দেখি নাই ফিরে - (Part-65)

পদুদা এখনো আছে। দেবা বললো।
বুবুন কম অত্যাচার করেছে পদুদার ওপর। কি খেপাতো, উড়ে বলে। সেই পদুদা অসুস্থ হলো। ও নিয়ে গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি করলো। পদুদার জন্য তিনরাত মেডিকেলে জাগলো। রক্ত জোগাড় করে পদুদাকে বাঁচালো।
তোর মনে আছে।
বাঃ মনে থাকবেনা।
তখন বটারা কিন্তু পদুদার জন্য দারুণ সার্ভিস দিয়েছিলো। না হলে পদুদাকে বাঁচাতে পারতাম না। মৈনাক আমি পদুদাকে মেডিকেলে নিয়ে গেছিলাম। কনিষ্ক মৈনাকের বন্ধু একি পাড়ায় থাকে। সেই থেকে ওদের ওখানে যাতায়াত।
তখন অঢেল সময় আড্ডামারার, জায়গা বলতে ওদের হোস্টেল।
বন্ধুত্বটা আরো গাঢ় হলো যখন একসঙ্গে দল বেঁধে আমরা পরাতে যেতাম।
পরাতে যেতিস ? মিত্রা বললো।
হ্যাঁ।
কই আগে বলিসনিতো!
শিয়ালদহ স্টেশনের গায়ে একটা পথ শিশুদের স্কুল আছে চোদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু কিশোরদের ওখানে পড়ানো হয়। আমরা সপ্তাহে তিনদিন ফ্রি সার্ভিস দিতাম। সেখানে পড়াতে যেতাম। ওখানকার ফসল সাগির, অবতার, ছট্টু।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকালো।
তাকিয়ে লাভ নেই। অবতারকে জিজ্ঞাসা করো। তবে কি জানো, আমরা থাকতাম ঘন্টা দুয়েক। তাতে সংশোধন হয়না একটু ঘসা মাজা হয়, এই যা। তবু মন্দের ভালো।
একদিন পদুদার সঙ্গে ক্যান্টিনে বিশাল ঝামেলা করছি।
কেনোরে! বড়মা বললো।
ঘুগনি পাঁউরুটি চেয়েছি, বলেছে নেই। ব্যাশ আমার জন্য তোমাকে বানিয়ে দিতে হবে। তারপর মৈনাক এলো।
চল তোকে বাইরে খাওয়াচ্ছি।
মৈনাক হার কিপ্পন। হাত দিয়ে পয়সা গলে না। বলে কিনা খাওয়াবে।
বেরিয়ে এলাম। বসন্ত কেবিন। একটা করে মোগলাই পরোটা পেঁদালাম।
মৈনাকের কাছে মোগলাই! দেবাশীষ বললো।
হাসলাম।
মৈনাক তখন বললো। তোকে একজনের ভূত ছাড়াতে হবে।
বলিস কি।
হ্যাঁ।
কার রে।
তোকে জানতে হবেনা। কনিষ্ক বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।
এককথায় রাজি হয়ে গেলাম। বললাম, ড্রেস মেটিরিয়াল।
সব জোগাড় হয়ে যাবে। তুই খালি বাসন পত্রের ফর্দ দে।
মৈনাককে লিখে দিলাম। কনিষ্ককে বলিস, একখানা মড়ার মাথার খুলি কিছু হাড় ল্যাবোরেটরি থেকে আনতে।
তুই তখন মেডিকেলে যেতিস।
রেগুলার।
আমাকে দেখিস নি।
তোমাকে তখন চিন্তাম। এই বাড়িতে এসে মিত্রার শরীর খারাপের দিন দেখলাম। তাও দেবাশীষ বললো তুমি অনেক বড় ডাক্তার।
ডাক্তারদাদা হো হো করে হাসছে।
জানো স্টুডেন্টসদের জন্য যে ফিল্মগুলো দেখানো হয় সেগুলো কিন্তু দারুণ।
তুই দেখেছিস!
রেগুলার দেখতাম। আজ হার্ট অপারেসন কাল কিডনি। কতো বলবো তোমায়।
তুইতো ডাক্তাররে।
একবার তোমাদের অপারেসন থিয়েটারে ঢুকেছিলাম বটাদের সঙ্গে ডাক্তার সেজে। আর এল দাস তখন সার্জারীর হেডডিপ।

তুই রতনলালকে চিন্তিস।
ওদের সঙ্গেই স্যারের বাড়িতে কয়েকবার গেছি।
তবে হাসপাতালের সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে মর্গ। আমার দারুণ লাগতো।
এমাগো তুই কিরে। মিত্রা বললো।
পরে বলবো ঘটনাটা।
সেদিনটা অমাবস্যা তায় আবার মঙ্গলবার। ঠিক ছটার সময় পৌঁছে গেলাম কনিষ্কের হোস্টেলে। বটা অনিকেত ছিলো। দেখলাম ওরা গুছিয়ে সব এ্যারেঞ্জ করেছে। বললাম কেশটা কি বল।
ওরা বললো। তোর দেবাশীষের থেকে একেবারে রদ্দি। হাফ মেয়ে। পুরো ছেলে বানাতে হবে।
এবার হাসা হাসি শুরু হয়েছে।
হয়ে যাবে। পারিশ্রমিক।
মাংস ভাত। সাত্যকি রান্না করছে, ওই হোস্টেলে।
আমরা এই কজন না আরো আছে।
আমরা দশজন।
স্পনসর।
ক্লায়েন্ট নিজে।
চা খাওয়া।
বড়মা হেসে মিত্রার গায়ে ঢলে পড়লো। নীরুর পয়সায় নীরুর ভূত ছাড়াবি ?
তাহলে কি।
এইতো তোমরা হাসতে আরম্ভ করলে। তাহলে কিন্তু গল্প হবে না।
হাসবো নাতো কি কাঁদবো। ছোটমা বললো।
ওদিকে অনাদিরা রতনরা হেসে গড়াগড়ি।
কনিষ্ক বললো নাগা হবি, না কৌপিন পরবি।
ক্লায়েন্টের মটিভ বুঝে ডিসিসন নেবো। তুই আমাকে সিঁদুরটা আর মড়ার মাথার খুলিটা দে।
কি করবি।
দেখনা কি করি।
তুই কি সিঁদুর লাগাবি ?
তাহলে কি।
কালকে আর এল দাস দেখতে পেলে আমাকে মড়ার মাথার খুলি বানিয়ে দেবে।
তাহলে হবে না। আমি চললাম।
তুই সিঁদুর তোলার একটা ব্যবস্থা করিস।
হয়ে যাবে।
আমি তখন ভিভিআইপি। যা হুকুম করছি সঙ্গে সঙ্গে তা চলে আসছে।
আমি কাজ শুরু করলাম। ওরা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মড়ার মাথাকে সিঁদুর মাখিয়ে লালে লাল করে দিলাম। খুলিটা ভয়ংকর একটা রূপ নিলো। নতুন নারকেল ঝাঁটা তাতে সিঁদুর লাগিয়ে সব রেডি করলাম। এবার নিরুর হোস্টেলে গিয়ে পৌছলম রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। তার আগে অবশ্য বটাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
গিয়েই প্রথমে বললাম আগে আমাকে বাথরুমে ঢোকা।
কেনো।
ড্রেস করতে হবে।

বাথরুমে ঢুকলাম। ওরা গাড়ি মোছার লালা চেলি কিনে এনেছে দশ মিটার। সেটাকে টুকরো করে কৌপিন করলাম বাকিটা লুঙ্গির মতো পরে ফেললাম। আর কিছুটা গায়ে জড়ালাম। কপালে লালা সিঁদুরের টিপ, মাথার চুলে ফ্রেঞ্চচক লাগিয়ে ফুলিয়ে দিলাম। চোখে একটু লেবুর রস দিয়ে লাল করে নিলাম। হাতে ত্রিশুল কমন্ডুল। কিছু বাদ নেই বুঝলে।
ওদের বললাম কেউ হাসবিনা কিন্তু। তাহলে সব কেলো হয়ে যাবে।
কনিষ্ক বললো, গুরু দারুণ মানিয়েছে। পুরো ফু বাবা।
তোরা কি নাম বলেছিস।
বটা জানে।
ওই নামে ডাকিস। খেঁড়োর মতো যেনো অনি বলে চেঁচিয়ে উঠিস না।
সে আর বলতে। আজকে সাক্সেস ফুল হলে কাল থেকে ইনকামের ধান্দা করতে হবে। তবে গুরু একটা কথা।
বল।
যা করো ক্ষতি নেই। রক্তারক্তি করোনা।
তুই একটু থাম আর পারছিনা পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। মিত্রা বললো।
টিনা মিলি সুরো নীপা অদিতি পেটে হাত দিয়ে বসে আছে।
তাহলে থাক আবার পরে হবে।
না না মাঝ পথে ছাড়লে চলে, এখনোতো সাসপেন্সেই ঢোকা হয়নি। ডাক্তারদাদা বললো।
আমি ঘরে এলাম। দেখলাম নীরু গোবেচারা হয়ে বসে আছে। ছাগলকে বলি দেবার আগে যেমন পূজো করা হয় নীরুর অবস্থা ঠিক তেমনি। পরিষ্কার ধোপদূরস্ত কাপর জামা পরে বসে আছে।
ঘরে ঢুকেই আমার ফার্স্ট ডায়লগ, ইশান কোনের জানলাটা বন্ধ করো। নৈরিত কোণের জানলাটা খুলে দাও। আজ সেই প্রেতাত্মা ওই জানলা দিয়েই ছুটে পালাবে। হ্যাঁরে ব্যাটা উপোস করে আছিস তো।
হ্যাঁ বাবা।
বলে কি, বাবা! মনে মনে বললাম।
আমি এবার ঝুলি থেকে সব মাল পত্র বার করলাম। ওদের বললাম যা বলে ছিলাম সব এনেছিস।
হ্যাঁ গুরুদেব।
বার কর।
চোখ বন্ধ করে সত্যজিত রায়ের বিরিঞ্চিবাবার কথা স্মরণ করে নিলাম একবার।
তারপর গোছগাছ করে পূজো শুরু করলাম। গায়ত্রীটা পর্যন্ত করলাম। তারপরই হোম জাগ শুরু করে দিলাম। বেল পাতা পোরানো হলো। মাঝে মাঝে নীরুরু দিকে লক্ষ করছি ভয়ে একেবারে সিঁটিয়ে আছে। কিরকম যেনো বিড় বিড় করছে। ওরা সবাই গম্ভীর।
জল খেলাম ঢক ঢক করে। ওরা হো হো করে হাসছে।
তুই একটু থেমে বল। বড়মা বললো।
মাঝে ইন্টারাপ্ট করলেই বন্ধ করে দেবো।
খালি বক বক খালি বক বক। দাদা বললো।
মরন, কতো ইন্টারেস্ট দেখো।
বুঝলে বড়মা গুণীণকাকার কাছ থেকে অনেক কষ্টে তিনটে মন্ত্র শিখেছিলাম। বলতে পারো সাতমোন তেল পুরিয়ে রাধা নাচার মতো আরকি।
গুণীণ কাকার নাম স্মরণ করে তিনটে মন্ত্র ঝেড়ে দিলাম।
ওমা দেখি নীরু আমার পা ধরে হাঁউ মাউ করে কাঁদে। আর বলে আমি ওকে ছেড়ে কিছুতেই যাবোনা। আমি ওকে ভালোবাসি।
কেলো করেছে। তখন আমার ভয় ভয় করছে। তাহলে কি সত্যি নীরুকে ভূতে ধরেছে। সব্বনাশ। দেখি অতীন নীতিন বলাই ঘর থেকে ভেগে পরলো।
আমার টেনসন বারলো। মৈনাক থম মেরে বসে গেছে। মনে হচ্ছে যেনো ওকেই ভূতে ধরেছে।
টেনসন ভয়ে আমার গলার স্বর সপ্তমে চড়ে গেলো। চেঁচিয়ে উঠলাম। জয় তারা। তুই যাবি না আমি তোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবো।
বাবা আপনি ঝেঁটা মারুণ ও কষ্ট পাচ্ছে। কনিষ্ক বললো।
দাঁড়াও বৎস ও ওকে ভালোবাসে আগের জন্মের স্বাথী এতো তাড়াতাড়ি যেতে পারে।
নীরু তখন উল্টো পাল্টা বকে যাচ্ছে। আমার পা কিছুতেই ছাড়ে না। যত বলি পা ছাড়, কিছুতেই ছাড়ে না। মাথা গরম হয়ে গেলো। দিলাম বেধড়ক ঝাঁটার বাড়ি।
কিছুক্ষণ চেল্লালো।
তারপর আমার পা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে কিনা বাবা আমার শরীর একেবারে ভালো হয়ে গেছে, কি শান্তি। আমাকে তুমি মন্ত্র দাও। তুমি আমার গুরু।
নীরু বলে কি! তখন আমার কাপর খুলে যাবার জোগাড়।
শেষমেষ কনিষ্ক, বটা ওকে অনেক করে বোঝালো।
ঝেঁটার বাড়ি খেয়ে তখন ওর মধ্যে কি চনমনে ভাব।
তাহলে আমাকে বলো আমি কি নিয়ে পড়াশুনো করবো। বাড়ি থেকে সার্জারি নিয়ে পরতে বলছে আমার ভালো লাগছেনা।



আমি গম্ভীর। ওর মুখের দিকে লক্ষ্য করছি।
ঠিক। কেনো বল।
কিছুতেই বলতে পারেনা।
কি বলবো। আমি পাতি বাংলার ছাত্র। ওকে তখন সার্জারি নিয়ে কেনো পরবেনা বোঝাতে হবে। বুঝতে হবে।
আবার চোখ বন্ধ করে ধ্যানস্থ হলাম। মাঝে মাঝে চোখ মেরে ওকে দেখি ব্যাটা কি করছে, দেখি মাথা নীচু করে বসে আছে।
কনিষ্ককে ইশারা করে বললাম কিছু বল। হেল্প কর।
ঠোঁট বেকায়।
শেষে অনিবাবার খেল শুরু করলাম।
বৎস।
বাবা।
ধরতুই সার্জারী নিয়ে পাশ করলি।
না বাবা আমি সার্জারী পরবো না।
আমি তোকে ধরতে বলেছি।
ধরলাম। বলেই আমার হাতটা খামচে ধরলো।
সকাল বেলা তোর কাছে একটা পেসেন্ট এলো তুই তখন ঘুমোচ্ছিস। তোকে ঘুম থেকে তুলে জাগালো। তারপর লুঙ্গি তুলে তোকে বললো, আমার পেছনে খুর মেরেছে একটু শেলাই করে দিন। তুই কি করবি।
নীরু হাঁউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। বাবা এই কারণে আমি সার্জারি নিয়ে পরবোনা। সকাল বেলা ওই নোংরা জায়গা দর্শন।
কনিষ্করা হাঁসবে না কাঁদবে কিছু বুঝতে পারছে না।
আমি আবার ধ্যানস্থ হলাম।
চোখ খুলে বললাম, শোন মা আমাকে বললো, তুই পেড্রিয়াটিক্স নিয়ে পর। সাইন করতে পারবি।
নীরু আমার পা জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। বাবা আপনি আমার মনের কথা বলেছেন। আপনার মাকে আমায় দেখান।
মনে হচ্ছিল ওই সময় ওকে লাথি মেরে পুঁতে দিই। তখন আমার অবস্থা ছেড়েদে মা কেঁদে বাঁচি। ও আমাকে মাকে দেখাতে বলছে।
সবাই হাসতে হাসতে খাওয়া ভুলে গেছে। কখন যে সুরো নীপা মিলি টিনা অদিতি আমার পাতের কাছে এসে বসেছে খেয়াল নেই।
তবে হ্যাঁ। নীরু সে রাতে আমাকে একশো এক টাকা দক্ষিণা দিয়ে পেন্নাম করলো। কাজ শেষ করে যখন উঠলাম রাত তিনটে বাজে। মাংসো ভাত খাওয়া হলো। আরো কতো কি বলেছিলাম সেরাতে খেয়াল নেই।
তারপর ছ’মাস মেডিকেল কলেজ মুখো হইনি। মার খাওয়ার ভয়ে।
দেখো নীরু এখন চাইল্ড স্পেশালিস্ট।
চাইল্ড স্পেশালিস্ট কিরে ওর এখন বেশ ভালো নামডাক হয়েছে। খুব ভালো ডায়গোনেসিস করতে পারে।
ছোটমা আমার মাথার চুলটা ঘেঁটে দিয়ে স্নেহের হাসি হেসে বললো, বিচ্চু।
এবার মর্গেরটা বল। মিত্রা বললো।
পারিশ্রমিক।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
দেবো। আগে বল।
ফেলো কড়ি মাখো তেল। তুমি কি আমার পর।
আবার সকলে হাসে।
আবার আগামী কাল। একদিনে সব হয়ে গেলে বদহজম হয়ে যাবে।
আমি যে থাকবো না। সুরো বললো।
তোকে পরে বলবো একদিন। এর থেকেও ভালো করে।
খাওয়া পর্ব শেষ দামিনী মাসি আমার দিকে তাকায় আর মুচকি মুচকি হাসে। সবাই কম বেশি হাসছে। এরি মধ্যে ইসলামভাইকে ইশারায় বললাম তুমি একবার ওপরে এসো।
আমি ওপরে নিজের ঘরে এলাম। মানিপার্টস থেকে চাবিটা বার করে আলমাড়িটা খুললাম দেখলাম বেশ অগোছালো। তার মানে ঘাঁটা ঘাঁটি হয়েছে। চোরা ড্রয়ারটা খুললাম। মিত্রার জিনিষ গুলো দেখলাম ঠিক আছে। এখানে হাত পরেনি। ফাইলটা মিত্রাকে কালকে রাখতে দিয়েছিলাম, ওটা কোথায় রেখেছে ? সকাল থেকে কারা কারা এসেছিলো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
কিরে আসবো। ঘরের দরজায় ইসলামভাই।
এসো।
বন্ধ করবো।
করো।
আমি আলমাড়ি বন্ধ করলাম।
ইসলামভাই একটা সিগারেট বার করে আমার হাতে দিলো।
আমরা দুজনে জানলার ধারে গেলাম।
কি হয়েছে বলোতো। আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
মামনি তোকে সব বলবে।
তাহলে তোমায় ডাকলাম কেনো।
কাল রাতে তুই সবাইকে ম্যাসাজ করেছিলি। কাল কেউ আসতে পারেনি। তারওপর কাগজে আজ নিউজ বেরিয়েছে। তোর নামে। সবাই একটু ভয় পেয়েছে, তোর বুঝি কিছু হয়েছে। সকালে তোর শরীরটাও খারাপ হয়েছিলো। একেবারে সোনায় সোহাগা।
অনিমেষদার সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়েছে।
হ্যাঁ।
কি বললো।
সকাল থেকে ঝাড় খেতে খেতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। কাউকেতো বোঝাতে পারছিনা আমার থেকে তোর ক্ষমতা বেশি।
হাসলাম।
হাসিসনা সকালে পার্টির সব নেতারা এসেছিলো। বলতে পারিস কোর কমিটি।
সব্বনাশ।
অনিমেষদা সকলকে ডেকে নিয়ে এসেছিলো। তোকে দেখে সকলে চলে গেছে। খালি অনিমেষদা বিধানদা ছিলো দেখলিতো তোর সঙ্গে দেখা করে গেলো।
আবিদ ফিরে এলো কেনো।
আমি কি করবো। সকাল বেলা অনিমেষদার মূর্তি দেখিসনিতো। তোকে দেখার পর যেনো আগুন হয়ে গেলো। গম্ভীর হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সেই থেকে নীচে। আর ওপরে আসে নি। তোর জ্ঞান ফেরার পর ওপরে এলো। মামনি ওপরে ছিলো ওকেও নিচে ডেকে নিলো। আর ওপরে আসতে দেয়নি।
আমিও সেই যে নীচে গেছি ওপরে আসিনি।
আমার কাছ থেকে সমস্ত জানলো। আমি কিছু লুকোই নি। দামিনীর সঙ্গে কথা বললো। তখনতো অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাতেই পারছিনা। তারপর বিধানদাকে ফোন করলো। বিধানদা এলো। একে একে সবাই।
আমাকে বললো আবিদকে ডেকে পাঠান। অমান্য করি কি করে। আবিদকে সমস্ত ঘটনা বললাম। তোর শরীর খারাপের কথা তখন চেপে গেছিলাম। এখানে এসে সব জানার পর কিছুতেই অনিমেষদাকে বলবেনা। ও কেনো তোর অর্ক সায়ন্তন দ্বীপায়ন সন্দীপ কেউ মুখ খোলেনা। তারপর মামনি বললো। তোমরা বলো আমি বুবুনের সঙ্গে বুঝে নেবো। তখন সবাই একে একে বললো। তাও অনিমেষদার বিশ্বাস হচ্ছে না।
আবিদ যতোক্ষণ ছিলো ততক্ষণ প্রচুর সাদা পোষাকের পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে আছে। মাছি গলতে পারবেনা।

অর্ক।
বলতে পারবোনা। ওদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলেছে অনিমেষদা। তোর ল্যাপটপ দেখেছে। দ্বীপায়ন অপারেট করেছে।
বুঝে গেছি। মুখার্জীর লোক এসেছিলো।
খাম দিয়ে গেছে। সিল করা। খোলা হয়নি। অনিমেষদা বলেছে তুই খুলবি। তবে তোর ফোন থেকে নম্বর নিয়ে মুখার্জীর সঙ্গে কথা বলে নিয়েছে।
ঠিক আছে তুমি যাও। ওদিকটা সামলাও। মিত্রাকে একটু ডেকে দাও। তোমার ব্যবসা সামলাতে পেরেছো।
পারলাম কই। ভাবলাম সকাল থেকে বেরোবো। তোর এই অবস্থা। তারপর মানুষের ঢল। অনিমেষদার স্ত্রীর কি কান্না বড়দিকে জড়িয়ে ধরে। ঠায় তোর পায়ের কাছে বসে রইলো। আর ডাক্তারদাদাকে বার বার বলছে দেখুননা ও ঠিক আছে কিনা। তখন তোর ঠিক কি হয়েছিলো বলতো ?
বলতে পারবোনা।
তোর ওপর মনে হয় কেউ ভর করেছিলো।
যতো সব বাজে কথা।
অনিদা ও অনিদা।
ওই দেখো সব চলে এসেছে। দরজা খোলো, দরজা খোলো আগে।
ইসলামভাই দরজা খুললো।
সবাই ঘরের মধ্যে এলো। মিত্রা হাসছে।
কিহলো তুই হাসছিস কেনো ?
প্রথম রাউন্ড ভালোই হলো তাহলে বল।
ইসলামভাই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো।
শোনো আমরা এখন যাচ্ছি। মিলি বললো।
কেনো! তোমাদের সঙ্গে তো কথাই বলা হলো না।
বাবাঃ তুমি যা ব্যস্ত তোমাকে আজ পাওয়া যাবেনা। মিত্রাদি বলে দিয়েছে কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে। টিনা বললো।
টাকা পয়সার কথা জিজ্ঞাসা করেছো।
না দিলেও চলবে।
ফ্রি সার্ভিস।
হ্যাঁ।
তুমি একা না তিনজন।
আমরা তিনজন।
তোমাদের অফিস।
সকালে রিজাইন দিয়ে চলে এসেছি।
সব্বনাশ। আমার এ্যাডের কি হবে।
তুমি খালি এ্যাড এ্যাড করছো কেনো বলোতো ? তুমি এসব ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করবেনা। আমি মিলি অদিতি বুঝে নেবো।
মিত্রার দিকে তাকালাম মিটি মিটি হাসছে। ব্যাপারটা এরকম কিরকম দিলাম বল।
ওদের কোথায় বসাবি।
কাল আমার ঘরে বসবে। সব ফাইল পত্র সনাতন বাবুকে রেডি করতে বলেছি। দেখবো।
ওরা কাল তোর সঙ্গে যাবে, না একা একা ?
কাল আমার সঙ্গে যাবে।
হিমাংশুকে ড্রাফটা করতে বল।
বলে দিয়েছি।
ওরে বাবা তাহলেতো আমার কাজ শেষ। এই তো মিত্রা ম্যাডাম আস্তে আস্তে ম্যাম হয়ে যাচ্ছে।
যাচ্ছে মানে তুমি কি বলতে চাও। মিলি ঝগরুটে মেয়ের মতো তেড়ে এলো।
না না মিলি ম্যাডাম ক্ষমা করুণ। আপনারা এখন দলে ভাড়ি।
মাথায় রাখবে কথাটা। কালকে থেকে অনেক ঝামেলা করেছো। সব তোলা আছে, মনে রাখবে।
দেবা নির্মাল্য আমাদের কথা শুনছে আর হাসছে।
দেবা নির্মাল্যর কি করবি। মিত্রা বললো।
কেনো! ওরাও কি রিজাইন দিয়ে বসে আছে নাকি।
হ্যাঁ। কাল অদিতি দেবার সঙ্গে ঝগড়া করেছে।
ভেরি ব্যাড।
তুমি না শুনে ভেরিব্যাড বললে কেনো। অদিতি বললো।
তুমি ঝগড়া করেছো বলে। আমরা বুদ্ধিমান প্রাণী ঝগড়া করবো কেনো। বুদ্ধির লড়াইয়ে ঘায়েল করবো একে অপরকে।
সবাই চুপ করে গেলো।
দেবা আজ কিছু ভাবতে ভালো লাগছেনা। যদি পারি রাতে তোর সঙ্গে ফোনে কথা বলবো। আগামীকাল বরং তুই নির্মাল্য ওদের সঙ্গেই চলে আয়। বসে কথা বলবো।

ইসলামভাই গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো।
কিগো আবার কি হলো!
অফিসের সব এসেছে।
আমরা যাই বুঝলি। তোকে এখন ধরা যাবেনা। দেবাশীষ বললো।
আমি হাত দেখিয়ে বললাম বোস। ঝামেলা করিসনা। এদের সঙ্গেও তো একটা মিটিং হবে। থাকতে ইচ্ছে করছে না।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
যাও নিয়ে এসো।
ওরে অনেক লোক।
বড়মা ছোটমা মরে যাবে চায়ের ঠেলায়।
মেসিন বসিয়ে দিয়েছি।
বেশ করেছো।
নিয়ে এসো সবাইকে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসছে। সবাই আমাকে দেখছে।
অনিদা সত্যি বোঝাই যাচ্ছে না। তোমার শরীর খারাপ হয়েছিলো সকালে। তুমি যেনো আগের অবস্থায় বিচরণ করছো।
সত্যি কি আমার শরীর খারাপ হয়েছিলো ?
বলতে পারবোনা। যা চোখে দেখেছি তাই বললাম। টিনা বললো।
ওরা সবাই ঘরে এলো। দাদা মল্লিকদা ওদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে। ঘর ভর্তি হয়ে গেলো। ওরা মিত্রাকে এসে প্রণাম করতে চাইলো। মিত্রা নিলো না। দাদাকে দেখিয়ে দিয়ে বললো।
দাদাকে প্রণাম করুণ। দাদা আমাদের গুরুজন।
সার্কুলেসন ম্যানেজার প্রসের লোক জন ছাড়াও দেখলাম চম্পকদা এসেছেন এ্যাড ডিপার্টমেন্টের আরো চার পাঁচজন।
কিরে তুই ভালো আছিস।
হ্যাঁ।
সকালবেলা যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। আরি ব্যাশ তোমরাও আছো।
হ্যাঁ চম্পকদা ওদের আটকে রেখেছি। কালকে থেকে এই পাঁচজন আমাদের অফিসে জয়েন করছে। ম্যাডামের রিক্রুট।
দাদা মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম তুই এটা আবার কি স্কিম করছিস। তোর মাথাটা কি একটুও থেমে থাকবেনা।
বাঁচালি। আমি অধস্তন হয়ে কাজ করবো। এই বয়সে আর টেনসন নিতে ভালো লাগছেনা। তুই চাকরিটা থেকে রিটায়ার করাস না।
চম্পকদা এমন ভাবে বললো সবাই হেসে ফেললো।
ঘরের সবাই ওদের পাঁচজনকে গিলে খাচ্ছে। ভাবটা এরকম এরা আবার কারা উড়ে এসে জুড়ে বসলো।
বলুন আপনাদের আসার কারণ।
সুতনুবাবু আমাদের অফিসের লীডার গোছের মানুষ। এই মুহূর্তে প্রেসটা দেখছেন। তিনিই বললেন।
ছোটবাবু। কালকের ব্যাপারটা আমাদের কাছে এক অভাবনীয় ব্যাপার। বিগত পঁচিশ বছরে কেউ আমাদের এই ভাবে টাকা দেয়নি। আপনি প্রথম দিলেন।
অন্যায় করলেন সুতনুবাবু।
কেনো স্যার!
দেখলেন চম্পকদা আমাকে নাম ধরে ডাকলো আর তুই বলে সম্বোধন করলো। আপনি আমাকে আপনি আজ্ঞে করছেন। এটা ঠিক নয়। আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। এখনো নিজেকে তাই মনে করি। মিত্রাকে আপনারা ম্যাডাম বলতে পারেন। আমাকে স্যার বলবেন না। স্যার বলতে হলে দাদাকে মল্লিকদাকে চম্পকদাকে বলবেন। যারা এই হাউসের সিনিয়ার তারা এই সম্বোধন পেতে পারে আমি না। এবার বলুন।
সবাই চুপ করে রইলো। কারুর মুখ থেকে কোনো কথা সড়েনা।
কিরে এই ঘরে এতো ভিড়কেনো! এরা কারা ? সুতনু তুই এখানে ? কি করতে এসেছিস ? অনিমেষদা বিধানদা প্রবীরদা অনুপদা রূপায়নদা ঘরে ঢুকলেন।
আমার অফিসের সবাই হকচকিয়ে গেছে। পার্টির দুর্দন্ড প্রতাপ পাঁচ মাথা আমার ঘরে। এই অসময়ে। ওরা ঠিক ঠাহড় করতে পারছে না। ভিড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হতে আরম্ভ করলো।
কি চাই তোদের এখানে।
অনিবাবুর কাছে এসেছিলাম।
কিরে তুই ভালো আছিস ? বিধানদা এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন।
আমি মাথা নীচু করে সকলকে প্রণাম করলাম।
অনিমেষ ওদের ব্যাপারটা শুনে আগে ভাগা। বিধানদা বললেন।
তোদের কি কোনো ডিমান্ড আছে।
না।
তাহলে।
কাল অনিবাবু আমাদের কাগজ বিক্রির সমস্ত পয়সা দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন সকলে সমান ভাগে ভাগ করেনিও। তা ভাবলাম অনেক টাকা। যদি একটা কো-অপারেটিভ করি ওনার আপত্তি আছে কিনা।
ওর একেবারে আপত্তি নেই। আমি বলছি। টাকাটা যাতে ভালো কাজে লাগাতে পারো সেটা দেখো। গেঁড়াবার ধান্দা করোনা। ও পছন্দ করেনা। যদি আরও কিছু লাগে আমি অনিকে বলে দেবো। আর সুতনু তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, ওখানে যেনো কোনো ঝামেলা না হয়। এটা মাথায় রাখবে। এবার যাও।
ওরা ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেলো।

কি দেবাশীষ। এবার তোমরা অনির সঙ্গে থাকবে তো ?
হ্যাঁ দাদা, আজ সব চুকিয়ে বুকিয়ে দিয়ে এলাম।
বেশ করেছো। তুমি গিয়ে তোমার বৌদিকে একটু বলোতো ভালো করে চা বানাতে। র চা। বড়দি ছোটকে যেনো বিরক্ত না করে। আমরা একটু অনিকে নিয়ে বসবো। অমিতাভদা, তুমি মল্লিক থাকো। মিত্রা।
মিত্রা অনিমেষদার মুখের দিকে তাকালো।
মা তুই নিচে যা। প্রয়োজন পরলে ডাকবো।
মিত্রা দরজার দিকে পা বাড়ালো।
ও শোন মা শোন।
মিত্রা মাথা নীচু করে এগিয়ে এলো।
সকালের কাগজপত্র গুলো কোথায় ?
সব দাদার ঘরে আলমাড়িতে।
একবার ভজুটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আয়, আমরা দু’জন দেখেছি। এরা দেখে নি। দেখাতে হবে।
মিত্রা বেরিয়ে গেলো।
দেখলাম ভজু ছ’টা চেয়ার নিয়ে এসেছে।
এইতো ভজুরাম। চেয়ারগুলো রেখে ছুটে যা, দিদিমনি কাগজগুলো দেবে নিয়ে আয়। আর ওখানে চুপটি করে বসে থাকবি। কাউকে ঢুকতে দিবি না। কেমন।
ভজুরাম দাঁত বার করে হাসলো।
বুঝলে প্রবীর ছেলেটা এ্যাবনরমাল। অনির বাহন। এতদিন ওর কোনো চিকিৎসা হয়নি। এখন ডাক্তার সামন্তর ট্রিটমেন্টে আছে। অনি ওকে ওখান থেকে তুলে এনেছে। কিন্তু ও সব বোঝে। ঠিক ঠাক প্রকাশ করতে পারেনা।
তাই নাকি! দেখে একেবারে বোঝা যায় না।
অনিকে তোমরা আগে দেখোনি।
দেখেছি। তোমার ঘরে আসা যাওয়া করতো। দেখা হলেই ফিক করে হাসতো। ভাবতাম সাংবাদিক।
ও এখনো সাংবাদিক। চিরটাকাল তাই থাকবে। কালকের ঘটনাটা একবার ভেবে দেখো। মালিক হলে পারতো।
সবাই অনিমেষদার কথায় মাতা নীচু করলো।
অমিতাভদা।
দাদা অনিমেষদার দিকে তাকালো।
অর্ক সায়ন্তনকে একবার পাওয়া যাবে।
নটার পর হলে ভালো হয়।
তাই হোক। আমি আজকে এই জটটা খুলে বাড়ি যাবো। তাতে মধ্যরাত পর্যন্ত চললেও আপত্তি নেই।
কেনো সন্দীপকে একটা ফোন করোনা। আমিতো প্রায় সত্তরভাগ কাজ তুলে দিয়ে এসেছি। যদি ওদের ছাড়তে পারে। তারপর নয় সন্দীপ পরে আসবে। মল্লিকদা বললো।
বুঝলে রূপায়ণ এইকটা হচ্ছে অনির কোর টিম। অনি ছাড়া এরা মুখ খুলবেনা। আমাকে সকালে যা বলেছে তা হচ্ছে কাঁঠাল খেলো পেট ফুললো মরে গেলো। আরো দুটো আছে।
সবাই হেসে উঠলো।
সেটা আবার কারা।
দাঁড়াও, সবাই এবাড়িতেই আছে। একটা একটা করে ডাকবো। দেখতে পাবে।
বড়মা ঘরে ঢুকলো। হাতে চায়ের পট।
এবাবা আপনি এলেন কেনো। আমিতো সুতপাকে দায়িত্ব দিলাম।
সবাই আসছে।
দেখলাম একে একে ছোটমা দামিনী মাসি বৌদি ঢুকলো।
অনির জন্য আপনারা সকলে এবাড়িতে এসেছেন। অনি না থাকলে আপনাদের কাগজে ছবি দেখতাম বা টিভিতে দেখতাম। আলাপতো কারুর সঙ্গে নেই তাই যেচে আলাপ করতে এলাম।
এটা বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো।
অনিমেষদা ওদের তিনজনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন।
রূপায়ণদা বললেন আমি ওনাকে চিনি। দামিনী মাসির দিকে তাকিয়ে বললেন।
উনি অনির মাসি। অনি ওর জীবনের আঠারো মাস ওনার আশ্রয়ে থেকেছে। ওই পাড়ায়।
হাউ স্ট্রেঞ্জ। প্রবীরদা বলে উঠলেন।
স্ট্রেঞ্জ নয় প্রবীর। দিস ইজ ফ্যাক্ট। অনির মা, মাসির গায়ে হাত পরবে, এটা ও সহ্য করতে পারে নি। তাই কালকে এই কান্ড ঘটিয়েছে। বলতে পারো উনিও টার্গেট ছিলেন। আমি যে বাদ ছিলাম তা নয়। সেটা আজ সকালে ও সেনস্লেস অবস্থায় বলেফেলেছে। তখন অনিকে ধরে রাখা দায়। আমাদেরই পার্টি কর্মী ওদের গ্রামের পঞ্চায়েত ওর বন্ধু ওরা ধরে রাখলো তখন অনিকে।
কি বলছেন অনিমেষদা!
বিধানবাবুকে জিজ্ঞাসা করতে পারো।
আমার তো সব কেমন যেনো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে অনিমেষদা। অনুপদা বললেন।
ব্যাপারটা সেরকম। আজ অনির আমার বাড়িতে যাবার কথা ছিলো। ওর বৌদিকে নেমন্তন্ন্ করার জন্য। ও যায়নি আমরা এসেছি। গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আমি তোমাদের কথা শুনে ডাক্তারকে ছাড়তে বলি ওকে। ও সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয়। কালকে ডাক্তারের কীর্তি কাহিনী কাগজে বেরোবে, দেখে নিও।
আপনি এখুনি একবার রাজনাথ বাবুকে ডাকুন। প্রবীরদা বলে উঠলেন।
এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো প্রবীর। তুমি এখনো সব দেখোনি সব জানোনা। এটুকু শুনে বিশ্বাস করার কোনো কারন নেই। আমাদের পার্টিতে অর্ন্তরদ্বন্দ আছে কিন্তু আমরা পার্টির মিটিংয়ে সেটা মিটিয়ে নিই। বাইরের কাকপক্ষী টের পায়না। অনি কিন্তু একা সেই কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে।
চা খেত খেতে কথা চলছে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে।
জানো প্রবীর, বড়দি আমাদের পার্টির ঊণসত্তোর সত্তর সালের কর্মী। অমিতাভদাও সেই প্রিয়েডের। দাদা বিদ্যাসাগরের জিএস ছিলেন। একবার ভেবে দেখো, ওই প্রিয়েডে দাদা ওই রকম একটা কলেজের জিএস, ভাবতে পারো। তাঁদের আশ্রয়ে অনি লালিত পালিত।
অনিমেষদা থামছে না।
সুতপা যেদিন অনিকে ধরে নিয়ে এলো। সেদিন ওর গোঁফ দাড়ি ঠিক মতন বেরোয়নি। ও নাকি সুরোকে পরাবে। সুরো তখন ক্লাস ফাইভের ছাত্রী। ও ক্লাস টুয়েলভ। ডঃ রায়ের রেকমেন্ডেসন। আমি সেদিন হেসেছিলাম। আমার হাসিটা যে কতোবড়ো ভুল তা আজ ও প্রমাণ করে দিয়েছে। তখন থেকে ও আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করে। আজও সুরোকে পড়াচ্ছে। ওর নোট লিখে সুরো ফার্স্টক্লাস পেলো। সুরো ওকে ভাইফোঁটা দেয়। সেই সুরো কাল থেকে এক গ্লাস জল পর্যন্ত খায় নি।
অনিদার কি হলো একবার খোঁজ নাও। ডঃ রায় আমাকে ব্যক্তিগতভাবে তিনবার ফোন করেছেন। তারপর সুতপাকে সঙ্গে করে নিয়ে এখানে এসে হাজির হয়েছেন। অনিকে দেকে উনি বেশিক্ষণ থাকতে পারেন নি চলে যান।

আজ সকালে এসে যে দৃশ্য দেখেছি সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। তখনই বিধানবাবুকে ডাকলাম। নিজের চোখে একবার দেখে যান। আমাকে তো পার্টি মিটিংয়ে তোমাদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
অনিমেষদা একা বলে চলেছে, সবাই শ্রোতা। আমি মথা নীচু করে দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছি। বুঝতে পারছি আজ থেকে আমার খেল খতম। টোটাল ব্যাপরটাই অনিমেষদা নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন। ভজুরাম হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো। পেছনে মিত্রা। একডাঁই কাগজ পত্র। আমার ল্যাপটপ। সব। মাথায় করে নিয়ে এসেছে। এমনকি সেই ফাইলটা পর্যন্ত।

ভজুরামের কোনো হেলদোল নেই, আজও ওর পরনে হাফপ্যান্ট হাফ হাতা সার্ট। কাগজপত্র গুলো মাথা থেকে খাটে নামিয়ে রাখলো। আমার কাছে এগিয়ে এলো।
অনিদা ডাক্তারদাদা ইঞ্জেকসন দেবে বলেছে।
কেনো ?
মাথাটা ব্যাথা করছিলো বলেছি।
ঠিক আছে দিদিমনি নিচে গিয়ে না বলে দেবে।
ভজুরাম গিয়ে গেটের সামনে বসে পরলো।
কিরে নিচে চল।
না আমাকে এখানে বসতে বলেছে।
তোকে বসতে হবেনা।
অনিমেষদা হেসে ফেললো।
আমি ওকে বসতে বলেছিরে। ও এখন এই ঘরের পাহাড়াদার।
মিত্রা ফিক করে হেসে চলে গেলো।
বুঝলে রূপায়ণ। মিত্রা অনির কলেজের বন্ধু। এক সঙ্গে একই ইয়ারে পড়াশুনো করেছে। ওদের দুজনের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিলো। তারপর কোনো এক অদৃশ্য কারণে ডাক্তারের সঙ্গে মিত্রার বিয়ে হয়। বিয়ে বললে ভুল বলা হবে। বলতে পারো মিত্রা ডাক্তারের ক্যাশ বাক্স ছিলো। অনি তার বান্ধবীর বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। তাতেই এই বিপত্তি। আমরা কি এবার অনির পাশে দাঁড়াতে পারি ?
অফকোর্স কেনো নয়।
এই তুমি আবার ভুল করলে। যাচাই করো, যাচাই করো। যদি অনি ভুল করে থাকে তাকেও শাস্তি দেবার মনোস্থির করো। তুমি নেগেটিভ দিক দিয়ে ভাবছোনা কেনো। অনিরতো কোনো স্বার্থ জড়িয়ে থাকতে পারে এর সঙ্গে।
রূপায়ণদা চুপ করে গেলেন।
বড়দি এবার আপনারা যান। আমাদের একটু কাজ করতে দিন। আর আবিদ আর রতনকে একটু থাকতে বলবেন। প্রয়োজনে ওদেরও ডাকতে পারি।
ওরা সকলে বেরিয়ে গেলো।
অমিতাভদা সিগারেট খেতে পারি। অনিমেষদা অনুমতি চাইলেন।
হ্যাঁ হ্যাঁ খাও। মল্লিক আমার প্যাকেটটা একটু নিয়ে আয়।
এখান থেকে নিন। অনি একটা এ্যাসট্রে দে।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকালো।
দাদার ঘরে আছে।
অনিমেষদা ভজুকে ডেকে এ্যাসট্রে আনতে বললো।
ভজু লাফাতে লাফাতে চলে গেলো।
আগে অনির কথা শুনবে না। কাগজ দেখবে।
একটা কাজ করলে হয়না অনিমেষদা।
অনিমেষদা প্রবীরদার দিকে তাকালেন।
বল।
রাজনাথকে ডেকে পাঠান। ওরও শোনার দরকার আছে। সামনা সামনি সবার কথা শুনি। নাহলে ও অস্বীকার করতে পারে। বলতে পারে ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারপর ওকে শোকজ করো। কি উত্তরদেয় দেখো। তারপর সাসপেন্ড। পার্টি সদস্যপদ বাতিল।
কথাটা তুমি ঠিক বলেছো। কালকে রাজনাথের ওপর একটা আর্টিকেল বেরোবার কথা ছিলো অনিদের কাগজে। যার কপি অনি ওকে জেরক্স করে পাঠিয়েছিলো রেজিস্টার পোস্টে। তার কপি এখানে আছে। লেখাটা যে রাজনাথবাবু পেয়েছেন তার ডকুমেন্টসও আছে। তারপরই কিন্তু এই ঘটনা। আমার একটাই দুঃখ তোমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তোমরা তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করোনি।
প্রবীরদা মাথা নীচু করে রইলো।
বিধানবাবু তোমাদের ওপর নির্ভরশীল। তোমরা ভুল রিপোর্ট দিলে উনি কি করবেন।
প্রবীরদা চুপ করে আছে।
ওই জোনটা তুমি হ্যান্ডেল করছো। তোমার আরো বেশি কষাস হওয়া উচিত ছিলো।
প্রবীর তুমি ওকে ঘার থেকে নামাও। রূপায়ণদা বললেন।
নামাবো কি করে। ওখানকার সংগঠনটা নষ্ট হয়ে যাবে।

তা বলে পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে এটাকি তুমি চাও। বিধানদা বললেন।
আমাদেরও তো ওপর তলায় জবাবদিহি করতে হবে।
অনির কাছে যা ডকুমেন্টস আছে তাতে ও আজ না হোক কাল রাজনাথকে শেষ করবেই। আমি আজ আটকে রেখেছি। কাল পারবো না। এটা যদি ভোটের আগে হয় তুমি বিরোধী পক্ষকে সামলাতে পারবে।
প্রবীরদা অনিমেষদার দিকে চমকে তাকালেন। চোখে বিষ্ময়।
এই ফাইলটা অনি গত দশবছর ধরে তৈরি করেছে। শুধু রাজনাথ বললে ভুল হবে। আমাদের আরো অনেক পার্টি কর্মী এতে জড়িয়ে আছে। উইথ ফটো এবং ডাটা। তুমি মিথ্যে বলবে কি করে। সকালে অনেক কষ্টে এই ফাইলটা আমি মিত্রার কাছ থেকে দেখেছি।
প্রবীরদা ফাইলটা টেনে নিলেন। অনিমেষদা আমার দিকে তাকালেন।
তুই একটু বাইরের বারান্দায় দাঁড়া। একটু পরে ডাকছি।
আমি গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে এলাম। সোজা চলে গেলাম ছোটমার ঘরের সামনে। এদিকটা অন্ধকার। নিচে খুব হৈচৈ হচ্ছে। টিনা মিলি অদিতিদের গলা পাচ্ছি। তারমানে ওরা এখনো যায়নি। নির্মাল্য আর টিনার গাড়িটা বাইরের বাগানে। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। পাবো কোথায়। মিত্রাকে ফোন করলাম। হৈ হৈ একটা শব্দ।
বল। খুব নীচু স্বর।
ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলি ?
সবাই জানতে পারবেনা।
দেবার কাছ থেকে একটা সিগারেট নিয়ে, ছোটমার ঘরের কাছে একটু আসতে পারবি।
যাচ্ছি দাঁড়া।
ফোনটা পকেটে রাখলাম। আগামী শুক্রবার পূর্ণিমা। চাঁদটাকে থালার মতো লাগছে। কিন্তু তার আলো ততটা পরিষ্কার নয়। ফ্যাকাশে। আমগাছে নতুন বোলের গন্ধে চারদিক ম ম করছে। মাঝে মাঝে পাখির ডানার ঝটপটি শুনতে পাচ্ছি।
কিরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছিস।
সিগারটটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
কার থেকে নিলি।
ইসলামভাই-এর কাছ থেকে।
বললিনা।
কি।
এখানে দাঁড়িয়ে কেনো।
অনিমেষদা ঘর থেকে বার করে দিয়েছে। ওদের নিজেদের মধ্যে কোর কমিটির মিটিং চলছে। ডাকবে বলেছে।
একটা চুমু খাবো তোকে।
কেনো।
তোকে দারুণ মিষ্টি লাগছে।
পেছন দিকে তাকা। ভজুরাম ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
মিত্রা পেছন ফিরে একবার তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
অন্ধকার দেখতে পাবে না।
শকুনের চোখ, জানিস না। নিচে সব কি করছে।
তোর গল্প হচ্ছে। তোকে অনিমেষদা কি জিজ্ঞাসা করলো।
এখনো আমার ইন্টারভিউ শুরু হয়নি, হবে। এখন ফাইল দেখা শুরু হয়েছে।
তোর সব অরিজিন্যাল আমার কাছে ওখানে সব জেরক্স আছে।
ওই ফাইলেতো সব অরিজিন্যাল ছিলো।
সন্দীপ তোকে জানায়নি। অরিজিন্যাল গুলো অন্য ফাইলে রেখে জেরক্স গুলো রেখে দিয়েছে। তুই জানতে পারবি। আজ সকালে ভয়ের মারে অরিজিন্যাল ফাইলটা আমাকে দিয়ে গেছে।
কি শয়তান দেখ।
সব তোর মতো হয়ে যাচ্ছে। আমাকে সকালবেলা জিজ্ঞাসা করলো মামনি অরিজিন্যাল কোথায় ? আমি বললাম জানি না। বুবুন জানে। ব্যাশ চুপ।
কোথায় রেখেছিস।
আলমাড়িতে।
অর্করা কি বলেছে রে।
খালি গল্প বলেছে। তোর মোবাইলের ম্যাসেজের কথা কিছুই বলেনি।
তুই।
আমি চুপচাপ।
সন্দীপ।
গোবেচারা মুখ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর বললো আমি এর বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানিনা। অনি রাত্রিবেলা রিপোর্ট লিখে দিলো। আমি কম্পোজকরে ছেপে দিলাম। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks