দেখি নাই ফিরে - (Part-59)

বল।
কাল তোমায় রাজনাথের ছেলেপুলে ডিস্টার্ব করতে পারে।
সেতো গতকাল থেকে করছে।
কয়েকদিন একটু চুপ থাকবে, মাথা গরম করবেনা।
চুপ করেই আছি।
ডাক্তারের খোঁজ খবর নিয়েছো।
না।
মিথ্যে কথা বলছো।
সত্যি বিশ্বাস কর।
এবার তোমার লোকজন কাজ করছেনা। আমার পকেটের লোক কাজ শুরু করেছে।
সেটাও জানি।
তাহলে বলে ফেলো।
তুই জেনে নে।
ঠিক আছে মনে থাকে যেনো কথাটা, আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমিও ঠিক এই কথা বলবো।
তুইকি আমায় বলিস।
সব বলেছি।
কাজ হয়ে যাবার পর।
বুঝেছি।
কি বুঝেছিস।
তোমাকে বুঝতে হবেনা।
কবে আসবি।
রবিবার দুপুরের দিকে।
ও বাড়ি কিন্তু কমপ্লিট হবেনা।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো। চোখ বড়বড়।
তাহলে মিত্রার বাড়িতে থাকবো।
সেই ভালো। আমাকে আরো দিন তিনেক সময় দিস।
এই রবিবারের পরের রবিবার কাজ।
মনে আছে।
তুমি খেয়েছো।
না, খেতে বসেছি সবে।
আমার আগে খেতে বসে গেছো।
কি করে জানবো তুই এখনো খাসনি।
মাসি তুমি কি দিয়ে খাচ্ছগো। মিত্রা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো।
সেদ্ধভাত আলুভাতে ডালভাতে।
কেনো ?
আজ বৃহস্পতিবার। আমার নিরামিষ।
জানো বুবুন আজ সকালে কলাই শাক, দই আঁতিপাতা তুলে এনেছে।
আসার সময় আমার জন্য একটু শাকপাতা নিয়ে আসিস।
আমিতো চিনি না। বুবুনকে বলো।
তুই বলেদে।
আচ্ছা। তুমি খেয়ে নাও।
যা তোরাও খেতে বসগে যা।
আচ্ছা।
আমরা চলে এলাম এবাড়িতে। একসঙ্গে সকলের জায়গা হয়েছে। যে যার সঠিক জায়গায় বসলাম।
তোরা দুজনে আজ কোনো ঝামেলা করবিনা। বড়মা চোখ পাকিয়ে বললো।
তারমানে! তুমি কি বলতে চাও আমি ঝামেলা করি।
তুইনা মিত্রা।
ও তুমি বলবেই, করলেও বলবে, না করলেও বলবে। তাইনা ছোটমা। মিত্রা ক্যাজুয়েলি বললো।
ছোটমা ফিক করে হাসলো।
খাবার পরতেই মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। সুরমাসি বুবুন স্পেশাল।
আজ করিনি।
কেনো।
অনি বারন করলো।
আমার দিকে তাকিয়ে।
কিরে।
ঝামেলা করিসনা, যা দিয়েছে খা না।
তুই বারন করেছিস কেনো।
কখন করলাম। এ বাড়িতে আমি সকাল থেকে এসেছি।
ঠিক।
মিত্রা চুপ করে গেলো। খাওয়া শুরু করলো।
খাওয়া চলছে। চারিদিক নিস্তব্ধ।
দুবার জোরে জোরো নিঃশ্বাস নিয়ে, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
কিরে সর্দি হয়েছে।
না হবে এখুনি।
আমিও হাসলাম।
সবাই চুপচাপ।

ছোটমা বড়মা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
কিরে মিত্রা হাসলি কেনো। ছোটমা বললো।
একটু অপেক্ষা করো, দেখতে পাবে।
ছোটমা আমার দিকে তাকালো।
সুরমাসি।
কিরে।
তেল লঙ্কা একটু বেশি করে দেবে। যাতে ভাগ দিতে না হয়।
হ্যাঁ। মিত্রা দিলো আমার পিঠে গুম করে।
বড়মাগো।
একিরে!
সকাল থেকে আমি এবাড়িতে এসেছি। মিত্রা ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বললো।
তা বলে তুই!
থামো তুমি। সুরমাসির সঙ্গে ওর ট্যালিপ্যাথি আছে ?
বড়মা হাসবে না কাঁদবে। ওরাও সকলে হাসছে।
সুরমাসি বাটিটা আমার পাতে বসাবে। কি গন্ধ ছেড়েছে বুঝতে পারছো। রসিয়ে মাখা হচ্ছে।
মামনি তুই আর আমি এখানে খানেবালা, আর সবাই খেতে জানেনা বল। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো।
তোমাকেও দেবোনা। এতোক্ষণ তুমি আমাকে সাপোর্ট করোনি।
তুমি আগুনে আর ঘি ঢেলোনা। দাদা বললো।
সুর।
আমি সবার জন্য মেখেছি দাদা।
তাহলে দরকার নেই কি বলো এডিটর।
তোমাকে দিলে তো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই আমারটাও নিয়ে নে। আমি বড়মা ছোটমারটা মারি।
বড়মা তোর, ছোটমা আমার। মাথায় রাখবি।
একিগো এডিটর! ভাগাভাগি আছে নাকি ?
আরো অনেক কিছু আছে, দেখতে পাবে।
সুরমাসি বাটি বসিয়ে দিয়ে গেলো।
মিত্রা বাটির দিকে একবার তাকালো তারপর আমার দিকে। ছোটমা মুখ টিপে হাসছে।
কিরে কোনটা ভালো।
বুবুনেরটা।
তাহলে বাটি দুটো আদলবদল করে নে।
না। দেখি সুরমাসি সকলকে দেয় কিনা, তারপর বুবুনেরটা সবাই ভাগ করে নেবো।
তোরটা।
ওটা আমি একা খাবো।
কি স্বার্থপর তুই।
খাওয়ার সময়। আবার চেঁচালো, সুরমাসি।
আর নেইরে মা।
এই যে বললে সবার জন্য।
সুরমাসি হাসছে।
কি বুঝলে, এটা হচ্ছে ঘরের ছেলে। দিলো আমার কোমরে চিমটি। আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি।
তুই খা বাপু বক বক করিসনা। বড়মা বললো।
দেখেছো, কেনো প্রথমেই বলেছিলাম বুবুন স্পেশাল।
বড়মা মিত্রার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকালো।
আমি আমার বাটিতে হাত চাপা দিলাম।
দে দে, হাতচাপা দিয়ে লাভ নেই, সকলকে দিতে হবে। বুঝুক সকলে কেনো গুম করে বসিয়েছিলাম। মিত্রা ঝোগরুটে, না।
আমি হাসছি। মিত্রা আমার বাটি নিয়ে সকলের পাতে ভাগ করে দিলো। সবার হোলোনা। নিজের বাটি থেকে আবার দিলো।
মিত্রাদি তুমি আর একটা গুম করে দিলে, আরো কিছুটা বেরোতে পারে। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মাকে বল। বড়মার ভালো ছেলে বলে কথা।
মামনি আর একটু হবে। ইসলামভাই বললো।
আর নেই, এটুকু আমার আর বুবুনের।
সবাই হেসে ফেললো।
দেখেছো এডিটর সকলকে দেওয়া হয়েগেছে। যেটুকু আছে দু’জনের। একজনকে না দিয়ে আর একজন খায়না। তাহলে কি প্রমাণ হলো।
খাওনা খালি বক বক। বড়মা বললো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
তোরটা থেকে একটু দে।
অ্যাঁ-এ কত খায়।
আচ্ছা আমরা তিনদিন এই জিনিষটা পেলামনা কেনো। মিত্রা ঠিক আদায় করলো। নাহলে তো এর স্বাদই পেতাম না। দাদা বললো।
আ মরন চব্বচোষ্য খাচ্ছ তবু নোলা কমে না।
সবাই হাসছে।
খুব এনজয় করে খাওয়া শেষ হলো। ঠিক হলো বিকেল বেলা সবাই মিলে বুড়ো শিবের থানে যাওয়া হবে।


আজকের দলটা অনেক ভাড়ি এবং জমজমাট। সবাই দেখলাম বেশ পরিষ্কার জমাকাপর পরেছে। বাইক এবং ট্রলির মেলা। অনাদি বাসু পুরো পরিবার সমেত এসেছে। সঞ্জু বাইক নিয়ে এসেছে। ইসলামভাইও বললো আমি বাইক নিয়ে যাবো। আমি আপত্তি করলাম না। আমি অনাদিকে বললাম তুই পাঁচু পচা ওদের সবাইকে নিয়ে আয়। আমি বাসু চিকনা আগে যাচ্ছি।
বড়মা একটু আপত্ত করেছিলো। দেবাও বললো তুই আমাদের সঙ্গে চল না। আমি বললাম তোরা আয় আমি হয়তো তোদের পৌঁছবার আগেই চলে আসবো।

মিলি টিনা অদিতি তিনজনেই আজ শারি পরেছে। ওদের শারি পড়া আবস্থায় আগে দেখিনি। বেশ লাগছিলো। তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছিলাম। মিলি কাছে এসে বললো অনিদা চোখ খারাপ হয়ে যাবে এইভাবে দেখলে।
আমি বেরিয়ে এলাম চিকনা আর বাসুকে নিয়ে।
মোরাম রাস্তায় আসতে বাসু বললো, তুই কোথায় যাবি বলতো।
একটু গাড়িটা দাঁড় করা। আমি কয়েকটা ফোন করে নিই। একটা সিগারেট দে।
বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা দিলো আমি একটা বার করে ধরিয়ে ওকে ফিরিয়ে দিলাম। ওদের থেকে একটু দূরে চলে গেলাম। প্রথমে অর্কর সঙ্গে ফোনো কথা বললাম, তারপর হিমাংশুকে এখানকার কথা বলে শনিবার সকালের দিকে আসতে বললাম। ও রাজি হলো।
আমি ওদের কাছে ফিরে এলাম।
কিরে কার ওপর রাগারাগি করলি।
না। একটা কাজের দায়িত্ব দিলাম একজনকে।
এবার বল কোথায় যাবি।
উনা মাস্টারের বাড়ি।
উনা মাস্টারের বাড়ি!
হ্যাঁ। তোদের যেতে অসুবিধা আছে।
এই সময় উনা মাস্টারের বাড়ি!
একটু দরকার আছে।
তোকে বোঝা মুস্কিল। বাসু হাসলো।
আমিও হাসলাম।
আমি বাসুর পেছনে বসলাম।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম স্যারের বাড়ি।
দেখলাম স্যার বাড়ির বারান্দায় বসে কাগজ পরছেন। আমরা বাইক রেখে ভেতরে এলাম। স্যারকে প্রণাম করলাম। স্যার মুখের কাছ থেকে কাগজ সরিয়ে বললেন, কে।
স্যার আমি অনি।
সঙ্গে সঙ্গে স্যার চেঁচামিচি শুরু করে দিলেন। ও বড়োবৌ দেখো কে এসেছে। ধুমকেতু দেখবে এসো।
আমি হাসেফেললাম।
ওরা কারা।
চিকনা আর বাসু।
তুই তো আবার একলা আসতে পারবিনা। তোর সাগরেদ দরকার।
চিকনা স্যারের কথায় মাথা চুলকোচ্ছে। বাসু মুখ নীচু করে আছে। ওরা স্যারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
কাকীমা মিনতি বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে আমি কাকীমাকে প্রণাম করলাম। মিনতি আমাকে প্রণাম করলো।
বোস।
না এখন বসবোনা।
তাহলে এলি কেনো। স্যার বললেন।
মিনতিকে নিতে এলাম। দাদারা সব শিবের মন্দিরে আসছেন। ওকে একটু নিয়ে যাই। ঘন্টা দুয়েক পর সবাই আসবো।
তারমানে।
হ্যাঁ সবাই আসবো।
তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিনা।
কলকাতা থেকে আমার কয়েকজন বন্ধুও এসেছে, ওরাও আসবে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
কেনো ?
ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ওরাও কি তোর মতো সাংবাদিক।
না স্যার ওরা সব বড় বড় কোম্পানির চিফ। বাসু বললো।
তোর কথা আমার মাথায় ঢুকছেনা।
ঠিক আছে আমি এখন মিনতিকে নিয়ে যাচ্ছি। শিবের মন্দির থেকে আসছি। ওরা হয়তো এতোক্ষণে এসে পরেছে।
কিগো বড়বৌ মিনু যাবে ?
কেনো যাবেনা, অনি বড় মুখ করে ওকে নিতে এসেছে।
মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
মিনতি ছুটে ঘরের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
হ্যাঁরে অনি।
স্যার।
তোর বাড়িতে নাকি সামন্ত ডাক্তার এসেছে।
এখানেও আসবে।
আমার বাড়িতে!
হ্যাঁ। ওনারা সবাই এসেছেন।
মনা ?
কাকাও এসেছেন।
বড়বৌ শুনলে অনির কথা।
শুনছি।
অতিথিরা আসছেন।
আমি কি করবো।
কিছু ব্যবস্তা করো।
কি করবো। সব মান্য গণ্য ব্যক্তিরা আসছেন তাদের জন্য খাবার কিছু রেখেছো।
ঋজুকে একটা ফোন করে দাও। বাজার থেকে মিষ্টি কিনে আনুক।
স্যার আমি একটা কথা বলবো।
বল শুনি। তোর গেস্ট। আমারও গেস্ট।
ঢেঁকি ছাঁটা চিড়ে ভেজে শুকনো লঙ্কা দিয়ে আর কিছু ছোলা ভাজা দিয়ে মেখে রাখুন আর চা।
গর্ধভ কোথাকার। এখনো তোর সেই মোটা বুদ্ধি গেলোনা।
আমি মাথা নীচু করলাম।
আমি বলছি স্যার ওঁরা খুব আনন্দ করে খাবে, দেখবেন।
আবার কথা বলে। কতদিন বেতের বাড়ি খাসনি। মান্যগণ্য লোকেদের আমি চিঁড়েভাজা শুকনো লঙ্কা ভাজা খাওয়াবো।
তাহলে আপনার যা মন চায় তাই করুণ, কিন্তু নষ্ট হবে।



তুই যা, তোকে পাকামো করতে হবেনা। তুমি ঋজুকে ফোন করে আমাকে দাও।
মিনতি কাপর পরে বেরিয়ে এলো। বেশ মিষ্টি লাগছে। ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক লাগিয়েছে। কপালে ছোট্ট একটা টিপ।
রেডি।
হ্যাঁ। অনিদা।
স্যার আমি আসছি।
কখন আসবি। মন্দিরটা ঘুরেই আপনার বাড়ি।
ওদেরকে তুই হাঁটিয়ে আনছিস নাকি।
না। অনাদি ট্রলি ঠিক করেছে।
তোর বড়মার কোমর ঠিক আছেতো ?
হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমরা বেরিয়ে এলাম।
খামার পেরিয়ে গাড়ির কাছে এলাম। মিনতি আমার পেছনে। চিকনা একটু দূরে এসে আমাকে ঢিপ করে প্রণাম করলো।
কি হলো।
গুরু তুমি কতোবরো খেলোয়াড়!
কেনো।
সকালে সঞ্জু আমাকে বলেছিলো বলে তুমি মিনতিকে তুলে আনলে।
না না, সবাই আমরা আনন্দ করবো সঞ্জুর মনটা খারাপ হয়ে যাবে, তাই।
শালা আমার কেনো নেই বাসু।
চিকনাদা আমি নীপাকে বলে দেবো। মিনতি বললো।
তুইতো বহুত নম্বরি। তোর জন্য এতো কষ্ট করলাম, তুই নীপাকে বলে দিবি। আজ সঞ্জুকে আমি খাবো।
মিনতি তুই চিকনার পেছনে বোস, আমি বাসুর পেছনে বসে পরি।
মিনতি চিকনার পেছনে গিয়ে বসলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম।
সঞ্জু দূর থেকে দেখতে পেয়েছে। এগিয়ে এসেছে। মিত্রারাও দেখেছে। সবে মাত্র বিকেল হয়েছে। মন্দিরের সামনে বিশাল একটা দীঘি। দীঘির জলে কমলা রংয়ের সূর্যের আলো পড়ে চারিদিকে ঠিকরে পরছে।
আমরা এসে ওদের সামনে দাঁড়ালাম।
সঞ্জু গম্ভীর। চিকনা চক চকে। মুখে হাসি আর ধরছেনা। নীপা ছুটে এলো।
কিরে তুই।
অনিদা নিয়ে এলো।
নীপা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো।
বড়মা বললো, এটা আবার কেরে ?
সঞ্জুর দিকে তাকালাম, মুখ লুকিয়েছে।
সকাল বেলা আমার গামছা ধরে খুব করকিয়ে ছিলি মনে আছে। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো।
সঞ্জু দাঁত কিরমির করছে।
আমি অনাদি বাসু হাসছি।
মিত্রা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো।
ডাক্তারদাদা কাছে এসে বললো কি অনিবাবু ব্যাপারটা কি ?
সুভদ্রা হরণ করতে গেছিলাম।
তোমার কি আরো দরকার ?
আমার না, অন্যের জন্য।
তিনি কে ?
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। ওই যে তোমার পেছনে।
লাইট ম্যান।
সকলে হো হো করে হেসে ফললো।
আমার গামছা ধরে টান মারবি। বাইকে করে নিয়ে এলাম। চিকনা সবার সামনে সঞ্জুকে ক্যারি কেচার করে দেখাচ্ছে।
সেই জন্য তুই শোধ নিলি। বড়মা বললো।
নেবোনা মানে। অনি আমার গুরু। গুরু শিষ্যকে হেল্প করবেনা।
সকলের হাসি আর থামে না। মিনতি মিত্রার থেকে চালান হয়ে চলে গেছে মিলিদের কাছে।
তোমরা মন্দির দেখেছো ? বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম।
না। মন্দির বন্ধ। তোর কাকা ব্রাহ্মণকে ডাকতে গেছে।
অনাদির দিকে তাকালাম। তোরা যেতে পারলিনা।
আমাকে যেতে দিলেতো। তবুতো পাঁচুকে সঙ্গে পাঠিয়েছি।
বড়মাদের ঘুরে দেখিয়েছিস।
দেখাতে পারতাম কিন্তু তোর মতো গল্প বলতে পারবোনা।
কি নেতা হয়েছিস।
ঠিক কথা। ডাক্তারদাদা বললো।
কিগো তুমি চুপচাপ কেনো। ছোটমার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
তুই এই কারণ আগে আগে বেরিয়ে ছিলি।
হ্যাঁ। স্যারের কাছে গেলাম। আর বলে এলাম একটু পরে আমরা সবাই আসছি।
ভালো করেছিস তোর উনা মাস্টারের বাড়িটাও এই ফাঁকে দেখা হয়ে যাবে। বড়মা বললো।
স্যার আজকেও অনিকে বলেছে, কতোদিন বেত পিঠে পরেনি। বাসু বললো।
দাঁড়া তোর উনা মাস্টারকে গিয়ে দেখাচ্ছি। বড়মা বললো।
আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষে বললাম, ওটা স্নেহের মার। তুমি ছোটমাযে কান ধরো।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
চলো বেলা পরে আসছে। এই ঝিলটা দেখেছো। কতো পদ্মফুল বলোতো।
ওই দেখ মেয়েগুলো জলে নেমেছে।

নামতে দাও। প্রাণভেরে দেখে নিক।
আবার জোঁকে ধরবে।
ধরুকনা খতি কি।
দূরে দেখলাম দাদা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা ইসলামভাই ডাক্তারদাদা হাঁটতে হাঁটতে পুকুরের ওপারে চলে যাচ্ছে। মিত্রারা একটা গ্রুপে সবাই। আমার কাছে একমাত্র বাসু আর অনাদি।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে দীঘির ধারে চলে এলাম।
জানো বড়মা এটা দুধ পুকুর। গ্রামের ঘরে সন্ন্যাসীদের ভক্তা বলে। চৈত্র মাসে এখানে গাজন হয়। একমাসের উপবাস ভাঙে শিবরাত্রির দিন। যারা সন্ন্যাস নেয় তারা এই দিন এখানকার ভি আইপি। সন্ন্যাসীরা সবাই শিবের মন্দিরে এসে পূজো দেয়। তখন মন্দিরে কোনো ভেদা ভেদ নেই। যারা সন্ন্যস নেয় তারা কিন্তু সবাই যে ব্রাহ্মণ তা নয়। নীচু জাতের লোকও সন্ন্যস নেয়। ধর্মের অনুশাসন এখনো এখানে আছে। কিন্তু ওই কয়দিনের জন্য কোনো অনুশাসন নেই। ভারি অবাক লাগে। তখন সেই নীচুজাতের লোক গুলোকে সবাই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। কারণ তারা সন্ন্যসী। কি অদ্ভুত না আমাদের এই ধর্মের অনুশাসন।
এখানে দশদিন ধরে মেলা চলে। আগুন ঝাঁপ, কাঁটা ঝাঁপ আরো কতকিছু হয়। সবাই মজা করে দেখে। জানো তখন সেই সন্ন্যাসীদের এক একজনকে ম্যেজিসিয়ান বলে মনে হয়। এই দুধ পুকুরে সকলে স্নানকরে শুদ্ধ হয়। তারপর তাদের দোলায় করে কাঁধে চাপিয়া মন্দিরের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দোলায় কাঁধ দেবার জন্য এখানে হুরোহুরি পরে যায়। সন্ন্যাসীদের কাঁধে চাপাতে পারলে পুন্ন্যার্জন হবে। কি অদ্ভূত সিস্টেম।
তুমি কখনো দেখেছো।
বড়মার মুখের দিকে তাকালাম। বুঝলাম একটা ঘোড়ের মধ্যে আছে। আমার কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনছিলো। ছোটমারও একি অবস্থা।
আমার দিকে কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো।
তুই কখনো দেখেছিস ?
হ্যাঁ বেশ কয়েকবার। শেষ যখন টেনেপরি তখন।
আমি কখনো দেখিনি। শুনেছি। আর আজ এইজায়গাটায় এসে তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
এই দীঘির চারপাশে হ্রদগুলো দেখছো।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকালো।
এগুলো কখনো পরিষ্কার হয়না। বছরে একবার পরিষ্কার হয়।
তাই।
হ্যাঁ।
কেনো।
গাজনের সময় কাজে লাগে। যেখানে আগুন ঝাঁপ হয়। তার চারপাশে মোটা করে ফেলে রাখা হয়। আগুন ঝাঁপের জায়গাটা তিরিশ ফুট লম্বাহয়। চওড়া ধরে নাও পাঁচ ফুট। কাঠ কয়লা জ্বালানো হয়। তাও আবার যে সে কাঠ নয়, বেল কাঠ। আগুনটা গণগণে করা হয় কুলোর হাওয়া দিয়ে। তারপর প্রচন্ড জোরে ঢাক বেজে ওঠে। ভক্তারা ওই গণগণে আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে এপার থেক ওপারে যায়। ওপার থেকে এপারে আসে। তখন এই হ্রদগুলোকে ভিঁজে সপ সপে করে রাখা হয়। ঘড়া ঘড়া জল ঢালা হয়।
পায়ে ফোস্কা পরে যায়না।
না।
কেনো বলোতো।
কেনো।
এটাও একটা সাইন্স।
যাঃ।
হ্যাঁগো। আচ্ছা তুমি নিজে একটু পরীক্ষা করে দেখো। তুমি যদি তোমার পায়ের তলায় আগুনের ছেঁকা মারো দেখবে তোমার সেই উত্তাপ লাগতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেবে। চামড়াটা মোটা। সেই ছোটো বয়েসে দেখেছি, এখনো সেই ছবিটা মনের ভেতর জীবন্ত। এখন তাকে বাস্তবে আনার চেষ্টা করেছি।
কি রকম।
ওই কুড়িফুট রাস্তাটা ওরা হাঁটতে সময় নিতো তিরিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড। গিয়েই ওই জল ভরা হ্রদের ওপর দাঁড়িয়ে যেতো। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার ওরা একি ভাবে ফিরে এসে এপাশের ভিঁজে হ্রদের ওপর দাঁড়াতো। অতএব হাঁটার সময় পায়ের তলাটা যতটা গরম হতো জল ভরা হ্রদে এসে দাঁড়াতেই তা ঠান্ডা হয়ে যেতো। তাবলে তুমি কখনোই মনে কোরোনা আমি তাদের কৃচ্ছসাধনাকে ছোটো করে দেখছি।
ওই ভাবে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে আগুণের ওপর দিয়ে হাঁটা সম্ভব নয়। তখন তোমার মনের মধ্যে যতো বড়ো ঐশ্বরিক শক্তির উপলব্ধি আসুকনা কেনো। তুমি কিছুনা কিছু ইনজিওরড হবেই। ওরা কিন্তু বহাল তবিয়েতেই থাকে।
বড়মা কাকে যেনো ইশারা করলো।
হঠাৎ মনটা ঘুরে গেলো। আমি পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম আমার পেছনে সকলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই আমার কথা শুনছে। দাদাও একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জাপেয়ে গেলাম।
কিরে বল বেশ বলছিলি।
দিলেতো সব মাটি করে। বড়মা বললো।
যাচ্চলে আমি কোথায় মাটি করে দিলুম। টুঁ শব্দটি করিনি। কখন থেকে এসে সব শুনছি। ও টের পেয়েছে।
যত্তোসব।
চলো ওই পাশে যাই।

আমরা সবাই হাঁটতে আরম্ভ করলাম মন্দিরের দিকে। আমার পেছনে পাশে সবাই। এমনকি কাকা সেই ব্রহ্মণ মশাই পর্যন্ত।
জানো বড়মা আমাদের স্কুল থেকে একটু দূরে গেলে দত্তদের জমিদার বাড়ি। এই গোটা অঞ্চলটা জমিদার বাবুদের। এই মন্দির তারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই পুকুরটা তারা খনন করেছিলেন। শোনা কথা এই পুকুরের মাঝখানে নাকি অনেক কুয়ো আছে। কেনো বলোতো।
কেনো।
তুমি আমাদের লোকগাথার মধ্যে এই গল্পগুলো পাবে।
চোটমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
গ্রামের ঘরের ঘুমপারানি গান শুনেছো। বাচ্চাদের ঘুম পারাবার সময় মারা ওই গান গুলে গায়।
ভুলে গেছি।
আয়ঘুম যায় ঘুম বর্গী এলো দেশে/বর্গীদের ছেলে গুলো পথে বসে কাঁদে/আর কেঁদোনা আর কেঁদোনা ছোলা ভাজা দেবো/এবার যদি কাঁদো তুমি তুলে আছাড়া দেবো।
বড়মা হেসে ফেললো।
তুই জানলি কি করে।
পদি পিসির কাছ থেকে।
সেটা আবার কে।
ফণি জ্যেঠুর বোন। মরে গেছে।
যেটা বলছিলাম। বর্গীরা এক সময় বাংলা আক্রমণ করেছিলো। তখন দুই বাংলা এক ছিলো। কিছু মানুষের নিজের স্বার্থে আমরা নিজেদের ভাগ করেছি। এই বর্গীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য, এইসব জমিদাররা প্রচুর মন্দির তৈরি করেছিলো। আর পুকুরের যে সব কুয়ো দেখছো। সেখানে তাদের সোনাদানা এক একটা ঘরায় করে লুকিয়ে রাখতো। বর্গীরা আক্রমণ করলে। ঘর লুঠ করবে। মন্দির লুঠ করবেনা। জানতেও পারবেনা এই রকম একটা পুকুরের মধ্যে তাদের সম্পদ লোকানো আছে।
মাঝে মাঝে গুপ্তধনের গল্প পরো, এই কনসেপ্ট থেকে তৈরি।
বড়মা আমার সামনে দাঁড়ালো। আমার মুখে হাত বুলোতে বললো। তুই এত পড়ার সময় পাশ কোথায় ?
ওই জন্য অফিসে যেতে দেরি হতো। তোমায় ফোন করে বলতাম দাদাকে বলে দাও।
ছোটমা হেসে ফেললো।
ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
ফণিজ্যেঠুর বাবা ওই জমিদার বাড়ির লেঠেল ছিলেন। একদিন গল্প করতে করতে ফণিজ্যেঠু আমাকে বলে ফেলেছিলো ওই বাড়িতে যে মন্দির আছে তার তলায় একটা অন্ধকার ঘর আছে জমিদারবাবু নাকি যারা দোষ করতো তাদের ওখানে আটকে রেখে দিতো। আমি দুষ্টুমি করলে আমাকেও ওখানে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে দেবে।
যখন বড় হলাম দেখলাম তার আগেই জমিদারদের জমিদারিত্ব চলেগেলো। জমিদার বাবুরা এখান থেকে টাউনে চলে গেলো। মন্দির রয়ে গেলো। আমি প্রায়ই জমিদার বাড়িতে যেতাম। মনাকাকা বাবার দৌলতে আমার একটু পরিচিতি ছিলো। ওই বাড়ির একটা কাজের মেয়েকে পটিয়ে, আমি একদিন সেই অন্ধ কুঠরির খোঁজ পেলাম। অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তার ইতিহাস জানলাম। ফণিজ্যেঠুকে এসে ধরলাম। জ্যেঠু আমার কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে বললো তুই জানলি কি করে! আমি বললাম তুমি হ্যাঁ অথবা না বলবে। জ্যেঠু আমার কথায় শায় দিয়েছিলো।
সেই দেবদাসী। মিত্রা বললো।
হ্যাঁ।
দেখলাম কাকা অনেকটা এগিয়ে গেছে আমাদের থেকে।
ডাক্তারদাদা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
তুই এগুলো সব খুঁজে খুঁজে বার করেছিস।
হ্যাঁ।
তখন তুই কোন ক্লাসে পরতিস।
ক্লাস টেন।
একা একা।
হ্যাঁ।
যানো ডাক্তারদাদা সেই দেবদাসী আর দামিণী মাসির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। খালি পরিবেশ বদলে গেছে। পরিস্থিতির অদল বদল ঘটেছে এই যা। শেষ বারে এসে সেই দিদাকে অনেক খোঁজ করেছি। পাইনি। ও পাড়ার লোকগুলো বললো তিনি মারা গেছেন।
এই জন্য তুই ফ্রয়েড পরিস।
আমি মাথা নীচু করলাম।
জানো ডাক্তারদাদা মানুষের মনটা আকাশের মতো। তুমি চেষ্টা করলেও ছুঁতে পারবেনা। তুমি উঁকি দিয়ে দেখতে পারো। উপলব্ধি করতে পারো। এর বেশি কিছু নয়।
ঠিক বলেছিস।
তারপর আমার কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললো, এই জন্য তুই এতো কষ্ট পাস।
হয়তো সত্যি হয়তো নয়।
জানো বড়মা এমনি এই মন্দিরটা দেখলে তোমার কোনো কিচু মনে দাগ কাটবে না। কিন্তু তুমি যখনি তার ইতিহাসটা জানতে পারবে, তখনি তোমার মনে সেই জায়গাটা দাগ কাটবে।
ঠিক বলেছিস। যেমন তোর পীরবাবার থান।
হ্যাঁ। শুধু আমি না। অনেকেই কিন্তু নিয়ম করে ওখানে দাঁড়িয়ে প্রণামকরে।
বাবাঃ তুই কি গল্প ফেঁদেছিস বলতো। সকলে মোহিত হয়ে শুনছে। কাকা বললো।
ও গল্প তুমিও জানোনা মাস্টার।
তা বলতে পারো। ছোট থেকে ওর জানার ইচ্ছেটা প্রবল। আমাদের গ্রামের বয়স্করা ওর বন্ধু ছিলো। একবার তো আমাদের গুণিনের কাছে মন্ত্র শিখতে গেছিলো। বাবু গুণিন হবেন।
তাই বলি তুই এতো গাছপাতার নাম জানিস কি করে এবং তার গুণাগুন। ডাক্তারদাদা বললো।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
যাও মন্দিরে যাও।
তুই যাবিনা।
তোমরা যাও, আমি যাচ্ছি।
হ্যাঁরে হাতপা ধোবো কোথায়।
ওইতো টিউবওয়েল আছে।
ওরা সবাই জুতে খুলে হাতা পা ধুয়ে মন্দিরে গেলো।
আমি মিনতিকে সঞ্জুকে কাছে ডাকলাম। চিকনা এগিয়ে এলো। বাসু অনাদি আমার পাশে। আমার মুখের ভাব ভঙ্গিতে ওরা বুঝতে পারেছে, আমি খুব সিরিয়াস। দুজনেই মাথা নীচু করে।
সঞ্জু তুই মিনতিকে ভালোবাসিস।
সঞ্জু মাথা নীচু করে রইলো।
আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছি।
হ্যাঁ।
মিনতি তুই।

হ্যাঁ।
এখন বিয়ে করতে চাস।
না।
কেনো ?
আমি পড়াশুনো করবো।
সঞ্জু তুই কি বলিস।
আমার কোনো আপত্তি নেই।
যদি স্যার এখুনি মিনতির বিয়ে দিতে চায়।
আমি রাজি।
তারপর ওর পড়ার কোনো ডিস্টার্ব হবেনা।
না। কোনোদিন হবে না। যদি হয় আমি আলাদা হয়ে পালিয়ে আসবো।
সেটা সমস্যার সমাধান হলো।
ওর পড়াশুনায় যাতে কোনো খতি না হয় তা আমি দেখবো।
যদি খতি হয়।
তুই যা শাস্তি দিবি আমি মনে নেবো।
মনে থাকবে।
হ্যাঁ।
যা দু’জনে একসঙ্গে পূজো দিয়ে আয়।
ওরা দুজনে চলে গেলো। চিকনা আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমার মুখটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
তোর সঙ্গে এখন কথা বলতে ভয় লাগছে।
কেনো!
জানিনা।
চল মন্দিরে যাই।
চল।
আমরা মন্দিরের ভেতর এলাম।
প্রচুর ফুল মিষ্টি। সবাই যে যার নিজের হাতে পূজো দিচ্ছে। বড়মা মনে হয় ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করেছে, মন্দির সম্বন্ধে, সে কিছু বলতে পারেনি। বড়মা কাকাকে মনে হয় কিছু বলছে। সবাই বেশ গোল হয়ে বসে। সূর্য একবারে পশ্চিম আকাশে ঢলে পরেছে। একটু পরেই মুখ লুকোবে।
বুবুন।
আমি ঘুরে তাকালাম।
আয় একটু।
আমি কাছে এগিয়ে গেলাম।
শ্যাম এই হচ্ছে অনি।
ওকে খুব ছোট সময় দেখেছিলাম।
হ্যাঁ। এখনতো ও কলকাতাতেই থাকে। এইটি বউমা।
উনি দুজনের দিকে একবার ভালো করে তাকালেন। বুঝতে পারলাম চোখে অনেক প্রশ্ন। বুঝলাম কাকা তাকে সঙ্গে করে আনার সময় অনেক কথা বলেছেন। আমি প্রণাম করলাম। উনি আমার মাথায় আবিরের টিপ লাগিয়ে দিলেন।
আরো প্রায় আধঘন্টা পর আমরা সবাই বেরোলাম। এখন গোধূলি। মিহি কুয়াশার মতো অন্ধকার আকাশটাকে ঢেকে ফেলছে। শুকতারা আকাশে জ্বল জ্বল করছে। অদিতি দেবাশীষের হাত ধরে। দুজনের মাতাতেই আবিরের ছোঁয়া। টিনা মিলি নির্মাল্য নীপা সবাই একে একে মন্দির থকে বেরিয়ে এলো।
বড়মা সবার হাতে প্রসাদ দিলেন আমরা খেলাম।
জানো বড়মা তোমরা যেখানে বসে পূজো দিলে। চৈত্রমাসে ওই জায়গাটা এক মানুষ গর্ত হয়ে যায়।
কেনো।
বহু মানুষ কোদাল দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে চলে যায়।
এ কি কথা।
হ্যাঁগো। এই মাটিটা খুব উপকারী, যেকোনো ব্যাথায় তুমি যদি গুলে লাগাও তোমরা ব্যাথা কমে যাবে।
গর্ত বোঁজানো হয় কি করে।
ওই পুকুর থেকে কেটে নিয়ে আসা হয়।
খালি গপ্পো।
তুমি ওই ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করো।
বড়মা চোটমা আমার কতা শুনে সত্যি সত্যি ব্রাহ্মণের কাছে গেলো। ব্রহ্মণ হাসছে। বড়মা ওখান থেকেই আমার দিকে ফিরে হাসলো।
কি অনি গপ্পোবলে।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষলো।
তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো অনি। ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
বলো।
তোদের এখানটা দেখলাম তোর গল্প শুনলাম। আমার একটা কতা মনে পরে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় পরেছি ঠিক বলতে পারবোনা।
কি বলোতো।
পীর সাহেব এবং মহাদেব এক ব্যাক্তি।
তোমার কথা ঠিক। তুমি এ্যান্টনি ফিরিঙ্গীর জীবনবৃতান্ত পরেছো।
না।
আমার কাছে আছে নিয়ে পোরেনিয়ো। সেখানে কবিয়াল ফিরিঙ্গী সাহেব একজন বাঙালী ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। যদিও কবিয়ালের সঙ্গে তার পরিচয় এক নবাবের বাড়িতে। সেখানে সেই ভদ্রমহিলা একজন বাইজী হিসাবেই প্রসিদ্ধা ছিলেন। তারপর সেই ভদ্রমহিলার দৌলতেই ফিরিঙ্গী সাহেব একদিন একজন নামজাদা কবিয়াল হন। একদিন ফিরিঙ্গী কবিয়ালের সঙ্গে তখনকার দিনের বিখ্যাত কবিয়াল ভোলাময়রার কবির লড়াই চলছে। ভোলাময়রার একটা প্রশ্নের উত্তরে ফিরিঙ্গী কবিয়াল বলেছিলেন, কিষ্ট আর খিস্টতে প্রভেদ নেইকো ভাই/শুধু নামের ফেরে জগত ফেরে/ আরতো কিছুই নয়। এখানে কিষ্ট বলতে কবিয়াল কৃষ্ণকে বুঝিয়েছেন।
ইসলামভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
ডাক্তারদাদা ফিক করে হেসে বললো, কি ভায়া হজম হলোনা। ও তোমার কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলে দিলো। উদাহরণ স্বরূপ।
তারপর বড়মার দিকে তাকিয়ে বললো। কি বান্ধবী তোমার ছেলের দৌড়টা দেখছো।
বড়মা হাসি হাসি মুখ করে বললেন, আমি ওর দৌড়টা জানি তুমি বরং তোমার বন্ধুটিকে একটু বোঝাও।
দেবারা হো হো করে হেসে ফেললো।
দাদা কপট রাগে বললো, আমাকে আবার এর মধ্যে টানলে কেনো। আমি কি অন্যায় করলাম।
চলো আর এখানে নয় স্যার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ওরা সবাই যে যার মতো বসলো। আমি অনাদিকে বললাম, তুই একবার আগে চলে যা স্যারকে গিয়ে বল। পারলে একটু সাহায্য কর।
অনাদি হেসে ফেললো।
বাসু বললো আমি চিকনা ওর সঙ্গে যাই।
যা।
ওরা সবাই এগিয়ে গেলো। আমরা পেছন পেছন গেলাম। নীপাদের ট্রলি থেকে গানের কলি ভেসে আসছে। বুঝলাম ওরা আন্তাকসারি খেলছে। বড়মারা নীচু স্বরে কথা বলছে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই পৌঁছে গেলাম।

উনা মাস্টারের বাড়িতে কারেন্ট আছে। লাইট জ্বলছে।
কাকা ট্রলি থেকে নেমেই চেঁচিয়ে উঠলো, কিরে উনা কোথায় গেলিরে।
স্যার বেরিয়ে এলেন। বড়মা ছোটমার সঙ্গে স্যারের পরিচয় ছিলো। কাকা দাদাদের সঙ্গে পরিচয় করালেন। স্যার সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। ডাক্তারদাদাকে প্রণাম করে বললেন আপনি আমাকে চিন্তে পারবেন না। আমি একবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছিলাম।
কেনো।
কোমরের হাড় সরে গিয়ে ব্যাথা হচ্ছিল।
ব্যাথা কমেছে না বেরেছে।
কমেছে।
তারপর আর গেছিলেন।
না।
কেনো।
আপনি বলেছিলেন যতদিন বাঁচবেন এই ওষুধ গুলো খাবেন।
খেয়ে যাচ্ছেন।
যাচ্ছি। সুস্থও আছি।
এবার আমাকে কি খাওয়াবেন। অনেকটা পথ এলাম।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
কিরে মা ঠিক কথা বললাম কিনা।
একবারে ঠিক।
বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো।
খালি খাই খাই। পেটে জায়গা থাকে কি করে।
ও তুমি বুঝবেনা বান্ধবী।
সবাই আবার হেসে ফেললো।
দেবাশীষকে কাছে ডাকলাম। বললাম কাকাকে বলেছিলি তোদের মনের কথা।
বলেছিলাম।
কাকাকে মনে করিয়ে দে। স্যারকে বলুক।
মিত্রা সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। শেষে বললো তুমি বুবুনকে বেত মারবে বলেছো আজ।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
তোর বুবুন যদি অন্যায় করে।
কি করেছে।
বলেছে তোদের লঙ্কাভাজা দিয়ে ঢেঁকি ছাঁটা চিঁড়েভাজা খাওয়াতে।
বাঃ বাঃ তোফা রেসিপি। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
কিগো কিছু বুঝলে। মিত্রা বললো।
যেনো স্যারকে ধমকাচ্ছে।
আমার অন্যায় হয়েছে মা। তোর কাকীমা অনির কথা মতো চিঁড়ে ভেজেছে শুকনো লঙ্কা দিয়ে।
ঠিক আছে। এবার বুবুনের বন্ধু মানে আমারও বন্ধু ওরা তোমাকে কিছু বলবে তুমি শোনো।
দেবা সবিস্তারে সব বললো।
তোদের অনি মাইক্রোস্কোপ দেখিয়েছে!
হ্যাঁ।
জানিস ওই মাইক্রোস্কোপটা নিয়ে একটা গল্প আছে।
জানি। বুবুন বলেছে।
তোদের বলেছে।
হ্যাঁ।
স্যার নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চোখটা ছল ছল করে উঠলো।
জানিস মা। ওই দিনটার কতা এখনো মনে পরলে নিজেকে খমা করতে পারিনা। ও আমার ছাত্র ওর কাছে ক্ষমা চাইতে পারিনা। মনার কাছে গিয়ে বহুবার ক্ষমা চেয়ে এসেছি। আজ তোর কাছে ক্ষমা চাইছি।
এমা এ তুমি কি কথা বলছো ভায়া। ডাক্তারদাদা বললো।
না ডাক্তারবাবু আমি ঠিক কথা বলছি। সেদিন বুঝিনি, আজ আমি অনুভব করি সেদিন আমি কতোবরো ভুল করেছিলাম। আজো আমার মাঝে মাঝে আক্ষেপ হয়।
সে ঠিক আছে। মাথায় রাখবেন অনি আপনার ছাত্র। ও কিন্তু ওর স্যারের বাড়িতে আমাদের নিয়ে এসেছে।
ডাক্তারদার কথায় মেঘ কাটলো।
স্যার বেঞ্চিতে বসলেন।
এবার দেবাদের ব্যাপারটা কি হবে বলুন। মামনি দেখনা চিঁড়েভাজা কতদূর।
ওরা যা দেবে আমি ল্যাবোরেটরিতে রাখবো।
আপনার কি কি লাগবে বলুন।

আমি কালকে একটা লিস্টি করে দেবো।
দেবাবাবু তোমাদের কাজ হয়ে গেলো। এবার কেটে পরো। আচ্ছা অনি গেলো কোথায় বান্ধবী।
আছে কোথাও দেখো, নাহলে আবার কোথাও গল্পের সন্ধানে গেছে।
আমি অন্ধকারে বাইরের খেতটায় ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছি।
মিনতি মিত্রা টিনা মিলি কাঁচের বাটিতে করে চিঁড়েভাজা সাজিয়ে নিয়ে এলো।
ওঃ গন্ধটা দারুণ বেরিয়েছে নারে মামনি।
আমি একমুঠো খেয়ে নিয়েছি। দারুণ।
অ্যাঁ।
হ্যাঁ।
তুমি খাও দারুণ টেস্ট।
বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো। জুড়িদারটা ভালো।
স্যার ডাক্তারের কান্ড কারখানায় মুচকি মুচকি হাসছে।
বুবুন কোথায় গেলো বড়মা।
কেনো ভেতরে নেই।
ছিলোতো এখুনি তারপর কোথায় ফুরুত করে হাওয়া হয়ে গেলো।
তুই ধরে রাখতে পারলিনা। ডাক্তার বললো।
আমার সাধ্যি নেই।
সেকিরে!
হ্যাঁগো। তোমরা পারছো ?
বুঝেছি।
মিত্রা চলে গেলো।
হ্যাঁগো উনা মাস্টার।
বলুন দিদি।
তোমায় অনি কোনো কথা বলেছিলো।
কিসের ব্যাপারে বলুনতো।
তোমার মেয়ের ব্যাপারে।
হ্যাঁ বলেছিলো।
ও আজকে তোমার মেয়েকে নিয়ে গেছিলো।
হ্যাঁ। যাবার সময় বললো। আপনারা সবাই আসবেন।
সেতো বুঝলাম। ছাত্রের মনের হদিস পাওনাতো ছাত্রকে কেমন পরিয়েছো।
আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছিনা।
ওখানে গিয়ে আমাকে বললো সুভদ্রা হরণ করে নিয়ে এলাম।
হো হো করে হেসে ফেললেন স্যার। বুঝেছি।
এবার মনের কথাটা বলে ফেলো।
ওর জেদের কাছে হার মানছি।
তাহলে আমি অনিকে বলতে পারি।
বলতে পারেন।
লাইট ম্যান। ডাক্তার বললো।
বড়মা সামন্তর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলো।
অনি বুঝি তোমায় ঘটকালি করার দায়িত্ব দিয়েছে।
আসার সময় ফিস ফিস করে বললো। স্যারের মনের কথাটা একটু জেনে নিও।
স্যার আবার হো হো করে হেসে ফেললো।
দেখুন ও কতটা সেন্সেটিভ। এর মধ্যেও ওর কোনো প্লেন আছে।
তা বলতে পারবোনা। আমাকে বললো তুমি একটু স্যারকে কথাটা পারবে।
ওকে বলেদেবেন আমার মনের কথা।
ওরা ওদের মতো গল্প করতে শুরু করে দিলো। আমি পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকলাম। তখন ওখানে হৈ হৈ চলছে। সঞ্জু চিকনা তরজা। সবাই বেশ এনজয় করছে। মিনতিও আছে। আমাকে দেখে দুজনে চুপ করে গেলো।

কিরে তুই কোথায় ছিলি। দেবাশীষ বললো।
বল এইতো এখানেই ছিলাম। মিত্রা বললো।
হাসলাম।
আমরটা কোথায় ?
পাবিনা। আগে সত্যি কথা বলবি তারপর পাবি।
আমি মিত্রার পাশে গিয়ে বসলাম।
একবারে আমার বাটিতে হাত দিবিনা।
বাটিটা চাপা দিয়ে কোলের কাছে তুলে নিলো।
মিনতি একটু চা আনোতো।
একবারে দিবিনা তুই বোস।
মিনতি উঠতে পারছে না। একবার আমার দিকে তাকায় একবার মিত্রার দিকে।
দেখছিস কার ক্ষমতা বেশি।
অব ভিয়াসলি তোর।
তাহলে।
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাত চলে গেছে ওর কোলের ভেতর লুকিয়ে রাখা বাটিতে।
না না না।
তার আগেই মুঠো ভর্তি হয়ে গেছে। খেলাম।
মনে রাখিস এটা আমার জন্য। রেসিপিটা আমার বুদ্ধিতে।
মিত্রা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks