দেখি নাই ফিরে - (Part-61)

তোর আপত্তি আছে।
অবশ্যই।
তাহলে আমরা তিনজনে একঘরে শুই তোরা তিনজনে এক ঘরে শো।
সেটা হতে পারে।
সমস্য মিটে গেলো।
মিলির দিকে তাকিয়ে বললাম। তোমরা দুজনে ওপরে চলে এসো। আমি হিমাংশুর ঘরে ঢুকে পরবো।
না না তুই বরং ওপরে থাক। হিমাংশু পিকলু নিচে যাক।
সেইতো তিন বউ।
তাহোক তবু তুই থাকবি আমাদের সঙ্গে।
মিলি টিনা মুচকি মুচকি হাসছে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
তুই হাসলি।
ম্যাডামের কথা শুনে। ম্যাডাম তোকে চোখের আড়াল করতে চাইছেনা।
আসর ভাঙলো।

দুটো দিন খুব চাপের মধ্যে কাটলো। খালি মিটিং। একবার দাদাদের সঙ্গে তো আর একবার নিরঞ্জনদা ইসলামভাই বাসু অনাদিদের সঙ্গে। কখনও ডাক্তারদার সঙ্গে নার্সিংহোম নিয়ে। মাঝে একবার জায়গাটা সবাই মিলে হৈ হৈ করে দেখে এসেছি। পারদপক্ষে মিত্রাকে কোনো আলাদা করে সময় দিতে পারিনি। শুধু মিত্রা বললে ভুল হবে ওদের কাউকেই সময় দিতে পারিনি। প্ল্যান প্রোগ্রাম করতে করতেই সময় চলে গেছে। আমার কাজ কর্ম দেখে পিকলুর চোখ কপালে উঠে গেছে। হিমাংশু ওকে বার বার বোঝাবার চেষ্টা করেছে, তুমি খুব ভাল করে বুঝে নাও। আমি কিন্তু এখানে খুব বেশি আস্তে পারবোনা। তোমাকে আসতে হবে সব কিছু সামলাতে হবে।

এনজিওর ব্যাপারটা নিয়েও হিমাংশুর সঙ্গে বসেছি। হিমাংশু মাঝে আমাকে বলেছে তুই এতগুলো মাথায় রেখে চলবি কি করে। আমি হাসতে হাসতে বলেছি আমি এক সঙ্গে ছটা জমজ বাচ্চার বাপ হবো। ওরা হেসেছে আমার কথা শুনে। কো-অপারেটিভ নিয়ে একটু মত পার্থক্য হয়েছিলো আমার সঙ্গে সবার। কিন্তু ডাক্তারদাদার মধ্যস্থতায় সেটা মিটে যায়। ডাক্তারদাদার পারফরমেন্স এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এককথায় পোরখাওয়া জিনিষ। নিরঞ্জনদা অনাদি বাসু দায়িত্ব থাকবে। দাদা মল্লিকদা নিরঞ্জনদা সইয়ের অথরিটি। ইসলামভাই দেখাশুনা করবে। আমি ওভার অল দেখাশুনা করবো। আমাদের ইনটারেস্টের বহর দেখে মিলিরা সবাই ফিক্সড করতে চাইলো। হিমাংশু ওদের বললো আগামী সপ্তাহে কাগজপত্র রেডি করে দিই, তারপর ফিক্সড করবেন।
তবে ছোটো ছোটো লোন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এই দায়িত্ব অনাদি আর বাসুর ওপর বর্তালো। লোক যা যা লাগবে অনাদি বাসু নেবে, নিরঞ্জনদা কো-অর্ডিনেট করবে। আমি খালি একটা কথাই নিরঞ্জনদাকে বললাম, পারলে খুব তাড়া তাড়ি দলমত নির্বিশেষ ফ্লারিশ করতে আরম্ভ করো। মাথায় রাখবে রিকভার যেনো হয়। আমার উদ্দেশ্যটা কি তোমাকে আলাদা করতে বলতে হবেনা। নিরঞ্জনদা হাসলো।
বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো। দাঁত বার করে হাসিস না, এসে হিসেব নেবো মাথায় রাখিস।
এর মধ্যেই একটা বিষয় লক্ষ করলাম সময় পেলেই মিলি পিকলু আলাদাভাবে ঘুরছে, দু’জনে দু’জনকে সময় দিচ্ছে। মিত্রাকে বললাম ব্যাপারটা একটু দেখ। লাভ এজ ফার্স্ট সাইট কিনা।
একদিন রাতে যাত্রা দেখতে গেলাম। দারুণ এনজয় হলো। আমার পুরনো স্কুলের বান্ধবী সৌমির সঙ্গে দেখা হলো। ও এখনো বিয়ে করেনি। মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। ও এখন আমাদের স্কুলের প্যারা টিচার, বিয়ে করবেনা। বিধবামাকে কে দেখবে। বললাম পরের বার এসে তোর সঙ্গে দেখা করবো। ওর মোবাইল নম্বর নিলাম।
খাওয়া দাওয়া, হৈ হুল্লোড়, আর কাজ দুটো দিন কোথাদিয়ে যে কেটে গেলো, বুঝতে পারলাম না। মনে হলো এইতো সকাল হলো। এরি মধ্যে রাত্রি হয়ে গেলো! এর মধ্যেই অর্ককে ফলোআপ করেছি। বিষয়টা জটিল থেকে জটিলোতর হয়েছে। এর ফাঁকেই হিমাংশুকে বলেছি আগামী শুক্রবার মিত্রাকে রেস্ট্রি করবো, গিয়েই সব ব্যবস্থা করবি।
ওখানকার কাজ চুকিয়ে আমরা সবাই কলকাতা ফিরে এলাম। আসার সময় নীপাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলাম। মিত্রার নার্সিংহোমে একবার ঢুকলাম। মিত্রা সকলের সঙ্গে ডাক্তারদাদার আলাপ করিয়ে দিলো। কেউ কেউ ডাক্তারদাদাকে নামে চিনতো। কেউ ডাক্তারদাদার ডাইরেক্ট ছাত্র। হিমাংশু সকলকে নতুন মালিকানার মটিভেসন বুঝিয়ে দিলো। ছোট্ট মিটিং। ডাক্তারদাদা সমস্ত খোঁজখবর নিয়ে নিলেন। এই নার্সিংহোমের দায়িত্ব যাঁর ওপর আছে তাকে একবার কলকাতায় ডেকে পাঠালেন। ফেরার সময় খুব আনন্দ হলো। দেবাদের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। নিরঞ্জনদা ধাবা থেকে বিদায় নিলো। আমরা কলকাতার পথে।
দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরোবার সময় দামিনী মাসিকে ফোন করলাম।
কিরে এখন কোথায় ?
হরিশ মুখার্জীতে ঢুকছি।
আয় সব রেডি করে রেখেছি।
ঠিক আছে।
বড়মা ছোটমা দামিনী মাসিকে দেখে নি। দাদার মুখ থেকে যা শুনেছে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির গেটে হাজির হলাম। ভজুরাম নেমেই গেটের সামনে ডাকতে শুরু করে দিলো ছগনদাদা ছগনদাদা গেট খোলো।
ছগনলাল গেট খুললো।
আমরা ভেতরে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলো।
দামিনী মাসি এগিয়ে এলো।
দামিনী মাসির পরনে লালাপাড় শাড়ি। সৌম্য শান্ত মুখমন্ডল। আজ মাসিকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
ভজু গিয়ে দামিনী মাসিকে প্রণামকরেই জড়িয়ে ধরলো। দামিনী মাসির চোখ ছল ছল।
ইসলামভাই চেঁচিয়ে উঠলো, এইতো আবার শুরু করে দিলে।
দামিনী মাসি এসে বড়মা ডাক্তারদাদা দাদাকে প্রণাম করলো।
থাক থাক ভাই। বাবাঃ তোমার গলা সেদিন শুনছিলাম। ভয়ে একেবারে কাঠ। আজ দেখে তেমন মনে হচ্ছেনা। তাই নারে মুন্না ?
যারা কাজ করছে দেখলাম তারা কমবেশি ইসলামভাইকে চেনে। এসে এসে তার ইসলামভাইকে সেলাম আলেকম সালাম করে যাচ্ছে।
দাদা আমার দিকে তাকিয় বললো, তুই এসব কি শুরু করেছিস।
তারপর ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে, তুমিতো বলোনি আমাকে।
এটা অনি স্পেশাল। কেন কি বৃত্তান্ত অনি উত্তর দেবে।
চলো চলো ভেতরে চলো। আমি বললাম।

আমি তিনটে ঘর রেডি করতে পেরছি অনি। দামিনী মাসি বললো।
যথেষ্ট। এইনাও তোমার মিত্রা।
দামিনী মাসি এগিয়ে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিত্রা প্রণাম করতে যাচ্ছিল দামিনী মাসি ওর হাতটা ধরলো। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো। না মা তোর প্রণাম আমি নিতে পারবোনা।
কেনো!
তুই অনির বৌ। আমার বুকে থাকবি।
আমরা সবাই বসার ঘরে এসে বসলাম। কবিতা শরবতের গ্লাস ট্রেতে করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।
বড়মা।
বড়মা আমার দিকে তাকালো।
কবিতা।
এটা কবিতা! সেদিন ওর ওইরকম গলারস্বর!
কবিতা সেন্টার টেবিলে ট্রেটা নামিয়ে সকলকে প্রণাম করলো।
মাসি আমার ঘর রেডি। মিত্রা জিজ্ঞাসা করলো।
ওপরে তোর আর ছোটর ঘর রেডি করেছি। নীচে এই ঘরটা রান্নাঘর আর দাদার ঘর।
খাওয়া কি মাসি। বেরোবো। আমি বললাম।
তুই কোথায় বেরোবি। বড়মা আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো।
আমাকে এখন দু’তিনদিন পাবেনা।
তারমানে! প্রত্যেকদিন বাড়ি ফিরবি। ছোটমা বললো।
তোমার মেনুটা বলো। মাসির দিকে তাকালাম।
খাবার সময় দেখবি।
আমায় খেতে দাও কেটে পরি।
তোর কোথাও যওয়া হবেনা। ছোটমা বললো।
প্রচুর কাজ, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।
আমরাও একবার অফিসে যাবো, কি বল মল্লিক। দাদা বললো।
আমাকেও বেরোতে হবে। ইসলামভাই বললো।
তোরা সকলেই বেরিয়ে যা না। ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলো।
তোমরা বসো আমি আসছি।
তুই আগে যাবিনা। আমি যাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই ছোটর ঘরে যা।
তুই যা।
আমি বেরিয়ে এলাম। ওপরে এসে আমার চোখের পলক পরছে না। মাসি দারুণ রং করেছে আমার ঘরটা। হাল্কা কচি কলাপাতা রং। বাথরুমে সাদা টাইলস বসিয়েছে। একবারে ধব ধবে সাদা। আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে ঘরটার। কিন্তু টেবিলটা যেমন অগোছালো ঠিক তেমনি আছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম টিনা ফোন করেছে।
হ্যালো।
বলো টিনা।
বাড়ি পৌঁছলাম।
ওরা ?
সবাই পৌঁছেগেছে, নির্মাল্য আমাকে শেষে নামালো।
নির্মাল্য চলে গেছে।
না আমার ঘরে বসে।
কেমন লাগলো তোমাদের।
তুমি এলে তোমাকে বলবো।
ঠিক আছে দেখি সময় করতে পারিকিনা।
তারমানে!
কলকাতায় আসা মানে আবার মূল শ্রোতে মিশে যাওয়া, কোথায় টেনে নিয়ে যায় দেখি।
টিনা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
রাখি।
আচ্ছা।
আলনা থেকে টাওয়েলটা কাঁধে নিলাম। গেঞ্জি প্যান্ট খুলে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ভালো করে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলাম। আলমাড়িটা খুলে একটা প্যান্ট গেঞ্জি বার করেনিলাম। দেখলাম যেখানে যা রেখে গেছিলাম সব ঠিক আছে। ড্রেস করে নিচে নেমে এলাম।
দেখলাম খাওয়ার সাজানো হয়ে গেছে টেবিলে। আমার আগেই মিত্রা রেডি হয়ে গেছে।
তুই একটা মেয়ে।
মিত্রার দিকে তাকালাম।



ঠিক আছে ঠিক আছে পরে বলিস। সবার সামনে বলতে হবেনা।
নীপা হাসছে। বড়মা ছোটমা রান্নাঘরে।
ভজু।
যাই অনিদা।
ভজু এলো।
কিগো।
শাকের আঁটি গুলো নামিয়েছিস।
হ্যাঁ।
দামিনী মাসির দিকে তাকালাম।
আমি দেখেছি।
পছন্দ।
দামিনী মাসি হাসছে।
কিগো ছোটমা চারটে জায়গা।
তোরা চারজন খেয়ে আগে বেরো তারপর আমরা সবাই খাব।
মিত্রা।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা, আমি সব টেস্ট করে নিয়েছি।
বড়মা।
বল।
রাতে কি এ বাড়িতে না ও বাড়িতে।
এখনো কিছু ঠিক করিনি।
আমি কিন্তু নাও ফিরতে পারি।
কেনো ? ছোটমা বললো।
দরকার আছে।
তুই ফিরে আসবি।
কথা দেবোনা।
একিরে মিত্রা একা থাকবে।
নীপা আছে।
তুই কি সেই জন্য নীপাকে নিয়ে এসেছিস।
হ্যাঁগো ডাক্তারদাদা কোথায় খাবে।
আগে আমার কথার উত্তর দে।
দেওয়া হয়ে গেছে।
তুই ফিরে আসবি।
ঠিক আছে।
ডাক্তার স্নান করে আসছে।

আমরা চারজন খেতে বসেছি। দামিনীমাসি ফ্রাইএড রাইস আর চিকেন করেছে। ঘপা ঘপ খেতে শুরু করলাম, খেতে ঠিক ইচ্ছে করছে না। মিত্রা দু’টো চিকেন তুলে নিল। আমি কিছু বললাম না। ওরা সবাই লক্ষ্য করেছে। ছোটমা একবার মুখ টিপে হাসলো।
তোমার সঙ্গে নেক্সট কবে দেখা হচ্ছে। ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম।
তুই যখন চাইবি।
বুঝেছি।
এরি মধ্যে বুঝেগেলি!
হ্যাঁ।
তোমরা অফিসে আসছোতো ? দাদাকে বললাম।
হ্যাঁ।
আমি খুব তাড়াতাড়ি খাচ্ছি।
তুই যে আজকের কাগজে ওটা ছাপলি, লেখাটা ?
ওটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।
পুরোটা খেতে পারছি না। মিত্রার দিকে তাকালাম। খেয়ে নিবি ?
তোর ওঠার অপেক্ষায়।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
কিরে তুইতো কিছুই খেলি না। বড়মা কাছে এসে দাঁড়ালো।
অনেক খেয়েছি ভালো লাগছেনা। রাতে কোথায় থাকছো, এ বাড়িতে না ও বাড়িতে আমাকে একবার জানিয়ো।
তোর কি খুব তাড়া। ইসলামভাই বললো।
খুব। পেছনে লোক লাগিয়ো না। প্রইভেট বাসে করে ঘুরবো। ধরে ফেলবো।
দামিনী মাসি ইসলামভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
তুই একটা মালিক। দামিনী মাসি বললো।
সেই জন্য প্রাইভেট বাস।
দাঁড়ালাম না। মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। মিত্রা গেট পর্যন্ত এলো। ঘ্যানোর ঘ্যানোর। রাতে ফিরে আয়। যত রাত হোক।
দেখি।
বেরিয়ে এলাম।
প্রথমেই অর্ককে একটা ফোন লাগালাম।
হ্যাঁ দাদা। গলাটা খুব নীচু স্বরে।
কোথায় ?
তোমায় পরে রিং ব্যাক করছি।
ঠিক আছে।
সন্দীপকে ফোন লাগালাম।
ফিরে এসেছিস।
হ্যাঁ।
অফিসে আসবিতো ?
জরুরী কিছু আছে।
আছে।
বল।
রাজনাথের সিএ এবং পিএ তোকে তিন চারবার খুঁজে গেছে।
তুই বলিসনি ফোনে কথা বলে নিন।
বলেছি।
কি বলছে।
তোর সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলতে চায়।
কি বলেছিস।
মঙ্গলবারের আগে হবেনা।
দেখে কি মনে হচ্ছে।
খুব টেনসনে ভুগছে।
কবে থেকে আসছে।
আজই প্রথম এলো। সকাল থেকে চার বার আসা হয়ে গেলো। শেষে আমার সঙ্গে কথা হলো।
আর কোনো ফোন ফান।
আপাতত ঠিক আছে।
ব্যানার্জী।
কোনো সাড়াশব্দ নেই।

মঙ্গলবার মালটা বেরোবে মাথায় রাখিস।
ঠিক আছে। তুই আসছিস তো ?
দেখি। দাদারা যাচ্ছে।
আচ্ছা।
বাসে উঠলাম, সোজা পিলখানায় এসে নামলাম। অর্কর কথা মতো সেই চায়ের দোকানটা প্রথমেই খুঁজে বার করলাম। তারপর ওমপ্রকাশকে একটা ফোন লাগালাম।
তুই কোথায়।
দাদ আমি একটা কাজে বেরিয়ে এসেছি। তোমার কাছে একজনকে পাঠাচ্ছি ও তোমাকে আকিবের ঠেকে নিয়ে যাবে।
আমি ওকে চিনি।
খুব ভালো করে চেনো। অবতার ও একসঙ্গে থাকতো। ওই তল্লাটের গ্যাংটা ওরা চালায়।
হাতকাটা ?
হ্যাঁ হ্যাঁ।
ওর নামতো ছোট্টু।
নাম বদলে নিয়েছে।
আমি চায়ের দোকানে বসে আছি।
ঠিক আছে, আমি ওকে পাঠাচ্ছি।
তুমি পাঁচমিনিট বোসো।
এই সব কাজে এইরকম চায়ের দোকানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। চা খেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। আমি এই তল্লাটে অপরিচিত। অনেকেই চোরা চোখে আমাকে দেখছে।
নেপলা এসে বাইক নিয়ে থামলো।
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।
তুই।
তুমি যেখানে যেতে চাও আমি নিয়ে যাচ্ছি।
তুই জানলি কি করে।
তুমি চলো তারপর বলছি।
আমি ওর বাইকের পেছনে চেপে বসলাম। ও আমাকে গলি তস্য গলির ভেতর দিয়ে লাইনের ধারে একটা ঝুপরিতে নিয়ে এলো। আমি বাইক থেকে নামলাম।
ভেতরে এসো।
প্লাসটিকের ছেড়া পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।
দেখলাম ঘরে রতন আবিদ বসে আছে। পাশে আকিব।
রতন আমাকে দেখে মাথা নীচু করলো। আবিদ হাসছে। আকিবের মুখ ছোটো হয়েগেছে।
বিশ্বাস করো অনিদা।
রতনের দিকে কট কট করে তাকালাম। আমি এখানে আসবো তোরা জানলি কি করে।
তুমি বসের সঙ্গে কথা বলো।
আমি পকেট থেকে ফোনটা বার করতেই বেজে উঠলো। দেখলাম ইসলামভাই।
নেপলা জানালো আমি পৌঁছে গেছি।
ইসলামভাই হো হো করে হাসছে।
বলো।
আমি জানতাম তুই ওখানে যাবি।
আমার মোবাইলথেকে ম্যাসেজ গুলো ট্রান্সফার করে নিয়েছো।
মিথ্যে বলবোনা। মামনি হেল্প করেছে।
এখন থেকে মোবাইল টেবিলের ওপর পরে থাকবে, সিমকার্ড আমার পকেটে থাকবে।
তুই রাগ করিসনা। আমাকে মারার স্কিম করবে আর আমি জানতে পারবোনা তা হয়।
ওমপ্রকাশ কোথায় ?
আমার কাছে। তুই চলে আয়, তোর পার্টের কাজ তুই কর আমার পার্টের কাজ আমাকে করতে দে।
চুপ করে থাকলাম।
আমি জানি তুই আমাকে বড্ড ভালোবাসিস। মামনিকে জিজ্ঞাসা কর, আমি বেরোবার সময় ওকে হিন্টস দিয়ে এসেছি তুই বেরিয়ে প্রথম কোথায় যাবি।
মাসি যানে।
আমি বেরোবার সময় বলেছি। তবে তোর ছেলেটা দারুণ ইন্টেলিজেন্ট। ও ম্যাসেজ না করলে একটা অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারতো। রতনকে একটু দে।
রতনের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিলাম।
ও কিছুক্ষণ হুঁ হাঁ হুঁ হাঁ করেগেলো। দেখলাম কথা শুনতে শুনতে ওর চোয়ালদুটো শক্ত হয়ে উঠছে। দাঁত কট কট করছে। ফোনটা রেখেই দাম করে একটা ঘুঁসি মারলো আকিবের নাকে। ঝড় ঝড় করে রক্ত বার হতে আরম্ভ করলো। রতন বাজখাঁই গলায় ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে উঠলো।
খানকির ছেলে তোর জন্য দাদা না খেয়ে চলে এসেছে। নেপলা।
তুমি ছাড়ো রতনদা তুমি ছাড়ো। আবিদ বললো।
এখন থাক।
নেপলা পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
দাদাকে একটা টুল এনে দে, দুটো চিকেন প্যাটিস আর কোলড্রিংকস নিয়ে আয়।
না আমি খাবোনা।
দাদা বলেছে। তোমাকে না খাইয়ে এখান থেকে যেতে দেবোনা।
সবার জন্য আনা।
এই শালার জন্যও।
হ্যাঁ।
নেপলা বেরিয়ে গেলো।
আমি ছোট্টুর দিকে তাকালাম। রক্তে মুখটা লাল হয়ে গেছে। জামাতেও গড়িয়ে পরেছে দুচার ফোঁটা। খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই এদের কাছে এটা জলভাত। এককথায় বলা যায় সকালের চা।
এই জন্য তোদের তখন বাঁচিয়েছিলাম।
তুমি বিশ্বাস করো অনিদা।
কি বিশ্বাস করবো বল। তখন এনকাউন্টারে মিঃ ঘোষ তোকে মেরে দিলেই ভালো করতো।
আল্লা কসম আমি ইসলামভাই-এর ক্ষতি হোক চাই না।
একবারে আল্লার নাম মুখে এনে মিথ্যে কথা বলবি না।
তুমি বিশ্বাস করো। রাজনাথ বাবুর সামনে আমি না করিনি। হ্যাঁ বলেছি কিন্তু আমি কাজটা করতাম না।
তুই অবতার সাগির সব এক কথা বলছিস।
আমি মিথ্যে বলছিনা।
তুই কাজটা না পারলে, তোর পেছনে কাকে লাগিয়েছে। তোকে মারার জন্য।
আমাকে কেউ মারতে পারবে না।
এতো বড়ো হনু হয়ে গেছিস!
আমি বলছি তোমায়।
আমি তোকে আজই মেরে দিতাম।
তুমি পারো। সে ক্ষমতা তোমার আছে। প্রমাণ পেয়েছি। তাই তোমাকে আমাদের লাইনের সকলে বস বলে ভয়পায়।
আমাকে মারার জন্য কাকে ঠিক করেছিস।
তোমার পায়ে ধরে বলছি, বিশ্বাস করো কলকাতায় জন্মায় নি।
ছোট্টু আমার পায়ে ঝাঁপিয়ে পরলো।

শুয়োরের বাচ্চা বলে কিরে আবিদ। এতক্ষণ চুপচাপ ছিলো। অনিদাকে দেখে গড়গড় করে বলে যাচ্ছে। অনিদা তুমি কি জাদু যানো। রতন বললো।
অনিদা তোদের আগে থেকে আমাকে চেনে।
সেতো এখন বুঝতে পারছি।
তাহলে তুই দাদাকে মারার সুপুরি নিলি কেনো।
আমার জায়গায় তুই থাকলে তুইও নিতিস।
তুই জানতিস অনিদার সঙ্গে দাদার একটা ভালো সম্পর্ক আছে।
জানতাম।
কিছু হলে অনিদা তোকে রাখবেনা এটাও জানতিস।
হলেতো।
তারমানে!
লোকটার পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে, তাছাড়া বহুত হারামী।
তোর সঙ্গে কোথায় বসে কথা হয়েছে। আমি বললাম।
পার্টি অফিসে।
কোথাকার।
মোড়ের মাথায় যেটা আছে।
তোকে কে আলাপ করিয়ে দিলো।
ওই যে ডাক্তারটা আছেনা। বিএফের বিজনেস করে।
তোর সঙ্গে ডাক্তারের আলাপ হলো কি করে।
এ তল্লাটে চৌধুরী বাড়িতে যতোগুলো বিএফের স্যুটিং হয় আমি করাই।
ভালোই লগ্গা আসে বল।
দু’ই আড়াই আসে।
নেপলা পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকল।
একটা প্যাটিস নিলাম। সবাইকে নিতে বললাম। খেতে খেতে ছট্টুকে বললাম রাজনাথ তোকে আর কি বললো।
এদেরকে বাইরে যেতে বলো আমি বলবো।
ওরা আমার কাছের লোক, তোর মতো। তুই বলতে পারিস।
যদি লিক করে দেয়।
দিলে দেবে। তোর কি।
আমি হজম হয়ে যাবো।
এই বললি তোকে কেউ হজম করতে পারবে না।
এই লাইনে মুখ না ছোটালে কুত্তায় পেচ্ছাপ করবে।
ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো। বুঝলাম অর্ক। ম্যাসেজটা পরলাম। অনেকটা বড়ো ম্যাসেজ।
দাদা অনেক বড়ো লিখে ফেললাম খুব সিরিয়াস হতে যাচ্ছে ব্যাপারটা।
পড়তে পড়তে মনে পরে গেলো মুখটার কোনো পরিবর্তন যেনো না হয়। হাসি হাসি ভাবটা মুখে ধরে রাখতে হবে।
আজ সকাল থেকে ডাক্তারের কোনো পাত্তানেই যেহেতু আমাদের কাগজে ব্যাপারটা ফ্লাস হয়ে গেছে। ডাক্তার এখন ব্যারাকপুরে লাট বাগানের একটা বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছে। ঠিকানা এই। এটা রাজনাথের বাড়ি। ওখানে রাজনাথের রাখেল থাকে। আমি এখন ফুরফুরা সরিফ থেকে বেরোচ্ছি। এখানে মুজফ্ফরপুর থেকে সাতজন এসেছে। মনে হচ্ছে টেররিস্ট। প্রচুর আর্মস আছে। রাজনাথ বাবু এদের দায়িত্ব দিলো। শুয়োরের বাচ্চা পাগলা কুত্তার মতো আচরণ করছে। তুমি ছাড়াও ইসলামভাইকে ওদের চাইই চাই। আমার বেশ ভয় করছে দাদা। তুমি একটু সাবধানে থেকো। আকিব ওদের দেখিয়ে দেবে ঠেকাগুলো। ওরা কাজ করে বেরিয়ে যাবে। প্রথমে ওরা আকিবের ঠেকায় যাবে। মাসুদুর বলে একটা ছেলে আকিবের ঠেকায় ওদের নিয়ে যাবে। ওখান থেকে আকিবকে তুলে নিয়ে যাবে। এই ছক কষা হয়েছে। ওরা আটচল্লিশ ঘন্টা সময় চেয়েছে। ওরা এখন যে ঠিকানায় আছে তা তোমাকে দিলাম দেখে নিও।
হো হো করে হেসে ফেললাম।
কেগো অনিদা ?
আমার এক বান্ধবী। লন্ডন থেকে ম্যাসেজ করেছে। কলকাতায় আসছে আজ রাতের ফ্লাইটে আমাকে পিকআপ করতে বলছে।
আকিবের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম। দেখলাম আকিবের চোখ স্থির। বুঝতে চাইছে কতটা সত্যি কথাটা।
তোমার সেই বান্ধবী।
হ্যাঁ।
বাঃ অনিদা বাঃ একা একা। আকিব হাসতে হাসতে বলে উঠলো।

কি করবো বল। তুইতো জোগাড় করে দিলিনা, তোকে কতোবার বলেছি। তুই ব্যানার্জীর স্যুটিংয়ের ব্যবস্থা করেদিবি আর মাল কামাবি।
আজ থেকে যাও। হয়ে যাবে।
ওই বাড়িতে।
হ্যাঁ।
কজন আসবে।
তা সাতটা মতো চামকি আসবে।
এখানকার।
না। ইউপি থেকে।
আমি ঠিক সময় পৌঁছে যাবো।
আসবে তো ?
কথা যখন দিচ্ছি তখন আসবো।
এদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও।
রতন ওকে ছেড়ে দে। ছট্টু খুব ভালো ছেলে।
তুমি দাদাকে একবার ফোন করো।
ফোন করতে হবে না।
আবিদ নেপলা থাক। আমি দাদার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নিই।
কিরে ছট্টু তাই হোক, আমি তোকে আটকে রাখি নি। তবে একটা সত্যি কথা বললে সেটাও হয়ে যাবে। বলবি।
তুমি বলো আমি সত্যি কথা বলবো।
আচ্ছা এই কদিনে তুই কোথাও ঘাই মারিস নি ইসলামভাই-এর জন্য।
মেরেছি।
কোথায়।
দামিনীর ওখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। ইসলামভাই নেই।
আর কোথায় ?
তোমার কাগজের এডিটরের বাড়ি। ওখানে দামিনীকে দেখলাম রং করাচ্ছে।
তারপর।
তোমার ফ্ল্যাট।
কি পেলি।
কোথাও নেই। শুনলাম ইসলামভাই তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গেছে।
সেখানে ঢুঁ মারিস নি।
জায়গাটা ডেঞ্জার ঢোকা যাবে বেরোনো যাবেনা।
কেনো তুই খোঁজ করছিলি।
ইসলামভাইকে বলার জন্য।
রাজনাথ আমাকে তোমার সুপুরি দিয়েছে।
হ্যাঁ।
নেপলা।
আমার ডাকেই ছট্টু বুঝতে পেরেগেছে এবার কিছু একটা ঘটবে। রতন থতমতো খেয়ে গেছে। অবিদ এতোক্ষণ হাসাহাসি করছিল উঠে বসলো।
দাদা।
নাইলন দড়ি। আর লিউকো প্লাস কিনে আন। লিউকো প্লাস চিনিসতো।
হ্যাঁ।
হাউমাউ করে ছট্টু আমার পা ধরে ফেললো। আমি মিথ্যে কথা বলেছি অনিদা। তুমি ঘোষ সাহেবকে ফোন করোনা।
দাঁড়িয়ে রইলি কেনো পাঁচমিনিটের মধ্যে আসবি। পাঁচমিনিটের মধ্যে কাজ সেরে চলে যাবো।
আবিদ কোমর থেকে রিভালবার বার করলো। খুপরিতে ঢেলে দিই।
না। আমার অনেক কাজ বাকি আছে। তোর মোবাইল কোথায়।
আমার কাছে নেই।
কার কাছে আছে ?
দাম করে সজোরে একটা লাথি মারলো আবিদ ছট্টুর বুকে।
রতন ওর মুখ বেঁধে দে।
আমার এই অবস্থা ওরা সেদিন দেখেছিলো। আমার কথা শেষ হবার আগেই আবিদ ছট্টুর মুখ চেপে ধরলো।
রাজনাথ তোর বড়ো বাবা, তাইনা।
আজ রাতের মধ্যেই তোর খেলা শেষ।
অনিদা দাদাকে একবার ফোন করি।
একবারে ফোন করবিনা।
ওরা থতমতো খেয়ে গেছে।
নেপলা দড়ি লিউকো প্লাস নিয়ে চলে এলো।
ভালো করে বাঁধ মুখে লিউকোপ্লাস আটকে দে। তোরা এখান থেকে ফেটে যা। কাছা কাছি থাক, এই ঝুপড়ির ওপর লক্ষ্য রাখ। ইসলামভাইকে একটা ফোনও করবি না তাহলে তোরা পর্যন্ত হজম হয়ে যাবি, মনে রাখবি।
নেপলা আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসবি চল।
আমি নেপলার বাইকে বসলাম।
ও আমাকে ছেড়েদিলো।
শোন।
বলো দাদা।
একটা কাজ করতে পারবি।
কি।
পকেট থেকে ফ্ল্যাটের চাবিটা নেপলার হাতে দিয়ে বললাম, এখুনি ইসলামভাইকে এটা পৌঁছে দে আমাকে একটা রিং করতে বলবি।
আচ্ছা।
আমি অর্ককে ফোন লাগালাম।
কোথায় আছিস। দাদা আমি অফিসে। মাল এখন তার জায়গায়। সারাদিন টেনসন গেলো রিলাক্স করছে। তুমি ঠিক আছো ?
ঠিক আছে অফিসে থাক, আমি যে কোনো সময় ফোন করতে পারি।
আচ্ছা।
ট্যাক্সি ধরলাম। সোজা নিজাম প্যালেসে চলে এলাম। মুখার্জীর ঘরে ঢুকলাম। আমাকে দেখেই মুখার্জী বলে উঠলো।
আরে সাহেব আমার ঘরে! কি সৌভাগ্য আমার।
এক গ্লাস জল খাওয়াবেন।
এ কি কথা বলছেন। বেল বাজালেন। একটু গরম চা।
হলে খারাপ হয় না।
আপনার কাজ করে দিয়েছি। কিন্তু কোনো নিউজ হলো না।
দরকার ছিলো।
আর দরকার নেই। লেবু বেশি নিংরোলে তেঁতো হয়ে যাবে।
আপনার পাওনা গন্ডা কি হলো ?
ফাইল প্রসেস হলো। এবার দেখি কি হয়।
আর একটা কাজ আজ রাতের মধ্যে ঝেড়ে দিতে পারবেন।
আবার কি!
এনকাউন্টারে যেতে হতে পারে। হাতে সেরকম মাল আছে। না ঘোষকে বলবো।
এইতো এখানে এসে ঘোষের কথা বলেন, ঘোষের কাছে গিয়ে আমার কথা বলেন।
আপনি না পরলে ঘোষকে বলবো।

আমি কি আপনার কোনো কাজ করে দিই নি।
সাতটা টেররিস্ট আছে ফুর ফুরা সরিফের কাছে। ইউপি থেকে এসেছে।
দাঁড়ান দাঁড়ান হজম হচ্ছে না।
ঢক ঢক করে একগ্লাস জল কঁত কঁত করে খেয়ে নিলেন।
আমার ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ খবর পেলো না, আপনি!
তাহলে ছেড়ে দিন।
একি মশাই বাঘকে চিতল হরিণ দাখালেন, আবার কেরেও নেবেন।
কি করবো।
আমি এখুনি একটা খবর নিই।
নিতে পারেন, কিন্তু পাবেন না পলিটিক্যালি ব্ল্যাক আউট করা আছে।
কি বলছেন আপনি!
যা বলছি সত্যি। কাজ হয়ে যাবার পর সব আপনাকে বলবো। আমার লোক যাবে আপনার সঙ্গে।
সত্যি!
মুখার্জীর চোখ চক চক করে উঠলো।
কজন আছে।
সাতজন। সঙ্গে প্রচুর আর্মস।
মুখার্জীর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।
কি হলো।
আমার এনকাউন্টারের ছেলে গুলোকে একটু দেখেনিই আচে কিনা।
না থাকলে এখুনি ডেকে নিন। দেরি করা যাবে না।
একটু সবুর করুন।
খবরটা আমি কাল ছাপবো। খালি একটা লোককে বাঁচিয়ে রাখতে হবে যে আপনাকে নিয়ে যাবে। তাও প্রয়োজন হলে।
আমি প্রমিস করছি।
আমার একজন সাংবাদিক একজন ফটোগ্রাফার যাবে আপনার সঙ্গে, আমিও যেতে পারি।
তাহলেতো কোনো চিন্তাই নেই।
চলুন বেরিয়ে পরি।
দাঁড়ান।
মুখার্জী ফোন ঘোরালেন, নীচু স্বরে কার সঙ্গে কথা বললেন, আমি টেবিলের এপার থেকে শুনতে পেলাম না। ফোনটা রাখলেন।
আমি বুলেট প্রুফ গাড়িতে বসবো। সাদা কাঁচ থেকবে ছবি তুলবো।
সব কটা বুলেট প্রুফ গাড়ি থাকবে।
আর একটা ব্যাপার।
বলুন।
আজ রাতেই এক জায়গায় নীল ছবির স্যুটিং হবে সেখানে বড় বড় রাজনৈতিক চাঁই জড়িয়ে আছে ধরতে পারবেন।
টাফ ব্যাপার খুব সেন্সেটিভ।
তাহলে এই দায়িত্বটা অন্য কাউকে দিই।
এইতো, এক যাত্রায় পৃথক ফল হতে পারে।
তাহলে বলুন।
আমাকে মিনিট দশেক সময় দিন।
ওখানে একটা টিমকে ঘাপটি মেরে থাকতে বলুন। বামাল সমেত তুলবেন।
তাই হবে।
আমি দেরি করছিনা শান্তি নিকেতন বিল্ডিং-এর সামনে দাঁড়াচ্ছি। আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে চলে আসুন। আমি আপনাকে ফোন করবো।
আচ্ছা।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
মোবাইলটা স্যুইচ অফ করাছিলো খুললাম।
দেখলাম অনেক মিস কল। তার মধ্যে বড়মা ছোটমা মল্লিকদা মিত্রা ইসলামভাই সকলে আছে।
ইসলামভাইকে ফোন করলাম।
তুই কোথায়।
আমাকে খুঁজে পাবে না।
তুই এরকম করিসনা। তোর পায়ে পরছি।
কোনো কথা বলবেনা। রতনদের যেখানে দাঁড়াতে বলেছিলাম, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি ওখানে চলে এসেছি।
নেক্সট যখন ফোন করবো তুমি ওদের নিয়ে ওখান থেকে সরে যাবে। মনে থাকে যেনো।
প্লিজ তুই আমার কথা শোন। এই কাজ তোর নয়।
শেষ বারের মতো বললাম কোনো কথা বলবে না। মনে থাকে যেনো। আমার কাজ আমাকে করতে দাও। সবাইকে ফোন করে দাও, আমাকে যেনো ডিস্টার্ব না করে।
তুই এসব কি করতে যাচ্ছিস।
যা করছি ভালোর জন্য করছি।
প্লিজ অনি তুই আমার ভাই। তোর কিছু হলে বড়মা ছোটদি মামনির কাছে মুখ দেখাতে পারবোনা।
দেখাতে হবেনা।
ফোনটা কেটে দিলাম।
অর্ককে ফোন লাগালাম।
হ্যাঁ দাদা বলো।
তুই এখুনি একজন ফটোগ্রাফারকে নিয়ে চলে আয়। আমি শান্তি বিল্ডিংয়ের তলায় দাঁড়িয়ে আছি।
সন্দীপদাকে বলে যাবো।
না। চুপকে ফেটে আয়। ট্যাক্সি করে।
আচ্ছা।
আমি একটা সিগারেট ধরালাম। মিনিট দশেকের মধ্যে অর্ক চলে এলো।

কিরে কেউ জানে নাতো।
না।
আমি মুখার্জীকে ফোন লাগালাম।
রেডি স্যার, বেরোবো।
হ্যাঁ চলে আসুন। আমি আমার ফটোগ্রাফার আর সাংবাদিক আপনার গাড়িতে বসবো।
ঠিক আছে।
কিগো অনিদা।
কোনো কথা বলবিনা। চুপচাপ দেখা যা। তুই যা যা লিখেছিস সব সত্যি।
সব সত্যি।
ঠিক আছে। ওখানে কাউকে ফিট করে এসেছিস।
না।
জায়গাটা চিনতে পারবি।
পারবো।
চুপ চাপ যা বলবো করে যাবি। তোমার নামকি ভাই।
সায়ন্তন।
কতোগুলো রিল আছে।
আনলিমিটেড এমনকি মুভি পর্যন্ত করা যাবে।
হেসেফেললাম। ডিজিট্যাল।
হ্যাঁ।
গুড।
মুখার্জীর গাড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। ধবে ধবে সাদা জিপসি। পেছনে দেখলাম আরো আটটা।
আমরা প্রথমে আকিবের ডেরায় এলাম। আসার সময় ফোন করে ইসলামভইকে বলে দিলাম তোমরা ওখান থেকে সরে যাও। ধারে কাছে কেউ যেনো না থাকো।
ফোনটা কেটে দিলাম।
কাকে ফোন করলেন।
টিপারকে রেখে এসেছি। ওটাকে তুলতে হবে। ওকে সঙ্গে নিয়ে যাবো। তাছাড়া এই ভেঞ্চারের সমস্ত কিছুর ইনফর্মেসন এই ছেলেটা দিয়েছে। আমার মতো তৈরি করছি। নাম অর্ক।
মুখার্জী পেছন ফিরে তাকালো।
নিউজটা কোথায় পেলিরে বাবা।
বলা যাবেনা। তবে ঘটনাটা সত্যি।
বাবা তুইতো অনিবাবুর থেকে এক কাঁটা ওপরে।
গাড়ি এসে ঠিক জায়গায় থামলো। অর্ককে বললাম যা তুলে নিয়ে আয়। ওর ঝুপরিতে বেঁধে রেখে এসেছি।
তুমি এসেছিলে এখানে।
হ্যাঁ।
অর্ক সায়ন্তন গাড়ি থেকে নামলো। একটা গাড়ি ওদের ভেতরে নিয়ে গেলো। সবার হাতেই এসএলআর। ফুল ড্রেস করা। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা আকিবকে তুলে নিয়ে চলে এলো।
সায়ন্তনকে বললাম জায়গাটার ছবি তুলেছিস।
হ্যাঁ।
এবার আমরা রওনা দিলাম ফুরফুরা সরিফের দিকে। গাড়ি যেনো হাওয়ায় ভাসছে। জীবনে কোনোদিন এনকাউন্টারের সাক্ষী থাকিনি। যতোবার এনকাউন্টার করিয়েছি সব ঘোষ সাহাবকে দিয়ে, খালি জায়গা বলে দিয়েছি। কাজ করে চলে এসেছে। কাগজে লিখেছি। ওদের নাম ফেটেছে। ইনক্রিমেন্ট হয়েছে। রিওয়ার্ড জুটেছে কপালে।
আমরা যখন স্পটে পৌঁছলাম তখন সাড়ে আটটা বাজে। চারিদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। একেবারে গ্রামের পরিবেশ। এরি মধ্যে মনে হচ্ছে যেনো নিশুতি রাত। দূরে একটা পোড়ো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। তার সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। মুখার্জীর গাড়ি থামলো। পেছন পেছন সব গাড়ি থামলো। মুখার্জী অর্কর কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিয়ে ছক কষে নিলো। এই টিমে কুড়িজন আছে। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ সিম্পল। নো টেনসন ডু ফির্তি। ব্যাপারটা এরকম অনেকদিন পর খাবার পাওয়া গেছে। হরির নামে খাবলা খাবলা করে খেতে হবে। নিমেষের মধ্যে ষোলোজন ছেলে রেডি হয়ে হাওয়া হয়ে গেলো।
আমরা যাবো না ?
দাঁড়ান মশাই তাড়া হুড়ো করলে হবে। পাখি ফুরুত হয়ে যেতে পারে।
আমরা সবাই চুপচাপ। ঝিঁঝি পোকার ডাক। আকাশ ভরা তারা।
মুখার্জীর ফোনটা বেজে উঠলো।
হ্যাঁ স্যার খবর পাক্কা। তবে টের পেয়ে গেছে। আপনি অনুমতি দিলে স্টার্ট করতে পারি।
ওদের ফার্স্ট ডিস্টার্ব করো। কি রিটার্ন দেয় দেখো। সেই বুঝে পজিসন নাও। পারলে ধরবে, না হলে মেরে দেবে।
ঠিক আছে স্যার।
অর্ক সায়ন্তন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছে।
কিরে।
আমরা চলে যাবো।
মুখার্জী এক ধমক দিলো।
পেছনে কিসের একটা আওয়াজ হলো।
একজন ছুটে চলে গেলো। তারপর দেখলাম আকিবকে গাড়ি থেকে বার করে আধমরা করে ফেললো। একটা কথা ভেসে এলো, অনিদা তোমাকে রাজনাথ ছাড়বে না।
মুখার্জী আমার দিকে তাকালো।
এটা কি রাজনাথের স্কিম।
আমি হাসলাম।
আপনিতো মশাই বড়ো ঘাঘু লোক। দেখবেন আমাকে যেনো না ফাঁসায়।
কেনো ওই কেসটার কথা আপনার মনে নেই।
আছে। ওটা আমি অন্য ভাবে মেটাবো।
সে সুযোগ আর পাবেন না।
কেনো।

         
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks