দেখি নাই ফিরে - (Part-57)

জানিস অনি আমরা যখন ডাক্তরি পর তখন আমাদের ফার্স্ট ইয়ারে সাইকলজি পরতে হয়। সাইকলজি না পরলে রুগীর মনস্তত্ব জানা যায়না। আমি ওই পেপারটাতে হায়েস্ট নম্বর পেয়েছিলাম।
আমি এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি।
আমি তোকে গল্প বলছি এরি মধ্যে তুই তোর ঘুটি সাজিয়ে ফেল। এই ক্ষমতাটা তোর আছে।
তারপর বুঝলি যখন প্র্যাকটিশ করতে শুরু করলাম। তখন ওই সাইকলজি পরাটা কতটা উপকারে এলো বুঝতে পারলাম। এখনো আমি সময় সুযোগ পেলে সাইকলজিটা পরি।
তুমি ফ্রয়েড পরেছো।
হুঁ। তুই আরো বেশি চালাক। বড় মাছকে খেলিয়ে তোলার ফন্দি করছিস।
হাসলাম। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি।
যদি বলি পরিনি।
তাহলে ফাইল ক্লোজ।
ফাইল তুই ওপেন করেছিস। ক্লোজ করার দায়িত্ব আমার।
যদি বলি পরেছি।
তাহলে প্রিকনসাস মাইন্ড সম্বন্ধে তোমাকে দু’চারটে প্রশ্ন করবো।
বুঝেছি। তুই আমাকে নিয়ে ভালো হোমওয়ার্ক করেছিস।
তোমাকে কতটুকু দেখেছি।
আজকে নিয়ে চারদিন।
তুমিও আমাকে চারদিন দেখেছো।
তাহলে উত্তরটা হচ্ছে আমি তোর সম্বন্ধে এতটা জানলাম তুই কি কিছুই জানিসনা।
হাসলাম।
কি বান্ধবী তোমার সব মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
তোমাদের কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা।
জীবনে অনেক মানুষ নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করেছি। তোমার অনি আমার দেখা সেরা ছেলে।
মিলির দিকে তাকিয়ে। মামনি নীপা মাকে একটু গরম জল দিতে বলনা।
আমার দিকে তাকিয়ে। এটা তোর কথা। কেমন সঠিক জায়গায় ইনপুট করলাম বল।
আমি মুচকি মুচকি হাসছি।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রেখে ডাক্তারদার কথা এক মনে শুনছে।
তুমি দাঁড়াও মিলিদি আমি চায়ের কথা বলে এখুনি আসছি। ফাঁকটুকু তোমার কাছ থেকে শুনবো।
নির্মাল্য বেরিয়ে গেলো।
তাহলে অনিবাবু ফ্রয়েড, প্রিকনসাস মাইন্ড। তাহলে তুমি আমার তৃতীয় চক্ষুর হদিস পেয়েগেছো।
সবার মুখে বিস্ময়। মল্লিকদা একটু নড়ে চড়ে বসলো।
তুমি এই বয়সে ফ্রয়েড গুলে খেয়ে ফেলেছো, তন্ত্রনিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করছো, অবশ্য তোমার বড়মার মুখ থেকে শুনলাম। তুমি অনেকদিন বাঁচবে। বাকি কি রাখলে।
ফ্রয়েড কেনো তার ঔরসজাত সন্তানকে বিয়ে করেছিলো। সেটা জানা বাকি রয়েছে।
তারমানে! দাদা বলে উঠলো।
কি এডিটর কিছুই পড়াশুনো করোনা। কি করে যে এতোবড়ো কাগজের এডিটর হলে ভগবান জানে।
ইসলামভাই আমার ঘাড়ের কাছে উঠে এলো। যেনো আমাকে গিলে খাবে।
জানিস অনি অনেকদিন পর কথাবলার মতো একটা যোগ্য লোকের সন্ধান পেলাম। কথা বলতে নাপেরে বোবা হয়ে গেছিলাম। লোকে আমাকে বলে আঁতেল। আমার নাকি নাক উঁচু। লেবেল সমান সমান না হলে কথা বলে আনন্দনেই। বুঝলি। কথা বলে যদি আনন্দ না পাই তাহলে কথা বলবো কেনো।
সামন্ত ডাক্তার চশমাটা খুলে চোখদুটো মুছলো।
তুই উত্তর পেয়েছিস।
এখনও সার্চ করছি।
উত্তর তুই পেয়েছিস আমাকে বলছিস না।
তোমার উত্তরের সঙ্গে আমারটা মেলেকিনা দেখছি।
সামন্ত ডাক্তার এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
এক্সপেরিমেন্ট! তবে তিনি ফ্রয়েড বলে কথা।
তার বাইরেও কিছু আছে।
তোর থার্ডসেন্সটা ভীষণ প্রখর। তাই তুই এতো তাড়াতাড়ি ডিসিসন নিতে পারিস। সাধারণ লোকে বলে ম্যাজিক। বিজ্ঞানের ভাষায় প্র্যাকটিশ। এ্যাম আই রাইট।
হুঁ।
কলকাতায় এবং এখানে এসে মামনির কাছে তোর কিছু কিছু গপ্প শুনছিলাম। আর মনে মনে জাজ করছিলাম। তুই আমাকে এরকম একটা প্রস্তাব আজ না হোক কাল দিবি।
কি করে বুঝলে।
এই মুহূর্তে তোর কাছে সেকেন্ড কোনো অপসন নেই। থাকলে তুই আমাকে বাজাতিস, সড়াসরি অফার করতিস না।
আমি মাথা নীচু করে নিলাম।
সেদিন তুই ওর ষোলোটা নার্সিংহোমের মধ্যে সাতটা রেস্ট্রি করিয়েছিস। বাকিটা নটা এখনো ওর নামে আছে। সেগুলোও তুই রাখবিনা। ধ্বংস করে দিবি। বিনিময়ে কিছু টাকা খিঁচে নিলি। তাও চেকে। সাদা টাকা। তুই কি ডেঞ্জার। তুই খেলাটা কোথায় নিয়ে যেতে চাস। এরা কেউ ধরতেই পারছেনা। এরিমধ্যে তার কাজ তুই শুরু করে দিয়েছিস। এরা এখনো কেউ ঘুনাক্ষরেও জানেনা। ধরতেও পারছেনা।
আমি সামন্তর মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম।
সকলে চুপচাপ। নিস্তব্ধ ঘর। পিন পরলে আওয়াজ হবে।

আমি সেদিন তোকে বলেছিলাম আমি ওর রেজিস্ট্রেসন ক্যানসেল করে দেবো। চেষ্টা করলে পারতাম। যখনি শুনলাম তুই থেকে যাচ্ছিস আমাদের সঙ্গে আসছিস না, তখনই বুঝলাম তুই আমাকে এর মধ্যে জড়াতে চাসনা। তুই অন্যভাবে আমার সাহায্য চাস।
আমার চোখের পলক পরছেনা।
তুই এও প্ল্যান করে রেখেছিলি। এমন জায়গায় তুই এই কথাটা বলবি যেখানে আমি তোকে না বলতে পারবোনা।
আমি এবার মাথাটা নীচু করলাম।
লজ্জাপাস না তোকে নিয়ে এদের অনেক কিউরিয়োসিটি। আমি জানি তুই থাকতে এদের শরীরে একটা লোমও কেউ ছুঁতে পারবেনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মতো তোরও কথা বলার লোক নেই।
আমি মাথা তুললাম না।
আর আমি যে তোর প্রতি দুর্বল এটাও তুই ধরে ফেলেছিস।
আমি আবার মাথা তুললাম।
কি করে ?
আমার কলকাতা শহরে একটু আধটু প্রসার প্রতিপত্তি আছে। লোকে বলে বড় ডাক্তার। তোর সঙ্গে আমার সেই ভাবে কোনো সম্বন্ধ নেই। এডিটারের একটা কথায় আমি গাড়িতে উঠে বসলাম!
বুঝলি অনি সেদিনও আমি গাড়িতে উঠে বসার আগে তোর চোখ দেখেছিলাম। তোর চোখ সেদিন বলছিলো ডাক্তার তুমি বহুত ধড়িবাজ, তুমি আমার শেকড়টা দেখতে যাচ্ছ। যাও। আমি তোমাকে ওখানে বধ করবো।
কিরে ঠিক বলছি।
আমি মুচকি মুচকি হাসছি।
প্রিকনসাস, ফ্রয়েড উপকাহিনী মূল কাহিনী আমি বলছি। তাবলে তুই ফ্রয়েড পরিসনি একথা বলছিনা। গুলে খেয়েছিস।
তুই ঠিক খবর নিয়ে নিয়েছিস আমি মামনির গ্রুপের তিনটে নার্সিংহোমের সঙ্গে এ্যাটাচ। তাই নিজের মেয়েকে বিয়ে করতে অসুবিধে কোথায়!
কিরে দুষ্টু তোর পেটে পেটে এত বুদ্ধি। ছোটমা কানটা মূলে দিলো।
ওঃ ছোট ব্যাথা লাগবে।
তোমার জন্য ও লায় পাচ্ছে। ব্যাথা ওর লাগেনি তোমার লেগেছে।
ওই হলো।
ডাক্তারদাদা বলে তোকে ধরতে পেরেছে আমরা সাতজন্মেও তোকে ধরতে পারতামনা।
ছোট জানো কাল খেতে বসার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি, ও এখানে ফিজিক্যালি প্রেজেন্ট, মেন্টালি নয়। তোমরা ধরতে পেরেছো।
একদম না।
আজ সকালে এদেরকে নিয়ে ও ঘুরতে গেছে। তার মধ্যেই ও ওর কাজ সেরে নিয়েছে। এরা কেউ ধরতে পারেনি।
ও তো আমাদের সাথেই ছিলো। দেবাশীষ বললো।
আমি তোর প্রস্তাব গ্রহণ করবো তার আগে তোকে একটা জিনিষ এদের সবার সামনে বলতে বলবো পারবি।
না। মঙ্গলবার জানতে পারবে। দাদা আঁচ পাবে কাল বিকেল থেকে।
দেখছো ছেলে কতটা এক্সপার্ট দিনক্ষণ সময় বলে দিচ্ছে।
তুই যে এখুনি বললি কিছু হয়নি। দাদা বললো।
কিছু হয়নিতো। যাও অনেক বেলা হয়েছে। স্নান করে খেয়ে নাও।
তুই নিরঞ্জনকে বেঁধেছিস, তুই ইসলামকে বেঁধেছিস, তুই দামিনীকে বেঁধেছিস আমি জানি তুই থাকতে এদের কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা। সব তাস তোর হাতে। নেক্সট কে ?
নিরঞ্জনদা এতোক্ষণ চুপচাপ বসেছিলো। এবার উঠে এলো। আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমার কাঁধটা ধরে ঝাঁকিয়ে বললো। অনিমেষদা তোকে ও ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কি কথা বললো একটু বল। আমি ভেতর ভেতর ভীষণ অশান্ত।
কিগো তোমরা এখন চা খাবে স্নান করবেনা বেলা গড়িয়ে গেলো। নীপা ঘরে ঢুকলো।
থাম মুখপুরি। ছোটমা বলে উঠলো।

অনি ডাক্তার সব সত্যি কথা বলছে! আমার গা ছুঁয়ে বল। বড়মা বললো।
আবার শপথ করাচ্ছ। সেদিনকার কথাটা ভুলে গেছো।
আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। কিন্তু ডাক্তার কি বলছে সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
দাঁড়াও আগে চা খাই।
বান্ধবী ওর পেট থেকে বার করতে পারবেনা। তোমাকে পড়াশুনো করতে হবে।
এই বুড়ো বয়সে সেটা হয়।
তাহলে চুপচাপ থাকো।
মিলি চায়ের কাপ নিয়ে এলো। হাতে নিলাম। তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেনো। নিজের জায়গায় গিয়ে বোসো।
নিরঞ্জনদা চলে গেলো।
কিরে তোরকি এখনো ঘোর কাটেনি। ঘারটা ব্যাথা হয়ে গেলো।
হোক। তোকে ছুঁয়ে থাকলে যদি কিছু শিখি।
অনেক শিখেছিস আর শিখতে হবেনা। খিদে পাচ্ছেনা।
পাচ্ছে তো, উঠতে ইচ্ছে করছেনা।
আচ্ছা ডাক্তার তোমরা দুজনে কথা দিয়ে এমন সব ছবি আঁকলে আসল প্রশ্নের উত্তরটা পেলামনা। দাদা বললো।
তোমায় পেতে হবেনা যে প্রশ্ন করেছে সে ঠিক উত্তর পেয়ে গেছে।
বুঝলি অনি ফ্রয়েডের প্রিকনসাস নিয়ে আমার কিছু কিছু জায়গায় খটকা আছে।
আমার একেবারে নেই।
তোর সঙ্গে বসবো।
তোমাদের আলোচনায় আমরা থাকবোনা। টিনা বলে উঠলো।
নিরস সাবজেক্ট।
নিরস কইগো বেশতো শুনতে ভালোলাগছিলো। বড়মা বললো।
চলো এবার উঠি অনেক বেলা হলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
আমি তাহলে রেজুলেসন তৈরি করতে বলেদিচ্ছি। ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
সেটাকি তুই বাকি রেখেছিস।
হেসেফেললাম।
হাসিসনা। সবকিছু হাসি দিয়ে ঢাকা যায়। তুই যেমন একা একা কাঁদিস আমরাও কাঁদি। একটু বলতে অসুবিধে কোথায়।
মাথা নীচু করে থাকলাম।
ক্রমশঃ

বড়রা সবাই বাথরুমে স্নান করলো। আমরা সবাই পুকুরে নামলাম। জল তোলপাড় করে স্নানপর্ব চললো। দেবাশীষ সাঁতার জানেনা। ও পুকুর পারেই বসে বসে স্নান করলো। চিকনা জলে ডুবে পুকুরের মাটি তুলে আনার খেলা দেখালো। টিনা মিলি অদিতি নীপা ওর পাশে পাশে সাঁতার কাটছে। সবাই বেশ মজা করছে। আমি এমনিই সাঁতার কাটছিলাম। বাসু অনাদির সঙ্গে কথা বলছিলাম।
চিকনা চেঁচিয়ে বললো, অনি তুই পারবি। তোর এখন আর দম নেই।
আমি হাসলাম।
যদি পারি কি দিবি।
তোকে যেখান থেকে বলবো সেখান থেকে ডুবে মাটি তুলে আনতে হবে।
ঠিক আছে, চেষ্টা করবো। তার আগে বল কি দিবি।
তোকে পাটালি খাওয়াবো।
ওতো তুই রেগুলার খাওয়াচ্ছিস।
আজ তুই আমাদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছিস।
নামলেখা আছে। তোদের গাছ।
আমাদের জমির গাছ।
হারুজানার কালা ইজমালি।
কখনই না। আমরা মেপে দেখেছি ওটা আমাদের জায়গা।
কাকাকে দলিলটা নিয়ে আসতে বল।
অনাদি দেখছিস। চুরি করবে আবার.......।
ঝপ করে জলে ডুব মারলাম। ডুব সাঁতারে চিকনার কাছে পৌঁছে, ওর গামছা খুলে নিয়ে চলে এলাম।
জলে ভেসে উঠতেই চিকনার সে কি তর্জন গর্জন।
নীপা হাততালি মারছে। অনিদার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ। বুঝতে পেরেছিলে অনিদা এই কু-কীর্তি করবে।
প্রথমে মিলিরা বুঝতে পারেনি। বোঝার পর ওদের হাসি ধরেনা।
দেবাশীষ ওপর থেকে চেঁচাচ্ছে। কি চিকনাবাবু চ্যালেঞ্জ করবেনাকি অনির সঙ্গে।
আর জীবনে করবোনা। তুই গামছাটা দে।
অনাদি ওকে জিজ্ঞাসা কর ওই গাছটা ওদের কিনা। ও আমার নামে সকালে বড়মাকে রিপোর্ট করেছে।
আমি গ্রামসভা ডাকবো।
ডাক। আমি উঠলাম।
তোর পায়ে ধরি। তুই গামছাটা দে।
সবাই হো হো করে হাসছে।
আমি বড়মাকে ডাকবো।
ডাক।
চিকনা কিছুতেই কাছে আসতে পারছেনা। এক গলা জালে দাঁড়িয়ে। সাঁতারও কাটতে পারছেনা।
মিলি ওর কাছে যাওতো।
মিলি যেই সাঁতার দিলো।
আমি কিন্তু ডুবে মরে যাবো অনি।
তুই মরে দেখা তুই মরেছিস।
দেনা ভাই, দাদা আমার।
উঃ কি রসের কথা শোন।
বড়মাগো। আমাকে অনি মেরে ফেললে। পুকুরে দাঁড়িয়েই চেঁচিয়ে উঠলো।
সাঁতার কাট দারুন লাগবে।
চিকনার তারস্বর চিৎকারে সবাই ঘাটের ধরে চলে এসেছে। আমি মাঝ পুকুরে জলে ভেসে রয়েছি। চিকনা একগলা জলে দাঁড়িয়ে। আমার পাশে মিত্রা অদিতি টিনা নীপা মিলি। সবাই হাসছে।



কিরে তোরা জল থেকে ওঠ এবার। বড়মা ওপর থেকে চেঁচালো।
আমি চেঁচিয়ে বললাম আগে চিকনাকে উঠতে বলো, তারপর আমরা উঠবো। ও আমাদের উঠতে দিচ্ছেনা।
দেবা বাসু জল থেকে হাসতে হাসতে উঠে গেলো। সবাই হাঁসছে।
চিকনা বাবা উঠে আয়না। ওরা কি তোর সঙ্গে পারে।
চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা। গুম হয়ে আছে। রাগে গড় গড় করছে।
বাসু বড়মার কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো। বড়মা প্রথমে আমার দিকে তাকালো চোখে হাসি মুখে গম্ভীর। ছোটমা একটা মাটির ঢেলা তুলে আমাকে ছুড়লো আমি জলে ডুব মারলাম।
কথাটা সকলে জেনে ফেললো, সবাই হাসছে। ইসলামভাই হাসতে হাসতে বসে পরলো।
কিহলো চিকনা গুরু বিট্রে করলো।
চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা।
কিরে আমি তোদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছি।
না।
ওটা কাদের গাছ।
ইজমালি।
বড়মা শুনলে চিকনা কি বললো।
বড়মা হাসছে। তোর মাথায় এরকম বদ বুদ্ধি আসে কি করে বলতো।
দেবাশীষ চেঁচিয়ে উঠলো, চিকনা চ্যালেঞ্জ করছিলো অনির সঙ্গে। দেখছো আমরা যারা ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। তারা এখন কোথায় আছি। চিকনারও হাল সেইরকম হবে। একটু অপেক্ষা করো।
ও তোদের মতোই হোক।
চিকনা আমি ডুবে মাটি তুলছি।
না তোকে ডুবতে হবেনা। তুই আমাকে ছুঁড়ে দে।
একটু অপেক্ষা কর।
আমি ডুব মেরে চিকনার কাছে গিয়ে ওর পায়ে হাত দিয়ে গামছাটা দিলাম। বুঝতে পারলাম চিকনা আমার হাত ধরতে গেলো, পারলোনা ছিটকে বেরিয়ে এলাম। ও ডুব মারলো। বেশ কিছুক্ষণ জলে দুজনে দাপাদাপি করলাম। দুজনেই হাঁপিয়ে গেছি। পারে উঠে এলাম।
চিকনা হাসছে। তোর এখনো এতো দম।
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো কিরে ওপারে যাবিনা।
আজ থাক বেলা হয়েগেছে।
ছোটমা দাঁত খিঁচিয়ে উঠলো, শখ দেখো মেয়ের।
আবার আমি আর চিকনা জলে ঝাঁপ মারলাম। ওদের সবাইকে নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে এলাম। খুব এনজয় করলো ওরা। টিনা বললো, মিত্রাদি জলটা কি ভারি গো।
নির্মাল্য হাঁপাতে হাঁপাতে বললো এটাকি তোমার সুইমিং পুলের জল।
আমরা পারে উঠে এলাম গা মুছে টাওয়েলটা মিত্রার দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে এলাম। চিকনা আমার পেছন পেছন।
দেখলাম সঞ্জু এসে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে।
কিরে!
তুই আর কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে পারলিনা। আমি এসে জল খাওয়াতাম। চিকনার গামছা ধরলো।
চিকনা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। বড়মা।
বড়মা ভেতর বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, কি হলোরে চিকনা।
দেখোনা সঞ্জুটা।
সঞ্জু।
নাগো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে।
আস্তে করে দাঁত কিড়মিড় করে বললো, দাঁড়া খাওয়া হোক তোকে বমি করাবো।
আমি ওপরের ঘরে চলে গেলাম। চিকনা নিচের বারান্দায় ওর নিজের জায়গা থেকে জামা কাপর পরলো।
নিচে চেঁচামেচির শব্দ। হুড়মুড় করে সবাই চলে এলো।
ঘরে ঢুকেই মিত্রা বললো।
কিরে তুই রেডি।
তাহলে কি তোর জন্য অপেক্ষা করবো।
মিত্রা দরজা বন্ধ করলো।
আমি আলমাড়ির আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি।
সরনা কি মেয়েদের মতো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াস।
আমি আয়না দিয়ে দেখতে পাচ্ছি মিত্রা ভিঁজে কাপরজামা চেয়ারের ওপর রেখে আমার টাওয়েলটা দিয়ে গা মুছছে।
আবার আমাকে ঠেলা মারলো।
ঘুরে দাঁড়ালাম। মিত্রা সোজা হয়ে বুকের ওপর ক্রশ করে হাতটা রেখেছে।
প্লিজ আর করবোনা, এইবারটা ছেড়ে দে।
ওপরটাতো ঢেকেছিস। নিচেরটা।
চেঁচাবো। বলে দিচ্ছি।
চেঁচা। গলা ফাটিয়ে ফেল।
নিচে অদিতিরা আছে। কি ভাববে বল।
মনে থাকে যেনো।
আমি দরজার দিকে এগোলাম।
চলে যাবি।
হ্যাঁ।
একটু দাঁড়া, একসঙ্গে যাবো।
খিদে লেগেছে। পেটে আগুন জ্বলছে।
তাড়াতাড়ি করে নিচ্ছি।
আমি এসে খাটে বসলাম।
মোবাইলটা খাটের ওপর পরেছিলো আমি টেনে নিলাম। ম্যাসেজ গুলো দেখলাম। অর্ক ঠিক ঠিক এগোচ্ছে। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ করলাম।
খালি কাজ করিস না খাওয়াদাওয়াটা ঠিক ঠাক করিস।
সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো।
করছি বস আর একটু পর।
ঠিক আছে। আমি তোর ম্যাসেজ ফলোআপ করছি।
রিপ্লাই এলো থ্যাঙ্ক ইউ বাই।
কিরে এত ঘন ঘন ঢং ঢং করছে।
অর্কর সঙ্গে একটু হ্যাজালাম।
তুই খুব ভালো ফলোআপ করিস।
সেই জন্য টিকে আছি।
দামিনী মাসিকে ফোন করলাম।
রিং বাজতেই ভয়েজ অন করলাম।
কিরে মাসিকে মনে পরলো।
কেনো ভুলে গেছিলাম নাকি।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
এখনো খেতে বসিসনি কেনো ?
মিত্রা ঘরে আটকে রেখেছে।
মিথ্যে কথা বলবিনা। নাগো মাসি।
কিরে মিত্রা ঘরে আছে নাকি।
হ্যাঁ। কাপর পরছে।
তুই কি করছিস।
তোমার সঙ্গে কথা বলছি।
মাসি হো হো করে হাসলো।
ডাক্তারকে পটিয়ে নিলি।
খবর চলে গেছে।
হ্যাঁ।
সাগরেদ ভালোই রেখেছো।
আবার মাসি হেসেফেললো।
শোনো তোমায় একটা কথা বলি।

বল।
কাল তোমায় রাজনাথের ছেলেপুলে ডিস্টার্ব করতে পারে।
সেতো গতকাল থেকে করছে।
কয়েকদিন একটু চুপ থাকবে, মাথা গরম করবেনা।
চুপ করেই আছি।
ডাক্তারের খোঁজ খবর নিয়েছো।
না।
মিথ্যে কথা বলছো।
সত্যি বিশ্বাস কর।
এবার তোমার লোকজন কাজ করছেনা। আমার পকেটের লোক কাজ শুরু করেছে।
সেটাও জানি।
তাহলে বলে ফেলো।
তুই জেনে নে।
ঠিক আছে মনে থাকে যেনো কথাটা, আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমিও ঠিক এই কথা বলবো।
তুইকি আমায় বলিস।
সব বলেছি।
কাজ হয়ে যাবার পর।
বুঝেছি।
কি বুঝেছিস।
তোমাকে বুঝতে হবেনা।
কবে আসবি।
রবিবার দুপুরের দিকে।
ও বাড়ি কিন্তু কমপ্লিট হবেনা।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো। চোখ বড়বড়।
তাহলে মিত্রার বাড়িতে থাকবো।
সেই ভালো। আমাকে আরো দিন তিনেক সময় দিস।
এই রবিবারের পরের রবিবার কাজ।
মনে আছে।
তুমি খেয়েছো।
না, খেতে বসেছি সবে।
আমার আগে খেতে বসে গেছো।
কি করে জানবো তুই এখনো খাসনি।
মাসি তুমি কি দিয়ে খাচ্ছগো। মিত্রা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো।
সেদ্ধভাত আলুভাতে ডালভাতে।
কেনো ?
আজ বৃহস্পতিবার। আমার নিরামিষ।
জানো বুবুন আজ সকালে কলাই শাক, দই আঁতিপাতা তুলে এনেছে।
আসার সময় আমার জন্য একটু শাকপাতা নিয়ে আসিস।
আমিতো চিনি না। বুবুনকে বলো।
তুই বলেদে।
আচ্ছা। তুমি খেয়ে নাও।
যা তোরাও খেতে বসগে যা।
আচ্ছা।
আমরা চলে এলাম এবাড়িতে। একসঙ্গে সকলের জায়গা হয়েছে। যে যার সঠিক জায়গায় বসলাম।
তোরা দুজনে আজ কোনো ঝামেলা করবিনা। বড়মা চোখ পাকিয়ে বললো।
তারমানে! তুমি কি বলতে চাও আমি ঝামেলা করি।
তুইনা মিত্রা।
ও তুমি বলবেই, করলেও বলবে, না করলেও বলবে। তাইনা ছোটমা। মিত্রা ক্যাজুয়েলি বললো।
ছোটমা ফিক করে হাসলো।
খাবার পরতেই মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। সুরমাসি বুবুন স্পেশাল।
আজ করিনি।
কেনো।
অনি বারন করলো।
আমার দিকে তাকিয়ে।
কিরে।
ঝামেলা করিসনা, যা দিয়েছে খা না।
তুই বারন করেছিস কেনো।
কখন করলাম। এ বাড়িতে আমি সকাল থেকে এসেছি।
ঠিক।
মিত্রা চুপ করে গেলো। খাওয়া শুরু করলো।
খাওয়া চলছে। চারিদিক নিস্তব্ধ।
দুবার জোরে জোরো নিঃশ্বাস নিয়ে, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
কিরে সর্দি হয়েছে।
না হবে এখুনি।
আমিও হাসলাম।
সবাই চুপচাপ।

ছোটমা বড়মা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
কিরে মিত্রা হাসলি কেনো। ছোটমা বললো।
একটু অপেক্ষা করো, দেখতে পাবে।
ছোটমা আমার দিকে তাকালো।
সুরমাসি।
কিরে।
তেল লঙ্কা একটু বেশি করে দেবে। যাতে ভাগ দিতে না হয়।
হ্যাঁ। মিত্রা দিলো আমার পিঠে গুম করে।
বড়মাগো।
একিরে!
সকাল থেকে আমি এবাড়িতে এসেছি। মিত্রা ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বললো।
তা বলে তুই!
থামো তুমি। সুরমাসির সঙ্গে ওর ট্যালিপ্যাথি আছে ?
বড়মা হাসবে না কাঁদবে। ওরাও সকলে হাসছে।
সুরমাসি বাটিটা আমার পাতে বসাবে। কি গন্ধ ছেড়েছে বুঝতে পারছো। রসিয়ে মাখা হচ্ছে।
মামনি তুই আর আমি এখানে খানেবালা, আর সবাই খেতে জানেনা বল। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো।
তোমাকেও দেবোনা। এতোক্ষণ তুমি আমাকে সাপোর্ট করোনি।
তুমি আগুনে আর ঘি ঢেলোনা। দাদা বললো।
সুর।
আমি সবার জন্য মেখেছি দাদা।
তাহলে দরকার নেই কি বলো এডিটর।
তোমাকে দিলে তো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই আমারটাও নিয়ে নে। আমি বড়মা ছোটমারটা মারি।
বড়মা তোর, ছোটমা আমার। মাথায় রাখবি।
একিগো এডিটর! ভাগাভাগি আছে নাকি ?
আরো অনেক কিছু আছে, দেখতে পাবে।
সুরমাসি বাটি বসিয়ে দিয়ে গেলো।
মিত্রা বাটির দিকে একবার তাকালো তারপর আমার দিকে। ছোটমা মুখ টিপে হাসছে।
কিরে কোনটা ভালো।
বুবুনেরটা।
তাহলে বাটি দুটো আদলবদল করে নে।
না। দেখি সুরমাসি সকলকে দেয় কিনা, তারপর বুবুনেরটা সবাই ভাগ করে নেবো।
তোরটা।
ওটা আমি একা খাবো।
কি স্বার্থপর তুই।
খাওয়ার সময়। আবার চেঁচালো, সুরমাসি।
আর নেইরে মা।
এই যে বললে সবার জন্য।
সুরমাসি হাসছে।
কি বুঝলে, এটা হচ্ছে ঘরের ছেলে। দিলো আমার কোমরে চিমটি। আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি।
তুই খা বাপু বক বক করিসনা। বড়মা বললো।
দেখেছো, কেনো প্রথমেই বলেছিলাম বুবুন স্পেশাল।
বড়মা মিত্রার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকালো।
আমি আমার বাটিতে হাত চাপা দিলাম।
দে দে, হাতচাপা দিয়ে লাভ নেই, সকলকে দিতে হবে। বুঝুক সকলে কেনো গুম করে বসিয়েছিলাম। মিত্রা ঝোগরুটে, না।
আমি হাসছি। মিত্রা আমার বাটি নিয়ে সকলের পাতে ভাগ করে দিলো। সবার হোলোনা। নিজের বাটি থেকে আবার দিলো।
মিত্রাদি তুমি আর একটা গুম করে দিলে, আরো কিছুটা বেরোতে পারে। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মাকে বল। বড়মার ভালো ছেলে বলে কথা।
মামনি আর একটু হবে। ইসলামভাই বললো।
আর নেই, এটুকু আমার আর বুবুনের।
সবাই হেসে ফেললো।
দেখেছো এডিটর সকলকে দেওয়া হয়েগেছে। যেটুকু আছে দু’জনের। একজনকে না দিয়ে আর একজন খায়না। তাহলে কি প্রমাণ হলো।
খাওনা খালি বক বক। বড়মা বললো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
তোরটা থেকে একটু দে।
অ্যাঁ-এ কত খায়।
আচ্ছা আমরা তিনদিন এই জিনিষটা পেলামনা কেনো। মিত্রা ঠিক আদায় করলো। নাহলে তো এর স্বাদই পেতাম না। দাদা বললো।
আ মরন চব্বচোষ্য খাচ্ছ তবু নোলা কমে না।
সবাই হাসছে।
খুব এনজয় করে খাওয়া শেষ হলো। ঠিক হলো বিকেল বেলা সবাই মিলে বুড়ো শিবের থানে যাওয়া হবে।


আজকের দলটা অনেক ভাড়ি এবং জমজমাট। সবাই দেখলাম বেশ পরিষ্কার জমাকাপর পরেছে। বাইক এবং ট্রলির মেলা। অনাদি বাসু পুরো পরিবার সমেত এসেছে। সঞ্জু বাইক নিয়ে এসেছে। ইসলামভাইও বললো আমি বাইক নিয়ে যাবো। আমি আপত্তি করলাম না। আমি অনাদিকে বললাম তুই পাঁচু পচা ওদের সবাইকে নিয়ে আয়। আমি বাসু চিকনা আগে যাচ্ছি।
বড়মা একটু আপত্ত করেছিলো। দেবাও বললো তুই আমাদের সঙ্গে চল না। আমি বললাম তোরা আয় আমি হয়তো তোদের পৌঁছবার আগেই চলে আসবো।

মিলি টিনা অদিতি তিনজনেই আজ শারি পরেছে। ওদের শারি পড়া আবস্থায় আগে দেখিনি। বেশ লাগছিলো। তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছিলাম। মিলি কাছে এসে বললো অনিদা চোখ খারাপ হয়ে যাবে এইভাবে দেখলে।
আমি বেরিয়ে এলাম চিকনা আর বাসুকে নিয়ে।
মোরাম রাস্তায় আসতে বাসু বললো, তুই কোথায় যাবি বলতো।
একটু গাড়িটা দাঁড় করা। আমি কয়েকটা ফোন করে নিই। একটা সিগারেট দে।
বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা দিলো আমি একটা বার করে ধরিয়ে ওকে ফিরিয়ে দিলাম। ওদের থেকে একটু দূরে চলে গেলাম। প্রথমে অর্কর সঙ্গে ফোনো কথা বললাম, তারপর হিমাংশুকে এখানকার কথা বলে শনিবার সকালের দিকে আসতে বললাম। ও রাজি হলো।
আমি ওদের কাছে ফিরে এলাম।
কিরে কার ওপর রাগারাগি করলি।
না। একটা কাজের দায়িত্ব দিলাম একজনকে।
এবার বল কোথায় যাবি।
উনা মাস্টারের বাড়ি।
উনা মাস্টারের বাড়ি!
হ্যাঁ। তোদের যেতে অসুবিধা আছে।
এই সময় উনা মাস্টারের বাড়ি!
একটু দরকার আছে।
তোকে বোঝা মুস্কিল। বাসু হাসলো।
আমিও হাসলাম।
আমি বাসুর পেছনে বসলাম।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম স্যারের বাড়ি।
দেখলাম স্যার বাড়ির বারান্দায় বসে কাগজ পরছেন। আমরা বাইক রেখে ভেতরে এলাম। স্যারকে প্রণাম করলাম। স্যার মুখের কাছ থেকে কাগজ সরিয়ে বললেন, কে।
স্যার আমি অনি।
সঙ্গে সঙ্গে স্যার চেঁচামিচি শুরু করে দিলেন। ও বড়োবৌ দেখো কে এসেছে। ধুমকেতু দেখবে এসো।
আমি হাসেফেললাম।
ওরা কারা।
চিকনা আর বাসু।
তুই তো আবার একলা আসতে পারবিনা। তোর সাগরেদ দরকার।
চিকনা স্যারের কথায় মাথা চুলকোচ্ছে। বাসু মুখ নীচু করে আছে। ওরা স্যারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
কাকীমা মিনতি বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে আমি কাকীমাকে প্রণাম করলাম। মিনতি আমাকে প্রণাম করলো।
বোস।
না এখন বসবোনা।
তাহলে এলি কেনো। স্যার বললেন।
মিনতিকে নিতে এলাম। দাদারা সব শিবের মন্দিরে আসছেন। ওকে একটু নিয়ে যাই। ঘন্টা দুয়েক পর সবাই আসবো।
তারমানে।
হ্যাঁ সবাই আসবো।
তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিনা।
কলকাতা থেকে আমার কয়েকজন বন্ধুও এসেছে, ওরাও আসবে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
কেনো ?
ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ওরাও কি তোর মতো সাংবাদিক।
না স্যার ওরা সব বড় বড় কোম্পানির চিফ। বাসু বললো।
তোর কথা আমার মাথায় ঢুকছেনা।
ঠিক আছে আমি এখন মিনতিকে নিয়ে যাচ্ছি। শিবের মন্দির থেকে আসছি। ওরা হয়তো এতোক্ষণে এসে পরেছে।
কিগো বড়বৌ মিনু যাবে ?
কেনো যাবেনা, অনি বড় মুখ করে ওকে নিতে এসেছে।
মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
মিনতি ছুটে ঘরের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
হ্যাঁরে অনি।
স্যার।
তোর বাড়িতে নাকি সামন্ত ডাক্তার এসেছে।
এখানেও আসবে।
আমার বাড়িতে!
হ্যাঁ। ওনারা সবাই এসেছেন।
মনা ?
কাকাও এসেছেন।
বড়বৌ শুনলে অনির কথা।
শুনছি।
অতিথিরা আসছেন।
আমি কি করবো।
কিছু ব্যবস্তা করো।
কি করবো। সব মান্য গণ্য ব্যক্তিরা আসছেন তাদের জন্য খাবার কিছু রেখেছো।
ঋজুকে একটা ফোন করে দাও। বাজার থেকে মিষ্টি কিনে আনুক।
স্যার আমি একটা কথা বলবো।
বল শুনি। তোর গেস্ট। আমারও গেস্ট।
ঢেঁকি ছাঁটা চিড়ে ভেজে শুকনো লঙ্কা দিয়ে আর কিছু ছোলা ভাজা দিয়ে মেখে রাখুন আর চা।
গর্ধভ কোথাকার। এখনো তোর সেই মোটা বুদ্ধি গেলোনা।
আমি মাথা নীচু করলাম।
আমি বলছি স্যার ওঁরা খুব আনন্দ করে খাবে, দেখবেন।
আবার কথা বলে। কতদিন বেতের বাড়ি খাসনি। মান্যগণ্য লোকেদের আমি চিঁড়েভাজা শুকনো লঙ্কা ভাজা খাওয়াবো।
তাহলে আপনার যা মন চায় তাই করুণ, কিন্তু নষ্ট হবে।

তুই যা, তোকে পাকামো করতে হবেনা। তুমি ঋজুকে ফোন করে আমাকে দাও।
মিনতি কাপর পরে বেরিয়ে এলো। বেশ মিষ্টি লাগছে। ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক লাগিয়েছে। কপালে ছোট্ট একটা টিপ।
রেডি।
হ্যাঁ। অনিদা।
স্যার আমি আসছি।
কখন আসবি। মন্দিরটা ঘুরেই আপনার বাড়ি।
ওদেরকে তুই হাঁটিয়ে আনছিস নাকি।
না। অনাদি ট্রলি ঠিক করেছে।
তোর বড়মার কোমর ঠিক আছেতো ?
হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমরা বেরিয়ে এলাম।
খামার পেরিয়ে গাড়ির কাছে এলাম। মিনতি আমার পেছনে। চিকনা একটু দূরে এসে আমাকে ঢিপ করে প্রণাম করলো।
কি হলো।
গুরু তুমি কতোবরো খেলোয়াড়!
কেনো।
সকালে সঞ্জু আমাকে বলেছিলো বলে তুমি মিনতিকে তুলে আনলে।
না না, সবাই আমরা আনন্দ করবো সঞ্জুর মনটা খারাপ হয়ে যাবে, তাই।
শালা আমার কেনো নেই বাসু।
চিকনাদা আমি নীপাকে বলে দেবো। মিনতি বললো।
তুইতো বহুত নম্বরি। তোর জন্য এতো কষ্ট করলাম, তুই নীপাকে বলে দিবি। আজ সঞ্জুকে আমি খাবো।
মিনতি তুই চিকনার পেছনে বোস, আমি বাসুর পেছনে বসে পরি।
মিনতি চিকনার পেছনে গিয়ে বসলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম।
সঞ্জু দূর থেকে দেখতে পেয়েছে। এগিয়ে এসেছে। মিত্রারাও দেখেছে। সবে মাত্র বিকেল হয়েছে। মন্দিরের সামনে বিশাল একটা দীঘি। দীঘির জলে কমলা রংয়ের সূর্যের আলো পড়ে চারিদিকে ঠিকরে পরছে।
আমরা এসে ওদের সামনে দাঁড়ালাম।
সঞ্জু গম্ভীর। চিকনা চক চকে। মুখে হাসি আর ধরছেনা। নীপা ছুটে এলো।
কিরে তুই।
অনিদা নিয়ে এলো।
নীপা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো।
বড়মা বললো, এটা আবার কেরে ?
সঞ্জুর দিকে তাকালাম, মুখ লুকিয়েছে।
সকাল বেলা আমার গামছা ধরে খুব করকিয়ে ছিলি মনে আছে। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো।
সঞ্জু দাঁত কিরমির করছে।
আমি অনাদি বাসু হাসছি।
মিত্রা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো।
ডাক্তারদাদা কাছে এসে বললো কি অনিবাবু ব্যাপারটা কি ?
সুভদ্রা হরণ করতে গেছিলাম।
তোমার কি আরো দরকার ?
আমার না, অন্যের জন্য।
তিনি কে ?
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। ওই যে তোমার পেছনে।
লাইট ম্যান।
সকলে হো হো করে হেসে ফললো।
আমার গামছা ধরে টান মারবি। বাইকে করে নিয়ে এলাম। চিকনা সবার সামনে সঞ্জুকে ক্যারি কেচার করে দেখাচ্ছে।
সেই জন্য তুই শোধ নিলি। বড়মা বললো।
নেবোনা মানে। অনি আমার গুরু। গুরু শিষ্যকে হেল্প করবেনা।
সকলের হাসি আর থামে না। মিনতি মিত্রার থেকে চালান হয়ে চলে গেছে মিলিদের কাছে।
তোমরা মন্দির দেখেছো ? বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম।
না। মন্দির বন্ধ। তোর কাকা ব্রাহ্মণকে ডাকতে গেছে।
অনাদির দিকে তাকালাম। তোরা যেতে পারলিনা।
আমাকে যেতে দিলেতো। তবুতো পাঁচুকে সঙ্গে পাঠিয়েছি।
বড়মাদের ঘুরে দেখিয়েছিস।
দেখাতে পারতাম কিন্তু তোর মতো গল্প বলতে পারবোনা।
কি নেতা হয়েছিস।
ঠিক কথা। ডাক্তারদাদা বললো।
কিগো তুমি চুপচাপ কেনো। ছোটমার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
তুই এই কারণ আগে আগে বেরিয়ে ছিলি।
হ্যাঁ। স্যারের কাছে গেলাম। আর বলে এলাম একটু পরে আমরা সবাই আসছি।
ভালো করেছিস তোর উনা মাস্টারের বাড়িটাও এই ফাঁকে দেখা হয়ে যাবে। বড়মা বললো।
স্যার আজকেও অনিকে বলেছে, কতোদিন বেত পিঠে পরেনি। বাসু বললো।
দাঁড়া তোর উনা মাস্টারকে গিয়ে দেখাচ্ছি। বড়মা বললো।
আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষে বললাম, ওটা স্নেহের মার। তুমি ছোটমাযে কান ধরো।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
চলো বেলা পরে আসছে। এই ঝিলটা দেখেছো। কতো পদ্মফুল বলোতো।
ওই দেখ মেয়েগুলো জলে নেমেছে।

নামতে দাও। প্রাণভেরে দেখে নিক।
আবার জোঁকে ধরবে।
ধরুকনা খতি কি।
দূরে দেখলাম দাদা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা ইসলামভাই ডাক্তারদাদা হাঁটতে হাঁটতে পুকুরের ওপারে চলে যাচ্ছে। মিত্রারা একটা গ্রুপে সবাই। আমার কাছে একমাত্র বাসু আর অনাদি।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে দীঘির ধারে চলে এলাম।
জানো বড়মা এটা দুধ পুকুর। গ্রামের ঘরে সন্ন্যাসীদের ভক্তা বলে। চৈত্র মাসে এখানে গাজন হয়। একমাসের উপবাস ভাঙে শিবরাত্রির দিন। যারা সন্ন্যাস নেয় তারা এই দিন এখানকার ভি আইপি। সন্ন্যাসীরা সবাই শিবের মন্দিরে এসে পূজো দেয়। তখন মন্দিরে কোনো ভেদা ভেদ নেই। যারা সন্ন্যস নেয় তারা কিন্তু সবাই যে ব্রাহ্মণ তা নয়। নীচু জাতের লোকও সন্ন্যস নেয়। ধর্মের অনুশাসন এখনো এখানে আছে। কিন্তু ওই কয়দিনের জন্য কোনো অনুশাসন নেই। ভারি অবাক লাগে। তখন সেই নীচুজাতের লোক গুলোকে সবাই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। কারণ তারা সন্ন্যসী। কি অদ্ভুত না আমাদের এই ধর্মের অনুশাসন।
এখানে দশদিন ধরে মেলা চলে। আগুন ঝাঁপ, কাঁটা ঝাঁপ আরো কতকিছু হয়। সবাই মজা করে দেখে। জানো তখন সেই সন্ন্যাসীদের এক একজনকে ম্যেজিসিয়ান বলে মনে হয়। এই দুধ পুকুরে সকলে স্নানকরে শুদ্ধ হয়। তারপর তাদের দোলায় করে কাঁধে চাপিয়া মন্দিরের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দোলায় কাঁধ দেবার জন্য এখানে হুরোহুরি পরে যায়। সন্ন্যাসীদের কাঁধে চাপাতে পারলে পুন্ন্যার্জন হবে। কি অদ্ভূত সিস্টেম।
তুমি কখনো দেখেছো।
বড়মার মুখের দিকে তাকালাম। বুঝলাম একটা ঘোড়ের মধ্যে আছে। আমার কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনছিলো। ছোটমারও একি অবস্থা।
আমার দিকে কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো।
তুই কখনো দেখেছিস ?
হ্যাঁ বেশ কয়েকবার। শেষ যখন টেনেপরি তখন।
আমি কখনো দেখিনি। শুনেছি। আর আজ এইজায়গাটায় এসে তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
এই দীঘির চারপাশে হ্রদগুলো দেখছো।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকালো।
এগুলো কখনো পরিষ্কার হয়না। বছরে একবার পরিষ্কার হয়।
তাই।
হ্যাঁ।
কেনো।
গাজনের সময় কাজে লাগে। যেখানে আগুন ঝাঁপ হয়। তার চারপাশে মোটা করে ফেলে রাখা হয়। আগুন ঝাঁপের জায়গাটা তিরিশ ফুট লম্বাহয়। চওড়া ধরে নাও পাঁচ ফুট। কাঠ কয়লা জ্বালানো হয়। তাও আবার যে সে কাঠ নয়, বেল কাঠ। আগুনটা গণগণে করা হয় কুলোর হাওয়া দিয়ে। তারপর প্রচন্ড জোরে ঢাক বেজে ওঠে। ভক্তারা ওই গণগণে আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে এপার থেক ওপারে যায়। ওপার থেকে এপারে আসে। তখন এই হ্রদগুলোকে ভিঁজে সপ সপে করে রাখা হয়। ঘড়া ঘড়া জল ঢালা হয়।
পায়ে ফোস্কা পরে যায়না।
না।
কেনো বলোতো।
কেনো।
এটাও একটা সাইন্স।
যাঃ।
হ্যাঁগো। আচ্ছা তুমি নিজে একটু পরীক্ষা করে দেখো। তুমি যদি তোমার পায়ের তলায় আগুনের ছেঁকা মারো দেখবে তোমার সেই উত্তাপ লাগতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেবে। চামড়াটা মোটা। সেই ছোটো বয়েসে দেখেছি, এখনো সেই ছবিটা মনের ভেতর জীবন্ত। এখন তাকে বাস্তবে আনার চেষ্টা করেছি।
কি রকম।
ওই কুড়িফুট রাস্তাটা ওরা হাঁটতে সময় নিতো তিরিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড। গিয়েই ওই জল ভরা হ্রদের ওপর দাঁড়িয়ে যেতো। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার ওরা একি ভাবে ফিরে এসে এপাশের ভিঁজে হ্রদের ওপর দাঁড়াতো। অতএব হাঁটার সময় পায়ের তলাটা যতটা গরম হতো জল ভরা হ্রদে এসে দাঁড়াতেই তা ঠান্ডা হয়ে যেতো। তাবলে তুমি কখনোই মনে কোরোনা আমি তাদের কৃচ্ছসাধনাকে ছোটো করে দেখছি।
ওই ভাবে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে আগুণের ওপর দিয়ে হাঁটা সম্ভব নয়। তখন তোমার মনের মধ্যে যতো বড়ো ঐশ্বরিক শক্তির উপলব্ধি আসুকনা কেনো। তুমি কিছুনা কিছু ইনজিওরড হবেই। ওরা কিন্তু বহাল তবিয়েতেই থাকে।
বড়মা কাকে যেনো ইশারা করলো।
হঠাৎ মনটা ঘুরে গেলো। আমি পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম আমার পেছনে সকলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই আমার কথা শুনছে। দাদাও একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জাপেয়ে গেলাম।
কিরে বল বেশ বলছিলি।
দিলেতো সব মাটি করে। বড়মা বললো।
যাচ্চলে আমি কোথায় মাটি করে দিলুম। টুঁ শব্দটি করিনি। কখন থেকে এসে সব শুনছি। ও টের পেয়েছে।
যত্তোসব।
চলো ওই পাশে যাই। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks