দেখি নাই ফিরে - (Part-32)

আমি মুখ টিপে হেসে ফেললাম, এই স্পিরিটটা আমার দরকার।
দাদা ফোনটা ডায়াল করে দিলেন।
কেরে নিরঞ্জন।
হ্যাঁ দিদি আমি, তুমি এত সকালে।
মুখপোড়া কোনো খবর রাখিস, আমি এখানে বসে তোদের সব খবর রাখি।
বাবাঃ তুমি তো এই সাত সকালে খুব ফায়ার মনে হচ্ছে, দাদার সঙ্গে কিছু......
মরন তোর দাদার সঙ্গে হতে যাবে কেনো।
তাহলে।
তোর ওপর রাগ হচ্ছে।
আমার ওপর বলো কি হুকুম আছে।
তোর ওখানে কে একটা খুন হয়েছে।
আমাদের এখানে, না।
অনিদের গ্রামে।
হ্যাঁ।
আমি আজ ওখানে যাবো বলে ঠিক করেছিলাম, যেতে পারছি না। অনাদি না কে তোর অনিদের গ্রামের পঞ্চায়েত তাক নাকি ফাঁসানো হচ্ছে, তোর অমল না কে সে এটা করছে।
না না তুমি ভুল শুনেছো।
তোর কাছ থেকে আমি খবর নেবো, আমি তিরিশ বছর সাংবাদিকের ঘর করছি।
জানিতো, তুমি এসো, আমি এসকর্টের ব্যবস্থা করছি।
তার আর দরকার পরবে না, শোন অনাদির যদি কিছু হয়, অনিকে বলবো তোকে আচ্ছা করে দিতে, মনে রাখিস।
না না তোমার পায়ে পরি অনিকে বলোনা, ও আগুন, ওর বায়োডাটা আমার কাছে আছে, ও ভিজে বেড়াল, ওতো আমার বাবা গো, আমার গদি খেয়ে নেবে, তুমি চাও তোমার ভায়ের গদি চলে যাক।
তাহলে কি করবি।
তোমায় কথা দিচ্ছি অনাদির গায়ে কেউ হাত দিতে পারবে না।
মনে থাকে যেনো। আর কাল আমার কাছে এসে দেখা করবি।
ঠিক আছে। আমি কথা দিলাম।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
কিরে তোর মতো কথা বলতে পারলাম।
আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ রাখলাম।
বাইরে গাড়ির আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম সন্দীপ এলো।
ভজু ওদের সঙ্গে করে ওপরে নিয়ে এলো
ওদের মুখ থম থমে, ফুল টেনসনে আছে।
ছোটমা ভজু বেরিয়ে গেলো।
মিত্রাকে বললাম ফোনটা দে।
তোর, না আমার।
আমার।
ওটাতো তোর হাতে।
সরি।
দ্বীপায়ন।
হ্যাঁ দাদা।
আমার ফোন থেকে কয়েকটা জিনিষ সন্দীপের ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে নাও। আগে তারপর সব বলছি।
আমি ওকে ফাইল গুলো দেখিয়ে দিলাম।
দ্বীপায়ন ল্যাপটপটা টেবিলে রেখে কাজ শুরু করলো।

ভজু মিঃ মুখার্জীকে নিয়ে এলেন।
সবার সঙ্গে ওনাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
উনি বললেন আমার কি সৌভাগ্য, আজ কার মুখ দেখে সকালে উঠেছিলাম এরকম বিগ বিগ লোকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সৌভাগ্য হলো।
চা এলো।
সন্দীপকে বললাম আমার খাম দে।
সন্দীপ ব্যাগ থেকে সব বার করলো।
এক নম্বর খামটা মিঃ মুখার্জীর হাতে দিয়ে বললাম, চা খেতে খেতে লেখাটা আপনি পরুন, সব ডাটা পাবেন। আপনি বুঝে যাবেন আপনার কাজ কি, আর এর সঙ্গে একটা ফাউ দেবো।
মিঃ মুখার্জী চা খেতে খেতে পরাশেষ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
কালকের কাগজে এটা বেরোলে ঝড় বয়ে যাবে সরকারে।
আপনার।
এ কাজ আমি করতে পারলে, সত্যি বলছি অনিবাবু আমার ডবল প্রমোশন বাগিয়ে ছারবো। এতো বড় কেস আপনি হাতে রেখে দিয়েছেন এতদিন।
আর একটা কথা শুনুন। আমার অফিসের একটা স্টাফের এ্যাড্রেস আপনাকে দিচ্ছি, যেটা ফাউ বললাম। সেইটাও এই মওকায় ঢু মেরে দিন। সেখানে একজন খুনিকে আপনি পেয়ে যাবেন।
বলছেন কি।
আমি তার ছবি আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।
সন্দীপ হয়ে গেছে।
দ্বীপায়ন আমার দিকে তাকিয়ে বললো। দাদা একটু আসবেন।
আমি কাছে গেলাম, মিত্রা বুঝে গেছে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
আমি গেলাম দ্বীপায়ন আমায় ইশারায় বললো, এটা।
আমি বললাম, এটাই জীবন্ত দলিলরে পাগল।
এই মেয়েটা কাল মারা গেছে, পুলিশ বলছে সুইসাইড আমি প্রমাণ করে দেবো সুইসাইড নয় মার্ডার। আমার ইচ্ছে ছিলো আজ যাবো না, কিন্তু কথা দিয়েছি বড়মাদের যাবো, তাই আমাকে যেতে হবে।
তুই থাকলে ভালো হতো। সন্দীপ বললো।
মিত্রা একটা কাপর সিঁদুরকৌটো আর চুড়ি নিয়ে আয়।
মিত্রা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
সরি সরি আর হবে না। আমি করে ফেলতে পারবো।
মেনাবোতল এনে দেবো।
দাদা আছে।
থাকুকু।

মিঃ মুখার্জী এই সেই ছেলে (দিবাকর) আর এই সেই ব্যাক্তি (সুনীত) । এর সঙ্গে আপনি একেও পাবেন (অতীশ) । খালি অপারেশন হয়ে গেলে আমাকে একবার জানাবেন। আর একটা কথা, জীবনে কোনোদিন এরা যেনো ভেতর থেকে বাইরে বেরোতে না পারে।
আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনাকে কথা দিলাম।
দেরি করবেন না আপনার কাজে লেগে পরুন।
আমি সন্দীপের কাছে গেলাম, ছবি গুলো সাজিয়ে দিলাম। মনে পরে গেলো মিত্রা ফাংশনের ছবি তুলেছিলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, তুই সেই ফাংশনের ছবি তুলেছিলি না।
হ্যাঁ।
তোর মনে পরে তুই দেবা আর শেলির ছবি তুলেছিলি কিনা।
না মনে পরছে না। সেটাতো ওই অবস্থায় আছে এখনো দেখা হয় নি।
কোথায় তোর ক্যামেরা।
নিচে ব্যাগের মধ্যে।
নিয়ে আয়।
খেয়াল পরলো সেই ছেলে দুটোর দিকে। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি দেখে হেসে ফেললাম। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভজুকে বলোনা কচুরী জিলিপি আনতে।
তোর খিদে পায়।
এখন পাচ্ছে।
যাচ্ছি।
আমি এগিয়ে গেলাম, সেই রাতের পর তোমাদের সঙ্গে দেখা হলো।
দাদাকে তোমার কথা প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করি।
তোমাদের কেনো ডেকেছি বলতো।
তুমি বলো, যা বলবে তাই করবো।
খুব রিক্সের কাজ।
পারবো।
পারবে।
তুমি বলনা অনিদা।
ঠিক আছে বলছি।



দাদার দিকে তাকালাম, দাদা একমনে লেখাটা পরছে, বিরক্ত করলাম না। মিত্রা ক্যামেরা নিয়ে এলো, আমি সন্দীপকে বললাম, দেখ সেদিন এখানে ফাংসনের কিছু ছবি তোলা আছে, তার মধ্যে এদের দুজনের ছবি পাস কিনা।
ওরা দেখতে আরম্ভ করলো, সত্যি সত্যি পেয়ে গেলো, এমনকি দেবা শেলীর জয়েন্ট ছবিও পেয়ে গেলো। সন্দীপের মুখটা চক চক করে উঠলো। কালকে আমাদের ফ্রন্ট পেজটা এক্সক্লুসিভ হবে।
দাদা আমার লেখা থেকে মুখ তুললেন। বড়মা চায়ের ট্রে হাতে ঢুকলেন। মিত্রা এগিয়ে গেলো।
ভজু কোথায়।
নিচে।
দেখেছো ছেলের কান্ড, একেবারে এ্যাটমবোম।
ছোটো ছোটো ছেলেগুলো আছে, নাহলে তোমার থোতা মুখ ভোঁতা করে দিতাম। বড়মা বললেন।
ঘর শুদ্ধ সবাই হেসে ফেললো।
তোমার পরা হয়েছে।
হ্যাঁ।
কোমন বুঝছো।
না তোর প্ল্যান ঠিক আছে। কিন্তু ডকুমেন্টস, ডকুমেন্টস ছাড়া এ লেখা ছাপবো না।
দিচ্ছি। বড়মা।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন।
তুমি একটু রান্নাঘরে যাও।
কেনো।
তোমার রান্নাঘরের ওপরে যে দেয়াল আলমাড়িটা আছে, পাল্লাটা খুলবে, ডান দিকে হাত দেবে দেখবে দুটো ক্যালেন্ডার আছে, ব্রাউন কাগজে মোড়া।
আমি ওপরে উঠবো কেমন করে।
ভজুকে বলো পেরে দেবে।
তোর ডকুমেন্টস রান্নাঘরে। দাদা বললেন।
হ্যাঁ, তাহলে কোথায় রাখবো। তোমার আলমাড়িতে।
বড়মা একবার তাকালেন দাদার দিকে চোখের চাহুনিতেই সব বুঝিয়ে দিলেন। দাদা হাসতে হাসতে চায়ে চুমুক দিলো, মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে বললাম, নিস্তব্ধে সব দেখলে এতোক্ষণ বসে বসে কাজটা ঠিকঠাক ভাবে কো-অর্ডিনেট করে বার করবে।
আমাদের ফটোগ্রাফার পাঠাবি না। মল্লিকদা বললেন।
এই দুটোর যে কোন একজন ফটো তুলবে। তাও ক্যামেরায় না, মোবাইলে। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে পারবি না তোরা।
ওরা মাথা দোলালো।
সন্দীপকে বললাম, তোদের হয়েছে, দেরি করছিস কেনো, আমার হাতে সময় নেই। এবার একটা ছোট্ট মিটিং করতে হবে।
হ্যাঁ আমরা রেডি।
ভজু কচুরির ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
কিরে তুই, বড়মা ছোটমা কোথায়।
নিচে, তোমায় একবার ডাকছে, ভজুর চোখ ভারি ভারি।
মিত্রাকেও দেখতে পেলাম না। ভজুর চোখ ছল ছলে। বুঝলাম নিচে কিছু একটা হয়েছে। তোরা কাজ কর আমি আসছি, বলে নিচে চলে এলাম।
নিচে যে দৃশ্য দেখলাম তার জন্য আমি কখনই প্রস্তুত ছিলাম না, আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি এরকম দৃশ্য দেখবো।

অমি অনেকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, ইসলামভাই ছোটমাকে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কাঁদছে, ছোটমাও কাঁদছেন ইসলামভাইকে জড়িয়ে ধরে, বড়মা ছোটমার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন, বড়মার চোখদুটো জবা ফুলের মতো লাল, আমি ব্যাপারটা ঠিক হজম করতে পারছি না, মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো, ভজু আমার পেছনে, মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটা নিস্তব্ধে ঘটে যাচ্ছে, কেউ জানে না। আমি কিংকর্তব্যবিমূড়, স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছি। মিত্রা আমার হাতটা ধরে কাঁধে মাথা রাখলো, মিত্রাও কাঁদছে। ভজুর দিকে ফিরে তাকালাম, ভজুও চোখ মুছছে।
ইসলামভাইকে আমি কোনোদিন কাঁদতে দেখি নি, অনেক কাছ থেকে ওকে দেখেছি, হয়তো ওর টিমের অনেকের ওকে ওইভাবে দেখার সৌভাগ্য হয় নি, এতো ঝড় ঝাপটা ওর ওপর দিয়ে গেছে, তবু ওর চোখে কোনো দিন জল দেখি নি, মেরিনাবিবির মৃত্যুর সময়ও নয়, মেরিনাবিবির কবরে মাটি দেওয়ার পর, আমার হাত ধরে খালি বলেছিলো, এটা তুই নিউজ করিস না, সব গজব হয়ে যাবে, আমি জানি কে মেরেছে, আমি আগে তাকে দেখি তারপর তুই নিউজ করিস, আমি কথা রেখেছিলাম, ইসলামভাইকে নিয়ে আমি কাগজে ধারাবাহিক লিখে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম, কোর্টে সাক্ষীও দিয়েছিলাম, আমার উত্তরণ ইসলামভাই-এর হাত ধরে, সেই সময় মেরিনাবিবি ফাঁক পেলেই আমার কাছে প্রায়ই আসতো, অনেক কথা বলতো, একদিন কথায় কথায় ইসলামভাই-এর সম্বন্ধে অনেক কথা বলেছিলো, ইসলামভাইও আমাকে নিজের সম্বন্ধে অনেক গল্প করেছে, ও পাক্কা পাঠান বংশের ছেলে, আমাকে একদিন গল্প করেছিলো খান সৈয়দ মোগল পাঠান এই চার ভাই-এর গল্প। দারুন বলেছিলো, তখনই বুঝেছিলাম ইসলামভাই-এর পেছনেও একটা কিছু আছে, বার বার আমায় বলতো, “অনি আমি যখন থাকবো না, আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখিস।”
বড়মা এগিয়ে এলেন, ধরা গলায় বললেন, আয় ভেতরে আয়, তুই তো নিজেই পীরসাহেব, এটা জানিস না।
আমার সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার অঙ্ক কিছুতেই মেলাতে পারছি না। কাছে এসে দেখলাম ছোটমা ইসলামভাই দুজনের চোখ বন্ধ। চোখের কোল বয়ে অনবরতো জল গড়িয়ে পরছে।
ছোটো, চোখ খোল অনি এসেছে। বড়মা বললেন।
ছোটোমা মাথা দোলাচ্ছে।
দেখ ও তোর থেকে অনেক ছোটো, কিন্তু ওর বুকটা ছোটো নয় ও সব শোনার পর তোকে মেনে নেবে।
না না দিদি ও আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না।
কি বলছিস তুই, তুই ওর ছোটোমা।
না না ও আমার সব শুনলে আজ থেকে আমাকে আর ছোটোমা বলে ডাকবে না।
আমি বলছি, তুই শোন।
না দিদি না।
আমার মাথাটা কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে, আমি ওখানে দাঁড়ালাম না, বড়মাকে বললাম, দাঁড়াও আমি একটু আসছি ওপর থেকে, আমি ছুটে ওপরে চলে এলাম। ওপরে সবাই ঠিক আছে, নিচের গন্ধ ওপরে আসে নি। সন্দীপকে বললাম, কিরে তোদের হলো।
হ্যাঁ।
দাদাকে বললাম, তুমি এবার বলো স্টোরিটা কি ভাবে সাজাবে।
দাদা দাদার মতো বলে গেলেন, মল্লিকদা মল্লিকদার মতামত দিলেন, সন্দীপকে বললাম তোর কিছু বলার আছে। সন্দীপ চুপচাপ থাকলো। আমি টেবিলের ওপর থেকে কাগজ পেন বার করলাম, ড্রইং করে বুঝিয়ে দিলাম, কোথায় ছবি ইনসার্ট হবে, কোথায় দিবাকরের লেখাটা যাবে, কিভাবে দিবাকরের সঙ্গে মলের লেখাটা টুইস্ট করা হবে। কালকের প্রথম পেজটা সম্বন্ধে আমি কি ছবি দেখতে চাইছি সেটা ওদের ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম।
ভজু সনাতনবাবুকে নিয়ে এলো আমার ঘরে।
এতো দেরি।
ছোটোবাবু আমার একটা ছোটো সংসার আছে।
বসুন।
ছেলেদুটোর দিকে তাকিয়ে বললাম, সকালে যিনি এসেছিলেন, তিনি এই দুটো ঠিকানায় যাবেন, তোমরা দুজনে দুটো বাড়ি ফলোআপ করবে, নিউজ আমার সলিড চাই, ডিটেলসে, তোমরাই লিখবে, কালকে ফার্স্ট পেজে তোমাদের নিউজ যাবে এটা মনে রাখবে। দ্বীপায়নের দিকে তাকিয়ে বললাম, বাড়িগিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে এখুনি অফিসে যাও, আজকের ফার্স্টপেজের দায়িত্ব তোমার, তোমায় যদি আর্টডিরেক্টর কিছু বলেন, আমায় ফোন করতে বলবে। দাদা মল্লিকদা টোটাল ব্যাপারটা কোঅর্ডিনেট করবে।
তোমরা এখুনি বেরিয়ে যাও কাজ শুরু করো। আমি মানি পার্টস থেকে সন্দীপের হাতে পাঁচটা একহাজার টাকার নোট দিয়ে বললাম, এটা রাখ, বাকিটা অফিস থেকে বিল করে নিয়ে নিবি। ছেলেদুটোকে ডাকলাম, এই শোনো আজ সারাদিন অফিসের গাড়ি ব্যাবহার করবে না, সন্দীপ তুইও না, শেষ কথা আমার কাজ চাই এটা মাথায় রাখবি। কেউ আমায় ফোন করবি না, আমি তোদের ফোন করবো। তোমাদের কোনো প্রবলেম হলে সন্দীপকে ফোন করবে দাদা কিংবা মল্লিকদার ফোনে রিং করবে না।
আচ্ছা। ওরা বেরিয়ে গেলো।

আমি সনাতন বাবুর দিকে তাকালাম, তিনটে শোকজের নোটিস লিখে ফেলুন, একটা সুনীতদার নামে একটা কিংশুকের নামে আর একটা অতীশবাবুর নামে। অফিসে গিয়ে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিন, কি লিখতে হবে বলে দিতে হবে।
না।
ডকুমেন্টস আমি দেবো।
অফিস থেকে কখন ম্যাসেঞ্জার যাবে দাদাকে বলে দেবো। দাদা আপনাকে বলে দেবেন। ওরকম ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো।
না মানে আমি কিছু বুঝলাম না।
বেশি বুঝতে যাবেন না, বিপদে পরে যাবেন, এখন যা বলে যাচ্ছি অন্ধের মতো ফলোআপ করুন।
ঠিক আছে ঠিক আছে।
এবার আপনি আসুন, অফিসে গিয়ে আগে কাজগুলো সেরে ফেলুন।
সনাতনবাবু চলে গেলেন।
দাদাকে বললাম দেখো, আমার ফোন বন্ধ থাকবে, তুমি আমাকে পাবে না, মিত্রাকেও পাবে না, বড়মার ফোনে ফোন করবে, আমি পরশুদিন ফিরে আসবো। তোমার ওপর একটু চাপ আসতে পারে।
সে তোকে বলতে হবে না, আমি ঠিক সামলে দেবো।
মল্লিকদা তুমি কিন্তু দাদার পাশে পাশে থাকবে। একটু কিছু হলেই আমাকে জানাবে।
ঠিক আছে।
তোমরা নিচে যাও, সকাল থেকে তোমাদের অনেক টেনসন দিলাম।
নারে অনি তুই যে খেলা খেললি, এটা একটা মানুষকে খুন করার থেকেও বেশি।
দাদারা নিচে চলে গেলেন, আমি দরজা বন্ধ করলাম, একটা সিগারেট ধরালাম, অনাদিকে ফোন করলাম।
গুরু সত্যি তুই বড় খেলোয়াড়।
কেনো।
যে পুলিশ তোর সঙ্গে কথা বলার আগে আমাকে চমকাচ্ছিল, এখন সে দেখি আমায় ভরপুর তেল দিচ্ছে।
কেনো।
জানিনা।
অমল কি করছে।
কাল থেকে মাতব্বরি করছিলো, এখন হাওয়া। তোরা কখন রওনা হচ্ছিস
সকাল থেকে অনেক টেনসন গেলো, এবার রওনা হবো।
তোর আবার কিসের টেনসন।
আছে।
তুই ছোটো কাজ করে পথ দেখালি, আমি একটা বড় কাজ সেরে ফেললাম।
নে বাসুর সঙ্গে কথা বল।
বল বাসু।
কখন বেরোচ্ছিস।
এই বেরোবো এবার।
চিকনাকে খবর দিয়েছিস।
হ্যাঁ।
হ্যাঁরে দেবার বাবা-মা দুজনকে এ্যারেস্ট করেছে।
হ্যাঁ।
দেবার খবর কিছু পেয়েছিস।
না।

তুই ওখান থেকে একটু দূরে সরে যা।
দাঁড়া।
তুই ফোনটা কাট আমি আমার ফোন থেকে তোকে ডায়াল করছি।
আচ্ছা।
হ্যাঁ বল।
শুনছি তো অনেক কথা, ও নাকি কলকাতায় কোথায় লুকিয়ে আছে।
শেলি কি প্রেগনেন্ট ছিলো।
পুলিশ জানে না, আমরা জানতাম।
কি করে।
সামন্ত ডাক্তারের কাছে মাঝে গেছিল দেবা, খালাস করার জন্য।
তাই।
হ্যাঁ।
শেলি রাজি হয় নি। কয়েকদিন ধরেই গন্ডগোল চলছে, অনাদি সমাধান করতে চেয়েছিলো, দেবাকে অমল ব্যাক করলো।
তাই।
দরজাটা খট খট করে উঠলো।
ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি গিয়ে শুনবো।
দরজাটা খুললাম, সামনে দাঁড়িয়ে ইসলামভাই, ছোটমা। পেছনে মিত্রা, বড়মা। তার পেছনে দাঁড়িয়ে ভজু। অমিতাভদা মল্লিকদাকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম তারা ব্যাপারটা জেনেছে।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
তুই আমাকে ক্ষমা কর অনি।
কেনো।
তুই সব জেনেও এতদিন বলিস নি।
আমি কি জানি বলবেতো আগে।
আমার সম্বন্ধে।
তোমার সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না।
আমায় ভজু এখুনি বললো, তুই বল ভজু সব মিথ্যে বলেছে।
ভজু তোমায় মিথ্যে বলে নি, আবার সম্পূর্ণ সত্যি বলেনি। ও যতটুকু লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছিলো সেই টুকু বলেছে।
তাহলে তুই এতদিন বলিসনি কেনো। আমায় বিশ্বাস করিস না।
তুমিই তো একদিন বলেছিলে ইসলামভাই, অনি বড় হতে গেলে তোর দুটো হাতকেও তুই বিশ্বাস করবি না। আমি কি অন্যায় করেছি বলো।
আমি তোর সঙ্গে পারবো না।
তুমি তো কোনোদিন হারতে জানো না। তুমিই তো বলেছিলে, পাঠানরা জঙ্গের ময়দানে নয় জেতে না হলে প্রাণ দেয়। তাহলে এই কথা বলছো কেনো।
তোর মনে আছে।
হ্যাঁ।
তুই বললে আমি তোর পায়ে আমার মাথাটা ফেলে দিতে পারি।
বড়মার তোমাকে দেখার ভীষণ সখ ছিলো। এই ভাবে তোমাকে দেখাতে চাই নি, ঘটনাটা ঘটে গেলো, কি করবো বলো।
তুই আমার বোনকে আর মা বলে ডাকবি না।
এ কথাও বা তোমাকে কে বললো।
বোন বলছে।
দেখো ইসলামভাই ছোটোমা যেদিন আমাকে জোর করে বলেছিলো, তুই আমার সম্বন্ধে জানতে চাইবি না, জানতে চাইলে আমার থেকে কেউ বেশি কষ্ট পাবে না। সেদিন থেকে আমি ওই চ্যাপ্টারটা ক্লোজ করে দিয়েছি। যেহেতু আমার ছোটোমা। মাকে কোনোদিন আমি কষ্ট দিতে পারবো না।
ছোটোমা আমাকে জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
ছোটোমা আমার এখানের কাজ শেষ, এবার বেরোতে হবে।
না আমি যাবো না।
যেতে তোমাকে হবে ছোটোমা।

আমার গালার কাঠিন্যে কেউ যেন ওদের গালে একটা কোষে থাপ্পর কষালো। আমার দিকে সবাই অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমার আরো কিছু কাজ বাকি আছে, তোমাকে তার সাক্ষী থাকতে হবে। তোমরা চেয়েছিলে অনি তোমাদের বলে সব কাজ করুক, তোমাদেরও কিছু বলার থাকতে পারে।
তোর কাছ থেকে আমি কোনোদিন আর কিছু জানতে চাইবো না।
কেনো জানতে চাইবে না, তাহলে তুমি আমাকে তোমার ছেলে হিসাবে স্বীকার করছো না।
যাও তোমরা নিচে যাও আমি ইসলামভাই-এর সঙ্গে কিছু কথা বলে নিচে যাচ্ছি, দশ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে যাবো। কচুরি জিলিপি তরকারি নিয়ে নেবে, গাড়িতে বসে খাবো।
ওরা নিচে চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ করলাম।
ইসলামভাই আমার পা জড়িয়ে ধরলো, জানিস অনি তোর জন্য আমার বোনকে আমি ৩০ বছর পর ফিরে পেলাম। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।
আমি ইসলামভাইকে হাত ধরে তুললাম, ইসলামভাই আমার থেকেও এক হাত লম্বা।
বল তুই আমায় কি করতে হবে।
আমার কাজ শেষ তোমার কাজ শুরু করতে হবে।
আমি দাদার মুখ থেকে নিচে সব শুনলাম, আমার জন্য কিছু বাকি রাখিসনি তুই।
আছে। তোমাকে তিনটে অপসন দিচ্ছি তুমি বেছে নাও।
বল।
এক তুমি কলকাতা ছেড়ে এখুনি চলে যাও, দুই তুমি আমার সঙ্গে এখুনি চলো, তিন তুমি দামিনী মাসির কাছে গিয়ে থাকো।
কেনো বল।
মল তোমাকে ছারবে না। ও রাজস্থানী। একটা মরণ কামর দেবে। সেটা আজকের মধ্যে।
মনে হচ্ছে আজকে প্রথম ইসলামভাই-এর পা দুটো একটু কেঁপে উঠছে।
ও তোমার এন্টি অবতারকে ফিট করতে পারে।
তোর কথা মানছি। অবতার একাজ করতে ভয় পাবে।
তুমি ভাবছো কি করে। আমি যদি বরে দিয়ে রাজা খেতে পারি ও পারবেনা কেনো, সকাল থেকে তুমি কোনো রেসপন্স করো নি। যদিও খেলা শুরু হয়ে গেছে।
এ খেলার পরও তুই বলছিস ও করবে।
শেষ ঝুঁকিটা ও নেবে। আমাকে আরও সাতদিন তোমায় সময় দিতে হবে।
তুই বল কি করবো।
আমার কাছে থাকাটা তোমার সবচেয়ে বেশি সেফ্টি।
তুই কি তোর সঙ্গে আমায় যেতে বলছিস।
হ্যাঁ।
একটা মেসিন ছাড়া, আমি কিছু নিয়ে আসি নি।
আমি তোমাকে এই মুহূর্তে ছাড়তে চাইছি না।
আমাকে পনেরোমিনিট সময় দে।
ঠিক আছে। বাড়ির বাইরে যাবে না। এখানে পৌঁছে দিতে বলো। যে ভাবে তুমি এসেছো সেই ভাবে।
ভজুকে নিয়ে চল।
তাই হবে। তোমার রাজত্ব কে সামলাবে।

রতনকে বলেছি।
তোমার ফোন।
এটা আমার পার্সোনাল ফোন। কাজেরটা রতনের কাছে আছে।
দেরি করবো না, বেরিয়ে পরতে হবে।
ঠিক আছে। তুই যা বললি তাই হবে।
নিচে চলে এলাম। দাদাকে সব বললাম, দাদা বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না, তুই যা। মল্লিকদা আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। অপরাধী অপরাধী মুখ করে বসে আছে। আমি কাছে গেলাম।
ভেটকি মাছের মতো বসে আছো কেনো।
আমার দিকে তাকিয়ে মরা হাসি হাসলো।
তুমিকি ছোটোমাকে ছারতে চাইছো না।
না না তুই নিয়ে যা। সারা জীবন অনেক কষ্ট পয়েছে, ওকে আমি কিছু দিতে পারি নি।
তুমি দিতে না পারো তার ছেলে তো দিয়েছে, তুমি তাতে খুশী নও।
মল্লিকদা আমায় জড়িয়ে ধরলেন।
জানিস অনি আজ সকাল থেকে তোর লড়াইটা আমাকে অনেকটা বেঁচে থাকার ইনসপিরেসন দিয়েছে। কালকে এক জায়গায় গেছিলাম, তুইতো গেলি না।
আবার বক বক করে, পেটে কিছু কথা থাকে না। বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো।
মিত্রা হাসলো।
ছোটোমা গম্ভীর।
আমি জানি।
তুই জানিস।
তোমাদেরটা না, আর একজনেরটা। সে বলেনি, বলেছে যার যারটা সে বলবে।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকালো।
না গো বড়মা মিথ্যে কথা বলেছে, বানিয়ে বানিয়ে বলছে।
ঠিক আছে আর দেরি করা যাবে না, পৌনেনটা বাজলো।
রবীন সব গোছগাছ করে নিয়েছে। ঝাক্কাস একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে। স্কোরপিও। ইসলামভাই তার কাজ এরি মধ্যে সেরে ফেলেছে, সবাই উঠে বসলাম। দাদাকে প্রণাম করে আমি সামনের সিটে বড়মারা মাঝের সিটে পেছনে ইসলামভাই ভজু।
সবাই চুপচাপ, ভেতরে হাল্কা এসি চলছে, বম্বে রোডে এসে আমি বললাম, বড়মা।
বল।
আমার কচুরী।
মিত্রাকে জিজ্ঞাসা কর।
রাক্ষুসী সব খেয়ে নিয়েছে।
যাঃ ও কথা বলতে হয়। ছোটোমা বললো।
ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেখতে পাচ্ছি, ইসলামভাই মুখে কাপর চাপা দিয়েছে।
তুই আজ নির্ঘাত পায়খানা করবি। কাল থেক খেয়ে যাচ্ছিস। চারটে কচুরী তাও লোভ সামলাতে পারলি না।
চারটে না দশটা।
এঁ বলিস কি। আমি পিছন ফিরলাম।
তোর একটুও লজ্জা করে না।
তুই সকাল থেকে খুন-জখম, মল নিয়ে পরে রইলি ভাবলাম ধাবায় বসে বেশ জমপেশ করে খাবো, তানা বড়মা কচুরী জিলিপি আনোতো। খিদে পেয়েছে খেয়ে নিয়েছি।
তোর একটুও মনে হলো না, অনি খায় নি ওর জন্য এটলিস্ট দুটো রাখি।
খাওয়ার সময় মনে ছিলো না। খাওয়া শেষ হতে মনে পরলো, তুই খাস নি।
এবার কেউ আর চুপ থাকতে পারলো না, হো হো করে হেসে ফেললো।
আমি একা খেয়েছি নাকি, তুই ছাড়া সবাই খেয়েছে।
তোর মতো।
না সবাই একটা একটা খেলো। ভজুকে বল না কিপ্টার মতো নিয়ে এসেছিলো কেনো।
নাগো অনিদা বড়মা ৫০টা আনতে বলেছিলো আমি এনেছি।
৫০টার মধ্যে তুই ১০ পিস। মানে ২০পাসের্ন্টে। খমা দে। সত্যি তোর পেট।
কয়েকদিন হলো বুঝলি খিদেটা বেরে গেছে।
বুঝেছি।
আর বক বক করতে হবে না, তুই এই বিস্কুটের প্যাকেটটা নে। বড়মা বললো।
বড়মা পুরোটা। অনি তুই কি ভালো ছেলেরে, তুইতো সবাইকে দিয়ে খাস তাই না, তুই একলা খেতে পারিস না। দে আমাকে, সবাইকে ভাগ করে দিচ্ছি।
সবাই হাসছে।
বড়মা।
বল।
একটা কাজ করবে।
বল।
নিরঞ্জনবাবুকে একটা ফোন করো, বলো আমাদের সঙ্গে যেন আজকে যায়। তোমার ফোন থেকে করো। আর বিস্কুটের প্যাকেট আর আছে।
পেছনে দিতে বলছিস তো।
হ্যাঁ।
দিয়েছি। মিত্রাকেও দিয়েছি একটা প্যাকেট। ছোটো নিরঞ্জনকে ফোনটা ধরে দেতো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, ও চোখ বন্ধ করে দুষ্টুমির ইশারা করলো।
আমি হাসলাম।
তুই কিন্তু আমার সামনে বসে আছিস দেবো চুলের মুটি ধরে।
দাঁড়া বাপু তোরা।

কেরে নিরঞ্জন। শোন আমি এখন.....কোথায় রে অনি.....তুই আমাদের সঙ্গে আজ যাবি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আয়.....শোন যা বলছি কর......ঠিক আছে.....মেরুন কালারের গাড়ি......দাঁড়াবাপু দিচ্ছি...... বলে দিচ্ছে।
ছোটোমা রবীনকে ফোনটা দিল রবীন গাড়ির নম্বরটা বলে দিলো।
কটা বাজে বলতো।
দেখ সামনের দিকে ঘড়ি আছে, তুই কানা।
সত্যি ঘড়ি আছে, দেখলাম, ১০টা বাজে।
ইসলামভাই-এর ফোনটা বেজে উঠলো।
আমি তাকালাম।
আসলাম আলেকম........এ্যাঁ কি বলছিস.......তুই ওখানে সেঁটে যা.......আমাকে টাইম টু টাইম খবর দিবি......
রবিন সাইড কর গাড়ি।
আমি গাড়ি থেকে নামলাম, মিত্রাকে বললাম, তুই ফ্রন্ট সিটে যা।
আমি পেছনে গিয়ে বসলাম।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকালো। তোর কথাই ঠিক হলো। সাতদিন টাইম চেয়েছিলি। হলো না। নিজে সুসাইড করেছে। তোর ছেলেপুলেরা পাক্কা কাজ করছে। সত্যি অনি মাথা থেকে একটা বোঝা নামিয়ে দিলি তুই।
ইসলামভাই আমার হাতটা ধরলো, ছোটোমা পেছন দিকে তাকালো, হাসলো কিন্তু প্রাণ নেই। খুব আস্তে কথা হচ্ছে, বড়মা পযর্ন্ত শোনা যাবে।
বড়মার ফোনটা বেজে উঠলো।
দেখতো ছোটো কি বলে, মরন ফোন করার আর সময় পেলে না।
আঃ বড়মা গাল দিও না আমি দাদাকে বলেছি তোমার ফোনে ফোন করতে।
সেটা আগে বলবি তো।

হ্যাঁ বলো।
শোন তোর সেই মিঃ মুখার্জী ফোন করেছিলো।
কি বললো।
কাজ হয়েগেছে।
দু বাড়িতেই।
হ্যাঁ। ওদের এ্যারেস্ট করেছে।
আর।
একটা বাজে ব্যাপার হয়েগেলো।
কি।
মল নাকি সুইসাইড করেছে।
এটা তোমায় কে বললো, মিঃ মুখার্জী না অন্য কেউ।
আমাদের ওই বাচ্চা ছেলেটা, যাকে তুই পাঠালি।
মনে হচ্ছে ঠিক খবর পায় নি, আমি তোমায় একটু পরে ফোন করবো।
লেখাটার এ্যাঙ্গেল তাহলে বদলাতে হবে।
একটু দাঁড়াও পরে বলছি।
ঠিক আছে, আমি তোর বড়মার ফোনেই তাহলে ফোন করবো।
ঠিক আছে, মল্লিকদা ঠিক আছে।
খবর শুনে খুব খুশি।
আমাকে ফোন করে একটা থ্যাঙ্কস দিতে বলো।
নে কথা বল।
কি গুরু কেমন বুঝছো।
একখানা গেরো উদ্ধার হলো।
হ্যাঁ। আর একটা গেরো আছে। সেটা বলে আসি নি, তোমার তখন মন ভালো ছিল না।
হ্যাঁরে, সকাল থেকে কি সব ঘটে গেলো।
তুমি বলো, আমি যা করেছি ভুল করেছি।
একেবারে নয়, আমি তোকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করি। কি বলছিলি বল।
এটা তোমায় দায়িত্ব দিচ্ছি, তুমি পালন করবে, দাদা পারবে না।
বল।
আজ অনেকে দাদার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। আগে তোমার সঙ্গে তারা কথা বলবে, তারপর বুঝলে, দাদার কাছে পাঠাবে। নিচে বলে দাও, আজ তোমরা ব্যস্ত। সন্দীপকেও এ কথা বলে দাও। আর একটা কথা।
বল।
মিঃ ব্যানার্জী আজ দাদার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
মিত্রা ছোটোমা বড়মা পেছন ফিরে তাকালো। ওরা গোগ্রাসে আমার কথা গিলছে।
কেনো।
ও একটা মিউচুয়ালের অফার নিয়ে আসবে।
কি বলছিস তুই।
হ্যাঁ। পরের কোপটা ওর ওপর পরবে, ও সেটা জানে, বহুত শেয়ানা লোক, গন্ধ পেয়ে যাবে। কি বলে শুনে যাও। তোমার কাছে অতটা জারিজুরি করতে পারবে না, দাদার পায়ে হাতে ধরে ফেলবে, উনি সব পারেন।
কি বলবো।
দিন পনেরো সময় নেবে, অনির সঙ্গে আগে কথা বলি তারপর, কাটিয়ে দাও।
নাও ছোটোর সঙ্গে কথা বলে মন ভালো করো।
ছোটোকে ফোনটা দিলাম। ছোটো বাঁকা ভ্রুকরে আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ ফোনে কথা হলো হাসাহাসি হলো। বড়মাকে ফোনটা দিলো।
হ্যাঁরে অনি। বড়মা বললো।
ডাক্তার এর মধ্যে এলো কি করে।
ছিলোই তো।
এটা তুই আগে বলেছিলি।
দিদিগো ও একটা জিনিষ, পাইথন আগে স্বীকারটা ধরে স্বীকারের মুখটা মুখে পুরে নেয় তারপর ধীরে ধীরে গিলে খায়। ইসলামভাই বললো।
ঠিক বলেছো ভাই। হ্যাঁরে তোর এই মিশনে আর কটা আছে।
জানিনা।
ন্যাকামো করিসনা। তুই সব জানিস।
বিশ্বাস করো।
দিদি তুমি ওর পেট থেকে বার করতে পারবে না, দেখলে না আজ থেকে আট বছর আগের কথা আমি আজ জানলাম।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন, তুই এখানে এসে বোস।
কেনো।
বোসনা, দরকার আছে।
আমি পেছনের সিট থেকে টপকে মাঝের সিটে গিয়ে দুজনের মাঝখানে বসলাম। মিত্রা একবার পেছন ফিরে তাকালো। আমি হাসলাম।
রবিন সামনে ধাবা পরবে জানিস তো।
হ্যাঁ।
খিদে লাগেছে দাঁড় করাস।
তুই কি ভালো রে।
খারাপ কোনদিন ছিলাম।
আমার দিকে তাকালো, কি খাওয়াবি।
আমার পকেটে পয়সা নেই, তোর কাজ করলাম, খাওয়াবি তুই।
হুঁ। মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
বড়মার দিকে হেলে পরলাম। বল তোমার প্রশ্নটা কি।
ডাক্তার এর মধ্যে ভিরলো কি করে।
ডাক্তার তো ভিরেই ছিলো, মিত্রা সব বলেছে নাকি তোমায়, আমাকেও বলে নি, উদ্ধার করতে হচ্ছে। এরা সব লতায় পাতায় জরিয়ে রয়েছে। আগাছাও কিছু আছে।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, চোখে চোখ মনিদুটো স্থির। সকাল থেকে বড়মাকে অনেক বেশি বোঝদার মনে হচ্ছে, ঝটপট সব ধরে ফেলছে। আগে কখনো বড়মার পারফরমেন্স এরকম দেখি নি।
তুই ঠিক বলছিস।
তোমাকে অন্ততঃ ভুল বলবো না।
কি করবি।
সেটা তোমায় বলবো না কাজ শেষ হলে জানতে পারবে।
ঠিক আছে।
বড়মা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরলাম, তুমি রাগ কোরো না, এখনো সময় হয় নি, সময় হলেই তোমাকে জানাবো।
দাদা ধাবায় ঢুকবো তো।
হ্যাঁরে।
আমরা এসে গেছি।
তাহলে ঢোকা।
আমরা সবাই একে একে নামলাম। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks