দেখি নাই ফিরে - (Part-56)

আমি আবার পুকুর ঘাটে গিয়ে গেঁওটাল মাটি নিয়ে এলাম। ওর ওখানে লাগালাম। তারপর একটা লতা ছিঁড়ে পদ্মপাতা দিয়ে জায়গাটা বেঁধে দিলাম।
দারুণ ব্যান্ডেজ করলিতো। দেবা বললো।
কিছু শিখলে মিলিদি। নির্মাল্য গম্ভীর হয়ে বললো।
তুই চল তরপর হচ্ছে।
কি করবে।
চলনা দেখবি। অদিতি সব সানিয়ে রাখবি। আজ তোকে কুরমুর করে খাবো।
অনিদা আছে।
অনিদা তোকে পাহারা দেবে।
পেছন ছাড়ছিনা।
আমি ফিক ফিক করে হাসছি।
এবার ওঠ।
দাঁড়ানা।
এতো ঢেপুস হলে চলে।
তোর হলে কি করতিস।
কেউ জানতেই পারতিসনা।
নে উঠে দাঁড়া।
মিত্রা আমাকে ধরে উঠে দাঁড়ালো।
জুতো কোথায়।
ওই যে খুলে চলে গেছে।
যা নাচানাচি করলি ছিঁড়ে যায়নি এই ভালো।
নীপা গিয়ে জুতো নিয়ে এলো।
প্রজাপতি ধরেছিস।
সব উড়ে চলে গেলো।
ওগুলো মেয়ে প্রজাপতি ছেলে হলে ধরা দিতো।
যেমন তুই বল।
ছাগল।
লিঙ্গে ভুল করলি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। টিনা মিলি অদিতি মুখে হাত চাপা দিয়েছে।
চালা চালা বেশ লাগছে মাইরি। সেই কলেজ লাইফটা যেনো ফিরে পাচ্ছি।
ফ্যাটকাসনা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, চল অনেক হয়েছে। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে চল।
না যাবো।
কোথায় যাবি।
তোর স্কুলে।
ওইতো দেখা যাচ্ছে চলে যা।
চলনা ওরকম করিস কেনো।
ওদের স্কুলে নিয়ে এলাম। মিত্রা আমার হাত ধরে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে।
কি হলো।
ব্যাথা লাগছে।
বাড়িতে চল পল্তে পুড়িয়ে ছেঁকা দিয়ে দেবো, ঠিক হয়ে যাবে।
তুই আমাকে পুড়িয়ে মারবি।
টিনা মিলি আমার দুপাশে। হাসছে।
তোর একটুও ব্যাথা লাগছে না। তুই মনে মনে ভাবছিস তোর ওখানে ব্যাথা।
ওরা স্কুলের ভেতরে ঢুকে অবাক। নীপাকে বললাম একটু নবদাকে ডাকোনা।
ও অনি এটা তোদের হায়ার সেকান্ডারী স্কুল।
আমার সময় সেকান্ডারী পর্যন্ত ছিলো।
তুইতো কলেজে ইলেভেন-টুয়েলভে ভর্তি হয়েছিলি।
হ্যাঁ।
কি নিস্তব্ধ জায়গাটা না মিলিদি। নির্মাল্য বললো।
মিলি হুঁ বললো।
আয় আমার নাইন-টেনের বসার জায়গাটা দেখাই।
ওরা আমার পেছন পেছন গেলো। আমি ওদের ঘুরে ঘুরে সব দেখালাম। ওদের প্রশ্ন শেষ হয়না। আমি একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছি।
দেখলাম এখন বেঞ্চির সংখ্যা বেরেছে। আমাদের সময়ে তিনটে মাত্র বেঞ্চ ছিলো।
জানিস দেবা এটা তবু পদের, বুবুনের প্রাথমিক স্কুলটা দেখিসনি, ওখানে একটাও বেঞ্চ নেই মাটিতে বসতে হয়। মিত্রা বললো।
অনি একবার নিয়ে যাবি।
যাবো।
কোথায়রে অনি ? ছেলেটার খালি নাম শুনি চোখের দেখা একবার দেখি।
নীপার পেছন পেছন নবদা এলো।
আমি এগিয়ে গিয়ে নবদার পায়ে হাতদিয়ে প্রণাম করলাম।
নবদা আমার থুতনি ধরে চুমু খেলো। এইতো ঠিক আগের মতো আছে। একটু যা ঢ্যাঙা হয়েছে।
তুমি কেমন আছো নবদা।
আর নবদা। সাতকাল গিয়ে এককালে ঠেকলো। এদের চিন্তে পারলাম না।
আমি সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। শেষে মিত্রার সঙ্গে। নবদা মিত্রার থুতনিটা ধরে নাড়িয়ে দিলো। বেশ হয়েছে বউমাটি।
সবাই নবদার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। খালি গায়ে একটা গামছা পরে চলে এসেছে।
নবদা ল্যাবোরেটরি খোলা আছে।
হ্যাঁ চলে যা।
এদের একটু গ্রামের স্কুলের ল্যাবোরেটরি রুমটা দেখাই।
কি দেখবে বাপু একি আর শহরের স্কুলের মতো।
ওরা অনির সব কিছু দেখতে চায়।
দুটি মুড়ি খাবি।
না।
হ্যাঁগো নবদা খাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ও নীপা আয়তো মা একটু পেঁয়াজটা কেটে দিয়ে যা। সে কচিটা আসেনি আজকে।
মিলি আমার দিকে গোল গোল চোখে তাকালো।
টিনা বললো একন না। স্টক করো।
আমি হাসলাম।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম

খাই খাই করছিস, মুখ ধুয়েছিস।
তুই নিমদাঁতন দিয়েছিস।
দাঁড়া।
আমি হন হন করে স্কুলের পেছন দিকে চলে গেলাম। নিমডাল ভেঙে নিমদাঁতন তৈরি করে সবার হাতে হাতে দিলাম। নে চিবোতে আরম্ভকর। পেঁয়াজ কাটতে কাটতে দাঁত ঘষা হয়ে যাবে।
ল্যাবোরেটরিতে যাবিনা।
চিবোতে চিবোতে চল।
আমি ওদের ল্যাবোরেটরিতে নিয়ে এলাম। ল্যাবোরেটরি দেখে ওদের চোখ চড়কগাছ।
এটা কি ল্যাবোরেটরিরে!
এই ল্যাবোরেটরি ব্যবহার করে কতো ছেলে সাইন্সে ফার্স্ট ডিভিসন পাচ্ছে জানিস।
দেবা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
ওই বাক্সটায় কি আছেরে বুবুন।
মাইক্রোস্কোপ।
সেইটা।
কিগো মিত্রাদি নিশ্চই গপ্পো। মিলি বললো।
মিত্রা মাথা দোলালো।
দাঁড়াও আগে দেখে নিই। তারপর গপ্পোটা শুনবো। খোলো খোলো বাক্সটা।
আমি এগিয়ে গেলাম। বাক্সটা খুলে মাইক্রোস্কোপ বার করলাম।
কি ভাবে দেখতে হয়।
ওদের দেখালাম কোথায় চোখ রেখে কোথায় এ্যাডজাস্ট করে ব্যাপারটা দেখতে হয়।
ওরা যে যার নিজের মতো করে দেখলো।
আমাকে দেখাবিনা।
যা দেখে নে।
তুই চল।
আমি মিত্রাকে সঙ্গে করে মাইক্রোস্কোপের কাছে গেলাম। নে এখানে চোখ রাখ। মিত্রা রাখলো।
দুর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
তুইকি দু’চোখ খুলে দেখছিস।
হ্যাঁ।
দুর একটা চোখ এইভাবে বন্ধ কর। যেভাবে চোখ মারে সেই ভাবে ওকে দেখালাম।
আর একবার দেখা।
দেখালাম।
মিত্রা আবার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রাখলো।
বুবুন।
কি।
কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।
তোর দ্বারা হবেনা। আমার মতো তোরও গবেট মাথা। এবার রাখ চল মুড়ি খেয়ে বিদায় নিই।
আর একবার, আর একবার।
আবার ওকে রিপিড দেখালাম ভিউফাইন্ডারে চেখ রাখতেই এ্যাডজাস্ট করলাম।
কিরে দেখতে পাচ্ছিস।
হ্যাঁ এবার পাচ্ছি।
ছাড় অনেক হয়েছে।
দারুনরে জিনিসটা।
কাট। দেবাশীষ চেঁচিয়ে উঠলো।
মিলি ছুটে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। কি সুন্দর এ্যাকটিং করলে মিত্রাদি।
তারমানে। মিত্রার চোখে বিস্ময়।
নির্মাল্য সব মুভি করে রেখেছে।
দেবা কাছে এগিয়ে এলো।
জানিস অনি তোদের দুজনকে দেখে দত্তার বিজয়া আর নরেনের কথা মনে পরে যাচ্ছিল।
কি ফালতু বকছিস।
তুলে রেখেছি। চল টিনার ল্যাপটপে ভরে তোকে দেখাবো। কি নাইস লাগছিলো তোকে। একেবারে ইনোসেন্ট। আমি অদিতি চেষ্টা করলেও পারবোনা।
আমি মাইক্রোস্কোপ বাক্সে ভরলাম। দরজায় সেকল তুলে স্কুলের বাইরে বেরিয়ে এলাম।
তোদের এই মাইক্রোস্কোপ ছাড়া আর কিছু নেই।
ওই তো কয়েকটা স্পেসিমেন পরে রয়েছে।
ফিজিক্সের ল্যাবোরেটরি।
ওই একটা ঘরে সব। দেখলি না দেয়ালের ধারে একটা বস্তা আছে।
দেখলামতো।
ওর মধ্য ফিজিক্সের কিছু মাল পত্র আছে। কিছু টেস্ট টিউব রয়েছে একটা বার্ণার রয়েছে ব্যাশ আর কি চাস।
আমি যদি কিছু জিনিষ কিনে দিই।
থমকে দাঁড়ালাম। দেবার মুখের দিকে তাকালাম। সত্য়ি ও ভেতর থেকে বলছে।
দিলে খুবি ভালো। ছেলেগুলো পরে বাঁচবে।
আমি দেবো তুই ব্যবস্থা কর।
আমরাও যদি কিছু কন্ট্রিবিউট করি দেবাদা, তোমার অসুবিধে আছে। টিনা মিলি বললো।
একেবারে না।
তোরা কাকার সঙ্গে কথা বল। উনা মাস্টার এখনো পড়ায় স্যার ব্যবস্থা করে দেবে।
আজই কাকার সঙ্গে কথা বলবো। অনেক পয়সা নষ্ট করি। এখানে কিছু পয়সা নষ্ট করলে খতি হবেনা।
একে একে সবাই পুকুর ঘাটে মুখ ধুলাম। নীপাকে নিয়ে মিত্রারা এরি মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য হাওয়া হয়ে গেলো। নবোদা মুড়ি এনো দিলো। নিমেষের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেলো। চা খেলাম।
অনিদা ও অনিদা।
আবার কে ডাকেরে অসময়ে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি বিজয়।
কিরে তুই! জানলি কি করে আমরা এখানে।
বিজয় হাসছে। বড়মা পাঠালো।
তুই একা।
হ্যাঁ।

কিরে কে এসেছে। মিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
বিজয়ের দিকে তাকিয়ে মিত্রা হেসে ফেললো।
বড়মা বললেন তোমাদের নিয়ে যেতে।
কেনো আমরা যেতে পারবোনা।
তা বলতে পারবোনা।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। তোরা চলে যা, আমি নির্মাল্য দেবা পরে যাচ্ছি।
তুই আমাদের সঙ্গে চল।
মহা মুস্কিল।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। সরি। ওদের ডাকি।
যা ডেকে আন।
নবোদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। আসার সময় নবোদা হাতটা ধরে বললো, আবার আসিস।
এদিকে এলে অবশ্যই আসবো।
মিত্রারা সবাই ট্রলিতে চাপলো।
বিজয় ট্রলি চালাতে শুরু করলো।
আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো। ম্যাসেজ এলো। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।
দাঁড়াও দাঁড়াও বিজয়।
কিহলো দিদিমনি।
তুমি একটু থামোনা।
বিজয় থামালো।
মিত্রা ট্রলিথেকে নেমে ছুটে আমার কাছে চলে এলো।
দে একটু দেখি।
দেবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে জিজ্ঞাসা।
আমি ওর হাতে মোবাইলটা দিলাম।
অর্ক লিখেছে।
দাদা সকলা থেকে কাজ শুরু করলাম। আমার সঙ্গে দুটো চেলুয়াকে নিয়েছি। মনে কিছু করবেনা। ওরা তোমার কথা জানেনা। ঘুটি সাজিয়ে নিয়েছি। কাজ খুব স্মুথলি শুরু করে দিয়েছি। একটু আগে, আটটা দশ নাগাদ মিঃ ব্যানার্জী রাজনাথ বাবুর কাছে এসেছেন। গাড়ির নম্বর ডিএল জিরো টু সিক্স এইট নাইন ফোর। সঙ্গে একটা বড় ভিআইপি স্যুটকেস নিয়ে এসেছে। ভেতরে কি আছে খবর নিয়ে একঘন্টা পরে জানাচ্ছি।
পড়া শেষ হতে মিত্রা আমার দিকে তাকালো, খুশির ঝলক ওর চোখে মুখে। আমাকে জড়িয়ে ধরে চকাত করেঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নিলো।
দেবাশীষের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। নির্মাল্য মাথ নীচু করেনিলো। বুঝতে পারছি মিলি টিনারাও মিত্রার এই অস্বাভাবিক আচরণে একটু অবাক।
তুই কি করে আগে থেকে জানলি বল।
প্র্যাকটিশ।
আমাকে শিখিয়ে দে।
দেবো।
ছোট্ট মেয়ের মতো মিত্রা ছুটে চলেগেলো ট্রলির কাছে। একটু দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে, তাড়াতাড়ি আয় প্লীজ।
যা যাচ্ছি।
আমরা তিনজন হাঁটতে আরম্ভ করলাম। মাঠ পেরিয়ে পীরবাবার থান। ওখানে মিনিট খানেক দাঁড়ালাম, আমার পাশাপাশি ওড়াও দাঁড়ালো। জুতো খুলে ওখান থেকেই প্রণাম করলাম। দেবারাও প্রণাম করলো। উঠে আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
দেবা একটা সিগারেট দে।
অনি।
দেবা আমাকে সিগারেট দিলো। এখানকার ঘটনাটা সত্যি।
বলতে পারবোনা।
দেবা আমার দিকে তাকিয়ে।
বিশ্বাস কর শোনা কথা। তবে আমার বাবা দেখেছিলেন। বাবা এই স্কুলেরই মাস্টার ছিলেন।
রিয়েলি।
হ্যাঁ। আমার যখন চার বছর বয়স তখন বাবা-মা দুজনেই গত হন।
তারমানে তখন থেকে তুমি একা। নির্মাল্য বললো।
এইযে কাকা-কাকীমাকে দেখছিস এদের কাছে মানুষ।
এরা তোর নিজের কাকা-কাকীমা নন। মিত্রা বলছিলো।
বাবার বন্ধু। একি স্কুলে কাজ করতেন। পাশাপাশি বাড়ি করেছেন। জমিজমা সম্পত্তি সব একসঙ্গে। বলতে পারিস হরিহর আত্মা।
স্ট্রেঞ্জ।
সত্যি অনিদা তোমার সম্বন্ধে ভাষাভাষা জানতাম। তোমার যতো কাছে আসছি, তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
কেনো ? এটাও একটা জীবন।
হ্যাঁরে মিত্রা হঠাৎ ওরকম করলো।
আমি জানতাম তুই এই প্রশ্নটা করবি।
তুই কি আবার কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিস ?
হ্যাঁ।
বলবিনা।
না। খালি মিত্রাকে কাল রাতে শুয়ে শুয়ে বলেছি। মিলিয়েও দিয়েছি। তাই মিত্রা ইমোশন্যালি ঘটনাটা ঘটালো। ও কাল রাতে বিশ্বাস করতে পারেনি।
আমাদের সঙ্গে একটু শেয়ার কর, এখনতো কেউ নেই।
জানতে পারবি। না জানলে মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আন্ডার প্রসেস।
অনিদা যখন বলতে চাইছেনা তখন ডিস্টার্ব করোনা। নিশ্চই গুরুত্ব পূর্ণ কিছু।
আমরা মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখনযে মোরাম রাস্তায় এসে পরেছি বুঝতে পারিনি।
অনিদা এই রাস্তায় কাল আমরা এসেছিনা।
হ্যাঁ।
ওইতো সেই ক্যালভার্টটা।
চিনতে পেরছিস।
দেবাদা দেখো অনিদার স্কুলটাকে কেমন ছোটোছোটো লাগছে।
দেবা পেছন ফিরে তাকালো।

সত্যিতো। অনি কতটা রাস্তা হবেরে।
প্রায় তিন কিলোমিটার।
তারমানে সকাল থেকে প্রায় সাত কিলোমাটার হাঁটা হয়া গেলো।
হ্যাঁ।
গড়িয়া থেকে আমার অফিস! শালা কিছুই বুঝতে পারলামনা।
হাসলাম। শ্মশানে যাবি।
চল, এসেছি যখন ঘুরেই যাই।
মোরাম রাস্তা পেরিয়ে আবার খেতের আইল পথ। শরু রাস্তা। দু’পাশের খেতে কলাই শাক বোনা হয়েছে সবুজ হয়ে আছে খেতগুলো।
দাঁড়া একটা ছোট্ট কাজ করে নিই।
কি করবি।
দাঁড়ানা দেখ।
আমি কলাই খেতে নেমে পড়লাম বেছে বেছে কলাই শাক তুলতে আরম্ভ করলাম। আমার দেখা দেখি দেবাশীষ খেতের আইল থেকে মাঠে নেমে এলো।
কিভাবে তুলবো দেখিয়ে দে। আমরাও কিছুটা তুলে কোঁচড়ে ভরি।
হাসলাম। ওদের দেখিয়ে দিলাম। খালি ডগটা তুলবি না হলে গাছ মরে যাবে।
ওরে অনি এতো চা পাতা তোলার মতো কেশ। শিলিগুড়িতে চা বাগানে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম।
হ্যাঁ। খালি কচি কচি পাতাগুলো তুলবি। যে গাছে ফুল আছে। ওই অংশগুলো বাদ দিস।
বেশ কিছুক্ষণ কলাই শাক তুললাম। তিনজনেরই পাঞ্জাবীর কোঁচর ভরে গেছে।
কি করবি।
ভাজা খতে দারুণ লাগে।
চল সুরমাসিকে গিয়ে বলতে হবে।
আমরা খেত থেকে উঠে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে শ্মশানে এলাম।
বেশ লাগছে, বুঝলি অনি। কলকাতায় এই ভাবে রাস্তা দিয়ে হাঁটবো কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা।
কলকাতায় তুমি এরকম রাস্তা পেয়েছো যে হাঁটবে।
দেবা নির্মাল্যের কথায় হো হো করে হেসে ফেললো।
কেনো। দুর্গাপূজোর সময় থিম হিসাবে গ্রাম দেখিসনা।
দূর কার সঙ্গে কার তুলনা করছো। ওটা কৃত্রিম এটা প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি।
তোর কি হয়েছে বলতো।
কেনো!
সকাল থেকে সাহিত্য ঘেঁষা কথা বলছিস।
মনটা খালি বলছে কিছু লিখি।
চল মিলিকে খবরটা দিতে হবে।
এইতো তুমি হ্যাজাতে আরম্ভ করলে।
এইযে জঙ্গল মতো জায়গাটা দেখছিস এটাই শ্মশান।
মড়া পোরানো হচ্ছে কোথায় ?
দূর এখানে কি সব সময় পোরানো হয় নাকি।
তাহলে।
তুই কি এটাকে নিমতলা শ্মশান পেয়েছিস।
তবে কি দেখবো।
তুই একটা মিথকে দেখতে এসেছিস। দেখেছিস ধারে কাছে কোনো বসতি আছে।
না।
কোনো চাষের খেত আছে।
না।
কেনো বলতো।
কেনো।
এখানে ভূত আছে। চাষ করলে মানুষকে মাঠে এসে কাজ করতে হবে। যদি ভূত ধরে।
তুই কিন্তু সব ডেঞ্জার ডেঞ্জার কথা বলছিস।
কেনো ছোটো হয়ে গেছে এরি মধ্যে।
বাচ্চা ছেলেটার সামনে যাতা শুরু করে দিয়েছিস।
ভেতরে যাবি ? না এখান থেকে পালিয়ে যাবি ?
না মানে....।
তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো দেবাদা, আমি অনিদা একটু ঘুরে আসি।
ঢেমনা।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
চল তাহলে।
চল, যা থাকে কপালে।
আমরা শ্মশানের ভেতরে ঢুকলাম।
চারিদিকে পোরাকাঠের ছড়াছড়ি। দেখে মনে হচ্ছে আমি শেষবার যখন এসেছিলাম তার পর কেউকে আর পোরানো হয়নি। যেমনটি দেখে গেছিলাম তেমনটিই আছে। গাছের পাতায় বাতাসের স্পর্শে সোঁ সোঁ আওয়াজ হচ্ছে।
আমি ধীর পায়ে পুকুর পারের বট গাছটার তলায় এসে দাঁড়ালাম। চারিদিক নিস্তব্ধ। একবার ওপরে দিকে তাকালাম। সেই একইভাবে বটের ঝুড়িগুলো নিচে নেমে এসেছে। মনে মনে বললাম, মা তোমার ছেলের শহুরে বন্ধুরা তোমায় দেখতে এসেছে। দেখতে পাচ্ছ। তোমার ছেলের বউ-এর মুখ দেখেছো মা ? দেখোনি। দেখি তাকে আনতে পারি কিনা। ভয় পায় মা ও। আসতে চায় না। রাগ কোরোনা। আমিতো আসি তোমার কাছে।



বুঝতে পারলাম মনটা ভারি ভারি হয়ে এলো। বুঝতে পারছি চোখটা ছল ছল করে উঠলো। কোঁচর থেকে দুটো কলাই শাক বটগাছের তলায় রাখলাম। পুকুর থেকে এক মুষ্টি জল এনে কলাই শাকের ওপর ছড়িয়ে দিলাম।
আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে। চোখের পলক পরছেনা।
অনিদা।
নির্মাল্যের দিকে তাকালাম। চোখ দুটো ছল ছল করছে।
এইখানে মাসীমাকে.....।
মাথা দোলালাম।
নির্মাল্য হাঁটু মুরে বসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলো। দেবাশীষ স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে চোখ মুছলাম।
মনখারাপ করিস না।
তুমি এখানে একা একা আসো।
হ্যাঁ। গলাটা ভারি ভারি।
তোমার সঙ্গে কেউ আসেনা।
না।
তোমার বন্ধুরা।
ওরা ভয় পায়।
রাতের বেলাও একা আসো।
হ্যাঁ।
ওই দিকটা কি আছে অনিদা।
জঙ্গল হয়ে আছে। সাপ শেয়ালের বাসা।
এখানে কেউ আসেনা।
আসে। কেউ মারা গেলে গাঁয়ের লোকরা দাহ করার জন্য আসে।
জায়গাটা কি নিরিবিলি।
বিকেল বেলা এলে আরো ভালো লাগে। ঠিক সন্ধ্যের সময়টা যখন পাখিরা বাসায় ফেরে চারিদিকে কিচির মিচির শব্দ তখন আরো ভালো লাগে।
আমাকে একবার নিয়ে আসবে।
আসবি।
তুমি নিয়ে এলে, আসবো।
এইগুলো একটু তোর কোঁচরে নিয়েনেতো নির্মাল্য।
নির্মাল্য পাঞ্জাবীর কোঁচরটা খুললো। দেবাশীষ সমস্ত কলাই শাক ঢেলে দিয়ে, জুতো খুলে পুকুর ঘাটে নামলো। হাতপায়ে জল দিয়ে মুখটা ধুলো। তারপর বটগাছের তলায় এসে প্রণাম করলো।
তোরা একটু এখানে দাঁড়া আমি আসছি।
যা।
আমি সামনের ঝোপের আড়ালে চলে গেলাম। ওখানে দইআঁতি পাতার গাছ আছে। অনেকটা দইআঁতি পাতা তুললাম। মোবাইলে সমানে ম্যাসেজ এসে যাচ্ছে। খুলে দেখতে আর ভালো লাগছেনা। ওদের কাছে এসে দেবাশীষের কোঁচরে সমস্ত দই আঁতি পাতা দিয়ে দিলাম। খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে বাড়ির পেছন পাশ দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। দেবাশীষকে বললাম তুই নির্মাল্য ওই বাড়িতে যা।
তুই যাবিনা।
না।
কেনো শুধু শুধু মন খারাপ করছিস।
আমি হন হন করে খিড়কি দরজা দিয়ে ওপরে চলে এলাম। ঢোকার সময় একটা হৈ হৈ আওয়াজ কানে এলো। বুঝলাম নির্মাল্য আর দেবাশীষকে দেখে ওরা হৈ হৈ করে উঠলো। আমার কিছু ভালো লাগছে না। হঠাৎ আজ কেনো মার কাছে গিয়ে কেঁদে ফেললাম। আমিতো যখনই সময় পাই ওখানে যাই। কখনো সবাই জেনে যায় আমি গেছি। কখনো জানতে পারে না।
নিজের ঘরের দরজাখুলে ভেতরে ঢুকলাম। বুকের ভেতরটা ভীষণ ষন্ত্রণা করছে। আলমাড়িটা খুললাম। মায়ের বাক্সটা বার করলাম। ছবিটা হাতে নিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলামনা ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললাম। কতোক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছি জানিনা।
বুবুন।
মিত্রার ডাকে ফিরে তাকালাম।
আমার একেবারে পেছনে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। মিত্রাও কাঁদছে। কখন এসে দাঁড়িয়েছে জানিনা।
আজও আমাকে মার কাছে নিয়ে গেলিনা। মাথাটা নীচু করলো।
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলাম। চোখের জলের বাঁধ মানছে না।
কাঁদিস না। তোকে মন খারাপ করতে দেখলে কারুর মন ভালো থাকে না। ও বাড়িতে সবাই বসে আছে।
তুই যা। আমি একটু একা থাকি। ঠিক হয়ে যাবে।
মিত্রা আমার মুখের দিকে ভাসা ভাসা চোখে তাকালো। কেনো গেলি।
দেবারা যেতে চাইলো।
মিত্রা আমার চোখে আঙুল ছোঁয়ালো। তুই কাঁদলে আমার মন ভালো থাকে ?
ঠিক আছে আর হবেনা।
ও বাড়িতে চল।
আমি একটু বসি। তুই একটু চা খাওয়াবি।
ওদের ডাকি।
নিয়ে আয়।
তুই একটু মুখে চোখে জল দিয়ে নে। চোখদুটো কেমন ফুলিয়ে ফেলেছিস।
মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।

পায়ের ব্যাথা কমেছে।
হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা কি বলেছে জানিস।
কি।
তুই ডাক্তারদাদার ভাত মেরে দিবি।
হাসলাম।
মায়ের ফটোটা তুলে রাখ।
আমি মিত্রার কথা মতো ফটোটা ঠিক জায়গায় রেখে আলমাড়িটা বন্ধ করলাম।
আমি চা নিয়ে আসি।
আয়।
মিত্রা বেরিয়ে গেলো। আমি মুখটা ভালো করে জল দিয়ে ধুলাম। ঘরে এসে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছলাম। সিঁড়িতে ধুপ ধাপ আওয়াজ পেলাম। কেউ দৌড়ে আসছে। তাকাবার আগেই চিকনা ঘরে এসে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
দেখলাম বাসু অনাদি পলা সঞ্জীব দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। ওদের মুখটা ভারি। আমার মুখের দিকে তাকিয়েই মাথাটা নীচু করে নিলো।
তুই মন খারাপ করলে আমরা কোথায় যাবো। তোকে নিয়ে যে আমাদের অনেক স্বপ্ন।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি। ওদের মুখ বলে দিচ্ছে ওরা কষ্ট পাচ্ছে।
আয় ভেতরে আয় ওখানে দাঁড়িয়ে রইলি কেনো।
চিকনা আমাকে ছেড়েদিলো। আমি খাটের ওপর বসলাম। ওরা যে যার মতো করে বসলো। আমার একপাশে বাসু একপাশে অনাদি।
আমি মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো এক ঝলকে দেখেনিলাম। বুঝলাম অর্ক ঠিক ঠিক ভাবে কাজ এগোচ্ছে।
ওদের দিকে তাকালাম। সবাই চুপ চাপ বসে আছে।
চিকনা একটা সিগারেট খাওয়াবি।
বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করলো।
আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি হেসে ফেললাম।
এই হচ্ছে রিয়েল অনি। আর একবার হাস।
তুই সিগারেটের প্যাকেট পকেটে রাখছিস।
তোর মতো, ইচ্ছে হলে খাই, না হলে খাইনা।
আমি একটা বার করে অনাদির হাতে দিলাম।
বাসু তুই একটা বার করে নে আমি সঞ্জু পলা কাউন্টার করে নেবো।
আমি অনির কাউন্টার নেবো। আগে বলে দিচ্ছি একেবারে ঝামেলা করবি না। সঞ্জু চেঁচিয়ে উঠলো।
ঝামেলা করতাম কিন্তু এখন করবো না। ডিউ স্লিপ রইলো।
কখন বেরিয়েছিলি। অনাদি বললো।
সকালবেলা।
না। আরো আগে।
হাসলাম।
আজও অপকর্ম করেছিস।
কে বললো।
ম্যাডামদের পেটে কিছু থাকে।
হৈ হৈ করে সকলে ঘরে ঢুকে পরলো। ঘর ভরে গেলো। মিলি এসে আমার পায়ের কাছে বসলো।
টিনা একটু ধরতো। মিত্রা বললো।
টিনা চায়ের ট্রেটা ধরে মিট সেফের ওপর রাখলো।
মন ভালো হয়েছে। মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলো।
আমি মিলির মুখটা ধরে গালটা টিপে দিলাম। মন খারাপ হয়নি, হঠাৎ লোড শেডিং হয়েগেছিলো।
তাহলে, কি বলেছিলাম। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো।
কি বলেছিলি! সঞ্জু খেঁকিয়ে উঠলো।
কাল রাতে তোর জেনারেটর ফেল করেছিলো।
সঞ্জু নিমেষের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে জলন্ত সিগারেটটা চিকনার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, দেবো মুখ পুরিয়ে। দেখতে পাবি।
ম্যাডাম আপনি সাক্ষী রইলেন। দুই নম্বর হলো। মনে রাখিস।
আবার কথা।
মিলি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছিলো।
মিত্রা মিটসেফের কাছ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো মিলি ভয় পাসনা। মানিকজোড় সারাদিন এরকম খেয়ো-খেয়ি করে। আবার একজন আর একজনকে দেখতে না পেলে বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।
চিকনা মিলির দিকে তাকিয়ে বললো। ম্যাডাম মিছে কথা বললো।
মিলি চিকনার কথা বলার ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে ফেললো।
ম্যাডাম একটু গরম জল দেন মুখটা ধুই। চিকনা চেঁচালো।
শুধু বুবুনের জন্য।
তাই দেন আমি কাউন্টার মারবো।
আমিও আছি। সঞ্জু বললো।
সিগারেটে তুই ফার্স্ট আমি সেকেন্ড। চায়ে তুই সেকেন্ড আমি ফার্স্ট।
অনাদি তুই সাক্ষী রইলি আমি যেনো পাই। সঞ্জু বললো।
আমি নেই এর মধ্যে।
অনিদা কি খাবে। তোমাদের যদি দিয়ে দেয়। মিলি বললো।
খালি কাপটা দিলেই যথেষ্ট, ধুয়ে ভাগ করে নেবো।
মিলি আর থাকতে পারলোনা। হাসতে হাসতে আমার কোলে মাথা রাখলো।
কিছু বুঝলি মিলি। মিত্রা বললো।
ওরা সবাই হাসছে।
আমার ফোনটা ঢং ঢং করে বেজে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
মিলি ফোনটা নিয়ে আয়তো।
মিত্রার কথায় দেবাশীষ ফিক করে হেসে ফেললো।
তুই হাসলি কেনো।
প্রাইভেট ম্যাসেজ দেখছিস কিনা।

তোর কি।
দেবাশীষ হাসছে।
টিনা তোরা একটু ওগুলো দিয়ে দে সবাইকে। আমি এখুনি আসছি।
মিলি আমার পায়ের কাছ থেকে উঠে মিটসেফের কাছে চলে গেলো।
টিনা মিলি অদিতি সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
তুমি কিছু খাবেনা অনিদা। টিনা বললো।
ভালো লাগছেনা।
আমরা তোমার তুলে আনা শাক ভাজা দিয়ে পান্তা খেলাম। দারুন।
তুই কলাই শাক কার খেত থেক তুললি ? অনাদি বললো।
কেনো শ্মশানে যেতে গিয়ে ডান দিকের খেতটা।
খেয়েছে। চিকনা বললো।
কেনো!
হায়রে। কাঞ্চন মাসির খেত। জানতে পারলে বুড়ি মরা বাপকে জ্যান্ত করে দেয়। তবে তুই তুলেছিস জানলে। মাটিতে মুখ ঘোষে রক্ত বার করে দেবে।
তার মানে! দেবাশীষের চোখ বড় বড়।
বুঝলেন না।
টিনা আমাকে চায়ের কাপ দিতে এসে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরেছে। চিকনার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
না।
অনিকে মাসি খুব ভালবাসে। না জেনে গালাগাল করবে, সাপ সাপান্তর করবে। যেই জানবে অনি তুলেছে। অমনি যেই মুখ দিয়ে গালাগাল দিয়েছে সেই মুখটা মাটিতে ঘসবে। সে এক ব্যাপার, ঘটনা ঘটলে জানতে পারবেন।
ও স্যাট। টিনার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো।
হ্যাট না ম্যাডাম হক কথার এক কথা।
ম্যাডাম ইংরাজী বলেছে। বাসু বললো।
খমাদেন ম্যাডাম ইংরাজী বুঝিনাই ভুল ভাল বলে ফেলেছি।
মিলি চিকনার কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেললো।
আমি চায়ের কাপটা চিকনার দিকে এগিয়ে দিলাম।
মনে রাখিস, আমি এখানে বসে আছি। সঞ্জু বললো।
বিকেলেরটা নিস।
দেবাশীষ চিকনার কীর্তি দেখে হো হো করে হেসে ফেললো।
কি পলাবাবু চুপচাপ যে।
তোকে নেমন্তন্ন করতে এসেছি।
আমাকে! কেনো ?
কাল যাত্রা কালীপূজো উপলক্ষে একবার আসবি।
কখন ?
সন্ধ্যে বেলা।
টিনা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশারায় বলছে যাবো, তুমি বলে দাও। মিলিও একি কথা বলছে।
বাসু ফিক করে হেসে ফেললো।
কিরে পলা তুই ম্যাডামদের নেমন্তন্ন করলিনা।
অনি গেলে ওনারাও যাবেন। লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো।
সেগগগগগগগ।
সঞ্জু চিকনার মুখটা চেপে ধরলো চিকনা গোঁ গোঁ করছে।
এই জন্য বলে চাষা। সঞ্জু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
চিকনা আমার দিকে মুখ করে ফিক করে হেসে ফেললো। এই কান মুলছি দেখিস আর হবেনা।
নীপাকে ডাকবো। অনাদি বললো।
ডাকিসনা, ঝেঁটিয়ে বিষ ঝেরে দেবে।
দেবা হাসছে।
খুব জোর আড্ডা মারছিস। ইসলামভাই ভেতরে এলো।
এসো গুরুদেব তুমি আমার পাশে। চিকনা সোফা থেক উঠে দাঁড়ালো। ইসলামভাই এসে বসলো। মিত্রা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।
বুবুন ইসলামভাই চুরি করে দেখে ফেলেছে।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
দেখে কি করবো বল, ওটা আমার হাতের বাইরে। তোর সঙ্গে পাল্লাদিতে পারবোনা।
আমি তাকিয়ে আছি।
তাকাসনা। সত্যি বলছি। কালকে থেকে দামিনী অনেক জ্বালিয়েছে। কোনো কথার উত্তর দিতে পারিনি। আজকে কিছুটা অন্ততঃ বলতে পারবো।
ঘরের সবাই হাঁ করে আমার আর ইসলামভাই-এর কথা শুনছে।
সন্দীপ ফোন করেছিলো। তোর কথা মতো কাজ হয়ে গেছে। মিত্রা বললো।
তুই এক ঢিলে সব পাখি মারবি।
এক ঢিলে একটাই মরবে। বাকি সব প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যাবে। ওই তল্লাটে আর বাসা বাঁধবেনা।
দারুণ বললি কথাটা। অদিতি স্টক করো। কলকাতায় গিয়ে ছাড়তে হবে।
দেবাদা, অনির কথা লেখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। চিকনা বলে উঠলো।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
মামনি আমি একটু পাবোনা।
ফ্লাক্সে আছে। টিনা একটু ঢেলে দে।

এইবার ভাইদা আর অনি। আমরা কেউ খাবোনা। চিকনা বললো।
কাউন্টারও পাবিনা। সঞ্জু বললো।
বড়দের কথার মাঝখানে ফুট কাটিস কেনো।
সঞ্জু সজোরে একটা ঘুসি মরলো চিকনার পিঠে। ভাইদাগো মরে গেলাম।
সবাই হেসে উঠলো।
দুজনে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো।
আরে আরে করছো কি। ইসলামভাই বলে উঠলো।
মনে রাখিস এ অপমান আমি সইবোনা। রাতে যদি জেনারেটর বিগড়োয় তুলে নিয়ে গিয়ে পচা পুকুরের জলে।
সঞ্জু আবার কিল তুলেছিলো ইসলামভাই ধরে নিলো।
মিত্রা টপকে টপকে চলে এসে আমার আর দেবার মাঝখানে বসে পরলো। আমার হাতে মোবাইলটা ধরিয়ে দিলো।
গুরু আমার একটা আর্জি রাখবে। চিকনা আস্তে করে বললো।
আমি চিকনার দিকে তাকালাম।
নির্মাল্যদার নামটা একটু ছোটো করে দেবে।
কেনো।
দাঁত খুলে যাচ্ছে।
দেবা খিক খিক করে হেসফললো।
নির্মাল্য দেবার দিকে তাকলো।
তাকাচ্ছিস কিরে চোখ গেলে দেবো। মিলি বললো।
অনিদা তুমি মার্ক করো ব্যাপারটা। নির্মাল্য বললো।
নিমু বলবি।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই, চিকনা আমার পায়ে আঙুল ঠেকিয়ে জিভে আঙুল ঠেকালো।
কিহলো ?
ধুলো খেলাম।
কেনো ?
ইনেসটানট।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
টিনা চায়ের কাপ নিয়ে এগিয়ে এলো। আমি এক কাপ ইসলামভাই আর একটা কাপ টিনার হাত থেকে নিলাম।
ম্যাডাম তলানি কিছু আছে।
চিকনার কথায় টিনা একবার তাকালো।
তুই ওর কথা বুঝতে পারলিনা। ইসলামভাই বললো।
না।
এবারের কাউন্টার সঞ্জু নেবে চিকনা কি পাবে।
ও হরি টিনা হো হো করে হেসে ফেললো।
সেদিনকার কথাটা বলবো বুবুনকে। মিত্রা বললো।
আমি তাহলে আত্মহত্যা করবো।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো।
তুই কি পাতা তুলে এনেছিসরে। ইসলামভাই বললো।
কেনো।
ওবাড়িতে বড়দি আর ডাক্তারবাবু ফাটা ফাটি করছে।
সঠিক নাম বলতে পারবোনা। ছোটবেলা থেকে শুনেছি দই আঁতি পাতা।
ভাজা খায়, না রস করে খায়।
রস করে চিনি মিশিয়ে একটা বাটিতে রেখে দিলে দই-এর মতো বসে যাবে। তারপর দই যেমন করে খায় সেই ভাবে খাও।
ডাক্তারবাবু বলে ভাজা খাবো। নীপা বলে রস করে খেতে হয়। বড়দি বলে অনি আসুক এ বাড়িতে তরপর হাত দিবি।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
কইগো অনিবাবু মন ভালো হলো।
ডাক্তারদাদা ঘরে পা রাখলেন।
আরি বাবা এতো মহাআড্ডা। বসার জায়গা নেই।
আসুননা ভেতরে ঠিক জায়গা হয়ে যাবে। ইসলামভাই বললো।
আমি একা নয়।
আ মরণ গোঁতা মারো কেনো। বড়মার গলা।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। অনাদি বাসুর দিকে ইশারা করলো চল এখন কেটে পরি। ওরা শুর শুর করে বেরিয়ে গেলো।
তোমরা কোথায় যাচ্ছ। ডাক্তারদাদা বললো।
কাজ গুলো একটু সেরে ফেলি।
অনিবাবু তুমি কিন্তু একটা অন্যায় কাজ করেছো। আমার খেঁজুর রস খেয়ে নিয়েছো।
আমি মাথা নীচু করলাম।
অনিদা একা নয়। মিলি টিনা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো।
দেখছো বান্ধবী পথও আটকাবে আবার চোখও রাঙাবে।
ও কোনো অন্যায় করেনা। বড়মা বললো।
তুমি পারবেনা ডাক্তার।
কথা বলতে বলতে দাদা ঘরে ঢুকলো। পেছন পেছন বড়মা ছোটমা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা।
বড়মা ছোটমা আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। আমি এগিয়ে গালাম। একসঙ্গে দু’জনকে জড়িয়ে ধরালাম।
ছোট তুই এবার রাগ করতে পারবি।
ছোট আমার থুতনিটা ধরে একটু নাড়িয়ে দিয়া মাথা নরলো।
আমি দুজনকে ধরে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। দাদা মল্লিকদা ডাক্তারদা সোফায় নিরঞ্জনদা চেয়ারে। ওরা কেউ খাটে বসলো কেউ চেয়ারে।
হ্যাঁরে তুই যে সকাল বেলা ওদেরকে নিয়ে ওখানে গেলি, জানিস জায়গাটা ভালো নয়।
ও গল্প আবার তোমাকে কে দিলো।
তোর কাকা।
কাকাকে জিজ্ঞাসা করোনি কেনো জায়গাটা খারাপ।
তা কি করে বলবো।
কাকা বলেছে জায়গাটা খারাপ। আমি বলছি জায়গাটা ভালো। প্রমাণ করতে পারবে ভালো কোনটা খারাপ কোনটা।
এই তুই আবার তর্ক শুরু করলি।
কেনো ওতো ঠিক কথা বলেছে। তুমি যুক্তি দিয়ে উত্তর দাও। দাদা বললো।

আবার সাউকিরি করে।
এডিটর তুমি পারবেনা। অনি পারবে। বল বাবা বল একটু শুনি। সকালথেকে অনেক গালমন্দ খেয়েছি।
ওই গাছটা চিকনাদের।
ওটা ইজমালি গাছ।
সেটা আবার কি।
সর্বসাধারণের।
সে কি করে হয়।
খাস জমির ওপর গাছ। তাই সকলের।
খাস জমিটা আবার কি।
খাস মানে খাস। কারুর নামে জমিটা নেই।
তুই জানতিস।
হ্যাঁ। না জানার কি আছে। সকলে জানে।
চিকনাযে বললো।
ও না যেনে বলেছে।
ওখানে প্রচুর বিষধর সাপ আছে।
সে থাকতে পারে। আমাদের ওই পুকুরেই আছে।
আমি তাহলে আর পুকুরে নামছিনা। মিলি বললো।
কেনো!
যদি কামরায়।
ওদেরও ভয় আছে। ওরা ভয় পেলে কামরায়। তুমি ভয় না দেখালেই হলো।
মিত্রাকে জোঁকে কামরালো।
সেতো ওর জন্য।
আমার জন্য। না ? দিলো আমার পিঠে গুঁতো।
দেখলে দেখলে। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। তুই ওখানে কি করতে গেছিলি।
আমি বড়মাকে বলেছি। তোর মতো চেপে যাইনি।
বুড়ো বয়সে প্রজাপতি......।
সবাই আবার হেসে উঠলো।
হ্যাঁরে অনি আজ কাগজটা দেখেছিস।
না।
তোর কাগজের প্রতি কোনো টান নেই।
কাল রাতে দেখেছি।
তার মানে।
সন্দীপের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। জেনে নিলাম।
কি এডিটর উত্তর পেলে। তোমার থেকে অনেক এ্যাডভান্স।
মোবাইলটা আবার ম্যাসেজের সিগন্যাল দিলো। মিত্রা ছোঁ-মেরে মোবাইলটা নিয়ে নিলো। ইসলামভাই ছোটমাকে সরিয়ে খাটে উঠে মিত্রার পাশে বসলো।
সবাই ওদের দিকে তাকালো।
দেবাশীষ হাসছে।
ডাক্তারদাদা তোমায় একটা কথা বলবো।
বল।
তোমায় যদি কিছু চাই দেবে।
আমার দেবার কিছু নেই। শুধু ওই বাড়িটা পরে আছে।
আমি যা চাইবো চেষ্টা করলে দিতে পারবে।
বল একটু শুনি।
মিত্রার নার্সিংহোমগুলোর একটু দায়িত্ব নিতে হবে।
ডাক্তারদাদা আমার চোখে চোখ রাখলেন। সবাই আমার কথা শুনে নড়ে চড়ে বসলো। ইসলামভাই মিত্রা আমার মোবাইলের ম্যাসেজ গোগ্রাসে গিলছে। ছোটমা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

তোর চালটা কি দুর্দান্ত হয়েছেরে অনি। ইসলামভাই আমার পিঠে চাপর মারলো।
আমি ফিরে তাকাতেই ইসলামভাই সরি বলে চুপ করে গেলো।
ও আবার কি চাল দিয়েছেরে মুন্না। ছোটমা ইসলামভাইকে জিজ্ঞাসা করলো।
সবার দৃষ্টি এখন ইসলামভাই-এর দিকে। মিত্রা মাথা নীচু করে।
মল্লিকদার চোখ ছোট ছোট। নিরঞ্জনদা হাঁ করে আছে।
না কিছুনা।
তোরা দুজনে অনির মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি করলি।
ইসলামভাই মিত্রা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
আরে বাবা কিছু হয়নি। খালি তোমাদের সন্দেহ।
তাহলে ওরকম আহ্লাদে নেচে উঠলি।
ঠিক, ঠিক বলেছে ছোট। দাদা বললো।
আমার দিকে তাকিয়ে। কিরে আবার ওখানে গন্ডগোল পাকিয়েছিস।
আমি কেনো পাকাতে যাবো! সামন্ত ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে। ডাক্তারদাদা আমার প্রশ্নের উত্তরটা।
ছোট এখন থাম, ওটা পরে দেখছি। বড়মা বললো।
তুই না ভেবে আমাকে বলছিসনা এটা আমি ভালো করে জানি। তুই কি ভেবেছিস বল।
এই তোমার প্রশ্নের উত্তর।
বান্ধবী তোমরা ওকে কতটুকু চেনো আমি জানিনা। তবে এই কদিনে আমি ওকে হারে হারে চিনেছি।
ও ছোট সামন্ত কি বলেরে।
তুই আমাকে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান করেছিস। তোর এই বন্ধুদের তুই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস। তারও একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান আছে। তুই এমনি এমনি ওদের শুধু ঘুরতে নিয়ে আসিসনি। তুই বড় সাংঘাতিক। রথ দেখা কলা বেচা দু’টোই করবি।
আমি মাথা নীচু করে রইলাম। মনে মনে বললাম ডাক্তারের পাকা মাথা। মুখ তুললাম ডাক্তারের দিকে তাকালাম।
তুই আমার দিকে যতই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাক, তোর মাথাটা একলক্ষ মাইলে গতিতে দৌড়চ্ছে। তোর চোখ বলছে। আমি ডাক্তার। চল্লিশ বছরে অন্ততঃ চল্লিশ লক্ষ রোগীর চোখ দেখেছি। আমাকে ফাঁকি দিতে পারবিনা।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
তুই আগে তোর রোগটা বল, আমি তারপর ওষুধ দেবো।
বুঝতে পারছি সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম, শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি হচ্ছে আমরা সবাই নিরব দর্শক। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks