দেখি নাই ফিরে - (Part-35)

আমি মাথা নীচু করে বসে খেয়ে যাচ্ছি, ওরা কখনো অবাক হয়ে যাচ্ছে কখনো বিস্ময়ে কাকার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, নীপা মাঝে মাঝে মাথা নীচু করে আমার মুখ দেখার চেষ্টা করছে।
আচ্ছা কাকা তেল পেঁয়াজ মেখে ভাত খাওয়াটা কার কাছ থেকে শিখলো বলোতো। মিত্রা বললো।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
বড়মা বললো তুই থামবি।
আঃ তুমি দাঁড়াও না, ওর সব কিছুর মধ্যে একটা ইতিহাস থেকে, কি বেরোলো তো।
বড়মা বললেন, মুখপুরী।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসলাম
হাসছিস এবার তোর কলেজের গুনকীর্তনটা বলি সবার সামনে।
ছোটোমা বললেন, মিত্রা ওই গুলো বলিস না।
সবাই এ ওর মুখের দিকে তাকায়।
বড়মা বললেন তোরা কি আরম্ভ করেছিস বলতো ছেলেটাকে খেতে দিবিনা না কি।
দেখলে, দেখলে ছোটোমা, অমনি ছেলেটাকে খেতে দিবিনা না কি। মুখ ভেঙচে।
মিত্রা গম্ভীর হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মনে রাখিস তোলা থাকলো, কালকে মাছ ধরাটা শিখিয়ে দিবি।
সবাই হেসে গড়িয়ে পরলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, কাল রাতের কথা মনে রাখিস, বড়মাকে সব বলিনি, খালি ছুঁয়েছি, এবার ঝেড়ে কাশবো।
প্লীজ প্লীজ আর হবে না তুই বিশ্বস কর, আমি উইথড্র করছি। বেশ শোধ-বোধ।
আবার হাসির রোল উঠলো।
ইসলামভাই খেতে খেতে পা ছড়িয়ে দিয়েছে। অনাদিরা হেলে হুলে বসে আছে। ভজু আমার পাতের সামনে, আমি যা রেখে যাবো, ভজু খাবে।
বড়মাকে বললাম এবার ওঠো, একটু গড়িয়ে নাও দুজনে তারপর বেরোবো, নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম, নীপা মুন্নাভাই-এর বিছানাটা একটু গুছিয়ে দাও, একটু গড়িয়ে নিক।
বড়মা আমাকে বললেন ও অনি একটু টেনে তোল।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
বড়মা আমাকে বলে নি তোকে বলেছে, দেখছিস না আঙুল চাটছি।
তুই পারিসও বটে।
আমি বড়মাকে ধরে তুললাম।

 

আমি হাতমুখ ধুয়ে নিজের ঘরে এলাম, অনাদিরা বললো, আমরা একটু বাজার থেকে ঘুরে আসি, তাড়াতাড়ি আসিস বিকেলে য়েতে হবে, বড়মার হুকুম বুঝেছিস তো, বাসু হাসতে হাসতে বললো, মনে থাকবে না মানে, হেডমিস্ট্রেস বলে কথা।
হেসেফেললাম
হ্যাঁরে অনি। অনাদি বললো।
কি।
মুন্নাভাই বলছিলো আমাদের সঙ্গে যাবে নিয়ে যাবো।
হ্যাঁ।
তুই রাগ করবি না।
না।
তাহলে মুন্নাভাইকে ডাকি।
যা।
আমি ওপরে চলে গেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম, জানলার কাছে হেলে বসলাম, সিঁড়ি দিয়ে ধুপ ধাপ আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম কেউ আসছে। ভজুরাম এসে ঘরে ঢুকলো। অনিদা।
কি হলো রে।
তোমাকে দাদা একবার নিচে ডাকছে।
কোথায়।
নিচে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
আমি নীচে নেমে এলাম। দেখলাম ইসলামভাই দাঁড়িয়ে আছে।
আমায় দেখে বললো, ওদের সঙ্গে যাই, তোদের গ্রামটা একটু ঘুরে আসি।
হ্যাঁ নিশ্চই যাবে।
না যদি কোনো সমস্যা থাকে।
ওদের সঙ্গে গেলে তোমার কোনো সমস্যা নেই, থাকলে না বলে দিতাম।
ওটা সঙ্গে নিতে হবে নাকি।
না দরকার পরবে না। আর একটা কাজ করবে আমার হয়ে।
বল।
দাঁড়াও। বাসুকে ইশারায় ডাকলাম, ওরা খামারে দাঁড়িয়ে আছে।
ওরা পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো।
ওই জায়গাটার ব্যাপারে বলেছিলাম, কথা বলেছিস।
হ্যাঁ সব ঠিক আছে। টাকা দিলেই রেজিষ্ট্রি হয়ে যাবে।
বাঃ। কতো চাইছে।
যা বলেছিলাম তোকে তাইই চাইছে, দেওয়ার সময় না হয় একটু কম করে দেওয়া যাবে।
মুন্নাভাইকে জায়গাটা একটু দেখিয়ে দিস। আমিতো ঝামেলার মধ্যে থাকবো।
ঠিক আছে।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
ইসলামভাই আমার চোখের ইশারা বুঝে গেলো।
ভজুকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।
যাও কিন্তু বাইক চালাবে না, পথঘাট এবড়ো খেবড়ো।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
ওরা চলে গেলো। আমি ওপরে এসে, প্রথমে দাদাকে ফোন করলাম।
দারুন খবর রে অনি।
কি।
নিরঞ্জন ফোন করাতে কাজ হয়েছে।
কি হয়েছে।
মেয়েটা বিষ খায় নি। খুন হয়েছে।
কি করে বলে, হাসপাতাল বলছে বিষ খেয়েছে।
দুর। সব বাজে কথা।
তারমানে।
হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো, ওরা বলে দিয়েছে মরে গেছে। তখন পোস্টমর্টম করতে নিয়ে যায়। মেয়েটার মুখে বিষ পেয়েছে, কিন্তু গলার নলি থেকে সে বিষ আর পেটে যায় নি।
বলো কি মারার পর মুখে বিষ ঢেলেছে।
হবে হয়তো। তবে রিপোর্ট এখনো আসে নি। রাতের দিকে ফ্যাক্স করবে বলেছে।
ওই দিককার খবর কিছু ফলো আপ করেছো।
আমি করতে পারিনি। মল্লিক আর সন্দীপ সামলাচ্ছে। তোর বড়মা কেমন আছেরে।
খুব মজা করছে।
করুক। কয় বছর পর বাড়ির বাইরে বেরোলো জানিষ।
জানবো কি করে তুমি বলেছো কোনো দিন।
সে সুযোগ আর হলো কোথায়, এবার হয়তো একটা তৈরি হবে।

কেনো এতদিন পরপর ভাবতে।
আমি ভাবি নি তুই ভাবতিস, নিজের চারধারে একটা অদৃশ্য ওয়াল তুলে রাখতিস, একটু ভেবে দেখ।
অস্বীকার করছি না।
তাহলে।
বড়মা ওবাড়িতে নাহলে তোমার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতাম।
আমি পরে ফোন করবো।
ঠিক আছে, আমি মল্লিকদার সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি। খেয়েছো।
হ্যাঁ, হরি ক্যান্টিন থেকে মাছ ভাত এনে দিয়েছিলো আমার আর মল্লিকের জন্য।
আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিয়েই মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম।
কি বস কেমন আছো।
বস কে তুমি না আমি।
তুই।
বয়সে আমার থেকে বড়ো কে।
আমি।
তাহলে ওই যোগ্যতা কার পাওয়া উচিত।
উঃ তোর সঙ্গে পারা যাবে না।
মাছ-ভাত তো ভালোই সাঁটালে।
কেনো তুই যে সরষের তেল মেখে ভাত, পেঁয়াজ কুচি চিংড়ি ভাজা দিয়ে সাঁটিয়েছিস সেটা বললি নাতো।
ও খবর হয়ে গেছে।
আর কি নিয়ে থাকবো বল। জীবনে এইটুকুতো সম্বল আমার।
একথা বলছো কেনো।
তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে।
কথার বাইরের কথা।
ঠিক। তোর কাছে আমাকে কনফেস করতে হবে।
কেনো।
তোকে আমার অনেক কথা গোপন করেছি, বলা হয় নি।
যে কথা অগোচরে আছে থাকনা, তাকে গোচরে ডেকে আনছো কেনো, সে বেদনাদায়ক।
বেদনার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পেতে হবেরে অনি।
ছোটোমাকে কেমন বুঝলে।
দারুন খুশি। তোর নদী পেরনোর গল্প বললো। সত্যি তুই পারিস।
বাবা তোমাকেতো পুরো ব্রিফ দিয়ে দিয়েছে।
তা বলতে পারিস।
এতো প্রেম ভালো নয়, মনে রাখবে উনি আমার ছোটোমা।
আমি অস্বীকার করছি না।
এবার থেকে প্রেমটেম একটু কম করবে।
তোর ছোটোমাকে কথাটা বলি।
সত্যি তুমি উজবুক আছো তো।
তাহলে বললি কেনো।
ঠিক আছে উইথড্র।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফললো।
খবর কি বলো।
তোর কথা মতো কাজ হচ্ছে, সকাল থেকে ব্যানার্জী বার পাঁচেক ফোন করেছিলো। দাদাকে প্রথম করেছিলো, দাদা বলে দিয়েছে ও ব্যাপারটা মল্লিক কন্ট্রোল করছে, তারপর থেকে আমাকে ফোন। একবার একটু সময় দিন। আমি বলে দিয়েছি আজ তো নয়ই কাল করুন দেখা যাবে। কালকে নিউজ ছাপা হচ্ছে কিনা। আমি বলে দিয়েছি, সেটা অফিসের কনফিডেনসিয়াল ব্যাপার, আপনাকে জানাতে যাবো কেনো।
তুমি কি ভাবছো ও জানতে পারছে না। আরো দুচারটে ফোঁড়ে আছে। আমি পরশুদিন যাই তারপর দাখাবো মজা।
হ্যাঁরে আমার শালাটা কোথায়।
ঘুরতে গেছে।
ছেলেটাকে জীবনে কোনোদিন দেখিনি, আজ প্রথম দেখলাম। তোর ইসলামভাই যে আমার শালা কি করে জানবো।
দুরছাই আমিও কি জানতাম, সকাল বেলা সব কেমন যেন গুলিয়ে গেলো।
তোর ছোটোমা বলতো বটে, আমি গা করতাম না।
ছোটোমাকে তুমি পেলে কোথায়।
সে এক উপন্যাসরে অনি, এখন ও ছাড়া আমার জীবনে আর আপন বলতে কেউ নেই, তারপর তুই, দাদা বৌদি।
মল্লিকদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
তারপর বলো।

কেনো এতদিন পরপর ভাবতে।
আমি ভাবি নি তুই ভাবতিস, নিজের চারধারে একটা অদৃশ্য ওয়াল তুলে রাখতিস, একটু ভেবে দেখ।
অস্বীকার করছি না।
তাহলে।
বড়মা ওবাড়িতে নাহলে তোমার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতাম।
আমি পরে ফোন করবো।
ঠিক আছে, আমি মল্লিকদার সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি। খেয়েছো।
হ্যাঁ, হরি ক্যান্টিন থেকে মাছ ভাত এনে দিয়েছিলো আমার আর মল্লিকের জন্য।
আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিয়েই মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম।
কি বস কেমন আছো।
বস কে তুমি না আমি।
তুই।
বয়সে আমার থেকে বড়ো কে।
আমি।
তাহলে ওই যোগ্যতা কার পাওয়া উচিত।
উঃ তোর সঙ্গে পারা যাবে না।
মাছ-ভাত তো ভালোই সাঁটালে।
কেনো তুই যে সরষের তেল মেখে ভাত, পেঁয়াজ কুচি চিংড়ি ভাজা দিয়ে সাঁটিয়েছিস সেটা বললি নাতো।
ও খবর হয়ে গেছে।
আর কি নিয়ে থাকবো বল। জীবনে এইটুকুতো সম্বল আমার।
একথা বলছো কেনো।
তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে।
কথার বাইরের কথা।
ঠিক। তোর কাছে আমাকে কনফেস করতে হবে।
কেনো।
তোকে আমার অনেক কথা গোপন করেছি, বলা হয় নি।
যে কথা অগোচরে আছে থাকনা, তাকে গোচরে ডেকে আনছো কেনো, সে বেদনাদায়ক।
বেদনার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পেতে হবেরে অনি।
ছোটোমাকে কেমন বুঝলে।
দারুন খুশি। তোর নদী পেরনোর গল্প বললো। সত্যি তুই পারিস।
বাবা তোমাকেতো পুরো ব্রিফ দিয়ে দিয়েছে।
তা বলতে পারিস।
এতো প্রেম ভালো নয়, মনে রাখবে উনি আমার ছোটোমা।
আমি অস্বীকার করছি না।
এবার থেকে প্রেমটেম একটু কম করবে।
তোর ছোটোমাকে কথাটা বলি।
সত্যি তুমি উজবুক আছো তো।
তাহলে বললি কেনো।
ঠিক আছে উইথড্র।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফললো।
খবর কি বলো।
তোর কথা মতো কাজ হচ্ছে, সকাল থেকে ব্যানার্জী বার পাঁচেক ফোন করেছিলো। দাদাকে প্রথম করেছিলো, দাদা বলে দিয়েছে ও ব্যাপারটা মল্লিক কন্ট্রোল করছে, তারপর থেকে আমাকে ফোন। একবার একটু সময় দিন। আমি বলে দিয়েছি আজ তো নয়ই কাল করুন দেখা যাবে। কালকে নিউজ ছাপা হচ্ছে কিনা। আমি বলে দিয়েছি, সেটা অফিসের কনফিডেনসিয়াল ব্যাপার, আপনাকে জানাতে যাবো কেনো।
তুমি কি ভাবছো ও জানতে পারছে না। আরো দুচারটে ফোঁড়ে আছে। আমি পরশুদিন যাই তারপর দাখাবো মজা।
হ্যাঁরে আমার শালাটা কোথায়।
ঘুরতে গেছে।
ছেলেটাকে জীবনে কোনোদিন দেখিনি, আজ প্রথম দেখলাম। তোর ইসলামভাই যে আমার শালা কি করে জানবো।
দুরছাই আমিও কি জানতাম, সকাল বেলা সব কেমন যেন গুলিয়ে গেলো।
তোর ছোটোমা বলতো বটে, আমি গা করতাম না।
ছোটোমাকে তুমি পেলে কোথায়।
সে এক উপন্যাসরে অনি, এখন ও ছাড়া আমার জীবনে আর আপন বলতে কেউ নেই, তারপর তুই, দাদা বৌদি।
মল্লিকদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
তারপর বলো।

অফিসে আজ বাইরের লোক আসা একদম বন্ধ, দাদার ঘরে আমি সন্দীপ আর তোর চেলা দুটো ছাড়া সনাতনবাবুর প্রবেশের অধিকার আছে। তুই যদি হরিদাকে আজ দেখতিস।
কেনো।
কমান্ডোরে কমান্ডো।
অফিসের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না, ম্যায় চম্পকদা সকালে একবার দেখা করতে গেছিলো বলেছে, দাদা ব্যস্ত আছে, আজকে বিরক্ত করা যাবে না।
বলো কি।
তাহলে তোকে বলছি কি।
হাসলাম।
তোর লেখাটা সবে প্রুফ দেখে দাদার টেবিলে পাঠালাম, দারুন নামিয়েছিস। এখন কিছুটা হাল্কা, সন্দীপ হেবি লোড নিয়েছে, তোর চেলুয়াদুটোও।
কেমন মনে হচ্ছে।
খুব সার্প। ধরতে পারে।
তুমি তোমার অভিজ্ঞতা দিয়ে আর দুটো অনিকে তৈরি করে দাও।
অনি একটাই হয়, দুটো তিনটে হয় না।
সকাল থেকে অনেক টেনসন গেলো, একটু রেস্ট নাও, আর ওই ছেলেদুটোকে বলো ফলোআপ করতে।
ওরা কন্টিনিউ করে যাচ্ছে।
আচ্ছা।
ফোনটা সুইচ অফ করলাম। চোখটা ঘুমে জড়িয়ে আসছে। দুতিনটে বড় বড় হাই উঠলো। আমি বালিশটা টেনে নিয়ে মুখের ওপর নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।

আমি জানলার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, আমার প্রিয় আম গাছটার দিকে তাকিয়ে, না আজ কোনো টিয়া পাখি এসে পেয়ারা গাছটায় বসে নি, অনেক গুলো হলুদ হলুদ পেয়ারা দেখতে পাচ্ছি, একটু আগে ছোটোমার সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়েগেলো, একটা ফালতু বিষয় নিয়ে, মনটা ভীষন খারাপ লাগছে, মাঝে মাঝে আমার যে কি হয়, আমি বুঝি না, মল্লিকদা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনলো, আমার সম্বন্ধে একটা খারাপ ধারনা তৈরি হলো, সত্যি আমার মনে হয় আমার মনের ভেতর একটা ভূত লুকিয়ে আছে, কখন যে সেই ভূতটা তার দাঁত মুখ খিঁচিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হয় জানি না। ছোটোমা কেনো ওই কথা বলতে গেলো, আমি বিধর্মী, না বললেই এই ঘটনা ঘটতো না। আমি তো ছোটোমাকে জিজ্ঞাসা করতে যাই নি তুমি হিন্দু না মুসলিম। আমি মানি না, মানুষের আবার ধর্ম আছে নাকি, যার যার স্বার্থে সে তার ধর্ম পালন করে। একটা শিশু যখন পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় বলতে পারবে কেউ, তার ধর্ম কি, যদি মা বাবার পরিচয় না পাওয়া যায়, পাখিদের দিকে তাকিয়ে দেখোতো তাদের কোনো ধর্ম আছে। না। তারা তো কোন মন্দির মসজিদ গির্জাতে গিয়ে মাথা নোয়ায় না। তুমি মানুষ হও, পৃথিবীতে তুমি এসেছো কয়েকটা দিনের জন্য তারপর চলে যাবে, কি রেখে যাচ্ছ তুমি, এটা কখনো ভেবে দেখেছো। রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীর সেই কবিতাটা মনে পরে তোমার ছোটোমা, “যত চাও তত লও তরণী ভরে/আর আছে আর নাই দিয়েছি ভরে/এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভূলে/সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে/এখন আমারে লহ করুণা করে’’ তখন সেই কালের যাত্রী কি বলেছিল শুনবে। “ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোটে সে তরী/আমার সোনার ধানে গিয়েছি ভরি”। এই কাল তোমার কর্মটুকু নেবে তোমাকে নেবে না, আর সেখানে লেখা থাকবে না তুমি কোন ধর্মের। তুমি ইতিহাসকে কি উত্তর দেবে। তুমি হিন্দু, তুমি মুসলমান তুমি খ্রীস্টান না তুমি মানুষ। হিন্দু ধর্মে দেখেছো তুমি সন্ন্যাস নিতে গেলে তোমায় তোমার শ্রাদ্ধটা আগে করে নিতে হবে। মানে তোমার কোনো পিছু টান নেই। তুমি পৃথিবীতে একা। সব ধর্মের মধ্যেই এই ব্যাপারটা আছে। তুমি এই যে এক সঙ্গে সবাইকে দেখছো না এটা মায়া। আমার একজন পরিচিত বন্ধু আছে, তার বয়স কত শুনবে। ৮১ বছর। একদিন কথায় কথায় তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বন্ধু জীবনে চরম সত্য কি। তিনি কি বললেন শুনবে, মৃত্যু। বললাম তাহলে চরম মিথ্যে, বললেন কেনো বেঁচে থাকা। তাহলে আমরা কি নিয়ে বেঁচে আছি। হাসতে হাসতে সেই বুড়ো কি বললো শুনবে, আশা। যাকে তোমরা কেতাবী ঢঙে বলো হোপ।

তুমি ধর্মী কি বিধর্মী আমি জানার দরকার নেই তুমি আমার ছোটোমা এটাই আমার কাছে শেষ কথা।
না অনি তোকে শুনতে হবে।
কি বলতে চাও বলো।
আমার একটা জীবন কেটেছে, গণিকা পল্লীতে।
ছোটোমা।
হ্যাঁ অনি আমি তোকে মিথ্যে কথা বলছি না। বিশ্বাস কর। আমি গণিকা।
তুমি মুখ সামলে কথা বলো।
৭১ সালের যুদ্ধে ওপার বাংলা থেকে যখন এপার বাংলায় চলে এলাম, একদিন বর্ডারের এক লংগর খানা থেকে আমি হারিয়ে গেলাম, পেটের জালায়। তুই বলেছিলি না সেদিন অভাবের কোনো রং নেই অভাবের কোনো জাত নেই, তোর আজকের ইসলামভাই তখন আমার নিজের ভাই মুন্না, সেদিন তার দিদিকে বাঁচাতে পারে নি, সেদিন যে ও ইসলামভাই হয় নি। শরীরটা ওরা ছিবরে করে দিলো কয়েকদিনে। তারপর বহু হাত ঘুরে তোর ছোটোমার স্থান হলো গণিকা পল্লীর রাজপ্রাসাদে, নামতার নীলকমল। সেখানেই একদিন তোর মল্লিকদা আমাদের নিয়ে একটা আর্টিকেল লেখার জন্য গেলো। প্রথম আলাপ। কেনো জানি না তোর মল্লিকদাকে ভালো লেগে গেলো, তারপর প্রেম, তখন তোর দামিনী মাসির জন্ম হয়নি, হয়তোবা হয়েছিলো, আমি জানতাম না, কতো পুরুষকে এই শরীরে আশ্রয় দিয়েছি, তারপর একদিন তোর মল্লিকদার হাত ধরে গণিকা পল্লীথেকে হিন্দু ঘরের সতী সাধ্বী স্ত্রী, কপালে সংসার জুটলো না, তোর মল্লিকদাকে, বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হলো। অনেক ঝড় বয়েগেছে এই শরীরের ওপর দিয়ে, তবে তোর দাদা ভগবান বড়মা সত্যি মা আমার দিদি, আমারও এই পৃথিবীতে তোর মতো কেউ নেই, তাই বড় পেলাম ঘর পেলাম, দাদা পেলাম দিদি পেলাম, তিনি আশ্রয় না দিলে হয়তো আবার ভাসতাম, তুই বলেছিলি আমার খোঁজ নিবি, আমি এই কারণে তোকে বারণ করেছিলাম। শুনলে তুই হয়তো আঘাত পাবি, কেনো জানিষ আমি এখনো একজনের কাছে সপ্তাহে একদিন যাই, তোর মল্লিকদা জানে, তার সঙ্গে চুক্তি ছিলো, সে আমাকে ওখান থেকে বার করে দেবে, তবে তার কাছে আমাকে প্রতিদিন যেতে হবে, তা সেটা নিগোসিয়েসনে সপ্তাহে একদিন হয়েছে। আমাকে মাসোহারাও দেয়। সবাই জানে। তোর ছোটোমা এখনো কোনোদিন মা হয় নি। গনিকারা কোনোদিন মা হতে পারে না, তাহলেই তাদের কাছে খরিদ্দার আর আসবে না, তুই মা বলে ডেকেছিলি, দুর্বল হয়ে পরেছিলাম, শরত্চন্দ্র পরিসনি, শ্রীকান্তের পিয়ারী কি কোনোদিন মা হতে পেরেছিলো, তাই তো সে জননী রাজলক্ষীর বেশ ধরতে বাধ্য হয়েছিলো।

তুমি একবার তার নাম ঠিকানা বলো। কেনো তাকে মারবি। না অনি কোনো দিন কাউকে মারবে না। তাহলে। তাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করবো। না। তোমায় কথা দিলাম, এখবর জোগাড় করতে আমার বাহাত্তর ঘন্টা সময় লাগবে না, আর তোমায় এও বলে দিলাম, আমার হাতেই তার মৃত্যু লেখা আছে। মায়ের সম্মান রক্ষার্থে ছেলে তাকে হত্যা করতেই পারে। ছারো তুমি আমায় ছারো। তোমার মুন্নাকে বলো যদি তার ক্ষমতা থাকে অনিকে আটকাতে।
অনি অনি।
বুবুন এই বুবুন।
অনি ও অনি বাবা চোখ খোল।
আমি চোখ মেলে তাকালাম। আমার মাথার দুই দিকে ছোটোমা বড়মা, ছোটোমা আমার মুখের কাছে মুখ নামিয়ে নিয়ে এসেছে, মিত্রা আমার বুকে হাত বোলাচ্ছে, আমার পায়ের কাছে ইসলামভাই। নীপা অনাদি বাসু চিকনা দাঁড়িয়ে, পেছনে সুরমাসি, কাকীমা।
ঘোর কাটতে মিনিট খানেক সময় লাগলো, তারপর জিভ বার করে সটাং উঠে বসার চেষ্টা করলাম।
না না তোকে উঠতে হবে না। ছোটোমা বললো।
বাবাঃ কি খেল দেখাচ্ছিস তুই, আর তোকে কালীঠাকুর হতে হবে না। আমি তো ভাবছিলাম তোর বুকের ওপর দাঁড়িয়ে জিভ বার করে আমি কালীঠাকুর হয়ে যাই, তাহলে যদি শিবের ধ্যান ভাঙে।
ওরে মিত্রা তুই থাম।
কেনো থামবে বলোতো। ও তো সবাইকেই মেরে ফেললে, শেষ পযর্ন্ত দেখা যাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বলছে মিত্রা তোকে খুন করে দেবো। আমাকে মারিস ভাই কোন ক্ষতি নেই মারার আগে আর একবার চিকেন বাটার ফ্রাই করে খাওয়াস, মুখে লেগে রয়েছে।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
আমি উঠে বসলাম।
ছোটোমাকে খুন করবি কেনো বলতো। তোর কি পাকা ধানে মই দিয়েছে।
ও মিত্রা তুই থাম না। ছোটোমা বললো।
আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলাম।
কি স্বপ্ন দেখছিলি বল। বড়মা বললো।
ও কিছু না।
এই তো সব হেঁপি মেরে উরিয়ে দিস। মল্লিক তোকে কিছু বলেছে।
না।
তাহলে।
মল্লিকদার সাথে আমার কথা হয় নি তো।
একবারে মিথ্যে কথা বলবি না, আমি তোর ফোন লিস্ট দেখেছি, ঘুমোবার আগে, তুই দাদা মল্লিকদার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছিস।
মিত্রা ফোনটা দে তো, দুটোকে দেখাচ্ছি মজা। এখানে এসেও একটু শান্তি দেবে না। বড়মা বললো।
আরে ব্যস্ত হচ্ছ কেনো। সত্যি বলছি কিছু হয় নি। হাই তুললাম।
প্লিজ বুবুন তোর হাঁ দেখাস না, বিশ্বব্রহ্মান্ড ঢুকে যাবে।
হেসে ফেললাম।
দেখলে দেখলে তোমার ছেলের কান্ড, কিরকম চড়কি নাচ নাচালো।
আচ্ছা অনির ভুল হয়েছে, কিন্তু আমাদের ডাকলি তো তুই।
ভয়ে।
ঘরে এসে দেখি। বালিসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। একবার কাছে গিয়ে দেখলাম ভালো করে, ভাবলাম আমাকে দেখে ঘাপটি মেরে পরে হয়তো অভিনয় করছে। ওমা বলে কিনা ছোটোমাকে খুন করবো, শ্মশানে-টসানে যায় ভাবলাম ভূতে ধরেছে হয়তো, তাই তো তোমাদের ডাকলাম।
আচ্ছা করে তোকে দিতে হয় বুঝলি। মিত্র কিল তুললো।
সবাই হাসছে মিত্রার রঙ্গ দেখে।
কটা বাজে বলোতো।
ছোটোমা আমার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
সাড়ে চারটে বাজে, ট্রলি রেডি।
আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, একটা বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম, তোমরা আমাকে জাগাও নি কেনো।
জাগাবো মানে, তোর গায়ে গরম জল ঢালতে খালি বাকি রেখেছি।
ঢাললি না কেনো।
ওই যে বড়মা।
আমি আবার তোকে কখন ব্যাগড়া দিলাম।
বাঃ তুমি বললে না, থাক মিত্রা ছেলেটার প্রচুর চাপ বুঝলি, তাই ওরকম ভুল বকছে, একটু ঘুমোলে দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।
দেখলি ছোটো দেখলি।
আমার থেকে ভালো গল্প বলে। তাই না বড়মা।

বড়মা আমার কানটা ধরলো। তবে রে।
দাও দাও আর একটু জোড়ে।
এইবার ছোটোমা না হেসে পারলো না।
আমি ছোটোমার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম, বিশ্বাস করো কিছু হয় নি, রেডি হয়ে নাও অনেকটা পথ যেতে হবে।
মিটসেফের ওপর তোর আর মুন্নাভাই-এর জামাকাপড় রাখা রয়েছে পরে নে। কোনো প্রশ্ন করবি না।
এটা বড়মার হুকুম না তোর।
আ....না বড়মার।
বড়মা হেসে ফেললো।
আমি খাট থেকে নেমে নীপার কাঁধ দুটো ঝাঁকিয়ে বললাম ভয় পেলে চলে, অনিদাকে দেখে লড়াই করার মানসিক প্রস্তুতি নাও, মাঝে মাঝে ব্রেক ডাউন হবে। তাতে কি হয়েছে। যাও রেডি হয়ে নাও।
অনাদিদের দিকে তাকিয় বললাম, তোরা বাজার থেকে কখন এলি।
এই তো মিনিট পনেরো হলো, এসে দেখি তোর এই কীর্তি। আমি তো গুনীন কাকাকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।
হেসেফেললাম।
নিজের কানে শোন মিত্রা মিথ্যে কথা বলে না।
ওরা সবাই চলে গেলো। আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম, কিগো কেমন লাগলো জায়গাটা।
দারুন। বাইক চালালাম।
অসুবিধে হয় নি।
না।
অনাদিকে বললাম একটা বাইক জোগাড় করে দাও কয়েকদিনের জন্য।
কি বললো ও।
বললো চিকনার বাইকটা এখানে রেখে দেবে।
তাহলে তুমিতো বেশ জমিয়ে নিয়েছো।
হ্যাঁ। তোর বন্ধুগুলো ভীষণ সহজ সরল। কলকাতা গেলে একেবারে শেষ।
সেই জন্যতো এখানেই ওদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করবো।
জায়গাটা দেখলাম। ভালো স্পট।
দেখি আজ রাতে একটু বসবো সবাই।
কি জন্য।
রাতে বলবো।
নাও তুমি রেডি হয়ে নাও আমি একটু মুখ-হাতটা ধুয়ে আসি।
বাসুর দোকানে গেছিলাম। আমায় একটা শেরওয়ানী দিলো। পয়সা দিতে চাইলাম নিলো না। আমি কয়েকটা কাপর নিয়ে এসেছি তোর কাকীমা, সুরমাসি, দিদি, মন। নীপা, মিত্রার জন্য একটা করে শালোয়ার নিয়ে এসেছি।
কেনো কিনতে গেলে।
মেরিনা ছাড়া জীবনে কাউকে কিছু নিজে হাতে কিনে দিই নি।
ওদের দিয়েছো।
দেবো কি করে। এসে তো দেখলাম এই অবস্থা।
যাও নিজে হাতে দিয়ে এসো।
তোর কাকার জন্য কিছু নেওয়া হয় নি।
ঠিক আছে আছোতো এখন।
আমি বেরিয়ে এলাম। পুকুরঘাটে গিয়ে মুখহাতপা ধুলাম, পাখিরা সব নিজের বাসায় ফিরছে, চারিদিকের গাছগুলোয় খালি কিচির মিচির শব্দ। ঘরে ফিরে যে যার কাজের হিসেব দিচ্ছে যেনো। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা বোঝার চেষ্টা করলাম। পারলাম না।
সং-এর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছো।
দেখলাম নীপা আমার পেছনে।
পোষাক বদলানো হয়ে গেছে, এটা নতুন দেখছি, একটা থ্রিকোয়ার্টার জিনসের পেন্ট আর একটা টপ পরেছে। বেশ মিষ্টি লাগছে, ঠোঁটে হাল্কা প্রলেপ।
ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছো।
চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
ওসব ছাড়ো এখন থেকে খালি মিত্রাদির ধ্যান করো। যা হয়ে গেছে গেছে।
কেনো।
নেকু, আগে জানলে ওই টুকুও পেতে না।
আজ জেনে ফেলেছো।
সব।
বাবাঃ তোমরা সবাই তো সাংবাদিক।
ছোঁয়া পাচ্ছি না। যাও যাও ওঠো, আমি বাসন কটা ধুয়ে নিয়ে যাই। না হলে মাসিকে আবার আসতে হবে।
আমি ওঠার সময় নীপার বুকটা একটু টিপে দিলাম।
ওঃ দুষ্টু কোথাকার, দাঁড়াও মিত্রাদিকে বলছি গিয়ে।
ওর দিকে ফিরে একটু হাসলাম।
নিজের ঘরে চলে এলাম, কেউ নেই। ইসলামভাই ও বাড়িতে গেছে। আমি মিটসেফের ওপর থেকে পাজামা পাঞ্জাবীটা নিলাম, একেবারে নতুন, তার সঙ্গে গেঞ্জি ড্রয়ার সব নতুন। ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না। আবার নতুন পোষাক কেনো। দেখেছি বেশি ভাবতে গেলেই সব কেমন উল্টোপাল্টা হয়ে যায়, ছোটোমার ব্যাপারটা যেমন হলো, কি যে একটা বিচ্ছিরি স্বপ্ন দেখলাম, মনটা মাঝে মাঝে খট খট করছে।

দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম, ভিঁজে গামছা দিয়ে ভালো করে গাটা মুছলাম। খট খট করে দরজায় আওয়াজ হলো।
কে।
খোল।
আর কে আছে তোর সঙ্গে।
কেউ নেই।
আমি দরজা খুললাম। একটা দারুন সুন্দর গন্ধ আসছে মিত্রার শরীর থেকে।
কিরে সব নতুন নতুন।
কোথায় নতুন দেখছিস।
দেখছি পাট ভাঙা কাপর পরেছিস, আবার বলছে কোথায় নতুন।
পূজো দিতে যাবো না।
কোথায় পূজো দিবি।
যা বাবা সাত কান্ড রামায়ন পরে বলে সীতা কার বাবা।
পীরবাবার ওখানে পূজো দিবি, ওটা খালি একটা অশ্বত্থগাছ, আর কিছু নেই। চারিদিক শূনশান।
তোকে অতো ভাবতে হবে না। বড়মার হুকুম চোখবুঁজে তামিল করে যা।
মনে হচ্ছে একটা কিছুর গন্ধ পাচ্ছি।
একথা বলছিস কেনো।
নীপা একখানা জমপেশ মাল লাগিয়েছে। তুই, তারপর দেখবো বড়মা ছোটোমা।
হ্যাঁ সবাই পরেছি, তোর আপত্তি আছে নাকি।
না।
নীপারটা কেমন হয়েছে রে, দারুন লাগছে না ওকে, এখন মনে হচ্ছে অনির যোগ্য উত্তরসূরী তৈরি হচ্ছে।
গ্রামের ছেলেগুলোকে তো জানিস না। জিভ দিয়ে চাটতে না পারলেও, চোখ দিয়ে চেটে খাবে।
তুইও নিশ্চই ওরকম ছিলি। নে পর।
তুই বেরো।
আমি বেরোবার জন্য আসিনিতো।
তাহলে কি করতে এসেছিস।
তোকে দেখতে, দেখাতে।
বুঝেছি দরজাটা বন্ধ কর।
ওটা আগেই করে দিয়েছি।
ওদিকে ফিরে তাকা।
দাঁড়া তোর কথা বার করছি।
একবারে গায়া হাত দিবি না
মিত্রা এগিয়ে এলো, আমার পাজামায় হাত দিয়ে খামচে ধরলো।
দিলে কি করবি বল।
কামরে দেবো তোর ঠোঁটে। তোর সাজ-পোষাক নষ্ট করে দেবো।
একবারে গায়ে হাত দিবি না।
মিত্রা আমার চোখে চেখ রাখলো, ওর চোখ বলছে আজ ওর সবচেয়ে খুশির দিন পরিতৃপ্ত চোখের মনি দুটো। আই লাইনার দেওয়াচোখ দুটো বেশ বড় বড় দেখাচ্ছে।
এতো সেজেছিস কেনো, কে দেখবে এই অজ গাঁয়ে। তাও আবার সন্ধ্যে বেলা।
তুই।
আমি তোকে দিনরাত দেখি।
নতুন করে দেখবি।
আজ মনে হচ্ছে কোনো ঘটনা ঘটতে চলেছে।
কি।
মাথা খাটাতে ইচ্ছে করছে না।
বেশি মাথা খাটাস না বুড়ো হয়ে যাবি তাড়াতাড়ি।
আমি গেঞ্জি-ড্রয়ার পরে পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম।
তোকে আজ দারুন লাগছে, আমার পছন্দের কালার।
এই গেরুয়া রংটা তোর পছন্দের।
হ্যাঁ।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, চোখ চক চক করছে।
একটু সেন্ট লাগিয়ে দিই।
অন্য সময় হলে না বলতাম, কেন জানি না ওকে না বলতে পারলাম না, সবারই কিছু না কিছু কষ্ট আছে, মিত্রারও আছে।
দে, বেশি দিস না।
মিত্রা ফস ফস করে, আমার বগলে গায়ে সেন্ট স্প্রে করে দিলো।
আমি রেডি, চল এবার।
আমি বেরোতে গেলাম, মিত্রা আমার হাত টেনে ধরলো।
কি।
একটা চুমু দিলি না।
হেসেফেললাম। ওর কপালে ঠোঁটে একটা চুমু দিলাম, আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁটের লিপস্টিক লেগে গেলো, ও কোমর থেকে রুমালটা বার করে আমার ঠোঁটটা মুছিয়ে দিলো।

ঘরের বড়লাইটা নিভিয়েদিয়ে ছোটো লাইটটা জেলে দুজনে বেরিয়ে এলাম। একসঙ্গে নামলাম একসঙ্গে বাইরের দরজায় সিকল তুলে বেরিয়ে এলাম। খামারে দুটো ট্রলি দাঁড়িয়ে, বিজয় বিজন দাঁড়িয়ে আছে। ওরাই ট্রলি চালাবে। আমি এবাড়িতে এসে সকলকে প্রনাম করলাম।
বড়মা বললো এতো প্রণামের ঘটা কিসের রে।
বারে নতুন জামা কাপর পরালে, একটা ঠুকে দিলাম।
আমার দেখা দেখি মিত্রাও সকলকে প্রণাম করলো।
আরে অনিদা কি মাঞ্জা দিয়েছো।
তুমি কম কিসে, ডাকবো চিকনাকে।
আওয়াজ খেয়ে গেছি, এখন আর গায়ে মাখি না। আর কিছু বলবে।
উঃ মুখে যেন খই ফুটছে।
বেরিয়ে এলাম। খামারে ওরা দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গেলাম। সঞ্জু কোথায় রে সকালবেলা এলাম একবারও দেখা পেলাম না।
ঠিক সময় দেখা পাবি। ও নিয়ে ভাবিস না। তোর লাইট পাঁচমিনিটের মধ্যে জলে যাবে।
বাবাঃ বাসু অনাদিকে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
একটা ভালো খবর আছে তাই। বাসু মুচকি হেসে বললো।
চিকনা তুই বেশ চকচকে ব্যাপার কি।
রাতে জোর খাওয়া আছে এক জায়গায়, আমাকে পাবি না, তোর সঙ্গে এখন যাচ্ছি, তারপর ওড়াং।
কোথায়রে, সঞ্জুর আর্শীবাদ।
খবরটা বেমালুম আমাকে চেপে গেছিস।
চুপকে চুপকে হচ্ছে তাই চেপে গেছি।
কিরে বাসু।
বাসু হাসছে।
সঞ্জুর আর্শীবাদ তোর কি। নে ট্রলিতে ওঠ। অনাদি বললো।
ব্যাপারটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে, একটা চক্রান্ত চলছে কোথায় মনে হচ্ছে। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks