দেখি নাই ফিরে - (Part-78)

জানিস বুবুন তখন রেগুলার ড্রিঙ্ক করতাম। বেলেলাপণার চূড়ান্ত। যে কোন পুরুষকে জড়িয়ে বলরুমে ড্যান্স করতাম। ভাবতাম এ ভাবেই আমার জীবনটা শেষ করে দিতে হবে। কাগজের ব্যাপার তখন কিছু বুঝতাম না। বুঝেও বা লাভ কি। তখন আমার পারডে হাত খরচ পাঁচ হাজার টাকা। বাকি সব বাদ দে। তোর খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম। দু’তিনবার দাদাকে ডেকে পাঠালাম। জানলাম দাদা শুভঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শুভঙ্করবাবুর থ্রু দিয়ে তুই কাগজে এসেছিস। কিন্তু তুই তখন চরম বহেমিয়ান জীবনযাপন করছিস। তোকে কিছুতেই ধরতে পারছি না। প্রতিজ্ঞা করলাম তোকেও কাগজ থেকে সরিয়ে দেবো। সুনীতদা বারণ করলো। বললো অনির নিজস্ব একটা পাঠক আছে। ওকে সরালে আমাদের কাগজের ক্ষতি। তার চেয়ে বরং ওকে প্রসার করা হোক।
তবু আমি রিজিড থাকলাম। তুই তখন ভাইজ্যাক গেছিস। ওই পনেরো দিন তোর আর্টিকেল আমি রেগুলার পরেছি। তোর ধার আর ভারের কাছে আমি মাথা নত করেছি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম। আমাদের কাগজে তোর মতো সোর্স কারুর নেই। তুই এখনো সেরকম একরোখা। স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড। একমাত্র অমিতাভদা ছাড়া তুই কাউকে অফিসে পাত্তা দিসনা। যেরকম তোকে কলেজে দেখেছি। ড. রায় ছাড়া কাউকে পাত্তা দিতিস না। বুবুন জেয়ার ডেভিল। বুবুনের যে গুণটা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিলো।
তোর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকলাম। তখন বাবার ছবির কাছে বসে প্রতিদিন ড্রিঙ্ক করতাম, আর বলতাম বাবা আমাকে পথ দেখাও, বুবুনকে আমার জীবনে ফিরিয়ে নেবো কিনা। বাবা কোনোদিন না বলে নি।
তুই ফিরে এলি। প্রথম রিটার্ন পেলাম তোর কাছ থেকে। তুই আমার ডাকে সারা দিলি না। তুই সুনীতদাকে এক কথায় উড়িয়ে দিলি। সবাই মেনে নিলো, তুই খালি বললি তুই ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসবি। বুঝলাম সব ঠিক আছে। লোহা লোহাকে কাটতে পারবে। মনকে শায় দিলাম অন্ততঃ একটা লোক আমার পাসে দাঁড়াতে পারে। তোকে জড়িয়ে ধরলাম। সেখানেও শয়তানটা সব বুঝতে পারলো। তখন দুটো পথ বেছে নিলাম যে কোনো মূল্যে তোকে আমায় ফেরত পেতে হবে। তাতে যা হয় হোক। ওকে বললাম বুবুনকে আমার চাই। ওকে আমি কাগজের শেয়ার হোল্ডার করবো। তখন শয়তানটা বারাসতের একটা বিশাল প্রপার্টি আমার কাছ থেকে লিখিয়ে নিলো। ওটা দামানিদের প্রপার্টি ছিলো।
দুই তোমাকে ডিভোর্স দিতে হবে। দ্বিতীয়টা ও মেনে নিলো না। বরং কাগজের নামে লোন নিয়ে, ও আর মল সব টাকা আত্মসাৎ করে নিলো। ইসলামভাইকে সেই সময় আমি দেখি। ইসলামভাই তখন ওদের অপারেটর।
টোডি।
ওদের একটা গ্রুপ আছে। টোডিও বড় ব্যবসায়ী। আমাকে ওরা টোপ হিসাবে ব্যাবহার করলো। প্রথমে বুঝে উঠতে পারি নি। পরে যখন বুঝলাম, তখন সব হাতের বাইরে। দেহটার আর কিছু নেই বুঝলি।
মিত্রা থামলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে।
তোর মনটা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার কথা শুনতে শুনতে।
একটুও না।
তুইতো আজ একটুও রেগে যাচ্ছিস না। তোর চোখের রং একটুও বদলে যাচ্ছে না।
তুই বল, আমি শুনছি।
আর কি শুনবি, সবই তো তুই জানিস।
বড়মা, আজকের বিয়ে।
মিত্রা আমার কোল থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমার জেদ বুবুন।
তোর জেদ!
হ্যাঁ।
তোর ডাকে যেদিন প্রথম শয়তানটাকে নিয়ে দাদার বাড়িতে গেলাম সেদিন বড়মাকে দেখে জ্যেঠিমনির কথা মনে পরে গেলো। যিনি আমাকে ন’মাস দশদিন গর্ভে ধারন করেছিলেন। একজন স্নেহময়ী মা। বিশ্বাস কর সেদিন থেকে প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাবটা মন থেকে আস্তে আস্তে উবে গেলো। আমি তোর আত্মশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। ধীরে ধীরে নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়তে শুরু করলাম। নতুন জীবন দেখালি তুই। তুই কিরকম মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে আকাশে উড়িস। তোর ওখানে গিয়ে তোর প্রতি সকলের ভালোবাসা আমাকে পাগল করে দিলো। আমার প্রতি তোর ভালোবাসা যে তখনো অটুট, সেটা বুঝতে পেরে নিজে পাগল হয়ে গেলাম। তোর সমস্ত কথা মেনে নিতে শুরু করলাম।
মিত্রা একটু থামলো।

 

বার বার তোর খোঁজ নিয়েছি। তুই সেই শয়তানটার মতো মুখোশ ধারী কিনা। প্রত্যেক বার তোর কাছে হেরে গেছি। তুই দেশ থেকে ফিরে এসে পাগলের মতো হয়ে গেলি। আমি সেই সময় শয়তানটার কাছে বার বার গেছি। সুনীতদাকে বলেছি তোমরা এটা কি করছো। ওরা তোকে মারবার জন্য উঠে পরে লেগেছে। তারপর যখন শুনলো তুই ওদের থেকেও ইসলামভাই-এর খুব কাছের লোক, তখন ওরা গুটিয়ে গেলো। সেই সময় আমি স্বার্থপরের মতো একটা চাল চাললাম। বললাম আমি অনিকে সামলাতে পারি, যদি তুমি আমাকে ডিভোর্স দাও। গিভ এন্ড টেক পলিসি।
এক কথায় রাজি হয়েগেলো। সময় নষ্ট করিনি। নিজের পরিচিত উকিল ঠিক করে ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স নিলাম। কাগজ ওর হাতে দিলাম না। আমার কাছে রাখলাম। আমি তখন মুক্ত বিহঙ্গ। তোকে গ্রহণ করা খালি সময়ের অপেক্ষা। নিজের আনন্দটুকু তোর সঙ্গে ভাগ করবো তার কোনো উপায় নেই। তোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বার বার বড়মার কাছে ছুটেগেছি, কোনো দিশা পাই নি। ভেবেছি বড়মা তোকে তার নিজের বাড়িতে রেখেছে। বিশ্বাস কর সেই সময় ওই ঠিকানা ধরে বড়মার বসিরহাটের বাড়িতেও একদিন গেছি। যদি তুই ওখানে থাকিস। ব্যার্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছি।
মিত্রা হাঁফাচ্ছে।
তখন তো জানতাম না। তুই বড়মার সম্বন্ধে কিছুই জানিস না। হঠাৎ একদিন অফিসে আবিষ্কার করলাম, যাদের ভয়ে আমি সিঁটিয়ে থাকতাম, তার সব কেঁদো বাঘ হয়ে গেছে। দিনরাত আমাকে তেল দিচ্ছে। আমি কোনো কাজে অনড় থাকলে ভয় দেখাচ্ছে তোকে নিয়ে। তখন আমার মনের পরিস্থিতি কি তোকে বোঝাতে পারবো না। যাকে আমি খড়কুটোর মতো ধরে বাঁচতে চাইলাম সেও আমাকে বুঝলো না। তোর ওপর তখন আমার ভীষণ রাগ। তারপর সেইদিন এলো। একদিনে তুই সব ওলট পালট করে দিলি। কি আনন্দ হচ্ছিলো। সেই আনন্দটুকু তোর সঙ্গে শেয়ার করবো ভেবেছিলাম। তুই কারুর ডাকে সারা দিলি না। চলে গেলি।
সেইদিন দুপুরে ও ডেকে পাঠালো। ও আর মল চূড়ান্ত অপমান করলো। এক কথায় বলতে গেলে আমাকে শকুন দিয়ে ঠুকরে খাইয়ে দেবে। মনকে বোঝালাম, ওরা ভয় পেয়েছে। তাই এই সব কথা বলছে। নরমে গরমে আমার কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্প পেপারে সই করাতে চাইলো পেয়ারলেস ইনে বসে। আমি করলাম না। তখন আর জীবনের পরোয়া করি না। বেশি কি করতে পারে মেরে দেবে। সে ওরা পারবে না। তবু মনে ভয়। চলে গেলাম ক্লাবে বেহেড মাতাল হোলাম।
হেসে ফেললাম।
হাসলি যে।
তারপরই তো থাপ্পর।
মিত্রা ঝট করে উঠে বসে আমার গালে চুমু খেলো।
তুই বিশ্বাস কর তখন যে আমার কি হয়েছিলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম। ও মাথা নীচু করে নিলো।

এরপর তোকে ছেড়ে আর থাকতে ভালো লাগেনি। ওই চার সপ্তাহ বড়মা ছোটমা আমার জীবনটাকে নতুন রং-এ রাঙিয়ে দিলো। সঙ্গে তুই। তোর দায়িত্ব কর্তব্য বোধ আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, আমার বাবা তোকে কতটা চিনেছিলেন।
মনে মনে ঠিক করলাম বাবার সঙ্গে বড়মার বিয়ে হলে বড়মা আমার মা হতো। আমার কাছে বড়মা মা। বহুবার বড়মা তোর কাছে কনফেস করতে চেয়েছে, তুই পাত্তা দিস নি। তুই যেনো নতুন পৃথিবী গড়তে এসেছিস। দুর দাড় করে এগিয়ে যাচ্ছিস। আমি বড়মা ছোটমা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতাম। তোর মন বুঝে কথা বলতাম। কখনো বড়মা আমাকে পাঠাতো তোর কাছে তোর মন বুঝতে, কখনো ছোটমাকে পাঠাতো শেষে নিজে আসতো। আস্তে আস্তে দেখলাম প্রত্যেকেই তোকে কেন্দ্র করে আশ্রয় পেতে চাইছে। আমি শুধু একা নয়। ভারি মজা লাগলো। অফিসে খোঁজ খবর নিলেই দেখি সকলে ওরে বাবা বলে দশহাত পিছিয়ে যাচ্ছে। যারা একসময় ছেঁড়া নেকড়ার মতো আমাকে একটা ডাস্টবিনে ফেলে রাখতো তারা মর্যাদা দিচ্ছে। বুঝলাম আমার বুবুন সফল। ও অন্যায় কাজ করছে না।
মিত্রা থামলো।
আমি সম্মোহনের মতো ওর কথা শুনে যাচ্ছি। ও আপন মনে সব বমি করছে। যেনো অনেক জমানো ব্যাথা বেদনা কি করে গান হলো জানিনা।
কিরে, কি ভাবছিস ? তোর মিত্রা কবিতার মতো নষ্ট মেয়ে ?
আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। ও চোখ বন্ধ করে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে কোনো সেক্সের গন্ধ নেই, সেখান ভালোবাসার চরমতম স্পর্শ। আমি ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুললাম। মিত্রা তাকালো।
আমাকে একটু জলের বোতলটা দিবি।
হাত বাড়িয়ে ওকে জলের বোতল দিলাম। ও ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলো। তারপর আবার আমার কোলে মাথা রাখলো।
জানিস বুবুন তোর কোলে শুয়ে আছি, কি শান্তি।
আমি ওর মাথায় বাঁহাতটা রাখলাম। ও আমার ডান হাতটা জাপ্টে ধরে বুকের কাছে টেনে নিলো।
পীরবাবার থানের মাটি তুই যেদিন আমার মাথায় লাগালি, সেদিন আমি দুটো জিনিস চেয়েছিলাম পীরবাবার কাছে। একটা তোর সন্তান আমি গর্ভে ধারণ করে মা হবো। দুই বড়মার মাথার সিঁদুর ঘটা করে অনুষ্ঠান করে আমার সিঁথি রাঙাবো। ওই সিঁদুর আমার বাবার হাতে দেওয়া। আজ বাবা নেই বড়মা আছেন। বড়মা সেই অর্থে আমার মা। বাবার সঙ্গে বড়মা থাকলে আমি বড়মার গর্ভেই আশ্রয় পেতাম।
মিত্রা উঠে বসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
আমি জানতাম তুই একদিন না একদিন আমাকে রেজিস্ট্রী করবি। না হলে এতো বড়ো প্রপার্টি তুই ঠিক ভাবে সামলাতে পারবি না। তবে সেটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটবে বুঝতে পারি নি। প্রথমে ভেবেছিলাম তুই বুঝতে পেরেছিস আমি মা হতে যাচ্ছি। তাই বিয়ে করা জরুরি। একটা সামাজিক স্বীকৃতি আমাকে দেওয়া দরকার। তারপর তোর মনের কথা বুঝতে পারলাম।
জেদ করে আমি এই অনুষ্ঠান করলাম। তাও আমার বাড়িতে। কেনো জানিষ ? আমার বাবা মা দুজনেই আজ এখানে উপস্থিত। আমার মা তোকে বরণ করে গাড়ি থেকে নামিয়েছেন। আমার মা আমাকে ধরে নিয়ে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়েছেন। মা বিয়ের সিঁদুর কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে কুনকেতে লাগিয়ে দিয়েছেন, যেটা তুই আমার সিঁথিতে দিয়েছিস। বাবা ওপর থেকে সব দেখেছেন। তার বিয়ে করা স্ত্রী তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছে।
মিত্রার গলাটা ধরে গেলো। কথা বন্ধ হয়ে গেলো। আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। বেশ বুঝতে পারছি ওর বুকের লাব ডুব শব্দটা ঘন হয়ে এক তালে বেজে চলেছে।

এরপরও তুই বলবি ম্যান ইজ মেকার অফ হিজ ওউন ফেট। মিত্রার গলাটা বুঁজে গেলো, কথা বলতে পারলো না।
মিত্রা কিছুক্ষণ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো। আমি ওর মাথায় হাত বোলাচ্ছি।
জানিস বুবুন আমি যে বেনারসীটা পরে আছি এই বেনারসীটা পরে বড়মা বাড়ি ছেড়ে বিয়ের রাতে চলে এসেছিলো। আজ আমার শরীরে যা দেখছিস সব বড়মার। ব্লাউজের হাতাগুলো বড়মা নিজের হাতে শেলাই করে দিয়েছে।
আমার ভেতরাটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মুখ মন্ডলে তার প্রতিক্রিয়া হয়তো কিছুটা পরেছে, তবু যতোটা সম্ভব ভেতরে ভেতরে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে চলেছি।
আজ আমি যা চেয়েছি, যেমন ভাবে চেয়েছি, তাই পেয়েছি। আমার জীবনের চরমতম সুখের দিন। যেদিন প্রথম আমার শরীরটা তোর হাতে তুলে দিয়েছিলাম সেদিনের থেকেও। আজকের দিনটার সঙ্গে শুধুমাত্র একটা দিনের মিল আমি খুঁজে পাই।
কোন দিনটা। আমার গলার স্বর অস্পষ্ট।
যেদিন পীরবাবার থান থেকে ফিরে এসে সেই চাঁদনী রাতে তুই আমাকে তোর জীবনটা একটু দিলি।
আমি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। কাঁদলাম না। তবে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো।
এমা, মিত্রার কষ্টে তুই কেঁদে ফেললি, দেখ আমি একটুও কাঁদছি না। আমি তোর মতো শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি।
মিত্রা ডানহাতটা দিয়ে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিলো। আমার ঠোঁট স্পর্শ করলো।
কাঁদিসনা বুবুন। তোর মিত্রাকে কেউ আর কোনোদিন কেরে নিতে পারবে না। তোর মিত্রা তোরই থাকবে। যে আসছে দেখিস সে তোর থেকে কোনো অংশে কম যাবে না। জ্যোতিষদাদা বলেছে। তোর বুবুন যেখানে থামবে সেখান থেকে সে শুরু করবে। আমি যে নদী বুবুন। কতো নোংরা আমার শরীরে। কিন্তু দেখ আমি কতো পবিত্র জিনিষ গর্ভে ধারণ করেছি। কজনের ভাগ্যে এটা ঘটে। তোর কোলে মাথা রেখে আমি নিজেকে নিজে উজার করে দিচ্ছি। এটাওতো আমার একটা পাওয়া। বলতে পারিস বড়ো পাওয়া।
মিত্রা থামলো।
আমার কোলে মাথা রেখে ও শুয়ে আছে। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। বাইরে আলো ফুটে উঠেছে। সারারাত ঘুম হলো না। দু’জনে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি। মিত্রার সব কথা শুনলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু মেলাতে পারছি না। সব কেমন জটলা পেকে যাচ্ছে। কোথায় যেনো একটা সূক্ষ্ম ফাঁক থেকে যাচ্ছে। নয় মিত্রা সব গুছিয়ে বলতে পারলো না। নয় ও ইচ্ছে করে কিছু একটা গোপন করে গেলো। তবে এই মুহূর্তে ও নিজে কিছু গোপন করেনি বলেই মনে হচ্ছে। ও ঠিক গুছিয়ে বলতে পারলো না। আমাকে ওর বাবার দিনলিপিটা পরতে হবে। আরো কিছু উদ্ধার করা যাবে তার থেকে।
কিরে আবার কোথায় ডুব মারিল।

আঁ, না কোথাও না।
দেখছি তো। আমি যে তোর কোলে শুয়ে আছি সেটাই ভুলে গেছিস।
হাসলাম।
ভাবছিস মিত্রা কতোটা স্বার্থপর।
না।
বুবুন আমার ওপর তোর একটুও রাগ হচ্ছে না।
একটুও না।
তুই এখান থেকে বলছিস।
মিত্রা আমার বুকে হাত দিলো।
হ্যাঁ।
তুই আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলি না।
কি বিষয়ে বল।
তোকে এতো কথা বললাম, তুইতো কিছু বললি না।
এখনো সময় আসে নি। হ্যাঁরে বড়মা জানে।
কি ব্যাপারে বল।
তোর বাবার সঙ্গে বড়মার বিয়ে হয়েছিলো।
না।
ওই ঘরে যে ফটোটা আছে বড়মা দেখে নি ?
না। ওই ঘরের চাবি আমার কাছে আছে। একমাত্র তুইই ঢুকেছিলি।
কেউ দেখতেও চায়নি!
চেয়েছে, অন্য ফটো দেখিয়েছি।
সেটা কার।
দাদুর কম বয়সের একটা ছবি।
হাসলাম।
হাসলি কেনো।
কতদিন গোপন করবি।
আমি বড়মাকে মুখ ফুটে কোনোদিন বলতে পারবো না।
তোর তো মা। মায়ের কাছে লজ্জা কিসের।
যদি কিছু মনে করে।
করলে করবে। তোর বাবা কিছু কিছু অন্যায় করেছে। এটা তুই স্বীকার করিস।
করি।
তা সত্বেও তুই তোর বাবাকে ফ্রেন্ড ফিলোজাফার গাইড বলছিস।
হ্যাঁ।
বড়মা অন্যায় করেছে, তাকে তুই মা বলে স্বীকার করেছিস।
হ্যাঁ।
তাহলে তাকে জানাতে অসুবিধা কোথায়। কিছুটাতো তার মন সংশোধন হবে।
এরকম ভাবে তো কখনো ভাবিনি বুবুন!
মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে উম উম উম করে গোটা পাঁচেক চুমু খেলো। সত্যি তুই কি সহজভাবে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলি। এই জন্য তুই আমার বুবুন।
তা বলে এই নয় যে আজকেই তুই গিয়ে বলে দিবি।
না তা বলবো না। তবে কি জানিষ বড়মা মনে হয় কিছু একটা আঁচ করেছে।
কি করে বুঝলি।
এই বেনারসীটা আমি জোর করে বড়মার কাছে দেখতে চেয়েছি, বলেছি তোমার ছেলেকে বিয়ে করলে এই বেনারসী পরেই বিয়ে করবো, না হলে করবো না। নিজে পছন্দ করে আমার জন্য বেনারসী কিনেছে, আমি সঙ্গে ছিলাম, তবু আমি বলেছি আজ পরবো না। ওটা আমি রবিবার পরবো। তোর সমস্ত কাপর জামা বড়মাকে পছন্দ করতে বলেছি। যেগুলো তুই আজ পরেছিস। আর রবিবারেরটা ছোটমা পছন্দ করেছে। একটাও আমি পছন্দ করিনি। সমস্ত ব্যাপারটা আমি ছেড়ে দিয়েছি দুজনের ওপর। দামিনী মাসি ইসলামভাই তোর জন্য পছন্দ করে জিনিষ কিনেছে। সকাল থেকে তুই যে দুটো পাজামা পাঞ্জাবী পরেছিস। একটা দামিনী মাসির একটা ইসলামভাই-এর। তাতেই যেনো মনে হলো বড়মা কিছু একটা আঁচ করেছে।
আচ্ছা ডাক্তারদাদা তোকে সম্প্রদান করলো, কেনো ?

সেটা বড়মার ইচ্ছে অনুযায়ী।
কিভাবে।
ডাক্তারদাদা আমার জীবন দিয়েছে। তাই।
ডাক্তারদাদা আপত্ত করেনি।
একটুও না। বরং বলেছে, বুঝলে বান্ধবী আমরা সব ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
হাসলাম।
তুই বুঝতে পেরেছিস।
মাথা দোলালাম।
জানিস বুবুন আমি কথাটা শুনে মনে রেখেছি, একটুও বুঝতে পারিনি।
কেনো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজতো একটা দেশের নাম।
দেশটা অনেক গুলো দ্বীপ নিয়ে তৈরি। ডাক্তারদাদা ইসলামভাই দামিনী মাসি বড়মা ছোটমা দাদা মল্লিকদা এক একটা দ্বীপ আমরা দুজনে সকলকে একত্রিত করেছি।
কি দারুণ কথা বলেছে ডাক্তারদাদা।
ডাক্তারদাদার জীবনবোধটা ভীষণ গভীর। আমার সঙ্গে কিছুটা মেলে।
ঠিক বলেছিস।
কেনো।
সেদিন বাড়ি ফিরে দেখলাম তোর ঘরের লাইট জ্বালা, কি ভীষণ আনন্দ হচ্ছিলো তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। আজ বুবুন আমার কথা রেখেছে। গাড়ি থেকে নেমে সবার আগে ছুটে আমি ওপরে চলে এলাম। তোকে সারপ্রাইজ দেবো। পা টিপে টিপে বারান্দা পার হয়ে তোর ঘরের সামনে এলাম। তুই একমনে ছবি আঁকছিস। আমি স্টান্ট হয়ে গেলাম। তুই ছবি আঁকতে পারিস আমি জানতামই না। পা টিপে টিপে তোর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তোর কোনো খেয়াল নেই। এক মনে ছবি আঁকছিস। আমি যে তোর পেছনে দাঁড়িয়ে আছি তুই বুঝতেও পারলি না। আবার সেই ভাবে নিচে নেমে এলাম। সবাইকে বললাম। ডাক্তারদাদা বললো ও সাধনা করছে, তোমরা ওকে বিরক্ত কোরো না।
আমি বললাম তোমরা দেখবে না। কি দারুন সব পেন্টিং করছে বুবুন।
ওরা সবাই এলো, নিস্তব্ধে দেখলো চলে গেলো। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। অনেকক্ষণ। ধৈর্য ধরতে পারলাম না। তোর সামনে গেলাম। তোর চোখদুটো তখন কি ভালো লাগছিলো। তুই আমাকে দেখছিস, তবু যেনো দেখছিস না।
হেসে ফেললাম।
মিত্রা আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো।
জানিস বুবুন আমি ঈশ্বরের কাছে মনে প্রাণে প্রার্থনা করছি, যে আসছে সে যেইই হোক আমার গুণ যেনো সে একটুও না পায়, তোর সব গুণগুলো সে যেনো পায়।
তাই ?
হুঁ।
কেনো তুই খারাপ।
ভালো বলি কি করে বল।
মন খারাপ করে না। জীবনটা সব সময় এক খাতে বইবে সেটা হয় কি করে। তোর বুবুনতো ত্রুটিহীন মানুষ নয়।
আমার থেকে অনেক গুণে ভালো।

তোর বুবুনেরও অনেক বেড পার্টনার থাকতে পারে। যদি কখনো জানতে পারিস কি করবি।
আমার বুবুনকে আমার কাছ থেকে কেউ কখনো কেরে নিতে পারবে না।
কে বলেছে তোর জ্যোতিষদাদা।
হুঁ।
ঘেঁচু।
তোর বুবুন কৃষ্ণ তার শতো গোপিণী।
তা থাক, তবু সে রাধার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলো।
ওরে বাবা খুব বুঝেছিস দেখছি।
আরো অনেক কিছু বুঝেছি তোকে এখন বলবো না।
আর একটা কি দেখাবি বললি, আমার ক্লু।
আজ থাক। আমার কথা শুনে তুই ক্লান্ত হয়ে পরেছিস। আর একদিন তোকে বলবো।
আমি ক্লান্ত হইনি, তুই বল।
জানিস আজ অবতার আর সাগির কনিষ্কর পা ধরে কি কান্না।
তোকে আমার ক্লু টা বলতে বললাম।
আজ ভালো লাগছে না। যেটা বলছি সেটা শোন না।
ঠিক আছে বল।
আমরা সবাই গেলাম। ইসলামভাই একটু ভড়কে গেছে। কনিষ্কর পা ধরে অবতার সাগির কাঁদে কেনো।
কি বলছিলো ওরা।
তুই ছট্টুকে এনকাউন্টার করিয়েছিস ওদেরকেও ছাড়বি না। কনিষ্ককে দেখলে তখন তুই হাসবি না কাঁদবি।
কেনো।
গম্ভীর হয়ে বললো। তোদের এখনো অনি বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি অনির জায়গায় থাকলে অনেক আগে মেরে দিতাম। সে কি কান্না। ঢেউ তুলে তুলে। রতন আবিদ হেসে গড়িয়ে পরে। তারপর কনিষ্ক দামিনীমাসির দিকে তাকিয়ে বললো। তুমি জানোনা মাসি, অনি এদের জন্য কি না করেছে। গুলি খেয়ে রাস্তায় পরে থেকেছে। খবর পেয়ে তুলে এনেছে। রাতে হাসপাতালে এ্যাডমিসন না করে অপারেসন থিয়েটরে নিয়ে গিয়ে ওদের গুলি বার করেছি আমি বটা। ওরা অনির বিরুদ্ধে স্কিম করে! ওদের জন্ম দিলো অনি। আর ওরা যদি গাদ্দারি করে, বেঁচে থাকবে। আমিতো সাক্ষী আছি। কে কি বললো বুঝতে যাবো না। ছাড় পা ছাড়। আজ অনির বিয়ে মাথায় রাখিস।
তখন ইসলামভাই বললো অনি সেই জন্য ওদের আনতে বলেছে।
দেখ অনি তোদের নেমন্তন্ন করেছে, নিশ্চই কথায় কথায় একদিন বলেছিলো আমার বিয়েতে তোদের নেমন্তন্ন করবো, আর তোরা স্কিম কর অনিকে মারার জন্য।
সবাই হাঁ করে কনিষ্কর কথা শুনছে। বটা দাঁড়িয়ে ছিলো। দুটোর হাত ধরে টেনে তুলে বললো যা ভেতরে চলে যা। রবিবার এসে অনির সঙ্গে দেখা করবি। না হলে এবার টেবিলে তুলে মেরে দেবো। অনি জানতেও পারবে না। তারপর মর্গে পচে যাবি।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি।
আচ্ছা বুবুন তুই এইসব করার সময় পেতিস কি করে।
পেতাম। সেই জন্য তুই খুঁজে পাস নি।
এক থাপ্পর। আমাকে কথাটা ঘুরিয়ে দিলি।
আমি হাসছি।
তোর সঙ্গে অর্ক ঝগড়া করবে।
কেনো।
রবিবার আসুক বুঝতে পারবি।
তুইতো জানিস বল।
এখন বলবো না।
দরজায় কড়ানাড়ার শব্দ পেলাম।
ধ্যুস কি সুন্দর গল্প করছিলাম।
কটা বাজে খেয়াল আছে।
সত্যিতো। তোর কোলে শুয়ে আছি। কিছুই বুঝতে পারিনি। বুবুন আমরা ঘুমোলাম না!
আমি হাসছি।
তুই কিরে, ভাবলাম তোর কাছে একটু আদর খাবো।
এতো খেয়েও মন ভরলো না।
ভরে, তুই বল।
যা দরজা খোল।

মিত্রা উঠে গিয়ে দরজা খুললো। ছোটমা। আমি তাড়াতাড়ি করে ফাইলটা গুছিয়ে রাখলাম। বুঝতে পারছি ছোটমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে কালকে কতটা আদর করেছি তার সন্ধান পেতে চাইছে। তাহলে খুনসুটি করবে।
কিরে! ও ওখানে বসে বসে কি করছে। তোরা সারারাত ঘুমোস নি।
মিত্রা সোজা সাপ্টা জবাবা দিলো, না।
কি করছিলি ড্যাবা ডেবীতে।
গল্প করছিলাম।
গল্প করতে করতে রাত কাবার!
হ্যাঁ।
কই দেখি চল।
ছোটমা ভেতরে এলো। চারিদিক অনুসন্ধিৎসু চোখে দেখলো।
আলমাড়ি খোলা! সামনে ফাইল! তুই মাটিতে থেবরে বসে আছিস, তোদের ব্যাপারটা কি বলতো ?
চা এনেছো।
আনা হচ্ছে।
ওটার এখন ভীষণ দরকার। বড়মা ফোন করেছিলো ?
করেছিলো।
কখন যেতে বলেছে।
কেনো।
ওখানে গিয়ে বাথরুমে যাবো।
কেনো এখানকার বাথরুম মনে ধরছে না। আগেতো অনেকবার ঢুকেছো।
দুজনে ঢোকা যাবে না।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
দাঁড়াতো।
ছোটোমা তেড়ে এলো কান ধরতে।
যতো বড় মুখ নয় ততবড় কথা।
ও ছোট করিস কি এই সাত সকালে।
বৌদি চায়ের পট কাপ-ডিশ ট্রে নিয়ে ঘরে এলো।
দেখো বৌদি দেখো, সারারাত না ঘুমিয়ে দুটোতে ফাইল পত্র দেখেছে। আবার বলে কিনা ও বাড়িতে গিয়ে বাথরুমে ঢুকবে।
বৌদি চায়ের ট্রেটা সেন্টার টেবিলে রাখলো। মিত্রার দিকে তাকালো। ভালো করে দেখে বললো, কিরে সত্যি তোরা ঘুমোসনি!
মিত্রার মুখ দেখে বুঝতে পারছো না।
আমি খিক করে হেসে ফেললাম।
বৌদি ছোটমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, সত্যি ছোট তুই পারিসও বটে।
বৌদি, তুমি কখন এলে।
আমি গেলাম কখন যে আসবো।
কেনো।
বৌ নিয়েতো ঘরে ঢুকলি বৌদির খোঁজ রেখেছিস।
আচ্ছা বাবা অন্যায় হয়েছে। সুরো কই।
ও বাড়িতে, তিনবার ফোন হয়ে গেছে। অনিদা কখন যাবে।
আমার খোঁজ খবর নেওয়ার ওই একটা লোকই আছে বুঝলে।
দেবোনা এক থাপ্পর, দাঁড়া দিদিকে খবরটা দিচ্ছি। ছোটমা বললো।

বৌদি সকাল বেলা এত অত্যাচার ঠিক হচ্ছে না।
সত্যি তোরা ঘুমোসনি!
চায়ে চুমুক দিলাম।
আঃ।
আর আয়েশ করতে হবে না। বৌটাকে ডেকে দাও। নিজে খেলে খালি হবে।
নিয়ে নিক।
দেখেছো ছেলের কথা। ছোটমা বললো।
জানো বৌদি একটা কাজ করছিলাম, দেখলাম সাতটা বেজে গেছে। তোমরা আরো সকালে ডাকতে পারতে।
হাসছি। মিত্রাও হাসছে।
ছোটমা।
বলুন।
হাসলাম। কিছু খাবর জুটবে।
তোকে দেখলে গা পিত্তি জলে যাচ্ছে। নিজেও ঘুমোস নি, মেয়েটাকেও ঘুমোতে দিস নি। দাঁতে দাঁত চিপে বললো।
দেখলি মিত্রা, কে দোষ করলো, কার ঘারে দোষ পরলো।
ছোটমা ঘর থেকে গট গট করে বেরিয়ে গেলো। বৌদি সোফায় বসলো, কাপে চা ঢেলে নিলো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
আয়। বোস এখানে।
মিত্রা গিয়ে বৌদির পাশে বসলো।
ঘুমোসনি কেনো।
আমি হাসছি। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর বৌদির দিকে তাকালো।
ও ঘুমোতে দেয় নি। বললো চল গল্প করি।
সারারাত!
বিশ্বাস করো বুঝতে পারি নি।
নিশ্চই কোনো জরুরি বিষয় নিয়ে গল্প হচ্ছিলো বল।
কতোদিন ওর সঙ্গে দেখা হয়নি বলোতো। অনেক জমে ছিলো।
আজ সব শেষ করে দিলি।
কিছুটা, এখনো বাকি আছে।
ছোটমা ঘরে ঢুকলো।
আমি হেসে বলে ফেললাম প্রমপ্ট এ্যাকসন।
তা বলবে না।
ফোনটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।
বলো।
কিরে তুই নাকি ঘুমোস নি। বড়মার গলা।
তুমি চলে এসো দেখে যাও।
ছোট বললো।
চা চেয়েছি, তাই।
ছোটমা আমার কান ধরে মুলে দিলো, আমি উ করে উঠলাম।
কি হলো রে।
ছোটমা কান মুলে দিলো।
বেশ করেছে।
কখন বাড়ি যাবো বলোতো।
কেনো থাকতে ভালো লাগছে না।
বল না বল, ওখানে গিয়ে বাথরুমে ঢুকবো।
আমি হাসছি।
তুমি ছোটমার সঙ্গে কথা বলো।
দে।
আমি ছোটমার হাতে ফোনটা চালান করে দিলাম।
বৌদি টিনারা কোথায় ?
সব ও বাড়িতে চলে গেছে।
ওরা যে থাকবে বলেছিলো।
বৌদি হাসলো।
কিরে, তুই যাবি না আমি সেরে নেবো।
তুই যা।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ফাইলটা আলমাড়িতে তুলে রাখলাম। পাঞ্জাবীটা খুলে বিছানায় ছুঁরে ফেলে দিলাম। বাথরুমের দিকে এগোলাম।

কিরে তুই কাপর পড়ে যাবি। মিত্রা বললো।
কেনো কি হয়েছে ?
দাঁড়া আমি তোকে টাওয়েল দিচ্ছি।
দোখছো বৌদি, কান্ড দেখো।
কান্ড দেখবে কি রে। গর্ধভ কোথাকার। ছোটমা বললো।
তখন থেকে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছ। দাঁড়াও ওখানে গিয়ে মল্লিকদাকে রিপোর্ট করছি।
ছোটমা ফিক করে হেসে ফেললো।


বাড়িতে যখন পৌঁছলাম সাড়ে দশটা বাজে। ছগনলাল ঢুকতে দেখেই হেসে ফেললো।
দেখলাম বাড়ি ভর্তি লোক। সবাই হাজির এই সময়। আমি মিত্রা গাড়িতে, সবাই নেমে এলো। বড়মা বরণ করলো। দু’জনকে আমার ঘরে নিয়ে গেলো। হৈ হৈ রৈ রৈ বেশ মজা লাগছিলো। উপকরণের কোনো অভাব নেই। যেনো মোচ্ছব বসে গেছে। কাজ কর্ম শেষে খাওয়া দাওয়া হলো। আর এক চোট হৈ হৈ। মিত্রা বললো আমি বড়মার ঘরে একটু নাক ডেকে ঘুমবো। আমি ওপরে চলে এলাম। দেবাকে বললাম আয় তোদের সঙ্গে কিছু কথা সেরে নেই। বড়মা বললো তুই একটু ঘুমিয়ে নে। আমি বললাম না। পরে ঘুমোচ্ছি।
ওপরে উঠে এলাম। চারিদিকে একটা বিয়ে বিয়ে গন্ধ। ঘুম নেই কিন্তু শরীরে ক্লান্তিও সেই ভাবে নেই। আমি এসে জানলার ধারে দাঁড়ালাম। একটা সিগারেট খেলাম। ছোট ছোট চকমকি লাইট দিয়ে বাড়ি সাজানো চলছে। ইসলামভাই-এর পাগলামো। মনে মনে হাসলাম। মিত্রার সব কথা হুড়মুড় করে মনের মধ্যে এসে ভিড় করছে। মানুষের মন। সত্যি কি থেকে কি হয়ে গেলো। ভাবতেই পারছিনা। মিত্রার লাইফটা বারে বারে ঘুরে ফিরে আমার চোখের সামনে ভেসে আসছে। সত্যি কি ও এক সময়ে বুহু পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী ছিলো। ও নিজে মুখে স্বীকার করেছে। কেমন যেনো লাগছে। আমার মিত্রা যাকে আমি মনপ্রাণ দিয়ে ভালো বেসেছিলাম কই আমার মধ্যে তো কোনো ফাঁকি ছিলো না।
তাহলে মিত্রা ?
ও একটা মেয়ে। মেয়েদের অনেক বাধ্য বাধকতা থাকে। ও স্বীকার করে নিয়েছে। ওই সময় গা ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া ওর কোনো উপায় ছিলোনা। তাহলে আমি ওকে ভুল ভাববার চেষ্টা করছি কেনো ? আমি যদি ওর জায়গায় থাকতাম ? তাহলে আমিও হয়তো এর থেকে কিছু কম যেতাম না। যতোই হোক আমি একটা ছেলে। আমি এই পৃথিবীতে যেভাবে লড়াই করতে পারবো, একটা মেয়ের পক্ষে সে ভাবে লড়াই করা সম্ভব নয়। নিজের মনকে বোঝালাম মিত্রাকে ভুল ভাবা আমার কখনোই উচিত নয়। আমার একটা ব্যাপারে ওর কাছে সব সময় ঋণী থাকা উচিত। ও আমাকে নতুন দিশা দিয়েছে। আমি নতুন ভাবে বাঁচতে শিখেছি।
কিরে কি করছিস ওখানে দাঁড়িয়ে।
ফিরে দাঁড়ালাম।
আয়।
দেবারা পাঁচজন।
টিনা এগিয়ে এলো। ভ্রু নাচিয়ে বললো, অনিদা কাল রাতটা কেমন কাটালে।
টিনার মুখের দিকে তাকালাম। খুব একটা ভালো নয়।
কেনো!
টিনার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
তোমরা চলে এলে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
টিনা ফিক করে হেসে ফেললো।
এই জন্য।
হ্যাঁ। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks