দেখি নাই ফিরে - (Part-44)

একেবারেই না।
গলাশুনে মনে হচ্ছে।
কি করছেন।
চা খেতে খেতে তোর লেখাটা পরছি। আর ব্রিফ করছি।
কেনো দাদা আমার লেখাটা কি এতই ইমপর্টেন্ট যে ব্রিফ করতে হবে।
তুইতো আমায় সমস্যায় ফেলেছিস কিনা।
আমি আবার কি সমস্যায় ফেললাম।
শুক্রবার মিটিং আমাকে বিষয়টা নিয়ে বলতে হবে।
কেনো জেরক্সতো আপনার কাছে আছে।
খুঁজে পাচ্ছিনা। তুই কি ফিরছিস।
আপনি কি করে বুঝলেন।
গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি।
হ্যাঁ। আজকে একবার আপনার কাছে যাবো।
আমিও তোকে তাই বলবো মনে করছিলাম। তুইতো আমার মুখের কথাটা কেরে নিলি।
আমার একটা সমস্যা হয়েছে।
তুইতো সমস্যা ছাড়া আমাকে ফোন করিসনা।
এটা অভিমানের কথা।
তোর বৌদি লেখাটা পরতে পরতে বলছিলো অনি বড্ড ভালো লিখে ফেলেছে।
এটা অসম্ভব রকমের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
তোর সমস্যার কথা বল।
আজ আমাকে সরকারের এক আমলা ডেকে পাঠিয়েছে। তাই যাচ্ছি।
আবাসন দপ্তরের।
হ্যাঁ।
একবারে যাবিনা। লোকটা অনেক দিন থেকে জ্বালাচ্ছে। ওটাকে দূর করতে হবে। ওর আরো অনেক সমস্যা আছে। দাঁড়া ওটাকে এমন জায়গায় পাঠাবো আর কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
তাহলে আমি যাবোনা ?
একবারে যাবিনা। তোর কাজ তুই করেছিস। ওর ক্ষমতা থাকলে প্রমাণ করুক।
আমিও সেটা দাদাকে বলেছিলাম। তবু দাদাকে ওরা প্রেসার করেছে। দাদা বললো তুই নিরঞ্জনকে নিয়ে একবার যা।
কে নিরঞ্জন।
বাবা তুমি পার্টির মাথা হলে কি করে বলোতো।
অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো।
আরে পার্টি ওই একটা নিরঞ্জনকে নিয়ে চলে। বলনা কে সেই মহানব্যক্তি
নিরঞ্জনদা আমার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকিয়ে আছে।
আমার জেলার সভাধিপতি।

ও হ্যাঁ হ্যাঁ ভদ্রলোকের সঙ্গে একবার আলাপ হয়েছিলো। মনে পরছে। ওই জেলার দায়িত্বে বিধান আছে।
বৌদিকি সকালে চাটা কড়া করে দেয়নি।
নারে আজকের চাটা কেমন পাতলা পাতলা করেছে।
দাদার সম্পর্কে ভাই হয় আমায় উনি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
বলছিনা একবারে যাবিনা। তুইতো ফাইল নম্বর দিয়ে দিয়ে লিখেছিস। এটার দরকার ছিল। সব জায়গায় কোরাপসন। এত চেষ্টা করেও কিছুতেই বন্ধ করতে পারছিনা। এইসব লোক গুলোর জন্য আমাদের সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তুমি বললে যাবো, না হলে যাবোনা।
তুই এক কাজ কর নিরঞ্জনবাবুকে নিয়ে দুপুরে আমার বাড়িতে লাঞ্চের সময় চলে আয়।
দাদা মল্লিকদা যদি সঙ্গে যায় আপত্তি আছে।
একেবারে না। অনেকদিন দেখা হয়নি কয়েকঘন্টা গল্প করা যাবে।
ঠিক আছে।
আমি তোর বৌদিকে বলেরাখছি। তুই আসছিস।
তুমি বললে আমি যাবোনা তা হয়।
ঠিক আছে।
ফোনটা আফ করলাম। রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে। ফোনটা পকেটে ঢোকালাম। নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে ফললো। অনি আজ আমার দশারফা হয়ে যাবে।
কেনো।
আমি অনেক অন্যায় করেছি।
ভুল স্বীকার করে নেবে। অনিমেষদা নিজের দায়িত্বে সব ঠিক করেদেবে। অনিমেষদার মুখের ওপরে কথা বলার লোক এই মুহূর্তে পার্টিতে খুব কম ব্যক্তি আছে।
তোর সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠতা কি করে হলো।
জেনে তোমার লাভ।
না বুঝতে পারছি পার্টিতে টিঁকতে গেলে তোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
আমি ব্যবসায়ী লোক। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লাভ নেই।
নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে আছে। প্লিজ তুই এরকম করিসনা।
আমার তিনশো একর জমি।
তুই যা ভাঁজ মারলি তাতে আমি না দিলেও তুই আদায় করেনিবি।
বৃথা তুমি বড়মাকে কাল রাত থেকে টেনসনে ফেললে। এই মাথা নিয়ে কি করে যে পার্টি করো বুঝতে পারিনা।
সত্যিরে মনেহচ্ছে আমার এখনো অনেক বাকি আছে।
কার জোড়ে জেলা সভাধিপতির পদটা বাগিয়েছো।
বিধানদাই দিয়েছে।
তখন তুমি ভালো ছিলে দুবছরে অনেক কামিয়ে নিয়েছো। তাইনা।
তুই এভাবে বলিসনা।
পার্টিটা কামানোর জায়গা নয়। ভালোবাসার জায়গা। জানো অনিমেষদার বাড়িতে গেলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু ভদ্রলোক যদি মনে করতেন আমি রাজপ্রসাদে থাকবো। এখুনি তা করতে পারেন। একপয়সাও লাগবেনা।
জানি।
তাহলে পার্টি তোমাকে পুষবে কেনো।
আমার ভুল হয়েগেছে।
তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছো। ভুগতে তোমাকে হবে। আমি চেষ্টা করবো রিকভার করার। কিন্তু কতটা পারবো জানিনা।
তুই একটু দেখ।
আমি তোমার পেছনে বলছিনা। তোমার সামনে বলছি। এখন থেকে তোমার ভগ্নীপতিকে মুখ মুছে ফেলেদাও। নাহলে তোমার সামনে ঘোর বিপদ।
আমি কি করি বলতো।
আগে বড়মাকে ফোন করে সব জানাবে। বড়মা কষ্ট পাবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবোনা।
ঠিক আছে ফোন করছি।
তোমার ফোন থেকে নয় আমি ফোন করছি তুমি কথা বলবে। আমার শোনার দরকার আছে।
তাই দে।
আমি মিত্রার ফোনে ডায়াল করলাম।
কিরে ধাবায় বসে গিলছিস না।
হ্যাঁ। আলুপরটা চিকেন চাঁপ মটর পনির।
দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।
ঠিক আছে বড়মাকে দে।
বড়মা তোর কথা শুনতে পাচ্ছে।
তোরা কোথায়।
তোর স্কুলে এসেছি। ঘুরতে।
কে কে আছে।
সবাই আছে।
খুব বাড়িয়ে বাড়িয়ে আমার গুণকীর্তন করছিস।
বেশ করছি। নে বড়মা কথা বলবে।
দে। কিগো এখনো অনির ওপর রাগ পরেনি।
তোর ওপর রাগ করবো কেনো।
তাহলে অভিমান।
চুপচাপ।
অনি ভুল কাজ করেনা। এটা বহুবার বলেছি। আবার বললাম। নাও নিরঞ্জনদার সঙ্গে কথা বলো।
দিদি।
বল।
আমার সমস্যার সমাধান হয়েগেছে।
তাই।
বড়মার গলার স্বর পরিবর্তন হয়েগেছে।
তোর সঙ্গে আর কথা বলবোনা। অনিকে দে।
আমি ইশারায় নিরঞ্জনদাকে বললাম তুমি কথা বলো। আমি বলবো না।
কিরে চুপচাপ কেনো। অনিকে দে।
অনি তোমার সঙ্গে কথা বলবেনা।
তাহলে রেখে দে। তোর সঙ্গে যা কথা বলার হয়েগেছে। মিত্রা ফানটা বন্ধ কর।
বড়মা ফোনটা রেখেদিলো।
আমি ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে জানলার দিকে মুখ করে বসে থাকলাম। কলকাতার খুব কাছে চলে এসেছি। আবার পকেট থেকে ফোনটা বার করে দাদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজ। মল্লিকদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজ। পকেটে ঢুকিয়ে রেখে দিলাম।
জানলার দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছু ভালোলাগছে না। এক স্বপ্নদেখি আর এক হয়ে যায়। মানুষের জীবনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্যাপার গুলো মাঝে মাঝে এমন ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তল খুঁজে পাওয়া যায়না। এখান থেকেই মানুষের জীবনে জটিলতার সৃষ্টি হয়। একে ওপরকে ভুল বোঝে। দূরত্ব তৈরি হয়।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বারকরলাম। দেখলাম মল্লিকদার ফোন।
বলো।
সরি স্যার তোর ছোটমার সঙ্গে একটা ভাইট্যাল ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলাম।
বলো কি বলছো।
বাবা খুব গম্ভীর মনে হচ্ছে।
না। ঠিক আছি।
কলকাতা ঢুকতে আর কতটা বাকি।
আধঘন্টা। তোমরা কোথায় ?
অফিসে ঢুকে পরেছি।
এত সকালে।
তুই যা শুরু করেছিস। এরপর খাট বিছানা নিয়ে অফিসেই থাকতে হবে।
কেনো।
সবাই এসে তোকে খোঁজে। না পেলে দাদা আমি।
ভালোই তো ভিআইপি হয়ে যাচ্ছ।
ক্ষমাদে। বুঝেছি তোর কথা বলার মুড নেই এখন। অফিসে আয় সব বলছি।
ঠিক আছে।


অফিসের গেটে গাড়িটা থামতেই সিকুরিটির ছেলেটা এগিয়ে এলো। দরজা খুলে স্যালুট করে পাসে দাঁড়ালো। আমি ভাবলেশহীন মুখে একবার চারদিকটা দেখে নিলাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেচন গাড়ি থেকে নামলো।
গাড়িটা ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করদাও।

হ্যাঁ স্যার।
আমি দরজা খুলে রিসেপসনিস্ট কাউন্টারের সামনে আসতেই সেই ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়িয়ে মর্নিং স্যার বলে উঠলেন। আমি খুব গম্ভীর হয়ে লিফ্ট বক্সের সামনে দাঁড়ালাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছনে। আমাকে মেপে চলেছে। লিফ্ট ওপরে ছিলো বোতামে হাত দিতে নিচে নেমে এলো। আমি ওপরে উঠলাম।
নিরঞ্জনদা তুমি দাদার ঘরে বোসো। চেনোতো ঘরটা।
না।
এসো।
নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেছন এলো আমাকে দেখেই হরিদা বলে উঠলো। ছোটোবাবু কখন ফিরলে।
এইতো এখুনি। দাদা ভেতরে।
হ্যাঁ।
আমি দরজা খুলতেই দাদা আমার দিকে তাকালেন। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম যাও ভেতরে গিয়ে বসো। আমি আসছি।
নিরঞ্জনদা ভেতরে গেলো।
তুই আসবি না।
আমি ওপর থেকে আসছি।
সিঁড়িদিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। সোজা চলে এলাম সনাতন বাবুর ঘরে। সনাতন বাবু আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। ছোটোবাবু সব ঠিক আছে।
হ্যাঁ।
আমার কাজ সব হয়েছে।
রেডি আছে। এখন দেবো।
না। ফোন করলে দাদার ঘরে চলে আসবেন।
আমি সনাতনবাবুর ঘর থেকে নিউজরুমে চলেএলাম।
আমার টেবিলটার সামনে দেখলাম তিনচারটে ছেলে বসে আছে। চিনতে পারলামনা। নিউজরুমে ঢুকতে মল্লিকদা আমায় দেখেছে। আমি একবার দেখলাম তারপর নিজের টেবিলের সামনে গেলাম। ছেলেগুলো প্রথমে বুঝতে পারেনি। তারপর মল্লিকদার ইশারায় যে যার চেয়ার ছেরে উঠে দাঁড়ালো। তারপর আস্তে আস্তে নিজের জায়গায় চলে গেলো।
আমি টেবিলে বসলাম। নিজের চিঠিপত্রের বান্ডিলটা একবার দেখলাম। দেখলাম ঝিমলি আর তনুর চিঠি আছে। বাকি গুলো সব লেখার ওপর আর ইনভিটেসন কার্ড। মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন।
বল।
তুই কি অফিসে পৌঁছে গেছিস।
এতোক্ষণে খবর চলে যাওয়ার কথা।
তোর কি হয়েছে বলনা।
কিছু না।
যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে গেলি।
আমি ঠিক আছি।
বড়মা মন খারাপ করছে।
দোষ করেছে ফল ভোগ করতে হবে। এখন রাখ কথা বলতে ভালো লাগছে না।
আচ্ছা।
মল্লিকদা কাছে এলো।
শরীর খারাপ।
না।
মন খারাপ।
না।
তাহলে কেমন কেমন যেন লাগছে।
মল্লিকদার টেবিলের ফোনটা বেজে উঠলো।



যাও তোমার ফোন এসেছে।
আমি ঝিমলির চিঠিটা খুলে পরলাম। ফোন না করার জন্য অনেক কথা লিখেছে। অনেক মান অভিমান। ডাক্তারীতে চান্স পেয়েছে। আমি খুব লাকি। আগামী সপ্তাহে ভাইজ্যাক যাবে আমাকে একবার সময় দিতে হবে।
মল্লিকদা কাছে এসে বললো। দাদা তোকে একবার ডাকছে।
তুমি যাও আমি যাচ্ছি।
মল্লিকদা চলে গেলো।
আমি তনুর চিঠিটা পরলাম। তনু অনেক কথা লিখেছে। বিবিসির একটা ভালো পোস্ট হোল্ড করছে। আমি মালিক হয়েছি সেই খবরটা কেনো জানাইনি তার জন্য তলব করেছে। পারলে একবার লন্ডন যাওয়ার অনুরোধ করেছে।
আমি নিউজ রুম থেকে সোজা চলে এলাম দাদার ঘরে। দেখলাম তিনজনে বসে কথা বলছে।
কিরে তোর নাকি মেজাজ বিগড়ে গেছে।
আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললাম। এ খবরটা আবার তোমায় কে দিলো।
তোর বড়মা বললো।
একটু চা খাওয়াবে।
সকাল থেকে কিছু খেয়েছিস।
না।
কি খাবি বল।
ডিম টোস্ট বলো। নিরঞ্জনদাও কিছু খায় নি।
দাদা বেলে হাত দিতেই হরিদা ঘরে এলো।
হরি চারটে ডিমটোস্ট বানিয়ে নিয়ে আয়তো।
হরিদা বেরিয়ে গেলো।
তুমি ওরকম ভেটকিমাচের মতো মুখ করে বসে আছো কেনো। দাদাকে বলেছো।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকালো। বলেছি।
দাদা কি বললো।
তুই চুপ কর। তোর জন্য সব গন্ডগোল।
হেসেফেললাম।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম মিঃ ব্যানার্জীর ফোন। প্রথমে ভাবলাম রিসিভ করবো না। তারপর ঠিক করলাম রিসিভ করি।
হ্যাঁ দাদা বলুন।
অনি বাবু খবর কি।
খুব ভালো আপনার প্রাক্তনস্ত্রীকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করলাম। আপনার কথা রেখেছি। খুশিতো।
মিঃ ব্যানার্জী চুপ করে গেলেন। কোনো কথা বললেন না।
কি হলো কথা বলচেন না কেনো। আপনি খুশী নন।
দেখলাম সবার মুখ চোখের চেহারা বদলে গেলো।
আপনার সঙ্গে একটু দরকার ছিলো।
আমি জানি।
কবে সময় হবে।
দিন সাতেকের আগে হবে না।
আমার একটু তাড়া ছিলো।
আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে নিন। আপনার এখনো বেশ কিছু কাজ বাকি আছে।
আজই একটা সময় দিন। খুব দরকার।
হবেনা আমি কলকাতায় কয়েকঘন্টার জন্য এসেছি। আবার ফিরে যাবো। মিত্রার সঙ্গে কথা হয়েছে।
না।
রাখি।
একটু সময় পাওয়া যাবে না।
যাবে সাতদিন পর। ওই যে আপনার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম।
ফোনটা কেটে দিলাম।
আমার চোখে মুখের চেহারা যে বদলে গেছে দাদা সেটা বুঝতে পেরেছে।
আমি দাদার টেবিলের ফোনটা চেয়ে নিলাম। সনাতনবাবুকে ফোনে ধরে বললাম আমাদের কমপিউটার ডিভিসনের চিফ ম্যানেজারকে একটু ডেকে আনুনতো।
দাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা গম্ভীর। নিরঞ্জনদা ফ্যাকাশে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। হরিদা প্লেটে করে খাবার নিয়ে ঢুকলো।
আমি একটা প্লেট টেনে নিয়ে গোগ্রাসে গিলতে আরম্ভ করলাম।
কিরে ওই ভাবে খাচ্ছিস!
দরকার আছে।
কোথায় যাবি আবার।
দেখোনা রগরটা।
ওরা তখনো খাবারে হাত দেয়নি। আমার খাওয়া হয়ে গেলো। ঢক ঢক করে জলটা গিলে নিলাম।
আর এক প্লেট আনাই।
না।
তুই আমারটা খা। মল্লিকদা বললো।
উঃ তোমরা বড়ো বিরক্ত করো।
ওরা অবাক হয়ে আমার কীর্তি কলাপ দেখছে।
সনাতনবাবু ঘরে ঢুকলেন। পেছন পেছন সেই ব্যক্তি। উনি হয়তো আমায় দেখেছেন আমি এখনো পর্যন্ত ওনাকে দেখি নি। আলাপও হয়নি।
বসুন।
ভদ্রলোক বসলেন।
আপনার নাম।
দিগন্ত চৌধুরী।
আমি অনি ব্যানার্জী।
আমি জানি।
আজ আপনার সঙ্গে পরিচিত হলাম।
আমি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।
হরিদা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমিতাভদা আমাকে গোগ্রাসে গিলছে। মল্লিকদা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সনাতন বাবু ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছেন।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিগন্তবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার একটা উপকার করতে পারবেন।
বলুন।
দশটা থেকে দশটা পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত আমাদের হাউস থেকে আউট গোয়িং কলের একটা লিস্ট আমাকে একটু বের করে দিতে পারবেন।
হ্যাঁ। এই টুকু কাজ।
খুব সামান্য। কিন্তু কনফিডেন্সিয়াল। আশারাখি আপনি সেটুকু বজায় রাখবেন।
অবশ্যই। এখুনি যাই।
চাটা খেয়ে নিন। আর একটা কথা আপনি এটা নিজে হাতে করবেন কাউকে দিয়ে নয়।
ঠিক আছে।
উনি চা খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি সনাতনবাবুর দিকে তাকালাম।
সুনিতদার চিঠিটা রিসিভ হয়ে এসেছে।
এসেছে।
কিংশুকের।
এসেছে।
টাকার কথা কি বললো।
দিতে পারবে না।
ঠিক আছে। আমার কাগজগুলো নিয়ে আসুন।
সুনিতবাবু বেরিয়ে গেলেন।
আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। দাদাকে যাওয়ার ব্যাপারটা বলেছো।

না।
কেনো।
তুই বলবি।
বাঃ আমি কলা ছাড়িয়ে দেবো তুমি খালি খাবে।
তুই আর কত অপমান করবি।
দেখছোদাদা নিরঞ্জনদা কি বলছে।
আমি শুনলাম ওর মুখ থেকে। অনিমেষ কি বলছে।
কেনো সব নিরঞ্জনদাকে শুনিয়েছি। কিছু গোপন করিনি।
কিরে নিরঞ্জন তুই এটা বলিসনিতো।
এমনকি বড়মার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছি।
তুই কথা বলিসনি কেনো।
একটু কষ্টপাক না হলে শক্ত হবেনা।
আমাকে অন্ততঃ ছ’বার ফোন করেছে।
তোমার আনন্দ হচ্ছেনা।
কেনো।
তোমাকে কোনোদিন বড়মা এইভাবে ছ’বার ফোন করেছে।
দাদা হো হো করে হেসে ফেললো।
মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছে।
ভায়ের উপকার করতে যাবে একটু কষ্টপাবে না তা হয়।
আমি ফোন করি।
সে তুমি করতে পারো আমি কথা বলবোনা।
আবার হাসি। কিরে নিরঞ্জন বুঝতে পারছিস।
নিরঞ্জনদা মাথা নীচু করে বসে আছে।
দাদাকে আর সব খোলাখুলি বলেছো না পেটে রেখে দিয়েছো।
সব বলেছি।
ওখানথেকে ফোন এসেছিলো। টাইম ওভার হয়ে গেছে।
না ফোন আসে নি।
তাহলে বুঝতে পারছো। কাজ শুরু হয়েগেছে।
নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকালো।
তাকিয়ে লাভ নেই। এটাই অনির গর্ব। মুখে যা বলে তা করে। দিদিকে ফোন করেছো।
না।
কেনো।
চুপচাপ।
তোমার জন্যই কিন্তু মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে। একদিকে অনি আর একদিকে নিরঞ্জন। না পারচে ওগড়াতে না পারছে গিলতে। উভয় সংকট।
নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফললো।

দিগন্তবাবু দরজা ঠেলে মুখটা ঢুকিয়ে বললো আসতে পারি।
আসুন।
ভদ্রলোক আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলো। আমাকে লিস্টটা দিয়ে বললো। আর কিছু আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
না। অনেক ধন্যবাদ। আজ আপনার সঙ্গে ঠিক জমিয়ে গল্প করতে পারছিনা। হাতের কাজ সেরে বশে আপনার সঙ্গে কথা বলবো।
ঠিক আছে। আমি আসি।
আসুন।
আমি কল লিস্টের দিকে ভালো করে চোখ বোলালাম। দাদাকে বললাম পেনটা দাওতো। দাদা পেনটা এগিয়ে দিলো। আমি বেশ কয়েকটা নম্বর দাগ দিলাম। ফোনটা তুলে নিয়ে সনাতনবাবুকে রিং করলাম দেখলাম নো রেসপন্স হয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম ভদ্রলোক ঘর থেকে বেরিয়ে পরেছেন।
আমার কথাই ঠিক মিনিট খানেকের মধ্যে সনাতনবাবু দাদার ঘরে ঢুকলেন। বসলেন। আমাকে কাগজগুলো হাতে দিলেন।
কি ব্যাপার ছোটবাবু অফিসে সবাই কিরকম তটস্থ তটস্থ মনে হচ্ছে।
কি করে বলবো। আপনি এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আপনি খোঁজখবর নিন।
কাগজগুলো দেখতে দেখতে হিমাংশুকে একটা ফোন লাগালাম।
কিরে কোথায়।
অফিসে। একবার আসবি।
কেনো।
একটু দরকার আছে।
একটু কাজ ছিলো।
থাক। রেখে চলে যায়। মিনিট দশেকের জন্য।
আচ্ছা।
সনাতনবাবু আমাদের রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলাকে একটু ডাকুনতো।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা ঠিক বোধোগম্য হচ্ছেনা। রিসেপসনিস্ট এখানে আসবে ব্যাপারটা কি।
কিহলো হাঁকরে তাকিয়ে আছেন কেনো। ডাকুন।
এইবার নিরঞ্জনদা একটু নড়ে চড়ে বসলো। আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।
সনাতনবাবু ফোন করলেন।
দাদাকে বললাম আর এক রাউন্ড চায়ের কথা বলো হরিদাকে।
কিছু খাবি।
না।
কিছুক্ষণপর ভদ্রমহিলা এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসলেন। সেই ছলবলিয়া ভাবটা এখনো অক্ষুন্ন। আমিও তাকিয়ে একটু হাসলাম।
বসুন ম্যাডাম।
উনি বসলেন।
ম্যাডাম আপনাকে অনেকে বিরক্ত করছে না।
একবারেই না।
আপনার কাজ করতে কোনো অসুবিদে হচ্ছে নাতো।
না স্যার।
স্যার! মুখ তুলে তাকালাম।
আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন।
বলুন।
কললিস্টটা দেখিয়ে বললাম এই নম্বরগুলো কারা চেয়েছিলো আপনাকে একটু জানাতে হবে। আপনি নিচে কন্ট্রোল করছেন।
এইবার ভদ্রমহিলা যেনো আকাশ থেকে পরলেন।
দাদা মনে হয় আমার চালটা এইবার কিছুটা হলেও ধরতে পেরেছে। মুখ তাই বলছে। নিরঞ্জনদার চোখ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সনাতনবাবু আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
ম্যাডাম আমার সময় কম। মুখ নীচু করে বসে থাকলে চলবেনা।
ভদ্রমহিলা কিছুতেই মুখ তুলছেনা। ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে আরম্ভ করলো।
কাঁদছেন কেনো। আমি কি আপনাকে কোনো ইনসাল্ট করলাম।
ভদ্রমহিলা মাথা নারছেন। না।
তাহলে আপনার আপত্তি কোথায়।
ভদ্রমহিলা রুমালদিয়ে চোখ মুছছেন।
কিগো রনিতা অনি যা বলছে তুমি উত্তর দিচ্ছনা কেনো।
আমি বলতে পারবোনা দাদা।
কেনো।
ওরা আমার ক্ষতি করেদেবে।
কে তারা বলবেতো।
সনাতনবাবু ওনাকে শোকজ করুন। উত্তর দিতে না পারলে। স্যাক করুন।
সনাতনবাবুর মুখটা ফ্যাকাশে হয়েগেলো।
স্যার আমি বলছি।
বলুন।
উনি পর পর নাম বলেগেলেন। তার মধ্যে চম্পকদা যেমন আছে সনাতনবাবুর নামটাও আছে। নিউজ ডিপার্টমেন্টের একজন আছে। আর্ট ডিপার্টমেন্টের একজন আছে।
আমি পার্টিকুলার একটা নম্বর টিক দিয়ে বললাম এই নম্বরটা কে চেয়েছে বলতে পারবেন।
এটা সনাতনবাবু চেয়েছিলেন।
আপনার কাছে নোটিং করা আছে।
আছে।
আপনি খাতাটা নিয়ে আসুন।
ভদ্রমহিলা বেরিয়ে গেলেন।
দাদারাগে ফুলছে। আমি কুল। নিরঞ্জনদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। সনাতনবাবু মাথা নীচু করে বসে আছে।
কি দাদা এখনো শিক্ষা হলো না।
বিশ্বাসকরো ছোটোবাবু ওই মেয়েটার মতো আমাকেও প্রসার করা হয়েছে।
কে করেছে।
ডঃ ব্যানার্জী।
কেনো।
আপনার সঙ্গে ওনার হিসাব বাকি আছে। নাহলে।
একজন মাস্তান গোছের লোক দিয়ে আপনাকে ফোন করিয়েছে।
হ্যাঁ।
সবকটাকে এখানে ডাকুন।
সনাতনবাবু সবাইকে ফোন করে করে ডাকলেন।
সবার মুখ কালি। ঘর ভরে গেছে। চম্পকদা মাথা নীচুকরে ঘরে ঢুকলো। আমি চুপচাপ বসে আছি। মল্লিকদা নির্বাক।
আমি রতনকে ফোন করলাম। ভয়েজ অনকরে সবাই শুনুক।
হ্যাঁ অনিদা আমি তোমার খুব কাছেই আছি।
জানি তুই থাকবি।
দাদার হুকুম।
ডঃ ব্যানার্জীর ওখানে কে আছে।
লোক আছে তোমায় চিন্তা করতে হবে না।
কুত্তাটা কোথায় আছে। তোলতাই করে নিয়ে এসেছি। গ্যারেজে।
ঠিকআছে তুই থাক। সময়হলে ফোন করবো।
আচ্ছা।
দাদার চোখ মুখ লালা হয়েগেছে। বুঝতে পারছি এখুনি পারলে এদের আঁচড়ে কামরে ছিঁরে দেবে।
ডঃ ব্যানার্জীকে ফোন করলাম।
আমি জানতাম তুমি ফোন করবে।
জানতেন।
অবশ্যই।
আরেদাদা আপনার বুদ্ধির সঙ্গে পাল্লাদেওয়া সহজ কথা নাকি। পাকামথা বলে কথা। লাইনে কতদিন আছেন।
যা বলার পরিষ্কার করে বলো।
এরকম হিজরেদের ফৌজ বানালে চলে।

কি বলতে চাও।
এখনো পরিষ্কার হচ্ছেনা। আপনার সৈন্য সামন্তরা আমার সামনে মাথা নীচু করে বসে আছে।
তুমি জানো আমি কি করতে পারি।
মহান ব্যক্তি আপনি আপনার কত ক্ষমতা। অনি সে জায়গায় চুনোপুঁটি।
বক বক না করে কাজের কথা বলো।
যার ওপর আপনি নির্ভর করে এই কীর্তি করছেন সেতো গ্যারেজ।
ডঃ ব্যানার্জী হো হো করে হেসে ফেললেন।
একবার ফোন করে দেখুন নো রেসপন্স পাবেন।
আমার সামনে বসে আছে।
ওটা ডেমি। টাকা কামানোর জন্য।
কি বলছো।
আপনার সামনে যখন বসে আছে জিজ্ঞাসা করুন।
কিরে অবতার কি বলছে অনি।
উনি ঠিক কথা বলছেন।
শুয়োরের বাচ্চা।
খিস্তি করবেন না। মাথার খুলি উরিয়ে দেবো এখুনি।
তার মানে।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
ডাক্তার সাহেব এইবার ঝেড়ে কাশুন।
কি বলতে চাও।
যদি মনে করি আপনার ডাক্তারখানা থেকে এখুনি তুলে আনবো। কাকপক্ষী টের পাবেনা। চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম।
চুপচাপ।
কি প্যান্টে পেচ্ছাপ করে ফেলেছেন।
তুমি কি বলতে চাও।
আপনার ডাক্তারি সার্টিফিকেটটা জাল। সেটা আজ এইমাত্র লন্ডন থেকে খবর এলো।
অসম্ভব।
আগামীকাল কাগজে একটা গুছিয়ে আর্টিক্যাল লিখি। আপনি কোর্টে প্রমাণ করবেন সত্যি না মিথ্যে। এখনতো কয়েকদিন গ্যারেজ হয়ে যান।
স্কাউন্ড্রেল।
রাগ করছেন কেনো। এতোবড়ো খেলা খেলতে নেমেছেন। এই সময় রাগ করলে চলে।
তুমি কি ভাবছো মিত্রা ছাড়া পাবে।
ওটা নিয়ে আপনি ভাবছেন কেনো। আপনি আপনারটা ভাবুন।
অনি তুমি আমার এতো বরো ক্ষতি করোনা।
হঠাৎ গলার স্বরটা বদলে গেলো মনে হচ্ছে।
চুপচাপ।
আপনার নামে লন্ডনে আর একজন ডাক্তার প্র্যাক্টিশ করছে। তার নাম এবং সার্টিফিকেট ভাঙিয়ে আপনি চালাচ্ছেন।
অনি বিশ্বাস করো।
আমার লোক আপনার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পালাবার চেষ্টা করবেন না।
আমি এখুনি তোমার কাছে যেতে চাই।
এতো তাড়াহুড়ো করছেন কেনো।
প্লিজ।
আপনার বিশ্বস্ত লোকদের কে ধমকেছে।
অবতার।
এরা তার নাম জানতো।
না।
কতটাকা দিয়েছেন।
না মানে.....।
ত ত করবেন না। আপনার অবস্থা মলের মতো করে ছেরে দেবো। বাঁচতে চান না মলের মতো হতে চান।
বাঁচতে চাই।
বাবা এত কীর্তি করার পরও বাঁচার সখ আছে।
আছে।
মিত্রা ছাড়া কটা মেয়ের সর্বনাশ করেছেন।
তুমি বিশ্বাস করো।
এখানে আমার গুরুজনেরা বসে আছে। নাহলে আপনাকে ধুয়ে দিতাম।
ইস তুমি এ কি করলে।
লজ্জাশীলা সতী।
চুপচাপ।
আপনার বিশ্বস্ত অনুচরদের জন্য কি ম্যাসেজ রাখছেন।
আর কোনোদিন বিরক্ত করবো না।
করলে কি হবে।
যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো। প্লিজ তুমি আমায় বাঁচাও।

আমি হো হো করে হেসে ফললাম।
বাবা আপনি যে সিংহ শাবক থেকে একেবারে পোষা কুকুর হয়ে গেলেন।
তুমি যা বলবে।
আপনার ওই টমিটাকে আমার কথা শোনাচ্ছেন।
শানাচ্ছি।
দ্যাটস গুড। ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার কার নামে আছে।
কিসের।
নার্সিংহোমের।
ওটা লন্ডনে আছে।
ফাইন্যালি কালকের কাগজে লেখাটা লিখছি।
আমার কাছে আছে।
এইতো লক্ষ্মীছেলের মতো কথা।
তুমি এভাবে বলোনা।
বাবা স্ত্রীর সঙ্গে খুনসুটি করবোনা। কারনামে আছে।
অমিতাভদা ফিক করে হেসে ফেললো।
আমার নামে আছে।
আপনার না আপনার ছেলের নামে।
আমার নামে।
আপনার আর আপনার ছেলের নাম এক।
না। নামটা ওর আছে সইটা আমার।
বাঃ আপনার গুণে নুন দেওয়ার জায়গা নেই।
কজন জানে ব্যাপারটা।
কেউ জানে না।
মিত্রার কাছ থেকে কটা স্টাম্পপেপারে ব্ল্যাঙ্ক সই করিয়েছেন।
সব আছে আমার কাছে।
এইতো গুড বয়ের মতো ব্যবহার করছেন।
কালকে সকালে দাদার বাড়িতে চলে আসবেন সব নিয়ে। নাহলে বুঝতে পারছেন।
হ্যাঁ সব বুঝতে পারছি।
কাল পর্যন্ত আপনাকে পাহারা দেওয়ার মতো লোক রেখে দিচ্ছি। কাল কাজ মিটে গেলে তারপর আপনি স্বাধীন। কারুর সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবেন না। তাহলে সব গড়বঢ় হয়ে যাবে।
ঠিক আছে।
আজ রাতটা ডিসপেনসারিতে কাটান। কাউকে দিয়ে ফাইল পত্র আনিয়ে নিন। বাইরে বেরোলে আপনার জীবন সংশয় হতে পারে। তার দায়িত্ব আমি নেবোনা।
তুমি যা বলবে, করবো।
তাহলে আপনার কোন বিশ্বস্ত অনুচরকে সঙ্গে নেবেন বলুন।
সনাতনবাবু গেলে ভালো হয়।
আমি যাবোনা।
শুনছেন।
তাহলে অন্য কাউকে দাও।
আমরা কেউ যাবোনা। সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো।
শুনছেন।
হ্যাঁ।
তাহলে আমি যাবো।
তুমি যাবে!
হ্যাঁ। আপনার অসুবিধে আছে।
না মানে।
আপনার ঘরে যে ছেলেটি বসে আছে তাকে দিন।
নাও।
দাদা আমি আবিদ।
তুই! তুই ওখানে কি করছিস।
রতনদা এখানে ডিউটি দিয়েছে।
তোকে রতন ওখানে বসিয়ে রেখেছে!
হ্যাঁ দাদা।
মালপত্র সঙ্গে আছে না খালি হাতে বসে আছিস।
সব সাঁটানো আছে।
বাইরে কারা আছে।
ও নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। মাছি গলবে না।
এককাজ কর তোদের গাড়ি নিয়ে ডাক্তারকে সঙ্গে করে ওর বাড়িতে যা। কাগজপত্র সব নিয়ে নিবি। ওর পাসপোর্ট পর্যন্ত। সব দেখে নিবি। তারপর তুলে নিয়ে গিয়ে একটা হোটেলে রেখে দে।
আচ্ছা দাদা।
ফোনটা কার।
ফোনটা আমার সিমটা ডাক্তারের।
এত বুদ্ধি তোর হলো কিকরে বলতো।
তোমার পাল্লায় পরে।
আবার হো হো করে হেসে ফেললাম।
তুমি হেসোনা। যা হুকুমদেবে করবো।
ডাক্তার শুনছে।
সব রেকর্ডিং করছি।
এইতো তোদের মাথা খুলেছে।
রতনদা ফোন করছে।
ঠিকআছে ডাক্তারকে দে।
ধরো।
শুনলেন আমার কথা।
হ্যাঁ শুনছি।
তাহলে বুঝতে পারছেন।
পারছি।

ছটার মধ্যে সব কাগজপত্র নিয়ে অফিসে চলে আসুন। পালাবার চেষ্টা করবেন না। তাহলে কালকে সকালের সূর্য আর দেখতে পাবেন না। ওটা আমার হাতে নেই সব এখন ওদের হাতে।
তুমি বিশ্বাস করো আমি ঠিক ছ’টার মধ্যে চলে আসবো।
রাখছি।
ফোনটা কেটেই রতনকে ফোন করলাম।
হ্যাঁ দাদা।
ডাক্তারের ওখানে কে আছে।
আবিদ।
বাবাঃ তোর বুদ্ধি দেখছি এই কদিনে একেবারে পেকে আমসত্ব হয়ে গেছে।
সব তোমার আর্শীবাদ।
আবিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সব ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবু তুই ওকে একবার মনিটরিং কর।
ঠিক আছে দাদা।
কাজ হয়ে গেলে আমাকে ফোন করবি।
আচ্ছা।
অবতারকে কোথায় রেখেছিস।
আমাদের খাস ডেরায়।
ওর সঙ্গে রাতে বসবো। ফোন সুইচ অফ করবিনা।
ঠিক আছে।
বস ফোন করেছিলো।
হ্যাঁ। তুমি বেরিয়ে আসার পর।
ঠিক আছে পরে কথা হবে।
আচ্ছা দাদা।
আমি ফোনটায় সব রেকর্ডিং সেভ করলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে বারোটা বাজে। বেরোতে হবে। ঘরে পিন পরলে শব্দ শোনা যাবে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। দাদার চোখ দুটো লালা ডগডগে। মল্লিকদা থম মেরে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম একটু চা খাওয়াবে।
দাদা সঙ্গে সঙ্গে বেলে হাত দিলো।
তুমি এদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে বলো।
দূর করে দে।
এদের কাছে আমার ফোন নম্বর ছিলোনা। একটা কেউ ফোন করতে পারেনি। এটলিস্ট তোমাকে জানাতে পারতো।
কিরে চম্পক কবে থেকে এই ঘটনা চলছে।
মলের কেশটা যেদিন ঘটলো সেদিন থেকে।
আমাকে জানাসনি কেনো।
জানাতে এসেছিলাম হরিদা ঢুকতে দেয়নি।
ফোন ছিলেনা।
যদি ট্যাপ হয়। আমাদের হাউসে এখন এর ফোন সে শোনে।
সনাতনবাবু।
আমার ভুল হয়েগেছে।
আপনাদের।
সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
তুমি আবার এদের হয়ে আমাকে বলো।
আজ প্রতিজ্ঞা করছি আর কোনোদিন বলবো না।
তুমি এদের মানুষ করতে পারবেনা। এরা সবাই মনুষ্যত্বহীন। বুঝতে পারছো কাগজটাকে এরা কোথায় নামিয়ে নিয়ে গেছে। একটা মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কি না করেছে এরা।
ম্যাডাম।
ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করলেন।
আমার ফোন নম্বর আপনার কাছে আছে।
না স্যার।
নিয়ে নিন। আপনার নম্বরটা বলুন।
উনি বললেন আমি ওনার মোবাইলে ডায়াল করলাম। সেভ করে নিন। কাউকে দেবেন না। আপনি মেয়ে মানুষ। পথে ঘাটে যেখানেই কোনো সমস্যায় পরবেন একবার ডায়াল করবেন। আশারাখি আপনার কোনোদিন সমস্যা হবেনা।
আচ্ছা স্যার।
আর একটা কথা সবার সামনে বললে আপনি অপমানিত বোধ করবেন না।
না স্যার।
নিজেক সংশোধন করুন। আপনার অনেক মাইনাস পয়েন্ট আছে। আমি জানি। সবার সামনে বলছিনা। নিজেকে বড্ডবেশি আল্গা করে ফেলেছেন।
ম্যাডাম কেঁদে ফেললেন।
কেঁদে কোনো লাভনেই। অন্য জায়গা হলে আজকে আপনাদের সকলকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করেদিত। আমি তা করছিনা। লাস্ট চান্স দিলাম।
উঠে এসে আমার পা ধরে ফেললেন। আমায় ক্ষমা করুন।
একি করছেন আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। আমি ক্ষমা করার কে। দাদার কাছে ক্ষমা চান। উনি আপনাদের রক্ষা করছেন। চম্পকদা।
আমি কিছু বলবোনা তুই যা শাস্তিদিবি মাথা পেতে নেবো।

এই নিয়ে কবার হলো।
জানি।
সনাতনবাবু।
চম্পক যা বললো আমারও তাই মত।
যান আপনারা। আপনাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।
ছোটোবাবু বিশ্বাসকরো আমরা কলুর বলদ হয়ে গেছি। কি করবো। সুনিতের ঘটনার পর সবাই তোমাকে দেখে তটস্থ।
তারমানে! আপনারা সবাই দোষী। তাই অনির ভয়ে তটস্থ। সুনিতদার মতো কটালোক এই হাউসে আছে।
জানাবো।
নামগুলো দিন আমাকে। দেখি তার বুকের খাঁচাটা কতো ইঞ্চি।
চম্পক না করলেও আমি তার লিস্ট তোমাকে দেবো।
দিন। তারপর দেখছি। আমি এখন বেরোবো। ঠিক ছটার মধ্যে ঢুকবো।
আচ্ছা।
সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
দাদাকে বললাম হরিদা চা দিলোনা।
দাদা বেল বাজাতেই হরিদা মুখ দেখালো। ঢালছি।
নিয়ে আয়।
হরিদা একে একে চা নিয়ে এলো। তিনজনেই থম মেরে বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন। ভয়েজ অন করলাম।
বল।
সত্যি অনি তুই আমার গুরু।
মিত্রার ফোন থেকে ফোন করছো।
আমারটায় ভয়েজ নেই তাই।
পেছনে লোক লাগিয়েছিলে কেনো।
হো হো করে হেসে ফেললো। ফোনটা যেনো ফেটে যাবে।
সত্যি তোর চোখ।
অনেক কষ্টে বানাতে হয়েছে। মনে রাখবে যেদিন অনির চোখটা নষ্ট হয়ে যাবে সেদিন অনি মরেগেছে।
তুই এই কথা বলিসনা। আমরা তাহলে কোথায় যাবো।
তোমার গাড়ির নম্বর কোথা থেকে ফলো করছিলো বলবো।
না। আমি জানি।
সত্যি কথা বলো।
সকালে তুই যখন রতনের ফোনটা জোড় করে চাইলি তখনই বুঝেছি তুই আজকে কিছু একটা খালা খেলবি। তোর নেক্সট টার্গেট আমার জানা ছিলো। তাই ঘুটি সাজালাম। অন্যায় করেছি বল।
না।
আমি বড়দিদের সব বলেছি।
কেনো।
বড়দি মাথায় হাত রেখে বললো বল অনি কেনো আমার সঙ্গে কথা বললো না।
তখন সব গড় গড় করে বলে দিলে।
কি করবো বল।
হার্টবিটটা দেখেছিলে। ওখানে দশ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ডাক্তার নেই।
কিছু হবেনা। ইসলামভাই মরে যায়নি। আল্লা কসম।
রতনের সঙ্গে কথা হয়েছে।
আবিদ রওনা দিয়ে দিয়েছে।
তুমি মনিটরিং করো। অবতারকে এখন কিছু কোরোনা।
তুই না বলা পর্যন্ত কিছু করবোনা।
তোমরা এখন কোথায়।
তোর ঘরে।
আর কে আছে।
আমরা তিনজন।
ও।
স্নান খাওয়া দাওয়া হয়েগেছে।
না। সবাই তোর শেষ রেজাল্টটা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে।
মিত্রার হার্টবিটটা ছোটমাকে দেখতে বলো।
ফিক করে হাসির আওয়াজ হলো।
কে হাসলো।
মিত্রা।
বাবা।
আমরা সবাই টেনসড ও একবারে নর্মাল। তুই এতদিনে ওর মনের মতো কাজ করছিস।
শেষ রেজাল্ট কাল সকালে জানতে পারবে।
কেনো লেট করছিস।
এখন অনিমেষদার ওখানে যাবো সবার লাঞ্চের নেমন্তন্ন।
তুই নিরঞ্জনদাকে বাঁচিয়ে দিলি।
ওকে মারার ইচ্ছে ছিলো। বড়মার জন্য এযাত্রায় রক্ষা পেলো।
এভাবে বলিসনা। তুই এখন কোথায় ?
দাদার ঘরে। তোমার কথা সবাই শুনছে।
বড়দির সঙ্গে কথা বল।
দাও।
কিরে এখনো রাগ করবি।
আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই।
চুপচাপ।
চুপকরে রইলে কেনো।
তুই এভাবে বললিকেনো বড়মা কাঁদছে। মিত্রার গলা।
কাঁদতে দে।
এভাবে বলিসনা।
তাহলে কিভাবে বলবো।
মিত্রা সব বলেছে। আর কোনোদিন হবে না। আমি তিন সত্যি করছি। বড়মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
দাদার সঙ্গে কথা বলো। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks