দেখি নাই ফিরে - (Part-72)

তাহলে সব কিছুতে তোর চোখে জল আসে কেনো।
কেনো আমি কি অপরাধ করেছি এখনো তোর আপন হতে পারলাম না।
আমি এই জিনিষগুলো নেওয়ার মতো এখনো যোগ্যতা অর্জন করতে পারি নি।
কে বলেছে এই কথা তোকে। আমি।
না। আমার মন বলছে।
আমি তোর কাজে কোনোদিন বাধা দিয়েছি।
না।
তোর সব কাজ মেনে নিয়েছি। আমি জানি তুই আমার জন্য, আমাদের জন্য সব করছিস। নিজের জন্য নয়।
মাথা নীচু করে রইলাম।
তাহলে তোর এতো সংকোচ কেনো।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
কালকে তুই ফর্মগুলো সই করতে চাস নি। কেনো ?
আমি সই করে দিয়েছি।
দাদা বলার পর।
চুপ করে রইলাম।
তুই যেমন আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিস, তোকে নিয়ে আমারও কিছু স্বপ্ন আছে, আমারও কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছা আছে। শুধু আমার একার নয়, সবার। কেনো তুই সেটা মেনে নিবি না।
আমি তোর যোগ্য হতে পারি নি।
তাহলে আমার সঙ্গে নিজেকে জড়ালি কেনো।
আমার ভেতর থেকে কে যেন বললো তোর বিপদ তোকে সাহায্য করা উচিত।
আমার বিপদ তো তোর কি তুই কি দেশোদ্ধার করতে এসেছিস।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
তুই নিজের জীবন বিপন্ন করে সব করছিস। আমরা কেউ তোর পাশে থাকি না। বাড়িতে থেকে গুমড়ে মরি। কার জন্য তুই এই সব করছিস। তোর নিজের জন্য।
আমি চুপ। মাথাটা মনে হচ্ছে পায়ের নোখের সঙ্গে মিশে যাবে।
তাহলে তোর এতো সংকোচ কেনো। কেনো তুই ভাবছিস এটা আমার এটা তোর নয়।
বুঝলাম বেশি চুপ করে থাকলে আরো কথা বেরোবে। দীর্ঘদিন মনে এই কথা গুলো ও পুষে রেখেছে। বলার সুযোগ পায় নি। আমি গিয়ে ওর দুই কাঁধ ধরলাম। চোখ দুটো যেনো গনগনে কয়লার এক একটা টুকরো।
আমি কথা দিচ্ছি। আর কখনো বলবো না।
তুই প্রায়ই বলিস এই কথা। আমি বুঝি। চুপ করে থাকি। তুই আমার আর তোর মাঝে সূক্ষ্ম একটা দেয়াল তুলে রেখেছিস। তুই কি ভাবিস আমি কিছু বুঝি না। তোকে আমি নিজের টাকায় শেয়ার হোল্ডার করেছি। তুই তার ঋণ শোধ করছিস।
না। তুই বিশ্বাস কর। আমি কখনো এই সব ভাবি নি।
তাহলে তুই কেনো বার বার একি কথা বলিস।
নিজের মনের মধ্যে এখনো একটা খটকা রয়ে গেছে। আমি এর যোগ্য কিনা।
যাচাই কে করবে তুই না আমি।
আমি মাথা নীচু করে রইলাম।
আমার কষ্টটা তুই স্বীকার করলি। তোর কষ্টটা আমাকে স্বীকার করতে বাধা দিচ্ছিস কেনো।
আমার কোনো কষ্ট নেই।
সেটা সাদা চোখে দেখার ক্ষমতা তোর নেই। নিজের আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিস। আমি তোকে ভালোবাসিনি। তোর ভেতরে যে যাযাবরটা আছে তাকে ভালোবসেছি। তাকে আমি এখন খুঁজে পাচ্ছি না। তাই তোর মনটাকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করেছি।
আমার মাথা হেঁট।
বুঝতে পারছি আমার একটা ছোট্ট ভুলে কি হলো। ওর কথা শুনে কানের লতি গরম হয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে। নিজেকে নিজে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিনা।
তুই একটা পাথর। ভাবছিস তোকে আমি একদিন ভালোবাসতাম তার অধিকারে তোকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছি। তুই তা পালন করছিস।
না আমি কখনো তা মনে করিনি।
মুখ তুললাম। মিত্রা আমার চোখে চোখ রাখলো। হয়তো আমার চোখের ভাষা ও পরতে পারলো।
আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।
নিজেকে কষ্ট দিয়ে কেনো এতো আনন্দ পাস। আর একজনও তো কষ্ট পায়। সে শুধু একা নয়, তোর সঙ্গে যারা জড়িয়ে আছে, তারা সকলে। এটা ভেবেছিস কখনো।
আমি শক্ত কাঠের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মিত্রার হাত থেকে নিজেক ছাড়িয়ে নিয়ে দরজার দিকে ফিরলাম। দেখলাম বড়মা ছোটমা ঘরের মধ্যা দাঁড়িয়ে। কারুর দিকে তাকালাম না। সোজা বেরিয়ে এলাম। দেখলাম বসার ঘরে ওরা সবাই বেশ খোশ মেজাজে কথা বলছে। মৃদু স্বরে আমাদের একটা কথাও ঘরের দরজার বাইরে আসে নি। যা শুনেছে বড়মা ছোটমা। আমি বারান্দা দিয়ে হেঁটে সোজা ওপরে চলে এলাম।



নিজের ঘরে ঢুকে দরজাটা ভেজালাম। টেবিলের কাছে গিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা নিলাম। একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। সোজা চলে গেলাম জানলার কাছে। আমগাছের একটা ডাল একেবারে জানলার কাছে। হাত বারালেই ডালটার স্পর্শ পেয়ে যাবো। কচি পাতা সবে মাত্র ধরেছে। তার ঠিক ওপরে আমের বকুল হয়েছে। বেশ দেখতে লাগছে। প্রত্যেকটা প্রাণের মধ্যে সন্তান ধারণের কি প্রবল লিপ্সা। এই গাছটা কথা বলতে পারেনা। বোবা। তবু ওরও বেঁচে থাকার কি লিপ্সা। নিজের বংশ বিস্তারের স্বপ্ন।
মিত্রা এভাবে আমাকে আগে কোনোদিন বলেনি। ও আমার ভেতরটাকে প্রবল ঝড়ের মতো ওলট পালট করে দিলো। বার বার চোখের সামনে মিত্রার মুখটা ভেসে আসছে। ওর কথা গুলো কানের কাছে বার বার শব্দ তরঙ্গ তৈরি করছে। এই কটা মাস আমার মধ্যে একটা জেদ চেপে বসেছিলো। নেশার ঘোরে আমি খালি কাজ করে গেছি। কেনো ? আমি মিত্রাকে সেফ্টি দেখতে চেয়েছি। হ্যাঁ আমি অনেক ঝুঁকি নিয়েছি। কখনো কখনো নিতে বাধ্য হয়েছি। কিসের জন্য ? আগু পিছু কিছু ভাবি নি। যেটা নিজে থেকে ঠিক মনে করেছি সেটাই করেছি। কারুর বাধাকে গ্রাহ্য করিনি। সত্যিতো ওরাও আমাকে বাধা দেয় নি। একবারও প্রতিরোধের কোনো দেয়াল আমার সামনে খাঁড়া করে নি।
আমি যেমন ভাবে ভাবছি, ওরাও তো ঠিক তেমন ভাবেই ভাবতে পারে। এটা আগে কখনো ভাবি নি কেনো ?
আবার একটা সিগারেট বার করে ধরালাম।
আর সিগারেট খাবি না।
কর্কশ একটা কন্ঠ কানে এসে ধাক্কা দিলো। এ গলা আমার পরিচিত নয়। আমার অচেনা অজানা।
ফিরে তাকালাম।
মিত্রা ঘরের দরজা বন্ধ করছে। চায়ের কাপের ট্রেটা বিছানার ওপর রাখা। পায়ে পায়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো। জ্বলন্ত সিগারেটটা হাত থেকে টেনে নিয়ে জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। চোখ দুটো আগের মতোই গনগনে।
তোকে এই পৃথিবীতে আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক আমি বুঝেছি।
আমি ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম।
কাকে কাকে ফোন করলি টাকার জন্য।
কাউকে করি নি।
করবি। এটা ভেবেছিস তো।
মাথা নীচু করলাম।
আমি সনাতন বাবুকে ফোন করে দিয়েছি। দাদার হাতে টাকা পাঠিয়ে দেবে। কাউকে আর ফোন করতে হবে না।
আমি মাথা নীচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

তোর তো অনেক ক্ষমতা, মলকে সরিয়ে দিয়েছিস, সুনীতদাকে শাস্তি দিয়েছিস, রাজনাথের ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছিস, প্রবীরবাবুকে রিজাইন দিতে বাধ্য করিয়েছিস, ডাক্তারের এমন হাল বানিয়েছিস এই জীবদ্দশায় আর করেকর্মে খেতে হবে না, ছট্টুকে এনকাউন্টার করিয়েছিস এইবার তোর মিত্রা সেফ। এইবার মিত্রাকে আর কেউ ছুঁতে পারবে না। শেষ যেটা ছুঁতে পারবে বলে তুই মনে করছিস, তাকে তুই তোর হেফাজতে রেখে দিয়েছিস। সময় বুঝে তাকেও তুই সড়িয়ে দিবি। কাক পক্ষী কেউ টের পাবে না। কেউ তোকে ছুঁতেও পারবে না। পারবি ছট্টুর মতো আমাকে এনকাউন্টার করতে। আমাকে নিয়ে তোর অনেক চিন্তা। একবারে শান্তি পেয়ে যাবি।
মিত্রার প্রত্যেকটা কথা আমার শরীরের মাংস ভেদ করে ছুঁচের মতো আমার হাড়ে বিঁধছে। চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছে। সত্যি আজ আমি ওর মনের সংবেদনশীল অংশে নাড়া দিয়ে ফেলেছি। এই জায়গাটা আমারও আছে। ওরও থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
মিত্রা ওর মতো বলে চলেছে। আমার কানের মধ্যে দিয়ে এক বর্ণও আমার মাথার মধ্যে ধাক্কা মারছে না।
আমার হলে আমিও যে এই ব্যাব্যহারই করতাম। মিত্রা ঠিক সেই ব্যাবহার টুকু জাস্ট আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমাকে এটা শুনতে হবেই। এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। উভয়ের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক এই ব্যাপারগুলোর ওপরই গড়ে ওঠে। লোকে বলে বোঝাপড়া। না হলে সম্পর্ক ভেঙে যায়।
আমিতো মিত্রার সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙতে চাই নি। চাইলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকতাম না। নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার। সুযোগ আমি বহু পেয়েছি। আর শরীর! দামিনী মাসির ওখানে যখন থাকতাম, চাইলেই পেতাম। হয়তো জীবনটা অন্য খাতে বইতো। কিন্তু মিত্রার কলেজ লাইফের চিঠি গুলো ছিলো আমার সবচেয়ে বড়ো বল ভরসা। ওর চিঠি গুলো আমাকে কারুর মুখের দিকে তাকাতে বারণ করতো। বার বার যেনো ও আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতো আমি মরিনি বুবুন। আমি তোর কাছে ফিরে আসবই। তুই শুধু মাত্র আমার।
কতোদিন ওর কথা ভেবে রাতের পর রাত জেগে কাটিয়ে দিয়েছি। কোনো অসুবিধে হয় নি। বরং পরেরদিন পূর্ণ উদ্যমে কাজ করেছি। রাতে ক্লান্ত কাকের মতো বাসায় ফিরেছি। কোনো দিন খাবার জুটেছে কোনোদিন জোটেনি। কই কোনো অসুবিধে হয়নিতো। বার বার মন বলেছে মিত্রা তোর সঙ্গে আছে বুবুন তোর চিন্তা কিসের।
তাহলে আমার মধ্যে এই সংকোচ কেনো। মিত্রা কোনো অন্যায় কথা বলছেনা। আমি একি করলাম। তাহলে কি আমি আমার আধিপত্য এদের ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। আমি কারুর কাছে কোনো দিন ঋণী থাকবো না। আমি সকলকে ঋণী করবো। সেই জায়গাটা মিত্রা মেনে নিতে পারছে না।
জানি না তখন সেই মুহূর্তে আমি কি করছিলাম। একটা প্রবল ঝাঁকুনিতে আমার সম্বিত ফিরে এলো।
বুবুন বুবুন এই বুবুন।
আমার চোখ বন্ধ মাথা নীচু। বুঝতে পারছি আমার চোখের জলে মিত্রার মুখটা ঝাপসা দেখছি।
কিরে আমি তোকে কি বললাম তুই কাঁদছিস।
আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি।
এটুকু বলার অধিকার কি আমার নেই।
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মুখ গুঁজে দিলাম।
আচ্ছা বাবা আমার অন্যায় হয়েছে। আর কোনো দিন তোকে কিছু বলবো না। আমি মেয়ে ভ্যাঁ করে কাঁদতে পারি, তুই কাঁদতে পারিস এটা জানা ছিলো না।
ছাড় ছাড় এখুনি ছোটমা চলে এলে কেলো হয়ে যাবে। বলবে আবার, আধদামড়া ছেলে বউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।
আমি ওকে ছাড়লাম না। আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরলাম।

তোর তো অনেক ক্ষমতা, মলকে সরিয়ে দিয়েছিস, সুনীতদাকে শাস্তি দিয়েছিস, রাজনাথের ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছিস, প্রবীরবাবুকে রিজাইন দিতে বাধ্য করিয়েছিস, ডাক্তারের এমন হাল বানিয়েছিস এই জীবদ্দশায় আর করেকর্মে খেতে হবে না, ছট্টুকে এনকাউন্টার করিয়েছিস এইবার তোর মিত্রা সেফ। এইবার মিত্রাকে আর কেউ ছুঁতে পারবে না। শেষ যেটা ছুঁতে পারবে বলে তুই মনে করছিস, তাকে তুই তোর হেফাজতে রেখে দিয়েছিস। সময় বুঝে তাকেও তুই সড়িয়ে দিবি। কাক পক্ষী কেউ টের পাবে না। কেউ তোকে ছুঁতেও পারবে না। পারবি ছট্টুর মতো আমাকে এনকাউন্টার করতে। আমাকে নিয়ে তোর অনেক চিন্তা। একবারে শান্তি পেয়ে যাবি।
মিত্রার প্রত্যেকটা কথা আমার শরীরের মাংস ভেদ করে ছুঁচের মতো আমার হাড়ে বিঁধছে। চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছে। সত্যি আজ আমি ওর মনের সংবেদনশীল অংশে নাড়া দিয়ে ফেলেছি। এই জায়গাটা আমারও আছে। ওরও থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
মিত্রা ওর মতো বলে চলেছে। আমার কানের মধ্যে দিয়ে এক বর্ণও আমার মাথার মধ্যে ধাক্কা মারছে না।
আমার হলে আমিও যে এই ব্যাব্যহারই করতাম। মিত্রা ঠিক সেই ব্যাবহার টুকু জাস্ট আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমাকে এটা শুনতে হবেই। এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। উভয়ের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক এই ব্যাপারগুলোর ওপরই গড়ে ওঠে। লোকে বলে বোঝাপড়া। না হলে সম্পর্ক ভেঙে যায়।
আমিতো মিত্রার সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙতে চাই নি। চাইলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকতাম না। নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার। সুযোগ আমি বহু পেয়েছি। আর শরীর! দামিনী মাসির ওখানে যখন থাকতাম, চাইলেই পেতাম। হয়তো জীবনটা অন্য খাতে বইতো। কিন্তু মিত্রার কলেজ লাইফের চিঠি গুলো ছিলো আমার সবচেয়ে বড়ো বল ভরসা। ওর চিঠি গুলো আমাকে কারুর মুখের দিকে তাকাতে বারণ করতো। বার বার যেনো ও আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতো আমি মরিনি বুবুন। আমি তোর কাছে ফিরে আসবই। তুই শুধু মাত্র আমার।
কতোদিন ওর কথা ভেবে রাতের পর রাত জেগে কাটিয়ে দিয়েছি। কোনো অসুবিধে হয় নি। বরং পরেরদিন পূর্ণ উদ্যমে কাজ করেছি। রাতে ক্লান্ত কাকের মতো বাসায় ফিরেছি। কোনো দিন খাবার জুটেছে কোনোদিন জোটেনি। কই কোনো অসুবিধে হয়নিতো। বার বার মন বলেছে মিত্রা তোর সঙ্গে আছে বুবুন তোর চিন্তা কিসের।
তাহলে আমার মধ্যে এই সংকোচ কেনো। মিত্রা কোনো অন্যায় কথা বলছেনা। আমি একি করলাম। তাহলে কি আমি আমার আধিপত্য এদের ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। আমি কারুর কাছে কোনো দিন ঋণী থাকবো না। আমি সকলকে ঋণী করবো। সেই জায়গাটা মিত্রা মেনে নিতে পারছে না।
জানি না তখন সেই মুহূর্তে আমি কি করছিলাম। একটা প্রবল ঝাঁকুনিতে আমার সম্বিত ফিরে এলো।
বুবুন বুবুন এই বুবুন।
আমার চোখ বন্ধ মাথা নীচু। বুঝতে পারছি আমার চোখের জলে মিত্রার মুখটা ঝাপসা দেখছি।
কিরে আমি তোকে কি বললাম তুই কাঁদছিস।
আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি।
এটুকু বলার অধিকার কি আমার নেই।
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মুখ গুঁজে দিলাম।
আচ্ছা বাবা আমার অন্যায় হয়েছে। আর কোনো দিন তোকে কিছু বলবো না। আমি মেয়ে ভ্যাঁ করে কাঁদতে পারি, তুই কাঁদতে পারিস এটা জানা ছিলো না।
ছাড় ছাড় এখুনি ছোটমা চলে এলে কেলো হয়ে যাবে। বলবে আবার, আধদামড়া ছেলে বউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।
আমি ওকে ছাড়লাম না। আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরলাম।

আমিতো তোর শত্রু। আমিকি তোর নিজের। তাই আমার কাছে কিছু চাইতে তোর লজ্জা হয়, সঙ্কোচ হয়। আমার কোনো লজ্জা নেই। তাই তোর কাছে দু’হাত পেতে খালি নিয়েই যাচ্ছি। তুই আমাকে ঘড় দিয়েছিস, বড়মা ছোটমাকে দিয়েছিস, দাদা মল্লিকদাকে দিয়েছিস। আমার মৃত বাবা-মার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিস। সর্বোপরি আমাকে তুই নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছিস। আর আমি এখনো তোর বাবা-মার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারলাম না। অনেক কষ্টে তোর কাছ থেকে একটা জীবন পেয়েছি। জানিনা সেটা বেঁচে আছে কিনা। জানিনা তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো কিনা।
আমি মিত্রাকে ছেড়ে দিলাম। জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
আমরা এখন বেরোবো তুই কি যাবি।
না।
গেলে ভালো লাগতো।
যাবো না।
কোথাও বেরোবি।
বলতে পারছি না।
ওদের সঙ্গে কি বসবি।
না। ওদের চলে যেতে বল।
দেবা নির্মাল্য আসুক।
ওদেরকে সঙ্গে নিয়ে যা। কালকে আসতে বল।
বুঝতে পারলাম মিত্রা দরজার ছিটকিনি খুলে বেরিয়ে গেলো।
আমি বাথরুমে গেলাম। মুখটা ভালো করে ধুলাম চোখে জল দিলাম। টাওয়েল দিয়ে ভালো করে মুখটা মুছলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলার সামনে দাঁড়ালাম। মাথার মধ্যেটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে। সিগারেটটা খেতে ভালো লাগলো না। ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। বিছানার ওপর মোবাইলটা পরে রয়েছে। এগিয়ে গিয়ে তুলে নিলাম, দেখলাম স্যুইচ অফ। অন করলাম। গাদা খানেক মিস কল আর ম্যাসেজ। সবাই আছে। কার নাম বাদ দেবো।
কিরে সত্যি তুই যাবি না।
একবারে আমার পেছন থেকে শব্দটা ভেসে এলো। ঘুরে তাকালাম। মিত্রা একটা নতুন শালোয়াড় পরেছে। টিয়া পাখির গায়ের রংয়ে। ঠোঁট দুটো লাল টুক টুকে। কপালে ম্যাচিং করে একটা বিন্দির টিপ লিগিয়েছে।
মন ভালো হয়েছে।
আমি ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
তুই থাকলে সব সময় জার্নিটা একটু অন্য রকমের হয়।
তবু আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
দাদা নিয়ে এসেছে। দাদার ঘরে আছে।
আমার মুখ থেকে কোনো শব্দ নেই।
তুই কি বোবা হয়ে গেলি। আমার সঙ্গে কথা বলবি না।
তোরা যা। আমার ভালো লাগছে না।
একা একা নিজের সঙ্গে বোঝা-পড়া করবি।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি জানি আমরা বেরিয়ে যাবার পর তুই বেরিয়ে যাবি। যেতে পারতিস আমাদের সঙ্গে।
এখন বিরক্ত করিস না।
বুঝেছি।
তোর খাবারটা এখানে দিয়ে যাবো।
না। খেতে ভালো লাগছে না। তোর ফাইলটা দিয়ে যা।
ওটা নিয়ে এখন কি করবি।
কাজ আছে।
আমার জন্য তোকে আর কিছু করতে হবে না। যেদিন নিজের মনে করবি সেদিন করবি।
বেশি বক বক করিস না। যা বলছি কর।
কেনো তুই কি ভাবিস আমি তোকে ভয় পাই।
না আমি সে কথা বলিনি। সকাল থেকে তুই অনেক বাঁকা বাঁকা কথা বলছিস।
আমি বলিনি তুই আমাকে বলাচ্ছিস।
এখন যা কথা বলতে ভালো লাগছে না।
যেখানেই থাকিস নটার মধ্যে আসবি।
সেটা নাও হতে পারে।
তাহলে মাথায় রাখবি আজ রাত নটার পর থেকে তোর সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
কথাটা বলেই মিত্রা গট গট করে বেরিয়ে গেলো। আমি মিত্রার চলে যাওয়াটা ধীর স্থির ভাবে দেখলাম।

আমার ওপর কি আধিপত্য! কি ডিকটেটরশিপ! কই আমিতো ওর ওপর এতটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারিনি! তাহলেকি ওই একতরফা আমাকে ভালোবাসে ? আমি কি এখনো সেইভাবে ওকে ভালোবাসতে পারিনি ? আমার সব কিছু মেকি। আমার ভালোবাসার মধ্যে কি কোনো প্রাণ নেই ? সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
মিত্রা আবার ফিরে এলো। ফাইলটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে দিলো। কিছুক্ষণ আমার চোখে চোখ রেখে দাঁড়ালো। ইচ্ছে হচ্ছিল ওকে আঁচড়ে কামরে টুকরো টুকরো করে দিই। মিত্রার চোখে বক্র হাসি। ঘর থেক বেরিয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর গাড়ির আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম সকলে বেরিয়ে গেলো।
আমি আলমাড়িটা খুলে ফাইলটা তুলে রাখলাম। পাঞ্জাবী খুলে আমার পেটেন্ট সেই পোষাক পুরোনো জিনসের প্যান্ট আর আধময়লা গেঞ্জিটা লাগালাম। আঃ কি আরাম। মনে মনে বললাম অনি নতুন পোযাকে তোমায় দারুণ দেখতে লাগে, তবে এই পুরোনো গুলোয় অনির আসল রূপটা ফুটে ওঠে। এইখানেই অনির বিশেষত্ব, অনি নিজেকে নিজে খুঁজে পায়।
গেট দিয়ে বেরিয়ে এলাম। ছগনলাল আমায় দেখে হাসলো। কোনোদিন হাসে না। আজ হাসলো।
কি ছগনলাল হাসছো কেনো।
কাল তোমার বিয়ে। বড়বাবু মা সব বাজারে গেলো। আমাকে বললো তোমার সঙ্গে যারা গল্প করে তাদের কাল আসতে বলবে।
তুমি খুশি ছগনলাল।
তোমাকে দিদিমনিকে ভালো লাগবে।
আমি হাসলাম।
বাসস্ট্যান্ডে এসে পার্কস্ট্রীটের বাস ধরলাম। সোজা চলে এলাম পার্কস্ট্রীট। এশিয়াটিক সোসাইটির ফুট ধরে চলে এলাম। ত্রিকায়ার অফিসে। অনেকদিন সুজিতদার সঙ্গে দেখা হয়নি। সাংবাদিকতার প্রথম জীবনে সুজিতদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিলো। একটা প্রোডাক্ট লঞ্চের ক্যাম্পেনিংয়ে কভার করতে গিয়ে সুজিতদার সঙ্গে প্রথম আলাপ। তারপর জানতে পারলাম না সুজিতদার এ্যাডএজেন্সি আছে। তখন সুজিতদা আমাকে দিয়ে কপি লেখাতো। বেশ কিছু পয়সা পাওয়া যেতো। কিন্তু ওই যে, আমার যেহেতু কোনো স্থায়ী আবাস ছিলো না। যোগাযোগের অভাবে ঠিক মতো কাজ করে উঠতে পারতাম না। কিন্তু রিলেসন নষ্ট করতে দিই নি।
বিল্ডিংটার সামনে আসতে চিন্তেই পারলাম না। কোথায় সেই পুরনো বিল্ডিং! এখানে দেখছি একটা মাল্টি স্টোরেড বিল্ডিং হয়েছে। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। বললো এই বিল্ডিং-এর ফিফথ ফ্লোরে চলে যান। অগত্যা মধুসূদন তাই করলাম। ফিফথ ফ্লোরে আনেক গুলো অফিস। আবার একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। বললো ওই কর্নারের অফিসটা ত্রিকায়া।
কাঁচের দড়জার সামনে এলাম। পুরনো অফিসের সঙ্গে আকাশ পাতাল পার্থক্য। সেই কোন যুগে এসেছিলাম। এখন সব বদলে গেছে। সেই মোটা ভ্যাটকা রিসেপসনিস্টটা মেয়টা এখন আর নেই। দেখলাম রিসেপসনে একজন তরতাজা তরুণী বসে আছে। বেশ সুন্দর, শোকেশের ডল পুতুলের মতো। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। যা হয় আর কি। আমি এগিয়ে গেলাম। বললাম সুজিতদার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই।
ভদ্রমহিলা আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন, যেনো আমি কে হরিদাস পাল, যে সুজিতদার সঙ্গে দেখা করতে চাই।
আপনি ঠিক বলছেন তো।
কেনো, সুজিতদা এখানে নেই।
হ্যাঁ আছেন।
তাহলে।
আপনার এ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে।
না। সুজিতদার সঙ্গে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করে ঢুকতে হয় এখন ?
আপনি কতোদিন আগে এসেছিলেন।
তা ধরুন বছর আটেক আগে। তখন এই বাড়িটা হয় নি।
তরুণী মুখের কাছে হাত নিয়ে মুখ টিপে হাসলেন।
আপনার নাম।
পকেট থেকে মানিপার্সটা বার করে কার্ডটা দিতে যাচ্ছিলাম। কি খেয়াল হতে আবার পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম।
আপনার ভিজিটিং কার্ড আছে।
না। বলুন অনি এসেছে।
ব্যাশ এই টুকুতে হয়ে যাবে।
না হলে ফিরে যাবো।
আমি গিয়ে ভিজিটরদের সোফায় গা এলিয়ে দিলাম। চারিদিকে সব সুন্দরী মেয়ে। ছেলগুলোও দেখতে খারাপ নয়। ভদ্রমহিলা ইন্টারকমে কার সঙ্গে কথা বললেন। দেখলাম কাঁচের ঘর থেকে সবাই আমাকে লক্ষ্য করছে। নিচের দিকে তাকিয়ে একবার দেখলাম আমার প্যান্টের চেন খোলা আছে কিনা। প্রায়শই আমার এটা হয়। বহুবার মিত্রা হাসতে হাসতে আমাকে ইশারা করেছে। অসতর্কের ভান করে হাত দিয়ে দেখলাম, না চেনটা টানাই আছে।
কোথায় অনি, কোথায় অনি।

একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ভেতর থেক বেরিয়ে এসে চেঁচা মিচি শুরু করেদিলেন। সেই রেসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা ঢোক গিলে উঠে দাঁড়ালেন, বার পাঁচেক স্যার স্যার বলে উঠলেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ভদ্রলোকের মাথায় বেশ টাক পরেছে। চোখে চশমা। হ্যাঁ মুখের আদলের সঙ্গে সুজিতদার মুখটা মিলে যাচ্ছে। আমি হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছি। ঠিক ঠাহর করতে পারছি না। সুজিতদা সবার দিকে চেখ বুলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে স্থির দৃষ্টি ফললো।
ওইতো, কিরে ব্যাটা।
সুজিতদা এগিয়ে এলো। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে পিঠে ফটা ফট তিন চারটে চাপর মেরে দিলো।
আমিতো তোমাকে চিনতেই পারি নি। তোমার মাথার সেই কুচকুচে কালো চুল গেলো কোথায় ? তুমিতো একেবারে বুড়ো মেরে গেছো। তোমার চুলের অবস্থাতো এখন এপার ওপারের মতো।
বয়স কি কম হলো।
তাহলে বৌদিও বুড়ী হয়ে গেছে।
তা হবে না।
তাহলে দেখা করবো না। আট বছর আগের বৌদির মুখটাই আমার চোখে থাক।
কি লীনা তোমরা চিনতে পারছো না।
রিসেপসনিস্ট মেয়াটার দিকে তাকালো।
তারপর আমার দিকে ফিরে।
তুই কিন্তু আগের মতোই রয়েছিস। একবারে মডেলদের মতো ফিগারটাকে রেখেছিস।
না খেয়ে খেয়ে।
আমার কথা শুনে, লীনা মেয়েটি আগের মতোই মুখের ওপর হাত রেখে মুখ টিপে হাসছে।
কাঁচের দেওয়ালের ওপাশ থেকে যারা এতোক্ষণ আমাকে দেখছিলো, তারা বেশ অবাক।
আমি ভাবতেই পারছি না তুই আমার কাছে আসবি।
কিছু কপি দাও না লিখে দিয়ে যাই। ভীষণ টাকার দরকার।
মারবো এক থাপ্পর।
সুজিতদা হাত তুললো আমি আড়াল করার চেষ্টা করলাম।
গুটি গুটি করে বেশ কয়েকজন সেই কাঁচের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। মেয়েগুলো আমায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে। এ কেমন জোকার!
আমাদের কাগজের নাম করে একটি ছেলের দিকে তাকিয়ে সুজিতদা বললো, কিরে সাগ্নিক মেটিরিয়ালটা ওই কাগজে পাঠিয়ে দিয়েছিস।
দিয়েছি স্যার কিন্তু রবিবারে ছাপতে পারবেনা বলেছে। কে যেন একজন ম্যাডাম নতুন জয়েন করেছেন। তিনি না বললে ছাপা যাবেনা। চম্পকদা বললেন।
রাখ তোর ম্যাডাম, কিরে মালিক আমার বিজ্ঞাপন যাবে না ?
আমি হাসছি।
এবার সবার চোখ প্রায় ঠেলে বেরিয়ে আসার জোগাড়। সবার চোখের সামনে যেনো হাজার পাওয়ারের বাতি জলছে। এ কি শুনলো।
আবার সাগ্নিকের দিকে ঘুরে তাকালো সুজিতদা। ওরে ওই কাগজের ওয়ান অফ দেম পার্টনার আমার সামনে দাঁড়িয়ে, আর তুই বলছিস কিনা বিজ্ঞাপন যাবে না।
উনি অনি ব্যানার্জী। লীনা বলে মেয়েটি বিষ্ময়ে বলে উঠলো।
কেনো তোমায় কার্ড দেয়নি ?
না।
তাহলে।
উনি একবার মানি পার্টসটা বার করেছিলেন তারপর পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন, বললেন বলুন অনি এসেছে। আমি বললাম, এতেই উনি চিনতে পারবেন। উনি বললেন, না চিনতে পারেলে চলে যাবো।
ইস কি মিস করলে লীনা, তুমি ওর কাছ থেকে কার্ডটা আদায় করতে পারলে না। একজন অতোবড়ো কাগজের মালিক তোমায় কার্ড দেবে তুমি ভাবতে পারো।
লীনা মাথা নীচু করলো, সরি স্যার।
আর সরি, এ সুযোগ বার বার আসবে তোমার জীবনে।
গত সপ্তাহে ওর ঝড়তোলা লেখাটা পরেছো।
হ্যাঁ স্যার, উনিই যে সেই ব্যক্তি বুঝবো কি করে।
ও চিরটাকাল একরকম থেকে গেলো। চল চল ভেতরে চল। তুই যখন এসেগেছিস তখন সামনা সামনি তোর সঙ্গে কথা বলে নেওয়া যাবে। একজন ক্লায়েন্ট এসেছেন ভেতরে।
সুজিতদা আমার হাত ধরে হিড় হিড় করে ভেতরে টেনে নিয়ে গেলো।

ছোট ঘর, কিন্তু দারুণ ডেকরেসন। কর্পোরেট হাউসের মালিকের ঘর যেমন হয় আর কি।
তুই আমার চেয়ারটায় বোস।
একবারে ফালতু কথা বলবে না, তাহলে ফুটে যাবো।
কতোদিন পর তোর সঙ্গে দেখা।
প্রায় আট বছর। তোমার পুরনো অফিসে কপি লিখতে আসতাম।
ভুলে যা। সেতো এক যুগ। গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। তখন কাজ করেও মজা ছিলো। এখন কম্পিটিসনের মার্কেট টিঁকে থাকতেই দম হাল্কা হয়ে যায়।
তোমার তো ভালোই ব্যাবসা হচ্ছে।
তোদের কাগজটা আছে বলে টিঁকে যাচ্ছি। তাও চম্পক এতো হারামী গিরি করছে, কি বলবো তোকে।
কেনো।
আজ না কাল কাল না পরশু। পার্টির চয়েস মতো যদি ডেট না পাই, জায়গা না পাই বিজ্ঞাপন দিই কি করে বলতো।
তুমি ইর্য়ালি কনট্র্যাক্টে যাচ্ছনা কেনো।
কতবার বলেছি, চম্পকদা বলেছে কাগজের লস। হবেনা। যদিওবা হাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলো। শুনলাম সব ওলোট পালট হয়ে গেছে। নতুন ম্যানেজমেন্ট। তাদের রেটও নাকি বেশ হাই। ভেবেছিলাম তোর কাছে একবার যাবো। অতি কষ্টে তোর ফোন নম্বর জোগাড় করলাম। ওমা দেখি সারাক্ষণ স্যুইচ অফ।
তাহলেই বোঝ আমি কেমন মালিক।
সুজিতদা হো হো করে হেসে ফেললো।
সুজিতদা নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললো, তা তুই হঠাৎ আমার অফিসে।
সকাল থেকে মনটা খুব খারাপ ভালো লাগছে না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তোমার নামটা মনে পরে গেলো, চলে এলাম।
তা আমার নামটা তোর হঠাৎ মনে পরে পরলো।
বলতে পারবো না। মনকে জিজ্ঞাসা করিনি।
কি খাবি।
য়া বলবো খাওয়াতে পারবে।
বলনা দেখি পারি কিনা।
আসার সময় মোরের মাথায় দেখলাম ছেঁড়া পরোটা তৈরি করছে। আর ঘুগনি। খাওয়াবে ?
তুই কি আমার সঙ্গে ফাজলামো করছিস।
উঠে দাঁড়ালাম তাহলে চলি।
আরে বোস বোস খেপে যাচ্ছিস কেনো, সত্যি তুই খাবি!
সুজিতদা অনি একনো মালিক হয় নি। হলে তোমার কাচে সে আসতো না। তোমাকে ডেকে পাঠাতো। তুমি যেতে না ?
মালিক অনির কাছে যেতাম, ছোটভাই অনির কাছে যেতাম না।
এইতো তোমার মুখ থেকে আসল কথাটা বেরিয়ে গেলো।
তাহলে ছেঁড়া পরোটা নিয়ে আসতে বলি।
অবশ্যই। আর একটা কাজ করবে।
বল।
পাশেই গরম গরম জিলিপি ভাজছে। গোটা কতক নিয়ে আসতে বলো।
সত্যি অনি তুই এখনো সেরকম আছিস।
বাড়ি থেকে হেঁটে বাস স্ট্যান্ড সেখান থেকে পাবলিক বাসে পার্ক স্ট্রীট হেঁটে তোমার অফিস। এর মধ্যে একটুও মিথ্যে নেই।
তোকে দেখে আমার ভীষণ ভীষণ ভালো লাগছে।
তোমাকে দেখেও। মনের মধ্য়ে একটা শান্তি পাচ্ছি। বৌদি ভালো আছে।
দাঁড়া।

সুজিতদা মোবাইল বার করে পটাপট বোতাম টিপলো। ভয়েজ অন করতে রিংটোনে একটা গান ভেসে এলো। আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি।
হ্যালো বলো।
তুমি কোথায়।
একটু মার্কেটিংয়ে এসেছি।
আমার কাছে একজন এসেছে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করছে তুমি কেমন আছো।
কে গো।
অনি।
অনি! ওটা বেঁচে আছে।
বালাই ষাট ও কথা বলতে আছে।
বলবো না দাওতো ওকে ওর চুলের মুটিটা ধরি।
তোমার কথা ও শুনতে পাচ্ছে।
কিরে ছাগল, পথ ভুলে।
না গো বৌদি, পৃথিবীটা যে গোল আজ অনুভব করলাম।
এভাবে তোর সঙ্গে কথা বলবো না। কবে আসবি।
হঠাৎ কোনো একদিন।
হ্যাঁগো ও কি সেরকমই দেখতে আছে। না মুটিয়েছে।
আরি বাবা একেবারে সেরকম কোনো পরিবর্তন নেই, সেই ময়লা ময়লা গেঞ্জি আর প্যান্ট।
মাথার চুল।
এখনো সেই রকম। দাড়ি গোঁফতো ওর কোনো দিন ছিলো না। একটু একটু ছাগল দাড়ি, সেটা আজ কেটেছে।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম। ওর একটা ছবি তুলে আনো।
আমি ওকে বললাম কি খাবি। ও কি বললো জানো।
কি খেতে চেয়েছে রুটি আলুর দম।
সেরকমই। ছেড়া পরোটা ঘুগনি আর জিলিপি।
ও ওই হাউসের মালিক হওয়ার যোগ্য নয়। কিরে অনি কবে আসবি।
দাদাকে একটা দিন ঠিক করে দিচ্ছি সেদিন আসবো।
আয় জমিয়ে গল্প করবো। বিয়ে করেছিস।
না। মেয়ে পাচ্ছি না।
এই যে শুনলাম তুই তোর মালকিনকে পটিয়েছিস।
তোমার কি বিশ্বাস হয়।
বিশ্বাসতো হয় না। অবিশ্বাসই বা করি কি করে।
ঠিক আছে এই বিষয় নিয়ে পরে কথা হবে।
শোনো ও যা খেতে চায় ওকে খাওয়াও।
রাখি।
হ্যাঁ।
একজন এসে ঘরে ঢুকলেন।
স্যার।
হ্যাঁ বলুন।
আমরা ওনাকে বোঝালাম। উনি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।
নিয়ে এসো।
হ্যাঁরে অনি তুই এখনো স্ক্রিপ্ট তৈরি করিস। না করি না। তবে পেলে করতে আপত্তি নেই।
একটা ভালো পার্টি এসেছে বোম্বে থেকে, ওরা এখানে প্রোডাক্ট লঞ্চ করবে। কাজটা করবি।
সব।
হ্যাঁ। তুই করলে আমি নিশ্চিন্ত হই। তাছাড়া তুই এখন মালিক বলে কথা।
কতো দেবে।

প্রোজেক্টটা পঞ্চাশ কোটি। ওরা একবছরে খরচ করবে। তোদের কাগজের জন্য আমি ওয়ান থার্ড ধরে রেখেছি। তোকে এটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বাকিটা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ব্যানার সব কিছুতে।
আমি কিন্তু লে আউট প্ল্যানিং করে ছেড়ে দেবো। বাকি তোমাকে করতে হবে।
অবশ্যই তুই ভিজুয়ালি যেমন করে দিতিস আমাকে সেই রকম করে দে।
তাই হবে।
আমি কি পাবো।
তোর পেছনে আমি চার খরচ করতে পারি।
চার লাখ না কোটি।
তুই কি এখন লাখে সীমা বদ্ধ তোকে ধরতে গেলে কোটি দরকার।
গুল মেরো না।
ঠিক আছে ভদ্রলোককে আসতে দে কথা বলে নেবো।
তোর কাগজের ব্যাপরটা আজই কিন্তু ওনার সামনে ফাইন্যাল করে নেবো।
ডাকো। তাহলেতো আমার ছেঁড়া পরোটা এখন খাওয়া হবে না।
পরে খাস। আগে কাজ।
সেই ভদ্রলোক আর একজন স্যুট টাই পরিহিত টিপ টপ একজনকে নিয়ে সুজিতদার ঘরে এলেন। আমি ভ্য়াবলার মতো ওনার দিকে তাকালাম। সুজিতদা প্রথমে ব্যবসায়িক ভাষণ দিলেন। তারপর আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। নাম বললেন মিঃ নেওটিয়া বাংলা হিন্দী ইংরাজী মিশিয়ে কথা বলছেন। আগামী মাস থেকে উনি ক্যাম্পেনিং করতে চান।
প্রায় একঘন্টা কথা হলো। দুটো কনট্রাক্ট লেটার তৈরি হলো। একটা আমার কাগজের সঙ্গে, আর একটা আমার সঙ্গে। উনি একটা পাঁচ কোটি টাকার চেক আর আমাকে বাই নেম দু’কোটি টাকার চেক দিলেন। কনট্রাক্টগুলো আমি নিলাম। কাজ বুঝলাম। সুজিতদা সব ফাইল করে আমাকে দিলেন। ভদ্রলোক চলে গেলেন।
সুজিতদা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তোর জন্য আজকে ব্যাবসাটা পেলাম। তোর কি কনসেপ্টরে। তুই জানিষ ওই ভদ্রলোককে আমার অপনেন্ট এম এস এ্যাড এজেন্সি নিয়ে চলে গেছিলো। আজো কোনো মতে ওকে বোঝাতে পারিনি। সকাল থেকে দুটো সেসন চলে গেছে। তুই এক ঘন্টায় মালটাকে কুপকাত করে দিলি। তুইতো এখন অনেক ম্যাচুয়র!
আমার ছেঁড়া পরোটা।
আনছি আনছি। ওরে শালা! এখন বুঝছি তোকে কেনো ম্যাডাম মালিক বানিয়েছে। যার হাত থেকে মাল গলে না এককথায় কুড়ি কোটির চেক দিয়ে চলে গেলো।
মাথায় রাখবে আমি পুরোটা এ্যাডভান্স চেয়েছি। নাহলে চেক ফেরত দিয়ে দেবো।
ও দিয়ে দেবে।
দিয়ে দেবে না। বুঝবারের মধ্যে অফিসে চেক পৌঁছনো চাই। না হলে পুরো সিডিউল ক্যানসেল করে দেবো।
তুই কি আমাকে মারবি।
মাল পেয়ে গেলে মারবো না।
তাড়াতাড়ি খাবার বলো। আমাকে এখন এসপ্ল্যানেড যেতে হবে। সব মাল পত্র কিনতে হবে। ঘরে কিছু নেই।
ড্রইং মেটিরিয়াল আমি তোকে দিয়ে দিচ্ছি।
তাহলে ভালো হয়।
সুজিতদা বেল বাজালো। সেই ভদ্রলোক এলেন।
আরে তোমাকে ডাকি নি।
স্যার আমরা সকলে অনিবাবুর সঙ্গে আলাপ করতে চাই। সবাই করিডোরে জড়ো হয়েছে।
কি বুঝছিস। সবাই জেনে গেছে তুই আজ অফিসের হয়ে মাল ফাঁসিয়েছিস।
আমার কমিশন।
পেয়ে যাবি।
ধার বাকি নেই। আর ওটা কিন্তু ক্যাশে নেবো।
তোকে যখন বলেছি। দেবো। তুই আমার তিন মাসের ব্যবসা তুলে দিলি। তোকে দেবো নাতো কাকে দেবো। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks