিলেসন।
ব্যাপারটা ভারি মজার তাইনা।
মজার মানে। সুনিতের মালগুলোও তোকে ধসে।
আমি দাদা মল্লিকদা নিশ্চিন্তে যেতে পারি।
যা।
আর পারছিনা।
জানি। তুই বলে তবু টানছিস। অন্য কেউ হলে পটকে যেতো।
আমি বললে ভুল হবে। আমার সঙ্গে আরো অনেকে আছে। দামিনীমাসী তার মধ্যে প্রথম। জানিস এই দামিনী মাসিকে নিয়ে একটা সম্পূর্ণ উপন্যাস লিখে ফেলা যায়।
তোর মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছি। আজ চাক্ষুষ দেখলাম।
কি বুঝলি।
তোর গল্পশুনে ওনার সম্বন্ধে একটা ছবি চোখের সামনে ছিল আজ সেটা একেবারে মিললোনা।
হাসলাম।
দাদা নিচে বলছিলেন ওনার সম্বন্ধে। শুনলাম। ডাক্তার সামন্ত খুব ইমপ্রেসড হয়ে গেলেন ওঁর কথা শুনতে শুনতে।
সন্দীপ সিগারেটে সুখ টান দিলো।
কি জানিস অনি আমরা বাইরে থেকে একটা মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি বিচার করে ফেলি। কিন্তু যখন ভেতরে ঢুকি তখন সাগর মহাসাগর। এপার ওপার দেখা যায়না।
ডাক্তারদাদাকে দেখেছিস।
দেখলাম। অতোবড়ো একজন ডাক্তার কি সিমপিল।
এরা কোনোদিন আমাদের সমাজে দাম পেলোনা। আর গান্ডুটাকে দেখ।

সন্দীপ সিগারেটটা আঙুলের ডগা দিয়ে বাগানে ছুঁড়ে ফেলেদিলো।
যতো ভাববি তত জালে জড়াবি। তার থেকে কাজ করে যাই কপালে যা লেখা আছে তা হবে।
কপালের নাম গোপাল।
সন্দীপ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
অনিদা চা।
পেছন ফিরে দেখলাম কবিতা।
চায়ের কাপটা ওর হাত থেকে নিলাম।
মুচকি মুচকি হাসছে।
হাসছিস কেনো।
তোমার হবে দাঁড়াও।
কেনো।
ওখানে সব তোমাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। আজ থেকে তোমার সমস্ত ব্যাপার দামিনী মাসি দেখবে।
সাগির অবতারের খবর কিরে।
তুমি বললেও ওরা বাঁচবেনা। দামিনী মাসিকে আমার থেকে তুমি ভালো করে চেনো।
জানি। খুব খারাপ লাগছে।
তুমি ভালো মানুষ তাই।
হাসলাম।
কবিতা চলে গেলো।
সন্দীপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কি পরিষ্কার ভাবে বলেদিলো মাইরি।
ওরা পথের কাঁটাকে কখনো জিইয়ে রাখেনা। বিশ্বাসঘাতককে প্রশ্রয় দেয় না।
ওর কথার সারমর্ম তাই বলে।
আমার ঘর থেকে সবাই হাসতে হাসতে বেরোলো। আমি ওদের দিকে তাকালাম।
এদিকে আয়।
দামিনী মাসি ডাকলো।
আমি এগিয়ে গেলাম। দাদারা কথা বলতে বলতে পাশ দিয়ে চলে গেলো। মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
সকাল থেকে কিছু খাসনি।
কেউই খাইনি।
স্নানকরে খেয়ে নে। দাদারা এখন চলে যাক। তুই কাল সকালে যাবি। আমি সন্ধ্যের সময় একবার আসবো। বাড়িতে থাকবি।
মাথা নীচু করে রইলাম।
দাদারা তোর সম্বন্ধে সব বেলেছে। অনেক অজানা কথা শুনলাম। আমাকে আগে বললে তোকে এতো কষ্ট পেতে হতোনা।
রতন বারান্দায় উঠে এলো।
ইসলামের ব্যাগটা এই ঘরে রেখে যা। দাদারা যাবার সময় নিয়ে যাবে। গলার টিউনটা সঙ্গে সঙ্গে চেঞ্জ হয়ে গেলো।
রতন ছুটে নিচে নেমে গেলো।
ইসলামভাইকে ফোন করেছো।
হ্যাঁ। তোর বউয়ের সঙ্গে কথা হলো। তুইতো দেখালিনা।
মাথা নীচু করে রইলাম।
অনেক কাজ এখন যাই। রাতে এসে গল্প করবো।
আমি দামিনী মাসিকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ওরা চলে গেলো। ডাক্তারকে কোনো গাড়িতেই দেখতে পেলামনা।
ফিরে এলাম। দাদা নিচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সন্দীপ গুছিয়ে নিয়ে নেমে এলো। স্ক্যানার প্রিন্টার তোর মেসিনের সঙ্গে লাগানো রয়েছে। কাগজ পত্র সব ছোটমার ঘরে। পারলে রাতে আসছি।
আয়।
সন্দীপ চলে গেলো। বুঝলাম দাদার সঙ্গে কথা হয়েগেছে। আশে পাশে সামন্ত ডাক্তারকে দেখতে পেলামনা।
যা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নে একসঙ্গে খাবো। অনেকটা পথ যেতে হবে।
আমি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে এলাম।
সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম। দাদা বেশ হাসি মস্করা করলো আমার সঙ্গে। আমি আজ প্রাণখুলে ওদের এই আড্ডায় যোগ দিতে পারলামনা। মাঝে মাঝে দামিনী মাসির কথা উঠে আসছে।

তুইতো ঢোকার সময় দেখিসনি। যেনো রাজরাণী। গট গট করে ওপরে উঠে এলো। রতনকে দিলো এক ধমক। রতন দেখেই নেতিয়ে গেলো। ওনার ধমক খেয়ে যেনো অজ্ঞান হয়ে যায়।
অনিকে খুব ভালবাসে। নিরঞ্জনদা বললো।
ভালবাসে মানে। গাঢ়ল। শুনলিনা বলে কিনা আমার ছেলের গায়ে হাত পরলে বেঁচে থাকা মুস্কিল।
ইসলাম মনে হয় ওনাকে খুব ভয়পায়। মল্লিকদা বললেন।
ফোন করলো যখন ইসলাম কিরকম ত ত করছিলো। কি দাপট বলতো।
আমি চুপচাপ একটা কথারও উত্তর দিচ্ছিনা। চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেলাম। বুকের মধ্যে কে যেনো পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। নিজের থেকেও বেশি খারাপ লাগছে মিত্রার জন্য। নিশ্চই রতন ওদের সব শুনিয়েছে। কি ভাবলো। ওর অনেক অজানা কথা ওরা আজ জানতে পেরেগেছে। ভাবছে হয়তো বুবুন কেনো এসব কথা বলতে গেলো। নিজের মাথার তখন ঠিক ছিলোনা। না বললেই পারতাম। সেই সময় মনে হচ্ছিলো যেনো ওকে ছিঁড়ে খেয়ে নিই।
কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস।
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম দাদা গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কাপরজামা পরে রেডি।
এমনি দাঁড়িয়ে আছি।
আমাদের সঙ্গে যাবি।
না। তোমরা যাও।
কেনো চলনা। সন্দীপ ঠিক গুছিয়ে নেবে বলেছে।
আমি কাল সকালে যাবো। তোমরা এখন বেরোচ্ছ।
হ্যাঁ।
আমি এগিয়ে এলাম।
মন খারাপ করছিস কেনো।
আমি দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
গাড়ি এসে গেছে।
হ্যাঁ। নিরঞ্জনের গাড়িতে যাচ্ছি।
পায়ে পায়ে দাদার সঙ্গে নিচে নেমে এলাম। দেখলাম সামন্ত ডাক্তার সঙ্গে আছে।
আমাকে দেখে একগাল হেসে বললো। তোমার গ্রামটা একটু ঘুরে আসি। এডিটার বললো না বলতে পারলামনা।
মুখ নীচু করে হাসলাম।
মল্লিকদা পিঠ চাপরে বললো তোকে শুকনো শুকনো দেখলে মনটা ভালো লাগে না।
না ঠিক হয়ে গেছি।
কাল কখন যাবি।
সকালে বেরোবো।
অফিসে যাবি নাকি।
না। সন্দীপকে বলেছি সামলে নে। প্রয়োজন হলে ফোন করিস।
আচ্ছা।
আমি সকলকে প্রণাম করলাম।
নিরঞ্জনদা বললো একেবারে রেস্ট্রি অফিসে যাবি না তারপরে যাবি।
বেরোবার সময় ফোন করবো।
আচ্ছা।
ইসলামভাই-এর ব্যাগটা নিয়েছো।
হ্যাঁ।
ব্যাঙ্কের কাজটা একেবারে সেরে নেবে।
ঠিক আছে।
ওরা বেরিয়ে গেলো।
এ বাড়িতে আমি এখন একা। ছগনলাল গেট বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে গেলো। আমি নিচের ঘরগুলো বন্ধ করে ওপরে উঠে এলাম। ছোটমার ঘরে ঢুকলাম। সব কাগজ-পত্র আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এলাম। ছবির খাম থেকে মিত্রার অর্ধউলঙ্গ ছবিগুলো আলাদা করে সরিয়ে রেখেছিলাম। সেই খামটা বার করলাম। আলমাড়ি খুলে সমস্ত ডকুমেন্টস ঢুকিয়ে রাখলাম। ল্যাপটপটা খাটের ওপর নিয়ে বসলাম।
খাম থেকে মিত্রার ছবিগুলো বারকরলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কলেজ লাইফে এই মেয়েটা কতো ইনোসেন্ট ছিলো। আর কি অবস্থার পরিপেক্ষিতে এই মেয়েটা এই রকম করতে বাধ্য হয়েছিলো। ছবিগুলো দেখতে দেখতে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। মিত্রার চোখ মুখ দেখে বোঝাযাচ্ছে অনিচ্ছা সত্বেও এসব করতে বাধ্য হয়েছিল। মানুষ কতটা নীচ হলে নিজের বউকে এই কাজে বাধ্য করতে পারে।
আমার মিত্রার মার কথাটা মনে পরছে। ভদ্রমহিলা কি একবারেই বুঝতে পারেন নি এই ভদ্রলোককে। না নিজের আত্মীয় বলে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেছিলেন। না মেয়ের প্রতি জেলাস। অনেক মাকে দেখেছি মেয়ের প্রতি জেলাস করতে। অনুভব করেছি। মিত্রা স্বভাবে একটু নরম প্রকৃতির ছিলো। কলেজ লাইফে ওর সঙ্গে মিশে যতটুকু বুঝেছিলাম।
আচ্ছা ওর বাবাই বা কি রকম ছিলো। তিনিকি মেয়ের ভালো বুঝতে পারেন নি। মিত্রা বলেছিলো ওর বাবা ওকে ভীষন ভালোবাসতেন। তাহলে উনিই বা কেন মেনে নিলেন। তাহলে কি মিত্রার মা সেইরকম ভদ্রমহিলা ছিলেন যে কারণে মিত্রার বাবা তাকে ভয় পেতেন। না মিত্রার বাবার কোনো দুর্বলতা ছিল যাতে বাবার প্রতি ওর মা রিভেঞ্জনিতে না পেরে তার মেয়ের প্রতি নিলেন।
ছবি গুলো দেখতে দেখতে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো। মিত্রা বড়মা ছোটমার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো তুই বড়মা ছোটমাকে বেরিয়ে যেতে বল। আমি বড়মা ছোটমাকে সব বলিনি। তাহলে এই কথাই কি মিত্রা বড়মা ছোটমার কাছে গোপন করেছিলো। করতেই পারে। আমি হলেও করতাম। মিত্রা কোনো অন্যায় করেনি।

আচ্ছা আমি এইসব নিয়ে এতো ভাবছি কেনো। আমার মনের মধ্যে কি মিত্রার প্রতি কি কোনো সন্দেহ জাগছে। মিত্রা আমাকে বার বার বলেছে তোর কাছে আমি কনফেস করবো। তারপর আবার বলেছে তুই নিজেই সব জানতে পেরে যাবি। আমাকে বলতে হবেনা। নিজের মুখেই টোডির কথা বলেছে। তাহলে এই ব্যক্তিই কি টোডি! আমাকে খোঁজ খবর নিতে হবে। দামিনী কি করে আগে দেখি। তারপর আমাকে খুঁজে বার করতে হবে। ইসলামভাইকে জানানো যাবেনা।
নিজেই নিজেকে মটিভেট করলাম। আগামী একমাসের মধ্যে এই কাজটা আমাকে শেষ করতে হবে। আমি কিছুটা কাজ এগিয়েছি। এখনো অনেক বাকি আছে। মিত্রার কাছ থেকে আগে জানতে হবে এই ব্যক্তিই সেই টোডি কিনা। যদি হয় তাহলে ওর কপালে অনেক দুঃখ আছে। মল এবং ডাক্তারের থেকেও।
ছোটবাবু।
নিচ থেকে ছগনলালের গলা পেলাম। ছবিগুলো খামের মধ্যে ঝটপট ঢুকিয়ে আমার আলমাড়ির একবারে নিচের খোপে ঢুকিয়ে দিলাম। বাইরের বারান্দায় এসে মুখ বারালাম। দেখলাম গেটে কবিতা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ছগনলালাকে বললাম খুলে দাও। ছগনলাল গিয়ে গেট খুলে দিলো। কবিতা গাড়ি নিয়ে ভতরে এলো।
একলাই নামলো। হাতে একটা খাম। বুঝতে পারলামনা ভেতরে কেউ আছে কিনা। ছগনলাল গেট বন্ধ করলো। কবিতা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
ওপরে আয়।
কবিতা ওপরে উঠে এলো।
আমি নিজের ঘরে এসে খাটে বসলাম।
ল্যাপটপটা খুললাম।
কবিতা ঘরে ঢুকলো।
মাসি এই খামটা তোমায় দিলো।
হাতে নিয়ে বুঝলাম এতে একটা সিডি আছে। ওর দিকে তাকালাম ভাবলেশহীন মুখ।
কোথায় গেছিলি।
ডাক্তারের বাড়ি। কি হারামীগো লোকটা।
কেনো।
শালার বিএফের ব্যবসা। ওতেই শালা কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে।
কি করে জানলি।

মাসি ওর বাড়িতে নিয়েগিয়ে রতনকে দিয়ে উদম কেলালো। সব গড় গড় করে বলে দিলো। তারপর মাসি ওকে নিয়ে একটা ঘরে গেলো। অনেকক্ষণ ছিলো।
ডাক্তার এখন কোথায়।
ওর বাড়িতে নজর বন্দি।
মাসি।
মাসির জায়গায়। ফেরার পথে আমাকে এটা দিয়ে বললো। অনিকে দিয়ে আয়। সব বলা আছে। আমাকে একবার ফোন করতে বলবি।
তুই চলে যাবি।
হ্যাঁ। আমাকে অনেক কাজ দিয়েছে। করতে হবে।
বলা যাবেনা।
শুনতে হবেনা। তোমার কাজ তুমি করো। এসব নোংরা কাজ তোমার জন্য নয়।
আমার জন্য তোদের কতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
একবারে ওসব কথা বলবেনা। মাসির কানে গেলে বুঝতে পারছো কি বলবে।
ঠিক আছে তুই যা।
কবিতা চলে গেলো। ছগনলাল গেট বন্ধ করলো। আমি আবার নিজের জায়গায় এসে বসলাম।
খাম খুলে সিডিটা বার করলাম। ল্যাপটপে চালালাম। সত্যিই মিত্রাকে নিয়ে তোলা ছবি। ভালো করে পঙ্খনুপুঙ্খ রূপে দেখলাম। ব্লু-ফ্লিম নয় এককথায় বলা যায় রেপ। মিত্রাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করতে পারেনি। নব্বইভাগ নগ্ন করেছে। ধস্তা ধস্তি হয়েছে। তারপর মিত্রা লোকটার বুকে একটা লাথি মেরেছে। একটা মেয়ে এই মুহূর্তে বাঁচার জন্য যা যা করার দরকার তাই করেছে। খুব চেঁচামিচির শব্দ। খেস্তা খিস্তি। বোঝা যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে ফিট করা গোপন ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে। অস্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে এটা ডাক্তারের চাল। এ ছবি বাজারে বিক্রি হবে না। এটা তোলা হয়েছে মিত্রাকে নিঃশেষ করে দেবার জন্য।
এই কারণেই কি মিত্রা ডিভোর্সের পরও মাথায় সিঁদুর রাখতো। ডাক্তারের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখতো। যখন বুঝেছে এখন ওর আশ্রয় হারানোর ভয় নেই তখন থেকে সিঁদুর মুছে দিয়েছে। নানা চিন্তা মাথার মধ্যে খেলা করছে। সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে মিত্রার জন্য। কুড়ি মিনিট উনিশ সেকেন্ডের সিডি।
আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। নানা আজেবাজে চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মোবাইলের ঘরিটার দিকে তাকালাম। সাড়ে চারটে বাজে। তারমানে দাদারা এখন ওই ধাবার কাছাকাছি।
ঘরের দরজা বন্ধ করে নিচে নামতে গেলাম। দেখলাম ছগনলাল চায়ের কাপ নিয়ে সিঁড়িদিয়ে উঠে আসছে।
তুমি চা করতে গেলে কেনো।
আরিবাবা। দাদাবাবুর হুকুম।
আমি ছগনলালের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলাম। ছগনলাল নিচে নেমে গেলো। আমি আবার ঘরে এলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে। দামিনী মাসিকে ফোন করলাম।
হ্যালো। একটা মহিলা কন্ঠস্বর। গলা শুনে মনে হচ্চেনা মাসি।
মাসি।
কে বলছেন।
অনি।
অনিদা তুমি। আমি লক্ষী।
মাসি কোথায়রে।
একটু বেরিয়েছে।
ঠিকআছে আমি পরে ফোন করছি।
তুমি কেমন আছো অনিদা।
ভালো আছি।
কতদিন আসোনি।
যাবো।
কবে আসবে।
একটু কাজ গুলো সেরে নিয়ে যাবো।
আচ্ছা।
উঠেগিয়ে টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে এলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। মিত্রার নম্বরে একটা ম্যাসেজ করলাম। একটু দূরে কোথাও পালিয়ে যা কথ বলবো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো। আমি নীপা বাসুর দোকানে যাচ্ছি। অপেক্ষা কর সুযোগ বুঝে ফোন করবো।
ভাবলাম দেবাশীষকে একবার ফোন করি। তারপর কি ভেবে মনে হলো না দেবাশীষকে নয় টিনাকে একটা ফোন করি। করলাম।
কিগো ভুল করে ফোন করে ফেললে।
আমি চুপ থাকলাম।
কিগো কথা বলবেনা।
না টিনা খুব বাজে অবস্থার মধ্যে আছি।
তোমার গলাটা এরকম ধরা ধরা লাগছে কেনো। টিনার গলায় উৎকন্ঠা।
ফোনের ভয়েজটা সমস্যা করছে হয়তো।
তুমি কোথায়।
বাড়িতে।
বাড়িতে! এই সময়।
একটু কাজ করছি।
ওখান থেকে কবে এলে।
গতকাল।
অফিসে যাওনি।
না।
বাড়িতে আর কে আছে।
কেউনেই। আমি একা।
সামথিংস রং।
না। এমনি।
তুমিকি এখন বাড়িতেই থাকবে।
হ্যাঁ।
ঠিক আছে তুমি রাখ। পরে তোমায় ফোন করছি।
আচ্ছা।
সিগারেটের প্যাকেট থেকে আবার একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম। নেটটা খুললাম। আমার মেল বক্স খুললাম। দেখলাম তানিয়া কতগুলো মেল পাঠিয়েছে। আমি খুললাম দেখলাম আরো অনেক ডকুমেন্টস পাঠিয়েছে। পোরে যেটুকু উদ্ধার করতে পারলাম। তাতে বুঝলাম। ডাক্তার ওখানে খুব ঘৃণ্য কাজ করতে গিয়ে তার ডিগ্রীটা খুইয়েছে। তার ডকুমেন্টস তনু পাঠিয়েছে। আমি একে একে সব ডাউনলোড করতে আরম্ভ করলাম। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম দামিনী মাসির ফোন।

হ্যালো বলতেই দামিনী মাসি বললো দেখেছিস।
হ্যাঁ।
কি দেখলি।
ওরই।
ঠিক বলছিস।
হ্যাঁ। বিশ্বাস হচ্ছে না।
কতো বরো খানকির ছেলে হতে পারে সেটা ভাবছি।
সাধে কি অনি কেঁদে ফেলেছিলো।
তুই বিশ্বাস কর.......।
কিগো কথা বলছোনা কেনো।
ও আমার ছেলের বউকে.....।
কেঁদোনা মাসি। ওর ভাগ্যে যা লেখা ছিলো তাই হবে। কেনো তোমাকে সব কথা বলতে পারিনি এবার বুঝতে পারছো।
ওই লোকটাকে দেখাতে পারবি।
ছবিতে দেখাতে পারবো। মনে হয় ইসলামভাই চেনে। ইসলামভাই এই সব ঘটনার সাক্ষী। যেহেতু তখন ও জানতোনা আমার সঙ্গে মিত্রার একটা সম্পর্ক আছে তাই ও সেই ভাবে বাধা দেয়নি। তবে ইসলামভাই আমার কাছে সব স্বীকার করেছে। ওরা আরো কিছু করতে পারতো ইসলামভাই-এর জন্য করতে পারেনি।
এই মিত্রাই কি সেই মিত্রা যার কথা তুই আমায় বলেছিলি।
হ্যাঁ। ডাক্তার এখন কোথায়।
ওর বাড়িতেই রেখেছি। আবিদকে রেখে দিয়েছি।
ইসলামভাই খুব কষ্ট পাচ্ছে।
জানি। ওকে বার বার বারন করেছি এই সব কাজ হাতে নিবিনা।
ইসলামভাই-এর কোনো অপরাধ নেই। যদি বলো তুলনায় আমি বেশি অপরাধ করেছি।
কেনো।
মিত্রা আমাকে অনেক দিন আগে ওর বাড়িতে যেতে বলেছিলো। আমি অভিমানে ওর বাড়িতে যাই নি।
মাসি চুপ করে রইলো।
একটা মেয়ের কতটুকু ক্ষমতা তুমি জানো।
কি করবি চিন্তা করলি।
ওকে মারবোনা। ও নিজে আত্মহত্যা করবে।
পারবি।
অনি মুখে যা বলে তাই করে দেখাবে। এর প্রমাণ তুমি আগে পেয়েছো।
ওই লোকটা।
ওটা আমাকে জোগাড় করতে হবে। তবে আমার মন বলছে ইসলামভাই এতোক্ষণে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
তুই ঠিক বলছিস।
ওই যে তখন বললো আমার জন্য একটু রেখো। ওর প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লুকিয়ে আছে।
তুই এতো ভাবিস।
ভাবি বলেই কষ্টপাই মাসি। আমার যে কথা শোনার কেউ নেই।
বুঝতে পারলাম মাসি কাঁদছে।
আবার কাঁদে। তোমার কাছে আঠারো মাস থাকার অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগাচ্ছি।
চুপচাপ।
কথা বলছোনা কেনো।
অনিদা মাসি আমার হাতে ফোনটা দিয়ে চলে গেলো।
কেরে লক্ষী।
হ্যাঁ।
ঠিক আছে এখন রাখ।
ফনটা কেটে দিলাম।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। বাইরের আলো কমে এসেছে। ঘরটা সামান্য অন্ধকার। দাদারা আমায় কোনো ফোন করেনি। আমিও ফোন করিনি। ল্যাপটপটা খোলা রয়েছে। ভীষণ চা খেতে ইচ্ছে করছে। নিচে গিয়ে করতে ভালো লাগছেনা। সিগারেটের প্যাকেট থেক একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। টান টান হয়ে শুলাম। জানলার ফাঁক দিয়ে কমলা রংয়ের সূর্য আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এখন এই সূর্যের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়। অসুবিধে হয়না। মাথার ভেতরটা কেমন শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে। হিমাংশুকে সকাল থেকে ফোন করা হয়নি। ছেলেটা কি ভাবছে।
মোবাইলটা টেনে নিয়ে হিমাংশুকে ফোন করলাম।
কোথায়রে বাড়িতে না অফিসে।
বাড়িতে।
কি করছিস।
শুয়ে আছি।
একটু ঘুমবার চেষ্টা কর।
ঘুম আসছেনা।

শোন মিত্রার চেকগুলো আজই ব্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছি।
খুব ভালো করেছিস। আগামী সপ্তাহে বোঝা যাবে ওর ব্যাঙ্কের পজিসন।
মালটা এখন কোথায়।
দামিনী মাসির হেপাজতে চলে গেছে। ওর বাড়িতে আছে। তবে নজর বন্দি।
সত্যি কতো মানুষ জীবনে দেখলাম। এরকম হারামী মানুষ দেখিনি।
তুই কি দেখেছিস। দামিনী তার সারাজীবনে অন্ততঃ লাখ খানেক মানুষকে তার শরীরে আশ্রয় দিয়েছে মাসি পর্যন্ত কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো।
খুব খারাপ লাগছে।
খারাপ সবার লাগছে। কিন্তু করার কিছু আছে। মেনেনিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
শোন আমি সনাতনবাবুর সঙ্গে আজ কথা বলে এসেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে দুটো ছেলে তোর অফিসে গিয়ে বসবে।
বেশ করেছিস। তুই প্রেসার কনটিনিউ কর। আমি সামলে নেবো।
আচ্ছা। এখন একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর।
দেখি।
হিমাংশু ফোনটা কেটে দিলো।
উঠে বসলাম ল্যাপটপটা নিয়ে তনুকে একটা মেল করলাম। ওকে ভাসা ভাসা সব জানালাম। এও বললাম আমি কয়েকদিন কলকাতায় থাকবোনা। তোমার মেল চেক করতে পারবোনা। তোমার কিছু মেল করার থাকলে করবে। আমি সময় মতো খুলে দেখে নেবো।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন।
উঠে বসে ধরলাম। বাইরে অন্ধকার হয়ে এসেছে। ঘরের লাইট জাললাম। বারান্দায় এসে ছগনলালকে দেখতে পেলাম ওর দেশোয়ালী ভাইদের সঙ্গে বসে গল্প করছে। আমায় দেখে ফিরে তাকালো ইশারায় বললাম একটু চা খাওয়াবে। ও হেসে ফেললো।
কোথায় তুই।
বাসুর বাড়িতে।
কে নিয়ে এলো।
বাসু এগিয়ে দিয়ে গেলো।
খবর কি।
কোনখান দিয়ে শুরু করি বলতো।
কথা শুনে মনে হচ্ছে মিত্রা বেশ খুশিতে আছে। ওর কোনো টেনসন নেই।
তোর থেকে শুরু কর।
তুই কোথায়।
বাড়িতে।
একা।
আমার জন্য খুব কষ্ট পেলি আজকে।
তা একটু পেয়েছি।
তার সঙ্গে আমাকে যে পেলি।
তোকে তো আগেই পাওয়া হয়েগেছে।
সেটা সম্পূর্ণ ছিল না। আজকে সম্পূর্ণ হলো। আজকে আমার থেকে সুখী এ পৃথিবীতে কেউ নেই।
একথা বলছিস কেনো।
তুই আজকে ওই বাস্টার্ডটাকে মেরে রক্ত বার করে দিয়েছিস। তুই যদি মেরে ফেলতিস আমি আরো আনন্দ পেতাম।
ভাবলাম কতটা জ্বালা এতদিন ও বুকে নিয়ে ঘুরেছে। কেউ ওর পাশে ছিলো না যে ওর কথা শুনে ওকে একটু সাহায্য করবে। যা কিছু করেছে নিজের বুদ্ধিতে। হাতাশা গ্রস্ত হয়ে রাতের বেলা আকণ্ঠ মদ গিলেছে। তারপর নিজের প্রতি ঘেন্নায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে। যা হয় হোক। শেষ পরিণতি কি আছে মৃত্যু। এর বেশিতো কিছু নয়।
কিরে চুপ করে গেলি।
না। এমনি।
আজ এখানে কি হয়েছে জানিস।
কি।
চিকনা বললো।
কি বললো।
তুই নাকি ক্লাসটেনে পরার সময় ওকে একবার বেধড়ক মেরেছিলি। তারপর কাউকে এইরকম মারলি। তুই যে রেগে যেতে পারিস। তুই যে কাঁচা কাঁচা গালাগাল দিতে পারিস এটা ওরা প্রথম জানলো।
তুই।
কলেজে তোর মুখ থেকে দু’একটা শুনতাম। তারপর আমি হারিয়ে গেলাম।
তোরা সব শুনেছিস।
তোর ঘরে মাল ফিট করা ছিলো। তুই ধরতে পারিসনি।
তখন আমার মনের অবস্থা সেরকম ছিলোনা।
সেই সময় ইসলামভাইকে দেখলে তোর মাথা খারাপ হয়ে যেতো।
কেনো।
হাতগুলো কেমন করছিলো কেমন এ্যাবনরমাল ভাব। চোখ গুলো কেমন ঘোলাটে। তারপর তুই যখন মারলি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো। ছোটমা কতো বোঝালো। কান্না থামানো যায় না। পরে রতনকে যা বললোনা। আমার শুনে আত্মারাম খাঁচা।
বড়মারা কেউ ছিলোনা।
না।
ইসলামভাই আজ আমাকে নিয়ে আড়ালে আড়ালে ঘুরেছে। আমাকে প্রশ্ন করেছে আমি উত্তর দিয়েছি। আর ফোন করে করে খালি মিলিয়ে নিয়েছে।
কোথায় ফোন করছিলো।
বম্বেতে। ঠাট উর্দুতে কথা বলছিলো। ইসলামভাই কি দারুন উর্দু বলেরে। আমি কিছু বুঝতে পারিনি।
তোর কি মনে হয় কোথায় ফোন করছিল।
আমার কাছে টোডির ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। আমি যতটা জানতাম বলে দিয়েছি। তারপর দামিনীমাসি ফোন করেছিলো।
তোর সঙ্গে কথা বলেছে।
হ্যাঁ। ইসলামভাই বললো আমার সঙ্গে আছে। কথা বলবে। কথা বললাম। তুইতো নিয়েগেলিনা। দামিনী মাসি বলেছে আমাকে নিয়ে যাবে। ওরে দামিনী মাসি ইসলামভাই দুজনেই বড় খেলোয়াড়।
আজ বুঝলি।
বুঝলাম।
বড়মা ছোটমা।
নো টেনসন ডু ফুর্তি। ওরা এসব ঘটনা জানেই না। তুই একা একা মনটা খারাপ লাগছে।
তোরা সবাই ঠিক আছিস।
তোকে একেবারে ভাবতে হবেনা। নীপা আসছে এখন রাখি। রাতে কথা বলবো। জেগে থাকবি।
আচ্ছা।

মিত্রার সঙ্গে কথা বলার পর মনটা একটু হাল্কা হলো বলে মনে হচ্ছে। ভাবছিলাম ওকে একবার জিজ্ঞাসা করি ভিডিও’টার সম্বন্ধে। তারপরে ভাবলাম না থাক। ওর কাছে যখন যাবো তখন ওকে জিজ্ঞাসা করবো। ওর মুখ থেকে ব্যাপারটা শোনার দরকার আছে।
ছগনলাল চা নিয়ে এলো। আমি ওর হাত থেকে চায়ের কাপ নিলাম।
ছোটবাবু রাতে কি খাবে।
আমি যা বলবো তুমি খাওয়াবে ?
হ্যাঁ।
তুমি যে মাঝে মাঝে ছাতুর ছোটো ছোটো লেট্টি বানাও আজ একটু বেশি করে বানাও। চাটনি পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খাবো।
আমাদের খাবার আপনি খেতে পারবেন!
মনে মনে হাসলাম। ছগনলাল তুমি সুদূর বিহারের এক অজ গ্রাম থেকে কলকাতায় এসেছো পেটের সন্ধানে। আমিও তোমার মতো গ্রামের মানুষ। কতদিন কলকাতার রাস্তায় তোমার দেশোয়ালী ভাইয়ের কাছে ছাতুমাখা তেঁতুলের টক দিয়ে মেখে খেয়েছি তার ইয়ত্তানেই। শেষে লোটা ভরা জল খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিয়েছি। একশোগ্রাম ছাতুর দাম তখন পঞ্চাশ পয়সা ছিলো।
ছগনলাল আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুমি তৈরি করো আমি খাবো।
উঠে গিয়ে মানি পার্টস থেকে টাকা বারকরলাম।
না ছোটোবাবু টাকা লাগবেনা। বড়বাবু টাকা দিয়ে গেছেন।
তাহলে তুমি একটু বেশি করে করো। যদি কেউ আসে তাদেরও খাওয়াবো।
ছগনলাল হো হো করে হেসে ফেললো।
না ছোটবাবু আপনার মন চাইলো আপনাকে খাওয়াবো। অন্যেরা আমার বানানো লেট্টি খাবেনা।
আচ্ছা তুমি করোনা। আমিতো বলছি।
ছগনলাল নাচতে নাচতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমি চায়ে চুমুক দিয়ে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। মেল বক্স খুলতেই দেখলাম তনু অনলাইনে আছে। আমি অনলাইন হতেই ও চ্যাট শুরু করেদিলো। হায়।
আমার মেল পেয়েছো।
পেলাম।
কি বুঝলে।
প্রথমে বলো তুমি কেমন আছো।
পরে কি বুঝলে ? আমি ভালো আছি।
একেবারে না।
দেখালম তনু লিখছে। আমি অপেক্ষা করলাম।
মিত্রাদির জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছে।
শুধু তোমার একার নয় সবার। যারা শুনছে তাদেরই খারাপ লাগছে। লিপিড ইট।
তনু লিখছে।
তোমায় খুব মিশ করছি। এখানে কাজের মধ্যে যখন থাকি তোমার কথা বিশেষ মনে পরেনা। তবে যখন ফ্ল্যাটে চলে আসি তখন তোমার কথা ভীষণ ভাবে মনে পরে।
তুমি আমার অবস্থাটা জানো তনু। তোমাকে নতুন করে কিছু বলার নেই।
হুঁ।
তনু লিখছে। আমি অপেক্ষা করলাম।
ডাক্তার ব্যানার্জী মোটেই সুবিধার লোক নয়। যেখানে উনি থাকতেন আমি সেখানে খোঁজ খবর নিয়েছিলাম। ওনার চরিত্রে নুন দেওয়ার জায়গা নেই।
তনু লিখছে।
এখানকার হাসপাতালে একজন মহিলা পেসেন্টের উনি শ্লীলতা হানি করেছিলেন। সেই নিয়ে ওনার পানিশমেন্ট হয়। তাতে উনি ছ’মাস জেল খেটেছিলেন। তারপর ওনার সব কিছু কেড়ে নিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওনার নাম শুনে আমাকে কেউ প্রথমে এনটারটেন করতে চায়নি। ভাগ্যিস আমি বিবিসির রিপ্রেজেন্টেটিভ তাই এনটারটেন করে মেটেরিয়ালস দিয়েছে।
সত্যি তনু তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এইতো হ্যাজানো শুরু করেদিলে।
এটা হ্যাজানো হলো।
তা নয়তো কি।
তোমায় একটা রিকোয়েস্ট করবো।
আবার।
তাহলে কি বলবো।
আদেশ করবে।
তোমাকে আদেশ করার ক্ষমতা এখনো হয়নি।
কাগজের মালিক হয়েছো আবার কবে হবে। এবার ঝেড়ে কাশোতো।
আমার খুব ইচ্ছে ওখানে একটা ব্রাঞ্চ করবো। হেল্প করবে। তাহলে প্রায় ওখানে যাওয়া হবে আর.......।
কি দুষ্টু বুদ্ধি তোমার। তারপর বলবে তনু তুমি বিবিসি ছেড়ে আবার এই হাউসে জয়েন করো। ওখানকার ব্রাঞ্চ সামলাও। দুষ্টু কোথাকার খালি মাথায় জিলিপির প্যাঁচ না।
রাগ করছো কেনো। আমি কি তোমার ভালো বন্ধু নই।
হুম। বুঝেছি।
তাহলে রাজি।
রাজি কিনা বলতে পারছিনা। কি করতে হবে বলো।
ব্রাঞ্চ খুলতে গেলে জায়গা লাগবে।
লাগবে।
ভাড়া নেবো না। কিনবো।
ওরে বাবা। সেতো অনেক টাকার দরকার।
দেবো।
তোমার এতো টাকা কোথায়।
এইতো বললে কাগজের মালিক।
হো হো হো।
ঠিক আছে। আর।
কিছু স্টাফ লাগবে।
বুঝেছি আমাকে সব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে তাইতো।
এইতো লক্ষ্মী মেয়ের মতো কথা।
আমি কি পাবো।
তুমি বুরোচিফ হবে।
এই টুকুতে আমার কিছু হবেনা।
ঠিক আছে তোমার ডিমান্ড বলো।

প্রত্যেক মাসে একবার এখানে আসতে হবে। পনেরোদিন থাকতে হবে।
কথা দেবোনা।
তাহলে হবেনা।
তুমি আমাকে না করবে।
ওই জন্যই মরেছি।
হো হো হো।
কাল আমি কলকাতার বাইরে চলে যাবো। যেখানে যাবো সেখানে পাওয়ার নেই অতএব নেট কানেকসন দূর অস্ত। আমি ফিরে আসবো নেক্সট সোমবার তখন কথা হবে।
মিত্রাদি ওখানে।
হ্যাঁ। হাওয়া চেঞ্জে পাঠিয়েছি।
তারমানে।
ডাক্তার বললো। আজকে ডাক্তার নিজে গেছে।
কি হয়েছে মিত্রাদির তুমিতো বলোনি।
সব কথা বলা যায়।
বলো কি হয়েছে।
নার্ভের প্রবলেম।
তারমানে!
গত ছয় সাত বছর দেহে ও মনে অনেক অত্যাচার হয়েছে। তার ফলস্বরূপ এই রোগ।
কি বলছো তুমি!
যার স্বামী এই রকম চরিত্রের হয়.......।
তুমি মন খারাপ করোনা। দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক হওয়ার সম্ভবনা নেই। ডাক্তারদাদা বলেছেন। এর পর মনের ওপর স্ট্রেচ পরলে হয়তো পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
কি সব আজে বাজে বকছো।
আমি তোমায় মিথ্যে কথা বলবোনা তনু। ও আজ পৃথিবীতে একা। আমি ছাড়া ওর আপনজন বলতে কেউ নেই।
অনি!।
হ্যাঁ তনু।
বাইরের গেটে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। মনে হয় কেউ এসেছে।
দেখি তোমায় আবার কবে ধরতে পারি।
আমি রেগুলার ইন্ডিয়ান টাইম ছটার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত থাকি।
আচ্ছা। যা বললাম মনে রেখো।
বাই।
বাই।
তাড়াতাড়ি মেল বক্স বন্ধ করে অন্য মেল চেক করতে আরম্ভ করলাম।
বেশ কয়েকজনের হই হই শব্দ কানে এলো। সবাই শিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে দেবারা। আমার ধরনা ঠিক। দেবারা হই হই করতে করতে ঘরে ঢুকলো।
কিরে শালা ভূতের মতো এতো বড়ো বাড়িতে বসে বসে কি করছিস।
তোদের ছগনলাল ঢুকতে দিলো ?
মানে!
ছগনলাল সকাল থেকে আমার পারমিসন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না।
তোর নাম বলতেই গেট খুলে দিলো।
টিনা অদিতি আমার দুপাশে এসে বসলো। মিলি আমার সামনে। ল্যাপটপটা খোলাই আছে। দেবা ইজিচেয়ারে হেলানদিল নির্মাল্য খাটের এক পাশে এসে বসলো। সবাই আমার দিকে অনুসন্ধিতসু চোখে তাকিয়ে।যেনো গিলে খাচ্ছে।
তোকে কিন্তু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে না।
তোর চোখে নেবা (জনডিস) হয়েছে।
দেবাদার চোখে নেবা হয়েছে। আমাদের চোখে। টিনা অদিতি মিলি তিনজনে একসঙ্গে আমার দিকে হুমরি খেয়ে তাকালো। চোখে চোখ।
বিশ্বাস করো আমার কিছু হয়নি।
তাহলে বললে কেনো। ছগনলাল গেট খুললো তোদের।
এমনি।
সামথিংস রং। টিনা ফের বললো।
মিত্রাদি কোথায়। অদিতি বললো
বড়মা কোথায়। মিলি বললো।
বাবা তোমরা একসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তর দেবো কি করে।
ঠিক আছে তুমি বলো। টিনা বললো।
দাঁড়াও একটু চা করি আগে।
তোমায় করতে হবে না। আমরা করবো। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks