দেখি নাই ফিরে - (Part-68)

তুমি কালকে একবার কাউকে আমার কাছে পাঠাতে পারবে।
কিসের ব্যাপারে বলুনতো।
তুমি ঝিমলিকে কিসের ব্যাপারে বলেছো।
ও হ্যাঁ সত্যিতো, আপনার বাড়িতে এলাম, আপনাকেই ব্যাপারটা বলতে ভুলে গেছি।
তাতে কি হয়েছে। আমারতো মনে আছে। তুমি কালকে বারোটার পর কাউকে পাঠাও আমি ছয়মাসের একটা ক্যাম্পেন পাঠিয়ে দেবো।
ঠিক আছে।
দেখলাম আমার জায়গা এসে গেছে। আমি নেমে পরলাম। এখান থেকে মিনিট চারেক হাঁটলেই আমার অফিসের গেট। পকেট থেকে ফোনটা বার করে অন করলাম। মিস কলের ছড়া ছড়ি তেমনি ম্যাসেজ। সিগারেটের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে ধরালাম। আমি ফোনটা অন করেই দামিনী মাসিকে একটা ফোন করলাম।
কিরে কোথায় ছিলি! কখন উঠলি ? এখন কোথায় আছিস ? কতোবার ফোন করলাম তোর ফোনের স্যুইচ অফ।
কোন প্রশ্নের উত্তর আগে দেবো বলো।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো। বড়দির সঙ্গে কথা হয়েছে।
তাহলেতো সব জেনে গেছো।
এখন কোথায়।
নিজের ঘরে বসে আছি।
কতোক্ষণ থাকবে।
আজ আর বেরোতে ভালো লাগছে না।
রতন কোথায়।
ওর কাজে।
তোমার কাছে যাবে।
আসতে পারে, রাতের দিকে।
তোমার বৌমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
এখানে!
হ্যাঁ। তার ঘুরতে যাবার সখ হয়েছে। আর আমারও একটা কাজ আছে তোমার সঙ্গে। গিয়ে কথা বলবো।
সত্যি আসবি!
তাহলেকি মিথ্যে কথা বলছি। দেখো যেনো ভড়কে না যায়। কোনোদিন দেখে নি, সব গল্প উপন্যাসে পরেছে। এবার রিয়েল লাইফ স্টোরিতে।
ঠিক আছে, তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
ফনটা কেটেই বৌদিকে ফোনে ধরলাম।
সকাল থেকে কোথায় থাকিস বলতো ?
ঘুমোচ্ছিলাম।
সেতো এগারোটা পর্যন্ত। তারপর।
বাবা, কেনো বিধানদাকে ফোন করো, সব খবর পেয়ে যাবে।
বৌদি হো হো করে হেসে ফেললো।
শোনো তোমার ওখানে যাবো, আমার বৌ দেখাতে।
ধ্যাত। বাঁদর।
হ্যাঁগো সত্যি বলছি। এই ধরো সাতটা নাগাদ। তার আগেও যেতে পারি। তোমার আপত্তি আছে।
একেবারে না। খালি তুই সত্যি সত্যি আসবি কিনা বল।
তাহলে তোমায় ফোন করতাম না।
ঠিক আছে আয়।
সুরোকে একবার খবরটা দিয়ো। কোথাও যেনো আড্ডা মারতে না যায়।
আচ্ছা।
রাখি তাহলে।
রাখ।
অফিসের একেবারে গেটের সামনে চলে এলাম। ইতি উতি সকলে দাঁড়িয়ে আছে। আমার একটাই সৌভাগ্য এখনো পর্যন্ত সকলে আমাকে চেনে না। গেটে পা রাখতেই সেই সিকুরিটির ছেলেটা মুখ টিপে হাসলো।
আজ তোমার ইভিনিং ডিউটি।
হ্যাঁ স্যার।
চেক করবে না।
ছেলেটি মাথা নীচু করে হাসছে।
আমি সোজা প্রেস রুমে চলে এলাম। আমাকে ঢুকতে দেখেই সুতনুবাবু এগিয়ে এলেন।
ছোটবাবু এখুনি এলেন।
এইতো জাস্ট ঢুকলাম।

সকালে গেছিলাম আপনি ছিলেন না।
তাই। এখন কি ছাপা হচ্ছে।
রবিবারের সাপ্লিমেন্ট। এরপর বাইরের কাগজটা ছেপে দেবো।
রেডি হয়ে গেছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা।
হ্যালো।
তাহলে শেষ পর্যন্ত এলি।
হাসলাম।
ওপরে কখন আসছিস।
যাচ্ছি।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
ছোটবাবু আমরা হিমাংশু বাবুর সঙ্গে কথা বলেছি।
দেখলাম আরে দুচারজন প্রেসের স্টাফ পাশে এসে দাঁড়ালো।
কি বললো হিমাংশু।
আপনার একটা কনসেন্ট প্রয়োজন।
ঠিক আছে আমি হিমাংশুর সঙ্গে কথা বলে নেবো।
আপনি একটু প্রেস ম্যানেজারকে বলে দেবেন উনি ভীষণ বাড়াবাড়ি করছেন। আমরা ওনার কথা মানবো না।
কেনো আবার কি হলো।
উনি স্ক্র্যাপ মাল ওনার পরিচিত লোককে বিক্রি করতে চাইছেন। আমরা বলেছি আপনার অনুমতি পেলে তবেই হবে।
হুঁ। ঠিক আছে আমি কথা বলে নেবো।
পার্চেজের ব্যাপরটাও আপনি একটু দেখুন।
সোমবার থেকে টিনা ম্যাডাম দেখবেন। উনি আজকে জয়েন করেছেন। কাজগুলো একটু বুঝে নিক।
তাহলেতো দারুণ হবে। আমরা জানি ম্যাডাম আগে কোথায় ছিলেন।
ঠিক আছে। আপনারা কাজ করুণ।
ছোটবাবু টাকাটা আমরা এখনো নিই নি। সার্কুলেসন ম্যানেজারের কাছে জমা রেখেছি।
ওটা আপনাদের ব্যাপার। আমার দেবার কর্তব্য দিয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে এরকম টোকেন পাবেন। যদি দেখি আপনারা ঠিক আছেন। আর একটা কথা বলে রাখি আমার কাছে কোনোদিন ডিমান্ড করবেন না। করলে পাবেন না। আর আপনাদের প্রয়োজনীয় যা কিছু কথা দাদা মল্লিকদাকে বলবেন।
ঠিক আছে।
আমি আর রিসেপসন ঘুরে ভেতরে ঢুকলাম না। প্রসেরুমের ভেতর দিয়েই সোজা লিফ্টের সামনে এলাম। দেখলাম বেশ ভিড়। সোজা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করলাম। অনেকেই নামছে উঠছে। আমি সবাইকে চিনি এটা হলপ করে বলতে পারবোনা। এরি মধ্যে কেউ গুড ইভিনিং স্যার বলছে। কেউ বলছেন স্যার এখুনি এলেন। আমি হাসি ছাড়া মুখ থেকে একটিও শব্দ উচ্চারণ করছিনা।
ওপরে উঠে এলাম। দেখলাম মিত্রার ঘরের সামনে হরিদার ছেলে বসে আছে। দাদার ঘরের সামনে হরিদা। আমাকে দেখেই বললো
এখুনি আসা হচ্ছে ?
আমি মাথা দোলালাম।
সোজা নিউজরুমে চলে এলাম। দেখলাম সবাই ঘরের মধ্যে। গেটে পা রাখতেই মল্লিকদা দূর থেকে হাসতে আরম্ভ করলো। যাকে বলে একেবারে অর্থপূর্ণ হাসি। আমি এগিয়ে গিয়ে নিজের টেবিলে বসলাম।
সন্দীপ, বাবু এলেন। মল্লিকদা বলে উঠলো।
সন্দীপ কি লিখছিলো মুখ তুলে একবার দেখলো, হাসলো। অর্ক একটা জলের বোতল নিয়ে এলো।



কিগো তুমি হাঁপাচ্ছ।
সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠলাম।
হেঁটে উঠলে!
কেনো, আজ প্রথম নাকি।
তুমি পারো। অফিসের প্রেস্টিজে একেবারে গ্যামকসিন মেরে দিচ্ছ।
ঢক ঢক করে জল খেলাম।
কিগো অনিদা খুব মাঞ্জা দিয়েছো আজকে।
কিরে অর্ক, অরিত্র কি বলে।
সত্যি অনিদা এতোক্ষণ খেয়াল করিনি।
হাসলাম।
কি লিখলি।
আজ কোনো কাজ নেই খালি ফলোআপ করেই কাটিয়ে দিলাম।
রেস্ট।
বড়ো বস বলেছে খালি ফলোআপ করে যা।
অর্ক তোর ক্লিয়ার।
হ্যাঁ। সনাতন বাবু ট্রান্সফার করে দিয়েছেন।
কাজ মিটিয়ে দিয়েছিস।
হ্যাঁ।
হরিদা সামনে এলো। আমার দিকে তাকালো।
দাদা ডাকছেন, এইতো।
হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি। গম্ভীর হয়ে।
আমি যাবোনা।
তাহলে তাই বলি গিয়ে।
যাও।
মল্লিকদা হাসছে। হাসির শব্দ এখানে বসে শুনতে পাচ্ছি।
দাদা সকাল থেকে খুব খোশ মেজাজে আছে। অর্ক বললো।
কেনোরে।
সব কাজ ঠিক ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা। কেটে দিলাম।
আবার এখুনি আর একজন আসবে দেখ। এতোক্ষণ কারুর প্রয়োজন পরে নি।
অরিত্র হাসছে। তোমার মোবাইল স্যুইচ অফ ছিলো।
কেনোরে, ফোন করেছিলি ?
বহুবার।
কেনো! কোনো গড়বড় হয়েছে নাকি ?
এইতো তোমার চোখের ভাষা চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।
না সেরকম কিছু নয়। একটা রিজাইন দিয়েছে, আর একটাকে পার্টি থেকে সাসপেন্ড করেছে।
মরুকগে যাক। আমাদের কি, আমাদের কাজ আমরা করেছি। নিউজ করেছিস ?
সে আর বলতে।
কিরে একবার গিয়ে মুখটা দেখিয়ে আয়না দুটো ঘরে, তাহলেতো ল্যাটা চুকে যায়।
আমার হয়ে তুমি দেখিয়ে এসো।
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে।
বল তোর খবর। মল্লিকদা একটা হাফ সাইজ যা দিয়েছিলো। সন্দীপ বললো।

আমি তাকালাম।
ওরকম ড্যাব ড্যাব করে তাকাসনা। এগারোটা পর্যন্ত ঠেসে ঘুমিয়েছিস।
মল্লিকদা আছে, নাহলে তোকে চুপ করিয়ে দিতাম।
দেখলে কি কথার কি মানে করলো।
ছোটবাবু একবার দিদিমনি ডাকছেন।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো। দেখলাম হরিদার ছেলে।
উঠে দাঁড়ালাম।
তোর চিঠি পত্রগুলো একবার দেখ। কিলো দশেক হবে। আরো আছে, ওগুলো সর্টিং করেদে, আবার বার করে দেবো।
সন্দীপের দিকে তাকালাম।
কালকে একটা গড়বড়ি কাজ করেছিস, মাথায় রাখিস।
ম্যাডামকে বলে দিয়েছি, ম্যাডাম সামলে নেবে বলেছে।
ম্যাডাম বাঁচাবেনা।
দেখা যাবে।
মল্লিকদা আজ কি কনটিনিউ করছো।
হ্যাঁ। আরো দুটো দেবো।
কিছু বুঝছো।
কি বুঝবো, অজস্র ফোন আসছে।
দাঁড়াও একটু মুখ দেখিয়ে আসি।
মল্লিকদা হাসছে।
তুই কি আর আসবি।
কেনো।
তোরতো সেইরকম প্রোগ্রাম আছে কিনা।
এরি মধ্যে খবর হয়ে গেছে।
কি করবো বল, তুই গেটে ঢোকার পর থেকেই খবর চলে আসছে।
আরে বাবা, আমি এখনো এতোটা ভিআইপি হয়ে যাই নি।
মল্লিকদা, গল্প শুরু হলো। তারপর বেরিয়ে গিয়েই ফোন করবে অর্ক একবার এখুনি আয়তো,শোন একটা ফটোগ্রাফারকে ট্যাঁকে করে নিয়ে আসিস। দরকার আছে।
অর্ক ক্যারিকেচার করে দেখাচ্ছে সবাই হো হো করে হাসছে।
সত্যি তুমি পারো অনিদা। মাথায় রাখবে কালকের সব খবর পেয়ে গেছি।
নিশ্চই মল্লিকদা বমি করেছে।
সে তোমাকে জানতে হবে না।
দাঁড়া আসছি।
বেরিয়ে এলাম।
দাদার ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম সনাতনবাবু আর চম্পকদা বসে আছেন। আমাকে দেখেই ফোনটা তুলে নিলেন। ইন্টার কমে ডায়াল করেই বললেন, সবেমাত্র আমার ঘরে এসে ঢুকলো বুঝেছিস। রেখে দিলো। বুঝলাম মিত্রাকে সংবাদ দেওয়া হলো।
তোকে একটা সারপ্রাইজ দেবো তার স্কোপই তুই দিচ্ছিস না। চম্পকদা বললেন।
কেনো ?
সনাতনবাবু চম্পকদা হাসছেন।
কেনোগো। দাদার দিকে তাকিয়ে, আমি আবার কি অন্যায় করলাম।
একনম্বর অন্যায় তুই সেদিন ওরকম একটা দুর্ধর্ষ লেখা লিখলি। আমরা কেউ জানতেই পারলাম না। সকালে কাগজ দেখেই দাদাকে ফোন করলাম। তখন তুই ভীষণ ভাবে গন্ডগোল করছিলি। দু’নম্বর তুই একটা ভালো কাজ করলি প্রেসের এবং সার্কুলেসনে ছেলেদের জন্য। তাও এখানে এসে জানলাম।
ছোটোবাবু এইগুলো একটু সই করে দাও দেখিনি।
কি এগুলো ? একটু চা খাওয়াবে।

দেখছিস, দেখছিস চম্পক।
চম্পকদা হাসছে।
মহা মুস্কিল, এসব নিয়ে আমি কি করবো। আমার লাগবে না।
যা বলছে সই করেদেনা, ঝামেলা করছিস কেনো। দাদা বললো।
তুমি বুঝবেনা। অভ্যেস খারাপ হয়ে যাবে।
তুই একটা কাগজের মালিক বলে কথা, তোরতো একটা এটিকেট আছে। চম্পকদা বললেন।
রাখো তোমার এটিকেট। এগুলো আপনাকে কে বানাতে বললো।
ম্যাডাম।
ম্যাডামকে দিয়ে সই করিয়ে নিন।
ম্যাডাম সই করে দিয়েছেন।
ওরতো অনেক কার্ড আছে আরো লাগবে।
এগুলো এ্যাড অন কার্ড। দুজনের যেকেউ ব্যবহার করতে পারবে।
একজনের কাছে থাকলেই যথেষ্ট। আমি বরং পাসপোর্টের ফর্মটায় সই করে দিচ্ছি।
আমি পাসপোর্ট ফর্মটায় সই করতে শুরু করলাম।
চম্পকদা।
বল।
ওদের একটু বাজিয়ে দেখলেন।
আমি বাজাবো কিরে। ওরাতো আমার থেকে এ্যাডভান্স।
সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন।
সেটা বরং করিয়ে দিয়েছি।
সনাতন বাবু।
ছোটোবাবু।
পছন্দ।
একটু রিলিফ পাবো। যা ঝামেলা শুরু করেছে, সবাই।
আবার ঝামেলা।
হরিদা ঘরে ঢুকলো। সবাইকে চায়ের কাপ দিলো। আমাকে দিলোনা। আমি হরিদার দিকে তাকালাম।
এঘরে চা খাওয়া হবেনা। সকাল থেকে কিছু খাও নি। ও ঘরে যাও, পাবে।
তোমাকে এ খবর আবার কে দিলো।
আমি জানি না।
মহা মুস্কিল।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম দামিনী মাসি। ধরলাম।
বলো।
কিরে এখনো বেরোস নি।
যাচ্ছি যাচ্ছি। আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো।
ঠিক আছে।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
কোথায় যাবি।
কাজ আছে।
আচ্ছা দাদা আপনি ওকে জিজ্ঞাসা করছেন কেনো।
ঠিক বলেছো চম্পক। কেনো জিজ্ঞাসা করছি।
হাসলাম।
সব সই করা হয়ে গেলো। সনাতনবাবুর দিকে কাগজগুলো এগিয়ে দিলাম।
খুশিতো সনাতনবাবু।
সনাতনবাবু হাসছেন।
এই প্রথম কোনো কাগজ না পরে সই করলে।
উঠে দাঁড়ালাম। চম্পকদা সোমবার একটু বসবো।
আবার কি হলো।
কামিং সিক্স মান্থের টার্গেট সেট করে নেবো।
চম্পকদা হাসলো।
আমাকে তোর দরকার পরবেনা। একটা হাউসের জন্য যা যা দরকার তুই তা করে দিয়েছিস।
দাদার দিকে তাকালম। ফিরতে দেরি হবে। বলে দিও।
দাদা আমার দিকে হাঁকরে তাকিয়ে আছে। কোথায় যাবি!
দেখি।
এখন গন্ডগোল পাকাস নি।
না পাকাবো না।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
আমি বেরিয়ে এলাম। করিডোরের শেষ ঘরটা মিত্রার। এ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের একজনকে ঘর থকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে এলাম। হরিদার ছেলেকে আশে পাশে দেখতে পেলাম না। মিত্রার ঘরের নেমপ্লেটটা বেশ ঝক ঝক করছে। বুঝলাম কাজ হচ্ছে। আমি দরজাটা একটু ফাঁক করলাম, দেখলাম মিত্রা কি সব কাগজ দেখছে, অপরজিটে নীপা মিলি টিনা বসেও একি কাজ করছে।
আস্তে করে বললাম। আস্তে পারি ম্যাডাম।
আসুন।
ভেতরে এসে দাঁড়ালাম।
কেউ আমার দিকে ঘুরে তাকালো না। আমি ঘরের চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছি। দু’দিন আগে এই ঘরে ঢুকেছিলাম। তখন এই ঘরের চেহারা, আর আজ এই ঘরের চেহারার মধ্যে অনেক তফাৎ। টেবিলের ওপর অনেক গুলো ফুলের বুকে। এতো ফুলের বুকে এখানে কেনো ! কারা এসেছিলো ? এক ডাঁই ফাইল টেবিলের ওপর। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।
বসুন।
মিত্রা মুখ তুললো।
তুই! শয়তান।
ওরা তিনজন পেছন ফিরে তাকালো। হো হো করে হেসে ফেললো।

ম্যাডাম এটা অফিস। অফিসের কিছু এটিকেট আছে, মাথায় রাখবেন।
দাঁড়া তোকে এটিকেট দেখাচ্ছি।
ওরা হাসছে। আমি না হেসে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে।
বুঝলি টিনা ঠিক ওই জায়গায়, এখন যেরকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক ওই ভাবে।
বুঝলেন সুনীতবাবু।
মিত্রা চেয়ারে দেল খাচ্ছে।
আমার যিনি রিসেন্ট বস ছিলেন, তিনি যখন আমাকে এ্যাপয়েন্টমেন্ট দেন, তাকে বলেই ঢুকেছিলাম আমার একটা পা এই হাউসের ভেতরে আর একটা এই হাউসের বাইরে থাকবে। যেকোনো সময় যদি মনে করি ভেতরের পাটাও বাইরে নিয়ে চলে যাবো।
মিত্রা ছেলেদের গলা নকল করে বলছে, ওরা সকলে হো হো করে হাসছে।
কি সাহস, মালকিন এই চেয়ারে বসে, ঘরে আরো সব হাউসের সিনিয়ার লোকরা আছেন, সুনীতবাবু আমার আত্মীয়, সেই সময় উনি এ্যাকটিং এডিটর। যার তার চাকরি চলে যাচ্ছে। বাবুর কি রোয়াব।
তারপ চম্পকগা কি একটা যেন বলেছেন, ওমনি চম্পকদাকে সপাটে দিয়ে দিলো। আমিতো জানতাম আপনি এ্যাডম্যানেজার আপনার সাবজেক্ট বিজ্ঞাপন। সাংবাদিক কবে থেকে হলেন।
বুঝলি মিলি তখন আমি হাসবো না কাঁদবো। এতো লোকের সামনে চম্পকদার মুখটা ছোটো হয়ে গেছে। ওর কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।
মিত্রা উঠে দাঁড়ালো।
বুকের ওপর ঠিক এইভাবে হাত টাকে রেখে ঠিক এই ভাবে আমার দিকে তাকালো, ভাবলাম হয়তো চোখ মারবে। ওমা বলে কিনা ম্যাডাম তাহলে আমি আসি পারলে শোকজ করুণ। সোজা দরজার দিকে হাঁটা। আমি ডাকলাম।
ঘরের সবার থোঁতা মুখ দিলো ভোঁতা হয়েগেছে। তখনি বুঝলাম বুবুনের মধ্যে সেই আগুন এখনো আছে, যে আগুনে একদিন আমি পুরে মরেছিলাম, এই সুযোগ আর ছাড়া যাবেনা। তখন আমি মাঝ সমুদ্রে একটা ডিঙি নিয়ে ভাসছি। ব্যাশ খপ করে চেপে ধরলাম। বল অন্যায় করেছি।
একবারে না। টিনা বললো।

তারপর রাতে ডেকে পাঠালাম। সেদিন ওর পোষাক দেখলে তুই হেঁসে মরে যেতিস।
কেনো!
মালকিনের বাড়িতে গেছে একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরে। তাও রং ওঠা।
সত্যি!
তোকে বলছি কি। মিত্রা খিল খিল করে হাসছে।
সেদিন আমার বাড়িতে আরো ভালো করে ওকে বুঝলাম, আমার বুবুন আমাকে ভুলে যায়নি। আমাকে সেই ভাবে মনে রেখেছে। বাবার কথাটা মনে পরে গেলো, অনি ফিরে এলে ওকে ফিরিয়ে দিস না। আমি ওকে ফিরিয়ে না দিয়ে অন্যায় করেছি বল।
শেষের কথাটা বলতে গিযে ওর গলা ধরে এলো। মিত্রার চোখের কোল জলে ভরে গেলো। কেঁদে ফেললো। মিলি ছুটে মিত্রার কাছে গেলো।
ওরা সবাই অপ্রস্তুত। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে।
প্লীজ মিত্রাদি এরকম করেনা। তুমি এরকম করলে আমাদের খারাপ লাগবে। টিনা চেয়ার থেকে উঠে কাছে গেলো। নীপা হাঁ করে আছে।
মিত্রা রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছলো। আমার দিকে তাকালো।
একটু বসবিনা। তুইতো চা খাস নি। চায়ের কথা বলি।
চল বেরোবো। বাথরুমে গিয়ে মুখটা ধুয়ে আয়।
কোথায় যাবি।
গেলেই দেখতে পাবি। তোর গাড়ি কোথায়।
নিচে আছে হয়তো।
কে চালাচ্ছে।
রবীন।
ওকে চাবিটা দিয়ে যেতে বল। মিলি তোমরা এখন কোথায় যাবে।
কোথাও না।
যাবে নাকি আমাদের সঙ্গে।
হ্যাঁ।
মিত্রা বাথরুমে গেলো।
ওকে নিয়ে চলে এসো ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের সামনে, আমি ওখানে দাঁড়াচ্ছি।
আচ্ছা।
ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
সোজা নিচে চলে এলাম। দেখলাম রবীন দাঁড়িয়ে আছে। কাছে ডাকলাম। বললাম চাবিটা দিমনিকে দিয়ে আয়।
আমি কি অফিসে থাকবো।
হ্যাঁ। দাদাদের দিয়ে আসবি।
ঠিক আছে।
সোজা বেরিয়ে এলাম। একটা সিগারেট কিনলাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সামনে। বার বার মিত্রার কান্নাভেঁজা দু’চোখ চোখের সামনে ভেসে আসছে। নিশ্চই আজ ওদের গল্প করেছে। এই কান্না তার শেষ পরিণতি। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম ওরা চলে এলো। মিত্রা নিজে ড্রাইভ করছে। সামনের সিটটা খালি। ওরা পেছনে বসে আছে। কাছে এসে দাঁড়াতে আমি উঠে বসলাম। এখন মুখটা অনেক পরিষ্কার। আমাকে দেখে ফিক করে হেসে ফেললো। কোথায় যাবি ?
বৌবাজর কলেজস্ট্রীট ধরে সোজা বিবেকানন্দ রোড চল তারপর বলছি।
কলেজে যাবি।
ওর দিকে তাকালাম।
বলনা।
কেনো আবার পরার সখ হয়েছে।
যদি ওই বয়সটা আবার পেতাম।
আগামী জন্মে।
মিলি ফিক করে পেছন দিক থেকে হেঁসে উঠলো।

অনিদা তোমরা কোথায় বসে প্রেম করতে। টিনা বললো।
প্রেম! তুই খেপেছিস। যা কিছু কলেজের লনে। খুব বেশি হলে হেঁদুয়ায় ঢুকেই বাঁদিকের বেঞ্চটা। কতো কষ্টে একবার মাত্র সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম।
কেনো।
বাবুর তখন কতো কাজ। পার্টি করেননা কিন্তু পার্টির লিডাররা ওর পেছন পেছন ঘুরছেন। তারপর আমার সঙ্গে ঘুরতে গেলে তোদের পেছনে লাগবে কখন।
মিলি হো হো করে হেসে ফেললো।
নীপা এটা কলেজস্ট্রীট ডানদিকের দোকান গুলো দেখেছিস। এইখানে আমি বুবুন প্রায় আসতাম। আমি বোর হোতাম সে বাবু পুরোনো বই কিনেই চলেছেন।
নীপা এটা ঠন ঠনিয়া কালিবাড়ি। আমাদের দুজনের জীবনে একটা মাইলস্টোন। আমরা এই মন্দিরে দাঁড়িয়ে দু’জন দু’জনকে মেনে নিয়ে ছিলাম।
মিলি এই সিনেমাহলে কোনোদিন এসেছিস।
হ্যাঁ। বহুবার।
আমরা দু’জনে জীবনে একবারই ঢুকেছিলাম। সেই প্রথম সেই শেষ। আমি একটু দুষ্টুমি করেছিলাম বুঝলি। বাবুর সেকি গোঁসা। আর সিনেমাই দেখতে গেলোনা কলেজের তিনটে বছরে।
কিগো অনিদা তুমি কিছু বলছোনাযে। টিনা বললো।
আমি চুপচাপ সামনের ভিউইংগ্লাস দিয়ে রাস্তা দেখছি।
কিরে বিবেকানন্দ রোড এসে গেলাম এবার কোথায় যাবি।
সোজা গিয়ে বেথুনের গা দিয়ে বাঁদিকে ঢোক।
নীপা এই গলির মধ্যে বিবেকান্দর বাড়ি, ওই দেখ চাচার হোটেল বিবেকান্দ এখানে বসে মাংস খেতো। এই গলিতে বহুবার বুবুনের সঙ্গে এসেছি। যতোবারি এসেছি বুঝলি মিলি ততবার মনে হয়েছে প্রথম এলাম। বুবুন এতো সুন্দর গল্প বলতো। ফাঁক পেলেই চলে আসতাম।
বাঁদিকে ঘোর।
এদিকে কোথায় যাবি।
চুপ থাকলাম।
বলনা।
সামনে বাঁদিকে দাঁড় করা। ওই গাড়ি বারান্দার তলায়।
এতো মিষ্টির দোকান। মিষ্টি খাওয়াবি।
খাবি।
হ্যাঁ। গাড়ি থেকে নামবি না।
আচ্ছা।
আমি নামলাম। মিষ্টির অর্ডার দিলাম। ওদের জন্য কাঁচা গোলা আর নলেন গুড়ের সন্দেশের অর্ডার দিলাম।
খাবেন না নিয়ে যাবেন।
রসোগোলা আর সন্দেশ খাবো। আর হাঁড়িতে যেটা বললাম ওটা নিয়ে যাবো।
ওটা বুঝেছি।
আপনারা খেতে খেতে ওগুলো রেডি করে দিচ্ছি।
উনি একটা একটা প্লেটে সাজিয়ে দিলেন আমি ওদের এগিয়ে দিলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, চাইলে পাবো।
এখানে সব খেয়ে নিলে বাকি জায়গায় খেতে পারবিনা।
তুই কি এখন খাওয়াতে নিয়ে বেরিয়ে ছিস।
হ্যাঁ।
মিলি তাড়াতাড়ি সাঁটা। বেশি জল খাসনা যেনো আবার।
দুর তুমিনা কিইই।
সাঁটা সাঁটা।
খাওয়া হলো আমি একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল কিনে গাড়িতে দিলাম। গাড়ির পেছনের দরজাটা খুলে মিষ্টির হাঁড়িগুলো ঢোকালাম।
কিরে এতো মিষ্টি কার জন্য।
যাচ্ছিসতো আমার সঙ্গে দেখতেই পাবি।
এই মিষ্টির দোকানটার নাম জানিষ।
জানবোনা। তোর সঙ্গে এসে একানে কতো মিষ্টি খেয়েছি। তখন তুই খাওয়াতিস না। তুই কোনো কাজ করে দিলে আমরা তোকে খাওয়াতাম।
মনে আছে।
অবশ্যই। বেড ফেল, কাজটা করে দিতে পারলে নকুর রসোগোল্লা। রাজি।
রাজি।

এই হচ্ছে বুবুন।
বুঝলি টিনা।
তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমরা কলেজ লাইফটা দারুণ এনজয় করেছো।
তা বলতে পারিস।
কলেজে ক্লাস বাদে বুবুনকে নয় লাইব্রেরীতে পাবি নয় মাঠে। নয় ডঃ রায়ের বাড়ি না হয় আমার সঙ্গে হলঘরে নয়তো হেঁদুয়াতে।
নীপা খিল খিল করে হেসে উঠলো, অনিদা তোমাকে কখনো কিস করেছে।
ওইযে বললাম না একবার দুষ্টুমি করেছিলাম, ব্যাশ সিনেমা দেখা বন্ধ। এরপর কিস। ছেড়ে পালিয়ে যেতো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ও ভীষণ শ্রদ্ধা করতে জানতো সকলকে। ওর সামনে বলছিনা, তুই দেবাকে জিজ্ঞাসা করিস। বন্ধুদের কেউ এইভাবে শ্রদ্ধা করতে পারে আমি প্রথম শিখেছিলাম ওর কাছ থেকে। ও প্রায়ই বলতো তোকে যদি আমি শ্রদ্ধা করতে না পারি তুই আমাকে করবি কি করে।
ডানদিকে ঘোর।
এতো সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ চলে এলাম। তুইকি আমার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিস এদের।
আবার কথা বলে। সামনে ট্রাম লাইন এলে গাড়িটা স্লো করবি।
আমি ফোনটা বার করে একবার রতনকে ফোন করলাম।
বলোদাদা তোমরা কোথায়।
তুই চলে এসেছিস।
হ্যাঁ মাসি বললো।
আমি পেছন পাশ দিয়ে ঢুকছি।
কেনো তুমি সামনের দিক দিয়ে ঢোকো।
সামনের দিক দিয়ে এদের নিয়ে যাওয়া যাবেনা।
ঠিক আছে আমি গেটের সামনে দাঁড়াচ্ছি।
তাই দাঁড়া।
কিরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস।
চলনা বুবুনের একটা আঁতুড় ঘর দেখেছিস আর একটা দেখবি।
দামিনী মাসির বাড়ি!
হ্যাঁ।
সবাই এবার নড়ে চড়ে বসলো।
সত্যি অনিদা আমরা মাসির বাড়ি যাচ্ছি।
আর মিনিট চারেক।
ওরা চারিদিক দেখছে।
ট্রামলাইন দিয়ে বাঁদিকে ঢুকবি। ঢুকেই বাঁদিকে গাড়িটা ঘোরাবি।
আচ্ছা।
মিত্রা আমার পথ নির্দেশে ফলো করলো।
এইটা হচ্ছে এই পাড়ার খিড়কি দরজা। তোদের সামনের দিক দিয়ে ঢোকালাম না। প্রথম তো ভড়কে যেতে পারিস।
কেনো ঢোকালেনা। টিনা বললো।
ঠিক আছে ফেরার সময় যাবো।

নীপা এটা হচ্ছে কবিরাজ শিবকালী ভট্টাচার্জের বাড়ি। নাম শুনেছো কখনো।
চিরঞ্জীব বনৌষধি যাঁর লেখা। টিনা বললো।
হ্যাঁ।
এই পাড়ায় থাকতেন। হ্যাঁ। তখন উনিই ছিলেন এদের ডাক্তার। বিনে পয়সায় চিকিৎসা করতেন।
পাশের বাড়িটা অরতি গুপ্তের। নাম শুনেছো।
হ্যাঁ। প্রথম মহিলা হিসাবে যিনি ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়েছিলেন। টিনা বললো।
আর এই যে শরু গলিটা দেখছো। এখানে থাকেন গায়ক বিমান মুখোপাধ্যায়, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়। বিমানদার বাবা ছিলেন সুবল মুখোপাধ্যায় ওনার কাছে ইন্দুবালা আঙুরবালা আসতেন। ওরা কিন্তু এই পাড়া থাকে উঠে এসেছেন। দু’জনের কারুর কিন্তু পিতৃপরিচয় নেই, মাতৃ পরিচয়েই তাঁরা রাজ করেছেন। সুবলবাবুর সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের একটা নিভৃত যোগাযোগ ছিল। ওনাক কাছে নজরুল কমল দাশগুপ্ত ওঁর ভাই সুবল দাশগুপ্ত সকলেই আসতেন। এই পাড়ার ভেতর দিয়েই তাঁরা যাতায়াত করতেন।
মিত্রা এবার ওই সামনের বাঁদিকে ঘুরে দুটো বাড়ি পরে গাড়িটা দাঁড় করা।
গাড়ি মিত্রা খুব ধীরে চালাচ্ছে।
দু’পাশে সাড়ি দিয়ে মেয়ারা দাঁড়িয়ে। কেউ হয়তো শায়া ব্লাউজ পরেও দাঁড়িয়ে আছে। এ পাড়ায় যা রীতি। আমাদের গাড়িটা দেখে অনেকে অনেক কথা বলছে। দু’একটা কথা ওদের কানেও যে ভেসে আসছেনা তা নয়। ওরা সব যেনো চোখ দিয়ে গিলছে। কারুর মুখে কোনো শব্দ নেই।
বাঁদিকে ঘুরতেই দেখলাম রাস্তার ওপর রতন আর আবিদ দাঁড়িয়ে আছে।
মিত্রা গাড়ি দাঁড় করালো। রতন দরজা খুললো। আমি নামলাম। ওরা নামলো। ওরা সব চারিদিক হাঁ করে দেখছে। রূপের হাটে বিকি কিনি চলছে। মিত্রা কাছে এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরলো। একবার বাড়িটার দিকে তাকালো।
রতন পেছনে মিষ্টি আছে। দুটো হাঁড়া দুটো বাক্স নামিয়ে নিয়ে আয়।
তুমি আবার আনতে গেলে কেনো।
আমি ভেতরে ঢুকলাম। মিত্রা আমার হাত ধরে আছে।
কিরে ভয় করছে।
ও আমার মুখের দিকে তাকালো। হাসলো।
আয় একটু দেখে আসিস। অন্ধকার। হোঁচট খেতে পারিস।
দোতলায় উঠতেই একদঙ্গল মেয়ে এসে ঘিরে ধরলো। এদের সাজ পোষাক অনেক রুচি সম্মত কিন্তু চোখে মুখে উগ্রতা।
অনিদা বৌদি কোনটা।
বৌদি! কিসের বৌদি। এতগুলো বৌ থাকতে বিয়ে করতে যাবো কেনো।
একজন চেঁচিয়ে উঠলো, মাসি তুমি তোমার নাগরের কথা শুনতে পাচ্ছ। বলেকিনা এতোগুলো বৌ থাকতে বিয়ে করতে যাবো কেনো।
শিঁড়ির ওপরে মাসির চেহারাটা দেখতে পেলাম। একেবারে মা মা সেজেছে।
তোরা এসে গেছিস। ওমা দেখো কান্ড, তোদেরও নিয়ে এসেছে। কিরে রতন মিষ্টি কে এনেছে ?
আবার কে।
মাসি নিচে নেমে এলো।
বৌদি শ্বশুর বাড়িতে এলো মিষ্টি নিয়ে আসবেনা।
দেখলাম ভেতর থেকে একজন ফুলের বুকে নিয়ে এলো। মিত্রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।
বলোনা অনিদা বৌদি কনটা।
তোদের বুঝতে হবেনা। নিজেদের নাগরকেই খালি চেন।
তোমার নাগরের মতো যদি একটা নাগর পেতাম মাসি।
চলতো বউমা এখানে দাঁড়ালে তোর মাতা খারাপ হয়ে যাবে।
সবাই হৈ হৈ করে উঠলো। মিত্রা আর আমার হাতে নেই। হাত ছাড়া হয়ে গেছে। কেউ মিত্রার গাল টেপে, কেউ মিত্রার হাত ধরে কেউ মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে।
ওরা তিনজন অবাক হয়ে দেখছে। মিত্রার হাতে ফুলের বুকে তুলে দিলো। মাসি কোনো প্রকারে ওদের হাত থেকে মিত্রাকে রক্ষা করে ওপরে নিয়ে এলো।
মাসি আমরা ওপরে যাচ্ছি। তুমি নিচে একটু খবর দিয়ে দাও আধ ঘন্টার মধ্যে কেউ যেনো না আসে।
আবিদ বাবা একটু বলে দেতো।
আমরা ওপরে চলে এলাম। লক্ষ্মী এগিয়ে এলো। দেখলাম কবিতাও আছে। কবিতা এগিয়ে এসে মিলি টিনা নীপার সঙ্গে কথা বললো। লক্ষ্মী আমাকে এসে প্রণাম করলো।
মাসি আর কবিতার মুখ থেকে বৌদির গল্প শুনে শুনে বৌদিকে দেখা হয়ে গেছে। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks