দেখি নাই ফিরে - (Part-63)

কিহলো তুই দাঁড়িয়ে রইলি!
মিত্রার চোখ হাসছে।
কেনো তুই তাড়িয়ে দিবি।
আমার কাছে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে।
নিচে যা, খাবার ব্যবস্থা কর।
তবু মিত্রা আমার চোখে চোখ রেখে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে। চোখের হাসি এবার সারা মুখমন্ডলে ছড়িয়ে পরলো।
যাবোনা কি করবি ?
এখন একেবারে বিরক্ত করবিনা।
আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কেনো আমাকে তুই এনকাউন্টারে মারবি।
পাগলের মতো কথা বলবিনা।
কেনো তুই এরকম করিস।
কি করলাম।
তোর জন্য সেই সন্ধ্যে থেকে কেঁদে মরছি সকলে।
কে কাঁদতে বলেছিলো।
আমাকে একটা ফোন করতে পারতিস।
তুই কথা রাখিস নি।
কি করবো। সবাই যদি আমাকে প্রেসার করে।
আমাকে টলাতে পারলো কেউ।
তুই আমি সমান। তোর কিছু হলে আমি কি করবো।
কারুর জন্য কোনো কিছু আটকে থাকে না।
মিত্রা আমার মুখটা চেপে ধরলো।
প্লিজ তুই থাম। কেনো তুই দাদার ওপর ওরকম মুখ ঝামটালি।
বেশ করেছি। আমার কাজে কেউ ইন্টারফেয়ার করুক আমি তা চাইনা।
দাদাকি তোর খারাপের জন্য বলেছে।
যার যা কাজ তাকে সেই কাজ করতে দে। দাদা আজকের কাজটা করতে পারতো ?
তোর মোবাইল না দেখলে সেটা কেউ জানতে পারতোনা।
কেনো দেখতে গেছিস।
কেনো দেখাবি না। তুই রতনকে শেষ পর্যন্ত বলেছিস, কথা না শুনলে এনকাউন্টারে উড়িয়ে দিবি। সে বেছারা পরি কি মরি করে আমার কাছে এসে আমার পা ধরে বসে থাকলো আধ ঘন্টা। ইসলামভাই হাউ হাউ করে কাঁদছে। দামিনী মাসি কাঁদছে। তোকে ভালবেসে ওরা কি অন্যায় করেছে ?
আমি ন্যায় অন্যায় বুঝি না। আমার কাছে কাজটা কাজ। আমার একার জন্য হাজার জনের ক্ষতি হোক আমি তা চাইবো না।
অনি এই অনি। নিচ থেকে দাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
মিত্রা আমাকে ছেড়েদিলো।
যা নিচে গিয়ে দেখ কিহলো।
তুই চল।
কেনো কি হয়েছে দেখ।
আমি পারবোনা।
অগত্যা নিচে এলাম।
দাদা মোবাইলটা হাতে দিয়ে বললো। অফিসে গন্ডগোল হচ্ছে আরও কাগজ ছাপতে হবে। নাহলে হকাররা কাল থেকে স্ট্রাইক করবে।
তুমি কি বললে ?
তুই সার্কুলেশনে কথা বল।
আমি ফোন ধরলাম।
হ্যালো।
অনিবাবু আমি সামলাতে পারছি না। মিনিমাম একলাখ কাগজ ছাপার পারমিশন দিন।
প্রেসে কে আছে।
সবাই আছে আমি আটকে রেখেছি।
ছাপতে বলুন। আর এই একলাখ কাগজের যা দাম হবে তা আপনারা সমান ভাবে ভাগ করে নিন। এটা কোনো ক্রেডিট হবেনা। যদি রাজি হয় তাহলে ছাপবেন না হলে ছাপবেন না।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। এইরকম একটা কথা যে আমি বলতে পারি ওরা বিশ্বাস করতে পারেনি। আমি দাদার হাতে ফোনটা দিয়ে সোজা গট গট করে ওপরে উঠে এলাম।

গেঞ্জিটা খুলে প্যান্টটা খুললাম। টাওয়েলটা আলনা থেকে টেনে নিলাম। পরতে যাবো মিত্রা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। প্লিজ একটু।
একবারে বিরক্ত করবিনা মন মেজাজা ঠিক নেই।
ও তুই তোর কাজের লোকদের দেখাস। আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই।
সরে যা। আমাকে বাথরুমে যেতে দে।
একবার।
আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট তুলে ধরেছে। বাধ্যে হয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। চোখ দুটো খুশিতে কল কল করে উঠলো। আমাকে ছেড়ে দিলো।
জানিস তোর কথায় নিচের রিপার্কেসন! তোর একটুও দেখতে ইচ্ছে করেনা।
কোনো কথা বললাম না।
আমি বাথরুমে গেলাম। ভালোকরে মুখ হাতপা ধুয়ে। বেরিয়ে এলাম। মিত্রা আলমাড়ি খুলে আমার পাজামা পাঞ্জাবী বার করে রেখেছে।
কিরে এটা পরবিতো।
দে।
ছোটমা এসে দুবার ঘুরে গেলো। তুই না গেলে কেউ খেতে বসবে না।
তোরা কি পেয়েছিস বলতো।
ডাক্তারদাদাকে বলনা, বলতে পারছিস না।
ডাক্তারদাদা এখনো আছে ?
যায় কি করে। তোর কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনতে হবেনা।
আজ কিছু হবেনা।
আমি নয় পেট পাতলা। তোর সায়ন্তন কি করেছে।
কেনো!
দাদার কাছে বসে পেট খালি করে দিয়েছে।
ওহ স্যাট। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। ছাগলাটাকে দিয়ে হবেনা।
আজ প্রথম ?
হ্যাঁ।
চুলটা আঁচড়ে নিলাম। দুজনে নিচে নামলাম। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে গল্প করছে। দাদারা সোফায় গোল হয়ে বসে। আমি ঘরে ঢুকতেই দাদা বলে উঠলো।
তোর কথা মতো বলে দিয়েছি। রিটার্ন হলে আমায় কিছু বলবিনা।
কালকে বাইরের কাগজে এই লেখাটা এডিট করে ছাপিয়ে দেবে। নাহলে তুমি ঝামেলা পোহাবে।
তার মানে।
যা বললাম তাই।
সে কি করে হয়। তোর টিভি নিউজ এখনো ধরতে পারে নি। খালি ব্রেকিং নিউজ বলে ক্লিপিংস দিয়ে চলেছে।
মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে সায়ন্তনকে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ লিখে দিলাম। আমার পারমিশন ছাড়া, একটিও ছবি এবং ক্লিপিংস যেনো বাইরে না যায়। এটা মাথায় রাখবি।
কিরে তোর কাজ শেষ হয়নি।
কথাটা কানেই ঢোকালাম না এমন ভান করলাম।
বড়মা সবাই কি করে বসবো।
তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
দিয়ে দাও। আমি কোথায় বসবো ?
টেবিলে।
ভজু কোথায় মাসি ?
ঘুমোচ্ছে।
কোথায় ?
ছোটর ঘরের মেজেতে।
খাওয়া হয়ে গেছে ?
না।
ওকে খাইয়ে দিতে পারতে।
তুই না এলে ও খাবেনা বলে ওপরে চলে গেছে।
ডাকো।
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
টেবিলে আবার নিচে করে লাভ কি, সবাই নিচে বসলে হতো না ?
তোর মোন চাইলে হবে। বড়মা রান্নাঘর থেকে বলে উঠলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ইসলামভাই ধরো টেবিলটা একটু ধারে সরিয়ে দিই।
তোকে করতে হবে না। রতনকে বলে দিচ্ছি।
গোল করে আসন পাতা হলো। আজ আমি ডাক্তারদাদা আর দাদার মাঝখানে। দাদার পাশে মল্লিকদা, ডাক্তারদাদার পাশে ইসলামভাই। ওদিকে ছোটমা বড়মার মাঝখানে মিত্রা বড়মার পাশে নীপা দামিনী মাসি কবিতা ভজু।
সবাইকে খাবার বেড়ে দেবার পর মাঝখানে সব হাঁড়ি বসানো হলো যার লাগবে মিত্রা কিংবা কবিতা উঠে উঠে দেবে। আমাদের অপজিটে রতন আবিদ নেপলা।
কারুর মুখে কোনো কথানেই, সবাই গম্ভীর। খাওয়া শুরু হলো। মেনু লিস্টে শুধু বিড়িয়ানী, চিকেন। অনেক ক্ষণ পর ডাক্তারদাদ বলে উঠলেন।
বড়ো ভালো রেঁধেছো। দারুণ স্বাদ।
কিনে এনোছো না বাড়িতে করেছো। আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম।
উঁ কতো খায়। আমি বানিয়েছি। মিত্রা বললো।
তোর দ্বারা এ জন্মে হবে না, হলে আগামী জম্মে।
জিজ্ঞাসা কর মাসিকে।
বুঝেগেছি, হেল্পার।
আমার মতো তাই না অনিদা। ভজু বললো।
সবাই হেসে ফেললো।
কাল সকালে হবে, মনে রাখিস।
আর বলবোনা।
আবার সবাই চুপচাপ। বেশ কিছুক্ষণ পর।
কিরে তোর এখন আবার তাড়াহুড়ো নেইতো। ডাক্তারদাদা বললো।
না।
তোর নেক্সট ভেঞ্চার।
বলা যাবেনা।
মোবাইলটা পকেটে ভাইব্রেসন মুডে ছিলো। কাঁপছে। বুঝলাম কেউ ফোন করছে। বার করলাম। ডাক্তারদাদা দাদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। দেখলাম মুঃ মুখার্জী।
কি হলো।
আরে রঘুবীর যদব না রঘুবীর প্রসাদ।
কেনো কি নাম দেখছেন।
রঘুবীর প্রসাদ।
নমিনি।

মিলে যাচ্ছে।
তাহলে আবার কি, ওইটাই হবে। এ্যামাউন্ট কি দেখছেন।
বিশাল।
আজ কিছু তোলা হয়েছে।
হ্যাঁ। কলকাতার সাতটা এটিএম থেকে।
কতো ?
এক।
কোকা না খোকা ?
কোকা।
এ্যামাউন্টগুলো একটু নোট ডাউন করে নিন। পারলে প্রিন্ট আউট।
ঠিক আছে।
কালকে সকালে কাগজ গুলো একটু পাঠিয়ে দেবেন। মুকে গালা আটকে দেবেন।
ঠিক আছে।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
দাদা ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আমার কতা শুনেছে। কিন্তু এতোক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলছিলাম, বুঝতে পারে নি।
মল্লিকদা নীচু হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।
কি দেখছো ?
তোকে।
সেতো দেখতেই পাচ্ছি।
তুই কি আজকাল কোড ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলছিস কেউ বুঝতে পারবোনা বলে।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
হাসলেই সাতখুন মাপ। সারারাত জাগতে হয় জাগবো। কি ঘটনা ঘটালি বলবি। নাহলে উঠছিনা। তখন অনেক তোড়পেছিস আমার ওপর। একটা কথাও বলিনি।
ঘরটা ঘম গম করে উঠলো দাদার গলার শ্বরে। সকলে চমকে তাকালো। খাবার থালায় হাত থেমে গেছে সকলের।
হো হো করে আমি হেসে উঠলাম। সবাই গম্ভীর। আমি হাসছি।
তোকে আমি এবার কান ধরবো।
সেতো তুমি থাপ্পরও মেরেছো। হাসতে হাসতে।
অনেকদিন পরেনি। তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করছিস।
চেঁচিয়োনা ছগনলাল ছুটে চলে আসবে।
বল আগে।
বললে সহ্য করতে পারবে ?
বলেই দেখ।
আবার চুপ চাপ। আমি খেতে শুরু করলাম। সবাই খাওয়া থামিয়ে আমার কথা বলার অপেক্ষায়।
রতন।
বলো দাদা।
তুই তখন ম্যাডামের পা ধরে কেঁদিছিলি কেনো।
তখন তোমার কথা না শুনলে তুমি ছট্টুর মতো আমাকে মেরে দিতে।
শুনলে কথাটা। এই ছট্টুকে একদিন আমি বুকে করে আগলে রেখেছি। সাক্ষাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছি। আজ কুকুরের মতো চোখের সামনে গুলি খেয়ে মরতে দেখেছি। বলতে পারো আমার কথামতো গুলি করা হয়েছে।
কেনো। দাদা ঝাঁজিয়ে উঠলো।
আমার কথা শোনেনি। বেইমানি করেছে।
সবাই বসে আছে আমি খাচ্ছি।
ওকে কিন্তু আমি ভালোবাসতাম। আজ ওর একটা কথায় অবিশ্বাস করলাম। তুড়ন্ত ডিসিসান নিলাম ওর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আর আমি যদি বিচার বুদ্ধি দিয়ে একবার মনে করি আমি ঠিক কাজ করতে যাচ্ছি। তোমরা কেউ আমাকে আটকাতে পারবেনা। আমার কাছে ছয় থেকে সাত রকমের অপসন থাকে। একজন না বললে আর একজনকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেবো।
কেনো তুই এই কাজ করলি। এখনো দাদার গলায় সেই ঝাঁজ।
নিরূপায় হয়ে।
আর কোনো পথ ছিলোনা।
না।
তার মানে! এইবার দাদার গলাটা বুঁজে এলো।
সড়াসরি দাদার চোখে চোখ রাখলাম। তাহলে তোমাদের সকলকে আমাকে হারাতে হতো। মিত্রা পর্যন্ত বাদ যেতোনা।
আমি খাচ্ছি, সকলের হাত থেমে গেছে। পিন পরলে ঘরে শব্দ হবে। বুঝতে পারছি সকলে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে।
কিহলো বসে রইলে কেনো, খাও। আর শুনবে, না এখানে থামিয়ে দেবো।
দাদা আমার দিকে তাকিয়ে। চোখের পলক পরছেনা।
তুমি যাকে ফোন করে আমার জন্য সাহায্য চাইবে মনে করেছিলে, তার হাতপা বাঁধা। সে কিছু করতে পারবেনা।
দাদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আবার সবাই চুপচাপ। নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছে।
যে ছেলেটা আমার গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করতে পারে, তাকে কোন সাহসে বাঁচিয়ে রাখবো বলো।
দাদার পিঠো কে যেনো চাবুকের বাড়ি মারলো। আমার দিকে সড়াসরি তাকালো।
তুই কি করে জানলি।
পরিদা।
পরিদা! ইসলামভাই আমার দিকে তাকালো।
হ্যাঁ। পরিদা। চকে দাঁড়িয়ে তোমরা যখন সবাই চা খাচ্ছিলে। পরিদা আমাকে আলাদা ডেকে নিয়ে গিয়ে বললো। তোকে একজন খুঁজতে এসেছিলো। তাকে দেখতে এই রকম। সব খোঁজ খবর নিলো। লোকটাকে দেখে আমার তেমন শুবিধার মনে হলোনা। তাই বাড়িতে ঢুকেই সময় নষ্ট করতে চাই নি।
আবার চুপচাপ।
রতনকে জিজ্ঞাসা করো, ওর পেট থেকে আমি কথা বের করেছিলাম কিনা। কিরে রতন আমি ঠিক বলছি।
রতন হ্যাঁ বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললো।
খেতে বসে কাঁদতে নেই রতন। আমি বলতে চাইনি, তোরা সবাই শুনতে চেয়েছিস।
দামিনীমাসি বড়মা নিজেদের পাত ছেড়ে উঠে এসে, এঁঠো হাতে আমার সামনে এসে বসলো। বাঁহাতে কাপরের খোঁট দিয়ে চোখ মুছছে।
কিহলো! তোমরা উঠে এলে কেনো। যাও আমি বলছিতো।
তোর মুখটা একটু দেখবো।
দেখে লাভ নেই।
ঠিক আছে, বল।
আবার খাওয়া শুরু করলাম।
তখন আমার মধ্যে একটা হিংস্র পশু কাজ করছিলো। তোমরা কেউ সামনে এসে দাঁড়ালে, তারও অবস্থা ছট্টুর মতো হতো।
একটু থেমে।
রতন চাক্ষুষ দেখেছে, লাইভ দেখেছে অর্ক সায়ন্তন। তুমিতো সায়ন্তনের মুখ থেকে সব শুনেছো।
ফোনটায় ম্যাসেজ এলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম অর্ক ম্যাসেজ করেছে।
দাদা লাটবাগানের বাড়িতে একটা কালো গাড়ি ঢুকলো। নম্বর এই। ব্যাপারটা বুঝতে পারছিনা। আমি বাড়িতে, আমার চেলুয়ারা খবর দিলো।
নম্বরটা দেখেই বুঝলাম স্পেশাল নম্বর।

সঙ্গে সঙ্গে মুখার্জীকে ফোন করলাম। ইচ্ছে করে লাউড স্পিকারে দিলাম।
মিঃ মুখার্জীর গলা ভেসে এলো। আপনাকে নিয়ে আর পারা যাবে না।
কেনো।
এই কানা রাতে ওখানে আপনার লোক আছে!
গাড়ি কেনো বাড়িতে ঢুকলো।
আমাকে বাঁচতে হবেতো।
আমার প্রতি বিশ্বাস নেই।
এ আপনি কি বলছেন অনিবাবু।
আমার খাবারে আপনি ভাগ বসাবেন না। আপনারটা আপনাকে দিয়েছি। ওটা আমার।
না না আমি খালি খবরটা পৌঁছে দিচ্ছি। ওখানে থেকে বেরোবার চেষ্টা করলে, এনকাউন্টার করতে বাধ্য হবো।
আপনি অর্কর পেট থেকে কথা বার করেছেন।
ঠিক।
আপনার সঙ্গে অর্ককে আলাপ করিয়ে দেবার পরই অর্ককে এই কাজ থেকে অফ করে দিয়েছি।
সত্যি।
ফোন করে দেখতে পারেন।
ব্যাটা নম্বরটা ভুল দিয়েছে।
মাথায় রাখবেন ওই পাড়ায় সাত বছরের একটা ভিখারীর ছেলে আমার ইনফর্মার হিসাবে কাজ করছে।
সত্যি! এক কাজ করুণ, আপনি আমাদের দপ্তরে জয়েন করুন।
টাকা দিতে পারবেনা।
ফোনটা কেটেই অর্ককে ফোন করলাম।
বলো।
ঘুমিয়ে পরেছিস।
দূর ঘুম আসে। মাথার মধ্যে যা ঢুকিয়ে দিয়েছো। তারপর যা লাইভ দেখালে।
ঘুমের ট্যাবলেট খা, একটাকে হাফ করে।
দু’একদিন না ঘুমোলে কিছু হবে না।
তুই মুখার্জীকে তোর নম্বর দিয়েছিলি।
দিয়েছি। শ্যামবাজারের একটা এসটিডি বুথের।
সকলে মুখে হাত চাপা দিলো।
নে ঘুমিয়ে পর।
শুধু এটুকু মশলা নেবার জন্য ফোন।
হ্যাঁ।
অনিদা।
বল।
বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি ঠিক আছে।
আছে।
ম্যাডাম।
ঠিক আছে।
নেক্সট ভেঞ্চার বলো। এটাতো কাল খতম করবে।
কয়েকদিন রেস্ট নে, তারপর।
আচ্ছা। গুড নাইট।
এটা অর্ক। দাদা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো।
হ্যাঁ।
মল্লিক শুনলি।
দাদা হো হো করে হেসে ফেললো।
এর জন্য আজ তোমরা বেঁচে আছো। গত চারদিন ধরে ও দামিনী মাসির বাড়ির দালাল হিসাবে কাজ করেছে। আমাকে ঘন্টায় ঘন্টায় আপডেট দিয়েগেছে। দামিনী মাসি জানে না ?
তুই কি বলছিস! দামিনী মাসি বললো।
তোমার বউমাকে জিজ্ঞাসা করো। এক বর্ণও মিথ্যে নয়।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকালো।
মিত্রা মাথা নীচু করে রয়েছে।



তুই জানতিস! মিত্রার দিকে তাকিয়ে দামিনী মাসি বললো।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে। তার আগের কিছু জানিনা।
এবার বলো, আমি কোথায় ভুল করেছি।
তুই একটুও ভুল করিসনি। আমি এতোক্ষণ খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। তুই তখন তোর দাদার ওপর ওরকম চোটপাট করলি বলে। বড়মা কাঁদতে কাঁদতে বললো।
কাঁদলে উঠে চলে যাবো। খাবোনা বলে দিচ্ছি।
ঠিক আছে কাঁদবোনা। তুইতো একটু বলতে পারিস। গলাটা কান্না ভেঁজা।
সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।
মায়ের মন মানে।
তাহলে মরতে হবে।
যে তোকে পেটে ধরেছিলো সে পারতো ?
সেই জন্য তিনি মারা গেছেন। তুমি ছোটমা দামিনী মাসি পারবে, তাই বেঁচে আছো।
স্পষ্ট কথার কষ্ট নেই, বুঝলে বান্ধবী। অনি হচ্ছে জেমস বন্ড ০০৭।
থামো তুমি, মস্করা করোনা। বড়মার গলাটা ধরা।
একথা তোমায় এভাবে মানায় না। দাদা বললো।
থামো তুমি। ছেলেটাকে একবার দেখলেনা। যদি ওর বুকে এসে একবার লাগতো।
সে হতো না। দাদা এমনভাবে বললো সবাই হেসে ফেললো।
ও বহুত চালাক। সায়ন্তন বললোতো, দাদা এখান থেকে কন্ডিসন করে গেছে। বুলেট প্রুফ গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। গাড়িতে ঘাপটি মেরে বসেছিলো। সব শেষ হবার পর, ছবি তুলে পালিয়ে এসেছে। ওতো ওই বাড়িটার ভেতরেও ঢোকেনি।
যাঃ, তুমি ফোক্করি করছো এডিটর। ডাক্তারদাদা বললো।
বিশ্বাস করো। লেখাটা এমন লিখেছে ও যেনো নিজে ঢ্যে ঢ্যে ঢ্যে করে গুলি করছে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। বড়মাও হেসে ফেললো।
সত্যি বলছি অনিদা, তুমি পাঁচটা ঘন্টা এমন সাসপেন্সে রেখেছিলে। আমাদের পিলে চমকে গেছিলো। এর আগে তোমার অনেক রাগ দেখেছি, এরকম কথা মুখ থেকে আগে শুনিনি। রতন বললো।
ইসলামভাই হাসছে।
তখন তোকে কি যেনো বলেছিলো।
হজম করে দেবো।
অনিদা আমাকে সব সময় বলে। ভজু বলে উঠলো।
দামিনী মাসি ভজুর দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো।
কিগো বসে থাকলে হবে। রতন সেইযে দুপুরে একটা চিকেন প্যাটিস খাইয়েছিলো। তারপর বটাদার হাফ ডিম পাঁউরুটি। বাকিটা দাও কালকে অনেক কাজ লড়তে হবে।
তারপর আমরাও আর কিছু খাইনি অনিদা, আবিদ বলে উঠলো।
দাও দাও ওদের দাও। দাদা বলে উঠলো।
হ্যাঁরে অনি কালকে রাজনাথ না ডাক্তার। ডাক্তারদাদা বললো।
বলবোনা। সময় বলবে।
কেনো জিজ্ঞাসা করছো বলোতো ওকে। ও সোজা কথা কখনো বলে। আবার কাল রাতে ধমকাবে, তখন শুর শুর করে বলে দেবে।
ডাক্তারদাদা খিক খিক করে হেসফেললো।

ডাক্তার তুমি কি নেবে ? বড়মা জিজ্ঞাসা করলো।
থাকলে দাও। আমারতো বড় ভয় করছে, অনি যদি আমাকে হজম করে দেয়।
আবার সকলে হেসে ফেললো।
হ্যাঁরে অনি কোকা আর খোকা কি বস্তু। মল্লিকদা গম্ভীর হয়ে বললো।
গুড কোশ্চেন মল্লিক।
আমার দিকে তাকিয়ে।
বল তোর কোড ল্যাঙ্গুয়েজ।
ইসলামভাই হাসছে।
ইসলামভাই জানে। জিজ্ঞাসা করো।
মুন্না।
সত্যি দাদা, বিশ্বাস করুণ আমি জানিনা। রতন তোরা কেউ জানিস ?
না দাদা।
বল।
কোকা মানে কোটি, খোকা মানে লাখ।
ইসলামভাই হাসতে হাসতে বিষম খেলো।
কি হলো!
ইসলামভাই কাশতে কাশতে হাত দখাচ্ছে। কাছে আসতে হবে না।
ছোটমা আমার দিকে চোখ পাকিয়ে ইশারায় কান মুলছে।
এক কোটি টাকার ড্রিল। মল্লিকদা বললো।
তাহলে কি বুঝলে। একটা পরিবারকে উড়িয়ে দেবার জন্য। সেখানে কি আমি গোলাপ ফুল দিয়ে তাকে বরণ করবো।
মিত্রা।
মিত্রা মল্লিকদার দিকে ঘুরে তাকালো।
কালকে আমি রিজাইন দিচ্ছি কাগজ থেকে।
কেনো!
আমি অনির সঙ্গে কালকে থেকে এই কাজ করবো।
ঢং দেখো। ছোটমা বললো।
তোমার দ্বারা হবেনা।
কেনো ?
বুবুনের মতো তাহলে তোমাকে গিরগিটি সাজতে হবে।
কেনো! দাদা বললো।
দেখলেন না, এক ঘন্টা আগের বুবুন, আর এক ঘন্টা পরের বুবুনের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।
দেখলে এডিটর, রতনে রতন চেনে, শুয়োরে চেনে কদু।
তারমানে! তুমি কি বলতে চাও।
কথাটা স্পষ্ট হচ্ছে না। আরো ভেঙে বলতে হবে। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
আবার হাসি।
আমি উঠে গিয়ে ছোটর পাত থেকে একটা মাংসের টুকরো তুলে নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসলাম।
মিত্রা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
তুমি কিছু বলতে পারোনা। বড়মার দিকে তাকিয়ে গঁ গঁ করে উঠলো।
তোকে দিচ্ছি। আছে।
দামিনী মাসি হাসছে।
দিদি আপনি বসুন আমি দিচ্ছি। দামিনী মাসি উঠে গেলো।
আমি বেসিনে মুখটা ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। বাগানে এসে দাঁড়ালাম। বেশ শীত শীত করছে। কাক ডাকছে। বুঝলাম ভোর হয়ে আসছে। এখনো অন্ধকার। ইসলামভাই পাশে এসে দাঁড়ালো। রতন আবিদ নেপলা সঙ্গে।
চলো ওপাশে গিয়ে দাঁড়াই।
চল।
সিগারেট আছে।
আছে।
তুমি খাও! রতন বললো।
মাঝে মাঝে খায়। ইসলামভাই বললো।
নেপলা ঠক করে একটা পেন্নাম করলো।
কিরে হঠাৎ!
দাদাকে দেখেছি। তুমি দাদার দাদা।
ধ্যুস।
ও ঠিক কথা বলেছে অনি। সত্যি যদি ঘটনাটা ঘটতো। ভাবলেই গা সিউড়ে উঠছে।
ঘটতো বলতে তুমি কি বলছো। এখন হয়তো তোমাকে দেখতে পেতাম না। ওদের টাইম ছিলো আজ নাইট। সেই মতো ওখানে গাড়ি পৌঁছে গেছিলো। খাওয়া দাওয়া চলছিলো। আর একটু দেরি হলে বেরিয়ে পরতো।
কি বলছিস তুই!
এক বর্ণও বানিয়ে বলছি না।
মুখার্জী যদি রিফিউজ করতো।
ঘোষ ছিলো। অনেক দিন শুকনো হাতে বসে আছে।
ছট্টু বলছিলো ঘোষদার কথা। আবিদ বললো।
তুইকি সকলকে ম্যাসেজ করেছিলি ?
কেনো বলোতো!
আবিদ তোর ম্যাসেজ পেয়েছে। নেপলা পেয়েছে। রতন পেয়েছে। দিদি পেয়েছে। কার নাম বাদ দেবো।
গজব হয়ে গেছে।
কেনো!
আমার পার্সোনাল ফোল্ডার সিলেক্ট করে অল করে দিয়েছিলাম মনে হচ্ছে। তখন মাথার ঠিক ছিলোনা।
সেইজন্য চিকনা অনাদি বাসু সঞ্জু ফোন করেছিলো। টিনা মিলি দেবাশীষ সবাই ফোন করে মামনিকে জিজ্ঞাসা করছে।
ইস এই একটা কাজ ভুল করে ফেললাম। যদিও আমার খুব ঘনিষ্ঠজন আর বন্ধু-বান্ধব ছাড়া কারুর নাম নেই ওই ফোল্ডারে।
তবু রক্ষে।
কিরে শুবিনা। মিত্রা ওপরের বারান্দা থেকে চাঁচালো।
তুই যা যাচ্ছি।
আবিদ।
বলো দাদা।
কাল টানতে পারবি।
এখনো বাহাত্তর ঘন্টার দম আছে।
মাথায় রাখবি যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছিস, সেই মাটি পর্যন্ত জানতে পারবেনা তোর মনের কথা।
তোমাকে ভাবতে হবেনা। কয়েক ঘন্টায় যা পেলাম তোমার কাছে, মাথা খুলে গেছে।
ছট্টু এই বাড়িতে এসে ঘুরে গেছে, তোরা কেউ জানতে পারলিনা।
বিশ্বাসকরো অনিদা অবাক হচ্ছিলাম ওর কথা শুনে। আমি দাদাকে বলেছি সব কথা। রতন বললো।
আর ভুল করিসনা। একটা ভুলে কতো বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতো বলতো।
ছট্টুকে আমি আন্ডার এসটিমেট করেছিলাম। ইসলামভাই বললো।
তোমাকে একদিন বলেছি। এবার চোখ কান খোলা রাখো। আর ড্রাগস থেকে একেবারে সোরে এসো।
আমাকে মাস খানেক সময় দে।
অন্যটিম কাজ করুক। তোমরা সরে এসো।
সরে আসবো। ছেলেগুলোকে একটু সেট করে নিই।
কি নেপলাবাবু তখন আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছো।
একটুও না। সেই সময় অবশ্য মটকা গরম হয়ে গেছিলো। তারপর তুমি যখন ঘুরে এলে, তখন বুঝলাম তোমার দম। মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে এতোবড়ো স্কিম। ইসলামভাই পারতো না।
দুর পাগল আমি। ওদের আর্মস দেখেছিস। এই কাজের জন্য এক কোটি!
হিসাবে যা পাচ্ছি। হয়তো এর বেশিই হবে। তোমাদের শোবার ব্যবস্থা কোথায় করেছে মাসি।
ড্রইংরুমে লম্বা বিছানা পরছে। ভজু তোর গেটের কাছে। ওকে নড়ানো যাবেনা।
যাও শুয়ে পরো আমি শুই গিয়ে ভীষণ শীত করছে।
কেনোরে শরীর খারাপ নাকি।
না খুব টায়ার্ড লাগছে।
ওপরে চলে এলাম। দেখলাম সত্যি কারের ভজুরাম আমার দরজার গোড়ায়। কুকুর যেমন ভাবে মোড়ামুড়ি করে শুয়ে থাকে, ঠিক সেই ভাবে। আমি আসতে একবার তাকিয়ে দেখলো, হাসলো, চোখ বন্ধ করলো।

আমি ঘরে ঢুকলাম, দরজা বন্ধ করলাম। মিত্রা চুল আঁচড়াচ্ছে। আমার দিকে একবার তাকালো। ভ্রু-জোড়া কুঁচকে গেছে। হাতের চিরুণি থেমে গেছে।
কিরে কি হয়েছে!
কিছু হয়নিতো।
তাহলে কাঁপছিস।
শীত করছে।
শরীর খারাপ লাগছেনাতো ?
নারে বাবা না। আমি মানি পার্টস থেকে একটা ক্যালপোল মুখে দিয়ে ঢক ঢক করে জল খেলাম।
ওষুধ খেলি।
প্রিকোয়েসন।
দেখি তোর গাটা।
মিত্রা আমার গায়ে হাত দিলো। কপালে হাত দিলো। আমার গালে গাল ঠেকিয়ে গায়ের উত্তাপ বোঝার চেষ্টা করলো।
কি দেখলি।
না ঠিক আছে।
মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে, একটু টিপে দিবি।
শুয়ে পর যাচ্ছি।
মিত্রা কাপর ছাড়তে ছাড়তে আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম। মিত্রা জামা কাপর ছেড়ে বাথরুমে গেলো। কাজ শেষ করে খাটে উঠে এলো। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। কপালের দু’পাশটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে।
অনেকটা খাওয়া হয়েগেছে, না খেলেই ভালো হতো।
একটু সেনসার লাগিয়ে দেবো।
না।
কেনো, এখুনি রিলিফ পেতিস।
বড়ো লাইটটা নিবিয়ে দে।
মিত্রা আমার পাশে আধশোয়া অবস্থায়। ওর নরম হাত আমার কপালে। ওর শরীরের গন্ধ আমার নিঃশ্বাসে এসে ধাক্কা মারছে। আমার মাথাটা ওর আরো বুকের কাছে টেনে নিলো। মিত্রার পাঁচটা আঙুল হারমোনিয়ামের রিডের মতো আমার চুলের মধ্যে খেলা করছে।
বুবুন।
কোন সাড়া শব্দ দিলাম না।
কষ্ট হচ্ছে।
আমার মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না।
হাতের বুড়ো আঙুলটা দিয়ে আমার কপালে চাপ দিলো। বুঝতে পারছি মিত্রা কিছু বলছে। কিন্তু মনে হচ্ছে ও অনেক দূরে, হাল্কা একটা শব্দ আমার কানে ভেসে আসছে। তারপর সেই শব্দটাও আরো দূরে আরো দূরে কোথায় যেনো মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলো।
এখানে আমি একা সম্পূর্ণ একা। কেউ কোথাও নেই। চারিদিক শুনসান। আমি একা বসে আছি সেই অশ্বত্থতলায়। আমার সামনে পীরসাহেব। অবাক হলাম। আগেতো কোনোদিন চাক্ষুষ দেখিনি! ওনার গল্প শুনেছি লোকের মুখে। যা শুনেছি একেবারে সেই রকম। বরং তার থেকে একটু বেশিই। সাদা পক্ককেশ, সাদা আলখোল্লা। সামনে একটা বই খোলা। আরবী ভাষায় কি যেনো লেখা। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। বই থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন। এই প্রথম আমি তাঁর মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। টকটকে ফর্সা মুখখানা। ভ্রু দুটো সাদা চুলে ঢাকা, কি অপরূপ মুখখানা। সৌম্য শান্ত। আমার দিকে পিটি পিটি চোখে তাকালেন। হাসলেন।
কিরে তুই! এই অসময়ে।
আপনার কাছে এলাম।
কেনোরে ?
ভালো লাগছেনা। নিজের মনকে ঠিক বুঝিয়ে উঠতে পারছিনা। আজও একটা অন্যায় কাজ করলাম।
পাগল। কে বললো তোকে অন্যায় কাজ করেছিস।
নিজের মন।
তোর মনে এখনো ময়লা আছে। পরিষ্কার হয়নি। পরিষ্কার কর।
কি ভাবে।
ওটা বলতে পারবোনা। তোকে তোর সমস্যা বললাম এবার তোর দায়িত্ব।
আমি যে কাজ করেছি, যা করতে চলেছি সব ঠিক করছি ?
সবটা বলতে পারবোনা। এখনো পর্যন্ত ঠিক কাজ করেছিস।
চুপ চাপ মাথা নীচু করে বসে রইলাম।
যা এবার, আমি একটু পড়াশুনো করি।
তবু বসে রইলাম।
পাগল। তুইতো নিজের জন্য কিছু করিস নি। যা কিছু করেছিস সব পরের জন্য। তোর চিন্তা কি ?
যা জানতে এসেছিলাম, তা জানতে পারলাম না।
পারবি। একটু অপেক্ষা কর। সময় এখনো আসেনি।
চোখের সামনে থেকে সেই পক্ককেশ বৃদ্ধ নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি আবার একা। সম্পূর্ণ একা।

ইস অনিমেষদা কি ভাববে। যখন শুনবে আমি এর মধ্যে জড়িয়ে পরেছি। ভাববে আমি একজন মাস্তান, দাদা, ডন। আমি এনকাউন্টার করাতে পারি। তাও পার্টির একজন ক্ষমতাবান লোকের এগেনস্টে।
শুয়োরের বাচ্চা রাজনাথ আমি জানি তুমি খুব ধীর স্থির গতিতে এগোচ্ছ। তুমি পোড় খাওয়া মাল। যখন বুঝতে পারবো তুমি অনিমেষদার গায়ে হাত তোলার ব্যবস্থা করেছো, তখন তুমি গাইপ। মথায় রাখবে। ততক্ষণ পর্যন্ত তোমায় আমি ছেড়ে রাখবো। আমি জীবনে বহু বিষধর সাপ লাথি মেরে, মেরে দিয়েছি। আমি জানি সাপের সাথে খেলা করা কি ভীষণ মজা।
তুই আবার কিন্তু ঝামেলা করছিস মিত্রা। হা হা হা।
আমার শুর শুরি লাগছে। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। দেখ ছোটমা ভীষণ ডেঞ্জার। জানতে পারলে হাড় মাস এক করে দেবে।
আবার কাঁদে।
তোকে বলেছিনা, আমি কান্না পছন্দ করিনা। কন্না দুর্বল মানুষের পরিচয়।
তোর টডি আমার হাত থেকে ছাড়া পাবেনা।
ইসলামভাই আমার কাছে শিশু। ইসলামভাই জানেনা টোডিকে আমি মারবো। তবে একটু সময় নিয়ে। ইসলামভাই-এর চেলা চামুন্ডার থেকে টোডিকে আমি সরিয়ে নিয়েছি।
ইস তোকে বলে ফেললাম। প্লিজ তুই কাউকে বলিস না। গায়ে হাত দিয়ে শপথ কর।
আচ্ছা মিত্রা, তুই কোনো অন্যায় করিসনিতো! যার জন্য ওরা এই সব করতে বাধ্য হয়েছে।
ঠিক আছে। মাথায় রাখবি তোর কথার ওপর বেইজ করে আমি কাজ করছি।
তবে আমার ইনটিউসন কখনো বিট্রে করেনি।
কি বললে আমার জন্য তুমি পার্টিতে অপদস্থ হচ্ছ।
মিত্র ওঠ আর এক মুহূর্ত এখানে বসবো না।
তোমাকে পুরুষ ভাবতাম। তোমার বৌদ্ধিক চিন্তা ভাবনাকে আমি শ্রদ্ধা করতাম। আর তুমি কিনা তোমার পার্টির একটা কুত্তার কথায় আমাকে এতো বড়ো কথা বললে।
তোমার ক্ষমতা থাকলে তুমি আমার সঙ্গে লড়ে যেও। তোমার হাতে সরকার আছে। তোমার হাতে প্রশাসন আছে। আমার হাতে কলম আছে। এক একটা আঁচড়ে আমি তোমার পার্টিকে ফালা ফালা করে দেবো। আমি কাগজের মাধ্যমে তোমাদের এগেনস্টে জনমত গড়ে তুলবো। দেখি তুমি কতো ডিস্টার্ব করতে পারো আমায়।
না না বৌদি তুমি আমায় রিকোয়েস্ট করবেনা।
যেদিন স্যার, সুনন্দাদি তোমার সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিয়েছিলো। সেইদিন থেকে তুমি তাদের সঙ্গে একি আসনে বসে আছো আমার মনে। তোমার পরে অনিমেষদাকেও সেই আসনে বসিয়েছি। তোমাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ব্রত আমাকে প্রতি পদে পদে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
নিজেক কতবার বুঝিয়েছি অনি তুই একটা অরফ্যান। তোকে এরা ভালবাসে। এদের ভালোবাসার অমর্যাদা কোনোদিন করবিনা। এখনো পর্যন্ত তোমাদের ভালো ছাড়া মন্দ চিন্তা করিনি। যখনই কোনো অন্যায় হচ্ছে বুঝতে পেরেছি। ছুটে এসে প্রথমে অনিমেষদাকে বলেছি।
সেই অনিমেষদা বলে কিনা আমি তাকে পৃথিবীথেকে সড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করেছি। সুরো কি ভাবছে বলোতো। আমারতো কোনো মায়ের পেটের বোন নেই। পৃথিবীতে ওকে আমি আমার মায়ের পেটের বোন হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছি। একমাত্র বোন হিসাবে ওর কাছ থেকে আমি ভাইফোঁটা নিই। তারমানে অর্থটা কি দাঁড়াচ্ছে। আমি আমার পিতাকে খুন করবো। কিসের স্বার্থে ?
আর একটা কথা তোমায় বলে যাচ্ছি শোনো। মিত্রাকে স্বাক্ষী রেখেই বলছি। রাজনাথকে তুমি আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবেনা।
গত দশবছরের ইতিহাস আমার কাছে আছে। বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে তুমি ওকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হবে। বলতে পারো আমার কলমের জোড়ে তুমি বাধ্য হবে। তারপর বারো ঘন্টার মধ্যে ও পৃথিবীর আলো আর দেখতে পাবে না।

তোমার তৈরি আইনেই আমি ওকে পৃথিবী থেকে সড়িয়ে দেবো।
এনকাউন্টার।
ভারতীয় সংবিধানে যার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
আর একটা কথা বলে রাখি, এনকাউন্টার স্পেশালিস্টরা সরকারী গুন্ডা। ডাক্তারের যেমন মানুষ মারার অধিকার আছে। ওদেরও আছে। এই খেলাটা আমি এখন খুব নিপুন হাতে খেলি।
চল মিত্রা চল। আমার এখেনে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। আমার সমস্ত ছক ওলট পালট করে দিতে হবে। আবার নতুন করে পথা চলা শুরু করতে হবে।

কিরে তুই এখানে বসে আছিস। অফিসে যাসনি। বার বার করে তোকে কাল রাতে বলেছি।
ঘুমের ঘোরটা কাটতে একটু সময় লাগলো। মাথায় ঘুরিয়ে চারদিক দেখলাম। ঘর ভর্তি লোক। অনাদি বাসু আমার দু’হাত চেপে ধরে আছে। চিকনা আমার পায়ের ওপর বসে পাদুটো জাপ্টে ধরে আছে। আমার মাথার শিয়রে বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি। আমার মুখের কাছে ডাক্তারদাদার মুখটা এগিয়ে এলো। চোখদুটো ছল ছল।
বড়মা।
এইতো আমি। গলাটা ধরা ধরা।
আমার মাথায় হাত রাখলো।
মিত্রা ওখানে কাঠ হয়ে বসে আছে কেনো। তুমি ওকে খাইয়ে অফিসে পাঠাওনি কেনো।
উনি মিত্রা নন, সুতপা।
হাতটা টানতে চেষ্টা করলাম। অনাদি বাসু হাত চেপে ধরে আছে।
ছাড় না। তোরা কি করতে এসেছিস। ওখানে কাজ নেই। সব ফেলে চলে এসেছিস। আগামী সপ্তাহে গিয়ে সব হিসেব নেবো। মাথায় রাখিস।
উঠে বসার চেষ্টা করলাম।
এখন না একটু পরে। ডাক্তারদাদা বললেন।
কেনো! আমার কিছু হয়নি। তোমরা এই টুকুতে ঘবড়ে যাচ্ছ কেনো।
বৌদির দিকে তাকিয়ে, হেসে ফেললাম।
আজ বিকেলে তোমার কাছে যেতাম। তোমাকে ফোন করে জানিয়েছি তো। মিত্রাকে দেখেছো ? সকালে এলে! সত্যি আমার একটা ভুল হয়ে গেছে। ম্যাসেজটা করা উচিত হয়নি। তখন ঠিক মাথাটা কাজ করেনি বুঝলে।
তোমার সঙ্গে বড়মা ছোটমা দামিনী মাসির পরিচয় হয়েছে।
বৌদি এগিয়ে এলেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
কথা বলিসনা। গলাটা ধরা ধরা।
তোমরা সবাই কাঁদছো কেনো বলোতো ?
এ ঘরে ভিড় করে আছো কেনো ? সত্যি বলছি আমার কিছু হয়নি। দেখো আমি স্ব-শরীরে বেঁচে আছি। আমি মরবো না। এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।
কই স্ট্রংম্যানের ঘুম ভেঙেছে।
অনিমেষদা এখানে! বৌদি!
মাথাটা তোলার চেষ্টা করলাম।
না না এখন না।
দাদা আপনি এখানে!
বিধানদা আমার দিকে ফ্যাকাশে মুখে তাকিয়ে।
না জানিয়ে একটা বড় অন্যায় করে ফেলেছি দাদা। ক্ষমা করবেন। এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা।
তোকে কথা বলতে হবে না।
আমার ঘুম হয়ে গেছে। এবার উঠি। বড়মা, মিত্রা কোথায়। ওকে দেখছিনা কেনো।

মিত্রা আমার সামনে এলো।
কিরে তোর চোখ দুটো এতো ফোলা ফোলা ? কাঁদছিস ? কেনো! তোদের নিয়ে সত্যি মহা মুস্কিল। যা অফিসে চলে যা তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
কথা বলছিস না কেনো!
নাঃ শুয়ে থাকলে হবে না। এবার উঠি। না উঠলে তোরা সব গন্ডগোল পাকাবি।
ওঠার চেষ্টা করলাম।
তুই উঠতে পারবি। ডাক্তারদাদা বললো।
খুব পারবো।
আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। ঘরের চারিদিক তাকিয়ে দেখলাম। হেসেফেললাম। তোমরাও পৌঁছে গেছো। সত্যি টিনা খুব বড় অন্যায় হয়ে গেছে। আরে বৃথা ভয় পাচ্ছ।
বড়মা।
বল।
তোমরা সবাই আমাকে ঘিরে এভাবে বসে আছো কেনো বলোতো। আমার কি হয়েছে ? ডাক্তারদাদার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো। তোমাদের চোখ ফোলা ফোলা। দাদা মল্লিকদা কোথায়।
নিচে।
এই ঘরে আস্তে মানা করে দিয়েছো।
না।
ছোট।
আমি ছোটমার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
ডাকতে পারতে। উঠে পরতাম, ভয় পাওয়ার কি আছে।
এই দেখো আবার কাঁদে। কাঁদলে কিন্তু অনি হাওয়া। আর পাত্তা পাবেনা।
ছোট আমার মুখটা চেপে ধরলো।
একটু চা খাওয়াও।
আমি একা কথা বলে যাচ্ছি। সবাই চুপচাপ। সবাই কেমন সন্দেহের চোখে আমাকে দেখছে।
একটু চা খাওয়াবে।
ছোট যাও একটু চা করে নিয়ে এসো। ডাক্তারদাদা বললো।
ডাক্তারদাদা তুমি ফিউজ কেনো।
তোর শরীরটা একটু প্রবলেম দিচ্ছিলো।
আমার!
হ্যাঁ।
তোহলে তোমার ডাক্তারী শাস্ত্র ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে।
হবে হয়তো।
তুমি এভাবে বলছো! তুমিতো সহজে হারমানবার পাত্র নও।
ডাক্তারদাদা মুখ নীচু করে রয়েছে।
মিত্রা টেবিলের ওপর থেকে আমার ফোনটা দে।
কেনো কি করবি।
দরকার আছে, দেনা।
ডাক্তারদাদা ইশারা করলো। অনিমেষদা, বিধানদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
বৌদি, সুরো এসেছে নাকি ?
হ্যাঁ।
কোথায় ?
নীচে।
তোমরা বসো আমি একটু আসছি।
কোথায় যাবি।
ছোটর ঘরে।
না তুই এখন যাবিনা। বড়মা বললো।
কেনো আমার কি হয়েছে!
কিছু হয়নি।
তুমি রাগ করছো আমার ওপর।
বড়মা মাথা নীচু করলো।
তোরা কখন এসেছিস। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম।
সাড়ে আটটা।
কটা বাজোগো বড়মা।
সাড়ে এগারোটা।
ইস। তোমরা আমাকে ডাকলেনা কেনো।
সবাই চুপ।
মিত্রা মোবাইলটা এনে দিলো।
কিরে মোবাইলটা ওখানে ছিলোনা ?
না।
আমার সাথে একটু আয়তো।
কোথায় ?
ছোটর ঘরে।
যেতে পরবি।
কেনো বলতো ?
এমনি।
চল।
আমি খাট থেকে নেমে দাঁড়ালাম।
সবাই ইশারায় কথা বলছে। বুঝতে পারছি।
আমি মিত্রার সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। আমার পেছন পেছন টিনা মিলি অদিতি। দেবাশীষ বারান্দায় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। ঘর থেকে বেরোবার সময় ওর পিঠে একটা চাপর মারলাম। ও মুখ টিপে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।
আমি ছোটমার ঘরে এসে ঢুকলাম। মিত্রা আমার পাশে।
হ্যাঁরে কি হয়েছে! সবাই এরকম বিহেভ করছে কেনো!
টিনা মিলি অদিতি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
তুই ঠিক আছিস।
কেনো মিলিকে চুমু খেয়ে প্রমাণ করবো, ঠিক আছি কিনা। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks