দেখি নাই ফিরে - (Part-66)

গান্ডুটার কথা জিজ্ঞাসা করেনি।
বলেছে কেউ চেনেই না। সায়ন্তন মুখের ওপর বলে দিয়েছে। কোনো ইমেজ দেখাতে পারবনা অনিদার পার্মিশন ছাড়া।
তুই কালকে ওকে আমাশা রুগী বলেছিস।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো।
হ্যাঁ।
বেচারা সবার সামনে রাগের চোটে বলে দিয়েছে। অনিমেষদা বিধানদার সে কি হাসি।
দ্বীপায়ন কি তনুর পাঠানো ইমেজগুলো দেখিয়েছে।
হ্যাঁ। ও তোকে বলতে ভুলে গেছি। তনু বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। একবার দাদার সঙ্গে বাকি আমার সঙ্গে কথা বলেছে। ও মনেহয় শনিবার আসছে। সঙ্গে আরো অনেক কিছু নিয়ে আসবে। ও বলেছে মিত্রাদি তুমি একেবারে চিন্তা করবেনা। অনি ছেড়ে দিলেও আমি সারা পৃথিবীতে রাষ্ট্রকরে দেবো ওর গুণকীর্তন। জানিস খুব কাঁদছিলো।
টিনারা বাড়ি গেলো না ?
থাকবে। মিলি টিনা থাকবে। দেবা চলে যাবে, কাল সকালে আবার চলে আসবে।
শোবে কোথায়রে ?
তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
তোর বাড়ির খবর নিয়েছিলি ?
নিয়েছি মানে। কালকে একবার ফোন করেছিলাম। সকালে বুড়ীমাসি এসে হাজির। তুই রবীনের ফোনেও ম্যাসেজ পাঠিয়েছিস! সকালে ম্যাসেজ দেখে বুড়ীমাসিকে নিয়ে হাজির। তোকে দেখে সে কি কান্না। শয়তানটার শ্রাদ্ধ শান্তি করে তবে শান্তি। কোনো প্রকারে বাড়ি পাঠিয়েছি।
অনিদা। ভজুরাম চেঁচিয়ে ডাকলো।
যা আমার ডাক পরেছে। বড়মাকে বলনা কিছু খাবার পাঠাতে। খিদে পেয়েছে।
বলছি। তুই যা। সাবধান।
হাসলাম।
ঘরে ঢুকেই সবার চেহারা লক্ষ করলাম। সবাই বেশ উত্তেজিত। বিশেষ করে প্রবীরদার চোখ মুখ লাল। বুঝলাম সবাই মিলে প্রবীরদাকে চেপে ধরেছে। প্রবীরদাও ছাড়নেবালা পার্টি নয় কথা শুনেই বুঝতে পেরেছি। নেগেটিভ গেম খেলে। দু’দুটো টাকার খনি প্রবীরদার আন্ডারে। একটা বেশ্যা পট্টি আর একটা আবাসন দপ্তর। মলের কেশটা তবু হজম করেছে। এইটা কিছুতেই হজম করবেনা আমি জানি। প্রবীরদার সঙ্গে ডাক্তারের লিঙ্ক আছে। প্রবীরদাই বিধানদাকে দিয়ে অনিমেষদাকে বলিয়ে ডাক্তারকে ছাড়িয়েছে।
অনিমেষদা একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মনটা বোঝার চেষ্টা করলো।
প্রবীর তোকে কিছু প্রশ্ন করবে তুই তার ঠিক ঠিক উত্তর দে।
কি ব্যাপারে বলো।
আমরা তোর ফাইল দেখলাম। সব সত্যি নয়।
বুঝলাম প্রথম রাতেই আমাকে বিড়ালটা মারতে হবে। নাহলে প্রবীরদা গেম বার করে নিয়ে চলে যাবে।
তাহলে সময় নষ্ট করে লাভ কি। কাল হবেনা, পর্শু সিরিয়াল শুরু করছি। তোমরা তারপর দিন আমার এগেনস্টে কোর্টে কেশ কর। আমি ইয়োলো জার্নালিজম করেছি। প্রমাণ হলে আমার চোদ্দ বছরের জেল।
এটা কি উত্তর হলো।
আমি প্রবীরদার চোখে চোখ রেখেই অনিমেষদার সঙ্গে কথা বলছি।
যা বলার বলে দিলাম। নেক্সট যদি কিছু জানার থাকে বলতে পারো।

তুই রাগ করছিস কেনো।
এটা কি রাগের কথা হলো। তুমি চার্জ করলে আমি চার্জড হোলাম।
সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে মোবাইল বার করলাম। ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করে মুখার্জীকে ফোন করলাম।
কি খবর শরীর ভালো আছে তো।
সকালে অনিমেষদার সাথে কি কথা হয়েছে।
গলাটা পরিচিত মনে হচ্ছে না। অপিরিচিত অপরিচিত ঠেকছে।
আমার লোক যে আপনার পেছনেও আছে সেটা কাল রাতে বলেছি।
মাথা গরম করছেন কেনো।
রাজনাথ বাবুর এ্যাকাউন্ট শিল করেছেন।
করেছি।
ডিটেলস পাঠিয়েছেন।
খামে আছে শিল করা।
ঠিক আছে, পরে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।
আরে রাখবেন রাখবেন না।
বলুন।
আমারতো কিছু জানার আছে।
কি জানতে চান বলুন।
খুব প্রেসার আসছে।
অপেক্ষা করুণ পর্শুদিন থেকে রিলিফ দিয়ে দেবো।
আমাকে ট্রান্সফার করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
ওটাও রাজনাথবাবুর ঘারে চাপিয়ে দেবো। চুপচাপ থাকুন।
ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে রেকর্ডিং সেভ করলাম। প্রবীর দার চোখে চোখ রাখলাম। চোখ দুটো যেনো ঠিকরে বেরিয়ে আসবে।
বিধানদা।
বিধানদা আমার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকালো।
আপনার দুটো হাতই পঙ্গু হয়ে গেছে। কেটে বাদ দিন।
তুমি কি বলতে চাও। প্রবীরদা আমার দিকে তাকালেন।
বিধানদা প্রবীরদার দিকে তাকালেন। প্রবীরদা মাথা নীচু করে নিলেন।
প্রবীরদা দশবছর আগে আপনি আপনার গ্রামের পঞ্চায়েত ছিলেন। এখন সেই গ্রাম শহর হয়ে যাচ্ছে। তখন আপনি জমি বাঁচাও কমিটির লিডার হিসাবে খুব খ্যতি লাভ করেছিলেন। আর আজ আপনি পার্টির একজন বড়মাপের লিডার মন্ত্রী। সেই সময়কার কথা আপনার মনে আছে ?
প্রবীরদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
ভাবছেন দশবছর আগে আমার গোঁফ দাড়ি বেরোয়নি এখবর পেলাম কোথায়।
দাঁড়া দাঁড়া তুইকি প্রবীরকেও জড়াবি নাকি। অনিমেষদা বললেন।
না। জড়াবো না। তবে প্রবীরদা যদি আর একটু পা পিছলে যান, নিজেই জড়িয়ে যাবেন।
আমি প্রবীরদার দিকে তাকালাম।
কি প্রবীরদা আমি মিথ্যে কথা বলছি।
তুই সত্যি কথা বলছিস। সেটা প্রমাণ হয় কি করে।
শুনলেনতো রাজনাথ বাবুর ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট শিল করিয়েছি। উনি সব ব্যাপারটা মুখ মুছে নেবেন। আপনি পারবেন না। উনি মজ্জফরপুর থেকে এসে এখানে পার্টির নেতা হলেন। কি করে ? আপনার বিধানদার প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে।
না। উনি ভালো সাংগঠনিক।
কখনো গিয়ে গণিকা পল্লীতে ঘুরে দেখে এসেছেন।
প্রবীরদা চুপ।
ডাকুন ডাক্তার আর রাজনাথ বাবুকে। স্বরূপটা দেখিয়ে দিচ্ছি।
কিরে প্রবীর কি করবি ? বিধানদা বললেন।
তুমি বললে ডেকে পাঠাতে পারি।
ডাক ফয়সালা আজকে এখানেই করবো। বিধানদা বললেন।
আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর তুমি বিধানদা দিতে পারবে। অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
বল।
তোমাদের একজন সাংসদের এ্যাকাউন্টে কত টাকা থাকতে পারে।
পার্টির রুলস অনুযায়ী এক পয়সাও না।
রাজনাথ বাবুর যে তিনটে এ্যাকাউন্ট শিল করিয়েছি। সেখানে মিনিমাম একশো কটি আছে। পর্শুদিন সেখান থেকে এককোটি তোলা হয়েছে। প্রবীরদা আপনি জানেন।
আমার জানার কথা নয়।
বিধানদা আপনি জানেন।
তুই যা বলছিস মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আমি কিন্তু গল্প বলছিনা। হাতে ডকুমেন্টস নিয়ে বলছি।
দেখাতে পারবি।
পারবো।
কিরে প্রবীর তুই সেদিন বললি ডাক্তার সৎ লোক আজ কি দেখলি। তোর কথায় ডাক্তারকে ছাড়লাম। তারপর রাজনাথ। তোরা কি ভেবেছিস। তোদের ওপর পার্টির দায়িত্ব দিলেতো পার্টি দুদিনে উঠে যাবে।
সব বাজে কথা।
মিত্রা হাসতে হাসতে গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। আসতে পারি।



ঘরের আবহাওয়া মুহূর্তের মধ্যে তুমুল পরিবর্তন হয়ে গেলো। সবার হাসি হাসি মুখ। দাদা মল্লিকদা গম্ভীর।
আয়। মিত্রা ডাকলো।
দেখলাম টিনা মিলি। সবার হাতে ট্রে। ওরা ভেতরে এলো।
অনিমেষদা হাসতে হাসতে বললেন। এতো খেতে পারবোনা।
বৌদি বানিয়েছে।
দে তাহলে।
খাবার পর্ব চললো। খেতে খেতে কথা হচ্ছে। আমার কাছ থেকে বিধানদা অনিমেষদা ডাক্তারের কথা শুনতে চাইছে। আমি বললাম আস্তে দাও। সব শোনাবো। তোমরা দেখতে চাইলে ডকুমেন্টস দেখাবো। প্রবীরদা গুম হয়ে আছে। অনুপদা রূপায়নদা চুপচাপ। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজনাথবাবু ডাক্তার এসে হাজির। সঙ্গে দুজন লোক চিন্তে পারলাম না। দেখেই মাথাটা আমার গরম হয়ে গেলো। ডাক্তারের মুখ ফুলে ঢোল। ভজু দুটো চেয়ার নিয়ে এলো। খাওয়া শেষ। দরজা বন্ধ হলো।
অনিবাবু আপনি কাজটা ভালো করলেন না এরজন্য আপনাকে ভুগতে হবে। রাজনাথ বাবু বললেন।
দুম করে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। মুহূর্তের মধ্যে আমার চেহারার যে পরিবর্তন হয়েগেলো সেটা ঘরের সবাই লক্ষ্য করলো।
আপনার মতে দশটা এমপির জন্ম আমি দিতে পারি। কাল রাতেই আপনাকে এনকাউন্টার করাতাম। খালি আমার একটা ভুলে তা হলো না। তাহলে আজ আপনি এখানে বসে আমার ঘরে বক্তব্য রাখতে পারতেন না।
এতোবড়ো ক্ষমতা আপনার।
দেখলেন না আপনার আনা কুত্তাগুলোকে কিরকম ভাবে মেরেছি। ছবি দেখেন নি কাগজে।
ওদের সঙ্গে আমার কোনো রিলেসন নেই।
সঙ্গে সঙ্গে ফোন তুললাম। ভয়েজ অন করা।
অর্ক।
দাদা।
কাজ শেষ।
হ্যাঁ দাদা।
তুই সায়ন্তন একবার আমার বাড়িতে আয়।
আচ্ছা দাদা।
কি ডাক্তার শুক্রবার সকালবেলা ভাআইপি স্যুটকেস নিয়ে রাজনাথবাবুর বাড়িতে কি করতে গেছিলেন।
আপনি মিথ্যে কথা বলছেন। রাজনাথবাবু চেঁচিয়ে উঠলেন।
আপনি সবার সামনে আমাকে ফাঁসাতে চাইছেন।
কতটাকা রাজনাথ বাবুকে দিয়েছিলেন।
এক পয়সাও দিইনি।
তারমানে এসেছিলেন। কিছু দেন নি এই তো।
আমি যাই নি।
ভিডিও ক্লিপিংস দেখাবো।
ডাক্তার চুপ।
একজন সাংসদের কাছে উনি আসতেই পারেন। রাজনাথবাবু বললেন।
তাহলে এতোক্ষণ তরপাচ্ছিলেন কেনো।
কি প্রবীরদা এখানেই থামবো না আরো এগোবো। আপনি যা বলবেন।
প্রবীরদা মাথা নীচু করলো।
বিধানদা রাজনাথবাবুর দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।
তুই ক্রস কর আমি নোট ডাউন করাচ্ছি। অনুপ সব লেখ। এটাই মিনিট বুক হিসাবে ট্রিট হবে।
বিশ্বাস করুণ দাদা সব ষড়যন্ত্র। তারপর হতাশ চোখে আমার দিকে তাকালেন।
রাজনাথবাবু আপনি টোডিকে চেনেন।
না।
ডাক্তার।
না।
মিত্রাকে চেনেন।
হ্যাঁ।
কে হয় আপনার।
ডাক্তার মাথা নীচু করে রয়েছে।
আপনার বৌ টোডির বিছানায় শুতো, আপনি জানতেন।
কি বাজে কথা বলছিস তুই। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।
কি, বাজে কথা, না ঠিক কথা। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম।
বাজে কথা।
ছবি বার করি সবার সামনে। পেছনে আপনার সই আছে।
ডাক্তারের মাথা নীচু।
আপনার মুখের অবস্থা এরকম হলো কি করে। কাল চৌধুরীবাড়ি থেকে বড়াত জোরে বেঁচে গেছেন দু’জনে। নাহলে ওখানেই খেল খতম করে দিতাম। দৌড়ে পালাতে গিয়ে লাইনে পড়ে মুখের হাল এই করেছেন। থানায় ডাইরীও করেছেন আমার নামে। তখন জানতেন না, বড় খেলাটা খেলে ফেলেছি।
রাজনাথবাবু ডাক্তার মাথা নীচু করে আছে।
রাজনাথবাবু মেয়েগুলো তাদের বয়ানে আপনার আর ডাক্তারের নাম বলেছে। যে মেয়েগুলোকে নিয়ে আপনি কাজ করছিলেন। তাদের সাপ্লায়ার আমার রিক্রুটার। মাথায় রাখবেন ওটা টোপ। আপনি গিলেছেন। এবার বুঝেছেন আপনার মতো দশটা এমপির কেনো জন্ম দিতে পারি।
কেউ যেনো অনিমেষদা বিধানদার গালে সপাটে একটা থাপ্পর মারলো।
প্রবীরদা উঠে আসুন ডাক্তার আর রাজনাথের ছবি দেখবেন আসুন।
আমি টেবিলের ওপর থেকে মানি পার্টসটা নিয়ে ভেতর থেকে চাবিটা বার করে আলমাড়ি খুললাম। খামটা বার করতেই দাদা চেঁচিয়ে উঠলেন, তুই সত্যি দেখাবি নাকি।
কেনো দেখাবো না। প্রবীরদা এতোক্ষণ সাপোর্ট করছিলো রাজনাথ বাবুকে। দেখে যাক।
গালা বন্ধ করা খামটা বার করলাম।
দরজায় ধাক্কা পরলো। আমি এগিয়ে গেলাম। দেখলাম অর্ক সন্দীপ দ্বীপায়ন সায়ন্তন। গেটের বাইরে বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখ শুকনো। ওদের চারজনকে ভেতরে ঢোকালাম। আমি গেট বন্ধ করলাম।
দ্বীপায়ন আমার মোবাইল থেকে ম্যাসেজ গুলো ল্যাপটপে ঢেলে প্রিন্ট দে। অর্ক তোকে হেল্প করছে। সন্দীপ।
বল।
তোর ল্যাপটপে সায়ন্তনের চিপটা ঢুকিয়ে ট্রান্সফার কর।
দাদা আমার ল্যাপটপে সব আছে সায়ন্তনেরটাও আছে অর্করটাও আছে। দ্বীপায়ন বললো।
তাহলে দ্বীপায়নের ল্যাপটপ থেকে অনিমেষদাদের দেখা।
আমি একটু আসছি। অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
তুই যাবিনা এখন। প্রবীরদা বললো।
ভয় নেই বাইরে অনেক দর্শক, তাদের চাহিদাটা একটু মিটিয়ে আসি।
এখুনি আয়, তারপর দেখাচ্ছি এই দু’টোর মজা।

আমি ঘরের দরজা খুলে বাইরে এলাম। দরজা আবার বন্ধ করে দিলাম। মিত্রা এগিয়ে এলো। আমার পাঞ্জাবী খামচে ধরলো। চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা।
কিরে তুই চেঁচাচ্ছিলি কেনো।
আমি হাসলাম।
বড়মা ছোটমা বৌদি এগিয়ে এলো। দূরে টিনা মিলি নীপা সুরো দাঁড়িয়ে। ওইদিকে ইসলামভাই নিরঞ্জনদা রতন আবিদ অনাদি চিকনা বাসু।
কিরে কি বলছে শয়তান দুটো।
কিছু না। ওরা ওদের কথা বলছে। সবাই বাঁচতে চায়।
দাঁড়া বাঁচাচ্ছি। বৌদি এগিয়ে গেলো।
তুমি কোথায় যাচ্ছ ?
একবারে কথা বলবিনা। অনেক বার বেড়েছে ওরা।
বৌদি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো।
আমি ইসলামভাইকে ইশারায় ডেকে নিচে নেমে এলাম।
নামতে নামতে অরিত্রকে একটা ফোন করলাম।
বলো দাদা। কাজ মিটেছে!
খুব টেনসনে আছিস মনে হচ্ছে।
থাকবো না। তুমি আমাকে ইনভিজিবল ম্যান করে রেখে দিয়েছো।
তুই আমার ট্রাম্প কার্ড।
হো হো করে হেসে ফেললো অরিত্র।
হাসলি যে।
তোমার কাছে কে ট্রম্প কার্ড কে টেক্কা বোঝা মুস্কিল।
তোকে যে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম করেছিস।
সব।
গুড। আচ্ছা তোর সঙ্গে যখন কথা বলবো তোর গলা যাতে এরা বুঝতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে পারবি।
কেনো পারবোনা মেয়েদের গলা বানিয়ে নেবো।
পারবি।
প্র্যাক্টিশ করে নিচ্ছি।
কর। নেক্সট টাইম তোকে রিং করলেই তুই মেয়েলি কন্ঠে কথা বলবি। আর না করলে বুঝবি পজিসন আমার অনুকূলে।
আচ্ছা।
তোকে কি নামে ডাকবো বল।
এটাও তোমাকে বলে দিতে হবে।
ওই মেয়েটার নামে।
এইতো তুমি চাটতে শুরু করে দিলে। তাই ডেকো।
কি যেনো নামটা ?
রাত্রি।
বাবা তুই কবে সকাল হবি বলতো।
তুমি যবে পারমিশন দেবে।
হাসলাম। রেডি থাকিস।
ঠিক আছে।
নিচে নেমে বাগানে এলাম। ওরা সবাই আমার কথা বলা শুনলো।
ওপরে ফাটা ফাটি শুরু হয়ে গেছে। বৌদি তাড়স্বরে চেঁচাচ্ছে। বুঝতে পারছি অনিমেষদা বিধানদার সঙ্গে একচোট হচ্ছে।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। বাসু একটা সিগারেট বার করে আমার হাতে দিলো।
ইসলামভাই।
বল।
দামিনী মাসি ডাক্তারদাদা কোথায় ?
নিচের ঘরে।
কি করছে।
কি আবার করবে বসে আছে। কার ভালো লাগে বলতো।
ঠিক।
অনাদির দিকে তাকালাম।
কাল সকালে কখন যাবি।
শেষ না দেখে যাবো না।
পাগলামো করিসনা। ওখানে অনেক কাজ পরে আছে।
তোকে চিন্তা করতে হবে না। তোর হিসাবের দরকার হিসাব নিবি।
অনাদির দিকে তাকিয়ে হেসেফেললাম।
হ্যাঁরে অনি ওই মুখফোলাটা ডাক্তার। চিকনা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
হ্যাঁ।
শালাকে একবার আমাদের ওখানে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে চলনা।
কেনো তুই আচ্ছা করে আড়ং ধোলাই দিবি।
খড়গাদায় ঢুকিয়ে আগুন জালিয়ে দেবো, খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
ছাগল।
ইসলামভাই হাসছে। কারসঙ্গে কথা বললি।
শুনলে তো ট্রাম্পকার্ড।
ওর পরে আর কজন আছে।
ওটাই লাস্ট লাইন।
ওকে কি মেয়ে সাজিয়েছিলি।
না।
তাহলে।
কাজ শেষ হোক, বলবো।
লক্ষ্মী কোথায় ?
ইসলামভাই-এর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম। তাহলেকি ? কেনো লক্ষ্মীর কি হয়েছে!
ও শুক্রবার বাড়ি গেছে, এখনো ফেরে নি।
মাসিকে জিজ্ঞাসা করো।
মাসি বাড়িতে লোক পাঠিয়েছিলো। ও বাড়িতে যায় নি।
রতন মাসিকে ডাক।
রতন খবর নিয়েছে। ও তোর কাছে আছে।
তাহলে সব যখন জেনে ফেলেছো তখন আমায় জিজ্ঞাসা করছো কেনো ?
আমি তোর কাছ থেকে কি করে খেলতে হয় শিখছি।
পারবে না। আমি মুহূর্তে মুহূর্তে প্ল্যান চেঞ্জ করি।
আমি বড়দিকে বলতে বাধ্য হয়েছি। তুই একমাত্র বড়দির কাছে ঠিক থাকিস।
আমার মা যে। মা কষ্ট পাবে এটা চোখে দেখতে পারবো না।
এবার বল লক্ষ্মী কোথায় আছে।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
কিরে ও স্বীকার করেছে। দামিনী মাসির গলা।

আমি পেছন ফিরে দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। মাসি মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আলো আঁধারি অন্ধকার বাগানের চারিদিকে। চাঁদের সুরভি ঝড়ে ঝড়ে পরছে। আমি এগিয়ে গিয়ে মাসিকে জড়িয়ে ধরলাম। মাসি মুখ তুলে তাকালো। চোখের পাতা ভিঁজে গেছে।
কিগো সবাই ওপরে গেলো. তুমি গেলে না।
মাসি মাথা নীচু করলো।
লক্ষ্মী আমার বোন। ওকে একটা ছোট্ট কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। ও করেছে। এখন খবর নাও দেখো ও চলে এসেছে।
মাসি আমার বুকে মাথা রাখলো।
ওর কিছু হয়নিতো।
তুমি কথা বলবে ওর সঙ্গে।
ওর ফোন পাচ্ছি না।
ঠিক আছে, তুমি কথা বলো।
আমি ফোনটা পকেট থেকে বার করে ডায়াল করলাম। সবাই আমার দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে কারুর কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না। যেন দম বন্ধ হয়ে আছে সবার। রিং হতেই ভয়েজ অন করলাম।
অনিদা তুমি কেমন আছো।
কেনোরে!
তোমার শরীর খারাপ শুনলাম।
না। আমি ভালো আছি।
কাজ শুরু হয়েছে।
হয়েছে। তুই কোথায়।
এইতো ঘরে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে একটু শুয়েছি।
কোনো অসুবিধে হয়নি।
একেবারে না। দাদাটা কি ভালো গো।
কোনো টর্চার করেনিতো।
না গো না। রাজার হালে ছিলাম। অনিদা।
কিরে।
মাসি আমার ওপর ভীষণ খেপে গেছে। বাড়িতে লোক পাঠিয়েছিলো। আমাকে আচ্ছা করে দেবে।
আমার কথা বলবি।
হ্যাঁ তুমিতো মাসির বাঁধা নাগর।
তাহলে। নে মাসির সঙ্গে কথা বল।
মাসির সঙ্গে! না না আমাকে শেষ করে ফেলবে মাসি।
আমিতো বলছি করবেনা।
শোন তোরা সবাই চলে এসেছিস।
হ্যাঁ।
কারুর কোনো অসুবিধে হয়নি।
একেবারে না। একটা ভুল হয়েগেছে।
কি ভুল করলি।
শালাকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়েদিলাম।
ঠিক আছে পরেরবার ভুল করিসনা। তোর মোবাইলটা চালু করে দে। এটা ভাইব্রেসন মুডে রেখেদে। ওকি তোর কাছাকাছি আছে।
না দাদা এখুনি বেরিয়ে গেলো।
ওর সঙ্গে আবার ইন্টু মিন্টু করিসনিতো ?
ধ্যাত তুমিযে কি না।
ঠিক আছে তুই মাসির সঙ্গে কথা বল।
মাসির হাতে ফোনটা দিয়ে আমি বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। ঢুকেই দেখি ডাক্তারদাদা টিভি দেখছে। নিউজ চ্যানেল। আমাকে দেখে মুচকি হাসলো।
তুমি একা একা।
খবর আসার প্রতীক্ষায়।
কেনো দেখছো তে।
বাসি খবর।
টাটকা পেতে পেতে রাত হবে। এত সহজে কেউ জমি ছেড়ে দেয়।
সেতো বুঝলাম। ওরা ভীষণ ঘোড়েল, মানবে কি।
না মনলে আমার পথ আমি দেখবো। ওদের পথ ওরা দেখে নেবে। তারপর ক্ষমতার লড়াই।
তুই পারবি। অন্যকেউ হলে মাঝপথে রণে ভঙ্গ দিতো।
আমি রান্না ঘরের দিকে পা বারালাম।

ওদিকে আবার কোথায় যাচ্ছিস ?
একটু চায়ের সন্ধানে।
থাকলে আমাকেও একটু দিস।
রান্না ঘরে ঢুকে ফ্লাক্সটা নাড়িয়ে দেখলাম। একটু আছে আমার আর ডাক্তারদাদার হয়ে যাবে। দুটো কাপ বার করলাম। ধুয়ে নিলাম।
কিরে তুই এখানে কি করছিস! কি চুরি করতে এসেছিস ?
একটু চা খাবো।
একবার বাইরের দিকটা উঁকি মেরেই আমাকে জাপ্টে ধরে গালে চকাত করে একটা চুমু খেলো।
এই দেখো দেখো।
কি হলোরে অনি। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
মিত্রা বুকে হাত দিয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে। চোখের ভাষা, এক থাপ্পর।
এই যে আপনার মামনি ঠেলা মারলো, আর একটু হলে কাপটা পড়ে যাচ্ছিলো।
মিত্রা আমার কোমরে রাম চিমটি মারলো। ভীষণ জ্বালা জ্বালা করছে।
আস্তে করে বললো, শয়তান।
তোকে ওপরে ডাকছে। জোরে শব্দ করে বললো।
ঝামেলা করিসনা চা ঢালছি।
ও আবার কি ঝামেলা করছেরে। ডাক্তারদাদা চেঁচালো।
নাগো মিথ্যে কথা বলছে।
তোর ইন্টারভিউ হলো।
আমার আর ইন্টারভিউ কিরে, বৌদি যা মিষ্টি মিষ্টি দিচ্ছে না। প্রবীর না কে তার মুখ শুকিয়ে একেবারে আমসত্ব।
থাপ্পর-টাপ্পর কিছু মারলি।
মারতে বলেছিলো। ছুঁতে ঘেন্না করলো।
ডাক্তারদাদাকে কাপটা দিয়ে আয়।
মিত্রা বেরিয়ে গেলো কাপ হাতে। আমি রান্না ঘরে দাঁড়িয়েই চায়ের কাপে চুমুক মারলাম।
কিগো মাসি তোমার চোখটা ছলছলে কেনো!
অনির কীর্তিকলাপে কার চোখ খটখটে শুকনো আছে বলতো। ডাক্তারদাদা বললো।
নিশ্চই বুবুন তোমায় কিছু বলেছে। দাঁড়াও ওর ঘাড় মটাকাচ্ছি গিয়ে। শেষর কথা গুলো চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
ওরে না না ও কিছু বলেনি।
তাহলে!
এমনি। কোথায় ও ?
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে চা গিলছে।
বুঝলাম মাসি রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি চা খেয়ে বেসিনে কাপটা ধুলাম।
কিরে তুই ধুচ্ছিস কেনো। আমি ধুয়ে রাখতাম।
সকাল থেকে অনেক কাজ করছো। এটুকু করলে তোমাদের উপকার হবে না।
আমি কাপটা রাখলাম। টাওয়েলে হাতটা মুছলাম। মিত্রা রান্নাঘরের মুখে দাঁড়িয়ে।
কথা হলো।
মাসি মুখ তুললো।
চুপ করে থাকলে হবে। হ্যাঁ না কিছু বলো।
মাসি মাথা নীচু করে ধরা গলায় বললো হ্যাঁ।
দেখলাম মিত্রার চোখের রং বদলে যাচ্ছে। ওর চোখে জিজ্ঞাসা।

দাও মোবাইলটা দাও। ওপরে ডাকছে। শেষটুকু সেরে আসি।
মাসির হাত তেকে মোবাইলটা নিয়ে গট গট করে বেরিয়ে এলাম। সিঁড়ির মুখ বাসুরা দাঁড়িয়ে। ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলো।
ওপরে এসে দেখলাম ঘরের দরজা খোলা। সবাই ঘরের বাইরে। সন্দেহ হলো। মিটিং শেষ! ভেতরে ঢুকলাম। চা পর্ব চলছে। দেখলাম রাজনাথবাবু এবং ডাক্তারের হাতেও চায়ের কাপ। রাজনাথ বাবু আমার দিকে কট কট করে তাকালো। মাথাটা আবার পূর্ব অবস্থায় ফিরে এলো।
কি প্রবীরদা সব দেখলেন ?
প্রবীরদা আমার দিকে তাকালেন।
অর্ক ডিটেলস দিয়েছিস।
হ্যাঁ অনিদা।
দ্বীপায়ন ম্যাসেজের প্রিন্ট আউট দিয়েছিস।
হ্যাঁ।
বলুন প্রবীরদা আমার কাছ থেকে আপনি আর কি জানতে চান।
তুই তাড়াহুড়ো করছিস কেনো। একটু বোস। অনিমেষদা বললো।
আমি একটা চেয়ার নিয়ে এসে বোসলাম।
বলো।
তোমরা এবার একটু বাইরে যাও। তুমিও যাও। বৌদি আর অর্কদের দিকে তাকিয়ে অনিমেষদা বললো।
ওরা সকলে বাইরে বেরিয়ে গেলো। আবার দরজা বন্ধ হলো।
আমি নিজের জায়গায় এসে বসলাম।
অনি তুই আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি। প্রবীরদা বললেন।
বলুন।
তুই রাজনাথকে ফাঁসাতে চাইছিস কেনো।
রাজনাথ বাবুকে ফাঁসাতে চাইনি। উনি নিজে থেকে ফেঁসেছেন।
কেনো বলছিস।
উনি ডাক্তারকে সাহায্য করতে চাইছেন।
তাহলে ডাক্তারের কাছ থেকে উনি সরে এলে তুই হাত সরিয়ে নিবি।
বাকি দোষ গুলো সোধরাতে পারবেন ?
বল শুনি।
ওনাকে জিজ্ঞাসা করুণ।
কি রাজনাথবাবু অনি কি বলছে ?
সব মিথ্যে।
তাহলে এতোক্ষণ ওরা যা দেখিয়েছে সব মিথ্যে।
মিথ্যে।
কাল বরাত জোরে বেঁচে গেছেন। সেলটা খালি ফাটেনি। ফলস হয়ে গেছে। কচি মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি। আর সাতটা টেররিস্ট লাগিয়ে দিলেন। এই গুলোকে শেষ করে দে। স্পন্সর ডাক্তার।
একবারে ফালতু কথা বলবে না।
এরা কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবেনা। আপনার একটা টমিকে কালকে তুলে নিয়ে গিয়ে সাঁটিয়ে দিয়েছি। আর চারটে ভেতরে আছে। আলিপুর জেলে খবর পাঠিয়েদিয়েছি। সেলের ছেলেরা পিটিয়ে মেরে দেবে। আমি লিখবো জেলের ভেতরে বন্দীদের নিজেদের মধ্যে মারা মারিতে এই চারজন মরে গেছে। কি বুঝলেন ? আপনার সঙ্গে কারা মন্ত্রীর সাপে নেউলে সম্পর্ক, ফোন করলে পাত্তা দেবেনা। পারবেন আটকাতে ? আপনিতো সাংসদ। অনেক ক্ষমতা।
রাজনাথ বাবুর মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে। কথা বলতে পারছেন না।
আপনাকে আর একটা কথা এদের সামনে বলে রাখি। ভালো করে শুনে নিন। আপনার নেক্সট টার্গেট অনিমেষদা। অনিমেষদার শরীরের একটা লোমে যদি হাত পরে আপনার মুজফ্ফরপুরের পাঁচ বউ সমেত বংশ লোপাট করে দেবো। আমি দাদার দাদা। আমার কোনো পিছু টান নেই।
কি ভুলভাল বকছিস তুই। অনিমেষদা বললেন।
কি বিধানদা প্রমাণ চান।
দিতে পারবি।
সঙ্গে সঙ্গে ফোনে অরিত্রকে ধরলাম।
হ্যাঁ দাদা। মেয়ের গলা।
সবাই শুনছে।
তোকে মেয়ের গলা আর করতে হবে না তুই চেলের গলা কর।
ঠিক আছে।
কালকে যে রকর্ডিংটা করেছিস শোনা।
ফোনে শোনালে শুনতে পাবে।
আমি ভয়েজ অন করে রেখেছি। শোন।
বলো।
খালি ওই জায়গাটুকু শোনাবি। পাঁচমিনিট আগে থেকে পাঁচমিনিট পর পর্যন্ত।
আচ্ছা।
অরিত্র রেকর্ডিং শোনাতে শুরু করলো। সবাই শুনছে। চোখ মুখ সবার লাল হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র প্রবীরদা ভাবলেশহীন মুখে বসে আছে। চার পাঁচটা মেয়ের গলা। লক্ষ্মীর গলা রাজনাথ আর ডাক্তারের গলা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
শেষ হলো।
এবার রেখেদে। ঘুমিয়ে পর।
আচ্ছা।

আমার পরিবর্তন আমি নিজে বুঝতে পারছি। ওদেরও চোখে মুখের পরিবর্তন হয়েছে। আমি ফোনটা পকেটে রেখে রাজনাথের দিকে তাকালাম
আপনার সামনে যিনি বসে আছেন, গত সপ্তাহে ওর পকেট থেকে বাই চেকে আশি কোটিটাকা বার করে নিয়েছি। এবার ইনকামট্যাক্সকে ওর পেছনে লাগিয়ে দিয়েছি। ওকে মারবো না, এমনিই স্যুইসাইড করবে। ওর আর চারটে বউ-এর কাছে খবর পাঠিয়ে দিয়েছি।
কি শরীরে পার্টস গুলো সব ঠিক ঠাক আছেতো। আমার ইঙ্গিত পূর্ণ কথা সবাই ধরতে পেরেছে।
ঘরের সবাই আমার কথায় থ।
কি প্রবীরদা আপনি আর কিছু শুনতে চান।
রাজনাথবাবু অনিমেষদাকে মারতে চায়!
সামনে বসে আছে প্রতিবাদ করতে বলুন। আমিতো সব মিথ্যে বলছি। শুনলেনতো নিজের কানে কেমন ষঢ়যন্ত্র করছি।
কি রাজনাথবাবু আপনি অনির কথার প্রতিবাদ করুণ।
আমি এরকম করতে পারিনা।
গলাটা মিথ্যে।
রাজনাথবাবু চুপ।
সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা বার করলাম। লক্ষ্মীর ছবিটা বারকরলাম।
প্রবীরদার কেছে গিয়ে বললাম দেখুনতো এই মেয়েটাকে আপনারা এতোক্ষণ ভিডিওতে দেখেছেন।
ওরা দেখাই নি।
তাহলে এতোক্ষণ কি করলেন।
রাজনাথ বাবুর কাছে এগিয়ে গেলাম।
দেখুনতো একে চেনেন।
না চিনি না।
বাঃ এর নথ (বেশ্যা বা বাইজী বাড়িতে একবারে অনকরা মেয়েদের প্রথম সেক্স) ভাঙলেন আর একে চেনেন না।
না চিনি না।
দামিনীকে চেনেন।
আমার সঙ্গে নোংরা মেয়েদের সম্পর্ক নেই।
দাদা তুমি বাইরে যাওতো।
না দাদা থাকুক তুই বল। অনিমেষদা বললো।
আমি টেবিলের ওপর থেকে খামটা নিলাম। গালা খুলে কাগজগুলো বার করলাম হ্যাঁ সিডিটা আছে। ল্যাপটপটা অন করে আড়াল করে সিডিটা ঢোকালাম। সত্যি মুখার্জী তোমায় হ্যাটস অফ। দারুণ কাজ। হেসে ফেললাম।
কি রাজনাথবাবু দেখবেন নাকি আপনার আর ডাক্তারের ফস্টি নস্টি। আপনিতো নোংরা মেয়েদের সঙ্গে আবার সম্পর্ক রাখেন না।
তোমাকে না আমি খুন করে দেবো।
সে সময় আপনাকে দেবোনা। কি প্রবীরদা কিছু বুঝছেন।
প্রবীরদার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।

আসুন একবার, অনি মিথ্যে কথা বলে কিনা দেখে যান। আর এই কাগজগুলো আপনাকে কালকে জেরক্স দেবো। এখানে সরকারী কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হতে চলেছে রাজনাথবাবুর এগেনস্টে তা আছে। অলরেডি একটা কপি পার্লামেন্ট এ্যাফেয়ারস কমিটিতে চলে গেছে। কপি টু স্পিকার এবং প্রাইমিনিস্টার। আর যাকে যাকে পাঠাবার পাঠানো হয়ে গেছে। কি রাজনাথবাবু এবার আপনার বক্তব্য বলুন।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
কি হলো। সব চুপ চাপ কেনো।
তুই সত্যি এগুলো করে দিয়েছিস। অনিমেষদা বললেন।
হ্যাঁ। আমি তোমার ওপর বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ তুমি একা ডিসিসন মেকার নয়। তাহলে একটা বিষয়কে নিয়ে এতোক্ষণ মিটিং করতে না।
বিধানবাবু এখুনি সাসপেনড করুন না হলে মুখ রক্ষা করা যাবেনা। ব্যাকডেটে কাজটা করতে হবে। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলেন।
তুই একা করেছিস। প্রবীরদা বললেন।
না। আমার টিম করেছে। আপনারা যা দেখলেন তাছাড়াও আরো অনেক কিছু আমার কাছে আছে, সেগুলো যথাযথ জায়গায় প্রডিউস করা হয়েগেছে।
ডাক্তারের দিকে তাকালাম।
শুধু শুধু আপনি রাজনাথ বাবুকে ফাঁসালেন। আপনি আমার পারফরমেন্সের ব্যাপারটা জানতেন। তবু কেনো ওনাকে বলতে গেলেন। রাজনাথবাবু আপনাকে বাঁচাতে পারলেন না। নিজে ডুবলেন। এবার আপনি টোডির আশ্রয়ে যাবেন এইতো। ওটা আরো বড় চেইন মিডিল ইস্ট পর্যন্ত। তবে টোডির পাত্তা আপনি পাবেন না।
প্রবীরদার দিকে তাকালাম।
প্রবীরদা আপনি আর কিছু জানতে চান।
তুইতো সব এন্ড করে দিয়েছিস।
বাধ্য হয়েছি। আপনি যেন তেন প্রকারে রাজনাথবাবুকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। বলতে পারেন প্রেসার ক্রিয়েট করে।
এটা বাজে কথা বললি। একটু চেঁচিয়ে।
অনিমেষদা প্রবীরদার দিকে তাকালেন।
গোপাল হালদারের সঙ্গ ত্যাগ করুণ। ও আপনার এ্যারাইভ্যাল পার্টির লিঙ্কম্যান।
আমি জানি।
তাহলে আপনি আপনার পার্টির গোপন খবর ওর মাধ্যমে বিরোধীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
কি বলতে চাস তুই।
আপনি এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো।
তুই বাজে কথা বলছিস দু’জন সিনিয়ার লিডারের সামনে। কান ভাঙাচ্ছিস। তুই কি আমাকে রাজনাথবাবু পেয়েছিস ?
ওটা আজ থেকে বিধানদা বুঝবেন। আমি পার্টি করিনা। আপনার পার্টির সদস্যপদও আমার নেই। তাহলে একানে মিটং হচ্ছে কেনো। আপনি রাজনাথবাবুর হাঁড়ির খবর জানেন না।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম লক্ষ্মী। ভয়েজ অন করলাম।
কিগো অনিদা তোমার কাজ হলো। আমার ঘুম পাচ্ছে।
তুই কালকে কার সঙ্গে রাত কাটিয়েছিস।
কেনোগো। দু’টোই এখনো তোমার কাছে আছে।
হ্যাঁ। আরো অনেকে আছে।
বাবা তাহলেতো ভদ্দরলোক হতে হবে গো।
হ্যাঁ। তোরাতো দিনের বেলা ভদ্দরলোক নোস। খালি রাত টুকু ভদ্দরলোক।
লক্ষ্মী খিল খিল করে হেসে ফেললো।
রাজনাথবাবু প্রবীরদা কট কট করে আমার দিকে তাকিয়ে।
কি রাজনাথবাবু গলাটা চিন্তে পারেন। আপনি একে মারার সময় পাবেন না।
ও মারবে কিগো, ওর ডানহাতটার দুটো কব্জি কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছি গো। তোমার কাছ থেকে শেখা বিদ্যে ভুল হয় কখনো।
ঘুমিয়ে পর।
আচ্ছাগো রাখি।
কি প্রবীরদা কিছু শুনলেন।
প্রবীরদার মাথা নীচু।
দেহাতী একটা মেয়ে। বাবার হাত ধরে সুদূর ইউপি থেকে রাজনাথ বাবুর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিলো। এখন সে রাজনাথবাবুর রাখেল। তাও আবার বিনে পয়সায়। আগে বাংলা বলতে পারতো না এখন খুব ভালো বাংলা বলতে পারে। আমরা এদের দয়া করার জন্য উথলে উঠি। সত্যিকি করি! প্রবীরদা ?
প্রবীরদার মুখটা ফ্যাকাশে।

ফোনটা বেজে উঠল দেখলাম মিঃ মুখার্জীর।
ধরলাম এবার আর ভয়েজ অন করলাম না।
বলুন।
ওয়ারেন্ট এসে গেছে। আপনার বাড়িতে আছে নাকি ?
হ্যাঁ। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে এ্যারেস্ট করা যাবেনা। আমি বাড়ির বাইরে বার করে দিচ্ছি। আপনি এ্যারেস্ট করতে পারেন।
ঠিক আছে।
কিরে কাকে এ্যারেস্ট করবে ? অনিমেষদা হকচকিয়ে গিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলেন।
রাজনাথবাবুকে।
তার মানে! তুই এসব কি করছিস ? অনিমেষদা বললো।
আমি বাড়ি থেকে বাইরে বার করে দিচ্ছি। তুমি বুঝে নাও। মিঃ মুখার্জী তার কাজ করেছেন, তোমরা পলিটিক্যালি ওকে রক্ষা করার চেষ্টা করো।
এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব নয়।
তুই কি ভাবলি তুই ছাড়া পেয়ে যাবি। প্রবীরদা চেঁচিয়ে উঠলো।
আপনার হাওলাও সাতদিনের মধ্যে রাজনাথবাবুর মতো করে ছেড়ে দেবো, দেখতে চান।
তুই কি আমাকে ধমকাচ্ছিস।
হাউজিং নিয়ে যে কেলোটা করে রেখেছেন, তার সমস্ত ডকুমেন্টস আমার কাছে। রাজনাথ আপনাকে ফাঁসাতে পারে তাই আপনি ভয় পাচ্ছেন। লড়বেন আমার সঙ্গে। ঠান্ডা গাড়ি চড়া দু’দিনে বন্ধ করে দেবো।
কি করছিস কি অনি। ও একজন মন্ত্রী। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।
পাঁচ বছরের জন্য। তারপর উনি মরে যাবেন ? তখন পাবলিকের মার দুনিয়ার বার এটা মনে রাখবে। আমার হাতে কলমটা রয়েছে। তোমার দেওয়া কলম। ভুলে যাবেনা।
তুই থাম। একটু শান্ত হ। বিধানদা বললেন।
আমি বিধানদার কথায় থামলাম না।
কালকে একটা আর্টিক্যাল লিখবো। আপনার গদীটা পাওয়ার জন্য যে রেগুলার বিধানদাকে খোঁচাচ্ছে। রেগুলার বিধানদার কান ভাড়ি করার চেষ্টা করছে, আপনার ঘর শত্রু। তাকে প্রশস্তি করে একটা ঝেড়ে লিখবো। আগামী শুক্রবার পার্টি মিটিংয়ে আপনার থোঁতা মুখটা ভোঁতা হয়ে যাবে।
তোর এতোবড়ো ক্ষমতা।
এখনো পুরো দেখেন নি, এবার দেখবেন। কতোটাকা মন্ত্রীত্ব করে পান। তিনকোটি টাকা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছেন।
অনিমেষদা উঠে এসে আমার মুখটা চেপে ধরলেন। তুই থাম।
থামো তুমি। তুমি এখনো একটা স্থায়ী ঠিকানা করতে পারলেনা। এখনো ভাড়াবাড়িতে থাকো। এরা তিনকোটি টাকা দিয়ে বাড়ি বানায়। টাকা পায় কোথায় ?
অনিমেষ ওকে বলতে দাও। এতদিন তুমি আমার কাছে সব চেপে গেছো। বিধানদা খুব গম্ভীর গলায় বললেন।
না বিধানবাবু এটা পার্টির ভেতরের কথা।
বৌদি দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন। চোখ দুটো গণগনে আগুনের কয়লার টুকরো।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ একটা দুধের শিশুর কাছে তোমরা নাস্তা নাবুদ হয়ে যাচ্ছ।
তুমি যাও আমি দেখছি।
থামো তুমি, কালকেই তুমি রিজাইন দেবে। বিধানদা পার্টির সিনিয়ার লিডার কে ? আপনি না প্রবীর ? প্রবীর কতদিন পার্টির মেম্বার হয়েছে।
আমার একটা ছোট্টভুলে.......।
দু’জনে রক্তজল করে পার্টির সংগঠন তৈরি করলেন। এরা কি মধু খাওয়ার জন্য পার্টি করতে এসেছে। কিরে অনুপ ? তুই রূপায়ণ ভেড়ুয়ার মতো বসে আছিস কেনো ? 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks