দেখি নাই ফিরে - (Part-77)

তাহলে আমি ভুল নয় এটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বল।
নিশ্চই।
তোকে আমি আজ কয়েকটা কথা বলবো কয়েকটা জিনিষ দেখাবো। তুই আমাকে ভুল বুঝবি না।
কেনো একথা বলছিস।
হয়তো তুই ভাবতে পারিস মিত্রা নিজেরটা গুছিয়ে নিয়ে এইগুলো দেখাচ্ছে। আগে দেখালে হয়তো এই কাজটা করতাম না।
কেনো!
তোকে হারাবর ভয়ে এইগুলো এতদিন গোপন করেছি, বলতে পারিস এই দিক থেকে আমি স্বার্থপর।
তুই স্বর্থপর হলে, আমি তোর পাশে থাকতাম না।
ঠিক বলছিস।
হ্যাঁ।
তোকে দেখালে তুই তোর মিত্রাকে ভুল বুঝবি না।
একটুও না।
আমাকে ছেড়ে চলে যাবি না।
একবারে না।
তোকে দাখাবো। তুই জ্যোতিষ দাদাকে দেখলি।
কোথায়! কখন এসেছিলো।
হি হি হি বাবাঃ চারঘন্টা ধরে মন দিয়ে তার মন্ত্র উচ্চারণ করে আমাকে অতো যত্নো নিয়ে গ্রহণ করলি, আর বলছিস চিনতে পারলাম না।
ওইটা তোর জ্যোতিষদাদা।
হ্যাঁ।
তুই ছাড়া আমরা এখন সবাই ওনার নেওটা।
দেখে মনে হলো ভদ্রলোকের একটু আধটু পড়াশুনো আছে।
একটু আধটু নয় অগাধ। যাওয়ার সময় কি বললো জানিষ।
কি।
আজকের দিন না হলে উনি তোর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেন।
কেনো বার খাওয়াচ্ছিস, আমি কি অবতার ? সুপার ম্যান ?
তা জানি না। তবে উনি বললেন, ও পৃথিবীতে এসেছে মানুষের উপকার করতে। কিন্তু নিজে বড় দুঃখী। শাস্ত্রকে যদি মানি তন্ত্রসাধনাকে যদি বিশ্বাস করি, তাহলে তুই ঈশ্বরের অংশ বিশেষ। তোর বংশের কেউ না কেউ সন্ন্যাসী ছিলেন। তোদের বংশের মূল জিনটা তুই বহন করছিস।
আমার বংশই নেই। তায় আবার সন্ন্যাস। সাতপুরুষের কাউকে চিনি না। এমনকি নিজের রক্তের সম্পর্কের কাউকে আজও পর্যন্ত চোখে দেখি নি।
তুইতো কাল মায়ের ফটোটা নিয়ে কাঁদছিলি। বার বার জানতে চেয়েছিস তোর শেকড়।
তুই জানলি কি করে।
আমি যে তোর অস্ফুট চাওয়া গুলো লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছি।
তুই শুনেছিস!
মিত্রা আমার চোখে চোখ রাখলো। আমি তোর শেকড়ের সন্ধান দেবো।
তুই! কোথা থেকে পেলি।
চুরি করেছি।
কোথা থেকে।
তোর মায়ের আলমাড়ি থেকে।
তাই।
হ্যাঁ।
কি করে বুঝলি।
তোর পথে হেঁটে। প্রথমে ভীষণ ভয় ভয় করছিলো। তারপর হাঁটতে আরম্ভ করলাম। কি মজা। নেশা ধরে যায়।
আমি মিত্রাকে আরো জোড়ে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।
তোর সঙ্গে কতো কথা আছে। আমার পেট ফুলে যাচ্ছে তোকে না বলতে পেরে।
কেনো আমিতো তোর কাছেই আছি।
দুদিন ট্রাই করলাম, তুই ঘুমিয়ে পরলি। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো তোকে জাগাতে।
ডাকতে পারতিস।
মন থেকে সায় দেয়নি, বিশ্বাস কর।
দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে খাটে এসে বসলাম।
জানিস মিত্রা আজ বার বার এই ঘরটার কথা মনে পরে যাচ্ছে।
কেনো।
তুই আমাকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠালি। তারপর রাতে এই ঘরে ওই সোফাটায় দুজনে বসলাম। তুই আমার কাঁধে মাথা রাখলি। ওই দিন পর্যন্ত আমার জীবনটা একটা খাদে বইছিলো। আট আটটা বছর ধরে সযত্নে তাকে লালিত পালিত করেছি। এক লহোমায় তুই সব ওলট পালট করে দিলি।
তুইতো আমাকে তোর সব কথা এখনো বলিসনি।
কে বললো তোকে।
কনিষ্ক আজ মাঠে বসে কিছু কথা বললো।

আমি বালিশটা টেনে নিয়ে বিছানায় শুলাম। মিত্রা আমার বুকের ওপর উঠে এলো।
কনিষ্ক আর নীরু আমাকে কিছুটা চিনেছে। তবু আমি ওদের সময় দিতে পারি না। আমার দেখানো পথে ওরা এখনো হাঁটে। বাকি সব ধ্বজা ধরা।
কনিষ্কর কথা শুনে আজ চিকনা কেঁদে ফেললো।
সত্যিতো, চিকনা তখন ওরকম হাউ মাউ করে কাঁদলো কেনো বলতো।
তুই বল কি কথা শুনলে চিকনা কাঁদতে পারে। আরতো কেউ ওর মতো কাঁদলো না। মন খারাপ হয়েছিলো সকলের।
কি করে বলবো।
তুই তোর জীবনের একটা রাত জেলে কাটিয়েছিস।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, বোঝার চেষ্টা করলাম কনিষ্ক কতটা ওদের বলেছে।
কিরে তাকিয়ে আছিস কেনো। সাজিয়ে নিচ্ছিস কি ভাবে গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলবি।
হাসলাম। ছিলাম।
কই আগে বলিসনিতো।
বলে কি করবো। তোর মনের মধ্যে করুণার উদ্রেক জাগাবো। বলবো আমার এইসব কথা শুনে মিত্রা তুই আমাকে আরো ভালোবাস।
আমিতো সে কথা তোর মুখ থেকে শুনতে চাইনি।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটে, খালি স্ফেয়ারটা আলাদা।
কনিষ্কর কথা শুনে বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি ইসলামভাই পর্যন্ত চোখের জল ফেলেছে।
কনিষ্ক ভুল করেছে।
কনিষ্ক ভুল করেনি, কনিষ্ক ঠিক কথা বলেছে। মৈনাক যদি ওকে না খোঁচাতে তাহলে তোর এই কথা আমরা কোনোদিন জানতে পারতাম না। তুইতো মুখে কোনোদিন কোনো কথা বলিস না।
তোরা সবাই আমাকে দেবতা বানিয়ে দিচ্ছিস। কিন্তু আমি যে সাধারণ মানুষ। বলতে পারিস তোদের থেকে আমার জীবনধারা একটু আলাদা।
তোর কথা শুনে আমারও কান্না পেয়েছিলো। কিন্তু কাঁদিনি। মনটাকে শক্ত করেছি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি তোর এতো কষ্টের স্বপ্নগুলো সার্থক করবো।
হয়তো কিছুটা হবে, সব হবে না।
তখন মৈনাক হাঁসতে হাঁসতে কনিষ্ককে বললো, কনিষ্ক অনি সবার কিছুনা কিছুনা বার করে প্রেসটিজ গ্যামাকসিন করে দিচ্ছে। তুইতো ওকে আমাদের থেকে বেশি চিনিস। ওর একটা কিছু বলতো, একটু মজা করি।
কনিষ্ক বললো বললে সহ্য করতে পারবি।
আমিও তালে তাল দিলাম। বিশ্বাস কর পরে এরকম ঘটতে পারে বিশ্বাস করিনি।
সেদিন তুই কনিষ্ক দুজনে শেয়ালদায় পথ শিশুদের পড়িয়ে বেরোবার পর কনিষ্ক তোকে খেতে বলেছিলো।
হ্যাঁ।
তুই খাসনি। বলেছিলি পেট ভর্তি আছে। তারপর বলেছিলি। আমি একটু ব্যারাকপুর যাবো। কনিষ্ককে তুই এড়িয়ে গেছিলি। কনিষ্ক তোর সেই অবস্থা বুঝতে পেরে তোকে ফলো করেছিলো। তুই জানিস।
না।
তারপর স্টেশনের কলে পেট ভর্তি করে জল খেয়ে ট্রেনে বসেছিলি।
হ্যাঁ।
তুই জানিস সে রাতে কনিষ্কও কিছু খায় নি।
পরে জেনেছি। যখন হোস্টেলে গেলাম।
তারপর কি হলো বল।
কেনো কনিষ্ক বলে নি।
কনিষ্ক ওই সময় থাকবে কি করে তোর সঙ্গে। ও তো চলে এসেছিলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। সত্যি কথা বলবো না। মিথ্যে কথা বলবো।
একবারে বানিয়ে বানিয়ে বলবি না। আমি সব জেনেছি। আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই সত্যি না মিথ্যে।
কি হবে শুনে। বুবুনের প্রতি তোর করুণা একটু বেরে যাবে।
তবু তুই নিজেকে ভাঙবি না।

অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো জেলখানায় যারা থাকে তাদের নিয়ে একটা লেখা লিখবো। বানিয়ে বানিয়েতো লিখতে পারি না। যদি একবার জেল খানায় ঢোকার চান্স পাই। যদি একটু থাকার সুযোগ হয়, তাহলে ওই জীবনটা দেখতে পাবো। বেশ ভালো করে লিখতে পারবো। রাত এগারোটা চল্লিশের ব্যারাকপুর লোকালে উঠে বসলাম। উইদাউট টিকিট। ব্যারাকপুর এলাম। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ট্রেনেই পরে থাকলাম। তারপর একটু বেশিরাতে স্টেশনে নেমে ঘোরাঘুরি করছিলাম। আমাকে সন্দেহভাজন বলে জিআরপি ধরলো। যাক বাঁচা গেলো আমার মনস্কামনা পূর্ণ হলো। ফার্স্ট ট্রেনে আমাকে শিয়ালদহ জিআরপিতে ট্রান্সফার করা হলো। সেই সময় মনে হয় বটা আমাকে দেখেছিলো। ও নাইট করে বাড়ি ফিরছিলো। ওই সবাইকে খবরটা দেয়। তারপর ওরা আমাকে ছাড়ালো। আমার লেখাটা আর হলো না।
তুই মিথ্যে কথা বললি।
বিশ্বাস কর।
বিশ্বাস করছি না। সার্জারীর হেড ডঃ আর এল দাস স্টেশন ম্যানেজারকে ফোন করেছিলো। তিনি সব কথা বলেন ওনাকে। তারপর তোকে ওরা ছাড়ে।
হবে হয়তো।
তারপর বল।
তারপর আর কি, কিছু না।
তুই এখনো মিত্রাকে সব কথা মন খুলে বলতে সংকোচ বোধ করছিস!
বিশ্বাস কর তখন কি বলেছিলাম মনে নেই।
আমাকে তোর এই কথাটা বিশ্বাস করতে হবে! তুই নীরুকে বলিস নি, কেনো তোরা আমাকে ছাড়ালি। অন্ততঃ পক্ষে পনোরোটা দিন থাকা খাওয়ার কোনো অভাব হতো না। পনেরো দিনের মধ্যে জেলে একটু বদমাইশি করতাম তাহলে ওটা এক্সটেনসন হয়ে মাস দেড়েক হয়ে যেতো।
আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখে চুপ করে গেলাম।
তোর তখন থাকার জায়গা ছিলো না। হোস্টেলে পয়সা দিতে পারিসনি বলে তোর জিনিষপত্র আটকে রেখে তোকে বের করে দিয়েছিলো। দামিনী মাসি বললো। মনে পরছে না। তবে আমি প্রথমবার ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম দিন পনেরো পর দেখা করো দেখি তোমায় থাকার জায়গা দিতে পারি কিনা। তাই তুই এই পথ বেছে নিয়েছিলি!
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে, ওর চোখ ছল ছল।
বল এই কথা শুনে যদি চিকনা কেঁদে ফেলে সে কি খুব অন্যায় করেছে। না সে তোকে অন্ধের মতো ভালোবাসে, এটা তার অমার্জনীয় অপরাধ।
মিত্রার গলাটা ধরে এলো। কিচুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার শুরু করলো।
তুই ভাবলেশহীন মুখ করে তাকিয়ে থাকিস না। একটু কথা বল। আমারকি একটুও শুনতে ইচ্ছে করে না। কেনো আমি তোর বন্ধুদের মুখে তোর কথা শুনবো।
একটু থেমে চোখটা নতুন বেনরসীর খোঁট দিয়ে মুছে...



তুই ভালোপাহাড়ে যাস। সাঁওতালদের সঙ্গে থাকিস। ওদের ওখানে স্কুল করেছিস। কনিষ্কদের নিয়ে গিয়ে ওখানে ওদের চিকিৎসা করাস। বিনা পয়সায় ওষুধ নিয়ে যাস। সব ওদের পাওয়া স্যামপেল কপি। বাকি কিনে নিয়ে যাস। কই আমাকে একবারও তো বলিস নি। খালি বুবুন ফুরুত ফুরুত করে কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যায়। কোথায় যায় কেউ জানে না। তুই এখন কম যাস। তবু মাসে একবার তোর যাওয়া চাই। ওরা এখন পালা করে কেউ না কেউ প্রতি সপ্তাহে যায়। ওদের মধ্যে তুই ইনজেক্ট করে দিয়েছিস। কনিষ্ক বলেছে সে জীবনে কোনোদিন বিয়ে করবে না। বটা কনিষ্কের পথের পথিক। বাকিগুলো প্রেম করে। মোবাইলটা হয়ে তোর কাজের অনেক অসুবিধে হয়েছে তাইনা।
মিত্রা এক নিঃশ্বাসে কতা বলে গেলো। মনে হয় একটু হাঁফিয়ে গেছে। ওর বুকের ওঠা নামা লক্ষ্য করলাম।
আমি চুপ করে আছি।
তোর ওখানের মৌসুমি মাসির বাড়ি ভালোপাহাড়ে। অনাদির কাছ থেকে জানলাম সেই সাঁওতাল ভদ্রমহিলা তোর বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে থাকে। কই আমি দুবার গেলাম আমাকে মৌসুমি মাসির সঙ্গে আলাপ করালি না।
দুবারই মৌসুমি মাসি ছিলো না।
মিথ্যে কথা বলছিস।
বিশ্বাস কর। তুই চিকনাকে জিজ্ঞাসা কর।
তোর গুণীন কাকা অশ্বিনী জ্যেঠু এটা তুই কখনো বলেছিস। কিন্তু সেই ভদ্রলোক কতবার এসেছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কই একবারও তো ঘুণাক্ষরে বলিস নি।
আমি চুপ।
তুই অশ্বিনী জ্যেঠুকে বারন করে দিয়েছিলি।
না। গুণীন কাকা তোকে দেখতে চেয়েছিলো, আমি বলেছিলাম পরিচয় দিতে পারবে না।
এটা বারন করা হলো না ?
মিত্রার অবস্তা দেখে আমি হাসবো না কাঁদবো ঠিক করে উঠতে পারছি না। কি পাগলী মেয়েরে বাবা।
কাকাকেও তুই বারন করে দিয়েছিলি। কিসের ভয় তোর। তোর বিদ্যে আমরা শিখে নেবো। কাকা আসুক রবিবার, আমি এবার বুঝে নেবো।
হেসে ফেললাম। তুই বৃথা উত্তেজিত হচ্ছিস।
কষ্টটা তোর শরীরের বসন। বুঝলি মিত্রা ছেঁড়া জামাকপরে আমি বেশ কমফর্ট বোধ করি। মনে হয় অনি এবার সত্যি অনি। ভেক না ধরলে ভিক্ষা পাওয়া যায় না। তাই না।
মিত্রা এমন বাবে ভেংচি কেটে বললো আমি হেসে ফেললাম, বাধ্য হয়ে মিত্রার মুখটা আমার বুকে চেপে ধরলাম।
ছাড় ছাড়। আজ আটমাস ধরে তোর কথা শুনেগেছি। কোনো উত্তর দিই নি। আমাকে কিছু বলতে দে। আমারও তো বলার থাকতে পারে।
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় একপাক ঘুরে গেলাম। মিত্রা এখন আমার বুকের নীচে। আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। প্রথমে ও কিছুতেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে দেবে না। দুবার কামরেও দিলো। আমি তবু ওর ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরালাম না। বেশ কিছুক্ষণ পর ও সারাদিলো। ওর হাত কথা বলতে শুরু করলো। বুঝলাম মাথার আগুন, বুকের জ্বালা এবার কিছুটা কমেছে। আমি ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুললাম। মিত্রা হাসলো।
এবার শান্তি।
আমি হাসছি।
মিত্রা ঠান্ডা হলো তাই তো।
তবু আমি হাসছি।

হাসিদিয়ে তুই বিশ্বজয় করতে পারবি না। তুই আমাকে যে জীবন দিয়েছিস, সে তিলে তিলে আমার শরীরের সুধা পান করে বেড়ে উঠছে। মনে রাখবি তোমাকে বধিবে যে গকুলে বাড়িছে সে।
সত্যি।
আমি আবার ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম।
কই এখবরটা আমাকে দিসনিতো।
তুই সব কথা বলিস। কেনো তোকে বলতে যাবো।
বাবাঃ গালটা কিরকম ফুলে গেছে মেনি বিড়ালের মতো, আর কে জানে।
ছোটমা।
কি করে।
তুই সেদিনকে বললি না, তোর পেটটা কেমন শক্ত শক্ত লাগছে।
হ্যাঁ।
আমার কেমন সন্দেহ হলো। ছেলেদের চোখ। তার ওপর তোর চোখ। ছোটমাকে চুপি চুপি বললাম। একটা কি বেরিয়েছে এখন। সকালের ইউরিন একফোঁটা ওখানে দিলেই নেগেটিভ না পজিটিভ বোঝা যায়। দেখলাম পজিটিভ।
কই আমাকে বলিসনিতো এতো সব।
তুই তোর বউ-এর খোঁজ রাখিস। তুইতো নিজের তালে থাকিস। খালি মিত্রা টাকার কথায় কেনো বললে, অভিমান হয়, টাকার জোগাড় করতে ছুটিস। আমিতো তোর আপন নয়, শত্রু।
এই আবার সেন্টিমেন্টের শুরশুরি দিচ্ছিস। বড়মা যানে।
ছোটমা হয়তো বলেছে।
ডাক্তারদাদা।
ছোটমা বলেছে কাজটা মিটুক তারপর বলবে।
জিজ্ঞাসা করেনি, কবে হলো।
বলেছি। পীরবাবার ওখানে যেদিন গেছিলাম মনে হয় সেইদিন।
কী বললো ছোটমা।
মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলো।
আমি আবার মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। কতোক্ষণ ছিলাম জানি না। আজ কিন্তু মিত্রার সঙ্গে একটুও সেক্স করতে ইচ্ছে করছে না। বার বার ওকে আদর করতে ইচ্ছে করছে। ঠোঁট তুললাম। মিত্রা আমার মুখের দিকে হাঁসি হাঁসি মুখ করে তাকিয়ে।
বুবুন।
বল।
তোর ভালো লাগছে।
মাথা দোলালাম।
আমাদের ভালোবাসার নতুন প্রাণ।
আমি মিত্রার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। দুজনের মুখেই কোনো কথা সড়ছে না। যা কিছু কথা চোখে চোখে। আমি মিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কপালের চন্দন এখনো ঘেঁটে যায় নি। যেনো আরো উজ্জ্বল লাগছে। ডাগর চোখ দুটো এক দৃষ্টে আমাকে গিলে খাচ্ছে।
কি দেখাবি বললি। দেখালিনা।
আজ থাক।
না। এই আনন্দের দিন আমি নিজের শেকড়টা জানতে চাই। অন্ততঃ পক্ষে আগামী ভবিষ্যতকে তো বলতে পারবো তোমাদের মা এই দিনে আমাকে আমার শেকড়টা খুঁজে বার করতে সাহায্য করেছিলো।
সত্যি তুই দেখবি।
হ্যাঁ।
একটুও দুঃখ পাবি না।
পৃথিবীতে অনেক দুঃখ পেয়েছি। আর দুঃখকে ভয় পাই না।
তুই ভাগ্য বিশ্বাস করিস।

আমি মনে করি মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজে রচনা করে। বলতে পারিস মেন ইজ মেকার অফ হিজ ওউন ফেট।
সব কিছু শোনার পর, সব কিছু দেখার পর, তুই যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাস।
যেতেই পারি না।
ঠিক বলছিস।
বলছিতো। যদিও বা যাই তা ক্ষণিকের, মনে রাখবি আমি কোনো কাজ শেষ করতে গেছি।
যদি তোর সেই কাজ শেষ না হয়, তুই যদি আর না ফিরিস।
কেনো তোর জ্যোতিষ এটাও বলে দিয়েছে।
জ্যোতিষদা তোর সব কথা মিলিয়ে দিয়েছে।
যতো সব গেঁজাখুরি।
আমিতো তোর বিশ্বাসে কোনো দিন আঘাত করিনি।
আমি তোর বিশ্বাসে আঘাত করছি না, তবে তার একটা রিজিন থাকবে।
রিজিন তৈরি হতে কতোক্ষণ।
আচ্ছা আমি......না থাক আজকে বলবো না।
বলনা বল। আমি তোর কাছ থেকে শক্ত হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছি। আজকের পর থেকে দেখবি আমার চোখে তুই জল পাবি না।
পাগলামো করিস না। আমি তোকে কাঁদতে বারণ করিনি। ফরনাথিং কাঁদতে বারণ করেছি।
তুইতো তোর মতো করে বলবি।
ঠিক আছে আর বলবো না। এবার দেখা।
এখনো বলছি দেখার পর মন খারাপ করতে পারবি না।
একটুও মন খারাপ করবো না।
দুজনে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। মিত্রা ফ্রিজ থেকে জলের বোতল বার করলো। দুজনে খেলাম। ওর ড্রেসিন টেবিলের ড্রয়ারের চোরাকুঠরি থেকে আলমাড়ির চাবি বার করলো।
কিরে তুই চাবি এখানে রাখিস।
কেউ জানতেও পারবে না। এমন একটা খোপ। বাবা বানিয়েছিলো।
মিত্রা আলমাড়ি খুললো।
বুবুন তোকে একটু ধরতে হবে।
কি ধরবো।
এই যে থাকটা দেখছিস এটাকে তুলে ধরতে হবে এর ভেতরে ফাইলটা আছে সেটা বার করবো।
তুই একা হলে কি করতিস।
জামা কাপর সব টেনে নামাতাম, তারপর বার করতাম।
এটা কি ঢাকনার মতো।
হ্যাঁ সবকটা তাকই সেরকম তারপর ডবল লক।
আমি ঢাকনাটা তুলে ধরলাম। বেদম ভারি। মিত্রা লক খুলে ভেতর থেকে ফাইল বার করলো।
জানিস বুবুন বাবা মৃত্যুর আগে একটা চিরকুটে লিখে এই ফাইলটার হদিস দিয়েছিলো। খুঁজে পাওয়ার পর আমাকে একা ঘরে পেয়ে বলেছিলো। ওই ফাইলটায় আমার সব আছে। আর ব্যাঙ্কের লকারের চাবির হদিস দিয়েছিলো। ব্যাঙ্কের লকারটা এই ছয়বছরে দেখা হয়ে ওঠেনি।
ব্যাঙ্কে গেছিলি।
গেছিলাম।
লকার দেখিস নি।
না।
কেনো।
যদি শয়তানটা হদিস পেয়ে যায়।
ইস। আবার ওই নামটা করলি।
এখন আমার কোনো ভয় নেই। তুই আছিস। আমার গার্জেন।
আমি মিত্রার নাকটা ধরে নাড়িয়ে দিলাম। দু’জনে পাশাপাশি বসে।
জানিস বুবুন আজ আমার প্রথম বিয়ে হলো।
কেনো।
আগেতো কখনো বিয়ে হয় নি। কেউ সিঁদুরও পরিয়ে দেয়নি। ভয় দেখিয়ে বিয়ে হয়। খুব সাধ ছিলো কনে সেজে সেজেগুজে বিয়ে করবো। তুই সেই সাধটা পূরন করলি।
আমিতো তোকে পীরবাবার থানের মাটি তোর কপালে লাগিয়ে দিয়েছিলাম।
আমি ভীষণ লোভী ওইটুকুতে আমার কিছু হয়নি। তাই আরো চেয়েছিলাম। যেভাবে একটা মেয়ে একটা পুরুষের হাতে ধরা দিতে চায় ঠিক সেই ভাবে।
ইস আগে যদি জানতাম।
আমি ভেবেছিলাম তুই আমার এতো সব খোঁজ নিয়েছিস, এটাও জানতিস।
মিত্রা ফাইল খুললো, অনেকগুলো দলিল। তার মধ্যে থেকে একটা খাম বের করে নিয়ে এলো। একটা ছবি আমার হাতে দিলো। ফটোটা লাল হয়ে গেছে। আমি কাছে নিয়ে এসে ভালো করে দেখলাম। বছর বাইশ তেইশ বয়স হবে মেয়েটার। ছবিটা স্টুডিওতে তোলা। বড়মার মুখশ্রীর সঙ্গে কিছুটা মিল আছে। আমি অনেকক্ষণ ফটোটা লক্ষ করলাম। মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

চিনতে পারছিস।
মনে হচ্ছে বড়মাকে যদি এই বয়সে নিয়ে যাই, তাহলে ছবিটার সঙ্গে বড়মার মুখশ্রী মিলে যাবে।
মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে ঠোঁটে চুমু খেলো।
দ্যাটস রাইট বুবুন তুই একেবারে ঠিক।
তাই।
মিত্রা চোখের ভাষায় আর ঘাড় দুলিয়ে, হ্যাঁ বললো।
তুই পেলি কোথায়।
প্রশ্ন করবি না। খালি দেখে যা। আমি তোর মতো হতে পারছি কিনা বল।
এবার এই ছবিটা দেখ।
বিবাহ বাসরে তোলা ছবি। সবে বিয়ে হয়েছে। একজন মিত্রার বাবা আর একজন সেই ভদ্রমহিলা মানে বড়মা। তারমানে বড়মার সঙ্গে মিত্রার বাবার বিয়ে হয়েছিলো। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা আমার চোখের দিকে জুল জুল করে চেয়ে আছে। আমি কি বলি।
তোর বাবার সঙ্গে বড়মার বিয়ে হয়েছিলো!
ইয়েস ইয়েস বুবুন তুই একেবারে ঠিক কথা বলেছিস।
মিত্রার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো।
তুই প্রমাণ পেলি কি করে।
তোকে সব বলবো বুবুন, তুইযে আমার সব, তোকে বলতে না পারলে আমি শান্তিতে মরতেও পারবো না।
এই দেখ একটা পোস্ট কার্ড।
হাতে নিয়ে পরলাম। ফর্মাল চিঠি কন্যাদায় গ্রস্ত পিতা আর একজনের পুত্রের সঙ্গে তার মেয়ের বিবাহ দিতে চান। নিচে বসিরহাটের ঠিকানা। আর মিত্রাদের বাড়ির ঠিকানা।
পরলি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
জানিস বাবা এরপর বড়মাকে দেখতে যান, পছন্দ হয়, বিবাহ হয়। বাবা তার দিনলিপিতে এটা লিখে গেছে। তোকে পরাবো। তারপরের ঘটনা তুইতো জানিস। বড়মা পীর সাহেবের থানে নিজে মুখে সব স্বীকার করেছে। তোকে নতুন করে কি বলবো। বাবা আর কোনোদিন বিবাহ করেন নি।
আমি চমকে মিত্রার দিকে তাকালাম।
ভাবছিস আমি পৃথিবীর আলো দেখলাম কি করে।
আমি এক দৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি তোকে ফাঁকি দিতে চাইনি বুবুন, তুই বিশ্বাস কর। আমি ভীষণ লোভী।
আমি মিত্রাকে কাছে টেনে এনে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
ক্রমশঃ

মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রেখেছে। চোখ বন্ধ। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আমি মিত্রার গালে আস্তে করে থাপ্পর মারলাম। মিত্রা চোখ খুললো।
কিরে, শরীর খারাপ লাগছে।
মিত্রা অস্ফুট কিছু বলতে চাইলো, বলতে পারলো না।
আমি জলের বোতলটা কাছে টেনে নিয়ে মিত্রার চোখে জল দিলাম। আমার পরনের কাপরটা দিয়ে মুছিয়ে দিলাম।
কষ্ট হচ্ছে।
মিত্রা আমর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
যে কথা ছ’বছর ধরে নিজের বুকের মধ্যে বয়ে বেরিয়েছি,আজ তোকে বললাম। তুই ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি জানে না।
একটুক্ষণ থেমে।
বুকের ভেতরটা ভীষণ ব্যাথা করছে, জানিস বুবুন।
হুকটা একটু খোল আমি হাত বুলিয়ে দিই।
না থাক, একটু সহ্য করতে শিখি। তুইতো আমার থেকে আরও কষ্ট পেয়েছিস।
আমি মিত্রার মুখটা বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
নারে বুবুন সত্যি। এখন তুই আছিস, আমার আর ভয় নেই। আমার আর কিছু হবে না, দেখিস।
আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু কি করবো, প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু কষ্ট আছে। যা সম্পূর্ণভাবে তার নিজস্ব। সেটা ভাগ করে নেওয়া যায় না। হয়তো অনুভব করা যায়। তার কষ্টের সমব্যাথী হওয়া যায়। কিন্তু শেয়ার করা যায় না।
জানিস বুবুন বড়মাযে দাদার সঙ্গে থাকেন, বাবা সেটা জানতেন।
উনি জানতেন! তা সত্বেও....
বাবার দিনলিপি তার প্রমাণ।
জানিস, বাবা মারা যাবার আগে আমার আর মার মধ্যে প্রপার্টি ভাগ করে দিলেন।
মিত্রা আমার ডানহাতটা ওর হাতে তুলে নিলো।
তখনি আমার একটা খটকা লেগেছিলো। কিন্তু কাউকে বলিনি। বাবা আমার বয়ফ্রেন্ড। বাবার কাছে আমি কোনো কথা কোনোদিন গোপন করিনি। সিনেমা হলে তোর হাত নিয়ে যেদিন বুকে রেখেছিলাম বাবাকে এসে অকপটে সব স্বীকার করেছি। বাবা হেসে বলেছিলেন ছেলেটাকে তুমি একবার আমাকে দেখাতে পারো। আমি মাথা দুলিয়ে বলেছিলাম পারবো। উনি বলেছিলেন কবে ? আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম, ও ভীষণ মুডি, আমার ইচ্ছের ওপর আসবে না। বাবা হেসেছিলেন। একটু মনে করে দেখ তারপর তোকে প্রথম আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেছিলাম।
সেই বছর স্বরস্বতী পূজোর দিন।
এইতো তোর মনে আছে।
সেইদিন বাবার আচার আচরণে তুই কিছু বুঝতে পেরেছিলি।
না। কাঁচা মন, তখন এতো সব ঘোর-প্যাঁচ বুঝতাম না। সত্যি কথা বলতে কি তখন আমার চোখে সব রঙ্গীন। গ্রাম থেকে একটা ছেলে শহরে এসেছে। কেরিয়ার তৈরি করতে হবে। কলেজে দাদা হতে হবে, একটা হামবড়ক্কি ভাব। মাঝে মাঝে সেই দিন গুলোর কথা মনে পরলে হাসি পায়।
বাবা তোকে দেখার পর, তোর সঙ্গে কথা বলার পর বলেছিলেন আমার অমত নেই।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো।

তুই একটু ভেবে দেখ, তখন আমাদের সেকেন্ড ইয়ার চলছে।
হ্যাঁ।
আমাদের ঘনিষ্ঠতা এরপর আরো বেড়েছে। তুই আমাদের বাড়ি এসেছিস কম, কিন্তু আমি তোর হোস্টেলে প্রায় গেছি।
ঠিক।
জানিস বুবুন বাবা মারা যাবার পর আমি নিজেকে নিজে আবিষ্কার করলাম, আমি কে? কলেজে পরা চলাকালীন আমি আমি জানতাম না কে আমার মা ? ছোটো থেকে জানতাম আমার মা আমার জন্মের পর আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। আমি জ্যেঠিমনির কাছেই মানুষ। জ্যেঠিমনি আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন।
মিত্রা!
হ্যাঁ। বুবুন তুই বিশ্বাস কর। আমি তোকে......
মিত্রার চোখ দুটো জলে টল টল করছে। আমি ঠোঁট দিয়ে তা মুছে দিলাম।
তুই আমার মা বলে যাকে আজ সকালে প্রণাম করলি, সে আমার মা নয়।
আমি মিত্রার চোখের দিকে স্থির চোখে তাকালাম। কি বলতে চায় মিত্রা ?
আমি বাবার ঔরস জাত জ্যেঠিমনির সন্তান। বাবার সঙ্গে জ্যেঠিমণির অবৈধ সম্পর্ক ছিলো।
আমি মিত্রার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।
একমাত্র বাবা আর জ্যেঠিমনি ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ জানতো না। আমি হওয়ার পর বাবা আইনত জ্যেঠিমনির কাছথেকে আমাকে দত্তক নিয়েছিলো।
মিত্রা থামলো।
তুই বিশ্বাস কর আমি এতোসব জেনেছি বাবার দিনলিপি পরে। বাবা ডে টু ডে ডিটেলসে সব লিখেছে। এমনকি জ্যেঠিমণির সঙ্গে কবে কবে সেক্স করেছে তাও।
জ্যেঠু।
জ্যেঠু আমার হওয়ার মাস তিনেক আগে মারা গেছেন। সেটা সুসাইড ছিল। কেনো ? তুই বুঝে নে।
তোর যে আর এক বোন ছিলো।
ওটা জ্যেঠুর।
তাহলে তোর মা বলে যাকে দেখেছি ?
উনি আমার বাবার সেক্স পার্টনার। বলতে পারিস ক্যাশ বাক্স। আমি যেমন ছিলাম শয়তানটার। বাবার সঙ্গে ওনার বয়সের ডিফারেন্স প্রায় কুড়ি পঁচিশ বছরের। ওনার সঙ্গে বাবার আলাপ ক্লাবে। পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে। বাবা কোনোদিন ওনাকে বিয়ে করেন নি। এই বাড়িটা কিনে উনি এখানে ওনাকে রেখেছিলেন।
কিন্তু আমিতো ওনাকে ও বাড়িতে দেখেছি।
দাদু খুব স্ট্রিকট প্রিনসিপালের লোক ছিলেন। দাদু যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন ওনার প্রবেশাধিকার ছিলো না। দাদু মারা যাবার পর উনি ওই বাড়িতে প্রবেশাধিকার পান।
তারপর।
এনার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর জ্যেঠিমনির সঙ্গে বাবার দূরত্ব বেড়েছে। জ্যেঠিমনি প্রথমে আমাকে দিতে চান নি। পরে দাদুর চাপে আর বাবার ব্ল্যাকমেলিংয়ে আমাকে দিতে বাধ্য হন। হাঁড়ি আলাদা হয়েছে। তুই ওপর থেকে কিছু বুঝতে পারিস নি।
তুই কাকে মা বলতিস।
জ্যেঠিমনিকে। ওনার কাছেই তো ছোটো থেকে মানুষ।
তাহলে এই মা।
কলেজ লাইফে এসে পেলাম।
তখন তুই কিছু বলিসনিতো।
একথা কাউকে বলা যায়। আমার বাবা বিয়ে করেছেন।
তাহলে তুই তোর বাবাকে ভালো লোক বলছিস।
বড়মার সঙ্গে ওই ব্যাপারটা ঘটে যাবার পর। বাবা মেন্টালি ডিসব্যালেন্সড হয়ে যান। তারপর জ্যেঠিমনির জন্য সুস্থ হন। বলতে পারিস তারপর থেকে জ্যেঠিমনি বাবা ক্লোজ হয়ে পরেন।
জ্যেঠু কি করতো।
পারিবারিক ব্যবসা কাগজ। তখন শেয়ার অত্যন্ত কম ছিলো। পাঁচ পার্সেন্ট।
তোর বাবা কি করতেন।
কাগজ দেখতেন। আর শেয়ারের কারবার। বলতে পারিস ব্রোকার। আমার তথাকথিত মার পরিবারেরও শেয়ারের ব্যবসা। বাবার প্রচুর উচ্চাকাঙ্খা ছিল। বাবা মার শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তিপায়। কাগজের ভাগটাওকিছুটা সেই পরিবারের।
মানে।
আমার মার পরিবার দামানি। ওরা অবাঙালি।
তারপর।
বাবা মার কাছ থেকে তার সম্পত্তি জোড় করে লিখিয়ে নেন। মানে কাগজের ভাগ। তারপর কাগজটাকে আস্তে আস্তে কুক্ষিগত করেন। আমাদের পরিবারের ফাইভ পার্সেন্ট শেয়ারও নিয়ে নেন। বাড়িটা জ্যেঠিমনিকে ছেড়ে দেন।
টোটাল প্রপার্টি।
হ্যাঁ ফাইভ পার্সেন্টের যা মূল্য।

বাবা জানতেন বড়মা অমিতাভদার স্ত্রী হিসাবে অমিতাভদার কাছে থাকেন। দাদা দামানিদের খুব প্রিয় মানুষ ছিলেন। মিঃ দামানি আর আমার দাদু দুজনে খুব বন্ধু মানুষ। মিঃ দামানি দাদুকে শেয়ারটা কিনে দেন। ওদের হাতেই সিংহভাগ শেয়ার ছিলো। বাকিটা আর তিন চারজনের কাছে।
তারপর।
বাবা অমিতাভদাকে কব্জা করার জন্য ছলে বলে কৌশলে সব শেয়ার কিনে নিলেন। বলতে পারিস ঘুরিয়ে বড়মাকে শাস্তি দান। কিন্তু মার বাবা আমার মামাদাদু খুব ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন তা করতে দেন নি। বাবা মারা যাবার বছর খানেক আগে মামাদাদু মারা যান। বাবা দামানিদের পুরো শেয়ারটা নিয়ে নেয়। তখন বাবার অনেক পয়সা। দারুণ প্রতিপত্তি। কাগজটা বাবা পুরো পুরি কব্জা করে ফেলেছেন। কিন্তু আমার তথাকথিত মার সঙ্গে বাবার দূরত্ব বেড়ে যায়। মা আমাকে একেবারে সহ্য করতে পারতেন না। বাবার সঙ্গে প্রায় ঝগড়া করতেন।সেই সময় বাবার ক্যানসার ধরা পরলো। মার নতুন বন্ধু ডাক্তারের প্রবেশ। মার সঙ্গে রেগুলার ঝগড়া। বাবার অসহায় মুখটা মনে পরে যায়। জ্যেঠিমনির কাছে যাই। দু’একদিন এসেছিলেন। মা বাবার অমতে জোর করে সেই শয়তানটার সঙ্গে আমার ম্যারেজ রেজিস্ট্রি করায়, তলারও খাবে গাছেরও কুরোবে। এটা বলতে পারিস বাবার প্রতি মার রিভেঞ্জ। আমি তখন দিশেহারা। এক কথায় বলতে পারিস বলির পাঁঠা। আমি না পারছি ও বাড়িতে ফিরে যেতে, না পারছি এ বাড়িতে থাকতে। তখন আমার মনের কি পরিস্থিতি তোকে বোঝাতে পারবো না।
তারপর।
বাবা মারা গেলেন। ব্যাশ আমি মা শয়তানটার হাতের পুতুল। কাগজের সম্পত্তি আর কিছু প্রপার্টি আমার নামে ছিলো। মিঃ দামানিও আমাকে কিছু প্রপার্টিও আমার নামে লিখে দিয়ে যান। শেষে মা শয়তানটার চাল বুঝতে পারলেন। তাই আমার নামে নিজের প্রপার্টির কিছুটা লিখে দিয়ে যান।
তোর মায়ের কোনো ভাই ছিলো না।
না। মা দাদুর এক মাত্র মেয়ে।
দাদুর অবর্তমানে বাড়িটার কি হাল হোলো ?
রি মডেলিং করে নার্সিংহোম হয়েছে।
তারপর।
এরপর পুরোনো বাড়ির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রইলো না। বাবা থাকতে যেটুকু ছিলো বাবা মারা যাবার পর তা একদম তলানিতে ঠেকে গেলো। তারপর সব শেষ। আমি তখন গা ভাসিয়ে দিয়েছি। শয়তানটা মার শরীর খারাপের বাহানায় স্লো-পয়জন করে মেরে দিলো। মরার আগে মার নামে যেটুকু প্রপার্টি ছিলো নিজের নামে সই করিয়ে নিলো। আমি তখন ওর হাতের পুতুল। ওর ভাগ্না সুনীত কাগজ দেখে। আমি খালি সই করি। কাগজে একটু একটু যেতে শুরু করেছি। বাবার ডাইরী পরে সব জেনেছি। নিজের মনকে শক্ত করেছি।
একদিন কাগজের একটা অনুষ্ঠানে বড়মাকে দেখলাম। সেদিন বড়মা আমাকে দেখেন নি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এই ভদ্রমহিলা আমার বাবার জীবনটা নষ্ট করেছেন। আমার বাবা এতো খারাপ লোক ছিলেন না। আমি ওনাকে সঠিক শাস্তি দেবো। বলতে পারিস আমিও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠলাম। যে ভাবেই হোক উপরে ফেলতে হবে। ফার্স্ট টার্গেট মল্লিকদা অমিতাভদা। সেই ভাবে প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করতে শুরু করলাম। দেখলাম সুনীতদা সম্পাদক হওয়ার জন্য উঠে পরে লাগলো। আমি সুযোগটাকে কাজে লাগালাম। এই সময় ধুমকেতুর মতো তোর সঙ্গে একদিন ক্লাবে দেখা। তুই আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইলি। বাবার কথাটা মনে পরে গেলো। অনি এলে ওকে কখনো ফিরিয়ে দিবি না।
তোর বাবা জানতেন না আমি ওই কাগজে আছি।
জানলে সব সমস্যার সমাধান হয়ো যেতো। তুই জানতিস, বাবা ওই কাগজের মালিক ?
না।
বাবা বেঁচে থাকাকালীন মা যখন চাপ সৃষ্টি করছে শয়তানটার সঙ্গে রেজিস্ট্রীর জন্য, তখন তোর খোঁজ বার বার করেছি। শুভঙ্করবাবুর কাছে গেছি। কার কাছে যাইনি তোর খোঁজ নিতে। লজ্জার মাথা খেয়ে শেষমেষ ড. রায়ের কাছেও একবার গেছি। প্রতিটা জায়গা থেকে হতাশ হয়ে ফিরেছি। তারপর নিজের মনকে বুঝিয়ে সব মেনে নিয়েছি। তখন তোর মিত্রা বাজারের দেহপসারিণীর থেকে খুব একটা কম যায় না। বলতে পারিস সফিসটিকেটেড বাজারী মেয়ে।
আমি মিত্রার মুখটা চেপে ধরলাম। মিত্রা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমার বুকে মুখ গুঁজলো। বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার পর ও থামলো।
আজ বিগত দশ মাসে আমার জীবনটা তিনশো ষাট ডিগ্রী ঘুরে গেছে। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks