দেখি নাই ফিরে - (Part-64)

তুই সত্যি বলছিস।
তোদের মাথা খারপ হয়েছে।
নাগো অনিদা এতোক্ষণ তোমার কোনো সেন্স ছিলনা। টিনা বললো।
কি পাগলের মতো বলছো।
দাঁড়াও আমি বাথরুম থেকে আসি। মিত্রা আমার পাজামা পাঞ্জাবী নিয়ে আয়।
মিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি ছোটমার বাথরুমে ঢুকলাম। ভালো করে হাত মুখ ধুলাম। ছোটমার পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলাম।
কিরে। কতো দেরি।
দাঁড়া খুলছি।
দরজা খুলে ওর হাত থেকে পাজামা পাঞ্জাবী নিলাম। টিনারা ছোটমার খাটে বসে আছে। মিত্রাকে ফিস ফিস করে বললাম ভাতরে আসবি। ও ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।
আমি চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলাম। একেবারে ফিট লাগছে। ফোনটা হাতে নিয়ে অর্ককে একটা ফোন করলাম।
কোথায় আছিস ?
কেনো দাদা। তুমি ঠিক.....।
ত ত করছিস কেনো।
না মানে।
আমার কাজ কতোদূর।
হয়ে গেছে।
তার মানে।
চ্যাপ্টার ক্লোজ।
তুই কোথায় ?
নিচের ঘরে।
নিচের ঘরে!
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আর ওদের দিকে তাকালাম না। নিজের ঘরেও গেলাম না। সোজা তড়তর করে সিঁড়িদিয়ে নিচে নেমে এলাম। সিঁড়ির মুখ থেকেই দেখলাম, দাদা মল্লিকদা ইসলামভাই ডাক্তারদাদা অনিমেষদা বিধানদা দাঁড়িয়ে। মিত্রা আমার পেছন পেছন, বুবুন বুবুন বলে ছুটতে ছুটতে নিচে নেমে এলো। একটা হুলু স্থূলুস কান্ড বেঁধে গেলো সারা বাড়িতে।
আমি সবাইকে পাশ কাটিয়ে বসার ঘরে ঢুকলাম। দ্বীপায়ন অর্ক সায়ন্তন সন্দীপ খাওয়ার টেবিলের চেয়ারে বসেছিলো। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
কিরে তোরা এখানে!
আমি ডেকে পাঠিয়েছি। অনিমেষদা বললো।
আমার ল্যাপটপ এখানে কেনো।
আমি নিয়ে আসতে বলেছি। অনিমেষদা ফের রিপিড করলো।
কেনো, আমি কি তোমাকে বলতাম না। মাথা নীচু করে বললাম।
কেনো আমি বিধানবাবু এখানে এসেছি, তুই কিছু বুঝতে পারছিস না।
বুঝতে পারছি।
তাহলে।
আমিতো তোমার কাছে যেতাম।
আমি এসেছি। খুব অন্যায় করেছি।
এভাবে তোমায় এবাড়িতে আনতে চাইনি। আমার একটা ছোট্টভুলে এই ঘটনা ঘটলো। আর কোনোদিন এই ভুল করবোনা।
তুই ওই ভুলটা না করলে আমি আর বিধানবাবু যে অনেক কিছু জানতে পারতাম না। সেখানে হয়তো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে যেতো।
তারমানে তুমি সব জেনে ফেলেছো।
সব নয়, বলতে পারিস কিছুটা।
ইসলামভাই।
বল।
আবিদ ফিরে এসেছে।
হ্যাঁ।
কোথায়।
বাগানে।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা। আমি তোর হয়ে সব ব্যবস্থা করছি।
না তুমি করবে না। তোমার মতো পবিত্র লোকের কাজ এটা নয়।
অনিমেষদা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। আমার দুই কাঁধে হাত রাখলো।
আমার দিকে তাকা। আমাকে দাদা বলিস।
মাথা দোলালাম।
পিতার মতো শ্রদ্ধা করিস।
মাথা নীচু করে রইলাম।
কাল যেমন সমস্ত শোনার পর তোর মাথার ঠিক ছিলোনা, আজ সকালে তোর ঘরে ঢুকে আমারও মাথা কাজ করেনি। তোর বোন কাল রাত থেকে এক গ্লাস জলও খায়নি। তার দাদার এই অবস্থার জন্য সে আমাকে দায়ী করেছে। তোর বৌদির এরকম মুখের ভাষা আমি আজও পর্যন্ত জীবনে শুনিনি। এবার বল আমার কি করার থাকতে পারে। আমার জায়গায় তুই থাকলে কি করতিস।

 

তুমি যা করেছো, আমিও তাই করতাম।
তাহলে আমরা পাঁচজন আজ তোর সঙ্গে একটু বসবো। ওরা সকলে সিপাই, তুই সেনাপতি। এরা তোর কাজের কোনো হদিস দিতে পারছে না।
ডাক্তারদাদা ?
ডাক্তার আজ জীবনে প্রথম ভয় পেয়েছে।
কেনো, আমি করলাম!
কি করিস নি ?
আমি অনিমেষদার দিকে তাকালাম।
তুমি সব দেখেছো।
ওইযে তোকে বললাম, যতোটুকু হাতের কাছে ছিলো।
বিধানদাও দেখেছেন ?
হ্যাঁরে অনি দেখেছি। না দেখলে তোর ওপর একটা ভুল ধারণা হতো।
ইস। মিত্রা তুই আমার যোগ্য তৈরি হতে পারবিনা।
না হলে মঙ্গল। অন্ততঃ সংসারটা ভালো করে করতে পারবে।
হেসেফেললাম।
তুই তো তোর এই হাসি দিয়ে সকলকে ঘায়েল করলি।
তোমরা চা খাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও। সুরোকে একটু আমার ঘরে পাঠাও। মিত্রা তুইও আয়।
তুই মাথা থেকে সব ব্যাপারগুলো মুছে ফেল। অনিমেষদা চেঁচিয়ে বললো।
আমি বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। দাদার ঘরে কারা যেনো বসে আছে। বাগানে ভর্তি লোক। নিচের বারান্দার এক কোনে রতন নেপলাকে দেখলাম। মুখটা শুকনো। আবিদকে দেখতে পেলাম না। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওপরে চলে এলাম। আমার ঘরে কেউ নেই। পরিষ্কার হয়ে গেছে। খাটে একটা নতুন চাদর পাতা হয়েছে। ভজুরামকে আশে পাশে দেখতে পেলাম না।
আমি সোজা জানলার পাশে এসে দাঁড়ালাম। আমগাছটায় নতুন বোল এসেছে। একটা মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ম ম করছে। আম গাছের ঠিক নীচে পেয়ারা গাছটা। না এখন সেই টিয়া দুটো নেই। অনেক পেয়ারা হয়েছে। কয়েকটা একেবারে হলুদ হয়ে গেছে। আম গাছের একটা ডালে চোখ পরে গেলো। একটা কাকা তার বাসায় চুপ্টি করে বসে আছে। বুঝতে পারলাম। এটা মা কাক। সবে মাত্র ডিম দিয়েছে। তা দিচ্ছে। একবার আমার দিকে জুল জুল করে তাকালো। বাবা কাকটা মুখে করে খাবার নিয়ে এসে মা কাকটাকে খাইয়ে দিলো।
মিত্রা এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওর হাতটা চেপে ধরে বললাম দেখ মিত্রা, ওই ডালটার দিকে তাকিয়ে দেখ। মা কাকটা কি শান্তিতে চোখ বুজিয়ে ডিমে তা দিচ্ছে। ওদের পৃথিবীতে কোনো হিংসা নেই। কোনো হানা-হানি নেই। ওরা যে অশিক্ষিত। ওদের চাহিদা ভীষণ সীমিত।
আবার কাঁদে। তুই কেঁদে পৃথিবী জয় করতে পারবি না।
আমি সুরো, অনিদা।
এমা, এই দেখ আবার ভুল করে ফেললাম।
সুরোর হাতের অর্গল খুলে, ওর মুখো মুখি দাঁড়ালাম।
তুমি মিত্রাদিকে এইসব দেখাও ?
আমি ওর ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়ালাম। চোখের পাতায় শিশিরের ছোঁয়া।
মিত্রাদি নয় বৌদি।
সুরো কান্না ভেঁজা চোখে হেসেফেললো। মিত্রা দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে। আমি সুরোকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।
কিরে আমার বিয়েতে সাজবিতো ?
তোমার বিয়েতো হয়ে গেছে।
না এখনো হয়নি। তোর জন্য শুধু বিয়ে করবো। আয় মিত্রা কাছে আয়।
মিত্রা এগিয়ে এলো।
দেখতো তোর বৌদিকে পছন্দ কিনা।
দারুণ দেখতে।
মিত্রা হাসছে।
দুর চোখদুটো দেখেছিস কেমন লক্ষ্মীটেরা, ঠোঁটটা দেখ ছেলেদের মতো মোটা মোটা।
একবারে বাজে কথা বলবেনা। আমার বৌদি।
সুরো মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো।
সেই কলেজ লাইফে পটকে দিয়েছিলাম, বুঝলি।
সুরো খিল খিল করে হেসে উঠলো।
তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি নাগো অনিদা।
ঠিক বলেছিস।
তুমি মাকে এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প বলতে।

তোর মনে আছে।
তুমি বৌদিকে সেই ডানকুনির গল্পটা বলেছো।
উরি তৎতড়ি, তোর সব মনে আছে!
সব।
কোনটারে বুবুন।
সেই শীতলার থানের ব্যাপারটা।
ফেরার সময় জলে ফেলে দিলি সব।
হ্যাঁ।
তখন তুই সুরোকে পরাতিস।
কিরে বল তোর বৌদিকে।
তুমি বৌদিকে তুই তুই করছো কেনো। তুমি বলতে পারছো না।
জব্বর প্রশ্ন। আরে এসো এসো ভেতরে এসো।
টিনা মিলি দেবা নির্মাল্য অদিতি নীপা গেটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
দেবা আমাকে একটু বাঁচাতে পারবি।
তোকে! না।
তুই শুনলিই না আমার কথাটা।
বল শুনি।
সুরোকে চিনিস।
আজ দেখলাম। শুনলাম ও অনিমেষদার মেয়ে।
সুরো জানিষতো তোর বৌদি আমি আর দেবাশীষদা এক ইয়ারের ছাত্র। আর এরা আমাদের জুনিয়ার। সাবই কিন্তু আমাদের কলেজের ছাত্র ছাত্রী।
তাই!
সুরো ঝপাঝপ সবাইকে প্রণাম করলো। ওরা কেউ নিতে চাইলো কেউ চাইলোনা।
আর ওটা হচ্ছে নীপা। এই বছর পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে।
ওর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। কি ভালো ছাত্রী। তুমি ফেল করেছে বলছো কেনো।
সবাই হেসে ফেললো।
জানিস দেবা সুরো এবার এমএ সেকেন্ড ইয়ার। আমাদের কলেজ থেকেই পরছে। কিরে আর একটা ব্যাপার বলবো নাকি।
না একবারে বলবে না।
আমাদের মতো কেস। মিলি বললো।
সামান্য।
সুরো ছুটে এসে আমার মুখ চেপে ধরলো।
একবারে বলবেনা। খুব খারাপ হয়ে যাবে।
ঠিক আছে বলবোনা।
বুঝলি দেবা সুরো একটা খুব কঠিন প্রশ্ন করেছে। তুই উত্তরটা বলে দে।
মিত্রা ফিক করে হেসেফেললো।
সুরো আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো। আমি তোমাকে করেছি, তুমি বলবে, দেবাদা বলবে কেনো।
ওতো আমাদের সঙ্গেই একসঙ্গে পড়াশুনো করেছে, ওর একটু হেল্প নিই।
না।
বলনা সুরো কি বলেছে একটু শুনি।
মিত্রাকে কেনো আমি তুই বলি, তুমি বলিনা।
জব্বর প্রশ্ন। এর উত্তর আমি দিতে পারবোনা। তোমরা দিতে পারবে।
মিলিদের দিকে তাকালো দেবা।
ঠিক বলেছে সুরোঞ্জনা। টিনা বললো।
দেখেছো দেখেছো আমার কথাটা সবাই মেনে নিলো।
ঠিক আছে আগে বিয়ে করতে দে। আমিতো এখনো বিয়েই করিনি।
আবার সকলে হো হো করে হেসে উঠলো।
ছোটমা চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। টিনা ছুটে চলে গেলো। ছোটমার হাত থেকে ট্রেটা নিলো। মিলি নীপা এগিয়ে গেলো।
ছোটমা মিটি মিটি হাসছে।
ছোটমা ছোটমা বলে সুরো গিয়ে ছোটমাকে জড়িয়ে ধরলো।
ছোটমা তুমি বলো, কেনো অনিদা বৌদিকে তুই বলবে।
ছোটমা একবার আমার দিকে তাকায়, একবার মিত্রার দিকে তাকায়, তারপর হো হো করে হেসে ফেললো।
তুমি হাসলে যে।
তোর অনিদাটা পাগল। দেখলিনা সকাল থেকে সবাইকে কেমন নাচালো।
তুমিইও অনিদাকে পাগল বলো।
কেনো আর কেউ বলে নাকি ?
বাবা বলে মা বলে। কই আমিতো বলিনা।
তুইও বলবি, দুদিন পর। যেদিন ওর পাগলামো চলে যাবে, সেদিন থেকে তুমি বলবে তোর বৌদিকে।
সুরোর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে, ও ছোটমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
কি বিশ্বাস হচ্ছেনা।
না।
ঠিক আছে তোকে পরে বলবো।
সবাই হাসছে।
ছোটমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, হিমাংশু এসেছে। সঙ্গে আরো পাঁচজন। সবাই নাকি ডাক্তার। তুই মেডিকেলে কলেজে আড্ডা মারতে যেতিস। তখনকার সব বন্ধু। আর কোথায় কোথায় যেতিস একটু বলিস। এবার নামের লিস্টি বানাতে হবে।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
ওরা কোথায় ?
সামন্তদার সঙ্গে কথা বলছে। তোর গুণ কীর্তন করছে। তার মধ্যে একটাকে ওঝা সেজে ঝেঁটা মেড়ে ভূত তাড়িয়েছিলি। সে নাকি এখন নামকরা চাইল্ড স্পেশালিস্ট।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কিরে অনি। ছোটমা কি বলে। দেবা বললো।
দূর ভুলভাল বোকছে।
ছোটমা এগিয়ে এলো। দেবো কান মূলে।
এমা তুমি এখনো অনিদার কান ধরো। সুরো বলে উঠলো।
কান না ধরলে তোর বৌদিকে তুই বলবে, তুমি বলবেনা।
তাহলে ঠিক আছে।
সবাই হাসলো।
এই দেখ কারা এসেছে। হিমাংশু গেটের মুখে।
ওরা সকলে ঘরে ঢুকলো। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কিরে ওঝা। আমার ভূত তাড়ালি, তোকে কি করে ভূতে ধরলো। নিশ্চই সরষেতে ভেজাল ছিলো। নীরব বলে উঠলো।
সবাই হো হো করে হসে উঠলো। ঘরটা গম গম করে উঠলো।
ছোটমা মুখে কাপর চাপা দিয়েছে।

বিয়ে করলি, খবর পর্যন্ত দিলিনা। কনিষ্ক বলে উঠলো।
তোকে কে বললো আমি বিয়ে করেছি।
নীরু তুই ড্রেসটা চেঞ্জকর। ছোটমা একটা মুড়ো ঝেঁটা জোগাড় করে দিনতো। নীরু ওর ভূতটা ছাড়াক। সাত্যকি বলে উঠলো।
সাত্যকি তুই অনিকে ধর, আমি (অনিকেত) বটা (বটুকেশর) ওর ঠ্যাংটা ধরছি কনিষ্ক পাজামা পাঞ্জাবীটা খুলুক। নীরু কাজ শুরু করুক।
আবার সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
তোরাতো আমার প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন মেরেদিবি।
গ্যামাকসিন উঁচু দরের মাল আমরা ডিডিটি নিয়ে এসেছি। তোকে মুখ ধোয়াবো।
সবাই হাসছে।
তোর বৌ কোথায়। কনিষ্ক বললো।
এই ঘরে আছে, খুঁজে নে।
যা হালা। এতগুলো মাইয়ার মধ্যে খুজুম কমনে। নীরব বলে উঠলো।
তুই নাকি চাইল্ড স্পেশালিস্ট।
লোকে বলে। তবে সার্টিফিকেটটা জাল কিনা তোর যখন হবে তখন জানতে পারবো।
আমি ক্যারি করবোনাকি!
দেখলি দেখলি বটা। স্বভাবটা এখনো যায়নি।
তুই একটা মাঝে বৌ বসিয়ে দিতে পারতিস। অনিকেত বললো।
ছোটমা ঠিক জমছেনা। আপনি এক কাজ করুণ একটু চায়ের ব্যবস্থা করুণতো। কনিষ্ক বলে উঠলো।
ছোটমা মুখে কাপর চাপা দিয়ে চলে গেলো।
ছোটমা সবেমাত্র গেটের বাইরে পা দিয়েছে। কনিষ্ক জাপ্টে ধরলো। কাজ শুরু কর। ওরা ছুটে এলো।
করছিস কি। বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে গুলো আছে।
সব চৌবাচ্চা।
ঘরে হাসি আর থামছে না।
বল বৌ কোনটা।
হ্যাঁরে বটা একটা কপাল ফাটা আর সব ফর্সা। নীরব সুর করে বলে উঠলো।
তোকে আর বড়ে গোলাম আলি হতে হবে না। বটা খিঁচিয়ে উঠলো।
সবাই হাসছে টিনা মিলি নীপা সুরো পেটে হাত দিয়েছে।
বলে দেনা অনি। নীরু বললো।
ওই জন্য তোকে ঝেঁটা পেটা করেছিলো। অনি কি তোর বৌ। বটা বললো।
হাসি আর থামছে না। মিত্রাদি তুমি নিজে পরিচয় করে নাও, অনিদার আর দরকার পরবেনা। আমরা আর পারছিনা। মিলি বলে উঠলো।
কিরে বটা, সেই মিত্রা! সাত্যকি বড় বড় চোখ করে বললো।
কোনটা বলতো।
ওই যে বীণা সিনেমা। ছোঁবো কি ছোঁবো না, পরেছি যাতনা.....।
আমরাতো মালটা দেখিনি কখনো।
দেখবি কি করে বনেদী না। সোফার গাড়ির দরজা খুললো। উনি নামলেন। সোফার গাড়ির দরজা বন্ধ করলো। উনি চলে গেলেন। কণিষ্ক ক্যারিকেচার করে দেখালো।
সবাই হাসছে।
তুই ঠিক দেখাতে পারলি না। মৈনাক ব্যাপারটা ফ্যানটাসটিক দেখাতো। বটা বললো।
মৈনাক আর একটা জিনিষ ভালো দেখাতে পারতো। হিমাংশু বলে উঠলো।
অনির ডায়লগ। বটা বললো।
আমি মিত্রার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
কণিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো, তুই আর একটু দেরি করলে কানকি মারতাম।
আমি কনিষ্ককে একটা লাথি মারলাম। হারামী।

বটা চেঁচিয়ে উঠলো, সাত্যকি অনি শুরু করে দিয়েছে। আমরা ফিনিশ করবো।
গুরু মালটা ভালো ফাঁসিয়েছো। অনিকেত বললো।
মিত্রা বেশ এনজয় করছে ওদের কথাবার্তা। ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে তার অভিব্যক্তি। আমি একে একে সকলের সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। কখন যে বাসু অনাদি চিকনা এসে ঘরে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। ওদের সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দিলাম।
আচ্ছা নীরু আমরা অনির বউকে কি বলবো। বৌদি না ম্যাডাম না নাম ধরে ডাকবো। কনিষ্ক বললো।
আমরা বৌদি বলবো।
সেগো। বৌদি বাজি করতে ভালো লাগবে না। বটা ঝেড়ে একটা লাথি মারলো নীরবের পাছায়।
জানেন ম্যাডাম অনির গল্প নিয়ে এখনো আমরা সারারাত কাটিয়ে দিই। বলতে পারেন অনি স্পেশাল নাইট। অনিকেত বললো।
একটা গল্প বলুন শুনি। মিত্রা বললো।
বলুন বললে হবে না। বলো বলতে হবে। তবেনা একটু একটু দুর্বলতা আসবে। কনিষ্ক বললো।
বটা কনিষ্ককে একটা ঝেড়ে লাথি মারতো কি সব অসভ্য কথা বলছে। নীরু বলে উঠলো।
তোকে। অনিকেত চেঁচিয়ে উঠলো।
ঘরের কেউ গম্ভীর নেই।
বলতে পারি ম্যাডাম। আপনারা সবাই খাটে বসুন। আমি দেখাচ্ছি। বটা বললো।
সবাই হুরুম দুড়ুম করে খাটে উঠে বসলো। কেউ পাশে সড়ে দাঁড়ালো। বটা সোজা চলে গেলো দরজার কাছে।
ধরে নিন আমি অনি। চুলটা উস্ক খুস্কো। আপনারা যেমন সবাই খাটে বসে আছেন। তখন আমরাও হোস্টেলের খাটে বসে গল্প করছি। অনি ঢুকলো। চোখমুখটা খুব শুকনো শুকনো।
কিরে। কি হয়েছে।
বলছি বলছি। জলের বোতলটা আগে দে।
জলের বোতল এগিয়ে দিলাম। ঢক ঢক করে জল খেলো।
কিরে বলবিতো কি হয়েছে।
বহুত জোর কেলানির হাত থেকে বেঁচে গেছি বুঝলি। এখনো পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছি।
কেনোরে!
নীরু চা খাওয়া।
নীরু চা নিয়ে এলো। অনি চিরটাকাল নীরুকে অত্যাচার করেছে। নীরু যদি ওর বৌ হতো তাহলে খরপোষ আদায় করে ছারতো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
চা খেয়ে দিয়ে বলে। শিয়ালদায় কোন মেয়ে ট্রেনে বসেছিলো বাজি করে একটা মোগলাই পরোটার জন্য তাকে চুমু খেয়েছে। সেদিন আমরা সবাই অনির ঠোঁটে দশবার করে চুমু খেয়ে, সেই মেয়াটাকে চুমু খাওয়ার স্বাদ মিটিয়েছিলাম।
সবাই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে।
সেদিন কিভাবে অনিকে চুমু খেয়েছিলাম তোমাকে দেখাবো।
মিত্রা হাসতে হাসতে টিনার ওপর গড়িয়ে পরেছে। মাথা দুলিয়ে বলছে না না।
মিলি হাসতে হাসতে চোখে জল বার করে দিয়েছে।
সেই মেয়েটাকে দেখবে। মিত্রা বললো।
ধারে কাছে কোথাও আছে! ম্যাডাম প্লিজ একটু দেখাও। দু’চোখ ভরে তাকে একটু দেখি। শয়নে স্বপনে তাকে কতবার দেখেছি বলতে পারবো না। আরো কি কি হয়েছে বলা যাবে না। কিন্তু এই চর্ম চক্ষু দিয়ে তাকে এখনো দেখা হয়নি। সাত্যকি বলে উঠলো।
এই সেই মেয়ে। মিত্রা মিলিকে জড়িয়ে ধরলো।
কেনো তোমার সঙ্গে আমার পাঁচ বছর আগে দেখা হলো না। তাহলে তোমাকেই বিয়ে করতাম। নীরু সুর করে বলে উঠলো।
বটা এমন ভাবে নীরুর ঘারটা চেপে ধরলো নীরু খেঁকিয়ে উঠে বললো। অসভ্য কোথাকার।
আবার হাসি।
ছোটমা চায়ের ট্রেনিয়ে ঘরে ঢুকলো। নীপা সুরো এগিয়ে গেলো।
কিরে তোদের হাসি এখনো থামলোনা। ওপরে হাসি নীচে হাসি। কতো হাসবো বলতো।
সব অনি ? বটা বললো।
আর কে হবে বলোতো।
ছোটমা আমার দিকে তাকালো।
চা খেয়ে সব রেডি হয়ে নাও। খাবার রেডি।
আমরা চলে যাবো ছোটমা। হাসপাতালে রাউন্ড আছে।
খেয়ে যাবে।
দেরি হয়ে যাবে।
বড়মাকে বলে যেও।
এইতো, একেবারে রাজার মুখে ঠেলে দিলে। ঠিক আছে মনে থাকবে।
ছোটমা বেরিয়ে গেলো।
চা খাওয়া হলো, গল্প হলো। হাসা হাসি হলো।
হিমাংশুর মুখ থেকে তোর সব ব্যাপার শুনলাম। তবে পুরো না একটু একটু। বলতে পারিস পটেটো চিপস।
হাসলাম।
তোরা খবর পেলি কি করে আমাকে ভূতে ধরেছে।
সকালে নিউজ দেখে মাথা খারাপ। তারপর দেখলাম তুই নিউজটা করেছিস। ভাবলাম কিছু হয়েছে কিনা। তোর নম্বর আমাদের কাছে নেই। নীরুকে ফোন করতেই বললো। হিমাংশুকে ফোন কর ও ডিটেলস দিয়ে দেবে। হিমাংশুকে ফোন করতেই সব ছোটো হয়ে গেলো। আউটডোর সেরেই বেরিয়ে এলাম। জুনিয়ার গুলোকে বলে এলাম, তোরা একটু সামলা। বিকেলে আসছি।
তোরাকি সবাই মেডিকেলে আছিস।
আবার কোথায় যাবো ?
অন্য জায়গায় পাঠালেই চাকরি ছেড়ে দেবো। প্র্যাক্টিশে মন দেবো।
এখন করছিস না।
নার্সিংহোম।
বিন্দাস।
স্যারের মুখ থেকে কিছুটা শুনলাম। এবার তোর এখানে ঘনো ঘনো আসতে হবে।
আমাকে পাবি না। মিত্রাকে পাবি। অসুবিধে হবে না।
তাহলেই হবে। নীরু বললো।
কেনো বৌ দেয় না। দেবোনা দেবোনা বলে। বটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
দেখলি কনিষ্ক বটাটা কিরকম অন্য মানে করলো।
সবাই হাসছে।
মিত্রাকে বললাম যা তোরা রেডি হয়ে নে। আমরা একটু বসে কথা বলি।
ওরা উঠতে চাইছিলো না। তবু উঠতে হলো। সবাই বেরিয়ে গেলো।
সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিস না একনো সতী আছিস।
খাই মাঝা মাঝে।
খাবি।
দে।
বটা তোরটা খালি কর।
বটা প্যাকেটটা বার করতে নিমেষে খালি হয়ে গেলো।
তোর কি হয়েছিলো বলতো। কনিষ্ক বললো।
জানিনা।
স্যারের মুখ থেকে শুনলাম।
কি শুনলি বল। তারপর বলতে পারবো।
আমরা যখন টেনে পরি তখন ওর একবার এরকম হয়েছিলো। আমাদের ওখানকার গুণীন কাকা দেখে বললো ওকে পীরবাবা ভর করেছে। চিকনা বলে উঠলো।
কিরে! এইসব কি শুনছি। তুই কি শেষে সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে মাদুলির ব্যবসা শুরু করবি। না পীর সাহেব হয়ে যাবি।
কি জানি।
তোর ওই বন্ধু কি যেনো নাম।

চিকনা।
হ্যাঁ হ্যাঁ। আপনি ঠিক বলেছেন।
আপনি না তুমি।
সরি। বটা হেসে ফেললো।
তুই নাকি সেনস্লেস ছিলিস ঘন্টা পাঁচেক। মাঝে মাঝে তোর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু পালস বিট ঠিক ছিলো। বডি টেম্পারেচার ঠিক ছিলো। প্রেসার ঠিক ছিলো। স্যারতো খুব ঘাবড়ে গেছিলো।
আমি বলতে পারছিনা কি হয়েছিলো। ভোররাতে শুয়েছি। মাথাটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছিলো। মিত্রাকে বললাম মাথাটা একটু টিপে দিবি। ও পাশে এসে বসে মাথায় হাত দিলো। তারপর আর কিছু জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখছি এই অবস্থা।
স্যার বললো তুই নাকি যোগাভ্যাস করিস।
তা করি। তোদের ডাক্তারি শাস্ত্রে কি বলে এই ব্যাপারটাকে।
পাতি ফিটের ব্যামো। কোনো ওষুধ নেই। যারা দেয় তারা ঢপ দেয়।
কি হয় এতে।
তুই যে কোনো সময় টেঁসে যেতে পারিস। আজও যেতে পারতিস। তাই সকলে ভয় পেয়েছিলো। এবং তোর সেন্স ফিরে আসতে কেউ ঠিক মতো বিশ্বাস করতে পারে নি।
তাহলে উপায়।
কয়েকদিন পড়াশুনো করি। রবিবার বলবো।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
চল দেরি করবোনা।
চিকনা ওদের একটু নিচে নিয়ে যা। আমি স্নান সেরে যাচ্ছি।
ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। বেশ সময় লাগলো। মিত্রা এসে দুবার বাথরুমের দরজা ঘট ঘট করে গেছে। আমি স্নান সেরে বেরোলাম। দেখলাম ঘরের দরজা বন্ধ করে মিত্রা খাটে বসে আছে। আমাদ দেখে উঠে দাঁড়ালো। চোখে মুখে হাসির ছটা।
আমি বেরোতেই এগিয়ে এলো।
কিরে ঘরের দরজা বন্ধ!
কাল থেকে অনেক জালিয়েছিস। এবার আমি একটু জালাই।
একবারে ঝামেলা করবিনা।
ঝামেলা। আমি খালি তোর প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন দিই।
দিস তো।
সকাল বেলা এক ঘর লোকের সামনে আমার প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন মেরেছিস। ওই সিচুয়েসনেও সকলে হেসেছে। আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে থেকেছে।
একবারে টাওয়েল ধরবিনা।
টাওয়েল ধরবিনা।
মিত্রা শুশুরি লাগছে। তোর শুশুরি লাগাচ্ছি।
আমি চেঁচাবো।
চেঁচানা চেঁচা। দেখি তোর কতো গলার জোর। নিচে এক ব্যাচ খেতে বসেছে। কেউ ওপরে আসবেনা।
কামরে দেবো।
কামড়া দেখি কতো তোর গায়ের জোড়। সকাল বেলা অনেক গায়ের জোড় দেখিয়েছিস। অনাদিরা পর্যন্ত হিমসিম খেয়ে গেছে।
সত্যি বলনা কি হয়েছিলো। তোর মতো।
আগে গালে দে।
দিলে বলবি।
যতটা দিবি ততটা বলবো।
তাহলে থাক রাতে শুনবো।
তোকে আর এক ঘন্টা পর থেকে পাবো না।
কেনো!
অনিমেষদারা এখানে মিটিং করবে। দাদা অফিসে গেছে। একটু বাদেই ফিরে আসবে। তোর হয়ে মল্লিকদা লিখছে। বাই নেমে।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

আমি ওর মুখটা তুলে ধরলাম। ওর আয়তো চোখ দুটি থিরি থিরি কাঁপছে।
তুই এতো সেজেছিস কেনো।
বড়মা বললো। লোকজন আসবে, একটু ভদ্র হয়ে থাক।
হাসলাম। ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। জড়িয়ে ধরলাম।
তুই দুর্বল হোস নি। তাহলে আমি হেরে যাবো।
তুইতো সকলকে কষ্ট দিস। নিজের কষ্টটা চেপে রেখে।
চুপটি করে কিছুক্ষণ দুজনে দাঁড়ালাম।
চল এখন থাক। নিচে যাই। নীরুরা খেতে বসেছে।
তোকে ওরা ভীষণ ভালবাসে। তুই যাসনা কেন ওদের কাছে ?
ভাইজ্যাক যাবার আগ একবার গেছিলাম।
তারপর ?
সময় পেলাম কোথায়।
মিত্রা আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
বেশ কিছুক্ষণ দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।
আবার পাগলামো করে।
এই পাজামা পাঞ্জাবীটা পর।
কেনো!
বড়মার হুকুম।
বাধ্য ছেলের মতো নতুন একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরে নিচে এলাম।
টেবিলে আমার ডাক্তারবন্ধুরা আর হিমাংশু। নিচে আর সবাই। আমি নীরুরু পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
বড্ড ভালো খাইতাছি বুঝলি অনি। ডাক্তারগো ভীষণ লোভী হয়।
আমি একটা মুরগীর ঠ্যাং নীরুর পাত থেকে তুলে নিলাম।
নীরু সটাং উঠে দাঁড়ালো।
কি হলোরে!
কখন থেকে বটার লগে সামলায়ে রাখছি তুই কিনা ঝপ.......।
অনেক টেনেছিস। এবার ওঠ।
একিরে সবে মধ্য গগনে তুই উঠ কইলেই উঠুম।
বটা ঝেরে একখানা দেতো। কিছুটা নিচে নেমে যাক। কনিষ্ক বললো।
ছোটমা হো হো কের হাসতে হাসতে বললো। কিরে মিত্রা এতো সেই নাচের মতো কথা বলছে।
সেটাকি ছোটমা। নিশ্চই অনি স্পেশাল।
আবার হাসি।
সোনামনা এরকম করতে নাই। খাওনের সময় ঝামেলা করতে নাই। লক্ষ্মীমনি রাগ করবা এখন।
তোর বাঙাল ভাষা বার করছি, দেবোনা টিপে রগ ফেটে যাবে। বটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
আমি বটার দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই ও মুখ নীচু করে খিক খিক করে হেসে উঠলো।
তুই পুরোটা খাসনি। হাফ খেয়ে আমাকে দে। অনেকক্ষণ সামলে রেখেছি। ঠ্যাংটা খালি দেখেছি, আর ফ্রাইড রাইস টানছি। বিশ্বাস কর।
আমি একটু খেয়ে নীরুর পাতে রাখতেই, বটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো।
বড়মা গ্যাটিস দেন।
সে আবার কি রে! বড়মা চোখ বড়ো বড়ো করলো।
সাবস্টিটিউট একখানা দাও। আমি নিয়ে নিলাম না। বটা বললো।
তারমানে! বড়মা অবাক হয়ে তাকিয়ে নীরুর দিকে।
সবিতো নিয়ে নিলো খেলাম কোই ?
বড়মা। দিলে কিন্তু সকলকে দিতে হবে। অনিকেত চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা হাসতে হাসতে বললো তাই দিচ্ছি।
আর কারুর কপালে জুটবে না। তুমি অনিকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। কনিষ্ক বললো।
তা হোক তোরা খেলেই আমাদের খাওয়া হবে।
দামিনী মাসি রান্নাঘর থেকে নিয়ে এসে সকলকে দিলো।
কনি অনি কিরকম মাঞ্জা দিয়েছে দেখেছিস। বটা বললো।
তোর হিংসে হচ্ছে। নীরু বললো।
বটা একবার তাকালো নীরুরু দিকে। অনিকে লেটেস্ট নিউজটা বলি।
কেনো। শান্তিতে খাচ্ছি, সহ্য হচ্ছে না।
কিরে বটা।
তোকে বলবো। তুইই একমাত্র পারবি সলভ করতে।
কনিষ্ক খিক খিক করে হেসে ফেললো।
আবার বোকার মতো হাসে। নীরু গম্ভীর হয়ে বললো।
নারে অনি কিছু না। বিয়ে করেছি তাই বলছে।
তুই বিয়ে করেছিস!
হ্যাঁ। বয়স হয়েছে বিয়ে করবো না।
কোনটারে বটা।
সেইটা। ঠমক ঠমক পায়েল বাজে......।

বটা এমন ভাবে শরীর দুলিয়ে সুরকরে বললো, সবাই হেসে ফেললো।
আমি নীরুর গালটা টিপে বলে উঠলাম সোনামনা সোনামনা।
একিরে তুই ওর গালে হাত দিলি। অনিকেত বললো।
কেনো কি হয়েছে।
ওর বউ কি বলেছে জিজ্ঞাসা কর।
সেটাও গুরুজনদের সামনে বলতে হবে।
নীরু খিঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা তুমি আমার পাশে দাঁড়াও নাহলে এরা আমাকে খেতে দেবে না।
ও অনি ওরকম করছিস কেনো বাবা।
কথাটা মনে রাখিস নীরু। এই সপ্তাহের মধ্যেই তোকে নাগা সন্ন্যাসী বানাবো। ছবিটা তুলে বটার হাত দিয়ে তোর বউয়ের হাতে পাঠিয়ে দেবো।
এইতো। তুই ওদের কথায় বার খেয়ে গেলি।
বউকে কবে নিয়ে আসছিস।
আজ বললে আজ, কাল বললে কাল।
রাউন্ডের কি হবে।
বটা প্রক্সি মারবে।
নেমন্তন্ন কিরসনি কেনো।
হিমাংশু সাক্ষী। জিজ্ঞাসা কর। তখন তোকে কুত্তার মতো খুঁজেছি। পাই নি।
ঠিক আছে আমি পর্শুদিন ঠেকায় যাচ্ছি। থাকবি।
খাওয়া শেষ হতে ওরা সবাই উঠলো। আমি মিত্রা ওদের এগিয়ে দিয়ে এলাম।
রবিবার কিন্তু পুরে গ্যাং আসবো মাথায় রাখিস।
হাসলাম।
ওরা চলে গেলো। বাগান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি মিত্রা ভেতরে এলাম।
তোকে দেখে আমার ভীষণ গর্ব হচ্ছে।
কেনো ?
সকাল থেকে কতো লোক এসেছে জানিস।
কি করে জানবো।
কে বলবে। কার মনের অবস্থা ভালো আছে বল।
এখনো সকলের মনের অবস্থা খারাপ!
আস্তে আস্তে সকলে ধাতস্থ হচ্ছে।
বহুত খিয়ে লেগেছে। চল আগে খেয়ে নিই। তারপর তোর সঙ্গে বসবো।
রাতের আগে সময় পাবিনা।
কেনো।
বিকেল থেকে টানা মিটিং।
তখনো তুই এই কথা বললি। কিসের মিটিং ? কার সঙ্গে মিটিং ? আমার মাথায় কিছু ঢুকছেনা।
ঠিক আছে আগে খেয়েনে তারপর বলছি।
তুই ভেতরে যা আমি একটু রতনদের সঙ্গে কথা বলে আসি।
বেচারাদের সকাল থেকে অবস্থা খারাপ।
কেনোরে।
ইসলামভাই দামিনী মাসির কাছে ঝাড় খাচ্ছে।
কেনো!
কি ভুল করেছে।
আমি চুপচাপ।
জানিস বুবুন।
কি ?
সকাল থেকে ইসলামভাই দাদা মল্লিকদা নিরঞ্জনদা তোর ঘরে ঢোকেনি।
কেনো!
তোর ওই মুখ ওরা কেউ দেখতে চায়নি।
নিরঞ্জনদা কখন এসেছে ?
অনাদিদের সঙ্গে।
ও।
মিত্রা এগিয়ে গেলো। আমি রতনদের কাছে এলাম। মাথা নীচু করে উঠে দাঁড়ালো।
কিরে কথা বলবিনা।
তবু মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
কি হয়েছে বলবিতো।
রতন হাতের চেটো দিয়ে চোখ মুছলো।
আমি রতনকে জড়িয়ে ধরলাম।
তোমার কিছু হলে আজ স্যুইসাইড করতাম।
কেনো আমার কি হয়েছিলো ?
তোমার শরীর খারাপ হয়েছিলো।
কই আমিতো ঠিক আছি।
ডাক্তারদাদাযে বললো তুমি নাও বাঁচতে পারো।
ভুল বলেছে। আমি কি তাহলে ভূত।
কতো লোক তোমাকে দেখেতে এসেছিলো। সবাই মন খারাপ করে চলে গেলো।
কাঁদিস না। রতন কাঁদলে আমার মন খারাপ করবে।
কাঁদতে কি চাই, তুমিতো কাঁদালে।
কই আমি কাঁদালাম।
তোমার শরীর খারাপ হলো কেনো।
ঠিক বলেছিস। আবিদ কোথায়।
বাগানের ওপাশে বসে আছে।
কেনো।
সবাই তোমার জন্য মন খারাপ করছে।
কোথায় চল দেখি।
রতন নেপলা আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাগানের পেছনে গেলো। দেখলাম আবিদ কালি ঝুলি মেখে আমগাছের তলায় বসে আছে।
কিরে আবিদ এখানে বসে।
আবিদ উঠে দাঁড়ালো।

আমি তোমার কাজ শেষ করতে পারিনি।
ঠিক আছে। তুই এইভাবে এখানে বসে কেনো।
কিছু ভালো লাগছে না।
ওঠ, যা স্নান সেরে নে। খিদে লেগেছে, খেতে বসবো।
তুমি খেয়ে নাও। ভালো লাগছে না।
পাগলামো করিসনা। যা বাগানের বাথরুমে স্নান করেনে।
আবিদ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
রতন বাথরুমে সাবান তেল আছে ?
আছে।
যা চলে যা। দেরি করিসনা। রতন ওর জামাকাপর গুলো বাথরুমে রেখে আয়।
আমি সোজা চলে এলাম। সুরো গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।
মা কোথায়রে দেখতে পাচ্ছি না।
কখন চলে গেছে।
কেনো।
কলেজে যাবে। ফেরার পথে আসবে।
আমাকে বলে গেলো না।
তখন তুমি ব্যাস্ত ছিলে।
খেয়েছিস।
এইতো সব একসঙ্গে বসবো। দেখোনা বড়মা আমাকে কিছু করতে দিচ্ছে না।
খুব অন্যায়। বৌদিকে বল।
বৌদি রান্না ঘরে কি করছে।
দেখ গিয়ে গিলছে।
খালি বাজে কথা।
আচ্ছা আমার কথাটা মিলিয়ে দেখ একবার।
বড়মা।
কিরে।
তোমরা সুরোকে কাজ করতে দিচ্ছনা কেনো। অন্ততঃ পক্ষে জলটা দিতে দাও।
সবাই হাসছে।
যা তোকে জল দিতে দেবে।
সুরো বড়মার কাছে চলেগেলো।
আমি দাদার ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম ডাক্তারদাদা ইসলামভাই নিরঞ্জনদা দাদার খাটে। দেবাশীষ নির্মাল্য শোফায় বসে গল্প করছে। আমি ডাক্তারদাদার শোফায় গিয়ে বসলাম।
বলুন স্যার, এখন ফিট।
আমি ডাক্তারদাদার চোখের দিকে তাকালাম।
তাকিয়ে কিছু লাভ নেই।
আমি হাসলাম।
শরীরটা অবশ্যই খারাপ হয়েছিলো। কালকে কয়েকটা এমারজেন্সি পেসেন্ট আছে। একটু দেখতে বেরোবো। তারপর এসে আটচল্লিশ ঘন্টা পড়াশুনো।
কেনো আমার কি রোগ হয়েছে যে তোমাকে নতুন করে পড়াশুনো করতে হবে।
এখন বলবোনা, আটচল্লিশ ঘন্টা পরে বলবো।
সে যাই হোক শুক্রবার যত কাজ থাকুক এখানে এসে হাজির হবে।
কেনোরে সেদিন আবার কি আছে।
আমার ব্যক্তিগত কাজ আছে।
নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।

তুমি কখন এলে।
আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ। কালকে একটা ফোন করতে পারিসনি।
কালকে তুমি কি জানতে এখানে আসতে হবে ?
এই আবার উল্টোপুরান শুরু করলি।
সকাল থেকে তোমায় দেখতে পেলাম না।
দেখার মতো অবস্থায় তুই ছিলি।
তা ঠিক। ভয়ংকর একটা রোগের স্বীকার হয়েছিলাম। ডাক্তারদাদা তুমি কি বুঝলে ? আমার কি ফিটের ব্যামো আছে।
অন্য কেউ হলে বলতাম হ্যাঁ। কিন্তু তোর তখনকার শারীরিক কন্ডিসন বলছে তোর ওই রোগ নেই।
তাহলে ভূতে ধরেছিলো।
ডাক্তারদাদা হো হো করে হেসে বললো, বেশ বলেছিস। ডাক্তাররা যেমন রোগ নির্নয় না করতে পারলেই বলে ভাইরাস।
কি খাওয়া দাওয়া হবে। সকাল থেকে তো অনেক খেল দাখালি। ছোটমা গম্ভীর হয়ে বললো।
দাদা মল্লিকদা এসেছে ?
বাইরেটা একটু উঁকি মার।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ঘর থেকে বেরোতেই দাদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো। মল্লিকদাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। লক্ষ্য করলাম বড়মা দামিনী মাসি রান্নাঘর থেকে আমাকে লক্ষ্য করছে।
আমাকে না দেখে চলে গেলে। আমি বেশ ভালো আছি।
দাদা মাথা নীচু করলো।
তুমি দেখো আমার কিছু হয়নি। তোমরা বৃথা ভয় পেয়েছো।
দাদা তবু মুখ তুললো না।
কিগো কথা বলবে না।
দাদা মুখ তুললো। উঠে দাঁড়ালো। আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালো।
তুই ভালো থাকলেই ভালো। তুই খারাপ থাকলে, আমরা ভালো থাকিনা।
নাও রেডি হয়ে নাও। এক সঙ্গে খেতে বসবো।
দাদা আমাকে বুকে টেনে নিলো।
আমি দাদাকে জড়িয়ে ধরলাম। দাদার বুকের তীব্র লাবডুব শব্দের অনুভূতি পাচ্ছি। বুঝতে পারছি। চোখ দিয়ে জল না বেরোলেও বুকটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। দাদা আমাকে ছারলো।
তুমি ভেটকি মাছের মতো বসে আছো কেনো। লেখাটা প্রেসে পাঠিয়েছো। কাল ডেড লাইন।
মল্লিকদা হাসতে গিয়েও হাসতে পারলোনা।
বড়মা দামিনী মাসি ছোটমা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের সবাই নীরব দর্শক।
ওঠো ওঠো।
আমি হাত ধরে টেনে তুললাম।
ওরা একবার বিকেলে আসবে বলেছে তোর সঙ্গে দেখা করতে। দাদা বললো।
কারা ?
সার্কুলেশন আর প্রেসের ছেলেগুলো।
কেনো ?
কালকে এক লাখের জায়গায় দু’লাখ কাগজ ছেপেছে। তাতেও সামাল দিতে পারেনি।
তুমি কি বলেছো।
তোর সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে পারবোনা।
ফোন করলে, আসতে বলো।
অনিমেষ পাঁচটায় আসবে বলেছে।
ঠিক আছে। চলো খেয়ে নিই।
দাদারা বাথরুমে গেলো। আমরা সবাই এক সঙ্গে খেতে বসলাম। আজ আমি বড়মা ছোটমার মাঝখানে। বড়মার পাশে মিত্রা তারপর সবাই লাইন দিয়ে বসেছে। এদিকে ছোটমার পাশে দামিনী মাসি কবিতা। আমাদের একেবারে অপরজিটে ভজু রতন আবিদ নেপলা।
দু’টো নতুন মেয়েকে দেখলাম চিন্তে পারলাম না। প্রথমে বড়মা দামিনী মাসি ছোটমা সবাইকে দিয়ে দিয়েছে। এবার যদি লাগে ওরা দেবে।
আমরা খাওয়া শুরু করলাম। মিত্রা আমার থালার দিকে একবার তাকিয়ে নিলো।
আমি মিচকে পোড়ার মতো দুষ্টুমি হাসি হাসলাম।
বেশি খাসনা, শরীর খারাপ করবে।
আমি চুপ করে থাকলাম।
খাওয়া চলছে।
দেবাশীষ বলে উঠলো।
অনি তোকে একটা রিকোয়েস্ট করবো।
বল।
বড়মা ছোটমা তবু একটু শুনেছে। আমরা তখন ওপরে ছিলাম।
ছোটমা হো হো করে হেসে ফেললো।
সবাই গম্ভীর, ছোটমা বড়মা দামিনী মাসি হাসছে।
তোমরা হাসছো যে।
দাদা খেতে খেত মুখ তুলে বললো।
একটা দুর্দান্ত গল্প আছে বুঝেছো এডিটর। অনিবাবুর জীবনটা গল্পে গল্পে গল্পময়।
বাবা তুমি যে সাহিত্যিক হয়ে যাচ্ছো হে ডাক্তার।
তোমরা করে ফেলছো। এই বয়সেও দেখো কাল সারারাত জাগলাম। এখনো জেগে আছি। খালি গল্পের দৌলতে।
কিরে দেবা। দাদা বললো।
অনি বলনা তোর ওঝা হওয়ার ঘটনাটা।
ওঝা! অনি!
তাহলে কি বলছি দাদা। আপনি অনিকে জিজ্ঞাসা করুণ।
শোনো এডিটর বয়সকালে তুমিও এসব করেছো। তুমি কম। ও চূড়ান্ত।
কিরে অনি তুই ওঝা হলি কবে ?
ওর সঙ্গে যে মেডিকেলের ডাক্তারদের বন্ধুত্ব আছে তুমি জানতে। বড়মা বললে।
না।
কোনোদিন আগে শুনেছো।
না।
আজ ওরা সব এসেছিলো অনিকে দেখতে। ওরা সব সামন্তর ছাত্র। সামন্তকে দেখে ওরাতো অবাক।
কিগো ডাক্তার গুল মারছো নাতো।
দাদার কথায় সবাই হাসে।
শুনি তোর ওঝার কীর্তি। বল।
কিরে বুবুন দাদা বলেছে, বল। মিত্রা বললো।
তোর পাতের ঠ্যাংটা দে।
এই নে। এইবার বল।
ওরে বাবা একি ভালো মেয়েরে! একবার চাইতেই দিয়ে দিলো। ছোটমা বললো।
মিত্রা মুচকি হাসি হাসলো।
তাহলে। ওঝার বিদ্যেটা শিখতে হবে না।
বলনা।
আমি খেয়ে যাচ্ছি। কিরে বলবিতো। বড়মা খোঁচা মারলো।
তুমিতো শুনেছো।
সেতো বটা নীরুকে কি বলতে গিয়ে বলে ফেললো। চল নীরু অনি তোর ভূত ছাড়িয়েছিলো, তুই এবার অনির ভূতটা ছাড়া।
আমি হাসলাম।
নীরুর মতো সব কলেজে একটা করে পাবে। আমাদের কলেজে যেমন দেবা ছিলো।
ফালতু কথা বলবিনা। দেবা চেঁচিয়ে উঠলো।
তাহলে তোর পেছনে বুদ্ধি আছে বুঝিয়ে ছিলাম কি করে।
নীপা সুরো হো হে করে হেসে ফেললো।
এখনো কলেজ ক্যান্টিনের পদুদা তোমার কথা বলে। সুরো বলে উঠলো। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks