দেখি নাই ফিরে - (Part-47)

রতন এদের তোর কাছে রেখেদে। ডাক্তারকে হোটেলে রাখ। কালকের কাজটা আগে শেষ করি। তারপর দেখি কি করা যায়। তোকে বলে রাখি অবতার সাগির ডাক্তারকে আগে থেকে চেনে। আমার কাছে অস্বীকার করছে। ওদের কাছথেকে আরো খবর পাবি।
ব্যাশ তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। বাকিটা আমি বুঝে নিচ্ছি।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। তুই একটু বোস। আমি নীচ থেকে আসছি।
একসঙ্গে সকলে নামলাম। রতন কবিতা বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কাছে গেলো। নীচু স্বরে কথা বলছে। তিনখানা গাড়ি দাঁড়িয়ে বাগানের রাস্তায়। দেখলাম বাগানের চারপাশে লোক দাঁড়িয়ে আছে। আধো অন্ধকারে মুখগুলো বোঝা যাচ্ছে না। বাড়িটাকে পুরো ঘিরে রেখেছে।
আমি রান্নাঘরে গেলাম। গরম জল বসালাম। গাড়ির আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম ওরা যে যার বেরিয়ে গেলো। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। মাথার মধ্যে একটা কথা চক্কর মারছে ওরা মিত্রাকে সরিয়ে দেবার স্কিম করেছিলো। ইসলামভাই শুনলে কি করবে ভেবে পাচ্ছিনা।
কিরে তুই নিচে অন্ধকারে কি করছিস।
তাকিয়ে দেখলাম দাদা আমার পেছনে রান্নাঘরের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
নিঃশব্দে ঢুকেছে। কিছু টেরই পাইনি।
তুমি। এত তাড়াতাড়ি।
ওপরে গেলাম হিমাংশু ছোটর ঘরে কাগজপত্র ছড়িয়ে বসে গেছে। তোর ঘরে একটা ছেলে একটা মেয়েকে বসে বসে কথা বলতে দেখলাম। ওরা কারা।
কাদের কথা বলছো।
ওই যে গাড়ি নিয়ে এক দঙ্গল ছেলে বেরিয়ে গেলো।
তোমাকে জানতে হবে না।
সেতো আমি জানি আমাকে কিছু জানতে হবেনা। তোর ফোন বন্ধ কেনো।
কে বললো।
ফোন করছি পাচ্ছিনা।
দাঁড়াও কথা বলোনা। তোমার সঙ্গে আর কে এসেছে।
কে আসবে। মল্লিক নিরঞ্জন।
খাবার নিয়ে এসেছো না বানাতে হবে।
নিয়ে এসেছি।
কোথায় রেখেছো।
টেবিলের ওপর আছে।
আচ্ছা। যাও গিয়ে বসো। চা নিয়ে যাচ্ছি।
ডাক্তার কোথায়।
উঃ বড়ো বিরক্ত করো।
ঠিক আছে আমি মল্লিকের ঘরে গিয়ে বসছি।
যাও।
আমি চা বানিয়ে নিয়ে পটে ঢাললাম। ট্রের ওপর কাপ ডিস সাজিয়ে বিস্কুটের কৌটো নিলাম। সিঁড়িদিয়ে ওপরে উঠলাম। দাদা মল্লিকদা কথা বলছে।
ছেলেটাকে ওরা একেবারে মেরে দেবেরে।
তুমি কি করবে বলো। ওর কপাল।
এরকম জানলে ওকে না বলতাম।
মেয়েটার দিকে একবার তাকাও।
সেই জন্য কিছু বলতে পারছিনা।
কি করবে। আর এই ব্যাপার তুমি আমি ট্যাকেল করতে পারতাম।
কোনোদিনই পারতাম না।
কথা কম বলো এখুনি অনি ওপরে আসবে। শুনতে পাবে।
আমি শিঁড়িতে দাঁরিয়ে পরলাম।
কি করে চুপ থাকি বল। বড় যা বললো তাতেতো আমার বুক হিম হয়ে যাচ্ছে।
দাদা মিত্রার কোনো সম্পত্তি নেই সব মিঃ ব্যানার্জী নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। হিমাংশু বললো।
বলো কি! সব।
আধঘন্টা আগে এলে দেখতে পেতেন। এরকম মার জন্মে দেখিনি। আজ দেখলাম। মিঃ ব্যানার্জীকেও দিয়েছে। এখানেই যদি ওই অবস্থা করে, ওদের ডেরায় নিয়ে গিয়ে কি করবে ভাবতে পারছিনা।
খুব মেরেছে। নিরঞ্জনদার গলা পেলাম।
ওইযে মেয়েটা বসে আছে অবতার না কে তাকে এক লাথি মেরে মুখ ফাটিয়ে দিলো।
তোমরা থামবে এখুনি অনি এসে পরবে। মল্লিকদা চেঁচিয়ে উঠলো।
আচ্ছা আচ্ছা।
আমি মিনিট দুয়েক পর বারান্দায় এলাম। প্রথমে নিজের ঘরে এলাম। দেখলাম রতন আর কবিতা বসে কথা বলছে।
তুমি আমাদের জন্য চা করতে গেছিলে।
হ্যাঁ। তোরা আমার গেস্ট।
কবিতা এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে ট্রেটা নিলো।
তুমি আমাকে বলবেতো।
ধর আমি দাদাদের ডেকে আনি।
আমি ছোটমার ঘরের দিকে গেলাম। তিনজনে খাটে। হিমাংশু আর ওর ছেলেদুটো নিচে বসে আছে। আমাকে দেখে দাদা বললো, কিরে।
এসো ওই ঘরে চা নিয়ে এসেছি।
ওরা সবাই এই ঘরে এলো।
কবিতা আমার টেবিলে কাপ সাজিয়ে চা ঢালছে। রতন দাদাদের দেখে উঠে দাঁড়ালো।
রতন দাদাকে দেখেছিস আগে।
আজ সকালে অফিসে ঢোকার সময় দেখেছি। এগিয়ে গিয়ে দাদাকে প্রণাম করলো। তারপর মল্লিকদাকে নিরঞ্জনদাকে।
দাদা এটা রতন। ইসলামভাই-এর পর ও সব কিছু দেখে। সকালে ওর সঙ্গেই ফোনে কথা হচ্ছিল।
অনিদা তোমার ফোন বন্ধ। ইসলামভাই ফোন করে পাচ্ছে না।
আমি ফোনটা পকেট থেকে বার করলাম। দেখি সত্যি সত্যি বন্ধ। অন করলাম।
কবিতা সবাইকে চায়েরকাপ এগিয়ে দিলো।
কবিতা। দাদা।
আমার কথা বলার আগেই ঠকাস করে তিনজনকে প্রণাম করলো।
একে চিনতে পারলাম না।
আমি দাদার বোন। আগে দাদাকে ভাই ফোঁটা দিতাম। রাখি বাঁধতাম। আমার ছেলে হওয়ার বছর থেকে দাদা আমার কাছে যায় না।
কোথায় থাকো।
বাড়ি সুন্দরবোন সোনাখালি এখন থাকি নুঙ্গিতে। আর কিছু জানতে চেওনা।
কি হলো। বলবিতো। আমার দিকে তাকিয়ে দাদা বললো।
দাঁড়াও আগে ইসলামভাইকে ফোন করি।
আমি ডায়াল করলাম মিত্রার ফোনে।
মিত্রা ধরলো।
তুই আজকে ওটাকে শেষ করে দিতে পারলিনা। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
ইসলামভাইকে দে।
আমরা সব শুনেছি।
তোরা সব শুনেছিস মানে!
রতন আমাদের সব শুনিয়েছে। তুই ওটাকে শেষ করলিনা কেনো। আগে বল।
আমি রতনের দিকে তাকালাম। রতন মাথা নীচু করে আছে। আমার ভয়েজ অন করা আছে। সবাই শুনছে।
দাদার হুকুম কি করবো বলো।
সেই জন্য তুই তখন বারান্দায় চলে গেলি।
হ্যাঁ।
তুই রাগ করিসনা। আমার শোনার দরকার ছিলো। আমারও কিছু কাজ আছে। সব তুই একা করলে চলবে কি করে। তুই এদের ওপরটা দেখেছিস। ভেতরটা দেখিসনি।
বড়মা কোথায়।
সামনে বসে আছে।
দাও।
সব শুনেছে।

ওইরকম গালাগালি খেস্তা খিস্তি সব শোনালে।
আমি অফ করে দিয়েছি মাঝে মাঝে বিশ্বাস কর।
তোমায় বার বার বলেছি।
আমি খামারে চলে গেছিলাম। মামনি আমাকে জোর করে ধরে এনেছে। ওর ইনটারেস্ট বেশি।
ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারতে।
কোথায় যাবো। সব তোর বাড়ির তলায়। কোথাও গিয়ে শান্তিনেই। ধরা পরেগেছি।
অনাদিরা সবাই শুনেছে। এখনো ওরা বসে আছে তোর ঘরে। তোর গলা না শোনা পর্যন্ত কেউ যাবেনা।
ভালো কাজ করেছো।
কবিতা কোথায়।
আমার পাশে বসে আছে।
কবিতা।
দাদা তুমি আমাকে না কোরোনা।
আমাকে ফিরে যেতে দে।
রতনদা তাই বললো।
ওদের পেটে আরো অনেক কিছু আছে। আমাকে বার করতে দে।
তুমি যা বলবে তাই হবে।
দামিনী বুড়ীকে আমি ফোন করেছিলাম। তুই পারলে ওকে গিয়ে আজ সামলা। ও আমার কথা কিছুই শুনছেনা।
কি বলবো বলো।
আমার থেকেও অনি মামনির গায়ে হাত পরবে বুড়ী কিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা। দশমিনিট আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।
রতন।
বলো দাদা।
তুই কবিতার সঙ্গে যা। ওখানে সব স্পটাররা বসে আছে। ওদের হাত থেকে এই তিনজন ছাড়া পাবেনা।
দাওনা শেষ করে। কবিতা বললো।
অনি চায়না। আমাদের ব্যাপার আলাদা অনির ব্যাপার আলাদা।
তোর সঙ্গে যে অনির আলাপ আছে আজ জানলাম। অবতারকে যে ও কোনো এক সময় বাঁচিয়েছে আজ জানলাম। বিশ্বাস কর।
তুমি জানতে না। দাদাইতো দামিনী মাসিকে বলে আমাকে বাঁচিয়েছে। আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। আমাকে বিয়ে দিয়েছে।
আমি কিছুই জানিনা।
বাজে বোকো না। আমি বললাম।
সত্যি কথা বললে বাজে বকা হয় তাইনা। ছোটমার গলা।
তোমরা সবাই ঠিক আছো।
বহাল তবিয়েতে আছি।
শুনে ভালো লাগলো।
তুই ওদের ছেড়েদে। কাল সকালে তোর কাজ গোছা। বাকিটা আমি দেখবো। তোকে ভাবতে হবে না। ইসলামভাই বললো।
ঠিক আছে।
রতন।
বলো দাদা।
ডাক্তারের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দে। আজ থেকে ওখানে চব্বিশ ঘন্টা পোস্টিং। কারা আসছে কারা যাচ্ছে। সব হিসাব করে রাখ।
আচ্ছা দাদা।
কবিতা তোকে যা বললাম তাই কর। আমি ফিরে যাই। তারপর দেখছি।
আচ্ছা দাদা।
আমি কাল রাতে যাবো না হলে পর্শু সকালে। আমি বললাম।
ঠিক আছে।
ফোনটা রাখলাম।

দাদা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে।
তোরা এতরাতে যাবি কি করে।
গাড়ি আছে। তোমায় চিন্তা করতে হবেনা।
ঠিক আছে যা। হিমাংশুদাদের একটু নামিয়ে দিবি।
নিশ্চই।
না না ওরা যাক আমি ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাবো।
কেনো দাদা।
তোমাদের আগে যেখানে যেতে বললো সেখানে যাও। ওটা আগে।
ঠিক আছে। চলুন আপনাকে ট্যাক্সি ধরে দিচ্ছি।
চলো।
হিমাংশু আমার দিকে তাকালো।
আমার যা প্রয়োজন নিয়ে নিয়েছি। আরও কাগজ আছে তুই ঘাঁট।
ঠিক আছে।
ওদের নিচ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে এলাম। দাদারা আমার পেছন পেছন নিচে এলো। ফিরে এসে দেখলাম তিনজনে নিচে সোফায় বসে কথা বলছে।
রেডি হয়ে নাও। আমি খাবার গরম করে নিই।
তুই এখানে এসে বোস।
অনেক রাত হয়েছে। খেতে খেতে কথা হবে।
একটু চা খাওয়া।
সেই তুমি দেরি করবে।
আমি রান্নাঘরে গেলাম। চারজনের জন্য চায়ের জল বসালাম।
দাদারা তিনজনে খুব নীচু স্বরে কথা বলছে। খাবারের প্যাকেটটা খুললাম। দেখলাম তড়কা আর রুটি কিনে এনেছে। প্যাকেট থেকে খুলে সব পাত্রে রাখলাম। মাইক্রো ওভেনের ভেতরে রেখে চা ছেঁকে নিয়ে চলে এলাম। সবাইকে চা দিয়ে নিজে নিয়ে বসলাম। দাদা আমার দিকে তাকিয়ে। কিছু বলতে চায়। আমিই বললাম।
কিছু বলবে।
কি করলি বলবিতো।
কিছুই করিনি। সব শুনলেতো।
কই শুইনলাম তোর বড়মা ওখান থেকে গালাগালি করলো। সন্দীপকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে এলাম।
সন্দীপকে আজ বলেছি।
সন্দীপ বলছিলো। মল্লিকদা বললো।
ওকে আস্তে আস্তে দায়িত্ব দাও। দেখবে ঠিক পারবে।
তুই তখন ওদের ধরলি কি করে বলতো।
সে অনেক কথা।
এইতো বাইপাস করে যাচ্ছিস। মল্লিকদা বললো।
হাসলাম।
জেনে কি করবে।
শিখবো।
তোমার থার্ড সেন্স তৈরি করতে হবে।
সোজা কথাটা বলনা।
সকালবেলা আসার সময় আমতলার ওখানে ইসলামভাই-এর লোকের গাড়ি ফলো করতে দেখলাম। নিরঞ্জনদা টের পেয়েছো।
একবারে না।
তখনই বুঝলাম স্কিম একটা হয়েছে। মিঃ ব্যানার্জী হন্যে হয়ে আমাকে খুঁজছে। এবং আমাকে কলকাতায় আসলেই কিছু একটা করতে চাইবে। এটা আরো সহজ আমার অফিস থেকে খবর পাওয়া। আমার অফিসের এখনো অনেকে মিঃ ব্যানার্জীকে মালিক বলে মানে। তাদের পেছনে মিঃ ব্যানার্জী পয়সাও ঢালে।
তুই কি এসব ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখিস।
আমার জায়গায় তুমি থাকলে তুমিও জানতে পারতে।
দাদ থম মেরে বসে গেলো।
আমি প্রথমে সনাতন বাবুর ঘরে গেছিলাম। সেখান থেকেই খবর লিক হয়েছে। কারণ সনাতন বাবু ছাড়া আর কেউ তখনও পর্যন্ত জানেনা আমি অফিসে। রিসেপসনিস্ট দিদিমনি সনাতন বাবুকে আমার আসার কথা প্রথমে বলে। তাছাড়া গলিতে ঢোকার মুখে রাস্তার অপজিটে রতনকে দেখেছি। তখনই সব বুঝে গেলাম। সনাতন বাবুর ঘরে যাওয়াটা আমার টোপ। সনাতনবাবু গিললো।
তারপর মিঃ ব্যানার্জীর ফোন এলো।
আমার ধারণাটা কতটা ঠিক সেটা কি করে বুঝবো। কল লিস্ট চাইলাম। দেখলেনা মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটের কল লিস্ট চেয়েছিলাম। সনাতনবাবু ওখানে বসে কিন্তু উনি ব্যাপারটা ধরতে পারেন নি। তখন তোমায় সেই জন্য বললাম দাঁড়াও অনেক কাজ তাড়াতাড়ি গিলে নিই। তুমি রাগ করলে।
আমার জায়গায় তুই থাকলে তুইও রাগ করতিস।
তারপরের ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পেলে। তবে রতন খুব ভালো কাজ করেছে। ইসলামভাইও ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিলো। চলো এবার খেয়ে নিই। আমি ওভেনে খাবার গরম করতে বসাচ্ছি।
ঠিক আছে।

খেতে বসে খুব একটা কথা হলোনা। অনিমেষদার বাড়ির ঘটনা নিয়ে কথা হলো। দাদা জানতেন না অনিমেষদার সঙ্গে আমার এরকম ফ্যামিলি রিলেসন আছে। অনিমেষদার বাড়ির আড্ডাটা আজ দাদার মনে ভীষণ দাগ কেটেছে।
কথায় কথায় দাদা এও বললেন তোর জন্য নিরঞ্জনের ব্যাপারটা দেখবে বলেছে। কেননা তুই কোনোদিন বাজে কাজ করবিনা। তুই যাইই করিস একটা পরিকল্পনা মাফিক করিস। নিরঞ্জনকে খুব বকাবকি করেছে। আপনি অনির পরিচিত হয়ে এই সব কাজ করেছেন কেনো। তারপর আমার কাছ থেকে যখন শুনলো রাগটা একটু থামলো। এও বললো আপনি না হয়ে অন্য কেউ হলে অনি আমাকে রিকোয়েস্ট করতো না।
আমার কাজের ব্যাপার নিয়েও অনিমেষদা বলেছেন। ও কাজের মানুষ। ওকে আটকে রাখবেন না। ওর যখনি অসুবিধে হয় আমার কাছে আসে। দুজনের মধ্যে যুক্তি তক্ক চলে ওর বৌদি ছাত্রী দুজনে সেই যুক্তি তক্কে অংশগ্রহণ করে তবে ও ডিসিসন নেয়। আমার সঙ্গে আলোচনা না করে ও কোনো কাজ করে না। আমি অন্ততঃ ওর ব্যাপারটা সব জানি। ওকে ওর মতো চলতে দিন।
নিরঞ্জনদাকে একপ্রকার হুকুম দিয়েছেন আমাকে সবরকম সাহায্য করার জন্য।
আমি ওদের তিনজনের মুখ থেকে সব শুনলাম। হুঁ হাঁ করে উত্তর দিলাম।
খাওয়া শেষ হতে আমি সব গুছিয়ে রেখে ওপরে চলে এলাম। মল্লিকদার ঘর থেকে কাগজ ভর্তি স্যুটকেস নিয়ে আমার ঘরে এলাম। খাটে সব ছড়িয়ে বসলাম। মল্লিকদা ওপরে উঠে এসে আমার ঘরে এলো।
কিরে ঘুমোবি না।
কাজ শেষ করে নিই।
বুঝেছি। আজ সারা রাত।
না। দেখি কি বস্তু আছে। আবিদ পুরো আলমাড়ি পরিষ্কার করে নিয়ে চলে এসেছে।
সাহায্য করবো।
না। নিরঞ্জনদা কোথায় শুলো।
দাদার কাছে। বেচারার সারাদিনটা আজ খুব খারাপ গেলো।
নিরঞ্জনদার গাড়ি।
এমএলএ হোস্টেলে।
যাও শুয়ে পরো।
তুই বললে তোর সঙ্গে লেগে পরতাম।
না।
যাই তাহলে।



যাও।
মল্লিকদা চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ করলাম।
মোবাইলটা বার করলাম। দেখলাম পৌনে বারোটা। তনু চিঠিতে লিখেছে আমার মেল বক্সে সব ইমেজ করে এ্যাটাচ করে দিয়েছে। টেবিলের ওপর থেকে ল্যপটপটা নিয়ে এলাম। মানি পার্টস থেক চিপটা বার করলাম। সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে খাটে বাবু হয়ে বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম।
ল্যাপটপটা চালিয়ে প্রথমে নেট কানেকসন করলাম। আমার মেলবক্স খুললাম। তানিয়ার মেলগুলো ওপেন করলাম। সত্যি তানিয়া খেটেছে। সমস্ত ডকুমেন্টস স্ক্যান করে ইমেজ ফরমেটে পাঠিয়েছে। প্রায় তিরিশ খানা ইমেজ। কি নেই। মিঃ ব্যানার্জীর ফেলকরা সার্টিফিকেট থেকে সব কিছু। উনি যে ইউনিভার্সিটিতে পরতে গেছিলেন সেই ইউনিভার্সিটির সমস্ত ডকুমেন্টস গুছিয়ে পাঠিয়েছে। এমনকি সেই ভদ্রমহিলা এবং ছেলেটির ছবি পর্যন্ত। এবং এও লিখেছে ওই ভদ্রমহিলার বোনকে নিয়ে এখন মিঃ ব্যানার্জী গোয়াতে থাকেন। এখান থেকে ট্যুরিস্টরা গোয়াতে যায়। ওনার পরিচিত হোটেলে ওঠে। গোয়ায় মিঃ ব্যানার্জীর নার্সিংহোমটা ড্রাগ বিক্রির আখরা এবং ব্লু-ফ্লিমের স্যুটিং হয়। বিশেষ করে দেশি মেয়েদের সঙ্গে বিদেশিদের। টোটাল ব্যাপারটা কনট্রোল করেন মিঃ ব্যানার্জী এবং ওই ভদ্রমহিলা। ভদ্রমহিলার নাম লিন্ডা।
আমি তানিয়াকে থ্যাঙ্কস জানিয়ে একটা মেল করে দিলাম। বললাম পরে তোমাকে সব বিস্তারিত জানাবো।
এবার বাক্সের কাগজ নিয়ে বসলাম। এক একটা খামে সব গোছানো আছে। হিমাংশু একটাও খোলে নি। সব ইনট্যাক্ট আছে। হিমাংশু ওর প্রয়োজনীয় কাগজ বার করে নিয়েছে।
আমি ঘেঁটে ঘেঁটে সব দেখলাম। এ যেন হিডিন ট্রেজার।
নিজের মতো করে প্রয়োজনীয় কাগজ গোছালাম। প্রত্যেকটার নাম আলাদা আলাদা করে দিলাম। আমার বোজার মতো করে। মিত্রার সই করা ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্পপেপার পেলাম প্রায় সত্তরটা। সব হাজার টাকা একশো টাকা পঞ্চাশ টাকার।
একটা খামে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেসনের সার্টিফিকেট পেলাম। মিত্রার ছাড়া আরো চারজনের। মিত্রার ডিভোর্সের সার্টিফিকেট পেলামনা। মনে মনে বললাম শুয়োরের বাচ্চা পাঁচটা বিয়ে করেছে। তার মধ্যে বোম্বাই গোয়া ভাইজ্যাক চেন্নাইয়ের চারটে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সার্টিফিকেট পেলাম।
যত বাক্স ঘাঁটছি তত অবাক হচ্ছি। আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবলাম এই রকম একটা ছেলেকে মিত্রার মা তার জামাই হিসাবে বেছে নিলেন কেনো। শুধুকি লোভ না অন্য কিছু।
আমার এই একটা দোষ। সব কিছুতেই পেছনের ইতিহাস খুঁজতে বসি। সত্যিতো বর্তমানে যা ঘটছে তাই নিয়ে চললে কি হয়। মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধে মাঝে মাঝে নিজেই হেসে ফেলি।
ফোনটা বেজে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকালাম। আড়াইটে বাজে। মিত্রার ফোন। হ্যালো বলতেই ভেসে এলো কিরে তুই ঘুমোসনি।
সময় পাই নি।
তার মানে।
কাজ করছি। তুই ঘুমোসনি কেনো।
ঘুম আসছেনা।
কোথায় শুয়েছিস।
তোর ঘরে।
আর কে আছে।
নীপা আমি।
তুই কোথায়।
বারান্দায়। নীপা ঘুমোচ্ছে।
ঠিক দেখেছিস না মটকা মেরে পরে আছে।
ঘুমোচ্ছে। তুই কি করছিস।
তোর বরের বাক্স ঘাঁটছি।
ঘুমিয়ে পর ওটা একটা বাস্টার্ড।
কাজটা গোছাই তারপর সব হিসাব করবো। তোর ভয় করছেনা।
একদম না। ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছিস।

পাচ্ছি।
চাঁদের আলোটা দারুন লাগছে।
তুই দেখ। তোর চোখ দিয়ে আমি দেখি।
পারবিনা। তোর দেখা আমার দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। তোর কথা বার বার মনে পরছে।
আমারও। তোকে একদিন দেখিনি। মনে হচ্ছে তোকে কতদিন দেখিনি।
আমার জন্য তোর কত কষ্ট।
কষ্ট ঠিক নয়। ভেতরটা যন্ত্রণা করছে। আবার কি ভাবছি জানিস।
কি।
তুই না থাকলে জীবনের এই দিকটা দেখা হতোনা।
চুপচাপ।
কিরে কাঁদছিস কেনো।
তুই এসব ছেড়েদে। যা হয় হোক।
এসব ইমোসনের কথা।
শুয়োরটাকে তুই ছেরে দিলি কেনো।
ছারলাম কোথায়। রেখে দিয়েছি। যতদিন না আমার কাজ গোছানো হচ্ছে ততদিন বাঁচিয়ে রাখবো।
আজকেই মেরে দিতে পারতিস।
মহাভরত দেখেছিস। কৃষ্ণ শিশুপাল ছাড়া কাউকে বধ করেনি। সবাইকে কথার ভয় দেখিয়েছে। রাজনীতির বেড়া জালে সবাইকে বন্দী করেছে। বড় বড় রথী মহারথীদের দিয়ে নিজের কাজ গুছিয়ে নিয়েছে।
তোর কথা আমি বুঝি না।
বুঝতে হবেনা। তুই তোর মতো থাক।
তোর ওপর বড়মা রেগে গেছিলো।
কেনো।
তুই মিউ মিউ করছিলি। তারপর আবিদ আর রতন যখন ধরে মারলো তখন বড়মা বলে উঠলো শরীর জোরালো। ছোটমা কি বললো জানিস।
কি।
মুন্না ওটা যেন আর বেঁচে না থাকে।
হাসলাম।
তুই বিশ্বাস করবিনা। চিকনাদের চেহারা দেখলে তুই ভয় পেয়ে যেতিস। ওরা যেনো এখুনি পেলে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতো।
তুই কি করছিলি তখন।
আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল। ছয়বছর একটা বিভীষিকা ময় জীবন কাটিয়েছি।
তোর ডিভোর্সের সার্টিফিকেটটা কোথায়।
আমার কাছে।
তুই সঙ্গে ছিলি না ডাক্তার তোকে এনে দিয়েছিলো।
আমি নিজে কোর্টে দাঁড়িয়ে সাইন করে নিয়েছি। কেনোরে।
তের বিয়ের সার্টিফিকেটটা পেলাম।
এখনো রেখে দিয়েছে। তুই ওকে মেরে ফেল।
একটা মানুষকে মেরে কি হবে বল। বরং তাকে জীবনমৃত করে রাখাই ভালো।
তোর দামিনী মাসির গলা আজ শুনলাম।
কোথায় শুনলি।
ইসলামভাইকে ফোন করেছিলো।
ইসলামভাইকে ফোন করলো তুই শুনলি কি করে।
আমার সিম খুলে ইসলামভাই-এর সিম ঢোকানো ছিলো। আমার ফোনটা ইসলামভাই-এর কাছে। ইসলামভাই-এর ফোনটা আমার কাছে। সঞ্জীবকে আজ ইসলামভাই টাকা দিয়েছে। একটা ফোন আনার জন্য।
এই জন্য তুই দামিনী মাসির গলা শুনেছিস।
কি বাজখাঁই গলা রে। ইসলামভাইতো কাঁপছিলো। শুরু করলো যা দিয়ে না কানে তুলো গুঁজতে হয়।
কেনোরে।
তোকে মারবে বলেছে।
তারপর।
ইসলামভাইতো হাঁ হুঁ করে যাচ্ছে। ওই কবিতা মেয়েটা কি ডেঞ্জার রে।
পেটের তাগিদে বুঝলি। আমার তখন কোনো ক্ষমতা ছিলোনা।
তোর কি ভ্যারাইটি কালেকসন।
হাসলাম।
ইসলামভাই বার বার বলছিলো অনি সত্যি ভগবান। আমি এদের একসময় আমার এন্টি মনে করতাম। এখন দেখছি এরা আমাকে বাঁচায়।
ঠিক কথা বলেছে ইসলামভাই।
দামিনী বুড়ী ইসলামভাইকে চব্বিশ ঘন্টা সময় দিয়েছে। বলেছে অনির শরীরে হাত পরলে ইসলামভাইকে পর্যন্ত মেরে দেবে।
দামিনীর সে ক্ষমতা আছে।
ইসলামভাইও তাই বলছিলো। দামিনী কথায় কথায় খালি তোর নাম বলছে। বলেকি ও আমার ছেলের থেকেও বেশি।
হ্যাঁ। আমরা এদের কত নামে ডাকি বলতো। দিনের বেলা এদের দেহপসারিনী বলি। আর রাতে এদের দেহ পাওয়া জন্য বলি ঘরের বউ। প্রেমিকা।
পরে ভজুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো। কি গালাগালটাই না ভজুকে দিলো। কেনো তুই অনিকে ছেড়ে গেছিস।
বড়মা কি বলে।
বড়মা এইসব দেখেশুনে থ। বলে কিনা আর কোনোদিন ভজুকে নিয়ে আসবেনা।
কাল দামিনী মাসির কাছে আমি যাবো।
আমাকে একবার নিয়ে যাবি। বুড়ীর কথা শুনে দেখতে ইচ্ছে করছে।
তোকে নিয়ে গেলে আমাকে গালাগাল করবে।
কেনো।
তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা।
ইসলামভাইকে বললো অনিকে একবারে ফোন করবিনা। ওকে ওর মতো কাজ করতে দে। আর আমরা আমাদের মতো কাজ করবো। আবতার আর সাগিরকে মনে হয় দামিনীর কাছে নিয়ে গিয়ে রেখেছে।
তোরা টপ টু বটম সব শুনেছিস।
শুনবো কিরে রেকর্ডিং হয়েছে। একদিকে ফোন চার্জ হচ্ছে একদিকে রেকর্ডিং হচ্ছে।
ওখানে চার্জ কি করে হলো।
সঞ্জীব সব ব্যবস্থা করেছে। ইসলামভাই-এর পরিচয় আজ ওরা জানতে পেরেছে। ওদের সে কি আনন্দ চোখ মুখ দেখলে বুঝতে পারতিস।
ছোটমা বড়মা ঠিক আছে।
বড়মা প্রথমে ভড়কে গেছিলো। দাদাকে ফোন করে দেড়েমুশে গালাগাল দিলো। বলেকিনা কাগজের অফিসে বসে সব মসকরা করছো। ছেলেটা সব বাঘ ভাল্লুকের সঙ্গে একা একা যুদ্ধ করছে।
নিরঞ্জনদার খবর শুনে কি বললো।
মরুক ওটা যেমন যোচ্চরি করেছে তেমন ফল ভুগুক। অনিকে এবার আমি না বলে দেবো।
এ যাত্রায় মনে হয় বেঁচে যাবে।
দাদা তাই বললো। নিরঞ্জনদা একবারও বড়মার সঙ্গে কথা বলেনি।
কালকের নিরঞ্জনদার সঙ্গে আজকের নিরঞ্জনদার আকাশ পাতাল তফাৎ।
কাল আমি ওইজন্য বলেছিলাম আমি বুবুনকে বলতে পারবোনা।
ভালো করেছিলি। বড়মার একটু বোঝার দরকার ছিলো।
তোর সঙ্গে আনিমেষদার এতটা গভীর রিলেসন আগে বলিসনিতো।
এটা কি বলার মতো কথা।
ইসলামভাই ঠিক এই কথা বললো। মামনি তুই ওকে জিজ্ঞাসা করিস তোকে এই কথা বলবে।
হাসলাম।
হাসিসনা। আমি এখনো তোর সব কথা শোনার যোগ্যতা অর্জন করিনি তাই না।
মন খারাপ করছিস।

একবারে না। কলেজ লাইফের পর তোকে দেখছি। তুই নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছিস। আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমাকে ছেরে যাসনা। তাহলে মিত্রা মরে যাবে।
তুই মালকিন বলে কথা।
ঠাট্টা করছিস।
তোর সঙ্গে ঠাট্টা করবো। তুই কারুর মামনি কারুর ম্যাডাম কারুর দিদি।
সব তোর জন্য।
আমি ফাউ।
পীরবাবার থানে যা ঘটালি ওটাও ফাউ।
না। ওই একটা জায়গায় আমি ঠিক আছি।
আমার উত্তর পাওয়া হয়ে গেছে।
এবার ঘুমিয়ে পর।
ভালো লাগছে না।
তোর সঙ্গে বক বক করতে গেলে আমার কাজ শেষ হবে না।
কাল আসবি।
পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক করে দেবে। তবে মল্লিকদা দাদা নিরঞ্জনদা যাবে। পর্শুদিন রেস্ট্রি আছে।
পূব আকাশটায় আলো দেখা যাচ্ছে।
দীঘা আড়ি চলে যা।
তুই না থাকলে মজা হয়না। কালকে তোর স্কুলে গেছিলাম। ওরা মজা করলো। আমি পারলামনা।
তুই যে তখন গাইড।
নারে তোর কথাবলা আর আমার কথা বলার মধ্যে পার্থক্য আছে।
কি করে বুঝলি।
বড়মা খালি বলছিলো মিত্রা তুই ঠিক বলতে পারছিস না। অনির সঙ্গে একবার আসতে হবে।
ঠিক আছে। এবার ঘুমো।
তুই সারারাত জাগবি। আমি ঘুমোবো। কেমন করে হয়।
তাহলে জেগে জেগে তুই বক বক কর আমি কাজ করি।
আজ সকালে গরমভাতে সরষের তেল মেখে খেয়েছি। তোর মতো চিংড়ি মাছের মোলা দিয়ে।
আমার জন্য রেখেছিস।
তোর নাম মনে করে করে খেলাম।
ব্যাস আমার খাওয়া হয়ে গেলো।
মিত্রা হো হো করো হেসে ফেললো।
তখন আমি সনাতনবাবুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি।
দাদা বললো। বড়মা তখন খুব কাঁদছিলো।
তোদের কান্না ছাড়া কি কিছু নেই।
তুই বুঝবিনা। তুই কাজ করিস আমারা টেনসনে ভুগি।
আমিকি টেনসনটা ক্রিয়েট করি।
না।
তবে।
ক্রিয়েট হয় তুই সমাধন করিস।
তাহলে অবুঝপনা করিস কেনো।
তোকে বোঝাতে পারবো না।
আমি রাখছি।
আর একটু আর একটু। তুই এরকম করিস কেনো।
তোদের নিয়ে মহা মুস্কিলে পরেছি।
আমরাও তোকে নিয়ে মুস্কিলে পরেছি।
তাই।
হ্যাঁ।
তুই যাবার সময় বলে গেছিলি ওখানে গিয়ে এই সব কীর্তি করবি।
জানলি কি করে।
তোর স্কুলে গিয়ে ইসলামভাই খালি উসখুস করছে। নীচু গলায় ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। বার বার তোর নাম করছে। চিকনা ব্যাপারটা প্রথম বুঝতে পারে।

চিকনা শেয়ানা ছেলে।
আমাকে এসে ফিস ফিস করে বললো। মুন্নাভাই কার সঙ্গে কথা বলছে। বার বার বলছে অনি যেনো বুঝতে না পারে। আমি চেপে ধরলাম। হেঁপি মেরে উড়িয়ে দেয়।
হা হা হা।
হাঁসিস না শোন না।
বল।
ছোটমা বললো। কিছুতেই বলে না। বড়মা যেই বললো তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে বল। তখন আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঝেড়ে কাশলো।
তারপর।
সেটা আবার সেই বকুল গাছের জঙ্গলের মধ্যে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে পাঁচু শুনে অনাদিকে রিলে করেছে। তখন থেকে ওরা সব এই বাড়িতে এঁটুলে পোকার মতো লেগে রয়েছে।
ওরা এখন কোথায়।
দুজন ও বাড়িতে দুজন এই বাড়িতে নিচে শুয়ে আছে।
এ বাড়িতে কে আছে।
চিকনা আছে আর একটা ছেলে। চিনি না।
ও বাড়িতে পাঁচু পচা।
হ্যাঁ।
তোর সব কথা চিকনা শুনছে।
যাঃ।
তুই জানিসনা ওরা কুকুরের মতো চোখ বন্ধ করে পরে থাকে। ঘুমোয় না।
বাজে বকিস না।
কাল মিলিয়ে নিস আমার কথা।
ঠিক আছে। তোর কেমন স্পেকুলেসন দেখবো।
মিলিয়ে নিস। ভজুরামের খবর কি।
মায়ের কাছে গালাগাল খেয়ে বলেকিনা এখুনি অনিদার কাছে যাবো। ইসলামভাই আমাকে নিয়ে চলো। তার কি রাগ।
ভজুরামের রাগ। হো হো হো।
হাসিসনা শোন না।
বল।
কেউ ওকে বাগে আনতে পারেনা। শেষে আমি গিয়ে বলি ভজু তুই যাবো বললেই যাওয়া যায়। বলে কিনা অনিদার যদি কিছু হয় মা মেরে ফেলবে। আমি তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠান্ডা করি। মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানিস।
কি।
পরের জন্মে আমি অনি হয়ে জন্মাবো তুই মিত্রা হয়ে জন্মাবি। তুই আমাকে বুবুন বলবি আমি তোকে মিত্রা বলবো।
কালকে থেকে তাই কর।
ধ্যাত হয় নাকি।
এবার ছার।
পূব আকাশটা কমলা রংয়ের হয়ে গেছে।
সূর্য উঠবে।
তুই আজ রাতে আসবি তাই তো।
দেখি।
দেখি না। আসবি।
ঠিক আছে।

আমি একবার জানলার দিকে তাকালাম। সত্যি সত্যি বাইরেটা আলো ফুটে উঠেছে। কোথা থেকে ভোর হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি করে বাক্স থেকে বাকি কাগজ বার করে গোছালাম। আলাদা আলাদা খামে ভোরে রাখলাম। সন্দীপকে একটা ফোন করলাম। ফনটা প্রথমে বেজে গেলো। কেউ ধরলো না। বুঝলাম বেটা এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি।
বাথরুমে গেলাম। মুখে চোখে ভালো করে জল দিলাম। আবার এসে বসলাম। সন্দীপকে আবার ফোন করলাম। এবার ধোরলো।
কিরে ঘুমোচ্ছিস।
তাহলে কি করবো।
বউ পাশে।
হ্যাঁ।
মজমা নিচ্ছিস।
শালা।
সকাল বেলা নাম সংকীর্তন শোনালি।
বল কি হয়েছে।
একবার আসতে পারবি।
আবার কি হলো।
ফোনে বলা যাবে না।
কাল দাদা তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। তুই এলিনা। আবার ঘোটালা।
আয় বোলবো।
কখন বল।
এখুনি চলে আয়। সঙ্গে তোর টিম।
কি হয়েছে বলতো।
আরে বাবা কিছু একটা হয়েছে তাই ফোন করে তোকে বিরক্ত করছি।
একথা বলছিস কেনো।
শোন আর একটা কাজ করবি।
বল।
অফিস থেকে একটা স্ক্যানার আর প্রিন্টার তুলে আনতে পারবি।
তুই ঝেরে কাশ। টেনসনে রাখছিস কেনো।
আয়না।
ঠিক আছে যাচ্ছি।
ফোনটা রাখলাম।
আমার প্রোয়জনীয় কাগজগুলো আলাদা রেখে স্যুটকেশ গোছাতে আরম্ভ করলাম। দরজায় ধাক্কার আওয়াজ পেলাম। উঠে গিয়ে দরজা খুললাম। দেখলাম নিরঞ্জনদা দাদা দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলে আমি খাটে এসে বসে পরলাম। ওরা ভেতরে এলো।
কাল সারারাত নিশ্চই ঘুমোসনি।
বোসো এখন কথা বলোনা।
সারারাত তাহলে কি করলি।
ঘাস কাটছিলাম।
নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফেললো।
কি পেলিরে।
অনেক কিছু, অপেক্ষা করো।
নিরঞ্জন দেখতো মল্লিকের চা কতো দূর হলো।
এসে পরবে দাঁড়াও না।
এই খাম গুলো কিরে।
সব আলাদা আলাদা এক একটা আর্টিক্যাল।
এও কি মল কেশ।
আর একটু উচ্চ মানের।
মল্লিকদা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো। নিরঞ্জনদা উঠে গেলো।
মল্লিক আগে অনিকে চা দে।
কেনো।
অনেকগুলো আর্টিক্যাল লিখেছে সারারাত ধরে।
তোমাকে বললো তুমিও বিশ্বাস করলে।
ও মিছে কথা বলেনা।
সত্যি কথাও বা কবে বলেছে।
আমি গম্ভীর হয়ে কাজ করে চলেছি। মল্লিকদা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো। চায়ের কাপে একটা চুমুক মেরে বিছানার ওপর রাখলাম।

বড়মা ফোন করেছিলো।
তোর বড়মা কোনোদিন আমাকে ফোন করে। আমি করলাম।
কি বললো।
তোর পাগলামোর কথা বললো। আর গাল দিলো।
তুমি কি বললে।
এ আমার কম্মনয় তুমি পারলে ওকে বুঝিও।
ব্যাশ কথা শেষ।
ওই হলো আর কি।
মরন বলেনি।
দু’চারবার বলেছে।
কাজ করতে করতেই ফিক করে হাসলাম। আজ একটু দেরি করে অফিসে যাবে।
কেনো।
অনেকগুলো সই করতে হবে তোমাদের তিনজনকে।
আবার কি করবি।
সম্পত্তি গুলো গিলতে হবে না।
কার।
ডাক্তারের।
ওটা ডাক্তার না পাষন্ড বলতো।
ওনার নামে যা বলবে তাই ম্যাচ করে যাবে।
দেখে বোঝা যায়না।
আমায় দেখে বোঝা যায় আমি এত শয়তান।
দাঁড়া তোর বড়মাকে ফোন করছি।
কি হবে।
দেখতে পাবি।
অনেক হয়েছে আর ফোন করতে হবেনা। মল্লিকদা বললো।
তুই কিছু খোলসা করে বলনা।
শুনে কি করবে সমাধান করতে পারবে।
তা পারবো না শুনতেতো ইচ্ছে করে।
মল্লিকদা।
বল।
আমি এখন নিচে যেতে পারবোনা। নীচটা তুমি একটু ম্যানেজ করো।
সে তোকে ভাবতে হবে না। কাজের মাসীকে পটিয়ে নিয়েছি।
এইতো কাজের কাজ করেছো।
কাল সারারাত এই কাজ করলি।
তুমিওতো সারারাত গল্প করলে।
তোকে আবার কে বললো।
খবর পেলাম।
খালি ঢিল ছোঁড়া। লেগে গেলে অনির থার্ড সেন্সেসন বলছে তাইনা।
তাহলে ফোন করে খবর নিই।
আর উপকার করতে হবেনা।
থার্ড সেন্সে।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
হাসছো কেনো।
তোর কথা শুনে।
কাল কেমন ঝাড় খেলে। বড়মাকে পর্যন্ত একটা ফোন করলে না।
তোকে কে বললো।
আবার কে মিত্রা। মল্লিকদা বললো।
আমি কিন্তু একবারও বলিনি আমার সঙ্গে কথা হয়নি।
তুই বক বক না করে বলনা কি পেলি। দাদা বললো।
শুনবে।
মল্লিকদা দাদার পালস বিটটা একবার দেখোতো।
থাম তুই।
খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে।
তা একটু আছি।
দাদার ফোন বেজে উঠলো।
নাও বড়মা।
হ্যালো।
আমার দিকে তাকিয়ে কিরে তোর ফোন বন্ধ।
চার্জ শেষ হয়ে গেছে।
চার্জে বসাসনি।
বসাবো।
তোর চার্জার কোথায়। মল্লিকদা বললো।
টেবিলে আছে।
ধর তোর বড়মা।
তুমি কথা বলো।
আমার সঙ্গে বললেতো।
কি হয়েছে বলো।
কাল সারারাত ঘুমোস নি কেনো।
এ খবর কে দিলো।
তুই খবর রাখতে পারিস আমি পারিনা।
তোমার দম নেই। তোমাকে একজন লাগিয়েছে।
কে বল।
চিকনা।
উরি বাবা তুই জানলি কি করে।
ওই যে বললাম।
কখন সই করাবি।
সব চলে এলে হবে।
ইসলামভাই আশেপাশে আছে।
হ্যাঁ। তোর ফোন বন্ধ।
চার্জ নেই।
ধর।
বল অনি।
আমি কি বলবো তুমি লেটেস্ট নিউজ দাও।
দামিনী বুড়ী আমার কথা শুনলোনা।
কেনো মেরে দিয়েছে।
দেয়নি তবে দিয়েছে।
সে আবার কি কথা।
বুঝে নে।
কবিতা কোথায়।
সেও দামিনীর সঙ্গে।
তুমি আর কি করবে।
ঠিক।
বেঁচে আছে না মরে গেছে।
রতনের কথা অনুযায়ী আশি ভাগ মৃত।
রতন কি করছিলো।
দামিনীর কাছে ও শিশু।
বুঝলাম।
আছে কোথায়।
দামিনীর ছাদে।
দেখি কাজ সেরে একবার যাবো।
যা। তোর কথা দামিনী শুনবে।
ডাক্তার।
কাল শরীর খারাপ হয়েছিলো। রতন ডাক্তার এনে দেখিয়েছে।
কি হয়েছিলো।
প্রেসার হাই।
টেঁসে গেলে গন্ডগোল।
টাঁসবেনা।
ছোট ফিট আছে।
হ্যাঁ।
খেজুর রস খেলে।
খেলাম।
আজ দাদাদের বিকেলের দিকে পাঠাবো। আমি যদি আজ যাই ভালো না হলে কাল সকালে।
আজ চলে আয়।
না হবে না। দাদারা যাবে আমার যাওয়া হবেনা।
কেনো। আরো কিছু কাজ আছে।
পারলে আয়।
দেখছি।
আমার একটা টেনসন গেলো।
হ্যাঁ।
ঠিক আছে। বড়দি খোঁচা মারছে।
দাও।
দাদার সঙ্গে কথা বলবে।
তোকে বলেছি।
ভাবলাম সেই জন্য তাড়াহুড়ো করছো।
কি করবি বলনা।
এইতো ঘেনোর ঘেনোর শুরু করলে।
বলনা।
সম্পত্তির মালিক হবো। আমার প্রচুর টাকার দরকার।

বুঝেছি তুই বলবিনা। দে তোর দাদাকে দে।
হ্যালো.....না আমি পারবোনা........ও মল্লিককে বলেছে মল্লিক ম্যানেজ করেছে......নিরঞ্জনের আবার কি হবে.......দোষ করলে শাস্তি পেতে হবে......ঠিক আছে।
দাদা মোবাইলটা পকেটে রাখলো।
মল্লিকদা এবার তোমরটা বাজবে।
কি করে বুঝলি।
কথা বলে শান্তি হলোনা।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
হ্যাঁরে সুরঞ্জনাকে তুই পরাস।
না।
ওই যে বললো তোর নোট।
আমার কলেজের নোট গুলো দিয়েছি।
তোর সঙ্গে আলাপ হলো কি করে।
বুঝেছি তোমার খচ খচানিটা মনের মধ্যে রয়েগেছে।
মল্লিকদা আর এক রাউন্ড হবে।
কিরে তোরা এত সকালে।
দেখলাম সন্দীপ দ্বীপায়ন আর সেই ছেলদুটো ঘরে ঢুকলো।
তুমি কিছু জানোনা।
না।
ও সকালে ফোন করে ঘুম থেকে তুললো। বললো চলে আয়।
কিরে কখন ফোন করলি।
আমি বাক্স গোছাচ্ছি। সন্দীপ আমার পাশে এসে বসলো। কাজ করতে করতেই দ্বীপয়নকে বললাম। দ্বীপায়ন টেবিলটা একটু ঠিক করে আমার লেপটপের সঙ্গে স্ক্যানার আর প্রিন্টারটা রেডি করো। কিরে তোরা ভালো আছিস।
হ্যাঁ। অনিদা।
বোস। মল্লিকদা এইবার একটু ব্যবস্থা করো।
তুই আগে বল।
বলবো কেনো চোখের সামনে দেখতে পাবে। চাটা নিয়ে এসো তারপর কাজ আরম্ভ করবো।
দাদা গুম হয়ে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম। তোমরা পাঁচজনে এই পাঁচটা আর্টিক্যাল লিখবে।
তারমানে।
ডকুমেন্ট দিচ্ছি। লিখে নেবে।
ও হবেনা। তুই লিখে দিবি।
কেনো।
আমরা এসবের কি জানি। কালকে দুম করে বললি। ডাক্তার তোমার সার্টিফিকেটটা ভুয়ো।
যা সত্যি তাই বললাম।
এতদিন প্র্যাক্টিস করলো কেউ জানতে পারলোনা তুই জেনে ফেললি।
ডাক্তার আমার কথার উত্তরে কি বললো।
কি করে বলবো তোর সঙ্গে কথা হচ্ছিলো।
তোমার বিশ্বাস হয়না।
অবিশ্বাসও হয়না।
ঘরের সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks