দেখি নাই ফিরে - (Part-87)

আমি হেসে ফেললাম।
বলনা একটু শুনি। মুখার্জী রাতে এলো। ওর লোকজোন এলো। অতো যত্নআত্তি করে খাওয়ালি দাওয়ালি। ওকে কাজটা দিলি না! বাইপাস করে সিবিআই ঢুকিয়ে দিলি।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
ওদেরকে ফোন করে বলে দিলে ফিরে আসবে ?
আমি চুপ করে আছি।
কি দিদি ছেলের মনের কথা কিছু বুঝছেন। অনিমেষদা বড়মার দিকে তাকালো।
আবার আমার দিকে ফিরে তাকালো।
তুইকি আমাদের এখানে বসিয়ে রেখে কাজ সারছিস।
না। তোমরা বললে শুরু করবো।
আমরা যদি না বলি ওদের চলে আসতে বলবি।
ওরা চলে আসবে, কাল গট আপ গেম খেলবে।
এনকাউন্টার!
আমি চুপ করে রইলাম।
তোর থার্ড অপসন বল।
এখনো কিছু ঠিক করিনি।
ওই মেয়েটার মুখের দিকে একবার তাকা। আমরা সবাই ফালতু। ও তো তোর বিয়ে করা বউ।
আমি কি নিজের জন্য করছি। চেঁচিয়ে উঠলাম।
হক কথার এক কথা।
বিধানবাবু আমার মুখ বন্ধ। এবার আপনার কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে ওকে করুণ।
কি বলবো অনিমেষ, গায়েতো গন্ধ আছেই। সব শুনে এক ঘর লোকের সামনে অস্বীকার করি কি করে। মিটিং-এ বক্তৃত্বা দিতে হলে সব নস্যাত করে দিতাম।
দ্বীপায়ণ ফোনদুটো নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমার হাতে দিলো। আমি মিত্রার ফোন থেকে চিপটা অদল বদল করে দিতে বললাম। অরিত্র ঘরে ঢুকলো।
অনিদা পার্মিসন চাইছে। কি বলবো।
অরিত্রর দিকে তাকালাম।
হ্যাঁরে ছেলেটাকে মেরেদেবে নাতো। অনিমেষদা আমার দিকে তাকালো।
উনি যদি আমাকে মারতে চান আমি ছেড়েদেবো কেনো। চেঁচিয়ে উঠলাম।
তুই রেগে যাস না। ভয় লাগে।
অনিমেষদা এমনভাবে বললো, হেসে ফেললাম।
অনুপ, অশ্বিনীনগরের খবরটা আমাদের কাছে ছিলো না।
অনুপদা অনিমেষদার কথায় মাথা দোলালো।
হ্যাঁরে অনি তুই এই খবরটা পেলি কোথায়।
বৃহস্পতিবার পার্কস্ট্রীটে এ্যাসিয়াটিক সোসাইটির তলায় একটা ভিখারীর সঙ্গে বুবুন বসে বসে কথা বলছিলো। আমরা দেখেছি। ডাক্তারদাদা বললো, ও ভিখারী নয়। রাতে ওকে জিজ্ঞাসা করতে ও রেগে গেলো, বললো আইবির লোক। মিত্রা কট কট করে বলে উঠলো।
অনিমেষদা মাথায় হাত দিয়ে বসলেন। বিধানদা মিটি মিটি হাসছেন। রূপায়ণদা অনুপদা গম্ভীর থাকার চেষ্টা করেও হেসে ফেলছে।
অনি। গেটের মুখ থেকে কনিষ্ক ডেকে উঠলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।

তুই উঠলি কেনো, বোস। অনিমেষদা বলে উঠলো।
আয় বাবা ভেতরে আয়।
অনিমেষদা কনিষ্ককে ভেতরে ডাকলেন।
কনিষ্ক ভেতরে এলো।
তোর আর দুই বন্ধু কোথায় ?
নীচে আছে।
ওরা কারারে বাবা।
প্রবীর বাবুর লোক।
কোথায় থাকে।
ভাসিলা ভেঁড়ি।
তোদের চিনলো কি করে।
অনির মাধ্যমে।
কি কোরে সেটাই জিজ্ঞাসা করছি ?
আপনাদের অপনেন্ট পার্টির সঙ্গে ওদের মারপিট হোতো এলাকা দখল নিয়ে, ওরা ইনজিওর্ড হলে অনি ওদের তুলে আনতো। আমরা ট্রিটমেন্ট করতাম। সেই থেকে পরিচয়।
কজন এসেছে।
দুজন।
একটাকে নিয়ে আসতে পারবি।
ডাকছি।
কনিষ্ক বেরিয়ে গেলো।
কি বিধানবাবু সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার দেখছেন। এরা নিশ্চই ভেতরে ভেতর আমাদের সংগঠন করে। না হলে অনির কথায় এ ধরনের কাজ করবে না।
মুখ চোখ ফোলা হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা একটা ছেলে ঘরে ঢুকলো।
হাতজোড় করে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। স্যার বিশ্বাস করুণ অনিদার নামটা আগে জানলে এ কাজ করতুম না।
তুই থামবি। কনিষ্ক ধমকে উঠলো।
বোস বোস।
টনা নিচে মাটিতে বসে পরলো।
তুই অনিকে চিনলি কি করে ?
অনিদা আমাদের ভেঁড়ি এলাকায় যায়।
কেনো যায় ?
অনিদা আমাদের সংগঠনটা কি করে বারাবো তার বুদ্ধি দেয়। তার বিনিময়ে অনিদাকে আমরা নিউজ দিই।
তোরা কোন সংগঠন করিস।
টনা বোললো।
কোন ব্রাঞ্চ।
ভাসিলা এক নম্বর।
অনিদা আমাদের পার্টির মেম্বার নয় এটা জানিস।
অনিদা কোনো খারাপ বুদ্ধি দেয় না। অনেক লেখাপড়া জানা ছেলে অনিদার জন্য আমাদের সংগঠনে এসেছে। ওখানে অনিদা সকলকে পড়ায়। কনিষ্কদা বটাদা নীরুদা অনিকেতদা সবাই যায়। চব্বিশঘন্টা জলে পরে থাকি ছেলেমেয়েদের রোগে চিকিৎসা করে, ওষুধ দেয়।
পয়সা নেয় না।
একি বলছেন স্যার। টনা কানে হাতদিলো।

তোকে কনিষ্ক শিখিয়ে পরিয়ে নিয়ে এলো।
টনা আবার কান ধরে। কাল আমার বউ আমাকে মারবে স্যার। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো।
কেনো রে!
যদি জানতে পারে আমি অনিদার খবর নিতে এসেছিলাম।
অনিমেষদার সাথে সাথে সবাই হেসে ফেললো।
অরিত্র। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।
অরিত্র ঘরে ঢুকলো।
ওদের গ্রীণ সিগন্যাল দিয়ে দে। দু’জায়গাতেই। অনিমেষদা বললো।
দেখলাম ঘরে সবার মুখের চেহারা বদলে গেলো।
অনুপ ফোনগুলো অন কর। এবার বাজতে শুরু করবে। বিধানদা বললো।
হ্যাঁরে অনিকে তোর বউ ভালোবাসে।
গতো মাসে আমার ছেলের ভাতে অনিদা আমার বাড়িতে জলঢালাভাত খেয়ে এসেছে। বলেছিলো পরে গিয়ে গরমভাত খাবে, আর যায় নি। আমার মুখ ফোলা দেখলে জিজ্ঞাসা করবে। মিথ্যে কথা বললে মনা বলে দেবে।
মনা কে রে!
নিচে আছে। ও ভাসিলা দুনম্বর ভেরি দেখে। আমার সম্বন্ধি।
ও অনিকে চেনে।
হ্যাঁ চেনে।
আবার কাঁদে। তোকে কে ব্যান্ডেজ বাঁধলো।
নীরুদা।
ছোট ঘুম তো হলো না। একটু চা খাওয়াবে। বিধানদা আবার বোললো।
ছোটমা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। অরিত্র ঘরে ঢুকলো। হাতে ফোন।
তোমার সঙ্গে একটু কথা বলবে। আমার হাতে ফোনটা দিলো।
হ্যাঁ বলুন সিং সাহেব।
একবারে পরিষ্কার করে দেবো।
বাংলায় হিন্দী টান। সবাই শুনছে।
ভিখিরী করে দিন। ওদিকেরটা।
ওটা ঘন্টা খানেক আগে খতম করে দিয়েছি।
কেউ পরেছে।
না একবারে ঠান্ডা ঠান্ডায় হয়ে গেলো।
কালকে সিনপসিসটা পাঠান।
ঠিক আছে। ওই চারটেকে দিন।
কাজ শেষ হলে শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ে চলে আসবেন। ঘোঁড়ার ল্যাজ যেদিকে সে দিকে দাঁড়াবেন গাড়িতে তুলে দেবো।
আমরা ঘন্টা খানেকের মধ্যে কাজ সেরে নিচ্ছি।
কাগজপত্র আছেতো।
সব স্পেশ্যাল ভাবে দিল্লীথেকে তৈরি করে আনিয়েছি।
ঠিক আছে।
অরিত্রর হাতে ফোনটা দিলাম। অরিত্র ফোনটা নিয়েই টেপাটেপি করে নিলো।
তোরা একেবারে অনিদার মতো তৈরি হয়েগেছিস না। নো টেনসন ডু ফুর্তি। অনিমেষদা বললো।
বৌদি হাসছে।
বিধানবাবু এবার দেখছেন সুতপার মুখটা কেমন হাসি হাসি।
বিধানদা মিটি মিটি হাসছে।
কিরে অনুপ অনিকে আমাদের পার্টির সদস্য পদটা দিবি।
ভাবছি কামিং ইলেকসনে ওকে এমপি বানাবো কিনা। ওর জন্য কোনো প্রচারের দরকার নেই।
আমরা খাটবো স্যার।
হায় হায় এ ব্যাটা বলে কিরে অনুপ।
টনার দিকে তাকিয়ে।
তোদের ওখানে গোপাল আছে না।
গোপালদা, অনিদাকে ভয় পায়।
কেনো।
কয়েকদিন আগে অনিদা কাকে মেরে দিয়েছে। কাগজে খপর বেরিয়েছে। গোপাল ওপারে চলে গাছে।
ওপারে মানে।
খুলনায় চলে গেছে।
কেনো।
যদি অনিদা মেরে দেয়।
তাহলে অনিদা তোদের দাদা বল।
না না, অনিদা, অনিদা।



ছোটমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। এবার মিত্রা উঠে এলো। সবাইকে চা দিচ্ছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
তুই যাচ্ছিস কোথায়। অনিমেষদা বলে উঠলো।
একটু আসছি।
এগিয়ে যেতে টনা পা ধরে ফেললো। আবার কান্না।
কি হলো বলবিতো।
তুমি একটু মনাকে বলে দাও।
মনা কোথায়।
নিচে।
ছাড় বলেদিচ্ছি। সকালে হাসপাতাল গিয়ে ওষুধ নিয়ে যাবি।
আমি দুটো ফুঁড়ে দিয়েছি। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
ওই দেখুন বিধানবাবু এতোক্ষণ গলা পেয়েছিলেন ? এখন একটু একটু গলার স্বর বেরোচ্ছে।
বিধানদা হো হো করে হেসে ফেললো।
বুঝলে ছোট, তোমাদের এখানে শোবার জায়গা থাকলে আর বাড়ি ফিরতাম না।
কেনো আমার অতোগুলো ঘর ফাঁকা পরে আছে। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
ডাক্তারবাবু ঠিক কথা বলেছেন। আপনারা দুজনেই কুমার অসুবিধা নেই। অনিমেষদা বললেন।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ওরে যাচ্ছিস যা মারার অর্ডারটা দিস না। অনিমেষদা কথাটা ছুঁড়ে দিল।
আমি বেরিয়ে এলাম। ইসির সঙ্গে বারান্দায় দেখে হলো। বরুণদা ও নীচু স্বরে কথা বলছে। আমার পথ আটকালো।
যা নিচে গিয়ে শুয়ে পর।
ইসি আমার দিকে তাকালো।
কি দেখছিস ওমন করে।
তোকে ছুঁলে মনে হয় অনেক জম্মের পাপ থেকে মুক্ত পাবো।
যা একটু শুয়ে পর, বরুণদার কাল অফিস আছে।
যাবে না।
জ্যেঠিমনি কোথায় ?
আর টেনসন নিতে পারলো না। ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুমপারিয়ে দিয়েছি।
কে দিলো।
তোর নীরু ডাক্তার।
হাসলাম।
হাসলি যে।
এমনি। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম। কনিষ্ক পাশে পাশে এলো। নিচে আসতেই চিকনা জড়িয়ে ধরলো। সবাই ঘিরে ধরেছে। রতন আবিদ নেপলা সাগির অবতার কাকে বাদ দেবো।
একটা সিগারেট দিবি।
বটাদা। চিকনা চেঁচালো।
বটা এগিয়ে এলো। সিগারেট দিলো।
রতন।
বলো দাদা। ওমকে একবার ফোন কর।
ওম ওখানথেকে মালদের নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।
কেনো।
আবিদ কি গন্ধ পেয়েছে।
এখন কোথায় আছে।
পিলখানায়। আবিদের খাশ ডেরায়।
ওদের হ্যান্ডওভার করতে হবে।
কাজ শেষ!
হ্যাঁ।
রতন দু’হাত তুলে একবার ঝাঁকুনি দিলো।

মনা কোথায়রে ?
নিচের ঘরে শুইয়ে রেখেছি। নীরু বললো।
কেনোরে।
মারটা একটু বেশি পরে গেছে দাদা। নেপলা মাথা নীচু করে বললো।
ভাঙ্গা ভাঙ্গি করিসনিতো।
না চোখটা একটু কালসিটে পরে গেছে।
ছাগল তুই থাকতে এতোটা মারলো কেনো। কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
ওরে আমি তুই নিচে নামার আগেই কাজ সেরে দিয়েছে।
চল দেখি।
আমি নিচেরে ঘরে এলাম। দেখলাম মনা গুটি সুঁটি মেরে শুয়ে আছে। আমি ওর পাশে বাবু হয়ে বসলাম। সত্যি বেচারার মুখটা ফুলে একাকার হয়ে গেছে। আমি মাথায় হাত রাখলাম।
মনা।
মনা চোখ চাইলো। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আমি অন্যায় করে ফেলেছি দাদা।
কাঁদে না।
শালা প্রবীরকে কালই হাঁসুয়াদিয়ে টুকরো করে দেবো।
আমি ওর মাথাটা কোলে তুলে নিলাম। আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
পাগল, আগে আমার নামটা বলবিতো।
কি করে জানবো। এটা তোমার বাড়ি। সেই তুমি গেলে একমাস আগে ভাগ্নীর অন্নপ্রাসনে আর গেলে না।
কেনো, কনিষ্করা যায় নি।
একমাত্র অনিকেতদা গেছিলো দুবার। বললো তোমার সঙ্গে দেখা হয় নি।
কথা বলিস না। কষ্ট হবে।
শালা ওর জন্য মার খেলাম।
নীরুদা ওষুধ দিয়েছে।
হ্যাঁ।
একটু ঘুমো। কাল সকালে বাড়ি পৌঁছে দেবো।
আজ রাতেই ফিরবো। কাল মিটিং আছে।
ঠিক আছে কনিষ্কদা পৌঁছে দিয়ে আসবে সকালে।
কিছু খেয়ে বেরিয়েছিলি।
সেই দুপুরে বেরিয়েছি।
কনিষ্ক দেখনা কিছু খাবার আছে কিনা।
অনেক আছে।
যা টনাকে নিয়ে আয়। দু’জনকে বসিয়ে দুটো খেতে দে।
চিকনা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। ওরা আমাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখটা ছল ছল করে উঠলো।

তুমি কাঁদছো কেনো।
মনা আমার হাতটা ধরে ফেললো।
আমি অন্যায় করেছি শাস্তি দিয়েছে।
কেনো অন্যায় করতে গেলি।
না জেনে করে ফেলেছি দাদা।
কিরে এখানে ভিড় করে কি করছিস সবাই। অনিমেষদার গলা।
ভিড়টা একটু সরে গেলো। দেখলাম গেটের সামনে ওরা সবাই। আমাকে এই অবস্থায় দেখে ওরা এগিয়ে এলো মিত্রা এসে পাশে বসলো।
মনা আধচোখ বন্ধ ফোলা মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে মিত্রাকে দেখছে।
তোর বৌদি।
মনা উঠে বসতে গেলো। মিত্রার পা ছুঁতে চাইলো। একটু হাসির চেষ্টা করলো, পারলো না। দুফোঁটা জল চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরলো। অনিমেষদা বিধানদা স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে।
তুই শুয়ে থাক। কিছু খেয়ে নে।
আমি ওর চোখটা মুছিয়ে দিলাম। আস্তে করে ওর মাথাটা বালিসে রাখলাম।
উঠে দাঁড়ালাম। অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
নিজের চোখে একবার দেখো, সত্যি কারের যারা পার্টিটাকে ভালোবাসে তারা এইভাবে মার খায়। আর বাবুরা এসি গাড়ি চড়ে।
গমগম করে উঠলো আমার গলাটা। কোথাও দাঁড়ালামনা। কারুর দিকে তাকালাম না। ফোনটা বার করে ডায়াল করলাম।
সিংজী কি খবর।
কাম শেষ করলাম।
এমন দিন মুখের জিওগ্রাফি যেনো বদলে যায়। বাকিটা আমি বুঝে নেবো।
কি বলছেন অনিবাবু, এ আপনার রাগের কথা।
আপনি না পারলে, আমি অন্য ব্যবস্থা করবো।
ঠিক আছে ঠিক আছে। আপনি রাগ কিয়েন না।
ক্যাশ কতো পেলেন।
আরে রাম রাম। কি বলবে আপনাকে। জালি নোট ভি আছে। নেতা লোককা ঘরমে গন্ধী সিডি ভি আছে। আপনা পত্রকার যে এসেছে সে ভি বলে দু-একজনকে চেনে।
কি বলতে চায় কি।
ফরফরা রাহা হ্যায় বোলে কি হামি দিল্লিমে বাত করবে। উধার কই ক্যাবিনেট মিনিস্টার লোগোকে সাথ।
হ্যাঁ ওকে তুলে নিয়ে চলে আসুন। এখন ফ্ল্যাশ করবেন না। কালকের দিনটা যাক তারপর দেখছি।
হ্যাঁ আপনার অনিমেষবাবু ভি ওহি বোলা। হামারা সাথ বাত হুয়া।
ঠিক আছে।
হামার ওহি লোক।
একমিনিট দাঁড়ান।
আবিদ।
দাদা দুমিনিট পর ফোন করলে হতো না।
সিংজি মিনিট পাঁচেক বাদে আপনাকে ফোন করছি।
আচ্ছা।
অনিমেষদা কাছে এগিয়ে এলো। আমার হাতটা চেপে ধরলো। অনুপদা আমার সামনে। কেউ কোনো কথা বলছে না। ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে।
আবিদ ছুটে এলো, দাদা ওম রুবীর সামনে দাঁড়াচ্ছে। এই গাড়ির নম্বর।
আমি আবার সিংজীকে ফোন করলাম।
হ্যাঁ বলেন অনিবাবু।
গাড়ির নম্বর লিখুন।
হ্যাঁ বলেন।
গাড়ির নম্বর বললাম।
ওরা রুবীর সামনে দাঁড়াবে আপনার গাড়িতে তুলে দেবে।
ঠিক আছে অনিবাবু। কাজ শেষ হবার পর আমাকে একবার জানাবেন।
ফোনটা কেটে সেভ করলাম।
অরিত্র।
হ্যাঁ দাদা।
ওখানে কে আছে। সায়ন্তন আর অর্ক আছে।
অর্ক কখন গেলো।
তুমি যখন দাদাদের সঙ্গে কথা বলছিলে।

কাজ হয়ে গেলে চলে আসতে বল। নিউজটা বেরোবে না। সব ডকুমেন্টস রেডি রাখ। সময় হলে বোলবো। আর কেউ খবরটা পাই নিতো।
না।
অনুপদার দিকে তাকালাম।
অসুবিধে না হলে। ডাক্তারদাদার বাড়িতে গিয়ে একটু শুয়ে পরো। কাল সকালে কথা বলবো।
কারুর দিকে তাকালাম না। সোজা নিজের ঘরে চলে এলাম। ঘর অন্ধকার। রাস্তার নিওন আলোর কিছুটা ঘরে এসে পরেছে। টেবিলের ওপর রাখা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করলাম। সোজা জানলার ধারে চলে এলাম। আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।
টনা, মনা। শালা সম্বন্ধি। দুজনে ওই এলাকার নেতা। ডাকসাইটে এলাকার দাদা। এদের ভয়ে কেউ ওই তল্লাটে রা করতে পারে না। ইস তাদের কি অবস্থা করে ছেড়েছে এরা। কিন্তু দুজনে কতো ভালো। মনে পরে যাচ্ছে প্রথম দিনকার কথা। আমি গেছিলাম চিংড়ি মাছ নিয়ে লিখতে। ওদের ভেঁড়ি থেকে চিংড়িমাছ বিদেশে রপ্তানী হয়। কিভাবে চাষ হয়, কতদিন লাগে, কতটুকু অংশ বিদেশে যায় এই সব।
নতুন কেউ এলাকায় পা রাখলেই টনার কাছে প্রথমে খবর চলে যায়। তারপর মনার কাছে। অনেক নোংরামি ওই ভেঁড়ি এলাকায়। ফলে মানুষগুলোও কিছুদিনের মধ্যে নোংরা হয়ে যায়। ওদের মন বলে আর কিছু থাকে না। সারাদিন ভেঁড়িতে, রাতে মদ জুয়া মেয়ে নিয়ে নোংরামি। কি নেই। আস্তে আস্তে ওদের মধ্যে ঢুকলাম। মাথার পোকাটা নরে উঠলো, মানুষের ভালো করতে হবে। একদিন টনাকে বললাম, এখানে একটা স্কুল করনা, বাচ্চাগুলো একটু লেখা পরা শিখুক।
রাখোতো তুমি অনিদা। তার থেকে ভেঁড়িতে জাল টানলে দুটো পয়সা আসবে।
অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে একটা স্কুল করলাম। তাও আবার ভেঁড়ির ধারেই পাহারা দেবার একটা টংয়ে। চারদিক খোলা। শীতকালে খোলা মাঠে। ওদের সঙ্গে যতোক্ষণ থাকতাম আমি উনা মাস্টার ওরা অনি হয়ে যেতো। নিজের দুষ্টুমিগুলো ওদের মধ্যে দিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম। বেশ ভালো লাগতো। প্রথম প্রথম কনিষ্করা যায় নি। ওদের ভাড়ি ধরণের শরীর খারাপ হলে, চিঠি লিখে কনিষ্কদের কাছে পাঠাতাম। পরে একদিন কনিষ্ক বললো, আমাদের নিয়ে চল। ওদের নিয়ে এলাম। টনা মনার সে কি আনন্দ। ওরা প্রস্তাব দিলো, একটা ঘর করে দে। আমরা সপ্তাহে সপ্তাহে কেউ না কেউ আসবো। তোদের চিকিৎসা করবো। ওষুধ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতো। কিছু শ্যাম্পেল কপি ওদের দিতো।
সারাদিন টেনসন কাজের চাপের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠে যেতো ওদের ওখানে চলে যেতাম। কয়েকঘন্টা বেশ ভালো কাটতো। খাওয়া জুটতো কলাই করা থালায় মুড়ি বেগুনি। একেবারে ঘরের তৈরি। খোলা আকাশের তলায় জলের ধারে বসে আমরা আড্ডা মারতাম। কখনো কখনো ওরা চিংড়িমাছ ধরে ভেজে খাওয়াতো। আমার মতো কনিষ্ক বটা নীরু অনিকেত সবার মধ্যে একটা নেশা ধরে গেলো। ভালোপাহাড়ের মতো এটাও আমাদের একটা এনটারটেনমেন্টের জায়গা।
এদিকে জড়িয়ে পরার পর আমি মাঝে মাঝে যেতাম, কনিষ্করা রেগুলার যাওয়া আসা করতো। আমাদের কিছু চাওয়ার ছিলো না। তাই ভালোবাসা কাকে বলে ওরা উজার করে দিতো। ওরা বাম রাজনীতিতে বিশ্বাস করতো। আমরা সবাই করতাম, ফলে মনের মিল হলো। ওদের বুদ্ধি দিতাম কি ভাবে চলবি। তার ফল ওরা হাতে নাতে পেতো। আমরা হয়ে পরলাম ওদের বিশ্বাসের স্থল। বেশ কাটছিলো। গতমাসেই তো টনার মেয়েটার অন্নপ্রাসনে হাজির হয়েছিলাম। মনের মধ্যে প্রচন্ড টেনসন। কি করবো, হঠাৎ হাজির, গিয়ে দেখি টনার মেয়ের অন্নপ্রাসন। ওর বউ কিছুতেই ছাড়বে না। আমারও কাজ আছে। চলে আসবো। বাধ্য হয়ে পান্তা খেয়ে চলে এলাম। ওর বউটা কাঁদছিলো। অনিদা তোমাকে গরমভাত খাওয়াতে পারলাম না। বলেছিলাম পরে একদিন এসে খেয়ে যাবো। সেই শেষ যাওয়া। আর আজ।
বুকের ভেতর কে যেনো পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। জানলার ধাপিতে হাতটা রেখে মাতা নীচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অন্ধকারের মধ্যেও আমগাছের পাতা গুলোকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম।
ঘরের লাইটটা জ্বলে উঠলো। ফিরে তাকালাম। গেটের মুখে বড়মা ছোটমা বৌদি মিত্রা ইসি।
জোড় করে হেসেফেললাম। জানলা থেকে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলাম। কাছে এসে দাঁড়ালাম।

অনিমেষদারা ডাক্তারদাদার বাড়িতে গেছে।
বৌদি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললো। দাদা মল্লিকও গেছে।
কনিষ্করা ফিরে গেছে।
ওরা নিচের ঘরে শুয়েছে।
তোমরা একটু শুয়ে পরো। নাহলে সকালে উঠতে পারবেনা।
বড়মা ছোটমা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। ইসি মিত্রা আমাকে অবাক হয়ে দেখছে।
হেসে ফেললাম। কি দেখছো অমন করে।
ছোটমা জড়িয়ে ধরলো। আরও কতো ব্যাথা এই বুকে লুকিয়ে রেখেছিস।
এই দেখো বোকার মতো কাঁদে। অনি ঠিক আছে, একটুও বিগড়ে যায় নি। যাও অনেক রাত হয়েছে।
দেখলাম ইসির চোখ দিয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পরছে।
এই দেখো তোমরা এরকম করলে চলে কি করে। আমার যা কিছু সব তোমরা। তোমরা এরকম করলে অনি দুর্বল হয়ে পরবে। তোমরা কি এটা চাও। যাও যাও। আর দেরি কোরো না।
ছোটমা আমাকে ছাড়লো।
তোমরা কোথায় শোবে নিচে না ছোটর ঘরে।
দেখি। বৌদি বললো।
তুমি অনিমেষদাকে কিছু বোলো না। দাদা বড়ো একা হয়ে পরেছে।
বৌদি মাথা নীচু করে কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলো।
আমি ওদের ধরে নিয়ে বারান্দা দিয়ে আস্তে আস্তে ছোটমার ঘরের কাছে এলাম। একবার করে সকলকে জড়িয়ে ধরলাম। সবাই আবেগে আপ্লুত। ইসিকে বললাম, অনিকে দশ বছর পর দেখছো, অনি হয়তো অনেক নোংরা হয়ে গেছে। পারলে ক্ষমা কোরো।
ইসি আমাকে জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
ওদেরকে ছোটমার ঘরে ঢুকিয়ে আমি মিত্রা ফিরে এলাম। দুজনে ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখলাম ওরা ছোটমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতনাড়লাম। ওরা ঘরে ঢুকে গেলো। আমরা দরজা বন্ধ করলাম।
পায়ে পায়ে টেবিলের সামনে এলাম। মোবাইলটা টেবিল থেকে তুলে নিলাম। স্যুইচ অফ করা ছিলো অন করলাম। দেখলাম কয়েকটা মিস কল। তার মধ্যে সিংজীর মিশ কলও আছে। অর্ক একটা ম্যাসেজ করেছে।
তোমার মতিগতি বোঝা মুস্কিল, কতো কষ্ট করে মালটা তুললাম, অরিত্র বললো যাবেনা।

বুবুন।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম। চোখ ছল ছল করছে।
আমার সঙ্গে একজায়গায় যাবি। আমি বললাম।
এখন ? কোথায়!
তুইতো বুবুনকে ভালোবাসিস। তাহলে প্রশ্ন করছিস কেনো।
মিত্রা আমার বুকে মুখ রাখলো।
একটু দাঁড়া।
আমি সিংজীকে ফোন করলাম।
বলুন অনিবাবু।
আপনি কি অফিসে।
হ্যাঁ।
একটা গাড়ি পাঠাতে পারবেন।
আভি।
হ্যাঁ।
কোথায় বলেন।
আমার বাড়ির সামনে।
ওই ট্র্যাংগুলার পার্কে।
হ্যাঁ। গাড়িটাকে বাড়ির থেকে একটু দূরে দাঁড়াতে বলবেন।
ঠিক আছে আমি আভি পাঠিয়ে দিচ্ছে।
আর একটা কথা।
বলেন।
কোনো কেশ লিখবেন না। আমি না যাওয়া পর্যন্ত।
এ কি বলছেন অনিবাবু!
আমি গিয়ে বলছি।
ঠিক আছে আপনি আসেন।
মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওকে ঠোঁটের ওপর আঙুল দিয়ে চুপ থাকার ইশারা করলাম। আলমাড়িটা আস্তে করে খুলে পার্টনারের স্টাম্পটা বার করলাম। অফিসের প্যাড বার করলাম। মিত্রার হাতে দিয়ে বললাম, একটু ধর। আমি নিচে গিয়ে ইশারা করলে পা টিপে টিপে চলে আসবি।
ওর চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। মুখে এক চিলতে হাসি।
আমি ঘরের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে। ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নিঃশ্বাসে বুঝতে চেষ্টা করলাম কেউ জেগে আছে কিনা। দেখলাম সারাবাড়ি নিস্তব্ধ। পা টিপে টিপে নীচে নেমে এলাম। গেটে তালা ঝুলছে। দেখলাম ছগনলালের ঘরের দরজাটা সামান্য ভেজানো আছে। একটু ঠেলতেই খুলে গেলো। আমি জানি দরজার পাশেই একটা হুকে চাবিটা ঝোলানো থাকে। হুকথেকে চাবিটা নিয়ে বারান্দায় তাকালাম। দেখলাম মিত্রা বারান্দায় দাঁড়িয়ে। ওকে ইশারায় ডাকলাম। ও নিচে চলে এলো। আস্তে করে গেটের তালাটা খুলে। একটু ফাঁক করে মিত্রাকে প্রথমে বাইরে বার করলাম, তারপর নিজে বেরিয়ে এলাম। তালাটা লাগিয়ে চাবিটা ছুঁড়ে বাগানের রাস্তায় ফেলেদিলাম। যাতে সকালে কারুর কোনো অসুবিধা না হয়। দুজনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। চারিদিক শুনশান। জনমানব শূন্য। দু একটা রাস্তার কুকুর গুটি শুঁটি মেরে শুয়ে আছে। আমাদের দুজনকে একবার মুখ তুলে দেখে ওউ ওউ করে ডেকে উঠলো। মিত্রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে। দুজনে হন হন করে হাঁটছি। ট্র্যাংগুলার পার্কের কাছে আসতে দেখলাম গাড়িটা এসে কাছে দাঁড়ালো।
স্যার আপনি অনিবাবু।
হ্যাঁ।
দু’জনে গাড়িতে উঠে বসলাম। ড্রইভার সাহেব মোবাইলে আমাদের ওঠার সংবাদ পৌঁছে দিলেন।
দুজনে গাড়ির পেছনের সিটে স্থানুর মতো বসে আছি। কাল রাতের পোষাক এখনো ছাড়া হয়ে ওঠে নি। কারুর মুখে কোনো কথা নেই। মিত্রাকে ইশারায় বললাম মোবাইলের স্যুইচ অফ করে দে। মিত্রা মোবাইলের স্যুইচ অফ করে দিলো। দুজনে দুজনের দিকে তাকাই আর মিটি মিটি হাসি। গাড়িটা সল্টলেকে ওদের দফতরে যখন এসে পৌঁছলো দেখলাম ভোরের আলো ফুটছে। গাড়ি থেকে নামতেই দেখি সিংজী গেটের কাছে দাঁড়িয়ে। এগিয়ে এলেন। খিল খিল করে হেসে ফেললেন।
একি অনিবাবু, একেবারে ভাবিকে সঙ্গে করে লিয়ে এসেছেন।
মিত্রার সঙ্গে সিংজীর পরিচয় করিয়ে দিলাম।
সিংজী।
বলুন।
আমরা যে এখানে এটা কাউকে জানাবেন না।
ঠিক আছে।
প্রবীরদা কোথায়।
ভেতরে।
কেশ লিখে ফেলেছেন।
না বেলের অর্ডারটা লিখেছি। আপনি জামিন নিবেন। আপনার মতো লোক জামিন করাতে এসেছে। আমি না ছেড়ে পারি কি করে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
পায়ে পায়ে ভেতরে চলে এলাম। বাইরে কিছু লোককে দেখলাম। আমাদের দেখে চাপাস্বরে কিছু কথা বলছে। ভেতরে আসতেই দেখলাম প্রবীরদা সিংজীর ঘরে মাথা নীচু করে বসে আছে। আমাদের দুজনকে এইভাবে এই পোষাকে দেখবে কল্পনাও করতে পারে নি। ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো।
মিত্রা প্রবীরদার পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বললো, একি করছেন প্রবীরদা।
তুই আমাকে প্রবীরদা বলিস না। তোর মুখে ওই নামটা শোভা পায় না।
ওকে ছাড়ুন, বুবুনের এখন অনেক কাজ।
প্রবীরদা আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছছে।
তোমার মোবাইলটা কোথায়।
বাইরে।
কার কাছে আছে।
তোর বৌদির কাছে।
যাও গিয়ে বলে এসো, মোবাইলের স্যুইচ অফ করতে। আমরা যে এখানে আছি কেউ যেনো জানতে না পারে।

মিত্রার দিকে ঘুরে তাকালাম।
তুই প্রবীরদার সঙ্গে থাক। আমি ভেতরে যাই।
আমি সিংজীর সঙ্গে ভেতরে চলে এলাম। সব গুছিয়ে কাজ সারতে প্রায় দেড় ঘন্টা লাগলো। আমাদের অফিসের প্যাডে চার রকমের চিঠি লেখা হলো। সব আইন বাঁচিয়ে, আমি মিত্রা দুজনে সই করলাম। প্রায় গোটা পঁচিশেক। সব জায়গাতেই অফিসের স্টাম্প লাগাতে হলো। কাজ শেষ সিংজীকে বললাম চলুন আমার বাড়িতে।
এখন না, খুব টায়ার্ড।
আমার থেকেও।
সিংজী হো হো করে হেসে ফেললো।
বাইরে বেরিয়ে এলাম।
সিংজী কাজ সেরে বেরিয়ে আসতে আরো পনেরো মিনিট সময় নিলো।
বাইরে বোরোতেই প্রবীরদা একচোট জড়িয়ে ধরে আবার হাপুশ নয়নে কেঁদে উঠলো।
এখন ছাড়ো। চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মিত্রা প্রবীরদার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলো। পিকুর মতো প্রবীরদারও একটা ছেলে আছে। ওর গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম।
তোমার গাড়ি আছে।
হ্যাঁ।
তুমি মিত্রাকে নিয়ে তোমার গাড়িতে বোসো। আমি সিংজীর গাড়িতে বসছি।
প্রবীরদা বাধ্য ছেলের মতো আমার কথা শুনলো।
সবাই গাড়িতে উঠে যাত্রা শুরু করলাম। বাড়ির গেটের মুখে এসে যখন দাঁড়ালাম। তখন সূর্য অনেকটা ওপরে। আমি প্রথম গাড়ি থেকে নামলাম। গেটের মধ্য দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম। অনিমেষদা বিধানদা দাদা মল্লিকদা ডাক্তারদাদা বসে আছে অনুপদা রূপায়ণদাকে দেখতে পেলাম না। আমি গেটের দরজা খুললাম। ওরা সবাই নেমে এসেছে। প্রবীরদা আমার হাতটা এসে চেপে ধরলো। দূর থেকে দেখলাম ওরা সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে। বিধানদার মুখে একচিলতে হাঁসি। এই হাঁসি এবার সবার মুখে ছড়িয়ে পরলো। পায়ে পায়ে ওরা এগিয়ে আসছে। অনিমেষদা ফোনের বোতাম টিপছে। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো, বান্ধবী দেখবে এসো তোমার ছেলের কীর্তি।
আমরা বাগানে ঢুকে পরেছি। নিচের বারান্দায় চেনা মুখের ভিড়। বিধানদা এসে আমার কাঁধটা ধরে জোড়ে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বুকে টেনে নিলো।
কি বিধানবাবু সব মাংস আপনি খেলে আমি কি ঝোল খাবো।
বিধানদা আমাকে ছেড়ে মিত্রাকে বুকে টেনে নিলেন।
তোদের দুটোকে কেউ হারাতে পারবে না। তোরা সকলকে বুকে করে আগলে রাখিস।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে কেঁদে চলেছে। সবাই মাঠের মধ্যে এসে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
অনিমেষদা ফোনটা পকেটে রেখে আমার দিকে তাকালেন।
আয় আমার বুকে আয়। তোর মতো আমার বুকটা অতোটা চওড়া নয় বুঝলি।
সবাই আমার দিকে কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
কি প্রবীর জীবনে প্রথম কাঁদছো। এটা হেরে যাওয়ার কান্না, না দুঃখের।
বিধানদা প্রবীরদার সামনে দাঁড়িয়ে।
অনিকে আমি নিজের হাতে তৈরি করিনি। ওকে প্রকৃতি তৈরি করেছে। তোমাদের নিজে হাতে গড়েছি। এখন দেখছি মানুষ গড়তে বাঁদর তৈরি করে ফেলেছি।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে।
কি বনানী। অনির সম্বন্ধে অনেক কথা পার্টি অফিসে গিয়ে আমাকে বলেছো। মুখ বুঁজে তোমার সব কথা শুনেছি। কোনো উত্তর দিই নি। আজ তোমার প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছ।
ওঃ বিধানবাবু।
থামো অনিমেষ। ওইটুকু দুধের শিশু কেমন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে দেখো। ও কি শিখবে। আমাদের কীর্তি কলাপ।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। এখন ওরা এসেছে। চলুন ভেতরে যাই।
আমি মিত্রা তখন বড়মা ছোটমা বৌদির সামনে দাঁড়িয়ে। ওরা অবাক চোখে দেখছে। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks