দেখি নাই ফিরে - (Part-58)

আমরা সবাই হাঁটতে আরম্ভ করলাম মন্দিরের দিকে। আমার পেছনে পাশে সবাই। এমনকি কাকা সেই ব্রহ্মণ মশাই পর্যন্ত।
জানো বড়মা আমাদের স্কুল থেকে একটু দূরে গেলে দত্তদের জমিদার বাড়ি। এই গোটা অঞ্চলটা জমিদার বাবুদের। এই মন্দির তারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই পুকুরটা তারা খনন করেছিলেন। শোনা কথা এই পুকুরের মাঝখানে নাকি অনেক কুয়ো আছে। কেনো বলোতো।
কেনো।
তুমি আমাদের লোকগাথার মধ্যে এই গল্পগুলো পাবে।
চোটমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
গ্রামের ঘরের ঘুমপারানি গান শুনেছো। বাচ্চাদের ঘুম পারাবার সময় মারা ওই গান গুলে গায়।
ভুলে গেছি।
আয়ঘুম যায় ঘুম বর্গী এলো দেশে/বর্গীদের ছেলে গুলো পথে বসে কাঁদে/আর কেঁদোনা আর কেঁদোনা ছোলা ভাজা দেবো/এবার যদি কাঁদো তুমি তুলে আছাড়া দেবো।
বড়মা হেসে ফেললো।
তুই জানলি কি করে।
পদি পিসির কাছ থেকে।
সেটা আবার কে।
ফণি জ্যেঠুর বোন। মরে গেছে।
যেটা বলছিলাম। বর্গীরা এক সময় বাংলা আক্রমণ করেছিলো। তখন দুই বাংলা এক ছিলো। কিছু মানুষের নিজের স্বার্থে আমরা নিজেদের ভাগ করেছি। এই বর্গীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য, এইসব জমিদাররা প্রচুর মন্দির তৈরি করেছিলো। আর পুকুরের যে সব কুয়ো দেখছো। সেখানে তাদের সোনাদানা এক একটা ঘরায় করে লুকিয়ে রাখতো। বর্গীরা আক্রমণ করলে। ঘর লুঠ করবে। মন্দির লুঠ করবেনা। জানতেও পারবেনা এই রকম একটা পুকুরের মধ্যে তাদের সম্পদ লোকানো আছে।
মাঝে মাঝে গুপ্তধনের গল্প পরো, এই কনসেপ্ট থেকে তৈরি।
বড়মা আমার সামনে দাঁড়ালো। আমার মুখে হাত বুলোতে বললো। তুই এত পড়ার সময় পাশ কোথায় ?
ওই জন্য অফিসে যেতে দেরি হতো। তোমায় ফোন করে বলতাম দাদাকে বলে দাও।
ছোটমা হেসে ফেললো।
ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
ফণিজ্যেঠুর বাবা ওই জমিদার বাড়ির লেঠেল ছিলেন। একদিন গল্প করতে করতে ফণিজ্যেঠু আমাকে বলে ফেলেছিলো ওই বাড়িতে যে মন্দির আছে তার তলায় একটা অন্ধকার ঘর আছে জমিদারবাবু নাকি যারা দোষ করতো তাদের ওখানে আটকে রেখে দিতো। আমি দুষ্টুমি করলে আমাকেও ওখানে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে দেবে।
যখন বড় হলাম দেখলাম তার আগেই জমিদারদের জমিদারিত্ব চলেগেলো। জমিদার বাবুরা এখান থেকে টাউনে চলে গেলো। মন্দির রয়ে গেলো। আমি প্রায়ই জমিদার বাড়িতে যেতাম। মনাকাকা বাবার দৌলতে আমার একটু পরিচিতি ছিলো। ওই বাড়ির একটা কাজের মেয়েকে পটিয়ে, আমি একদিন সেই অন্ধ কুঠরির খোঁজ পেলাম। অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তার ইতিহাস জানলাম। ফণিজ্যেঠুকে এসে ধরলাম। জ্যেঠু আমার কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে বললো তুই জানলি কি করে! আমি বললাম তুমি হ্যাঁ অথবা না বলবে। জ্যেঠু আমার কথায় শায় দিয়েছিলো।
সেই দেবদাসী। মিত্রা বললো।
হ্যাঁ।
দেখলাম কাকা অনেকটা এগিয়ে গেছে আমাদের থেকে।
ডাক্তারদাদা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
তুই এগুলো সব খুঁজে খুঁজে বার করেছিস।
হ্যাঁ।
তখন তুই কোন ক্লাসে পরতিস।
ক্লাস টেন।
একা একা।
হ্যাঁ।
যানো ডাক্তারদাদা সেই দেবদাসী আর দামিণী মাসির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। খালি পরিবেশ বদলে গেছে। পরিস্থিতির অদল বদল ঘটেছে এই যা। শেষ বারে এসে সেই দিদাকে অনেক খোঁজ করেছি। পাইনি। ও পাড়ার লোকগুলো বললো তিনি মারা গেছেন।
এই জন্য তুই ফ্রয়েড পরিস।
আমি মাথা নীচু করলাম।
জানো ডাক্তারদাদা মানুষের মনটা আকাশের মতো। তুমি চেষ্টা করলেও ছুঁতে পারবেনা। তুমি উঁকি দিয়ে দেখতে পারো। উপলব্ধি করতে পারো। এর বেশি কিছু নয়।
ঠিক বলেছিস।
তারপর আমার কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললো, এই জন্য তুই এতো কষ্ট পাস।
হয়তো সত্যি হয়তো নয়।
জানো বড়মা এমনি এই মন্দিরটা দেখলে তোমার কোনো কিচু মনে দাগ কাটবে না। কিন্তু তুমি যখনি তার ইতিহাসটা জানতে পারবে, তখনি তোমার মনে সেই জায়গাটা দাগ কাটবে।
ঠিক বলেছিস। যেমন তোর পীরবাবার থান।
হ্যাঁ। শুধু আমি না। অনেকেই কিন্তু নিয়ম করে ওখানে দাঁড়িয়ে প্রণামকরে।
বাবাঃ তুই কি গল্প ফেঁদেছিস বলতো। সকলে মোহিত হয়ে শুনছে। কাকা বললো।
ও গল্প তুমিও জানোনা মাস্টার।
তা বলতে পারো। ছোট থেকে ওর জানার ইচ্ছেটা প্রবল। আমাদের গ্রামের বয়স্করা ওর বন্ধু ছিলো। একবার তো আমাদের গুণিনের কাছে মন্ত্র শিখতে গেছিলো। বাবু গুণিন হবেন।
তাই বলি তুই এতো গাছপাতার নাম জানিস কি করে এবং তার গুণাগুন। ডাক্তারদাদা বললো।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
যাও মন্দিরে যাও।
তুই যাবিনা।
তোমরা যাও, আমি যাচ্ছি।
হ্যাঁরে হাতপা ধোবো কোথায়।
ওইতো টিউবওয়েল আছে।
ওরা সবাই জুতে খুলে হাতা পা ধুয়ে মন্দিরে গেলো।
আমি মিনতিকে সঞ্জুকে কাছে ডাকলাম। চিকনা এগিয়ে এলো। বাসু অনাদি আমার পাশে। আমার মুখের ভাব ভঙ্গিতে ওরা বুঝতে পারেছে, আমি খুব সিরিয়াস। দুজনেই মাথা নীচু করে।
সঞ্জু তুই মিনতিকে ভালোবাসিস।
সঞ্জু মাথা নীচু করে রইলো।
আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছি।
হ্যাঁ।
মিনতি তুই।



হ্যাঁ।
এখন বিয়ে করতে চাস।
না।
কেনো ?
আমি পড়াশুনো করবো।
সঞ্জু তুই কি বলিস।
আমার কোনো আপত্তি নেই।
যদি স্যার এখুনি মিনতির বিয়ে দিতে চায়।
আমি রাজি।
তারপর ওর পড়ার কোনো ডিস্টার্ব হবেনা।
না। কোনোদিন হবে না। যদি হয় আমি আলাদা হয়ে পালিয়ে আসবো।
সেটা সমস্যার সমাধান হলো।
ওর পড়াশুনায় যাতে কোনো খতি না হয় তা আমি দেখবো।
যদি খতি হয়।
তুই যা শাস্তি দিবি আমি মনে নেবো।
মনে থাকবে।
হ্যাঁ।
যা দু’জনে একসঙ্গে পূজো দিয়ে আয়।
ওরা দুজনে চলে গেলো। চিকনা আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমার মুখটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
তোর সঙ্গে এখন কথা বলতে ভয় লাগছে।
কেনো!
জানিনা।
চল মন্দিরে যাই।
চল।
আমরা মন্দিরের ভেতর এলাম।
প্রচুর ফুল মিষ্টি। সবাই যে যার নিজের হাতে পূজো দিচ্ছে। বড়মা মনে হয় ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করেছে, মন্দির সম্বন্ধে, সে কিছু বলতে পারেনি। বড়মা কাকাকে মনে হয় কিছু বলছে। সবাই বেশ গোল হয়ে বসে। সূর্য একবারে পশ্চিম আকাশে ঢলে পরেছে। একটু পরেই মুখ লুকোবে।
বুবুন।
আমি ঘুরে তাকালাম।
আয় একটু।
আমি কাছে এগিয়ে গেলাম।
শ্যাম এই হচ্ছে অনি।
ওকে খুব ছোট সময় দেখেছিলাম।
হ্যাঁ। এখনতো ও কলকাতাতেই থাকে। এইটি বউমা।
উনি দুজনের দিকে একবার ভালো করে তাকালেন। বুঝতে পারলাম চোখে অনেক প্রশ্ন। বুঝলাম কাকা তাকে সঙ্গে করে আনার সময় অনেক কথা বলেছেন। আমি প্রণাম করলাম। উনি আমার মাথায় আবিরের টিপ লাগিয়ে দিলেন।
আরো প্রায় আধঘন্টা পর আমরা সবাই বেরোলাম। এখন গোধূলি। মিহি কুয়াশার মতো অন্ধকার আকাশটাকে ঢেকে ফেলছে। শুকতারা আকাশে জ্বল জ্বল করছে। অদিতি দেবাশীষের হাত ধরে। দুজনের মাতাতেই আবিরের ছোঁয়া। টিনা মিলি নির্মাল্য নীপা সবাই একে একে মন্দির থকে বেরিয়ে এলো।
বড়মা সবার হাতে প্রসাদ দিলেন আমরা খেলাম।
জানো বড়মা তোমরা যেখানে বসে পূজো দিলে। চৈত্রমাসে ওই জায়গাটা এক মানুষ গর্ত হয়ে যায়।
কেনো।
বহু মানুষ কোদাল দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে চলে যায়।
এ কি কথা।
হ্যাঁগো। এই মাটিটা খুব উপকারী, যেকোনো ব্যাথায় তুমি যদি গুলে লাগাও তোমরা ব্যাথা কমে যাবে।
গর্ত বোঁজানো হয় কি করে।
ওই পুকুর থেকে কেটে নিয়ে আসা হয়।
খালি গপ্পো।
তুমি ওই ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করো।
বড়মা চোটমা আমার কতা শুনে সত্যি সত্যি ব্রাহ্মণের কাছে গেলো। ব্রহ্মণ হাসছে। বড়মা ওখান থেকেই আমার দিকে ফিরে হাসলো।
কি অনি গপ্পোবলে।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষলো।
তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো অনি। ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
বলো।
তোদের এখানটা দেখলাম তোর গল্প শুনলাম। আমার একটা কতা মনে পরে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় পরেছি ঠিক বলতে পারবোনা।
কি বলোতো।
পীর সাহেব এবং মহাদেব এক ব্যাক্তি।
তোমার কথা ঠিক। তুমি এ্যান্টনি ফিরিঙ্গীর জীবনবৃতান্ত পরেছো।
না।
আমার কাছে আছে নিয়ে পোরেনিয়ো। সেখানে কবিয়াল ফিরিঙ্গী সাহেব একজন বাঙালী ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। যদিও কবিয়ালের সঙ্গে তার পরিচয় এক নবাবের বাড়িতে। সেখানে সেই ভদ্রমহিলা একজন বাইজী হিসাবেই প্রসিদ্ধা ছিলেন। তারপর সেই ভদ্রমহিলার দৌলতেই ফিরিঙ্গী সাহেব একদিন একজন নামজাদা কবিয়াল হন। একদিন ফিরিঙ্গী কবিয়ালের সঙ্গে তখনকার দিনের বিখ্যাত কবিয়াল ভোলাময়রার কবির লড়াই চলছে। ভোলাময়রার একটা প্রশ্নের উত্তরে ফিরিঙ্গী কবিয়াল বলেছিলেন, কিষ্ট আর খিস্টতে প্রভেদ নেইকো ভাই/শুধু নামের ফেরে জগত ফেরে/ আরতো কিছুই নয়। এখানে কিষ্ট বলতে কবিয়াল কৃষ্ণকে বুঝিয়েছেন।
ইসলামভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
ডাক্তারদাদা ফিক করে হেসে বললো, কি ভায়া হজম হলোনা। ও তোমার কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলে দিলো। উদাহরণ স্বরূপ।
তারপর বড়মার দিকে তাকিয়ে বললো। কি বান্ধবী তোমার ছেলের দৌড়টা দেখছো।
বড়মা হাসি হাসি মুখ করে বললেন, আমি ওর দৌড়টা জানি তুমি বরং তোমার বন্ধুটিকে একটু বোঝাও।
দেবারা হো হো করে হেসে ফেললো।
দাদা কপট রাগে বললো, আমাকে আবার এর মধ্যে টানলে কেনো। আমি কি অন্যায় করলাম।
চলো আর এখানে নয় স্যার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ওরা সবাই যে যার মতো বসলো। আমি অনাদিকে বললাম, তুই একবার আগে চলে যা স্যারকে গিয়ে বল। পারলে একটু সাহায্য কর।
অনাদি হেসে ফেললো।
বাসু বললো আমি চিকনা ওর সঙ্গে যাই।
যা।
ওরা সবাই এগিয়ে গেলো। আমরা পেছন পেছন গেলাম। নীপাদের ট্রলি থেকে গানের কলি ভেসে আসছে। বুঝলাম ওরা আন্তাকসারি খেলছে। বড়মারা নীচু স্বরে কথা বলছে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই পৌঁছে গেলাম।

উনা মাস্টারের বাড়িতে কারেন্ট আছে। লাইট জ্বলছে।
কাকা ট্রলি থেকে নেমেই চেঁচিয়ে উঠলো, কিরে উনা কোথায় গেলিরে।
স্যার বেরিয়ে এলেন। বড়মা ছোটমার সঙ্গে স্যারের পরিচয় ছিলো। কাকা দাদাদের সঙ্গে পরিচয় করালেন। স্যার সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। ডাক্তারদাদাকে প্রণাম করে বললেন আপনি আমাকে চিন্তে পারবেন না। আমি একবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছিলাম।
কেনো।
কোমরের হাড় সরে গিয়ে ব্যাথা হচ্ছিল।
ব্যাথা কমেছে না বেরেছে।
কমেছে।
তারপর আর গেছিলেন।
না।
কেনো।
আপনি বলেছিলেন যতদিন বাঁচবেন এই ওষুধ গুলো খাবেন।
খেয়ে যাচ্ছেন।
যাচ্ছি। সুস্থও আছি।
এবার আমাকে কি খাওয়াবেন। অনেকটা পথ এলাম।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
কিরে মা ঠিক কথা বললাম কিনা।
একবারে ঠিক।
বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো।
খালি খাই খাই। পেটে জায়গা থাকে কি করে।
ও তুমি বুঝবেনা বান্ধবী।
সবাই আবার হেসে ফেললো।
দেবাশীষকে কাছে ডাকলাম। বললাম কাকাকে বলেছিলি তোদের মনের কথা।
বলেছিলাম।
কাকাকে মনে করিয়ে দে। স্যারকে বলুক।
মিত্রা সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। শেষে বললো তুমি বুবুনকে বেত মারবে বলেছো আজ।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
তোর বুবুন যদি অন্যায় করে।
কি করেছে।
বলেছে তোদের লঙ্কাভাজা দিয়ে ঢেঁকি ছাঁটা চিঁড়েভাজা খাওয়াতে।
বাঃ বাঃ তোফা রেসিপি। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
কিগো কিছু বুঝলে। মিত্রা বললো।
যেনো স্যারকে ধমকাচ্ছে।
আমার অন্যায় হয়েছে মা। তোর কাকীমা অনির কথা মতো চিঁড়ে ভেজেছে শুকনো লঙ্কা দিয়ে।
ঠিক আছে। এবার বুবুনের বন্ধু মানে আমারও বন্ধু ওরা তোমাকে কিছু বলবে তুমি শোনো।
দেবা সবিস্তারে সব বললো।
তোদের অনি মাইক্রোস্কোপ দেখিয়েছে!
হ্যাঁ।
জানিস ওই মাইক্রোস্কোপটা নিয়ে একটা গল্প আছে।
জানি। বুবুন বলেছে।
তোদের বলেছে।
হ্যাঁ।
স্যার নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চোখটা ছল ছল করে উঠলো।
জানিস মা। ওই দিনটার কতা এখনো মনে পরলে নিজেকে খমা করতে পারিনা। ও আমার ছাত্র ওর কাছে ক্ষমা চাইতে পারিনা। মনার কাছে গিয়ে বহুবার ক্ষমা চেয়ে এসেছি। আজ তোর কাছে ক্ষমা চাইছি।
এমা এ তুমি কি কথা বলছো ভায়া। ডাক্তারদাদা বললো।
না ডাক্তারবাবু আমি ঠিক কথা বলছি। সেদিন বুঝিনি, আজ আমি অনুভব করি সেদিন আমি কতোবরো ভুল করেছিলাম। আজো আমার মাঝে মাঝে আক্ষেপ হয়।
সে ঠিক আছে। মাথায় রাখবেন অনি আপনার ছাত্র। ও কিন্তু ওর স্যারের বাড়িতে আমাদের নিয়ে এসেছে।
ডাক্তারদার কথায় মেঘ কাটলো।
স্যার বেঞ্চিতে বসলেন।
এবার দেবাদের ব্যাপারটা কি হবে বলুন। মামনি দেখনা চিঁড়েভাজা কতদূর।
ওরা যা দেবে আমি ল্যাবোরেটরিতে রাখবো।
আপনার কি কি লাগবে বলুন।

আমি কালকে একটা লিস্টি করে দেবো।
দেবাবাবু তোমাদের কাজ হয়ে গেলো। এবার কেটে পরো। আচ্ছা অনি গেলো কোথায় বান্ধবী।
আছে কোথাও দেখো, নাহলে আবার কোথাও গল্পের সন্ধানে গেছে।
আমি অন্ধকারে বাইরের খেতটায় ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছি।
মিনতি মিত্রা টিনা মিলি কাঁচের বাটিতে করে চিঁড়েভাজা সাজিয়ে নিয়ে এলো।
ওঃ গন্ধটা দারুণ বেরিয়েছে নারে মামনি।
আমি একমুঠো খেয়ে নিয়েছি। দারুণ।
অ্যাঁ।
হ্যাঁ।
তুমি খাও দারুণ টেস্ট।
বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো। জুড়িদারটা ভালো।
স্যার ডাক্তারের কান্ড কারখানায় মুচকি মুচকি হাসছে।
বুবুন কোথায় গেলো বড়মা।
কেনো ভেতরে নেই।
ছিলোতো এখুনি তারপর কোথায় ফুরুত করে হাওয়া হয়ে গেলো।
তুই ধরে রাখতে পারলিনা। ডাক্তার বললো।
আমার সাধ্যি নেই।
সেকিরে!
হ্যাঁগো। তোমরা পারছো ?
বুঝেছি।
মিত্রা চলে গেলো।
হ্যাঁগো উনা মাস্টার।
বলুন দিদি।
তোমায় অনি কোনো কথা বলেছিলো।
কিসের ব্যাপারে বলুনতো।
তোমার মেয়ের ব্যাপারে।
হ্যাঁ বলেছিলো।
ও আজকে তোমার মেয়েকে নিয়ে গেছিলো।
হ্যাঁ। যাবার সময় বললো। আপনারা সবাই আসবেন।
সেতো বুঝলাম। ছাত্রের মনের হদিস পাওনাতো ছাত্রকে কেমন পরিয়েছো।
আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছিনা।
ওখানে গিয়ে আমাকে বললো সুভদ্রা হরণ করে নিয়ে এলাম।
হো হো করে হেসে ফেললেন স্যার। বুঝেছি।
এবার মনের কথাটা বলে ফেলো।
ওর জেদের কাছে হার মানছি।
তাহলে আমি অনিকে বলতে পারি।
বলতে পারেন।
লাইট ম্যান। ডাক্তার বললো।
বড়মা সামন্তর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলো।
অনি বুঝি তোমায় ঘটকালি করার দায়িত্ব দিয়েছে।
আসার সময় ফিস ফিস করে বললো। স্যারের মনের কথাটা একটু জেনে নিও।
স্যার আবার হো হো করে হেসে ফেললো।
দেখুন ও কতটা সেন্সেটিভ। এর মধ্যেও ওর কোনো প্লেন আছে।
তা বলতে পারবোনা। আমাকে বললো তুমি একটু স্যারকে কথাটা পারবে।
ওকে বলেদেবেন আমার মনের কথা।
ওরা ওদের মতো গল্প করতে শুরু করে দিলো। আমি পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকলাম। তখন ওখানে হৈ হৈ চলছে। সঞ্জু চিকনা তরজা। সবাই বেশ এনজয় করছে। মিনতিও আছে। আমাকে দেখে দুজনে চুপ করে গেলো।

কিরে তুই কোথায় ছিলি। দেবাশীষ বললো।
বল এইতো এখানেই ছিলাম। মিত্রা বললো।
হাসলাম।
আমরটা কোথায় ?
পাবিনা। আগে সত্যি কথা বলবি তারপর পাবি।
আমি মিত্রার পাশে গিয়ে বসলাম।
একবারে আমার বাটিতে হাত দিবিনা।
বাটিটা চাপা দিয়ে কোলের কাছে তুলে নিলো।
মিনতি একটু চা আনোতো।
একবারে দিবিনা তুই বোস।
মিনতি উঠতে পারছে না। একবার আমার দিকে তাকায় একবার মিত্রার দিকে।
দেখছিস কার ক্ষমতা বেশি।
অব ভিয়াসলি তোর।
তাহলে।
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাত চলে গেছে ওর কোলের ভেতর লুকিয়ে রাখা বাটিতে।
না না না।
তার আগেই মুঠো ভর্তি হয়ে গেছে। খেলাম।
মনে রাখিস এটা আমার জন্য। রেসিপিটা আমার বুদ্ধিতে।
মিত্রা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে।

কিছু বলবি ?
মাথা নীচু করলো, তোর কাছে হেরেও আনন্দ।
ঠিক বলেছো মিত্রাদি। মিলি বললো।
ভালো সাকরেদ তৈরি করে নিয়েছিস। জল উঁচুতো উঁচু, জল নীচুতো নীচু।
কখনই না, যা সত্যি, মিলি তাই বললো।
হাসলাম। ওর গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। এবার দে।
বাটিটা এগিয়ে দিলো। এক মুঠো তুলে নিলাম।
চিঁড়ে ভাজা চিবোতে চিবোতে মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম। চা।
মিনতি উঠে দাঁড়ালো।
দেবা তোর কাজ করেছিস।
হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করলো। স্যার ডাক্তারদাদার পুরনো পেসেন্ট।
এ গ্রামের সকলেই কি ডাক্তারদাদার পেসেন্ট!
এই ফিল্ডে আর কে আছে বলতো ?
ঠিক। তোরা কি ঠিক করলি।
আগামী সপ্তাহে একবার আসবো।
তাতো হবেনা। আমার একটা কাজ আছে রবিবার। হয়তো তোদেরও থাকতে হবে।
ধর আমরা সোমবার এলাম সেদিনই ফিরে গেলাম।
এরা কষ্ট পাবে। এট লিস্ট ওয়ান নাইট তোকে স্টে করতে হবে।
দেখা যাবে।
নীপা ছুটে এসে মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে কি বললো। মিত্রা মুচকি হাসলো। উঠে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি একটু আসছি।
যা।
কি টিনা ম্যাডাম, শিব ঠাকুর কি বললো তোমায়। তিনি কবে আসছেন।
প্রার্থনা করলাম যেনো না আসেন।
কিরে দেবা! বলে কি ?
এই বেশ ভালো আছি অনিদা।
কেনো।
একটা ছবি মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে। যদি সেটা নষ্ট হয়ে যায়।
হুঁ। বেশ জটিল। তবে কি জানো টিনা। জীবনের সব ছবিই জল ছবি। তুমি নিজে আবার মনের মতো করে এঁকে নিতে পারো।
টিনা আমার দিকে তাকালো। কিছু বলতে চায়। পারলো না। মাথা নীচু করলো।
মিলি ম্যাডাম।
আমি কিছু চাইনি। তবে প্রার্থনা করেছি অনিদার মতো যেনো হতে পারি।
খুব কষ্ট।
হোকনা, খতি কি অনিদা।
দেবা ?
অদিতি চেয়েছে, আমি কিছু চাইনি।
তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করবিনা। চিকনা বললো।
তুইতো সঞ্জুর মতো একটা খুঁজে দিতে বলেছিস।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
কিরে আমি যা বললাম, সত্যি ?
তুই কি করে জানলি। চিকনার মাথা নীচু।
হবে। সবুরে মেওয়া ফেলে। তোর এখন অনেক কাজ। এটা মাথায় রাখিস। অনেক দায়িত্ব। পাশাপাশি বাসু অনাদি সঞ্জুরও। এটা ভেবেছিস।
হুঁ।
চাইবিনা কোনো দিন। চাইলেই ফুরিয়ে যাবে। না চাইতেই তুই যদি পাস। খতি কি।
চিকনা আমার দিকে তাকালো। চোখদুটো চক চক করছে। ফিক করে হেসে ফেললো।
আর কোনোদিন কোনো কিছু চাইবোনা।
তুই খালি তোর কাজটা মনদিয়ে করে যা। দেখবি ধরে রাখতে পারছিসনা।
আমি করবো অনি। তুই যা বলবি তাই করবো।
সোমবার থেকে একেবারে সময় নষ্ট করবিনা।
চিকনা মাথ দোলাচ্ছে।
মাথায় রাখিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম হিমাংশু। হঠাৎ এই সময়!
হ্যালো।
তুই কোথায়।
কেনো।
কাল দুটো কাজ ক্যানসেল হয়েছে। তাই কাল কোনো কাজ নেই, যদি সকালের দিকে বেরোই।
খুব ভালো। কখন আসবি বল।
একবারে ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো।
চলে আয়।
আমার সঙ্গে আমার এ্যাসিসটেন্ট যাবে।
আমি দেখেছি।
না।
ছেলে না মেয়ে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
ছেলে।
আমাকে চেনে।
না। তোর নাম শুনেছে।
সব কাগজ সঙ্গে নিয়ে আসবি।
ঠিক আছে।
হ্যাঁরে চেকগুলো ক্যাশ হয়েছে।
হয়েগেছে।
একটা টেনসন মিটলো। চিঠি সার্ভ করেছিস।
আমার কাছে এ্যাকনলেজ ফিরেও এসেছে।
গুড।
এবার বল কি ভাবে যাবো।
যেভাবে তোকে রুট চার্ট দিয়েছি।
ওখান থেকে ?
ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা।
ঠিক আছে।
আমাকে ফোন করিস কিন্তু।
আচ্ছা।
কেরে, হিমাংশু ? দেবাশীষ বললো।
হ্যাঁ।
ও আসছে ?
হ্যাঁ।
তুইতো আমাদের কি দায়িত্ব দিবি বললিনা।
সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
দেবা চুপ করে গেলো।
এবার উঠতে হবে। ওখানে দু’জন মাত্র রয়েছে।
সঞ্জু চলে গেছে। অনাদি বললো।
কেনো।
লাইটের কি হয়েছে। ওকে ফোন করেছিলো।
ও। লতা রেবা কোথায় ?
কাকীর কাছে।
চল দেবা। এবার এগোই, এদের বসিয়ে রাখলে সারারাতে গল্প শেষ হবেনা।
আমরা উঠলাম। বাইরে এলাম। খুব জোরে গল্প চলছে। মিত্রা মধ্যমনি হয়ে বড়মা ছোটমার মাঝখানে। আমায় দেখেই ডাক্তারদাদা বলে উঠলো, কি অনিবাবু যাবার সময় হয়েছে ?
হ্যাঁ।
স্যারের কাছে তোর অনেক অজানা কথা জানলাম।
আমি মাথা নীচু করলাম।

সব ভালো, একটুও খারাপ নয়।
স্যার কখনো ছাত্রের নিন্দা করেন না।
তুই সেই ছাত্র নোস যে তোর নিন্দা করবে। তোর প্ল্যান মতো সব কথা স্যারের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া হয়েছে।
মনে মনে বললাম, আমি সব শুনেছি।
তুই খুশী।
মাথা দোলালাম।
তোর কিন্তু অনেক দায়িত্ব বেরেগেলো।
আমি চুপ করে থাকলাম।
সবাই মিলে একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম। স্যার ডাক্তারদাদা, দাদার হাত ধরে বললেন আবার আসবেন।
বাড়ি পৌঁছলাম রাত সাড়ে আটটা। খেয়ে দেয়ে শুতে শুতে সেই রাত বারোটা।

সকালে দেবার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
কিরে যাবিনা ?
তোরা যাবি।
হ্যাঁ। আমরা সবাই রেডি।
চল।
মিত্রাকে ডাকলাম। ও তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। মুখ হাতপায়ে জল দিয়ে সবাই বেরিয়ে এলাম।
আজ মিত্রা সবার গাইড, খুশিতে কল কল করছে, সকলকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে আসছে।
বুবুন।
উঁ।
তুই পেঁপে পাতা ছিঁড়লিনা।
ওখানে কিন্তু ফাঁকা মাঠ, কোনো ঝোপাঝাড় নেই, দেখেছিস তো।
চেপে রাখবো। কি বল মিলি।
মিলি চুপ করে রইলো।
হ্যাঁ মিত্রাদি। টিনা বললো।
কিরে দেবা।
অনি আগে ব্যবস্থা করুক তারপর দেখা যাবে।
অনিদা তুমি পেঁপে পাতাটা আগে জোগাড় করতো। মিলি বললো।
চল ভূততলায় যাই।
আবার ভূত।
কিছু হবেনা। দেখবি জায়গাটা দারুণ সুন্দর। মিত্রা বললো।
আমরা ভূততলা পেরিয়ে নদীর ধারে চলে এলাম। মিত্রা সব গল্প ওদের শোনাচ্ছে। সেই খেঁজুর গাছ। দেখলাম কলসি ঝুলে রয়েছে।
যা নিয়ে আয়। মিত্রা আমাকে ঠেলা দিলো।
আবার বলছি, ভেবে দেখ।

ভেবে দেখার সময় নেই তুই যা তো।
মিলি টিনা অদিতি চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।
যাওনা অনিদা, দেরি কোরোনা প্লিজ, কেউ যদি চলে আসে খাওয়া হবেনা। মিলি বললো।
আমি হাসলাম।
খেঁজুর গাছে উঠে রস পেরে নিয়ে এলাম।
রস খাওয়া হলো। মিত্রা দেখালো রস খাওয়ার পর আমি কিভাবে ওকে নাচতে বলেছিলাম, তারপর কিভাবে ও নেচে ছিলো। ওরা হেসে গড়িয়ে পরে।
তখন নতুন, বুঝলি টিনা। ও যা বলছে তাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি। ও যে অতো বড়ো বাঁদর তাতো জানতাম না।
তুমি আর নেচোনা।
আমি হাসছি।
আচ্ছা অনি তোরকি একটুও দয়ামায়া হয়নি তখন। দেবা বললো।
দয়ামায়া। বারবার বলেছি ওখানে গেলে তোর অসুবিধে হতে পারে। না আমি যাবো। তো চল। ঠেলা বোঝ।
শয়তান। মিত্রা আমার কোমরে খোঁচা মারলো।
চল বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে সামন্ত কাকা চলে আসবে।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে পদ্মপুকুরে এলাম।
টিনা বললো, অনিদা তুমি এখানে চুপ্টি করে বসে থাকবে। কোথাও যাবেনা। আমাদের কথা চিন্তাও করতে হবেনা। আমরা আমাদের কাজ সেরে আসছি।
আমি হো হো করে হেসেফেললাম।
তোমায় কিন্তু আজ কোনো ডিস্টার্ব করিনি। মিলি বললো।
এতো সুন্দর সকালে প্রতঃকৃত্য। তাও আবার প্রকৃতির কোলে। নির্মাল্য বললো।
তোকে কাব্যি করতে হবেনা। যাবি।
যাবোনা মানে। রসকি তুমি একা খেয়েছো ?
দেবা প্যাকেটটা।
দেবা প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিলো।
তুই নিলি না।
নিয়েছি।
ওরা চলে গেলো। আজ ওদের পথ প্রদর্শক মিত্রা। আমি পদ্মপুকুরের ধারে বসলাম। ভোর হয়েছে। চারিদিকে পাখির কুজন। মনটা আনমোনা হয়ে গেলো। কাল থেকে অর্কর ম্যাসেজ আর পড়িনি। মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো পড়তে আরম্ভ করলাম। এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালাম। ম্যাসেজটা পরে আমার চোয়ালদুটো শক্ত হয়ে গেলো। শুয়োরের বাচ্চা এতদূর এগিয়ে গেছে। আজ তুই খামটা পেলেই তোর দৌড় থেমে যাবে। তখন তুই নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ো দৌড়ি শুরু করবি। তোর মতো অনেক খানকির ছেলেকে আমি সোজা করে দিয়েছি।
অর্ককে একটা ফোন লাগালাম। দেখলাম ফোন বাজছে।
কিগো অনিদা এতো সকালে।
তোর ম্যাসেজগুলো পড়লাম।
ঠিক আছে ?
হ্যাঁ।
তুই ঠেকাগুলো দেখেছিস।
বলতে পারো আশেপাশে ঘুরেছি। আজ আটটায় ডেকে পাঠিয়েছে। দুটো চামকি জোগাড় করেছি। আজ নিয়ে যাবো।

বড়রা সবাই বাথরুমে স্নান করলো। আমরা সবাই পুকুরে নামলাম। জল তোলপাড় করে স্নানপর্ব চললো। দেবাশীষ সাঁতার জানেনা। ও পুকুর পারেই বসে বসে স্নান করলো। চিকনা জলে ডুবে পুকুরের মাটি তুলে আনার খেলা দেখালো। টিনা মিলি অদিতি নীপা ওর পাশে পাশে সাঁতার কাটছে। সবাই বেশ মজা করছে। আমি এমনিই সাঁতার কাটছিলাম। বাসু অনাদির সঙ্গে কথা বলছিলাম।
চিকনা চেঁচিয়ে বললো, অনি তুই পারবি। তোর এখন আর দম নেই।
আমি হাসলাম।
যদি পারি কি দিবি।
তোকে যেখান থেকে বলবো সেখান থেকে ডুবে মাটি তুলে আনতে হবে।
ঠিক আছে, চেষ্টা করবো। তার আগে বল কি দিবি।
তোকে পাটালি খাওয়াবো।
ওতো তুই রেগুলার খাওয়াচ্ছিস।
আজ তুই আমাদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছিস।
নামলেখা আছে। তোদের গাছ।
আমাদের জমির গাছ।
হারুজানার কালা ইজমালি।
কখনই না। আমরা মেপে দেখেছি ওটা আমাদের জায়গা।
কাকাকে দলিলটা নিয়ে আসতে বল।
অনাদি দেখছিস। চুরি করবে আবার.......।
ঝপ করে জলে ডুব মারলাম। ডুব সাঁতারে চিকনার কাছে পৌঁছে, ওর গামছা খুলে নিয়ে চলে এলাম।
জলে ভেসে উঠতেই চিকনার সে কি তর্জন গর্জন।
নীপা হাততালি মারছে। অনিদার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ। বুঝতে পেরেছিলে অনিদা এই কু-কীর্তি করবে।
প্রথমে মিলিরা বুঝতে পারেনি। বোঝার পর ওদের হাসি ধরেনা।
দেবাশীষ ওপর থেকে চেঁচাচ্ছে। কি চিকনাবাবু চ্যালেঞ্জ করবেনাকি অনির সঙ্গে।
আর জীবনে করবোনা। তুই গামছাটা দে।
অনাদি ওকে জিজ্ঞাসা কর ওই গাছটা ওদের কিনা। ও আমার নামে সকালে বড়মাকে রিপোর্ট করেছে।
আমি গ্রামসভা ডাকবো।
ডাক। আমি উঠলাম।
তোর পায়ে ধরি। তুই গামছাটা দে।
সবাই হো হো করে হাসছে।
আমি বড়মাকে ডাকবো।
ডাক।
চিকনা কিছুতেই কাছে আসতে পারছেনা। এক গলা জালে দাঁড়িয়ে। সাঁতারও কাটতে পারছেনা।
মিলি ওর কাছে যাওতো।
মিলি যেই সাঁতার দিলো।
আমি কিন্তু ডুবে মরে যাবো অনি।
তুই মরে দেখা তুই মরেছিস।
দেনা ভাই, দাদা আমার।
উঃ কি রসের কথা শোন।
বড়মাগো। আমাকে অনি মেরে ফেললে। পুকুরে দাঁড়িয়েই চেঁচিয়ে উঠলো।
সাঁতার কাট দারুন লাগবে।
চিকনার তারস্বর চিৎকারে সবাই ঘাটের ধরে চলে এসেছে। আমি মাঝ পুকুরে জলে ভেসে রয়েছি। চিকনা একগলা জলে দাঁড়িয়ে। আমার পাশে মিত্রা অদিতি টিনা নীপা মিলি। সবাই হাসছে।

কিরে তোরা জল থেকে ওঠ এবার। বড়মা ওপর থেকে চেঁচালো।
আমি চেঁচিয়ে বললাম আগে চিকনাকে উঠতে বলো, তারপর আমরা উঠবো। ও আমাদের উঠতে দিচ্ছেনা।
দেবা বাসু জল থেকে হাসতে হাসতে উঠে গেলো। সবাই হাঁসছে।
চিকনা বাবা উঠে আয়না। ওরা কি তোর সঙ্গে পারে।
চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা। গুম হয়ে আছে। রাগে গড় গড় করছে।
বাসু বড়মার কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো। বড়মা প্রথমে আমার দিকে তাকালো চোখে হাসি মুখে গম্ভীর। ছোটমা একটা মাটির ঢেলা তুলে আমাকে ছুড়লো আমি জলে ডুব মারলাম।
কথাটা সকলে জেনে ফেললো, সবাই হাসছে। ইসলামভাই হাসতে হাসতে বসে পরলো।
কিহলো চিকনা গুরু বিট্রে করলো।
চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা।
কিরে আমি তোদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছি।
না।
ওটা কাদের গাছ।
ইজমালি।
বড়মা শুনলে চিকনা কি বললো।
বড়মা হাসছে। তোর মাথায় এরকম বদ বুদ্ধি আসে কি করে বলতো।
দেবাশীষ চেঁচিয়ে উঠলো, চিকনা চ্যালেঞ্জ করছিলো অনির সঙ্গে। দেখছো আমরা যারা ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। তারা এখন কোথায় আছি। চিকনারও হাল সেইরকম হবে। একটু অপেক্ষা করো।
ও তোদের মতোই হোক।
চিকনা আমি ডুবে মাটি তুলছি।
না তোকে ডুবতে হবেনা। তুই আমাকে ছুঁড়ে দে।
একটু অপেক্ষা কর।
আমি ডুব মেরে চিকনার কাছে গিয়ে ওর পায়ে হাত দিয়ে গামছাটা দিলাম। বুঝতে পারলাম চিকনা আমার হাত ধরতে গেলো, পারলোনা ছিটকে বেরিয়ে এলাম। ও ডুব মারলো। বেশ কিছুক্ষণ জলে দুজনে দাপাদাপি করলাম। দুজনেই হাঁপিয়ে গেছি। পারে উঠে এলাম।
চিকনা হাসছে। তোর এখনো এতো দম।
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো কিরে ওপারে যাবিনা।
আজ থাক বেলা হয়েগেছে।
ছোটমা দাঁত খিঁচিয়ে উঠলো, শখ দেখো মেয়ের।
আবার আমি আর চিকনা জলে ঝাঁপ মারলাম। ওদের সবাইকে নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে এলাম। খুব এনজয় করলো ওরা। টিনা বললো, মিত্রাদি জলটা কি ভারি গো।
নির্মাল্য হাঁপাতে হাঁপাতে বললো এটাকি তোমার সুইমিং পুলের জল।
আমরা পারে উঠে এলাম গা মুছে টাওয়েলটা মিত্রার দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে এলাম। চিকনা আমার পেছন পেছন।
দেখলাম সঞ্জু এসে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে।
কিরে!
তুই আর কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে পারলিনা। আমি এসে জল খাওয়াতাম। চিকনার গামছা ধরলো।
চিকনা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। বড়মা।
বড়মা ভেতর বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, কি হলোরে চিকনা।
দেখোনা সঞ্জুটা।
সঞ্জু।
নাগো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে।
আস্তে করে দাঁত কিড়মিড় করে বললো, দাঁড়া খাওয়া হোক তোকে বমি করাবো।
আমি ওপরের ঘরে চলে গেলাম। চিকনা নিচের বারান্দায় ওর নিজের জায়গা থেকে জামা কাপর পরলো।
নিচে চেঁচামেচির শব্দ। হুড়মুড় করে সবাই চলে এলো।
ঘরে ঢুকেই মিত্রা বললো।
কিরে তুই রেডি।
তাহলে কি তোর জন্য অপেক্ষা করবো।
মিত্রা দরজা বন্ধ করলো।
আমি আলমাড়ির আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি।
সরনা কি মেয়েদের মতো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াস।
আমি আয়না দিয়ে দেখতে পাচ্ছি মিত্রা ভিঁজে কাপরজামা চেয়ারের ওপর রেখে আমার টাওয়েলটা দিয়ে গা মুছছে।
আবার আমাকে ঠেলা মারলো।
ঘুরে দাঁড়ালাম। মিত্রা সোজা হয়ে বুকের ওপর ক্রশ করে হাতটা রেখেছে।
প্লিজ আর করবোনা, এইবারটা ছেড়ে দে।
ওপরটাতো ঢেকেছিস। নিচেরটা।
চেঁচাবো। বলে দিচ্ছি।
চেঁচা। গলা ফাটিয়ে ফেল।
নিচে অদিতিরা আছে। কি ভাববে বল।
মনে থাকে যেনো।
আমি দরজার দিকে এগোলাম।
চলে যাবি।
হ্যাঁ।
একটু দাঁড়া, একসঙ্গে যাবো।
খিদে লেগেছে। পেটে আগুন জ্বলছে।
তাড়াতাড়ি করে নিচ্ছি।
আমি এসে খাটে বসলাম।
মোবাইলটা খাটের ওপর পরেছিলো আমি টেনে নিলাম। ম্যাসেজ গুলো দেখলাম। অর্ক ঠিক ঠিক এগোচ্ছে। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ করলাম।
খালি কাজ করিস না খাওয়াদাওয়াটা ঠিক ঠাক করিস।
সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো।
করছি বস আর একটু পর।
ঠিক আছে। আমি তোর ম্যাসেজ ফলোআপ করছি।
রিপ্লাই এলো থ্যাঙ্ক ইউ বাই।
কিরে এত ঘন ঘন ঢং ঢং করছে।
অর্কর সঙ্গে একটু হ্যাজালাম।
তুই খুব ভালো ফলোআপ করিস।
সেই জন্য টিকে আছি।
দামিনী মাসিকে ফোন করলাম।
রিং বাজতেই ভয়েজ অন করলাম।
কিরে মাসিকে মনে পরলো।
কেনো ভুলে গেছিলাম নাকি।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
এখনো খেতে বসিসনি কেনো ?
মিত্রা ঘরে আটকে রেখেছে।
মিথ্যে কথা বলবিনা। নাগো মাসি।
কিরে মিত্রা ঘরে আছে নাকি।
হ্যাঁ। কাপর পরছে।
তুই কি করছিস।
তোমার সঙ্গে কথা বলছি।
মাসি হো হো করে হাসলো।
ডাক্তারকে পটিয়ে নিলি।
খবর চলে গেছে।
হ্যাঁ।
সাগরেদ ভালোই রেখেছো।
আবার মাসি হেসেফেললো।
শোনো তোমায় একটা কথা বলি। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks