দেখি নাই ফিরে - (Part-60)

কিছু বলবি ?
মাথা নীচু করলো, তোর কাছে হেরেও আনন্দ।
ঠিক বলেছো মিত্রাদি। মিলি বললো।
ভালো সাকরেদ তৈরি করে নিয়েছিস। জল উঁচুতো উঁচু, জল নীচুতো নীচু।
কখনই না, যা সত্যি, মিলি তাই বললো।
হাসলাম। ওর গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। এবার দে।
বাটিটা এগিয়ে দিলো। এক মুঠো তুলে নিলাম।
চিঁড়ে ভাজা চিবোতে চিবোতে মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম। চা।
মিনতি উঠে দাঁড়ালো।
দেবা তোর কাজ করেছিস।
হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করলো। স্যার ডাক্তারদাদার পুরনো পেসেন্ট।
এ গ্রামের সকলেই কি ডাক্তারদাদার পেসেন্ট!
এই ফিল্ডে আর কে আছে বলতো ?
ঠিক। তোরা কি ঠিক করলি।
আগামী সপ্তাহে একবার আসবো।
তাতো হবেনা। আমার একটা কাজ আছে রবিবার। হয়তো তোদেরও থাকতে হবে।
ধর আমরা সোমবার এলাম সেদিনই ফিরে গেলাম।
এরা কষ্ট পাবে। এট লিস্ট ওয়ান নাইট তোকে স্টে করতে হবে।
দেখা যাবে।
নীপা ছুটে এসে মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে কি বললো। মিত্রা মুচকি হাসলো। উঠে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি একটু আসছি।
যা।
কি টিনা ম্যাডাম, শিব ঠাকুর কি বললো তোমায়। তিনি কবে আসছেন।
প্রার্থনা করলাম যেনো না আসেন।
কিরে দেবা! বলে কি ?
এই বেশ ভালো আছি অনিদা।
কেনো।
একটা ছবি মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে। যদি সেটা নষ্ট হয়ে যায়।
হুঁ। বেশ জটিল। তবে কি জানো টিনা। জীবনের সব ছবিই জল ছবি। তুমি নিজে আবার মনের মতো করে এঁকে নিতে পারো।
টিনা আমার দিকে তাকালো। কিছু বলতে চায়। পারলো না। মাথা নীচু করলো।
মিলি ম্যাডাম।
আমি কিছু চাইনি। তবে প্রার্থনা করেছি অনিদার মতো যেনো হতে পারি।
খুব কষ্ট।
হোকনা, খতি কি অনিদা।
দেবা ?
অদিতি চেয়েছে, আমি কিছু চাইনি।
তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করবিনা। চিকনা বললো।
তুইতো সঞ্জুর মতো একটা খুঁজে দিতে বলেছিস।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
কিরে আমি যা বললাম, সত্যি ?
তুই কি করে জানলি। চিকনার মাথা নীচু।
হবে। সবুরে মেওয়া ফেলে। তোর এখন অনেক কাজ। এটা মাথায় রাখিস। অনেক দায়িত্ব। পাশাপাশি বাসু অনাদি সঞ্জুরও। এটা ভেবেছিস।
হুঁ।
চাইবিনা কোনো দিন। চাইলেই ফুরিয়ে যাবে। না চাইতেই তুই যদি পাস। খতি কি।
চিকনা আমার দিকে তাকালো। চোখদুটো চক চক করছে। ফিক করে হেসে ফেললো।
আর কোনোদিন কোনো কিছু চাইবোনা।
তুই খালি তোর কাজটা মনদিয়ে করে যা। দেখবি ধরে রাখতে পারছিসনা।
আমি করবো অনি। তুই যা বলবি তাই করবো।
সোমবার থেকে একেবারে সময় নষ্ট করবিনা।
চিকনা মাথ দোলাচ্ছে।
মাথায় রাখিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম হিমাংশু। হঠাৎ এই সময়!
হ্যালো।
তুই কোথায়।
কেনো।
কাল দুটো কাজ ক্যানসেল হয়েছে। তাই কাল কোনো কাজ নেই, যদি সকালের দিকে বেরোই।
খুব ভালো। কখন আসবি বল।
একবারে ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো।
চলে আয়।
আমার সঙ্গে আমার এ্যাসিসটেন্ট যাবে।
আমি দেখেছি।
না।
ছেলে না মেয়ে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
ছেলে।
আমাকে চেনে।
না। তোর নাম শুনেছে।
সব কাগজ সঙ্গে নিয়ে আসবি।
ঠিক আছে।
হ্যাঁরে চেকগুলো ক্যাশ হয়েছে।
হয়েগেছে।
একটা টেনসন মিটলো। চিঠি সার্ভ করেছিস।
আমার কাছে এ্যাকনলেজ ফিরেও এসেছে।
গুড।
এবার বল কি ভাবে যাবো।
যেভাবে তোকে রুট চার্ট দিয়েছি।
ওখান থেকে ?
ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা।
ঠিক আছে।
আমাকে ফোন করিস কিন্তু।
আচ্ছা।
কেরে, হিমাংশু ? দেবাশীষ বললো।
হ্যাঁ।
ও আসছে ?
হ্যাঁ।
তুইতো আমাদের কি দায়িত্ব দিবি বললিনা।
সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
দেবা চুপ করে গেলো।
এবার উঠতে হবে। ওখানে দু’জন মাত্র রয়েছে।
সঞ্জু চলে গেছে। অনাদি বললো।
কেনো।
লাইটের কি হয়েছে। ওকে ফোন করেছিলো।
ও। লতা রেবা কোথায় ?
কাকীর কাছে।
চল দেবা। এবার এগোই, এদের বসিয়ে রাখলে সারারাতে গল্প শেষ হবেনা।
আমরা উঠলাম। বাইরে এলাম। খুব জোরে গল্প চলছে। মিত্রা মধ্যমনি হয়ে বড়মা ছোটমার মাঝখানে। আমায় দেখেই ডাক্তারদাদা বলে উঠলো, কি অনিবাবু যাবার সময় হয়েছে ?
হ্যাঁ।
স্যারের কাছে তোর অনেক অজানা কথা জানলাম।
আমি মাথা নীচু করলাম।

সব ভালো, একটুও খারাপ নয়।
স্যার কখনো ছাত্রের নিন্দা করেন না।
তুই সেই ছাত্র নোস যে তোর নিন্দা করবে। তোর প্ল্যান মতো সব কথা স্যারের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া হয়েছে।
মনে মনে বললাম, আমি সব শুনেছি।
তুই খুশী।
মাথা দোলালাম।
তোর কিন্তু অনেক দায়িত্ব বেরেগেলো।
আমি চুপ করে থাকলাম।
সবাই মিলে একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম। স্যার ডাক্তারদাদা, দাদার হাত ধরে বললেন আবার আসবেন।
বাড়ি পৌঁছলাম রাত সাড়ে আটটা। খেয়ে দেয়ে শুতে শুতে সেই রাত বারোটা।

সকালে দেবার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
কিরে যাবিনা ?
তোরা যাবি।
হ্যাঁ। আমরা সবাই রেডি।
চল।
মিত্রাকে ডাকলাম। ও তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। মুখ হাতপায়ে জল দিয়ে সবাই বেরিয়ে এলাম।
আজ মিত্রা সবার গাইড, খুশিতে কল কল করছে, সকলকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে আসছে।
বুবুন।
উঁ।
তুই পেঁপে পাতা ছিঁড়লিনা।
ওখানে কিন্তু ফাঁকা মাঠ, কোনো ঝোপাঝাড় নেই, দেখেছিস তো।
চেপে রাখবো। কি বল মিলি।
মিলি চুপ করে রইলো।
হ্যাঁ মিত্রাদি। টিনা বললো।
কিরে দেবা।
অনি আগে ব্যবস্থা করুক তারপর দেখা যাবে।
অনিদা তুমি পেঁপে পাতাটা আগে জোগাড় করতো। মিলি বললো।
চল ভূততলায় যাই।
আবার ভূত।
কিছু হবেনা। দেখবি জায়গাটা দারুণ সুন্দর। মিত্রা বললো।
আমরা ভূততলা পেরিয়ে নদীর ধারে চলে এলাম। মিত্রা সব গল্প ওদের শোনাচ্ছে। সেই খেঁজুর গাছ। দেখলাম কলসি ঝুলে রয়েছে।
যা নিয়ে আয়। মিত্রা আমাকে ঠেলা দিলো।
আবার বলছি, ভেবে দেখ।

ভেবে দেখার সময় নেই তুই যা তো।
মিলি টিনা অদিতি চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।
যাওনা অনিদা, দেরি কোরোনা প্লিজ, কেউ যদি চলে আসে খাওয়া হবেনা। মিলি বললো।
আমি হাসলাম।
খেঁজুর গাছে উঠে রস পেরে নিয়ে এলাম।
রস খাওয়া হলো। মিত্রা দেখালো রস খাওয়ার পর আমি কিভাবে ওকে নাচতে বলেছিলাম, তারপর কিভাবে ও নেচে ছিলো। ওরা হেসে গড়িয়ে পরে।
তখন নতুন, বুঝলি টিনা। ও যা বলছে তাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি। ও যে অতো বড়ো বাঁদর তাতো জানতাম না।
তুমি আর নেচোনা।
আমি হাসছি।
আচ্ছা অনি তোরকি একটুও দয়ামায়া হয়নি তখন। দেবা বললো।
দয়ামায়া। বারবার বলেছি ওখানে গেলে তোর অসুবিধে হতে পারে। না আমি যাবো। তো চল। ঠেলা বোঝ।
শয়তান। মিত্রা আমার কোমরে খোঁচা মারলো।
চল বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে সামন্ত কাকা চলে আসবে।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে পদ্মপুকুরে এলাম।
টিনা বললো, অনিদা তুমি এখানে চুপ্টি করে বসে থাকবে। কোথাও যাবেনা। আমাদের কথা চিন্তাও করতে হবেনা। আমরা আমাদের কাজ সেরে আসছি।
আমি হো হো করে হেসেফেললাম।
তোমায় কিন্তু আজ কোনো ডিস্টার্ব করিনি। মিলি বললো।
এতো সুন্দর সকালে প্রতঃকৃত্য। তাও আবার প্রকৃতির কোলে। নির্মাল্য বললো।
তোকে কাব্যি করতে হবেনা। যাবি।
যাবোনা মানে। রসকি তুমি একা খেয়েছো ?
দেবা প্যাকেটটা।
দেবা প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিলো।
তুই নিলি না।
নিয়েছি।
ওরা চলে গেলো। আজ ওদের পথ প্রদর্শক মিত্রা। আমি পদ্মপুকুরের ধারে বসলাম। ভোর হয়েছে। চারিদিকে পাখির কুজন। মনটা আনমোনা হয়ে গেলো। কাল থেকে অর্কর ম্যাসেজ আর পড়িনি। মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো পড়তে আরম্ভ করলাম। এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালাম। ম্যাসেজটা পরে আমার চোয়ালদুটো শক্ত হয়ে গেলো। শুয়োরের বাচ্চা এতদূর এগিয়ে গেছে। আজ তুই খামটা পেলেই তোর দৌড় থেমে যাবে। তখন তুই নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ো দৌড়ি শুরু করবি। তোর মতো অনেক খানকির ছেলেকে আমি সোজা করে দিয়েছি।
অর্ককে একটা ফোন লাগালাম। দেখলাম ফোন বাজছে।
কিগো অনিদা এতো সকালে।
তোর ম্যাসেজগুলো পড়লাম।
ঠিক আছে ?
হ্যাঁ।
তুই ঠেকাগুলো দেখেছিস।
বলতে পারো আশেপাশে ঘুরেছি। আজ আটটায় ডেকে পাঠিয়েছে। দুটো চামকি জোগাড় করেছি। আজ নিয়ে যাবো।

কোথা থেকে জোগাড় করলি।
বসিরহাটের মাল। ওরা লাইনের।
পাখি পড়ার মতো পরিয়ে নিস।
ও তোমাকে ভাবতে হবেনা। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, বাঁকা আঙুলে তুলবো তোমার মতো। তোমাকে ভাবতে হবে না, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
আচ্ছা। রবিবার তোর সঙ্গে দেখা হবে।
ঠিক আছে।
ওরা সবাই এলো। দেখলাম নির্মাল্যের হাতে নিমডাল। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
কি অনিদা তোমার মতো পেরেছি ?
হাসলাম।
কিরে বুবুন তোর হাসিটা কেমন ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে।
তোর কি ঠিক মতো ক্লিয়ার হয়নি ?
আমার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
একবারে না। আমি খুব স্বাভাবিক।
যাওয়ার সময় তোর চোখটা এরকম ছিলোনা।
বাবাঃ সাইক্লোজিস্ট। চল বেলা হয়ে যাচ্ছে। নেক্সট কোনটা।
তোর স্কুল। মিত্রা আমার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
নির্মাল্য দে একটা ডাল ভেঙে।
নির্মাল্য সবাইকে দিলো।
আমরা আবার সেই পথে চলেছি। মিত্রা লিড করছে। আমি সবার পেছনে। আমার মনটা এখানে নেই। তবু বুঝতে দেওয়া চলবেনা। মিত্রা এখন বেশ পাকা পোক্ত হয়ে উঠছে। ওকে ফাঁকি দিতে হবে। ওরা প্রাণভরে সমস্ত আনন্দ উপভোগ করছে। হাঁসি মস্করা করছে। আমি মাঝে মাঝে যোগ দিচ্ছি। একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম আমার স্কুলে। স্কুলের টিউবওয়েলে সকলে মুখ ধুলাম। মিত্রা ওদের নিয়ে স্কুলের ভেতর ঢুকলো। সবাইকে গল্প বলছে। আজ কিন্তু মিত্রা আমার মতো করেই বলছে। ওর ইমোশানগুলো বেশ সুন্দর। তারপর বকুল গাছের তলায় এলো। মিত্রা ওদের দেখালো কি ভাবে বাঁশি তৈরি করতে হয়। সবাই মিলে লেগে পরলো বাঁশি তৈরি করতে।
বুবুন আজ কিন্তু আমি সেফটিপিন নিয়ে এসেছি।
কোথা থেকে পেলি।
কাল রাতে বড়মার হাত থেকে খুলে নিয়েছি।
বড়মা বুঝতে পারেনি।
না।
ওরা এক একজনে তিনটে চারটে করে বাঁশি তৈরি করলো। এক সঙ্গে সকলে বকুল বাঁশি বাজাচ্ছে। হাসছে দৌড়োদৌড়ি করছে। মনের দুয়ার খুলে মুঠো মুঠো আনান্দে পরিপূর্ণ করে তুলছে নিজের মনকে।
আমি বললাম, চল একটু স্কুলের বারান্দায় বসি।
কেনোরে ? দেবাশীষ বললো।
তুই কালকে বলছিলিনা তোদের কি দায়িত্ব দেবো।
টিনা আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো।
তুমি সত্যি আমাদের দায়িত্ব দেবো।
কেনো তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা।
চলো।
মাটির ওপর বসতে অসুবিধে হবেনা।
কেনো তুমি আমাদের ক্লাস ওয়ানে বসাবে।
বসতে চাইলে বসাবো। অনিদা ওখান থেকেই তার জীবন শুরু করেছিলো।
আমরা গাছের তলায় এসে সবাই গোল হয়ে বসলাম।



মিত্রা টিনা আমার দু’পাশে। টিনার পাশে মিলি তারপাশে অদিতি দেবাশীষ নীপা নির্মাল্য।
ওরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
টিনা।
বলো।
তোমায় যদি চাকরি ছাড়তে বলি তুমি ছেড়েদেবে।
একমাস সময় দিতে হবে।
চাকরি ছেড়েদিলে খাবে কি ?
তুমি চাকরি দেবে।
মিলি ?
টিনা চাকরি ছেড়েদিতে পারলে আমিও দেবো।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
কিরে ওদের চাকরি দিবিতো।
আমি কেনো দেবো! তুই চাকরি দিবি। আমাকে সই করতে বলবি সই করে দেবো।
দেবা শুনলি তোর বান্ধবীর কথা।
দেবা হাসছে।
অদিতি বললো। তুমি আমাকে কিছু বললেনা।
তোমার কাছে একটু পরে আসছি।
ভুলে যেওনা যেনো।
আমার এ্যাডের কি হবে।
ওটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। টিনা বললো।
দেবা আমার প্ল্যানটা বলছি ভালো করে শোন। তোমরাও শোনো, পারলে আমাকে এ্যাটাক করবে। ঝগড়া করবে।
তোমার সঙ্গে! টিনা বললো।
হ্যাঁ। আমি ভগবান নই, ভুল করতে পারি।
বলো।
আমি দামিনী মাসির ওখানে একটা এনজিও করবো, মূল কাজ শিক্ষা স্বাস্থ্য সচেতনতা। মাসি ইসলামভাই ছাড়া তোরা থাকবি। নিজেদের কাজ করার পর ওখানে সময় দিতে হবে। হিমাংশু ফর্মেসনটা তৈরি করছে। তার আগে আমি অদিতি মিলি আর টিনাকে আমাদের অফিসের এক একটা ব্রাঞ্চের মাথায় বসাবো। আমাদের অফিসের তিনটে ব্রাঞ্চ খুব প্রবলেম দায়ক।
আমার কথা শেষ হবার আগেই তিনজনে হৈ হৈ করে উঠে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে আরম্ভ করলো।
সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
ওরে তোরা ছাড় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মিত্রা বললো।
তারপর আমাকে ঘপা ঘপ প্রণাম করলো।
আমার কি হবে। নির্মাল্য বড়ো বড়ো চোখ করে বললো।
তোর কপালে ঘেঁচুকলা। মিলি বললো।
অনিদা হবেনা। আমার একটা ব্যবস্থা করো।
আমিতো কথা শেষ করিনি।
দেবা হাসছে।
টিনা তোর ল্যাপটপটা থেকে আজই রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দেবো। তাহলে আজ থেকে একমাস কাউন্ট হবে। মিলি বললো।
এবার আমাদেরটা বল। দেবাশীষ বললো।
আমি এখানে তিনশো একর জমি নিচ্ছি। হয়তো ওটা বাড়তেও পারে। আমি একটা কৃষি খামার তৈরি করবো। পাশাপাশি পোলট্রি এবং কান্ট্রিক্লাব। আরও বাই প্রোডাক্ট বেরোবে।
দারুণ আইডিয়া।
তুই নির্মাল্য সমস্ত ব্যাপারটার দায়িত্ব নিতে পারবি ?
কি বলছিস তুই!
ঠিক বলছি। এর মার্কেটিং থেকে আরম্ভ করে সমস্ত কিছু। একটা প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি কর। ভাব কি করতে চাস। আমার আর হিমাংশুর হেল্প পাবি। আমি মনে মনে একটা ছবি এঁকে রেখেছি। মিত্রা সমস্ত প্রজেক্ট দেখে কমেন্ট পাস করবে। তার আগে ওকে জানাতে পারবিনা, তোরা কি করতে চাস।
আমার ভয় করছে।
কেনো।
কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট আমি হ্যান্ডেল করবো!
পারবি বলেই বলছি নাহলে পাতি চাকরির অফার দিতাম।
দেবাশীষ মাথা নীচু করলো।
কেনো দেবাদা তুমি ভয় পাচ্ছো। অনিদাতো আছে। মাথায় রাখবে তোমার সব কাজেই তুমি অনিদার হেল্প পাবে। টিনা বললো।
সেটা ঠিক। আমি এ ধরণের কাজ আগে কোনোদিন করিনি।
অদিতিকে প্রেম করার আগে কি ভাবে মেয়ে পটাতে হয় জানতিস। কিভাবে চুমু খেতে হয় জানতিস।

এই তোর মটকা গরম হয়ে গেলো।
ছাগলের মতো কথা বলবিনা। পৃথিবীতে জন্মেই কেউ হাঁটতে শেখে না।
কবে শুরু করবি।
মাস ছয়েকের মধ্যে। এই কদিন যেখানে আছিস সেখানেই থাকবি। মাঝে মাঝে এসে ডেভালপমেন্টের কাজ দেখবি। টোটাল প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করবি। নিজের টিম তৈরি করবি।
আমাকে একটু মেন্টালি প্রিপারেসন নিতে দে।
অনিদা, দেবাদা মেন্টাল প্রিপারেসন নিক আমাকে আমার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবে। আমি দৌড়তে শুরু করে দেবো। নির্মাল্য বললো।
সত্যি মিত্রাদি তোমার নামটা কেনো ছাগল দিয়েছিলো এখন বুঝি। অদিতি কপট রাগ করে বললো।
এই দেখছিস সকলে চাটতে শুরু করে দিলো।
তুই ভাব। আমার কোনো আপত্তি নেই। পারলে আমাকে একবার জানাস।
এইতো খোঁচা মারলি।
আমাদের দায়িত্ব গুলো একবার বলো। টিনা বললো।
তোমাদের এই মুহূর্তে কোনো পার্টিকুলার দায়িত্ব দেবোনা। কিন্তু আমার অফিসের লোকদের বুঝিয়ে দেবো তোমাদের আয়ু শেষ হয়ে এসেছে।
কি রকম! টিনা বললো।
ধরো আমাদের অফিসে এই মুহূর্তে এ্যাডম্যানেজার চম্পকদা। আমি তোমাকে এ্যাডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বানিয়ে দিলাম। তারমানে সমস্ত ক্ষমতাটা চম্পকদার হাত থেকে খাতায় কলমে তোমার কাছে চলে এলো। কিন্তু চম্পকদা তার জায়গায় বহাল তবিয়েতেই থাকবে। ঠিক তেমনি মিলি অদিতিরাও একই পোস্ট হোল্ড করবে।
কি অদিতি তুমিকি তোমার বড়ের মতো ঢোক গিলবে।
ওর সঙ্গে আমাকে গোলাবেনা। ও ওর মতো, আমি আমার মতো। কাজের জায়গায় আমি যা ডিসিসন নেবো সেটাই ফাইন্যাল।
গুড। এই স্পীড না থাকলে কিছু করতে পারবেনা।
সবচেয়ে বড় কথা তোমাকে পাশে পাবো। এর থেকে আর বেশি কি চাই।
ঠিক বলেছিস। আমাদের বসগুলো হারামী নম্বর ওয়ান। মিলি বললো।
এই। মিত্রা ধমক দিলো।
সরি সরি মিত্রাদি। অন্যায় হয়েগেছে। মিলি জড়িয়ে ধরলো মিত্রাকে।
সত্যি বলছি তুমি টিনাকে জিজ্ঞাসা করো। আমি অদিতি টিনা কি ভাবে কাজ করি সেটা আমরাই জানি।
ঠিক আছে। এবার তোদের বস যদি ওরকম করে।
তুমি আছো। সোজা চলে যাবো তোমার কাছে।
সবাই হো হো করে হেসেফেললো।
কবে থেকে যাবো। টিনা বললো।
তোমাদের অফিসের কাজগুলো আগে গোছাও।
অফিসের কাজ গোছানোর কিছু নেই।
তারমানে! তুমি ছাড়তে চাইলে ছেড়ে দেবে।
আমার জায়গায় আর একজন চলে আসবে।
আমাকে সাতদিন সময় দাও। এরমধ্যে অফিসে না পারো বাড়িতে আসবে মিত্রাদি তোমাদের অফিসের গল্প গুলো শোনাবে। আমাকে হয়তো নাও পেতে পারো। আগে গল্প শুনে নাও, কোথায় কোথায় সমস্যাগুলো তৈরি হয়ে আছে। তাহলে তোমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। সেই ফাঁকে আমি তোমাদের তিনটে ঘর রেডি করি।
কিরে মিলি তাহলে আমাদের কাগজে কাজ করার স্বপ্নটা স্বার্থক হচ্ছে। অদিতি বললো।
সত্যি ভাবলেই কেমন গা ছম ছম করছে।
কেনো!
তুমি যেদিন প্রথম তাজে এসেছিলে। টিনাকে আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম। তুই অনিদাকে বল। তোর কথা অনিদা ফেলতে পারবেনা। অদিতি বললো।

টিনা আমাকে বলেনি।
তুমি সেই সুযোগ আমাকে দাওনি। টিনা বললো।
তুমি মাঠে খেলতে নামলে গোল করার সুযোগ তোমায় কেউ দেবে ? তোমাকে করে নিতে হবে।
তুমি যদি কিছু মনে করতে। দেখো মেয়েটা কিরকম হ্যাংলা।
আমাকে মিত্রা মালিক বানিয়ে দাবার পর আমি যে তোমাদের কাছে ছুটে গেছিলাম। সেটাকি হ্যাংলামো ছিলো।
আমি তোমার মতো কোনোদিন হতে পারবোনা।
তুমি আমাকে সবার সামনে চুমু খেতে পারবে।
টিনা মাথা দোলালো। পারবেনা।
আমি মিলিকে চুমু খেয়েছিলাম কি করে।
অনিদা প্লিজ। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।
তোমাকে তোমার ভেতর থেকে সেই আর্চটা বের করে আনতে হবে।
টিনা মাথা তুললো। আমি করবো। করে দেখাবো। তোমায় কথা দিচ্ছি।
এইতো, তোমার চোখ এই সময় ঠিক কথা বলছে।
টিনা মাথা দোলাচ্ছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম সন্দীপের ফোন। ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম।
বল।
কোথায় ?
গাছ তালায় প্রেম করছি।
ম্যাডাম তোর সঙ্গে।
না।
কার সঙ্গে করছিস।
এখানে একটা মেয়েকে পটালাম। সবে ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছি।
মিত্রা আমাকে চিমটি কাটছে। সবাই মুখে চাপা দিয়ে খিক খিক করছে।
গান্ডু।
ইস।
কিরে।
তোর বউ কি বলেছে ?
বানান করে গালাগাল দিতে বলেছে।
ওরা আর চেপে থাকতে পারলোনা। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
কিরে কারা!
সবাই তোর কথা শুনছে। এমনকি তোর মালকিন।
যাঃ।
জিভ বার করেছিস।
তোর কবে বুদ্ধি হবে বলতো।
বল কি বলছিস।
না আমি এখন রাখছি। পরে কথা বলবো। ম্যাডাম কি ভাবলো বলতো।
আমি বানান করে বলি।
সন্দীপ হো হো করে হেসে ফেললো।
বল।
হ্যাঁরে নীপা ভট্টাচার্য তোর আত্মীয়া না ?
কেনো ওখান থেকে ইঁট পেতেছিস।
অনিদা। নীপা চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই সবাইকে আমার কথা শোনাচ্ছিস।
হ্যাঁ।
আমি কেটে দিচ্ছি।
তাতে তোর কাজ হবে ? বল।
নীপার একটা ছবি লাগবে।
কেনো।
ওদের রেজাল্ট আগামীকাল। তোর চেলুয়া খবর আগে বার করে নিয়ে চলে এসেছে।
কি হয়েছে।
নীপা ওই ডিস্ট্রিক্টে মেয়েদের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে। এক থেকে কুড়ির মধ্যে ওর পজিসন সিক্সটিনথ।
নীপার চোখ বড়ো বড়ো, মিত্রা অদিতি টিনা মিলি ওর কাছে উঠে গেছে। নির্মাল্য মিটি মিটি হাসছে। ভাবটা এরকম আমি ঠিক মেয়েকেই চুজ করেছি।
সকাল বেলা গাঁজা খেয়েছিস।
তুই অরিত্রর সঙ্গে কথা বলবি ?
না।
তাহলে ছবি কোথায় পাবো ?
দ্বীপায়নের কাছে আছে। দেখ নীপার সঙ্গে মিত্রার অনেক ছবি আছে। না হলে তোর ই-মেল আইডি ম্যাসেজ করে দে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
লেখাটা লিখে দে।
নিউজ করবে অরিত্র, লিখবো আমি।
তাহলে নীপার একটা ইন্টারভিউ-এর ব্যবস্থা কর।
নীপা সামনে বসে আছে।
তুই ওর সামনে......!
শুধু নীপা নয়। সঙ্গে আরো চার সখী আছে। তার মধ্যে তোর ম্যাডামও।
আমি রাখছি তোকে পরে ফোন করবো।
এই নিয়ে তিনবার বললি।
তাহলে কি বলবো বল।
তুই এক কাজ কর, ম্যাসেজ কর। পাঠিয়ে দিচ্ছি।
নীপা উঠে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
এমা এই সময় কেউ কাঁদে নাকি।
তুমি আমার জীবনটাকে বদলে দিলে।
আমি কোথায় বদলালাম নীপা। আমি উপলক্ষ মাত্র, পরীক্ষাটা তুমি দিয়েছো।
ওরা সকলে মিলে নীপাকে বোঝালো।
মিত্রা বড়মাকে ফোন করে খবরটা দিলো।
তোরা কোথায়।
আমরা এখন বুবুনের স্কুলে।
সবাই আছিস।
হ্যাঁ।
ঠিক আছে আমি এদের পাঠাচ্ছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম চিকনা অনাদি বাসু ইসলামভাই সঞ্জু এসে হাজির। হাতে মিষ্টির হাঁড়ি।
ইসলামভাই গাড়ি থেকে নেমেই নীপাকে কোলে তুলে নিলো। নীপা ছোট্ট শরীরটা শূন্যে।
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো পরে যাবে দাদা।
স্কুল চত্বরের ওই ছোট্ট আঙিনায় হৈ হৈ কান্ড। সবাই রসোগোল্লা খেলাম।
ইসলামভাই চেঁচিয়ে উঠলো, চিকনা।
বলো ভাইদা।
হাটে যা মিষ্টি আছে বেশি বেশি করে নিয়ে আয়। চলো এখানে আর দাঁড়াবো না।

ইসলামভাইয়ের পেছনে নীপা মিত্রা বসলো। আমরা সবাই ভাগা ভাগি করে সবার পেছনে বসে চলে এলাম।
ঘরে মহা উৎসব। সবাই উৎসবের অংশীদার।
দাদা সন্দীপকে ফোন করে কনফার্ম হলো।

হিমাংশু ঠিক সময়ে এলো। চিকনা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। আমি বারান্দার বেঞ্চিতে বসেছিলাম। উঠে গেলাম। ওর সঙ্গে যে ছেলেটি এসেছে তাকে দেখতে বেশ ভালো। অনেকটা সিনেমা আর্টিস্টের মতো। কাছে যেতেই হিমাংশু পরিচয় করিয়ে দিলো। অতীন্দ্র সরকার।

আমি আপনার নাম বহুবার হিমাংশুদার মুখ থেকে শুনেছি। আমাকে সবাই কিন্তু পিকলু বলে ডাকে।
বাঃ তোমার নিকনেমটা বেশ মিষ্টি।
পিকলু মাথা নীচু করে মিটি মিটি হাসছে।
দাদা, তুমি নয় তুই।
হাসলাম।
আসতে কোনো অসুবিধে হয়নিতো। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
একেবারে না। পিকলু গাড়ি ড্রাইভ করলো। খারাপ চালায় নি।
চল আমার স্যুইট হোমে।
আর সব কোথায় ?
আজ নীপার রেজাল্ট বেরিয়েছে। ডিস্ট্রিক্টে ফার্স্ট। এমনিতে সিক্সটিনথ পজিসন।
বাঃ দারুণ রেজাল্ট।
তোর সেই সব নামী দামী বন্ধুরা।
সব আসবে একটু সবুর কর।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, চিকনা একটু চা বলে আয়।
এটাই চিকনা।!
হ্যাঁ।
এতোটা রাস্তা ও পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো। নামটাই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। ওইতো রাইস মিলের মালিক।
মালিক মানে! তুই কি বলতে চাস।
হিমাংশু হাসছে।
স্যার।
হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস।
চিকনা লজ্জায় মাটিতে মিশে যায়।
তোকে রেবা একা ছাড়লো ?
আসার সময় বললো এবার একলা যাও। পরের বারে আমি সঙ্গে যাবো, অনিদাকে বলেদিও।
সঙ্গে আনতে পারতিস।
অনেক হেপা বুঝলি।
আয়।
হিমাংশু চারিদিকে অবাক হয়ে দেখছে। পুরোটা মাটি!
হ্যাঁ। কলকাতায় লোহা সিমেন্ট বালি স্টোনচিপ দিয়ে ছাদ ঢালাই হয়। আমরা এখানে বাঁশের ওপর মাটি ফেলে ঢালাই করি।
ভেঙে পরে যায়না ?
বাবা বাড়িটা বানিয়েছিলেন। ধরে রাখ আমার বয়স।
পিকলুর চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে।
দারুণ লাগছে হিমাংশুদা। কবে সেই ভূগোলে পরেছিলাম। গ্রামের লোকেরা মাটির বাড়িতে থাকে। এখন চাক্ষুষ দেখছি।
পিকলু তুমি চ্যার্টার পাশ করে গেছো।
হ্যাঁ দাদা।
এবছর কস্টিংটা ফাইন্যাল দিলো। হিমাংশু বললো।
বাঃ। তা হিমাংশুকে ছেড়ে কবে পালাবে।
না না হিমাংশুদাকে ছেড়ে যাবোনা। হিমাংশুদার কাছে আর্টিকেল ছিলাম এখন হিমাংশুদার সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবো।
আমি মাটির শিঁড়িদিয়ে ওপরে আমার নিজের ঘরে নিয়ে এলাম। বুঝলি হিমাংশু এটা আমার ঘর।
হ্যাঁরে নিচে অতো বস্তা কিসের।
ধানের। এখন ধান ওঠার মরশুম তাই ধান কেনা চলছে।
তুই কাজ শুরু করে দিয়েছিস।
অনেকদিন। চিকনা আর নীপা দেখে।
তুই বেশ অঙ্ক কষে চলছিস।
তা বলতে পারিস। তোর এখন অনেক কাজ। দফায় দফায় মিটিং।
তুই যে এমনি এমনি ঘুরতে ডাকিসনি তা জানি।
বোস। সোফাটা দেখিয়ে দিলাম।
তোর এখানে কারেন্ট আছে।
আছে। সেটা অর্ধেক সময় থাকেনা। তবে জেনারেটর আছে। তোর অসুবিধে হবেনা।
আমার প্রিন্টার মেসিন সব গাড়িতে।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
তাই বললো চিকনা। এমনকি গাড়ির চাবিটাও নিয়ে নিলো।
ওখানেই কো-অপারেটিভের জমিটা নিয়েছি। কাজ শুরু হয়েগেছে।
কিরে এতো আওয়াজ কিসের! ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি।
ভূমিকম্প নয়, দঙ্গল বেঁধে সব আসছে।
কথা শেষ হলোনা সবাই চলে এলো। ঘর ভড়ে গেলো।
যে যার মতো বসে পরলো।
এর মধ্যে কাকে কাকে চিন্তে পারছিস ?
ম্যাডাম ছাড়া কাউকে নয়। বসুন ম্যাডাম।

কখন এলেন।
এইতো সবে মাত্র এসে বসেছি। ও কাজের ফর্দ হাতে ধরাচ্ছে।
এরি মধ্যে।
আর বলবেন না। আমাকে পিষে মেরে দেবে।
তুই সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
তুই আলাপ করিয়ে দে।
তুই সবাইকে গল্পে চিনিস। দেখিস নি।
তোর সেই কলেজের ব্যাচ।
হ্যাঁ।
অনিদা এটা কিরকম হলো। তুমি প্রমিস করেছিলে কাউকে বলবেনা। মিলি চোখ পাকিয়ে বললো।
আচ্ছা ফুচকা খেতে কে না ভালবাসে, বলো।
তাবলে তুমি....।
অনেকদিন আগে বলেছি। বিশ্বাস করো। হিমাংশুকে তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পারো।
হ্যাঁ ও অনেকদিন আগে বলেছে। মনেহয় যেদিন আপনাদের সঙ্গে তাজে ও মিট করেছিলো। হিমাংশু বললো।
তুমি হিমাংশুদাকে সব বলো।
ও আমার আইনের ডাক্তার। ওকে না বললে চলে।
আমি একে একে সবার সঙ্গে হিমাংশুর পরিচয় করিয়ে দিলাম। শেষে পিকলুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। পিকলু একটু থতমতো খেয়ে গেছে। এতো বড়ো বড়ো সব বিগ পার্সোনালিটি। এখানে সব কেমন ভাবে আছে। উঠে এসে সকলের সঙ্গে হ্যান্ডসেক করলো।
নিচ থেকে অনাদি চেঁচিয়ে উঠলো, অনি অনি বলে।
মিত্রাকে বললাম, দেখতো কি বলে।
মিত্রা বেরিয়ে গেলো।
ম্যাডাম, হিমাংশুদার জিনিষপত্র কোথায় রাখবো।
আমি ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বললাম, এখানে নিয়ে আসতে বল।
মিত্রা খালি বললো, শুনতে পেয়েছো।
কোনো প্রতিউত্তর পেলাম না।
কিছুক্ষণ পর বাসু অনাদি এলো।
চিকনা কইরে।
ওবাড়িতে বড়মার কাজ করছে।
আমি হিমাংশুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বুঝলি হিমাংশু, এই গ্রামের মুখ্যমন্ত্রী।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
এইতো চাটতে শুরু করলি। অনাদি বললো।
বারে তোর পোর্ট ফলিওটা বলবোনা।
তা বলে মুখ্যমন্ত্রী।
বাসু অনাদি হিমাংশুর সঙ্গে করমর্দন করলো। পিকলু নিজে পরিচয় করে নিলো।
বুঝলি হিমাংশু এরা কিন্তু এক একজন কো-অপারিটেভের মাথা।
তুইতো বেশ বড়ো জাল ফেলেছিস।
জালতো ফেলেছি। মাছ উঠবে কিনা বলতে পারছিনা।
উঠবে। আমি আস্তে আস্তে যেটুকু লক্ষ করলাম খালি হিসাব করে একটু খেলতে হবে। তোর স্বপ্নের জায়গা বলে কথা।
তা বলতে পারিস।
নীপা চা নিয়ে এলো।
হিমাংশুকে দেখিয়ে বললাম, এই সেই মেয়ে যে এই বছর পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে।
নীপা কাঁই কাঁই করে উঠলো।
মিত্রা বলে উঠলো, কেনো তুই ওর কথায় খেপে যাস, ও কোনোদিন সোজা কথা সোজা করে বলে।
নীপা সবার ছোট, লম্বাকরে সকলকে প্রণাম করলো।
মিলি ওর কোমরটা একটু তেল মালিশ করে দাও।
দেখছো মিত্রাদি দেখছো। নীপা আবার হাঁই হাঁই করে উঠলো।
চা খেয়ে স্নান করে নে। খাওয়া দাওয়ার পর দুপুর থেকে ফেজে ফেজে বসবো। রবিবার সকালে বেরিয়ে যাবো মাথায় রাখিস।
চা খেতে খেতে টুক টাক গল্প খুনসুঁটি। হাঁসা হাঁসি। এরি মধ্যে দেখলাম মিলির সঙ্গে পিকলুর চোখে চোখে কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে ইংরাজীতে ঝড় উঠছে। আমিও যোগ দিচ্ছি। বাসু অনাদির চোখ ছানাবড়া।
অনাদিকে বললাম হিমাংশুর ঘর।
আর নেই। এবার তুই ব্যবস্থা কর।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ভালো করেছিস। আজ আমি তিন বউকে নিয়ে শোবো।
তার মানে। মিত্রা বড়ো বড়ো চোখ করলো। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks