দেখি নাই ফিরে - (Part-48)

খাট থেকে চিপটা তুলে সন্দীপকে বললাম দ্বীপায়নকে এটাদেতো নেটটা কানেকসন করুক।
সন্দীপ উঠে চলে গেলো। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম অনির সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে কোনোদিন জিততে পেরেছো।
হেরেছি কবে।
তারমানে।
তোকে দিয়ে লিখিয়েছি। কাগজের মান বারিয়েছি।
এ লেখা আমি লিখতে পারবোনা। হ্যাঁরে দ্বীপায়ন এটা কি কালার প্রিন্টার।
হ্যাঁ দাদা।
তোদের বুদ্ধি আছে।
দ্বীপায়ন হাসলো।
ছেলেদুটো আমার পেছনে খাটে বসেছে।
অনিদা নেট কানেকসন করে ফেলেছি।
দাঁড়া যাচ্ছি।
আমি উঠে গেলাম নিজের মেল বক্স খুলে কালকের পাঠানো তনুর মেলটা থেকে সমস্ত ডাউনলোড করলাম। ডেক্সটপে রেখে দ্বীপায়নকে বললাম ফটোসপে খুলে সব দেখেনে। তারপর সব প্রিন্ট কর তিন কপি করে।
সন্দীপের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে।
তনু তোকে এইসব পাঠিয়েছে।
হ্যাঁ।
কিরে সন্দীপ।
দেখবেন আসুন।
দাদা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিলো। সন্দীপের কথায় তড়াক করে উঠে এলো। ভালো করে ডকুমেন্টসগুলো দেখে নিয়ে স্বগোতক্তির সুরে বললো। কেনো যে মেয়েটা চলে গেলো।
না গেলে আমি এইসব মালপত্র পেতাম কি করে।
তুইতো বলবি। কাগজের কতো খতি হয়েছে জানিস।
তোমরা তাড়িয়েছো।
আমি তাড়াইনি।
ওই হলো আরকি। ঘরের বেড়াল পরের ঘরে খেতে যাবে কেনো।
থাম বক বক করিসনা। সন্দীপ লেখাটার মধ্যে তানিয়ার নাম সৌজন্যে ঢুকিয়ে দিবি।
কেনো মেয়েটকে জেল খাটাবার ইচ্ছে হয়েছে। ও কি তোমায় বলেছে দাদা এতো খাটা খাটনি করলাম আমার নামটা একটু কার্টসিতে ঢুকিয়ে দেবেন।
দাদা চুপ করে গেলো।
মল্লিকদা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো। ছেলেদুটো এগিয়ে গেলো। অনি কি বলছেরে সন্দীপ।
দেখবে এসো কি মাল অনি জোগাড় করেছে এতো মলের বাবা।
মল্লিকদা ছুটে দ্বীপায়নের কাছে চলে গেলো।
তাড়াতাড়ি কর দ্বীপায়ন। এখুনি সব এসে পরবে এখনো অনেকগুলো স্ক্যান বাকি আছে।
খাম গুলো দেখা। দাদা বললো।
সহ্য করতে পারবেনা।
দেখানা।
দাদার কাকুতি মিনতির ঢঙে নিরঞ্জনদা হাসছে। ওই দুটো ছেলে জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে মুখে হাত চাপা দিয়েছে।
আমি একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বললাম ডাক্তার পাঁচটা বিয়ে করেছে। এই খামে তার ডকুমেন্টস আছে।
দাদা শুনে থ। বলিসকি পাঁচটা বিয়ে।
মিথ্যে কথা বলছিনা। খামটা খোলো। দেখতে পাবে।
মল্লিকদা দ্বীপায়নের কাছ থেক ছুটে চলে এলো দাদার কাছে। দাঁড়া কচুরি আনাই।
এইতো ভদ্রলোকের মতো কথা।
আমিকি এতদিন অভদ্র ছিলাম।
আমি তোমায় অভদ্র বলিনি।
দাঁড়া তোর ছোটমাকে রিপোট করছি।
পারবেনা। বলেছিনা তোমরা পাঁচজন আমি একা। গোল করবোই।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো।
একটি ছেলেকে ডেকে বললো যাতো কচুরী নিয়ে আয়। বেসি করে নিয়ে আসিস। খিদে লেগেছে।
দাদা আমার দিকে তাকালো।

কি বজ্জাত দেখেছিস।
তুমি দেখো।
পকেট থেকে তনুর চিঠিটা বার করলাম। হাতে দিয়ে বললাম। আন্ডারলাইন জায়গাগুলো পরবে আর এগোবে না।
দাদা হাতে নিয়ে চশমাটা একবার ঠিক করলো। মল্লিকদা পেছনথেকে চিঠির ওপর চোখ রেখেছে।
আমি তাকিয়ে আছি দাদার দিকে। নিরঞ্জন ঘুরে দাদার পেছনে দাঁড়ালো। সন্দীপও এসে দাঁড়ালো। সবাই চিঠির ওপর চোখ রেখেছে। প্রিন্টারের আওয়াজ হচ্ছে। তাকিয়ে দেখলাম প্রিন্ট বেরোচ্ছে। দাদার চোখের ভাষা বদলে যাচ্ছে। মল্লিকদার দাঁত কড় কড় করছে। দাদা চিঠি থেকে চোখ তুললেন। আমার দিকে তাকালেন।
মনে হচ্ছে হাতের সামনে পেলে এখুনি গলা টিপে মেরে দিতাম। মল্লিকদা বললেন।
ওই জন্যইতো কাল মার খেয়েছে। দাদা বললো।
মল্লিকদা দাদার দিকে তাকিয়ে আছে।
এর বেঁচে থাকা উচিত নয়। সমাজের কলঙ্ক।
মেয়েটার কথা একবার ভেবে দেখো। মল্লিকদা বললো।
তুই আমার ওখানে নিয়ে চল। খালের জলে মাছের খাবার করে দেবো। নিরঞ্জনদা বললো।
সে ব্যবস্থা করার সুযোগ তুমি পাবেনা।
তোর বড়মা কাল বলছিলো। তোর দামিনী এটাকে বাঁচিয়ে রাখবেনা।
ডাক্তারকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে অনেক কাজ বুঝলে।
তোর কথা আমি বুঝিনা।
ধীরে ধীরে বুঝবে। এইবার এই চিঠির প্রমাণ দেখবে।
না আর দেখবোনা। গা গোলাচ্ছে।
দেখো উনি কিন্তু সমাজের উচ্চ বর্গের লোক।
তোর বড়মা হলে বলতো ঝাঁটা মারো অমন উচ্চ বর্গকে।
তুই এখনো চুপচাপ আছিস কি করে। মল্লিকদা দাঁত কড় কড় করতে করতে বললো।
ডাক্তারকে শিখন্ডি করে আরো চারটে পাখিকে মারতে হবে।
চারটে পাখি আবার কোথায় পেলি।
আছে আছে সব জানতে পারবে। তবে কথা দিচ্ছি অনি নিজে কাউকে মারবেনা।
ওরা কেউ জানে।
কেউ জানেনা। খবর লিক হলে বুঝতে পারছো এই ঘরের সব কটাকে ধরবো। দেখি কে কতদিন পেটে খবরটা ধরে রাখতে পারো।
তোকে কথা দিচ্ছি আমার পেট থেকে বেরোবেনা। দাদা বললো।
মল্লিকদা।
আমিও বলবোনা।
নিরঞ্জনদা আমার বলার আগেই বললো।
তোকে কথাদিলাম। মরার আগের দিন পর্যন্ত মুখ থেকে রা করবোনা।
মনে থাকে যেনো।
এবার তোমাদের আমাকে হেল্প করতে হবে।
বল কি করবো।
কলকাতা বাদে ডাক্তারের মোট ছটা নার্সিংহোম আছে আমাদের স্টেটে।
কলকাতাটা এরা দুজন কভার করবে। বাকি ছটা বিশ্বস্ত লোক খুঁজে বার করো। যারা কভার করবে।
কচুরীর ঠোঙা নিয়ে ছেলেটা ঢুকলো।
দাঁড়া এখন কিছু বলিসনা। আমি ঝট করে নিচ থেকে প্লেট নিয়ে আসি।
মল্লিকদা আমি যাবো তোমার সঙ্গে। ছেলেটা বললো।
আয়।
ওরা বেরিয়ে গেলো।
অনিদা প্রিন্ট গুলো দেখবে।
দে।
দ্বীপায়ন প্রিন্ট গুলো নিয়ে এলো। দাদা সন্দীপ নিরঞ্জনদা হাতে তুলে নিয়ে দেখতে আরম্ভ করলো। দাদা দেখতে দেখতে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
ওর আর কি বাকি আছে বলতো।
হিসেব করো।
বুঝেছিস নিরঞ্জন আমরা এই মালিকের আন্ডারে মাস ছয়েক আগেও কাজ করেছি।
এ যদি এই বিষ হয় সুনিতদা আর অতীশবাবু কতো বড়ো বিষ ছিল একবার ভেবে দেখো।
সুনিতদা আর বলিসনা সুনিত বল।
এটা তোমার রাগের কথা।
রাগ বলিস আর যাই বলিস।
কম জালিয়েছে আমাদের। গোটা নিউজরুমটাকে ছাড়খাড় করে দিয়ে গেছে। সন্দীপ বললো।
শুরু করে দিয়েছিস। মল্লিকদা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে বললো।
নাগো তুমি এসো তারপর শুরু করছি আবার।
সন্দীপ একটু হাত লাগা।
সন্দীপ হাত লাগালো। আর একটা ছেলে উঠে এসে প্লেট সাজালো।
দাদা।
কি হোল।
ছগনলালাকে চায়ের কথা বলে এলাম।
বেশ করেছিস।
সবার প্লেট গোছানো হয়ে গেলো। কচুরীতে একটা কামড় দিয়ে কথা বলতে গেলাম।
দাঁড়া তোকে একটু ইন্টারাপ্ট করছি। মল্লিকদা বললো।
বলো।
কাউকে দরকার নেই তোর এই চেলা দুটোই সব করে ফেলতে পারবে।
স্টেইন পরে যাবে।
তোমাকে ভাবতে হবেনা অনিদা। তোমার কতদিনের মধ্যে চাই আগে বলো।
বাহাত্তর ঘন্টা সময় তোদের দেবো।
হয়ে যাবে।
তুই ডিস্ট্রিক্ট গুলো বল। নিরঞ্জনদা বললো।
আমি পর পর নাম বললাম।
তোকে চিন্তা করতে হবে না।
আমি অবাক চোখে নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।
তাকাসনা আমারও কিছু ক্ষমতা আছে।
বলো।
এই ডিস্ট্রিকগুলোর সভাধিপতিদের সঙ্গে আমার ভালো রিলেসন আছে।
তাতে নিউজের শুবিধে হবেনা। বরং কেঁচে যাবে।
কেনো।
তুমি কি ভাবছো ডাক্তার কাঁচা খেলোয়াড়।
টাকা খাওয়ার কথা বলছিস।
আলবাৎ।
দাঁড়া একটু ভাবতে দে।
তুমি ভাবো।
দেখ সর্বসাকুল্যে চারটে তোরা হাতের কাছে পেয়ে যাবি। কলকাতা থেক পঞ্চাশ কিলো মিটারের মধ্যে। বাকি তিনটে দূরে। দেখ কি করে কি করা যায়।
ঠিক আছে আমি স্কিম করে নিচ্ছি। মল্লিকদা বললো।
ছগনলাল ঘরে ঢুকলো। নীচের গেটে কালকের বাবু এসেছে।
মল্লিকদা বারান্দায় গেলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো। হিমাংশু।
কচুরী আছেরে।
অনেক।
ছগনলাল যাওয়ার সময় বললো চা এখানে নিয়ে আসবো।

হ্যাঁ এখানে নিয়ে আয়। দাদা বললো।
আমরা কচুরীতে মনোনিবেশ করলাম। দাদার ফোনটা আবার বেজে উঠলো। দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। তোর বড়মা। কি বলি বলতো।
কথা বলোনা। কি বলতে চায় দেখো।
হ্যালো।
........কি করবো কচুরীটা মুখে দিয়েছিলাম। না গিলে কথা বলি কি করে....হ্যাঁ অনি খেয়েছে।......তুমি তাড়াতাড়ি কথা শেষ করো।.....হ্যাঁ ঘোড়ায় জিন দিয়ে আছি।.....যা চোলে আমি আবার কি করলাম.....পারবোনা তুমি মল্লিককে বলো.....ধর মল্লিক।
দাদা ফোনটা মল্লিকদার হাতে দিয়ে দিলো। মল্লিকদা আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে চলে গেলো। হিমাংশু ঘরে ঢুকলো। হাঁসতে হাঁসতে আমাকে বললো।
কাল সারারাত ঘুমোসনি।
হাসলাম।
আমারও ঘুম হয়নি। রেবা যখন রাগারাগি শুরু করলো। তখন ওকে গল্পটা বললাম।
হাসতে হাসতে বললাম, রেবা কি বলে।
আর কি অনিদার দম আছে।
কচুরী খাবে হিমাংশু।
হলে খারাপ হয়না। সকালে এককাপ চা খেয়ে চলে এলাম।
ওরে সন্দীপ হিমাংশুকে দে। দাদা বললো।
মল্লিকদা দেখি তখনো বারান্দায় দাঁড়িয় নীচু স্বরে কথা বলেই চলেছে। বুঝলাম ছোটমার সঙ্গে কথা বলছে।
ড্রাফ্ট করেছিস না ফাইন্যাল করে নিয়ে এসেছিস।
তুই পাগল হয়েছিস, ড্রাফ্ট বানিয়ে নিয়ে এসেছি। তোর সঙ্গে বসে ফাইন্যাল করবো।
ভালো করেছিস।
খেয়েনে। তারপর কথা বলছি।
সত্যি হিমাংশুর খিদে পেয়েছিলো একসঙ্গে দুটো করে কচুরি মুখে দিয়ে তাড়াতাড়ি প্লেটটা খালি করে দিলো।
মল্লিকদা ঘরে এলো। হাসি হাসি মুখ।
কি রিলে করলে।
পাগল হয়েছিস। ডজ করে বেরিয়ে গেলাম। খালি বললাম সব পজিটিভ। চিন্তার কোনো কারন নেই।
মাথায় রাখবে। খবর আমার কাছে ঠিক চলে আসবে।
যে যার মতো ঘুঁটি সাজাচ্ছে। সন্দীপ ছেলেদুটোকে নিয়ে আলাদা করে কথা বলছে। দ্বীপায়ন ল্যাপটপে বসে কাজ করে চলেছে। নিরঞ্জনদা চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
বল তুই কি গল্প লিখেছিস। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
দুটো গল্প আছে নার্সিংহোমের ব্যাপারে। এক তুই সবকটা নার্সিংহোমের শেয়ার লিখিয়ে নিতে পারিস। না হলে খালি আমাদের স্টেটের গুলো লিখিয়ে নিতে পারিস।
কেনো বলছিস বল।
কালকে যা কাগজ পত্র ঘাঁটলাম তাতে বাইরের গুলো হলে বহুত ঝামেলায় পরবি।
আমি মাথা দোলাচ্ছি।
কিরে তোর মনের কথা বলতে পেরেছি।
হুঁ। তোর বুদ্ধি খুলেছে।
তোর সঙ্গে থেকে থেকে।
তাই কর। ডাক্তারের পাঁচটা বিয়ে। যে কটার সঙ্গে বিয়ে করেছে সে কটার সঙ্গে পার্টনার শিপে নার্সিংহোম বানিয়েছে। এই কাজ উদ্ধার করতে গেলে সারা জীবন লেগে যাবে। তার থেকে বরং কিছু টাকা খিঁচে নেবো এই তালে।
সেই ভালো।
বাড়ি গুলোর ব্যাপারে।
ওর বাড়িটা গন্ডগোলে। ওটা নিসনা। বরং মিত্রা যে বাড়িতে আছে সেটা লিখিয়ে নে।
ঠিক আছে। নেক্সট।
তোর শেয়ার ট্রন্সফারের সময় মিত্রাকে দিয়ে যেটা সাইন করিয়েছিলো সেটা রেস্ট্রি হয়নি। ওটা তোর নামে ডাইরেক্ট করে দিচ্ছি।
সব ঘাঁত ঘুঁত বেঁধে কর। পরে যেনো ফেঁসে না যাই। আর একটা কাজ কর।
বল।
মিত্রার নামে ওর টোটাল প্রপার্টির একটা পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি তৈরি কর। পরে বাকিটা আমি বুঝে নেবো।
এটা মাথায় আসেনি। ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস।
নে কাজ শুরু করে দে। ওদিকে রতনরা ব্যস্ত হয়ে পরেছে। আমার ফোন বন্ধ। হেড অফিসে বার বার ফোন করছে। আমি বুঝতে পারছি। প্রিন্টার নিয়ে চলে এসেছি। তুই ঝট পট কাজ শেষ কর।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম তুমি সব একবার ভালো করে পোরে নাও। আমি বাথরুমে ঢুকি।
যা।

আমি বাথরুমে চলে গেলাম। সারতে সারতে আধঘন্টা গেলো। বাইরে ওরা কথা বলছে। ছেঁড়া ছেঁড়া কথা আমার কানে আসছে। সব কথার মধ্যেই আমি আছি। হিমাংশু বেশ রসিয়ে কালকের ঘটনা সবাইকে বলছে। মাজে মাজে দাদা রেগে উঠে বলছে আরো ঘা দুচার দিতে পারতো। তবে কবিতা মেয়েটা বেশ স্টেট ফরোয়ার্ড। আমাকে বলে কিনা তুমি এর বেশি আর জানতে চেওনা। স্নানকরি আর নিজের মনে নিজে হাসি। আজ আমার পাশে কতো লোক। য়াকেই বলছি সেই আমাকে সাহায্যের হাত বারিয়ে দিচ্ছে। একদিন কলকাতার রাস্তার কলের জল পেট ভরে খেয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দিয়েছি। সেই দিনগুলের কথা মনে পরলে মনে হয়, না না এই জীবনে এই সব ঘটনা ঘটে নি। ওই ঘটনা গুলো আমার আগের জীবনের।
কাল সারারাত ঘুমোইনি শরীরে জল পরতে কেমন সির সির করে উঠলো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যা করছি সব ঠিক করছিতো। কোনো অন্যায় করছিনাতো। তারপর যখনি মিত্রার কথাটা মনে পরে যায়। ভেতরের সব রাগটা কেমন বাইরে বেরিয়ে আসে। আমি যা করছি ঠিক করছি। কোনো অন্যায় করছিনা। এক কথায় আমি নিজের জন্য কিছু করছিনা। আজ কেউ প্রশ্ন করলে কালকেই সব লিখে দিয়ে চলে যাবো।
বাথরুম থেকে বেরোলাম। দাদা ইজি চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে হিমাংশুর লেখা ড্রাফ্ট পরছে। দ্বীপায়নকে জিজ্ঞাসা করলাম দেখতো আমার মোবাইলটা চার্জ হয়ে গেছে কিনা। ও হাতে নিয়ে বললো হয়ে গেছে।
আমি ছোটমার ঘরে গিয়ে জামা প্যান্ট পরে এলাম। মল্লিকদা হট ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিলো।
কিরে হিমাংশু রেডি।
হ্যাঁ দাদাকে দিয়েছি দাদা একবার পরে নিচ্ছে।
আমি তাহলে ফোন করি।
কর।
আমি রতনকে ফোন করলাম।
কিগো তেমার ফোন সকাল থেকে অফ কেনো।
আর বলিসনা চার্জে বসিয়েছিলাম। তুই কোথায়।
হোটেলে।
ডাক্তারকে নিয়ে চলে আয়।
ঠিক আছে।
শোন সঙ্গে একটা গাড়ি এক্সট্রা গাড়ি নিয়ে আসিস।
তোমাকে ভাবতে হবেনা।
চলে আয়।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। ম্যাডামকে একবার নক করে দে।
নক করার দরকার নেই। প্রত্যুষ এখুনি চলে আসবে। ও নিয়ে আসবে সঙ্গে করে।
দাদাকে বললাম তুমি রেডি হয়ে নাও।
দাঁড়া আগে সই সাবুদ করি তারপর একবারে স্নান সারবো।
আমি ডাক্তারের স্যুটকেস বার করলাম। চেক বই গুলো বার করলাম। দেখলাম প্রত্যেকটা চেক বইয়ে একজনের সই করা আছে। বুঝলাম সেই সব ভদ্রমহিলার। খালি ডাক্তারের সই করলেই হয়ে যাবে। মনে মনে বললাম শালা কতবরো ধুরন্ধর। এইরকম মানুষও পৃথিবীতে থাকে। ঘাঁটতে গেলে দেখবো, ওই মেয়েগুলোর অবস্থাও মিত্রার মতো।
অনিদা।
দ্বীপায়নের দিকে তাকালাম।
ডাক্তার ব্লু ফ্লিমের স্যুটিং করছে তার ছবি দ্বীপায়ন স্ক্যান করছে। আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। এগুলো পরে করলে হবে।
আমি বললাম না। একটু আড়াল করে কর। পারলে মল্লিকদার ঘরে চলে যা।
দ্বীপায়ন হাসলো।
আমি ওই ঘরে চলে যাই।
যা।
দ্বীপায়ন সব গুছিয়ে ও ঘরে চলে গেলো।
হিমাংশু আমার কাছে এসে বললো। তুই একবার দেখে নে।
আমি এখন দেখতে পারবোনা তোরা দেখ। পারলে মল্লিকদা নিরঞ্জনদা আছে।
আমি বারান্দায় সন্দীপের কাছে গেলাম।
কিরে বুদ্ধি খেলালি।
হয়ে গেছে।
কি হয়েগেছে।
ওরা আজ কলকাতারটা আর কলকাতার কাছের নার্সিংহোম গুলো মেরে দিচ্ছে।
ঠিক আছে।
বাকি গুলো।
কাল দুজনে একসঙ্গে বেরিয়ে যাবে। প্রথমে শিলিগুড় সারবে তারপর সিকিম ভুটান রায়গঞ্জ হয়ে মালদহে ঢুকবে।
দাদারা আজ থেকে থাকবেনা।
তুই থাকবিতো।
হ্যাঁ।
তাহলে আর কি আছে। আমার কোনো চিন্তা নেই।
আমি শুক্রবার যাবো।
ঠিক আছে।
হিমাংশুকে বললাম তোকে কালকে যে জমিটার দলিল দিলাম ওটা করেছিস।
হ্যাঁ ওটা হয়ে গেছে। ব্যাগে আছে।
এখানে তিনজনে আছে। সই করিয়ে নে। বাকিটা নিরঞ্জনদাকে বুঝিয়ে দে। কালকে নিরঞ্জনদা সব ব্যবস্থা করবে।
হিমাংশু দাদাদের দিয়ে সব সই করিয়ে নিলো।
কিরে তুই করবিনা।
ওটা আমার নয় তোমাদের। আমারটা আমি করে দিয়ে চলে এসেছি।
একিরে তারপর আমাদের বাঁশ দিবি।
তোমাকে দেবোনা।
যাক তোর মুখ থেক এই কথাটা শুনে প্রাণ জোড়ালো। কি বলো হিমাংশু।
হিমাংশু হাসছে।
নিরঞ্জনদা টাকা বড়মার কাছ থেকে নিয়ে নেবে। কোনো ধারবাকি রাখবেনা। কাল থেকেই ওখানে ডেভালপের কাজ শুরু করে দেবে। ওখানকার ব্যাঙ্কে একটা এ্যাকাউন্ট করবে। সইয়ের অথরিটি তুমি দাদা ইসলামভাই। যে কোনো দুজন হলেই চলবে। হিমাংশু রেজুলেসন গুলো কোথায়।
সব ফাইলে আছে।
দাদা তুমি একবার ওটা পোরে নাও।
দে বসে বসে তাই করি ডাক্তার কখন আসবে রে।
চলে আসবে।



আমি একবার জানলার দিকে তাকালাম। সত্যি সত্যি বাইরেটা আলো ফুটে উঠেছে। কোথা থেকে ভোর হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি করে বাক্স থেকে বাকি কাগজ বার করে গোছালাম। আলাদা আলাদা খামে ভোরে রাখলাম। সন্দীপকে একটা ফোন করলাম। ফনটা প্রথমে বেজে গেলো। কেউ ধরলো না। বুঝলাম বেটা এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি।
বাথরুমে গেলাম। মুখে চোখে ভালো করে জল দিলাম। আবার এসে বসলাম। সন্দীপকে আবার ফোন করলাম। এবার ধোরলো।
কিরে ঘুমোচ্ছিস।
তাহলে কি করবো।
বউ পাশে।
হ্যাঁ।
মজমা নিচ্ছিস।
শালা।
সকাল বেলা নাম সংকীর্তন শোনালি।
বল কি হয়েছে।
একবার আসতে পারবি।

ছোটমার ঘরে গেলাম। দ্বীপায়ন তেড়ে স্ক্যান করে চলেছে। আমায় দেখে হেসে ফললো।
কি দ্বীপায়নবাবু স্যার হাসছেন কেনো।
তোমার কালেকসন দেখে।
আমার কালেকসন! ঠিক বোলেছো। জানো দ্বীপায়ন এই ভদ্রলোকের মালিকানায় আমরা কাজ করেছি। এটা বিশ্বাস করো।
আজ এই মূহূর্তে এইসব দেখার পর বিশ্বাস করতে অসুবিধে হচ্ছে।
ভদ্রলোককে দেখে বোঝা যায় তার ভেতরটা এতো কালো।
একবারেই না।
আমিও প্রথম দিন বুঝতে পারিনি। মিত্রা যেদিন আমায় ক্যালকাটা ক্লাবে প্রথম আলাপ করিয়ে দেয় তখন ওনাকে অনেক ব্রাইট মনে হয়েছিলো। ভেবেছিলাম এতোবড়ো ডাক্তার ওনার সান্নিধ্যে এলাম এটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
সত্যি অনিদা যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা ফোন করেছে। বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
হ্যালো।
কাজ শেষ।
শুরুই করলামনা।
ইসলামভাই বড়মাকে বললো রতন নিয়ে চলে গেছে।
এখনো এসে পৌঁছয়নি। তুই কোথায়। পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি।
হো হো হো।
হাসছিস কেনো।
পুকুরপারে বাঁশবাগানের ভেতর।
ওখানে কি করছিস।
তোকে ফোন করবো তাই চলে এলাম।
আমাকে ফোন করার জন্য বাঁশবাগানে!
হ্যাঁ মশাই। ওরে আমাকে সবাই এখন ফলো করছে। তুই কাউকে কিছু বলছিসনা। এমনকি ছোটমা মল্লিকদাকে ফোন করেও কিছু বার করতে পারলোনা। দাদাতো বলেই দিলো অনিকে জিজ্ঞাসা করো।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
সবাই ভাবছে কি জানিস।
কি।
আমাকে তুই সব বলেছিস। আমি চেপে যাচ্ছি।
কালকের কেশটা মিলিয়ে দিলাম।
তোকে বলতেই ভুলেই গেছি।
আমি হাসছি।
সত্যি চিকনা কি জিনিষরে।
কেনো।
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। ও নিচ থেকে শুনেছে। কিন্তু পরিষ্কার শুনতে পায়নি বলে পেছনের চাল দিয়ে উঠে বারান্দার চালে এসে আমার কথা শুনেছে।
তাহলে বুঝলি।
বুঝলাম মানে। এবার তোর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাঝে মাঝে তোর মতো হতে হবে।
কি রকম।
এইযে বাঁশবাগানে চলে এসেছি।
হাসছি।
হাসিসনা।

বাঁশবাগান পারহয়ে তোর সেই খালের ধার পর্যন্ত চলে এসেছি। যেখান থেকে খালপার হয়েছিলাম।
ফিরে যেতে পারবিতো।
পারবো। বড়মা কি বলে জানিস।
কি।
আমাকে সকালে জিজ্ঞাসা করলো অনি তোকে কি বললো। আমি ডিনাই করে গেলাম। দেখলাম হুঁ বলে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। বুঝেফেললাম খবর হয়ে গেছে। তারপর একফাঁকে চিকনাকে ধরলাম। কিছুতেই স্বীকার করবেনা। বললাম ঠিক আছে দাঁড়া তোর গুরু আসুক।
আমি হাসছি।
তখন আমার পায়ে হাত দিয়ে বলে ম্যাডাম অন্যায় নেবেননা বড়মার হুকুম।
ব্যাশ তারপর থেকে এ্যাকটিং শুরু করেদিলাম।
এইতো তুই পাকছিস।
তোর মতো হতে পারবোনা।
চেষ্টাকর ঠিক হবে।
ঠিক।
আবশ্যই। তারপর কাজ শেষ, সকলকে বলে দাও।
তা বলে তোকে না বলে কোনো কাজ করবোনা।
সেটা আলাদা ব্যাপার।
রতন এলো বুঝলি। গেটে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। আমি এখন রাখি। তোর ঢ্যামনা বরটাও এলো।
তুই এত নরম নরম গালাগাল দিস না আরো কঠিন কঠিন দে।
ঠিক আছে। ঘন্টাখানেক বাদে করিস।
আচ্ছা।
আমি আমার ঘরে এলাম। দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে রতন আবিদ ওর সাগরেদরা ডাক্তারকে নিয়ে ওপরে উঠে আসছে। ডাক্তারকে দেখে বেশ ঝক ঝকে মনে হচ্ছে। দাদাকে বললাম তোমার সব পড়া হয়ে গেছে।
হ্যাঁ। খুব সুন্দর হয়েছে।
ওরা এসে গেছে।
নে নে কাজ শুরু করে দে।
হিমাংশু ম্যাডামকে আনার ব্যবস্থা কর।
প্রত্যুষ ডাইরেক্ট চলে গেছে। এখুনি এসে পরবে।
রতন ঢুকলো। পেছন পেছন সবাই। কবিতাকে দেখতে পেলাম না। ডাক্তারকে দেখেই আমার মুখের জিওগ্রাফি বদলে গেলো। ডাক্তার ঘরে ঢুকেই দাদার পায়ে হাত দিয়ে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো। দাদাও ডাক্তারের ব্যবহারে কিংকর্তব্য বিমূঢ়।
আমায় খমা করুন দাদা আমি অনেক পাপ করেছি।
মল্লিকদা গরম খেয়ে গেলো।
আপনি পাপী নন নরকের কীট।
আবিদ তেড়ে এসেছিলো। রতন কোনো প্রকারে ধরে ফেললো।
দাদা মুখে কিছু বলতে পারছেনা। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে।
আপনি আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচান দাদা।
আমি পারবোনা অনি পারবে।
অনি আমাকে মেরে দেবে।
আমি কি করবো। অন্যায় করেছেন। আপনারও শুনেছি প্রচুর ক্ষমতা।
যাদের ওপর নির্ভর করে আমি ক্ষমতা দেখাতাম তারা অনির খাস লোক।
আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠুন অনেক নখরামি করেছেন এবার ভালোয় ভালোয় সই করে দিন।
তুমি যা বলবে সব সই করে দেবো। আমায় আজ ছেড়ে দাও।
দেবো।
আবিদ টেনে হিঁচড়ে দাদার পা থেকে ডাক্তারকে তুললো। যা বলবে অনিদা মুখ বুঁজে তাই করে যা। কালকে থেকে অনেক কিছু সহ্য করছি।
হিমাংশু।
বল।
ডাক্তারের সই সাবুদ আগে সেরে নে।
ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম ওপাশে চলে যান। হিমাংশু যা যা বলছে সেখানে সই করুন।
আমার গলার স্বরে এমন কিছু ছিলো দাদা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা আমার দিকে চমকে তাকালো। ডাক্তার শুর শুর করে হিমাংশুর দিকে চলেগেলো।
একবার ভালো করে পরিয়ে নিবি।
রতনের দিকে তাকিয়ে বললাম রতন এদিকে একবার আয়।
আমি বাইরের বারান্দায় এলাম। রতন আমার পেছনে।
ইসলামভাই-এর সঙ্গে কথা হয়েছে।
হ্যাঁ। তোমাকে কিছু বলেনি।
সাগির অবতারের ব্যাপারে বললো।
আমরা যাওয়ার আগেই আধমরা করে দিয়েছে।
বাঁচবে।
বলতে পারবোনা।
কেনোরে।
কালকেই শেষ করে দিতো।
তুই কি করছিলি।
তুমি আমার কথা বলছো। দামিনী মাসি আমাকে পাত্তাদেবে।
তাহলে তুই এতদিন কি করলি।
রতন হাসলো। তুমি আর আমি। দামিনী তোমার কথা তবু শুনবে আমার কথা......।
কাজ শেষ হোক একবার যাবো। কথা বলে তুই কি বুঝলি।
একটাই ভুল কাজ করেছে। আমাদের গ্যাংয়ের কিছু ছেলেকে ডাক্তারের সেই লোকের কাছে পাঠিয়েছে।
কারা কারা খুঁজে পেয়েছিস।
আবিদ কাল রাতেই খুঁজে বার করেছে।
ডাক্তার।
অনেক ফোন কাল থেকে এসেছে। তোমায় শোনাবো। সব রেকর্ড করে রেখেছে আবিদ। তুমি বুঝতে পারবে।
অনিদা হিমাংশুদা ডাকছে। আবিদ এসে বললো।
আমি ভাতরে গেলাম।
কিরে হিমাংশু।
ডাক্তার কি বলে শোন।
কি হয়েছে।
তুমি সব লিখিয়ে নেবে।
বেশি কথা বলার সময় নেই। যা বলছি করুন।
তোমায় একটা কথা বলি শোনো।
দ্বীপায়ন ছবিগুলো নিয়ে আয়তো।
ইস তুমি ওগুলোও পেয়ে গেছো।
কেউ এখনো দেখেনি দ্বীপায়ন ছাড়া।
ঠিক আছে। ঠিক আছে করে দিচ্ছি। সই করে দিলে সব আমায় ফেরত দেবেতো।
সেটা পরে ভাবা যাবে।
দাদা আপনারা ঘরের বাইরে জানতো কাজের বহুত অসুবিধে হচ্ছে। অবিদ বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো।
দাদা উঠে দাঁড়ালো। ডাক্তার দৌড়ে এসে দাদার পায়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফললো দাদা আপনি যাবেন না।
আর কি বাকি রেখেছেন।
হিমাংশুর হাত থেকে দলিলগুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে এগিয়ে দিলো। সই কর।
ডাক্তার আবিদের দিকে একবার তাকালো।
কাল রাতের কথা মনে আছে তো।
মনে আছে ভাই।
ডাক্তার কাগজনিয়ে সই মারতে শুরু করলো। হিমাংসু পাশে দাঁড়িয়ে।

আমি হিমাংশুকে বললাম আগের সই-এর সঙ্গে এই সইগুলো মিলিয়ে নে। আমি কিছুই বিশ্বাস করিনা।
হিমাংশু সব দেখে নিলো।
পাওয়ার অফ এ্যাটর্নিটা সই করা।
ওটা আগে করিয়ে নিয়েছি।
তখন কিছু বলেনি।
মিত্রার নাম লেখা ছিলোনা।
আস্তে করে বললাম হারামী।
চেকের এ্যামাউন্টগুলো বলে দিয়ে সই করা।
আমার কাছে কোনো টাকা নেই অনি।
সব আছে এখুনি বেরিয়ে যাবে দেখবেন বিট পরুক।
বিশ্বাস করো।
দাদা তোমরা বেরওতো। হিমাংশু ওই ঘরে গিয়ে দাদাদের সই করা।
আমার গলার স্বরে এমন কিছু ছিলো দাদা আমার দিকে একবার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো। ধীর পায়ে ঘরের বাইরে চলে গেলো।
আবিদ দরজা জানলা বন্ধ কর।
আবিদ তুরন্ত কাজ শুরু করে দিলো।
বল এবার তোর কথা।
এই প্রথম আমি ডাক্তারকে আপনি আজ্ঞা ছেড়ে একবারে তুইতে নেমে গেলাম। আবিদ রতন দুজনেই আমার দিকে একবার তাকালো। বুঝলো আজ অনিদা আরো বেশি ডেঞ্জার।
তুমি বিশ্বাস করো অনি।
বিয়ে করা বউকে টোডির বিছানায় তুলেছিলি কেনো।
আমি তুলি নি।
ঠাস করে ডাক্তারের গালে একটা থাপ্পর মারলাম।
শুয়োরের বাচ্চা।
এই প্রথম রতনদের সামনে আমি মুখ খিস্তি করলাম। ওরা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
খানকির ছেলে। সিডিটা কোথায়।
জানি না।
আবার একটা থাপ্পর।
বল কোথায়।
বলছি।
সজোরে একটা ঘুসি ডাক্তারের মুখে আছড়ে পরলো। নাক দিয়ে ঝড় ঝড় করে রক্ত পরতে লাগলো। তলপেটে অটোমেটিক পাটা চলে গেলো। আমার রুদ্রমূর্তি দেখে আবিদ আমাকে জাপ্টে ধরে ফেললো।
খানকির ছেলে। তুমি ঘুঘু দেখেছো এখনো ফাঁদ দেখোনি।
অনিদা তুমি থামো আমরা আছি। রতন আমাকে জাপ্টে ধরে আছে।
শুয়োরের বাচ্চা তোর অনেক নখরামি সহ্য করেছি। পঁয়তাল্লিশ দিন ধরে তোর ওপর আমি হোম ওয়ার্ক করেছি। আমি এই টুকুতে হাঁপিয়ে গেছিলাম।
ডাক্তার মাটিতে পরে কাতরাচ্ছে।
যা বলবো তাইতে সই করে দে নাহলে এখুনি দুনিয়া থেকে তোকে ওপারে পাঠিয়ে দেবো। আবিদ চেক বইগুলো নিয়ে আয়।
আবিদ বলার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুললো।
দেখলাম গেটের মুখে সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে।
দাদা দৌড়ে ভেতরে এলো।
চোখ দুটো ছল ছল করছে। তোর কিছু হয়নিতো। কথা বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো।
না। তুমি এখন চলে যাও।
ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললো। আপনি ছেলেটার লাইফটা একেবারে শেষ করে দিলেন।
ডাক্তার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। নাকের ডগা দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে।
হিমাংশু এলো। ম্যাডাম সব রেস্ট্রি করে দিয়েছে। ওনার থাম্ব ইম্প্রেসন দরকার।
নিয়ে নে।
প্রত্যুষ ছুটে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
মল্লিকদা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

রতন আমার পাশে।
দাদা তুমি শান্ত হও।
গাড়ি রেডি রাখ এখুনি ওর বাড়িতে যাবো। আজই এই খেলা শেষ করবো। আরো অনেক মাল আছে। আমায় গিয়ে ঘাঁটতে হবে।
তুমি বিশ্বাস করো।
দিকবিদিক জ্ঞনশূন্য হয়ে পাটা সজোরে ছুঁড়েদিলাম ডাক্তারের দিকে। রতন ধরে ফেললো।
প্রত্যুষ ঘরে ঢুকলো কাগজগুলো নিয়ে। আবিদ ডাক্তারের আঙুলে কালি লাগিয়ে থাম্ব ইমপ্রেসন নিয়ে নিলো।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম সব ভালো করে দেখে নে। কিছু যেনো বাকি না থাকে। এ মলের থেকেও বিষধর সাপ। ছোবোল খাওয়ার আগে আমি ওর বিষদাঁত সব কটা ভেঙে দেবো।
হিমাংশু মাথা নীচু করে আছে।
চেক বইগুলো নিয়ে আয়।
প্রত্যুষ বেরিয়ে গেলো।
হিমাংশু আমার কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। তুই একটু শান্ত হ।
শান্ত কিরে তোদের এখনো অর্দ্ধেক কথা বলিনি। বললে এখুনি রতন ওকে মেরে দেবে।
রতন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল ডগডগে। দাঁতের পাটি দুটো একবার ফুলে উঠছে আবার সমান হচ্ছে।
প্রত্যুষ চেক বই নিয়ে ঢুকলো।
আমি হাতে নিয়ে বললাম মিত্রার নামে প্রতিটা চেক বই থেকে দশ কোটি টাকা করে লেখ।
বিশ্বাস করো সব কটাতে নেই।
আমার আশি কোটি টাকা চাই। কিভাবে দিবি আমি জানি না।
আমি তিনটে চেকে দিয়ে দিচ্ছি।
তাই দে। হিমাংশু।
একটা স্ট্যাম্পপেপারের ওপর লিখিয়েনে ওই নার্সিংহোমগুলোর শেয়ার কোনোদিন মিত্রা ডিমান্ড করবেনা। তার বিনিময়ে এই টাকাটা ও দিচ্ছে।
লিখছি।
একটু জল খাবো।
জল মদ মেয়েছেলে সব তোকে দেবো। আগে অনিদা যা বলছে তাই করেদে। তারপর। রতন খুব ধীর স্থির ভাবে বললো।
সন্দীপ কোথায়।
বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দাদা বললো।
আমি বাথরুমে গেলাম। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। বুকের ভেতরটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে। ক্লাস টেনে পরার সময় একবার চিকনাকে ধরে খুব মেরেছিলাম। ওটাই আমার জীবনের কাউকে শেষমারা। চিকনা একটা অন্যায় কাজ করেছিলো বলে। তারপর পীরসাহেবের থানে এসে খুব কেঁদেছিলাম। আমার হাতদুটোকে তুমি পঙ্গু করে দাও যেনো আমি কাউকে কোনোদিন মারতে না পারি। অনাদি বাসু সেটা দেখতে পেয়ে আমাকে বুঝিয়েছিলো। তুইতো অন্যায় করিসনি। চিকনা স্বীকার করে নিয়েছে। তুই বিশ্বাস কর। আজ আমার পাশে অনাদি বাসু কেউ নেই। আজ আমাকে বোঝাবার কেউ নেই। আমার পাশে কেউ নেই। হাতের কাছে নেই পীর সাহেবের থান। চোখ বন্ধ করে অশ্বত্থ গাছটা দেখতে পেলাম। ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললাম। কতক্ষোণ বাথরুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলাম জানিনা। দরজা ধাক্কাবার শব্দে আমার হুঁশ হলো।
কিরে অনি দরজা খোল। দাদার গলা।
অনি এই অনি কথা বলছিসনা কেনো।

ধরা গলায় বললাম, খুলছি দাঁড়াও।
আমি ভালো করে চোখ মুখ ধুয়ে দরজা খুললাম।
আমার ঘরে তখন সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার সামন্ত এসেছেন। ডাক্তারদাদা আমাকে দেখেই এগিয়ে এলেন। রেজিস্ট্রার ম্যাডাম এগিয়ে এলেন। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মুখ তুলতে পারছিনা।
তুমি কষ্টপেওনা অনি কাল থেকে দেখছি এই বাড়িতে একটা হুলুস্থূলুস কান্ড চলছে।
আমার মাথা নীচু।
রাতে কিছু বুঝতে পারিনি। আজ নিজে থেকে চলে এসেছি। ভাবলাম তোমার বান্ধবীর আবার কিছু হলো কিনা। এসে দেখলাম এই অবস্থা। অমিতাভ আমাকে সব বলেছে। ডাক্তারকে আমি খুব ভালো করে চিনি। ও আমাদের এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
যেনো মনে হচ্ছে আমার কান দিয়ে কিছু ঢুকছেনা।
আমি তোমাকে ওর ব্যাপারে আরো হেল্প করবো। কথা দিচ্ছি আজই ওর রেজিস্ট্রেসন আমি ক্যানসেল করার ব্যবস্থা করছি। ওযে এতটা নীচ জানতাম না। তুমি স্ট্রং ম্যান। ভেঙে পরলে চলবেনা। অমিতাভ ওকে নিচে নিয়ে যাও।
আবিদ রতনের দিকে তাকালাম। ওরা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার এই অবস্থাটা ওরা সহ্য করতে পারছেনা। ওদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। কিন্তু কিছু করার নেই এই পরিবেশ ওদের মতো নয়।
আমি নিচে চলে এলাম। আমার পেছন পেছন নিরঞ্জনদা মল্লিকদা রেজিষ্ট্রার ম্যাডাম। বুঝলাম হিমাংশু রেজিষ্ট্রার ম্যাডামকে সমস্ত ঘটনা বলেছে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম। বাগানের রাস্তায় চারটে গাড়ি দাঁড়িয়ে। গেটের বাইরে আরো দুটো গাড়ি। গাড়ির মধ্যে কয়েকটা ছেলে তাকিয়ে তাকিয়ে ওপরের দিকে দেখছে। চোখে মুখে চাপা টেনসন। খালি নির্দেশ পাওয়ার অপেক্ষা।
আমি নিচের ঘরের সোফায় এসে মাথা নীচু করে বসলাম। ম্যাডাম আমার পাশে বসলেন। নিরঞ্জনদা এক গ্লাস জল এনে দিলেন। আমি টেবিলে রাখতে বললাম।
খেয়ে নে। মল্লিকদা বললেন।
আমি জলটা খেলাম।
বুঝতে পারছি আমার চোখ মুখ জবাফুলের মতো লাল। নিজের চেহারাটা নিজে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে সবার চোখ দিয়ে নিজের চেহারাটা দেখতে পাচ্ছি। নিরঞ্জনদা রান্নাঘরে গেলো। বুঝলাম চা করেছে। মল্লিকদাও রান্নাঘরের দিকে গেলো।
তোমায় চিন্তা করতে হবেনা অনি। আমি আইনত যা যা করার দরকার করে দিয়েছি। হিমাংশু আমাকে সমস্ত ঘটনা বলেছে। ম্যাডাম আমার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন।
আমি খুব খারাপ কাজ করে ফেললাম ম্যাডাম।
একটুও খারাপ কাজ করোনি। যা করেছো ঠিক করেছো। বরং কম করেছো।
না ম্যাডাম।
মুখে হাত চাপা দিলাম।
এই দেখো পাগলামো করে। মল্লিকদা বললেন।
আমি মুখে হাতচাপা দিয়ে নিচু হয়ে বসে আছি।
তোরা ষন্ডামার্কা গুলো কি করতে আছিস। তোদের তাহলে কি করতে পাঠিয়েছি। পুঁচকে একটা ছেলে যদি সব চাপ নেবে তোরা ঘোড়ার ঘাস কাট ময়দানে গিয়ে।
গলাটা শুনে মাথা তুললাম। এই বাজ খাঁই গলা দামিনী মাসির ছাড়া আর কারুর নয়। উঠে দাঁড়ালাম। মাসি এখানে কেনো!
এটা ডাক্তার।
হ্যাঁ। রতনের গলা।
তোকে কুত্তার মতো মেরে দেবো। তোর কতোবরো ক্ষমতা আমি দেখবো। অনি কোথায়।
নিচে।
ছেলেটাকে তোরা শান্তিতে একটু বাঁচতে দিবিনা। সারাটা জীবন তোদের জন্য করে যাবে। গলাটা সামান্য ধরে এলো।
আমি তাড়াহুড়ো করে ঘরের দরজা দিয়ে সিঁড়িরা কাচে এলাম। দেখলাম আমার সামনে দামিনী মাসি।
এই দামিনী মাসিকে আমি আগে কখনো দেখিনি। পাটভাঙা লালপার তাঁতের শাড়ি পরেছে। বাড়িতে মায়েরা যেরকম আটপৌরে ঢঙের কাপর পরে সেই রকম। একেবারে বড়মার মতো লাগছে। মাথায় ডগডগে সিঁদুর। পেছনে কবিতা দাদা সামন্ত ডাক্তার হিমাংশু সন্দীপ। সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে। রতন আর আবিদকে দেখতে পেলামনা।
আমি দামিনী মাসিকে জড়িয়ে ধরলাম। দামিনী মাসির স্নেহভরা হাত আমার পিঠে।
কেঁদে কেঁদে মুখটা কেমন করেছিস দেখেছিস। তুইতো কাঁদার ছেলে নোস। বল আমাকে সব কথা। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks