দেখি নাই ফিরে - (Part-69)

মিত্রা এটা লক্ষ্মী। মাসির ডান হাত। আর কবিতা বাম হাত। লক্ষমী ঘর সামলায় কবিতা বাইরেটা।
ও মাসি এগুলো রাখবো কোথায়। রতন বললো।
লক্ষ্মীর ঘরে রাখ। হ্যাঁরে লক্ষ্মী এখন কাউকে আসতে বলেছিস ?
হ্যাঁ।
কাকে।
আমার বৃহন্নলাকে।
লক্ষ্মী আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। মুচকি মুচকি হাসছে। মাসি প্রথমে ধরতে পারেনি, তারপর হো হো করে হেসে ফেললো।
তুই মাসিকে সব বলে দিয়েছিস।
নাহলে মাসি দূর করেদেবে। খাবো কি। তুমিতো আর চাকরি দেবে না।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। তারপর মাসির মুখের দিকে তাকালো।
সেদিন রাতের কীর্তি। আমরা কেঁদে মরি। ও ওর কাজ করে। তোকে পরে বলবো।
আমরা সবাই লক্ষ্মীর ঘরে বসলাম। লক্ষ্মী ওদের নিয়ে গেলো। আমি মাসির ঘরে ঢুকলাম। মাসিকে বললাম বেশিক্ষণ বোসবোনা আরো দু’জায়গায় যেতে হবে। তোমাকে নেমন্তন্ন করতে এলাম। শুক্রবার বিয়ে করছি রবিবার বৌ-ভাত।
মাসি আমার কান ধরলো।
কাল যাচ্ছি আমি বড়দিকে গিয়ে রিপোর্ট করবো।
সে তুমি করতে পারো।
মাসি আমার ভাঙা বাক্স।
খাটের নিচে। কেনো।
বার করতে হবে।
এখনি।
হ্যাঁ।
কবিতাকে ডাক।
রতন গিয়ে কবিতাকে ডেকে নিয়ে এলো।
ওই ঘর থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছে। কবিতা খাটের তলা থেকে আমার ভাঙা বাক্স বার করলো। টিনের এই বাক্সটা আমি বাড়িথেকে আসার সময় কাকা কিনে দিয়েছিলো। রঙ চটে গেছে। মাসি একটা কাপর দিয়ে বাক্সটা ঢেকে রেখেছিলো। আমি মাটিতে বসে পরলাম।
নিচে কেনো খাটে বোস।
না।
মাসি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ওই ঘরে হৈ হৈ হাসাহাসি চলছে। আমি মানি পার্টস থেকে মরচে পরা চাবিটা বার করলাম। বার কয়েক চাপ দিতেই দেখলাম তালাটা খুলে গেলো।
ওরা সকলে হৈ হৈ করে আমার ঘরে ঢুকলো। বুবুন বুবুন মাসি মিষ্টি খেয়ে দোকানের নাম বলে দিয়েছে।
ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
সবাইকে দিয়েছিস।
হ্যাঁ। এই দেখ ওরা সবাই মিলে আমাকে দিলো।
মিত্রার গলায় হার।
তুই নিলি ?
জোর করে পরিয়ে দিলো।
বোশ আমি যাচ্ছি।
তুই কি করছিস।
একটা কাজ করছি।
এটা কার বাক্স।
আমার।
বাক্সটা খুলে দেখলাম সব ঠিক আছে। কাগজগুলো একটু নাড়া চাড়া করলাম। মাসি মিষ্টি নিয়ে এলো।
কিগো আজতো আমি নাগর নই।
তাতে কি। বৌমাকে নিয়ে এসেছিস।
বৌমাকে খাওয়ায়।
খাইয়েছি। তোর জন্য নিয়ে এলাম।
এরকম সাজিয়ে গুছিয়ে। কিরে লক্ষী।
আমি জানি না তুমি মাসিকে বলো।

আমি একটা তুলে নিচ্ছি। সবাই ভাগ করে নে।
আজ তুই দুটো খা। মাসি এমন ভাবে বললো আমি হেসে ফেললাম।
মাসি এই বাক্সটা নিয়ে যাবো।
না। নিয়ে যাতে পারবিনা। ওটা আমার কাছে থাকা তোর একমাত্র স্মৃতি। আমি মরার পর নিয়ে যাস।
হাসলাম। ঠিক আছে রাখো। ইসলামভাই এলো না।
আসবে এখুনি।
আমি দুটো মিষ্টির একটা খেলাম আর একটা মাসিকে খাইয়ে দিলাম।
প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে লক্ষ্মীকে বললাম এবার তোরা খেয়ে নে।
ওরা খালি আমার বলার অপেক্ষায় ছিলো। ছোঁ মেরে নিয়ে চলে গেলো।
তোরা ঘুরে দেখলি।
মিলি হাসতে হাসতে বললো। তুমি চলো।
মাসির দিকে তাকালাম। মাসি হাসছে। তুমি একটু চা করো, আমি আমার আঁতুড় ঘরটা দেখিয়ে আনি। কে আছে ওখানে এখন ?
তুই চলে যাবার পর ভজু থাকতো এখন কবিতা এলে শোয় না হলে তালা বন্ধ থাকে।
খোলা না বন্ধ।
খোলা আছে। কবিতা বললো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। আলো অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলাম।
ওরা চারজন আমার পেছনে। ছাদে এলাম। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। এখন আর গোধূলি বলা চলে না। চারিদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ শব্দ।
এতো আওয়াজ কিসের রে বুবুন।
সবার ঘরেই খরিদ্দার আসা শুরু হয়ে গেছে। হাসা হাসি খেস্তা খিস্তি শীতকার সব মিলিয়ে একটা শব্দ।
ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আমি নিজের ঘরে এসে দাঁড়ালাম। পাঁচ বাই আট একটা ঘর। এর থেকে এখন আমার ঘরের বাথরুমটাও বড়ো। একটা মসারি টাঙানো। একদিকে বিছানাটা রোল করা গুটিয়ে রাখা। মলিনতার চিহ্ণ ঘরের চারদিকে। আমি যখন ছিলাম তখন একটু পরিষ্কার ছিলো। নিজেই করতাম। পরে কবিতা করে দিতো।
তুই এই ঘরে থাকতিস।
হ্যাঁ।
মিত্রা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমার মুখটায় হাত বোলালো।
আঠারো মাস। বলতে পারিস ওই আঠারো মাস আমাকে আঠারো বছরের ম্যাচুরিটি দিয়েছে। অরিজিন্যালের থেকে আমার বয়স এখন আঠারো বছর বেশি।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখলো।
এই পাড়ায় এই ঘরটুকুর ভাড়া প্রতি রাতে একশো টাকা।
জানো মিলি কখনো কখনো যখন খুব ভিড় হতো। আমাকে এই ঘরটা সেই রাতের জন্য ছেড়েদিতে হতো। কোনো একটা মেয়ে আমার বিছানাতেই তাদের নাগরকে নিয়ে লুটো পুটি খেতো। তখন আমি বয় গিরি করতাম। কারুর মদ এনে দিতাম মদের চার্ট এনে দিতাম। বয় হিসাবে কাজ করে বেশ ভালো টিপস পেতাম। কতবার ইসলামভাই-এর কাছে টিপস নিয়েছি। এক একদিন শোয়া হতো না। সকালবেলা ছাদের ওই কোনে একটা কল আছে ট্যাঙ্কের সঙ্গে লাগানো। স্নান করে বেরিয়ে পরতাম। নিচে চায়ের দোকান থেকে এক ভাঁড় চা খেতাম।



তখন আমি ইউনিভার্সিটিতে পরি। দশটায় ক্লাস থাকতো সোজা চলে যেতাম ইউনিভার্সিটিতে। ফার্স্ট ক্লাসটা করে কলেজ স্কোয়ারের ভেতরে একটা বিহারীর ছাতুর দোকান আছে সেখান থেকে ছাতু খেতাম। দুপুর পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি, তারপর সোজা চলে যেতাম তোর কাগজে। ফ্রি-ল্যান্সার। কোনোদিন লেখা পেতাম, কোনো দিন পেতাম না। মাস গেলে তিন চারশো টাকা আসতো। তার থেকে বেশি আসতো এই বাড়িতে বয়ের কাজ করে। চলে যেতো কোনো প্রকারে। সেই সময় আমার কোনো বন্ধু ছিলোনা। একচুয়েলি বন্ধু পাতাই নি। কেউ না কেউ আসতে চাইবে কাকে নিয়ে আসবো। এমনকি তখন আমার মেলিং ঠিকানা ছিলো ডঃ রায়ের বাড়ি অথবা অনিমেষদার বাড়ি।
তুই তখন সুরোকে পরাতিস।
হ্যাঁ।
অনিমেষদা জানতো না।
না কাউকে জানাতাম না। বলতাম একজনের বাড়ির ছাদের চিলে কোঠায় থাকি।
একসময় ইউনিভার্সিটি শেষ হলো। হাতে অনেক সময় কি করি। আমি ভজু রামবাগানের একটা হোটেলে কাজ নিলাম। বিকেল চারটে থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত হোটেল, তারপর এখানে এসে বয়ের কাজ। বিন্দাস কেটে যেতো সেই সময়টা।
কি নীপা ম্যাডাম। অনিদার থেকেও জীবনে কষ্ট পেয়েছো।
নীপা মুখ নীচু করে মাথা দোলালো।
আমি এতো কষ্ট করে যদি এই জায়গায় আসতে পারি, অবশ্যই মিত্রার অবদান সেখানে অনস্বীকার্য, তাহলে তোমরা আমার থেকে আরো এগোবেনা কেনো, অনিদা যদি তোমাদের কাছে ডিমান্ড করে সেটা অন্যায় হবে।
আমার আর কি অবদান। নিজে বাঁচতে তোকে আঁকড়ে ধরলাম। তবে তোকে যে খুঁজিনি তা নয়। তোর হদিস কেউ দিতে পারতো না।
নীপা ম্যাডাম লজ্জার মাথা খেয়ে ওইদিকে একটু তাকাও, ব্লু ফিল্ম কাকে বলে দেখে নাও। এখানে যা দেখবে সব লাইভ। ছাদে বলে দেখতে পাচ্ছ। এখানটা অন্ধকার। তোমাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না। তবে এখানে কেউ জানলা বন্ধ করে বা লাইট নিভিয়ে করে না। তাহলে মজা পাওয়া যায় না।
লজ্জার কিছু নেই মিলি। এটাও একটা পেশা। একটা জীবন। পৃথিবীর সবচেয়ে আদিমতম পেশা। এখানে এলে তোমাদের এমবিএ ম্যানেজমেন্টের থিওরি সব ওলট পালট হয়ে যাবে। এই পাড়ার নিজস্ব একটা থিওরি আছে। তুমি যতোটা কাপড় তুলবে ততটা পয়সা। তোমরা জগতটা দেখার জন্য উসখুশ করছিলে, তোমাদের নিয়ে এলাম, দেখালাম। তাও তোমরা দশভাগ দেখলে। এখন এই পাড়ার বিকেল, এখনো সন্ধ্যা হয় নি।
ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কিগো অনিদা নিচে চলো। চা যে জুড়িয়ে গেলো।
দেখলাম কবিতা।
যা যাচ্ছি।
কবিতা নিচে চলে গেলো।
এই কবিতা মেয়েটাকে দেখলে, একদিন আমি এই ঘরে শুয়ে ছিলাম। আমার দরজা কোনোদিন বন্ধ থাকতো না। বলতে পারো আমি ইচ্ছে করেই এটা করতাম। যাতে মাসির কোনো সন্দেহ না হয়। একদিন কবিতা আমার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছিলো। এমন বেদম মার মেরেছিলাম, তারপর থেকে কবিতার লাইফটাই বদলে গেলো।
তুমি কবিতাকে মেরেছো! টিনা বললো।
আমার আড়ালে একবার ওকে জিজ্ঞাসা কোরো। কি বলে শুনে নেবে।
কি মিলি ম্যাডাম এ পাড়ায় এসে কাজ করতে পারবে তো।

সত্যি বলতে কি অনিদা, অনেক কিছু ভাবা যায় বাস্তবে সেটা ইমপ্লিমেন্ট করা ভীষণ টাফ। বইখাতা সিনেমার মাধ্যমে এই পাড়ার একটা ছবি চোখের সামনে ছিলো। এখানে এসে একেবারে ওলট পালট হয়ে গেলো। আমরা যারা ওদের কেতাবী ভাষায় সেক্স ওয়ার্কার বলি ওদের আজ খুব কাছ থেকে দেখলাম। কথা বললাম। মনে হলো আমিও একজন সেক্স ওয়ার্কার। তুমি সেদিন তোমার দেশের বাড়ি যেতে যেতে একটা কথা বলেছিলে, এভরি ওয়াইফ (উয়ম্যান) ইজ প্রস। কথাটা খুব গায়ে লেগেছিলো। এখানে এসে দেখলাম কথাটা কতোটা বাস্তব সত্য।
ওরা মিত্রাদিকে ফুলের বুকে দিলো, আমাদের একটা করে গোলাপ দিলো, সবাই মিলে পয়সা দিয়ে মিত্রাদির জন্য একটা সোনার হার কিনে এনে দিলো। আমাদের জড়িয়ে ধরে আনন্দ করলো। একেবারে পুরুষ বিবর্জিত হয়ে। কিন্তু শরীরটা ওদের পণ্য। আমরা জাস্ট নিজেদের স্বার্থে......।
মিলি ওর ইমোশানটাকে ঠিক গুছিয়ে বলতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত গলাটা ধরে এলো। রুমালটা দিয়ে চোখ মুছলো। আমার সামনে এসে দাঁড়ালো জড়িয়ে ধরে বললো একবার সুযোগ দাও। শেষ বিন্দুটুকু দিয়ে লড়বো।
আমি মিলির মাথায় হাত দিলাম। এই মিলি। বোকা কোথাকার একবারে কাঁদবে না। কান্না দুর্বলতার লক্ষণ। এই পৃথিবীটা লড়ার জায়গা। তোমাকে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করতে হবে।
আমি করবো অনিদা।
এই দেখো আবার কাঁদে। চলো চলো। নিচে চলো। কবিতা অনেকক্ষণ এসে ঘুরে গেছে। ওরা সকলে আমাকে দেখছে। চোখে মুখের অবস্থা দেখে কারুর মনই যে ঠিক নেই বুঝতে পারছি।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতেই দেখলাম বাবুদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। দামী সেন্ট আতোরের গন্ধে চারিদিক ভরপুর। টিনা আমার দিকে তাকালো।
গন্ধটা পেয়ে তাকাচ্ছো।
মাতা নাড়লো।
সবে ঘুম ভাঙছে। এখন সুন্দর গন্ধ পাচ্ছ। এরপর মদের গন্ধ পাবে। আতর সেন্ট মদের গন্ধে জায়গাটা ম ম করবে। চোখ বন্ধ করে একবার ভেবেনাও।
দেখলাম ইসলামভাই সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে।
ওপরে যেতে পারতাম। গেলাম না।
যেতে পারতে।
কিরে মামনি কিরকম দেখলি। সখ মিটলো।
নীপা গিয়ে ইসলামভাইকে জড়িয়ে ধরলো।
মেয়েগুলো আবার কল কল করে এগিয়ে এলো। অনিদা তোমার পাটা দেখি।
কেনোরে।
মাসি বলেছে তুমি শিব ঠাকুর আবার পীর সাহেবও। আর্শীবাদ করো আজকের ব্যবসাটা যেনো ভালো হয়, মাসির কাছে যেনো গালাগালি না খাই।
মাসি তোদের গালাগালি দেয়।
ওটা মাসির মন্ত্র না দিলে মাসির ভাত হজম হয় না আমাদেরও কেমন কেমন যেনো লাগে।
ওদের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে।
কি মিলি ম্যাডাম চোখটা লাল কেনো। অনিদার কথায় চোখে জল বেরিয়ে এসেছে। ইসলামভাই বললো।
ওরা একে একে আমাকে এসে প্রণাম করে যাচ্ছে।
মিলি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।

ইসলামভাই মিলির মুখটা তুলে ধরলো। মিলি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। ইসলামভাই নিজের ওর্ণাদিয়ে মিলির চোখ মুছিয়ে দিলো।
কাঁদলে জয় করা যাবেনা। কাজ করতে হবে। অনিদাকে দেখছো।
কোথায় বসবি অনি।
চলো তোমার পুরনো ঘরে বসি। কিরে লক্ষ্মী।
আমার বাবু রাতে আসে অসুবিধা নেই।
মাসি এক কোনে দাঁড়িয়ে।
কিগো তুমি আবার ভাতের হাঁড়ির মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো।
ওইযে তুই বলেছিস বাক্স নিয়ে চলে যাবি।
বলেছিলাম। নিয়ে যাচ্ছি নাতো।
কে বোঝাবে বল।
ওটা তুলে রাখবে তোমার বৌমাকে কয়েকটা জিনিষ দেখাই আগে তারপর। তোমার বৌমার অনেক স্মৃতি ওখানে আছে। একসময় ওইগুলো আমাকে বাঁচার ইনস্প্রিরেসন দিয়েছে।
কি আছে ওতে। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
যা দেখে আয়। আমি ওই ঘরে বসছি।
আমরা দেখবো অনিদা।
যাও।
ওরা চারজন মাসির ঘরে গেলো। আমি ইসলামভাই লক্ষ্মীর ঘরে এলাম।
এই বাড়ির সবচেয়ে দামী মেয়ে লক্ষ্মী। তার ঘরটাও দামী। লক্ষ্মীর ঘরে সোফায় বোসলাম। ইসলামভাই আমার পাশে বসলো।
ছোটমার সঙ্গে কথা হয়েছে।
হ্যাঁ।
এখানে এসেছি সেই সংবাদটা দিয়েছো।
দিয়েছি।
ভালো করেছো।
শুক্রবার কোনো কাজ রাখবে না।
রাখিনি।
রবিবারও।
রাখিনি।
আজ আবহাওয়া কেমন বুঝলে।
একেবারে কুল। এপারাও।
মাসিকে কেউ ডিস্টার্ব করেনিতো।
এরপরও কারুর বুকের পাটা আছে ডিস্টার্ব করার।
এখানে জায়গা দেখেছো।
দেখেছি। দামিনীর পছন্দ নয়।
তাহলে অন্য জায়গা দেখো। যেটা মাসির পছন্দ। দামের জন্য চিন্তা করোনা। মুখার্জীর কাছ থেকে টেনে নেবো।
ইসলামভাই হো হো করে হাসছে।
আচ্ছা মুখার্জী তোকে এতো ভয় পায় কেনো।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
ঠিক ঠিক আছে তোকে জিজ্ঞাসা করবো না।
লক্ষ্মী চা নিয়ে এলো। ওর হাত থেকে নিলাম।
তুমি কিগো খালি বউমনিকে কাঁদাও।
আমি কোথায় কাঁদালাম। তোমার বাক্স থেকে কিসব দেখছে আর কাঁদছে।
ওগুলো ওর লেখা চিঠি বুঝলি লক্ষ্মী। আজ থেকে দশ বছর আগে আমাকে লিখেছিলো।
বৌদি মনির নিজের লেখা চিঠি দেখে বৌদিমনি কাঁদছে।
হ্যাঁ।
কালকে একবার একটু আসতে পারবে, আমি বাড়িতে থাকবো।
কখন বল।
এই বারোটা নাগাদ।
আচ্ছা।
এবার উঠবো ইসলামভাই অনিমেষদার বাড়ি যাবো।
তুই এখন অনিমেষদার বাড়ি যাবি।
হ্যাঁ নেমন্তন্ন করতে।
এখানে তুই নেমন্তন্ন করতে এসেছিলি।
হ্যাঁ।
ইসলামভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
হাসছোযে।
আমাকে করলি না।
ওটা ছোটমা করবে। আমি রতন আবিদকে বলতে পারি তোমাকে নয়।
তাহলে এখানে এলি যে।
তোমার মামনির শ্বশুর বাড়ি দেখাতে নিয়ে এলাম। তোমার মামনির শ্বশুর বাড়িতো একটা নয়। দেখুক, না হলে জীবনটা বুঝবে কি করে।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
তাকিয়ে লাভ নেই এবার চলো উঠবো। নাহলে বড়মার মুখ গম্ভীর তাড়াতাড়ি ফিরবো বলে এসেছি।

তুই এতো ব্যালেন্স করিস কি করে।
নিজে থেকেই হয় আমি করিনা।
ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। মাসি নিচ পর্যন্ত এলো। সঙ্গে ইসলামভাই লক্ষ্মী কবিতা আর যাদের ঘরে এখনো বাবু আসেনি তারা। ওরা কিছুটা গণিকাপল্লীর লাইভ দেখলো। সবাইকে বিদায় দিয়ে আমরা চলে এলাম। মিনিট পঁয়তাল্লিশ পরে আমরা অনিমেষদার বাড়ি এলাম। রাস্তায় কেউ কথা বলেনি। বুঝতে পারছি সবার মনটা ভাড়ি ভাড়ি। আমি খালি পথের দিশা দেখালাম।
কি মিলি ম্যাডাম মন খারাপ না ভেতরটা ওলট পালট হচ্ছে।
মিলি চুপ করে থাকলো কোনো উত্তর দিলো না।
টিনা ম্যাডাম।
আমার উত্তর দেবার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। বার বার মনে হচ্ছে তোমার সঙ্গে কেনো বছর তিনেক আগে দেখা হয়নি।
আমারও অনিদা। তাহলে আমার জীবনটা এমন ওলট পালট হতো না। মিলি বললো।
সব ঠিক হয়ে যাবে মিলি। সময় সব কথা বলে।
কি মিত্রা বাবু।
নীপা ফিক করে হেসে উঠলো।
কি নীপা হাসলে যে।
তুমি মিত্রাদিকে বাবু বললে।
তুই আমার চিঠিগুলো এখনো অতো সুন্দর করে রেখেছিস।
পরলি।
পরলাম। নিজেকে আরো বেশি করে জানলাম।
ওই আঠারো মাস তোর চিঠি গুলো আমাকে নষ্ট হতে দেয়নি। নাহলে আমি হয়তো বয়ে যেতাম। খাতাটা দেখেছিস ?
আমি মাসির কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এসেছি। বলেছি আমি নিজে এসে রেখে যাবো।
কেনো।
আমাদের দুজনের শেষ প্রোগ্রামের খাতা।
তোর মনে আছে।
বেথুনে যে প্রোগ্রামটা করেছিলাম ইন্টার কলেজ কম্পিটিশনে।
হ্যাঁ।
এখন পারবি।
পারবো।
অনিদা একবার করবে। টিনা বললো।
করবো।
ডানদিকের গেটের সামনে গাড়িটা রাখ।
মিত্রা গাড়িটা রাখলো। আমি গাড়ি থেকে নেমে বেল বাজালাম। দারোয়ান গেটটা খুলে দিলো।
গাড়িটা ভেতরে রাখুন স্যার।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
ঢুকিয়ে দিচ্ছি। একটু সর।
মিত্রা গাড়িটা ভেতরে ঢোকালো। আমি পেছন থেকে দুটো মিষ্টির হাঁড়ি আর সন্দেশের প্যাকেট বার করলাম। ওরা হাতে হাতে ভাগ করে নিলো।
শিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম।
কিরে বুবুন অনিমেষদা এখানে থাকেন ?
হ্যাঁ। তাও ভাড়া দিয়ে।
ওরা একে অপরের দিকে তাকালো।
আমি তিনতলায় এসে বেল বাজালাম।
সুরো দরজা খুলেই আমাকে টপকে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। নীপার দিকে তাকিয়ে বললো তুইও এসেছিস। সুরোর চেঁচামিচিতে বৌদি বেরিয়ে এলো। আসুন চাঁদের কনা।
আমি কিন্তু এখনো গেটের বাইরে এখান থেকে চলে যাবো।
যেতে পারিস খালি মিত্রাকে আর ওদের রেখে যা।
দেখেছিস আসলের থেকে সুদের কি মূল্য।
ওরা হাসছে।
তুই এগুলো কি নিয়ে এসেছিস।
ছেলে বিয়ে করে এলো শ্বশুর বাড়িথেকে তত্ব পাঠালো।
বৌদি দিলো আমার কান মূলে।
তুমিও ওর কান ধরো। মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।

আগে প্রতিদিন কান মোলা খেতো, সুরোকে ঠিকমতো পরাতো না। খালি ফাঁকি মারতো। এখনতো এ বাড়ি আসাই ভুলে গেছে।
বৌদি অনিমেষদা আসবেনা। মিত্রা বললো।
সাড়ে সাতটায় একটা প্রেস কনফারেন্স আছে। ওটা সেরে আসবে বলেছে।
অনিদা তুমি আজকে এতো মাঞ্জা দিয়েছো কেনো। সুরো বললো।
তোর পছন্দ।
দারুন লাগছে। হ্যান্ডসাম।
তোর বৌদি সকাল থেকে দেখছে, কিছুই বললো না। তাই ভাবছি বিয়েটা করেই ডিভোর্স করবো।
তার আগেই করনা। শুধু শুধু বিয়ে করবি কেনো। বৌদি বললো।
বুঝলে ওটা না করলে সম্পত্তিগুলো হাতানো যাবেনা।
আবার কানটা ধরবো গিয়ে।
ধরোনা ধরো। মুখে বলো না।
কিরে মিলি কি খাবি। তোর টিনার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে।
মিলি টিনা মাথা নীচু করলো।
আমার দ্বিতীয় আঁতুড় ঘরে নিয়ে গেছিলাম। দেখাতে। একনো ঘোড় কাটে নি।
দামিনীর ওখানে গেছিলি।
হ্যাঁ।
অনিদার ভেরিয়েসন বুঝতে পারছিস।
মিলি মাথা নীচু করেই মাতা দোলালো।
ও ভীষণ মানুষের মনকে জাদু করতে জানে বুঝলি। যেমন আমাদের তিনটেকে জাদু করেছে। ওর কিছু হলেই কেঁদে মরি। ওর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ আছে।
গাড়ি কিন্ত ডি-রেলড হয়ে যাচ্ছে। আমার পরোটা আলুভাজা কোথায়। কিরে মিত্রা হ্যাঁ করে কি দেখছিস। মিষ্টিটা বৌদিকে খাইয়ে দে।
মিত্রা সঙ্গে সঙ্গে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। পেছন পেছন টিনা মিলিও। সুরো নীপাকে নিয়ে ওর ঘরে গেলো।
ক্রমশঃ

আমি সোফাতে গা এলিয়ে দিলাম। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করতেই দেখলাম ম্যাসেজ ফোল্ডারটা ব্লিঙ্ক করছে। বুঝলাম ম্যাসেজ বক্সে আর জায়গা নেই। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাসেজ ডিলিট করে দিলাম। ম্যাসেজ গুলো এবার খুললাম। আমার নতুন সখীরা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ম্যাসেজের ভাষায় ভালোবাসা যেনো চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। বিশ্বস্ত সূত্রে ওরা জানতে পেরেছে, আমার মডেলিং সম্বন্ধে কিছু পড়াশুনো আছে। আমাকে সাহায্য করতে হবে।
নিজে নিজেই হাসলাম।
দেবাকে একটা ফোন করলাম।
ধরেই দেড়ে মুশে আমাকে খিস্তি করলো।
শালা সব সময় মোবাইলের স্যুইচ অফ।
তুই এখন কোথায় ?
ট্রিঙ্কাসে বসে আছি।
কি করছিস ?
আমি অদিতী ডিনার করছি।
এরি মধ্যে।
অদিতির শরীরটা খারাপ, তাই ভাবলাম তাড়াতাড়ি ডিনার করে বাড়ি ফিরে যাবো।
কি হয়েছে অদিতির।
সকাল থেকেই বলছিলো শরীরটা খারাপ।
কিরে বাধালি নাকি।
হবে হয়তো।
হাসলাম।
জিএএনডিইউ।
কিরে তুইও কি আজকাল বানান করে দিচ্ছিস।
তোর কাছ থেকে শেখা বিদ্যে নষ্ট করতে পারি। তুই কোথায়।
আমরাও একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
কোথায়।
তোদের কাছা কাছি।
কি অর্ডার দিলি।
পরোটা আলুভাজা ডিমের ওমলেট নকুর দোকানের নলেন গুড়ের সন্দেশ।
শালা হারামী। বাড়িতে আছিস।
বিশ্বাস কর।
দাঁড়া আমি মিলিকে ফোন করছি।
কর। শোন।
বল।
কালকে তুই আর নির্মাল্য একবার দশটা নাগাদ আসিস।
কেনোরে ?
দরকার আছে।
ঠিক আছে
ফোনটা স্যুইচ অফ করে পকেটে রাখলাম। রান্নাঘর থেকে মিলি বেরিয়ে এলো। নিশ্চই অদিতি ফোন করেছে।

তুই চলে গেলি কেনো......কি করে জানবো অনিদা এই প্রোগ্রাম করবে.....রাগ করিসনা তোকে আর একদিন নিয়ে যাবো....তুই অনিদার সঙ্গে কথা বল।
মিলি আমার হাতে ফোনটা দিলো। অদিতি খেপে গেছে তুমি ওকে নিয়ে যাও নি।
বলো অদিতি।
এটা কি হলো।
কি করে জানবো, তোমার আজকেই শরীরটা খারাপ হবে।
তুমি আজকে গেলে কেনো।
এটা একটা পয়েন্ট, সত্যিতো আজকেই বা গেলাম কেনো ? আগামীকাল যেতে পারতাম।
যাও তোমার সঙ্গে কথা বলবো না।
ঠিক আছে কথা বলতে হবে না। তোমার শরীর কেমন আছে বলো।
ভালো।
কাজ কর্ম বুঝলে।
কিছুটা। কালকে আবার গিয়ে ফাইল ঘাঁটবো।
সোমবার দিন তোমাদের সঙ্গে বসবো।
তার আগেই সব নোট ডাউন করে নেবো।
আগামী সপ্তাহে আবার ওই পাড়ায় প্রোগ্রাম রেখেছি। তারপর থেক তোমরাই যাবে, আমি আর যাবো না।
সত্যি।
হ্যাঁ। খুব তাড়াতাড়ি কাজটা শুরু করে দেবো।
তোমরা এখন অনিমেষদার বাড়ি।
হ্যাঁ।
ব্যাড লাক আমি যেতে পারলাম না।
তাতে কি হয়েছে, দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে নাকি। একদিন দেখবে এখানে আস্তে আস্তে বোড় হয়ে যাবে।
কোনোদিন হবো না।
নাও মিলির সঙ্গে কথা বলো।
মিলির কাছে ফোনটা দিলাম।
কিরে আমার পরোটা কোথায় গেলো। আমি হলে এতোক্ষণ বানিয়ে খেয়ে ফেলতাম।
থাম তুই আর বক বক করিসনা। বৌদি রান্না ঘর থেকে বললো।
ওকি এখানে এসেও রান্না করে।
করতো, তোর দাদার সঙ্গে আমি যখন বাইরে যেতাম পার্টি মিটিং-এ তখন দু-ভাইবোনে রান্না করে খেতো। তুই ওর হাতের রান্না খেয়েছিস।
খেয়েছি মানে, হাতটা সোঁকো, এখনো গন্ধ পাবে।
বৌদি হাসছে। নে সেঁকা হয়ে গেছে, এবার ঘি দে। কিরে টিনা আলু ধোয়া হয়ে গেছে।
হ্যাঁ। দে ওই ওভেনটায় বসিয়ে দে।
মা। ওই ঘর থেকে সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।
উঃ এই একটা মেয়ে। মা মা করে খালি জ্বালিয়ে মারলো। কি হয়েছে রে।
বাবার ফোন।
নিয়ে আয়।
মিলি আবার রান্নাঘরে গেলো।
সুরো নীপা দুজনেই ঘর থেক বেরিয়ে এলো। তুমি একা একা বসে আছো।
কি করবো। তুই তোর বন্ধু পেয়েছিস, জমিয়ে গল্প করছিস।
সুরো রান্নাঘরে গেলো।
হ্যাঁ বলো।....আর বলতে, তোমার বৌমার সঙ্গে সাঙ্গ-পাঙ্গও নিয়ে এসেছে।.....অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।.....অসুবিধে হবে না চলে এসো।......আচ্ছা।
কেগো বৌদি। মিত্রার গালা।
তোর দাদা, তিনিও সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে আসছেন।
এই মিলি আর একটু আটা মাখ। টিনা তুই বরং ভাজ আমি আলুটা কেটে দিই।
দেখো সকাল থেকে গোটা কতক লুচি আর কয়েকটা মিষ্টি ছাড়া আমার পেটে কিছু পরে নি। ওরা তবু খেয়েছে।
তুই খাস নি ? মিত্রা চেঁচালো।
কোথায় খেলাম। দেখলিতো।
মিলি ওকে দুটো দিয়ে আয়তো আগে।
কি দিয়ে দেবো ? আলু ভাজা হয়নি।
চিনিদিয়ে দে। বৌদি বললো।
যাঃ।
তুই দিয়ে আয় না, আমি বলছি। ওর কোনো বালাই নেই। যা দিবি তাই খেয়ে নেবে।
সবাই হাসা হাসি করছে। কাজ করছে। ওই ছোট্ট রান্নাঘরে চারজন গাদা গাদি করে। বেশ লাগছিলো। এরা কিন্তু এক এক জন এক এক দিকের বস। যা রোজগার করে বাড়িতে রান্না করার দরকার পরে না। কিন্তু আজ পরিবেশ পরিস্থিতি ওদের তৈরি করে দিচ্ছে। মিলির বাড়িতে গেছি। কখনো মনে হয়নি ও আলু কুটে ভেজে খাওয়াতে পারে। টিনাকে কাছ থেক দেখেছি ও চেষ্টা করলে পারে। তবে প্রায় দিনই ড্রাই ফুড খেয়ে শুয়ে পরে। অদিতি দেবাশীষ ট্রিঙ্কাসে বসে আছে। প্রায় দিনই ওরা বাইরে ডিনার করে। জীবনটা এদের একটা স্রোতে বইছে। আবার আমার জীবনের স্রোত ভিন্নমুখী। সেখানে এদের নিয়ে আসা খুব টাফ। তবু চেষ্টা করবো। এদের কাজের ইচ্ছেটা আছে। সেটা হলেই ঠিক আছে।

মিলি দুটো পরটা দিয়ে গেলো। একটু আলুভাজা। মনে হয় আমার জন্য একমুঠো ভেজে দিলো। পেটটা চোঁ চাঁ করছে। নিমেষে প্লেটটা খালি হয়ে গেলো। টেবিলে রাখলাম। বেলটা বেজে উঠলো। আমি উঠলাম না। আবার বাজলো বার বার গোটা চারবার। সুরো ঘর থেকে উঠে এলো।
খুলতে পারছো না দরজাটা। আমাকে মুখ ঝামটা দিলো।
ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
তুমি এরি মধ্যে চলে এলে! ওমা তোমরাও এসেছো।
অনিমেষদা ভেতরে ঢুকলেন পেছন পেছন অনুপদা রূপায়ণদা বিধানদা।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। ওই দেখুন বিধানবাবু কেমন গুটি সুঁটি মেরে বসে আছে। বিধানদা জুতো খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকালেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম।
কিরে সব সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে এসেছিস শুনলাম।
সব রান্নাঘরে। পরটা ভাজা চলছে।
বৌদি একবার রান্নাঘর থেকে উঁকি মারলো।
ভতরে আর বসতে হবে না। এখানে বসে পরো, খেয়ে কথা বলবে।
কিরে বৌমাকেও রান্নাঘরে পাঠিয়েছিস। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
আমি পাঠাইনি, নিজে থেকে গেছে।
কখন এসেছিস।
আমাকে জিজ্ঞাসা করোনা, বিধানদাকে জিজ্ঞাসা করো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
কিরে তোরা তিনজন মিলে যা সময় নিচ্ছিস আমি এর থেকে কম সময়ে করে ফেলতাম।
ভাগ এখান থেকে খালি ফুটানি। মিত্রা রান্নাঘর থেকে বললো।
সুরো। বৌদি রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
ওকে ডাকছো কেনো, বলোনা কি করতে হবে। মিলি বললো।
তাহলে তুই যা, সুরোর ঘরের দেয়াল আলমাড়ি থেকে কাপ ডিস গুলো বার করে আন।
কিগো মা।
মিলিদিকে কাপ ডিসগুলো একটু বার করে দে।
কিরে তুই কার সঙ্গে বসে গল্প করছিস। অনিমেষদা বললেন।
নীপার সঙ্গে।
নীপা এসেছে ?
হ্যাঁ।
ডাক ডাক ওকে।
সেই মেয়েটা। অনুপাদা বললেন।
হ্যাঁ। এবছর হায়ার সেকেন্ডারীতে সিক্সটিনথ পজিসন পেয়েছে। ওদের ডিস্ট্রিক্টে ফার্স্ট। অনিমেষদা বললেন।
ওই গ্রামের স্কুল থেকে। বিধানদা বললেন।
অনি তো স্টার পেয়েছিলো।
নীপা উঠে এলো।
দেখুন দেখি মেয়েটাকে। কেমন ছোটোখাটো।
নীপা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাঁসলো। চোখের ইশারায় বললাম সবাইকে একটা পেন্নাম ঠোকো।
নীপা সকলকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
মিলি টিনা প্লেট নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরোলো।
এই দেখুন বিধানবাবু সেদিন সকালে এই দুটোকে দেখেছিলেন তো। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks